বিয়ানীবাজারে পাকিস্তানী সৈন্যের তাণ্ডব
গত সপ্তাহে বিয়ানীবাজারে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী প্রবেশ করিয়াই অবাধ অত্যাচারের তাণ্ডব চালাইয়াছে। প্রথম দিনে বাজারের প্রবেশ পথে তাহারা মেশিনগান হইতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করিয়া ৬ জনকে আহত করে। গ্রামবাসীরা টীলার আনাচে কানাচে আশ্রয় লওয়ায় আহতদের সংখ্যা বেশি হয় নাই। অতঃপর কনভেনশন মুসলিম লীগ নেতা হাজী আবদুর রহিম (বচন হাজী) তাহাদের পথ প্রদর্শক এবং পরামর্শদাতার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়া প্রত্যহ অত্যাচারের তাণ্ডব চালাইতেছে। রাজনৈতিক কর্মী সহীব আলী অওরিফে সৈবন মিয়ার বইয়ের দোকান পুড়াইয়া ফেলা হয়, সেই সঙ্গে এই লাইনের অন্য দোকানঘরগুলিও ভস্মীভূত হয়। ন্যাপ কর্মী লতিফ মিয়া ও আঃ লীগ কর্মী মতিন মিয়ার ফার্মেসীও পােড়ানাে হয়। সহিব আলী ও আওয়ামী লীগ কর্মী ফৈয়াজ আলীর বাসগৃহেও সৈন্যরা অগ্নিসংযােগ করে। ফলে উভয় গৃহই দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অধিকন্তু, তাহারা গ্রামবাসীদের গরু ছাগল ইত্যাদিও অপহরণ করিয়া নিয়া যায়। সৈন্যরা স্থানীয় কতিপয় আওয়ামী লীগ কর্মীকে গ্রেফতার করিয়া নিয়া যায়। আগুন লাগাইবার জন্য সৈন্যরা এক ধরণের পাউডার ব্যবহার করে, যাহাতে আগুনের শিখা খুব উপরে উঠে না। বাতিন মিয়ার ঘরে অবস্থিত আওয়ামী লীগ অফিসেও আগুন দেয়া হয়। ইউনাইটেড ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের বিয়ানীবাজার শাখার সমস্ত অর্থ ও মূল্যবান দ্রব্যাদি এবং স্থানীয় সাব পােস্ট অফিসের সমস্ত অর্থ সৈন্যরা লুট করিয়াছে। ব্যাংকের সেফ ইত্যাদি ভাঙ্গিবার জন্য যন্ত্রপাতি সৈন্যদের সঙ্গে আছে। এখন সৈন্যরা বাজারের দোকানগুলির ক্যাশ, পথচারিদের ঘড়ি, সাইকেল রেডিও ও অন্যান্য মূল্যবান যন্ত্রপাতি ছিনাইয়া নিতেছে।
বড়লেখায় সাড়ে তিনশত পাক সৈন্যবাহিনী ছাউনি পাতিয়াছে। এখান হইতে উহারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হইয়া লুণ্ঠনে বাহির হয়। মুস্লিম লীগের স্থানীয় গুণ্ডারাও উহাদের সঙ্গে বাহির হইয়া লুঠের ভাগ]পাইতেছে।
সূত্র: যুগশক্তি, ১৪ মে ১৯৭১