You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.14 | বঙ্গোপসাগর অভিমুখে মার্কিন সপ্তম নৌ-বহর | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বঙ্গোপসাগর অভিমুখে মার্কিন সপ্তম নৌ-বহর
ঢাকায় ১৫ জন মার্কিন নাগরিক উদ্ধারের অজুহাত
নিছক ব্ল্যাক মেইল : তাস
চাপ সৃষ্টির কৌশল : ভারত
(বিশেষ প্রতিনিধি)

নয়াদিল্লী, ১৩ ডিসেম্বর-সায়গন থেকে এ পি জানাচ্ছে, মার্কিন সপ্তম নৌবহরের পারমাণবিক শক্তি চালিত বিমানবাহী জাহাজ এনটারপ্রাইজ আরও কয়েকটি জাহাজ নিয়ে শুক্রবার টানকিন উপসাগর থেকে রওনা হয়েছে। উদ্দেশ্য ঢাকা থেকে মার্কিন নাবিকদের উদ্ধার করা। এ, পি’র সংবাদ সূত্র হলাে সপ্তম নৌবহর।
ভারত-সরকারের জনৈক মুখপাত্র ইউ, এন, আইকে বলেছেন এনটারপ্রাইজ এখন বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের জন্য নির্দেশের অপেক্ষায় আছে। তিনি এই রণতরীর আগমণকে ভারতের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ দেওয়ার প্রয়াস বলে উল্লেখ করেন।
ভারত সরকারের জনৈক মুখপাত্রের খবর থেকে ইউ এন আই জানিয়েছে মার্কিন চাপ সৃষ্টির এই কৌশলের সঙ্গে চীনও কোন কোন এলাকায় সৈন্য সমাবেশ করছে। প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে খবরটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
পাক-সামরিক জুন্টা বাঙলাদেশে তার সৈন্যদের যে কয়েকদিন বাদে বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছিল এখানের রাজনৈতিক মহল মনে করেন এই ঘটনাবলীর সঙ্গে তার একটা যােগসূত্র থাকতে পারে।
মস্কো থেকে তাস মার্কিন সরকারের এই আচরণকে বােম্বেটেদের কূটনীতি বলে তীব্র নিন্দা করেছে। তাদের ঐ বিবৃতিতে এই ঘটনা ও এর সঙ্গে নিক্সনের হুমকিকে ব্ল্যাকমেইল ও চাপের রাজনীতি বলা হয়েছে।
গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ভারত বিরােধী হুমকি এবং নিরাপত্তা পরিষদের ইতিপূর্বে যে প্রস্তাব সােভিয়েত ভেটোয় বাতিল হয়েছিল আবার সেই প্রস্তাব আলােচনার জন্য জরুরী অধিবেশন আহ্বানের জন্য জিদ জাতিসংঘের রাজনৈতিক মহলের মনে কিছু একটা হতে যাচ্ছে এ ধরনের চিন্তার খােরাক জুগিয়েছিল। এখন জানা যাচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদ ঐ কূটনীতির আড়ালে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী মহল ও তার মিত্র গােষ্ঠী এবং তাদের নতুন মিত্র মাওবাদী চীন পাকিস্তানের ইয়াহিয়াকে রক্ষার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার চাপ সৃষ্টির ঘৃণ্য কৌশল অবলম্বন করেছে। মার্কিন সপ্তম নৌবহরের স্বীকৃতি অনুযায়ী নিক্সন সরকার অনেক আগেই তার পরিকল্পনা ছকে নিয়েছে। সপ্তম নৌবহরের এনটারপ্রাইজ রওনা হয়েছে শুক্রবার। এই জাহাজটি পারমাণবিক শক্তি চালিত বিমানবাহী জাহাজ। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি জাহাজ এবং ডেস্ট্রয়ার আছে। আপাতত এরা সিঙ্গাপুরের অদূরে মালাক্কা জানিয়েছে। জনৈক সরকারী মুখপাত্র বলেন গায়ের জোর দেখানাের এই কৌশলের একমাত্র অর্থ হলাে ভারতের উপর মনস্তাত্বিক চাপ সৃষ্টি করা।
মুখপাত্র বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন ঢাকায় কয়েকজন মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারকার্য বাকী। সামান্য এই কয়েকজনের জন্য পারমাণবিক শক্তিচালিত নৌ-বহর পাঠানাে হাস্যকর যদি অন্য কোন উদ্দেশ্য না থাকে। তিনি আরও বলেন, বৃটিশ, ফরাসী এবং ঢাকা থেকে নিরাপদে এবং অন্যান্য বিদেশী নাগরিকদের করাচী ইসলামাবাদ এবং ঢাকা থেকে নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে সরিয়ে আনা হয়েছে। মার্কিন সরকার চাইলে ভারত আরও একবার বিমান অভিযানে বিরতি দিয়ে লােকাপসারণের ব্যবস্থা করে দিত।
মুখপাত্র বলেন মাঝ সমুদ্রে সপ্তম নৌবহর বা অন্য কোন নৌবহরের চলাচলে বাধা নেই। যদিও কোন কোন দেশ বৃহৎশক্তির নৌ-শক্তিকে ভারত মহাসাগর ব্যবহারের বিরােধিতা করে।
তিনি বলেন, এ ধরণের চালচিত্র ইতিপূর্বেও হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন মাত্র ১৫ জন মার্কিন নাগরিকদের ঢাকা থেকে অপসারণের জন্য যদি ৭ম নৌ-বহরের সাহায্য নেওয়া হয় তবে সে সরকার সম্পর্কে ভারতের আর কেননা বক্তব্য থাকতে পারে না।

সূত্র: কালান্তর, ১৪.১২.১৯৭১