You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.16 | বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়- দেশ গড়ার কার্যক্রম - সংগ্রামের নোটবুক

দেশ গড়ার কার্যক্রম

হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। এর দু’দিন পর স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মুখ্য সচিব রুহুল কুদুস ও পুলিশ মহাপরিদর্শক আবদুল খালেক ঢাকায় পৌছে তাদের কার্যভার গ্রহণ করেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং সরকারের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ২২ ডিসেম্বর মুজিবনগর/কলকাতা থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। ঢাকাবাসী তাদেরকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে। পরদিন ২৩। ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকের মাধ্যমে শুরু হয় নতুন পথযাত্রা। অন্যদিকে শেখ মুজিবকে প্রাণদণ্ড দিলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা আর দেশে ফিরতে পারবে না’ আশঙ্কা করে মুজিবকে ২২ ডিসেম্বর পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারের। কনডেমড সেল থেকে স্থানান্তরিত করে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। পরদিন তাকে রাওয়ালপিন্ডিতে আনা হয় এবং ২৪ ডিসেম্বর জুলফিকার ভুট্টো তার সাথে সাক্ষাত করেন। ৬ জানুয়ারি ১৯৭২ মুজিবকে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং ৮ জানুয়ারি পিআইএ’র একটি বিমানে উঠিয়ে লন্ডন পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১০ জানুয়ারি। তিনি লন্ডন থেকে দিল্লী হয়ে ঢাকা পৌঁছেন। প্রিয়-নেতাকে এক নজর দেখার জন্য লক্ষ লক্ষ জনতা বিমানবন্দর ও রাজপথে নেমে আসে। এরূপ জনসমাগম অভূতপূর্ব।

১. ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ মন্ত্রিপরিষদে সিদ্ধান্ত হয় যে, যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি শত্রুর অধীনে দখলকৃত এলাকায় চাকুরিরত ছিলেন, বিনাবিচারে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে না। যুদ্ধকালে অফিস। ত্যাগ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারীগণ পূর্বপদে যােগদান করবেন এবং বর্তমানে কর্মরতরা “ওএসডি হবেন। স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজ শুরু করার জন্য ১৭ ডিসেম্বর দেশের। ১৯টির সব কটি জেলায় ডেপুটি কমিনার ও পুলিশ সুপার(ইনটেনডেন্ট) নিয়ােগ করা হয়। ১৯ ডিসেম্বর রােববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনতার আবেগ-আনন্দে আপুত সরকারি কর্মচারিগণ কাজে যােগদান করেন। মুজিবনগর সরকারের অন্যান্য মন্ত্রিগণ হলেন এ.এইচ, এম, কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন), ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী (অর্থ), খােন্দকার মােশতাক আহমদ (পররাষ্ট্র ও আইন)। পরে ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ শেখ আবদুল আজিজ, ফণিভূষণ মজুমদার, আবদুস সামাদ আজাদ ও জহুর আহমেদ চৌধুরীকে এবং ২৮ ডিসেম্বর অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা। হয়। ২৯ ডিসেম্বর তাদের দায়িত্ব বণ্টনকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব মােশতাকের পরিবর্তে সামাদ আজাদের উপর ন্যস্ত করা হয় এবং মােশতাককে করা হয় অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন মন্ত্রী তৎকালীন তেজগাও বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দানে পৌছতে তাকে বহনকারী গাড়িটির চার ঘণ্টা সময় লাগে।

রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ অস্থায়ী সংবিধান আদেশ ১৯৭২’ জারির মাধ্যমে দেশে বহু আকাক্ষিত সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন এবং পরদিন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী রাষ্ট্রপতি, শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য ১১ জন মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যাগমন ও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক। ২৩ নভেম্বর ১৯৭১ মুজিবনগর সরকার কর্তৃক কৃত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। পরদিন উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তি মােতাবেক মুক্তিবাহিনীকে ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লে. জে, জগজিৎ সিং অরােরার কমান্ডে ন্যস্ত করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদারদের তাবেদার গভর্নর মন্ত্রিপরিষদসহ পদত্যাগ করে। পরদিন সন্ধ্যায় উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ভারত-বাংলাদেশ যৌথবাহিনী ঢাকার উপকণ্ঠে সমবেত হয় তবে লে.জে. আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির অনুরােধে ১৫ ডিসেম্বর বিকাল ০৫-৩০ মি: থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ০৩-০০ মি: পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি পালন করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১০-৪০ মি: যৌথবাহিনী ঢাকা শহরে প্রবেশ করে এবং বিকাল ০৪-৫৫ মি: (ভারতীয় প্রমাণ-সময় ১৬-৩১ ঘন্টা) রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ দলিল স্বাক্ষরের। মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় ঘটে। ১৭ জানুয়ারি ১৯৭২-এর মধ্যে আত্মসমর্পণকারী ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দি সকলকে ভারতে স্থানান্তর করা হয়। এই যুদ্ধে। ১,৯৭৮ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত ও আহত হয় কয়েক হাজার। | যৌথবাহিনীর প্রধান জে, অরােরা ১৯ ডিসেম্বর প্রদত্ত এক ঘােষণায় বলেন, ভারতীয় বাহিনী প্রয়ােজনের অতিরিক্ত সময় বাংলাদেশে অবস্থান করবে না।’ ঢাকাসহ সর্বত্র ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশের মানুষ আন্তরিক স্বাগত জানায়। লন্ডন টাইমসের প্রতিবেদক পিটার হ্যাজেলহাস্টের ভাষায় : জনগণ ভারতীয় সৈন্যদেরকে তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে গ্রহণ করে এবং সৈন্যদের প্রতি কঠোর নির্দেশ থাকায় তারা হতবুদ্ধিতার সাথে প্রায় সকল স্থান থেকে আসা।

