বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমাধানের শর্ত
বাংলাদেশ সম্পর্কে রাজনৈতিক সমাধানের সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম চারটা পূর্ব শর্ত আরােপ করেছেন।
গত ৬ জুন এক বেতার ভাষণে মিঃ ইসলাম বলেন কোন প্রকার রাজনৈতিক সমাধানের আলােচনার পূর্বে
(১) শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে।
(২) হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের বাংলার মাটি থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
(৩) সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
(৪) গত আড়াই মাস যাবৎ পাকফৌজের বর্বরােচিত অত্যাচারে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দান।
এই চারিটা শর্ত মেনে নিলে তবেই আলােচনায় অংশ গ্রহণ সম্পর্কে বিবেচনা করা যেতে পারে। তিনি আরাে বলেন ছােট বড় অনেক রাষ্ট্রই রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলেছেন কিন্তু কেউ কোন সূত্রের উল্লেখ কচ্ছেন না।
তিনি বলেন পাকিস্তান এখন মৃত। তার পুনরুজ্জীবনের কথা উঠতেই পারে না। স্বাধীন বাংলাদেশই আজ সত্য। সাড়ে সাত কোটি বাঙালী একটা জোড়াতালি দেওয়া রাজনৈতিক সমাধান কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। আমরাও এর একটা সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান চেয়েছিলাম কিন্তু ২৫ শে মার্চ রাত্রির বিভীষিকার পর সে প্রশ্ন শেষ হয়ে গেছে। তবে কেউ যদি মনে করে থাকেন যে তথাকথিত পাকিস্তানের কাঠামাের মধ্যেই এই রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে, তবে তাদের জানিয়ে দিতে চাই যে তারা ভুল করছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন
শেখ মুজিবুর প্রেসিডেন্ট-তাজউদ্দিন প্রধানমন্ত্রী গত ১২ই এপ্রিল পূর্ব বাংলায় বহু প্রতিক্ষীত স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারের সর্বাধিনায়ক হচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহম্মদ। অন্যান্য মন্ত্রীদের মধ্যে আছেন মনসুর আলী, খন্দকার মােস্তাক আহম্মদ, কামরুজ্জামান চৌধুরী [কামারুজ্জামান। | সরকার গঠনের ঘােষণার পর ১৩ই এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন স্বাধীন বাংলা রেডিও থেকে জাতীর উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দান করেন। নব গঠিত সরকার কিছু নির্দেশনামা ইতিমধ্যে ঘােষণা করেছেন।
বাংলাদেশ সরকার যাতে স্বীকৃতি লাভ করে সেই উদ্দেশ্যে কয়েকটি দেশে প্রতিনিধি প্রেরণ করা হয়েছে। বলে স্বাধীন বাংলা রেডিও থেকে ঘােষণা করা হয়। ইয়াহিয়া সরকার আলােচনা করার আওতায় অতর্কিত অত্যাচার আরম্ভ করেন। ফলে নেতৃবৃন্দ কিছুদিন যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন এবং এই জন্যই সরকার গঠনে অল্প বিলম্ব বলে প্রকাশ।
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ১৪ এপ্রিল ১৯৭১