পাকিস্তান ও বাংলাদেশ
বৃটিশ আমলের মিলিটারি কেপ্টেইন পাকিস্তানের জেনারেল আয়ুবখানের দোস্ত এহিয়াখান কৌশলে মুনিব আয়ুবখানকে গদিচ্যুত করিয়া পাকিস্তানের হর্তাকর্তা বিধাতা বনিয়া গিয়াছিলেন। পূর্ববঙ্গকে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার কপট ফন্দি করিয়া পূর্ব বাংলার অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে আপােষী বৈঠকে আহ্বান করিয়া পূর্ব বাংলাকে নাস্তানাবুদ করার সকল গােপন চক্রান্ত ও কুকূিটি পরিকল্পনা চালু করিয়া দুনিয়ার ইতিহাসকে স্তম্ভিত করিয়া দিয়াছেন। ইতিহাস বড়ই করুণ, খুবই নিষ্ঠুর, ইতিহাস মরেনা, ইতিহাস কাহাকে ক্ষমাও করেনা।।
বৃটিশ রােপিত বিষবৃক্ষ আজ পাকিস্থানে মাকালফল ধরিয়াছে। এহিয়া ক্ষণস্থায়ী কিন্তু পাকিস্তানকে ক্ষণস্থায়ী বলা যায় না। পাকিস্তান স্থায়ী হউক পাকিস্তানে সত্যকার গণতন্ত্র জন্মলাভ করুক, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিশ্ববাসী ইহা কমনা করে। আমরাও পাকিস্তানের তথা পাকিস্তানের অস্তিত্বহীনতা কামনা করিনা।
পূর্ব পাকিস্তান আর পাকিস্তানের লেজুড়, বধ্যভূমি চারণভূমি হিসাবে উপনিবেশ রূপে থাকিতে চায়না, তাই পূর্ব পাকিস্তানবাসী তাহাদের সাড়ে সাতকোটি মানুষের দেশকে বাংলাদেশ নাম দিয়া গণতন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া লইয়াছে। হাজার হাজার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার রক্তে, শত শত শহীদের বুকের তাজা খুনে বাংলাদেশ এই নাম বিশ্বসভায় ঝলমল করিতেছে।
সাম্রাজ্যবাদের জারজ-সন্তান এহিয়া খান যত শীঘ্র পূর্ব বাংলার বুক হইতে সদলে বিদায় গ্রহণ করিবেন। তত শীঘ্রই এই উপমহাদেশে বিশেষতঃ আফ্রো-এশিয়া ভূখণ্ডে শান্তি স্থাপিত ও মানবীয় মর্যাদা স্বীকৃত হইবে।
বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তে, সাড়ে সাত কোটির করুণ আর্তনাদে “বাংলাদেশ” এই নাম বিশ্বে স্থান লাভ করিয়াছে। এহিয়া খানের দল যদি সত্যিই পাকিস্তান রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মনে-প্রাণে কামনা করেন তাহা হইলে সত্বরই বাংলাদেশ ত্যাগ করিয়া তাহাদের নিজ গৃহরক্ষায় আত্মনিবেশ করুন।
বেলজিয়ানরা কঙ্গোবাসীদের নয়নমণি পেট্রিস লুমুম্বাকে হত্যা করিয়াছিল সত্য কিন্তু কঙ্গোদেশকে হত্যা করিতে পারে নাই। কঙ্গো স্বাধীন হইয়াছে, লুমুম্বাও অমর হইয়াছেন। এহিয়াগােষ্ঠী হয়ত বাংলাদেশের নয়ণমণি শেখ মুজিবুরকে হত্যা করিবে, মুজিব অমরত্ব পাইবেন, বাংলাদেশও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হইয়া যাইবে।
ঘাতক এহিয়াগােষ্ঠী আর যমদূতকে লজ্জিত করিবেন না এটুকু কি আশা করা চলেনা?
পাকিস্তান (পশ্চিম পাকিস্তান) বাঁচুক বাংলাদেশ অবিলম্বে পূর্ণস্বাধীনতা প্রাপ্ত হইয়া সাড়ে সাত কোটী মানুষের পুণ্য জন্মভূমি হিসাবে গণতন্ত্রী দেশ হিসাবে বিশ্ব সভায় যােগ্য আসন লাভ করুক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, মানবতার মর্যাদায় আস্থাশীল প্রত্যেকটি মানুষ ইহা কামনা করেন।
বিপন্ন মানবতার তথা বাংলাদেশের শরণার্থীরা সেবা সাহায্যে ভারত অকাতরে যে ভাবে কাজ করিতেছে এবং ভারতের মহানুভবতায় মুগ্ধ হইয়া বিশ্বের যে সকল রাষ্ট্র যে ভাবে সাহায্য সহায়তায় আগাইয়া আসিতেছে বাংলাদেশবাসীরা এমন কি সভ্য দুনিয়ার মানুষেরা তাহা ভুলিতে পারিবেনা। স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলাদেশবাসীরা কয়েক মাসের মধ্যেই যে পুনঃসংস্থাপিত হইবে এ বিশ্বাস আমরা করিতেছি।
সূত্র: আজাদ, ১৯ মে ১৯৭১