৩. ১০ এপ্রিল ১৯৭১ বাংলাদেশ গণপরিষদ কর্তৃক মুজিবনগরে জারিকৃত ‘স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র প্রদত্ত প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন ক্ষমতা’ বলে রাষ্ট্রপতি এই সংবিধান আদেশ জারি করেন। মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যবৃন্দ হলেন ১. সৈয়দ নজরুল ইসলাম ২, তাজউদ্দিন আহমদ ৩, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ৪. খােন্দকার মােশতাক আহমদ ৫. আবদুস সামাদ আজাদ ৬. এএইচ এম কামারুজ্জামান ৭, শেখ আবদুল আজিজ ৮. অধ্যাপক ইউসুফ আলী ৯, জহুর আহমদ চৌধুরী ১০, ফণিভূষণ মজুমদার ও ১১. ড. কামাল হােসেন আত্মসমর্পণ দলিলের জন্য দয়া করে পরিশিষ্ট ২ পড়ুন সৈয়দ আবুল মকসুদ, ভাসানী (প্রথম খণ্ড), ঢাকা, ১৯৮৬, পৃষ্ঠা ৩৯৯। এএল খতিব, কারা মুজিবের হত্যাকারী? শিখা প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯২ পৃষ্ঠা ৮৭

বিনামূল্যের উপহার এবং খাদ্য প্রত্যাখ্যান করে। নয় মাসের অভিজ্ঞতার পর বাঙালিরা প্রকাশ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পেশাধারী ঐতিহ্য ও যােগ্যতার প্রশংসা করে। সরকার তথা শেখ মুজিবের একটি বিরল কৃতিত্ব হলাে ভারতীয় বাহিনীকে অভাবিত অল্প সময়ের মধ্যে তাদের দেশে ফেরত পাঠানাে। পক্ষে বা বিপক্ষে, আমন্ত্রণ বা আক্রমণ যে কোন উপলক্ষে কোন বিদেশী সৈন্য একবার ঢুকে পড়লে এদের ফেরত পাঠানাে খুবই কঠিন, অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরােপের বিভিন্ন দেশে এর প্রমাণ রয়েছে। সেদিক থেকে, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হওয়ার আগেই, অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে মাত্র তিন মাসের মধ্যে মিত্রবাহিনীকে ফেরত পাঠানাে ছিল এক অসাধ্য সাধন। | ১২ মার্চ ১৯৭২ ঢাকা স্টেডিয়ামে ভারতীয় বাহিনীর বিদায়ী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৫ মার্চের মধ্যে তাদের প্রত্যাগমন সম্পন্ন হয়। বিদায়ী শুভেচ্ছা বাণীতে মুজিব তাদের উদ্দেশ্যে বলেন। আমাদের মহাসংকটের সময়ে আপনাদের প্রসারিত সাহায্যকে আমরা সর্বদা গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবাে। ইচ্ছা থাকলেও বাংলাদেশের জনগণ তাদের আতিথেয়তার হস্ত আপনাদের দিকে প্রসারিত করতে পারেনি। কারণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের কারণে তাদের (বাঙালিদের) আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। কিন্তু আপনাদের প্রতি তাদের রয়েছে অকৃত্রিম ভালবাসা। আমার অনুরােধ, আপনারা বাংলাদেশের জনগণের ভালবাসা সাথে করে নিয়ে যান। কিন্তু দুঃখজনক যে, ভারতীয় বাহিনী তাদের সুনাম শেষ পর্যন্ত অক্ষুন্ন রাখতে পারেনি। ফিরে যাওয়ার সময় ভালবাসার সাথে তারা কিছু দ্রব্যসামগ্রীও নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে যশাের, কুমিল্লা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে এবং খুলনার শিল্পাঞ্চলে লুটপাটের অভিযােগ উঠে। ভারতীয় বিশিষ্ট লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখায়ও এ অভিযােগের প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁর ভাষায় : ঢাকায় এতসব বিদেশী জিনিস পাওয়া যায়, এসব তাে আগে দেখেনি ভারতীয়রা। রেফ্রিজারেটর, টিভি, টু-ইন-ওয়ান, কার্পেট, টিনের খাবার-এইসব ভর্তি হতে লাগলাে ভারতীয় সৈন্যদের ট্রাকে ।… এসব দ্রব্য-সামগ্রী ছাড়াও সাধারণ্যে প্রচারিত হয় যে, আত্মসমর্পণকৃত পাকিস্তানি বাহিনীর সমুদয় অস্ত্রশস্ত্র ভারতীয় বাহিনী তাদের সাথে করে নিয়ে যায়। ১৭ জুন ১৯৭৪ জাতীয় সংসদে প্রদত্ত তথ্য থেকে জানা যায়, এসব অস্ত্র ও গােলাবারুদের বৃহদাংশ ভারত ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে এসব ফিরিয়ে দিলেও ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে

