বাংলাদেশ ও আমাদের কর্তব্য
মাননীয় সম্পাদক,
আজাদ, শিলচর
মহাশয়,
দীর্ঘ তিন মাস পর ২৮শে জুন তারিখে ভেবেছিলাম, একজন অনুতপ্ত, ইছলাম ধর্মে বিশ্বাসী ঐক্লামিক রাষ্ট্র প্রধানের পরিণামদর্শী বাণী শুনবাে, কিন্তু হায়, তার পরিবর্তে শুনলাম এক ঘাতকের গর্জন, যাতে সাড়ে সাতকোটি বাঙালীর অস্তিত্ব নেই ই, বরং এই উপমহাদেশে শান্তি ভঙ্গ করাই তার লক্ষ্য। আজ আমাদের সরকারের কাছে জিজ্ঞাস্য আর কতদিন এই ঘাতক গােষ্ঠীর নােংরামীকে বরদাস্ত করা হবে? রেডিও পাকিস্তান রােজ রােজই ভারতকে বেইমান, মুনাফিক, ভণ্ড, অর্থলােলুপ তথা সাম্রাজ্যবাদী শয়তান বলে গালাগাল দেওয়ার পরও এমন কি, আমাদের ভূখণ্ডের উপর চড়াও করে বাহাদুরী দেখিয়ে যাবার পরও আজ পর্যন্ত। আমাদের সরকার কেন যে পাকিস্তানী ঘাতকবাহিনীকে তার যােগ্য উত্তর দিচ্ছে না এটাই আশ্চর্য্য।
আজ যে ষাট লক্ষাধিক বাঙালী পাকিস্তানী ঘাতকবাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়ে বাস্তুভিটা, মা বােন ভাই পিতাহারা হয়ে এ পর্যন্ত ভারতের বুকে আশ্রয় নিয়েছে এবং আরও নিতে আসছেন তাদের ভবিষ্যৎ এবং তাদের নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় আজ ভারতকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ রাষ্ট্র সংঘ আমাদের মত গরীব রাষ্ট্রের জন্য নয় ওটা শুধু ব্যবসায়ী ধনী রাষ্ট্রের জন্য। এর প্রমাণ আমরা অনেক আগেই পেয়ে গেছি। অতএব, আর নীতিকে আঁকড়ে ধরে একদিকে সাড়ে সাতকোটি বাঙালীর জীবন নিয়ে খেলা করা, আর অন্যদিকে আমাদের এই গরীব দেশের অর্থনীতিকে খর্ব করা আর চলবে না। এখন শঠে শাঠাং সমাচরেৎ নীতি অবলম্বন করতেই হবে। দেশবাসীকেও আজ জাতি ধর্ম বর্ণ দলমত নির্বিশেষে মুক্তি সংগ্রামীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে প্রয়ােজনবােধে অস্ত্র ধরতে হবে ঘাতকবাহিনীর বিরুদ্ধে। তাহলেই শান্তি, নতুবা অশান্তির আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে হবে গােটা দেশকে।
আক্ৰম আলী বাজারঘাট (রাতাবাড়ী)
সূত্র: আজাদ, ১৪ জুলাই ১৯৭১