৮.  এএল খতিব, কারা মজিবের হত্যাকারী? পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১২৩-২৪

মঈদুল হাসান, মূলধারা ৭১, ইউপিএল, ঢাকা, ১৯৮৬, পৃষ্ঠা ২৪৫ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, পূর্ব-পশ্চিম (দ্বিতীয় খণ্ড), আনন্দ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলকাতা, ভারত, ১৯৮৯, পৃষ্ঠা ৪৮৭

গেছে। দু’দেশের জনগণ এবং সরকারের মধ্যেও ভালবাসার লাল গােলাপে তা অবিশ্বাসের কীট হয়ে দেখা দেয়। আর স্বভাবজাত ভারত-বিদ্বেষীদের তৃণে তা যােগ করে নতুন শর।  প্রয়ােজনের অতিরিক্ত একদিনও অবস্থান না করে বা অবস্থান বিলম্বিত করার কোন অজুহাত সৃষ্টি না করে ভারতীয় বাহিনী যেমন ধন্যবাদাহ, কৃত লুটপাটের জন্য (ফেরত দেয়া সত্ত্বেও) তেমনি তারা নিন্দাবাদাহও বটে। আর সবাই জানে যে, উপকার নয়, অপকারের কথাই মানুষের স্মৃতিতে অধিককাল স্থায়ী হয়। ২৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ডি.পি, ধর বাংলাদেশের বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সব ধরনের সহযােগিতা প্রদানের ঘােষণা দেন। প্রত্যুত্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মােশতাক উভয় দেশের সম্পর্ক উত্তরােত্তর। ঘনিষ্ঠ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এমনই আবহে ১৭ মার্চ ১৯৭২ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে আসেন। সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশেষভাবে নির্মিত একটি বিশাল নৌকার উপর সুদৃশ্য ইন্দিরা মঞ্চে তাঁকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা দেয়া হয়। ঢাকার রাজপথ ও সােহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ইন্দিরা ও মুজিব উভয়ে দু’দেশের গড়ে উঠা রক্তের রাখীবন্ধন অটুট রাখার প্রত্যয় ঘােষণা করেন। মাওলানা ভাসানী ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রীর চিরস্থায়ীত্ব কামনা করে বিবৃতি প্রদান করেন। ১৯ মার্চ উভয় দেশের যুক্ত ঘােষণা প্রকাশিত হয় এবং ২৫ বছর মেয়াদি মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারত ও আওয়ামী’ বিরােধীরা বিশেষ করে পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের সুবিধাভােগীরা এ চুক্তিকে ‘দাস-খত’, ‘গােলামী চুক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করলেও কেউ-ই তা বাতিল করেনি, এমনকি চুক্তির বিবরণ প্রকাশও করেনি। যথানিয়মে ২৫ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর এর মেয়াদ আর বাড়াননা হয়নি। চুক্তির বিবরণ পাঠে এর মধ্যে গােলামীর কোন শর্ত আবিষ্কার করা সম্ভব না হলেও রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্যে। এর যথেচ্ছ অপব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধ চলাকালে ভারতের সাথে বাংলাদেশ গােপন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বলেও অপপ্রচার চালানাে হয় যা তাজউদ্দিন দৃঢ়তার সাথে ১৩ জানুয়ারি ১৯৭৪ প্রত্যাখ্যান করেন। বর্ষাকালে বন্যা ও শীতকালে পানির দুষ্প্রাপ্যতা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য ‘যৌথ স্টাডি গ্রুপ’, ‘যৌথ নদী কমিশন’ প্রভৃতি গঠন করা হয়। সময় সময় মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৬ জুলাই ১৯৭৩ গঙ্গার পানি বণ্টন সম্পর্কে উভয় দেশ একমত হওয়া পর্যন্ত ফারাক্কা বাঁধ চালু না করার সিদ্ধান্ত হয় এবং ১৮ এপ্রিল ১৯৭৫ এবিষয়ে উভয়ের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ও ২১ মে ১৯৭৫ ফারাক্কা বাঁধ চালু হয়।১২

১১. মৈত্রী চুক্তির পুরাে বিবরণের জন্য পরিশিষ্ট ৩ পড়ুন ১২.  ১৬ মে ১৯৭৬ রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে আয়ােজিত এক জনসমাবেশে ফারাক্কা বাঁধ ভেঙ্গে গুড়িয়ে। দেয়ার শপথ গ্রহণ করে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে এক মিছিল শুরু হয়। এবং পরদিন কানসাট সীমান্তে অনুষ্ঠিত সমাবেশে গরম বক্তৃতার মাধ্যমে মিছিলের সমাপ্তি ঘটে।

১১ জুন ১৯৭২ সীমান্ত রক্ষায় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ১৯৭৪ এর মধ্য-মে’তে মুজিব-ইন্দিরা শীর্ষ বৈঠকে সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিমতে বাংলাদেশ বেরুবাড়ির পরিবর্তে ৪টি সিটমহল (enclave) পায়। এ চুক্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রীট পিটিশন করা হয় এবং তা খারিজ হলে সুপ্রীম কোর্টে আপীল করা হয়। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ তা-ও খারিজ হয়। চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২৮ নভেম্বর ১৯৭৪ সংবিধানের (তৃতীয়) সংশােধনী পাস করা হয়। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ থেকে উভয় দেশের মধ্যে পুনঃ পাসপোের্ট ভিসা চালু হয়। | ২৭ আগস্ট ১৯৭৩ ও ৩ জুলাই ১৯৭৪ যথাক্রমে ভারত-বাংলাদেশ পরমাণু সহযােগিতা চুক্তি ও আকাশপথ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২ জানুয়ারি ১৯৭৪ ভারত আন্তর্জাতিক বাজার দরে বাংলাদেশ থেকে ৬ লক্ষ বেল কাঁচা পাট আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করে। পুনর্বাসন-পুনর্গঠন পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে। সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত ভাষণে মুজিব বলেন : আজ সােনার বাংলার কোটি কোটি মানুষ গৃহহারা, আশ্রয়হারা। তারা নিঃসম্বল। আমি মানবতার খাতিরে বিশ্ববাসীর প্রতি আমার এই দুঃখী মানুষদের সাহায্য দানের জন্য এগিয়ে আসতে অনুরােধ করছি। আমাদের সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, খাবার না পায়, যুবকরা যদি চাকরি বা কাজ না পায়, তা হলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে- পূর্ণ হবে  আমাদের এখন তাই অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে, সেগুলাে মেরামত করতে হবে।…” ১ জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শুরু হয় এবং ২৩ জানুয়ারির মধ্যে মােট ৯৮ লক্ষ ৯৩ হাজারের মধ্যে ৫০ লক্ষ শরণার্থী প্রত্যাবর্তন করে। মহাসচিব ওয়াইল্ড হেইম জাতিসংঘের স্বস্তি পরিষদে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের জন্য ৪১১ কোটি টাকার প্রস্তাব পেশ করেন। দেশেও নতুন কোন করারােপ না করেই ৫৫০ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি সংবলিত পুনর্বাসন বাজেট পেশ করা হয়। পরে ৪,৪৫৫ কোটি টাকার প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়। পুনর্বাসন-পুনর্গঠন ক্ষেত্রে সে সময়ে সরকার নিম্নরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করে : • যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ৪টি রেলসেতু নির্মাণে ভারতের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর। • ১২ জুলাই ১৯৭২ তিস্তা রেলসেতু পুনঃ চালুকরণ।

জিয়ার সময়ে পানি বণ্টন চুক্তি হলেও মেয়াদান্তে তা নবায়িত হয় নি। পরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৩. সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৫০৫  

৩ মার্চ ১৯৭২ বাংলাদেশের প্রথম মুদ্রা ১ টাকা ও ১০০ টাকার নােট বাজারে ছাড়া। হয়। ২ জুন ১৯৭২ ছাড়া হয় ৫ ও ১০ টাকার নোেট। ৮ জুন পাকিস্তানি ৫ ও ১০ টাকার নােট অচল ঘােষণা করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ পাকিস্তানি ১ টাকার নােট এক মাস মেয়াদে সচল ঘােষণা করা হয়। ১ মে ১৯৭৩ ভারতে ছাপা ৫ ও ১০ টাকার নােট প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ নভেম্বর ১৯৭৩ নতুন ২৫ পয়সার মুদ্রা চালু করা হয়। ৫ এপ্রিল ১৯৭৫ একশত টাকার নােট বাতিল ঘােষণা করা হয়। ১০ মে ১৯৭২ ভারত-বাংলাদেশ অবাধ সীমান্ত বাণিজ্য চালু হয়। কিন্তু অচিরেই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং ৯ অক্টোবর তা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। সূতার ডিলারশীপ ও ডিস্ট্রিবিউশনশীপ বাতিল করে মিলে মজুত সূতা তাঁতীদের কাছে বন্টনের নির্দেশ দেয়া হয় এবং তাদের ঋণদানের জন্য ব্যাংক কনসাের্টিয়াম গঠন করা হয়।  বাংলাদেশ ভারত থেকে ২৪ কোটি টাকা, বিশ্ব ব্যাংক থেকে ৫ কোটি ডলার ও ৮ কোটি টাকা, ডেনমার্ক থেকে ৩৬ কোটি টাকা, জাপান থেকে ৯ বিলিয়ন ইয়েন, সুইডেন থেকে ১৪ কোটি টাকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮ মিলিয়ন ডলার ও জাতিসংঘ থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার ঋণ/পণ্যঋণ লাভ করে বা চুক্তি স্বাক্ষর করে।  ভােগ্যপণ্যের মূলাহ্রসের উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যের দোকান খােলা হয়। বস্ত্র বণ্টনে গােলমালের জন্য ১২ জুন ১৯৭৩ শহরে তা বন্ধ ঘােষণা করা হয়। ৩০ জুন ১৯৭২ দেশের প্রথম বাজেট পাস করা হয়। যুদ্ধোত্তরকালে মাত্র ৬ মাসের মধ্যে বাজেট প্রণয়ন করা ছিল খুবই কঠিন কাজ। ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ ও অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের বিষয় প্রাধান্য পায় বলে একে পুনর্গঠন বাজেট’ আখ্যা দেয়া হয়। বাজেটোত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন ঘােষণা করেন, ‘না খেয়ে মরব, তবু শর্তযুক্ত ঋণ নেব না। বাজেটে কোন নতুন কর আরােপ করা হয়নি। রেলেযাত্রী বা মালের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। উপরন্ত ১৪ এপ্রিল ১৯৭২ পর্যন্ত বকেয়া ও সুদ-সমেত কৃষিজমির খাজনা মওকুফ করা হয়, জমির সেচের বকেয়া মওকুফ করা হয়। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করা হয়। পৌরসভা ও শহর কমিটির অধীন সমস্ত বাড়ির বকেয়া ট্যাক্স ও এই খাতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেয় সমস্ত পাওনা মওকুফ করা হয়। ইজারা প্রথা বাতিল ঘােষণা করা হয়। কৃষি আয়ের উপর থেকে কর প্রত্যাহার করা হয়। বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত খাত ছিল কৃষি। প্রতিরক্ষার তুলনায় প্রাধান্য পায় শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ। একই ধারায় ২৭ নভেম্বর ১৯৭৩ প্রকাশ করা হয় ৪,৪৫৫ কোটি টাকার প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা। ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় ও ব্যয় ধরা হয় ৪৭০.২৩ কোটি টাকা।

১৯.  সংবাদ, ২ জুলাই, ১৯৭২ 

১৫ নভেম্বর ১৯৭২ শিল্পক্ষেত্রে ঋণ ও পরামর্শ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা গঠন করা হয়। জানুয়ারি ৬ ও মার্চ ৩১ বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রশ্নে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ মার্চ মাসে পাকিস্তানি আমলের রেজিস্ট্রিকৃত সকল ট্রেডমার্ক ও ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হয়। ১৪ মে ১৯৭৩ ৫টির স্থলে ২টি আলাদা বীমা কর্পোরেশন গঠন করা হয়। ৩১ জুলাই ১৯৭৩ ট্যারিফ কমিশন গঠন করা হয়। | ১৯৭৩-এর নভেম্বরে ধান ও চাউলের সংগ্রহ মূল্য যথাক্রমে ৪৫ ও ৭২ টাকা ঘঘাষণা করা হয়। পেট্রোল ও কেরােসিনের মূল্য ৩০% ভাগ বৃদ্ধি করা হয়। ফলে। ঢাকায় বাস ভাড়াও বৃদ্ধি পায়। ডিসেম্বর মাসে ইঞ্জিনের অভাবে গ্রীন এ্যারাে ও আখাউড়া-সিলেট মেইল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘােষণা করা হয়। এপ্রিল ১৯৭৪ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৩ হাজার মেট্রিক টন ভােজ্যতেল আমদানির জন্য। বাংলাদেশ এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। জুলাই মাসে চায়ের উপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হয়। মার্চ ১৯৭৫ কয়লা ব্যবসা সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং প্রথমবারের মতাে বাংলাদেশ থেকে কেবল রপ্তানি শুরু হয়। এপ্রিল মাসে বহুমুখী পল্লী সমবায়ের নীল-নকশা তৈরির কাজ সম্পন্ন করা হয়। ৩ মে ১৯৭৫ কমনওয়েলথ সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব পাকিস্তানকে বাংলাদেশের সম্পদ হস্তান্তর ও বাংলাদেশ থেকে ৬৬ হাজার পাকিস্তানি ফেরত নেয়ার আহ্বান জানান। শিল্প ব্যবস্থাপনা পাকিস্তানি প্রায়-ঔপনিবেশিক আমলে বাংলাদেশে (পূর্ব পাকিস্তানে শিল্পোন্নয়ন সাধিত হয়েছিল খুব সামান্য। যা হয়েছিল, সরকারি অর্থে পৃষ্ঠপােষণা ও প্রবর্তনা দিয়ে আদমজী, বাওয়ানী, দাদা, ইস্পাহানী প্রভৃতি অবাঙালি পুঁজিপতিগােষ্ঠীকে শিল্পক্ষেত্রে অবাধ শােষণের আধিপত্যদান। তথাকথিত বেসরকারি শিল্পখাতে সরকারি অর্থ সিংহভাগ জুড়ে তাে ছিলই, ইপিআইডিসি ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলাপমেন্ট কর্পোরেশন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শিল্প-কারখানাও তুলে দেয়া হত [২২ পরিবার খ্যাত) বেসরকারি শিল্প-মালিকদের হাতে। ফলে দেশের কল-কারখানা, ব্যাঙ্ক, বীমা, বাণিজ্য তথা অর্থনীতির প্রায় সম্পূর্ণটাই নিয়ন্ত্রণ করত পশ্চিম পাকিস্তানি বাইশ পরিবার। হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রাক্কালে ওরা এসব ফেলে রেখে চলে যায়। তাই বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ সরকার এগুলাের দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরে ২৬ মার্চ।

২০. এ অধ্যায়ে ব্যবহৃত তথ্যাবলি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ড. মােহাম্মদ হাননান, সিরাজ উদদীন আহমেদগণের পূর্বোক্ত গ্রন্থসমূহ ও অন্যান্য উৎস থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। ২১.  শেখ আব্দুল জলিল, ময়মনসিংহের বৃহৎ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (প্রবন্ধ), ময়মনসিংহের জীবন ও জীবিকা (স্মারক গ্রন্থ), জেলা প্রশাসন, ময়মনসিংহ, ১৯৮৭ ১৯৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি ২৯টি (পরে সকল) বীমা কোম্পানি ও ৫ ফেব্রুয়ারি ৩৯২টি পরিত্যক্ত। শিল্প-প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করে। এগুলাের কয়েকটি মুক্তিযােদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও সেনাকল্যাণ সংস্থাকে দেয় হয় এবং ৩৫টি ২৩ জানুয়ারি ১৯৭৫ বিক্রয় করে দেওয়া হয়।  স্বাধীনতার প্রথম বার্ষিকীতে ‘শিল্প-প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আদেশ জারি করে এ-সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৭২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পরিত্যক্ত বৃহত্তম আদমজী জুটমিল চালু করা হয় এবং মে দিবসে শ্রমিকদের এডহক সাহায্যদানের ঘােষণা দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালের ৮ জানুয়ারি শিল্প বিনিয়ােগ নীতি ঘােষণা করা হয়। এতে অনধিক ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যের প্রতিষ্ঠান পরবর্তী ১০ বছর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অক্টোবর-নভেম্বরে শিল্প-শ্রমিক মজুরি কমিশন অনুমােদন ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প শ্রমিক | অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। বছরের শেষদিকে (২৭ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে দেশের প্রথম পশম কারখানা উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু অদক্ষ, দুর্নীতিবাজ ও ভুল ব্যবস্থাপনা এবং লাল বাহিনীর দৌরাত্ম্যে রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ লােকসান দিতে শুরু করে। এক হিসেবে দেখা যায়, মাত্র দেড় বছরে ১২টি শিল্পখাতে ৯৩ কোটি টাকা লােকসান ২৩ এ-সম্পর্কিত নীতিমালা ছিল নিম্নরূপ :

ক, ব্যাংক ও বীমা ব্যবসায় জাতীয়করণ খ, সমগ্র পাট, বস্ত্র, চিনি, শিল্প এবং অন্যান্য বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পের বাঙালি মালিকানাধীনসহ দেশের মােট শিল্প খাতের শতকরা ৮৫ ভাগ] জাতীয়করণ গ. বৈদেশিক বাণিজ্য জাতীয়করণ ঘ. ব্যক্তি-পুঁজির সিলিং ২৫ লক্ষ টাকায় নির্ধারণ [পরে ১৬ জুলাই ১৯৭৪ তা ৩ কোটি টাকায় বৃদ্ধি | করা হয়। ও, দেশীয় ব্যক্তি পুঁজির সাথে বিদেশী পুঁজির যৌথ বিনিয়ােগ নিষিদ্ধকরণ (২৩ মার্চ ১৯৭৩ বিদেশী পুঁজি বিনিয়ােগ বাের্ড গঠন করা হয়। চ, সরকারি খাতে বিদেশী পুঁজির যৌথ বিনিয়ােগের ক্ষেত্রে সরকারের অংশ ন্যূনতম শতকরা ৫১ ভাগ স্থিরিকরণ ইত্যাদি। [উদ্ধৃত নজরুল ইসলাম, জাসদের রাজনীতি-একটি নিকট বিশ্লেষণ, প্রাচ্য প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৮১, পৃষ্ঠা ১১৯-২০; পাদটীকা] ২বিএনপি-জামাত জোট সরকার ২০০২ সালে আদমজী বন্ধ করে দেয় স্বাধীনতার পূর্বে শিল্প-প্রতিষ্ঠান পরিচালনার উচ্চ ও মধ্য পর্যায়ের পদগুলাে অবাঙালিদের দখলে। ছিল। কৃষিজীবী বাঙালিদের মধ্যে এমনকি দক্ষ শ্রমিকেরও অভাব ছিল। এমতাবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে। প্রাক্তন মালিক বা সুবিধাভােগীদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়ে শিয়ালের হাতে মরগি বর্গা দেয়া হয়। বিস্ময়ের ব্যাপার যে, পরিত্যক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস (আই এম এস) নামে একটি নতুন ক্যাডার সার্ভিসে যােগদানকারী কাউকে কাউকে তরুণ বয়সেই কোটিপতি বনে যেতে দেখা গেছে। (দ্রষ্টব্য ড, মােহম্মদ হাননান, বাংলাদেশের ছাত্র। আন্দোলনের ইতিহাস বঙ্গবন্ধুর সময়কাল, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৭৬)। স্বাধীনতার পর শ্রমিক লীগ প্রধান এমএ মান্নানের নেতৃত্বে লাল বাহিনী নামে শ্রমিকদের একটি মাস্তান বাহিনী গড়ে ওঠে। লাল টুপি পরিহিত এসব শ্রমিক উৎপাদন কাজে নিয়ােজিত না হয়ে রাজপথে প্যারেড, চাঁদাবাজী, মুক্তিপণ আদায় প্রভৃতি দুষ্কর্ম করে বেড়াত ও মাস শেষে বেতনসহ যাবতীয় বৈধ-অবৈধ সুযােগ সুবিধা ভােগ করতাে। অবশেষে ঢাকা কটন মিলের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযােগে ২ জানুয়ারি ১৯৭৫ মান্নানকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ততদিনে বুড়িগঙ্গা দিয়ে অনেক পানি গড়িয়ে যায়।

হয়। ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভতুর্কি দিতে দিতে এগুলাে সরকার ও জনগণের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। এ সুযােগে কেউ কেউ জাতীয়করণকে ভ্রান্ত নীতি আখ্যায়িত করে এগুলাে প্রাক্তন মালিকদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করেন। প্রসঙ্গক্রমে এ আওয়ামী লীগের নীতি নয়, বামপন্থীদের চাপে এ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে’ একথা বলে তারা আওয়ামী লীগকে মানসিকভাবে দুর্বল করার প্রয়াস পায়।  আওয়ামী লীগের জন্ম ও ক্রমবিকাশ এবং স্বাধীনতা আন্দোলন প্রভৃতি বিবেচনা করলে এ দাবির অসারতা প্রমাণিত হয়। ১৯৪৯ খ্রি. ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠালগ্নে গৃহীত ১২ দফা কর্মসূচির ১১তম দফায় বলা হয় : বিনা খেসারতে জমিদারি ও অন্য সকল মধ্যস্বত্ব বিলােপ করা হবে। সকল আবাদযােগ্য জমি পুনর্বণ্টন করা হবে। ১২তম দফায় বলা হয়, ‘সকল জমি জাতীয়করণ করা হবে।”২৮ ১৯৫৪ সালে নির্বাচন উপলক্ষে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার ৩য় দফায় বলা হয় : পাট ব্যবসা জাতীয়করণ করার উদ্দেশ্যে একে পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রত্যক্ষ পরিচালনাধীনে আনয়ন করিয়া পাটচাষীদের পাটের মূল্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হইবে…।” ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টিকারী ১১ দফার ৫ম দফায় বলা হয় : ব্যাংক, বীমা, ইনস্যুরেন্স ও বৃহৎ শিল্প জাতীয়করণ করতে হবে।” ১৯৭০ সালে প্রকাশিত নির্বাচনী ঘােষণায় আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করে।” ১১ জানুয়ারি ১৯৭০ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় শেখ ২। দৈনিক ইত্তেফাক, ৩ জুন ১৯৭৩। এ সময়কালে পাটকলে ২৫ কোটি, চিনিকলে ৭ কোটি, কাগজকলে ৩.৫ কোটি, ইস্পাতকলে ১.৫ কোটি ও খনিজ কর্পোরেশনে ১১ কোটি টাকা লােকসানের হিসেব সাপ্তাহিক সােনার বাংলা ৭ অক্টোবর ১৯৭৩ সংখ্যায় প্রকাশ করে। পাটকলে লােকসান হওয়ার অন্যতম কারণ হল অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে গুদামে আগুন লাগিয়ে কোটি কোটি টাকার পাট পুড়িয়ে দেওয়া। ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ প্রকাশিত এক তথ্যে জানা যায়, কাঁচা পাটের অভাবে শুধু চট্টগ্রামে ১৭টি মিল বন্ধের উপক্রম হয়। তবে এত কিছুর পরও ২৩ এপ্রিল ১৯৭৪ প্রকাশিত সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে জানা যায়, ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে ৯টি সেক্টর কর্পোরেশনের অধীন জাতীয়করণকৃত শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ ১৭ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে। * সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পূর্বেক্ত, পৃষ্ঠা ৭৪। তঙ্কালীন পূর্ববঙ্গে শিল্প কারখানা গড়ে উঠেনি বলেই বােধহয় তা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ২৯ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, প্রথম খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, ১৩৮৯ বঙ্গাব্দ (১৯৮২), পৃষ্ঠা ৩৭৩-৭৪ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, দ্বিতীয় খণ্ড, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৪০৫-০৮ ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ঘােষণায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কর্মসূচী ছিল নিম্নরূপ : ক, দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা এবং এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে | ব্যাঙ্ক, বীমা, পাট শিল্প, বস্ত্র শিল্প এবং অন্যান্য ভারী ও মৌলিক শিল্পের জাতীয়করণ। খ, ভূমিসংস্কার সম্পাদন এবং ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণের লক্ষ্যে জমির মালিকানা ব্যবস্থায় পরিবর্তন সাধন ট্যাক্স ও খাজনা ব্যবস্থায় সংস্কার সাধন, বিশেষত লবণের উপর থেকে কর প্রত্যাহার এবং ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ(করণ)

মুজিব ঘােষণা করেন : আওয়ামী লীগ চায় কৃষকের, শ্রমিকের রাজত্ব কায়েম করতে। আওয়ামী লীগ দেশের সকল মূল শিল্পসহ ব্যাংক ও বীমা ব্যবসা জাতীয়করণ করবে। ওই

এ-ঘােষণা ছাত্রদের ১১-দফা দাবিরই প্রতিধ্বনি। যুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী এম, মনসুর আলী এক বেতারভাষণে বলেন :

স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঠামাে হবে সমাজতান্ত্রিক। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে প্রথম সুযােগেই শেখ মুজিব ঘােষণা করেন, আমি স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিতে চাই যে, আমাদের দেশ হবে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক দেশ।

১৪ জানুয়ারি ১৯৭২ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শেখ মুজিব বলেন :

জনগণের আকাক্ষা শুধুমাত্র সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রবর্তনের মাধ্যমেই পরিপূর্ণ। হতে পারে এবং নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় কৃষি, শিল্প ও অর্থ-ব্যবস্থার ‘প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন করতে হবে।”

উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে ঢাকায় সংবিধানের মূলনীতির ওপর অনুষ্ঠিত সম্মেলনেও ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান হবে একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। উপযুক্ত ঘােষণাসমূহ থেকে বুঝা যায়, জাতীয়করণ বা সমাজতন্ত্রের ঘােষণা হঠাৎ করে বা পরিস্থিতির চাপে পড়ে আসেনি বা তা সরকারের পথভ্রষ্টতাও নয়। এটি স্বাধীনতার মতােই জনগণের দীর্ঘদিনের আকাক্ষা যা ক্রমে ক্রমে বিকাশ লাভ করেছে। তল্কালিন শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরকারের শিল্প সংক্রান্ত নীতিমালা ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন :

শিল্প-কারখানার শেয়ার ৩০ শতাংশ শ্রমিকদের, ৩০ শতাংশ মালিক এবং ৪০ শতাংশ সরকারের কাছে বণ্টন করা হবে। ৭

তবে এ-ও সত্য যে, এ-বিষয়ে সরকারের কোনাে পূর্বপ্রস্তুতি বা অভিজ্ঞতা। কোনােটাই যেমন ছিল না তেমনি এগুলাে চালানাের মতাে সংগঠনিক কাঠামাে বা দক্ষ জনবলও ছিল না। সমাজতন্ত্রকে লক্ষ্য গণ্য করে পুঁজি বিনিয়ােগ সিলিং ২৫ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরে তা বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা করা হয় (পরবর্তী সরকার সিলিং তুলে দিয়ে মুক্ত অর্থনীতির দ্বার উন্মােচন করে)। প্রকৃত প্রস্তাবে ২৫ লক্ষ টাকায় কোন শিল্প-কারখানা করা সম্ভব ছিল না। একই ভাবে পরিবারের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে জমির

ওই সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ২৬৫ ৩০ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, জেল হত্যাকাণ্ড, জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯১, পৃষ্ঠা ৯৬ * সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৫০৬

এ এল খতিব, কারা মুজিবের হত্যাকারী? পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১০৯

এ এল খতিব, কারা মুজিবের হত্যাকারী? পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১৪৩ ৩৭ মনিং নিউজ, ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ 

৩০ মার্চ ১৯৭৩ ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষা সেমিনার ও মাদ্রাসা শিক্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব সেমিনার ও সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে মাদ্রাসা শিক্ষা অব্যাহত থাকা ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানান।

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭২ বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্সসহ সকল কালাকানুন বাতিল করা হয় এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ স্বায়ত্তশাসন সংবলিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে ১৯৭৩ জারি করা হয়। অনুরূপভাবে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারি করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করা হয়। ১ নভেম্বর ১৯৭৩ অবহেলিত প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষকগণ সরকারি চাকুরেতে পরিণত হন। ২২ এপ্রিল ১৯৭৩ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তনে ফরাসি দার্শনিক মসিয়ে আঁন্দ্রে মালরােকে ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করে। মালরাে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তােলেন। তিনি একজন সশস্ত্র যােদ্ধা হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণেরও ঘােষণা দিয়েছিলেন। ৯ ডিসেম্বর ১৯৭৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশেষ সমাবর্তনে অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বােস (মরণােত্তর), ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (মরণােত্তর), কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ওস্তাদ আলী আকবর খান, ড. হিরেন্দ্র লাল দে, ড. মুহাম্মদ কুদরাত-ই-খুদা, অধ্যাপক কাজী মােতাহার হােসেন ও অধ্যাপক আবুল ফজলকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করা হয়। ১৩ মার্চ ১৯৭৩ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ২,২৮৯ জন ডিগ্রীধারীকে সনদ প্রদান করা হয়। ১৮ মার্চ ১৯৭৫ ড. কাজী মােতাহার হােসেন, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ও শিল্পাচার্য। জয়নুল আবেদিনকে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ করা হয়। | ৬ মার্চ ১৯৭৫ রামপুরায় নির্মিত টেলিভিশন ভবন উদ্বোধন করা হয়, ৩ জুলাই। ২০ ইঞ্চি টেলিভিশন (সাদা-কালাে) ও ১ ব্র্যান্ড রেডিওর লাইসেন্স ফি বাতিল এবং ২৯ মে নাট্যানুষ্ঠানের উপর থেকে প্রমােদর বিলােপ করা হয়। ১৫ এপ্রিল ১৯৭৫ ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা উদ্বোধন করা হয়। ১৬ জুলাই ১৯৭৫ সতের জন দুঃস্থ শিল্পী ও সাহিত্যিককে আর্থিক সাহায্য দান করা হয়। মুদ্রণ ও প্রকাশনা আধুনিক সমাজে মুদ্রণ ও প্রকাশনার গুরুত্ব অপরিসীম। মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ২২ ডিসেম্বর ১৯৭১ ঢাকা ফিরে এসেই ‘প্রেস ট্রাস্ট’ বিলুপ্ত করেন এবং ২ জানুয়ারি ১৯৭২ বাংলাদেশ সংবাদপত্র (প্রশাসন) আদেশ জারি করেন। পরে ২৮ আগস্ট ১৯৭৩ সাবেক প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অর্ডার বাতিল করে নতুন ‘প্রিন্টিং অর্ডিন্যান্স’ জারি করা হয়। ২৪ এপ্রিল ১৯৭২ টেলিভিশন কর্পোরেশনকে সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

 

সূত্র : বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৭২-১৯৭৫ – হালিমদাদ খান