You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.14 | অবরুদ্ধ ঢাকার শেষ দীর্ঘতম দিন | যুগান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

অবরুদ্ধ ঢাকার শেষ দীর্ঘতম দিন

নাৎসীদের কবল থেকে অধিকৃত ইউরােপ উদ্ধারের জন্য দ্বিতীয় ফ্রন্ট খেলার দাবী নিয়ে যখন আন্দোলন চলছিল তখন তার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল নাৎসীদের পিছন থেকে আক্রমণ করে তাদের সমরশক্তি নষ্ট করা। ন্যান্ডি উপকূলে শেষ পর্যন্ত খােলা হয়েছিল দ্বিতীয় ফ্রন্ট। মিত্রবাহিনী সেই অভিযান ছিল সর্বাত্মক ব্যাপক এবং অতর্কিত। ফরাসী উপকূলের যে দিকটায় নাৎসীরা মিত্র বাহিনীর অব্যিান আশংকা করেছিল, ইংলিশ চ্যানেলের সেদিকে সৈন্য না নামিয়ে মিত্রবাহিনীর অভিযান পরিকরিপত হয় অন্য এক স্থানে, ফ্রান্সের নর্মান্ডী উপকূলে। নাৎসী বাহিনী তার জন্য প্রস্তুত ছিল না। ফলে সেই অবিযান প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি নাৎসী বাহিনীর পক্ষে।
এই অভিযান ছিল অধিকৃত ফ্রান্সের জনগণের বহু প্রতিক্ষিত। প্রতিরােধ বাহিনীর লােকেরা নিয়মিতভাবে সংয়বাদ সরবরাহ করে মিত্র বাহিনীর অভিযানকে সাফল্য মন্ডিত করতে সহায়তা করেছিল প্রকৃতভাবে। ভিতর থেকে নাৎসীদের ঘাটির ওপর আক্রমণ চালিয়ে, মিত্র বাহিনীর ছত্রী সেনাদের অবতরণের জন্য সঠিক সঙ্কেত প্রেরণ করে, তাদের আশ্রয় দিয়ে সেদিনের ফ্রান্সের এবং ইউরােপের নাৎসী বিরােধী জনগণ তাদের মাতৃভূমিকে শত্রুকবলমুক্ত করতে সাহায্য করেছির নানাভাবে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরও সেই দিনেরই প্রতিক্ষায় এই দীর্গতম দিন যা নিয়ে আসবে সােনার বাংলার মুক্তি পাকিস্তানি রাহুগ্রাস থেকে।
ঢাকার অসামরিক নরনারী গত নয় মাস ধরে বাস করে আসছেন দীর্ঘ আমাবস্যার রাত্রীতে। স্বজন হারিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে যারা বেঁচে আছেনতাদের একটি মাত্রই আশা কবে আসবে সেই মুক্তির রৌদ্রজ্জল দিন, কবে আবার বলতে পারবেন তারা বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি। অবরুদ্ধ নগরী ঢাকা আজ মুকিতর দারপ্রান্তে। কিন্তু তবুও তার আশংকা যায় না। শেষ মুহূর্তে নাদির শাহ-র বংশধররা যাবার আগে কী রক্তাক্ত ইতিহাস রচনা করা যায় কে জানে? অস্ট্রেরিয়ার বেতারের সংবাদদাতা ঢাকা থেকে যে সংবাদ দিয়েছেন তাতে নগর জীবণের বেশ একটি মজার দিক উদঘাটিত হয়েছে। ঢাকার সৌখিন হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালিক নিরপেক্ষ এলাকা ঘােষণা করেছেন রেডক্রশ। সেখানে তিন শতাধিক বিদেশী ও তিন শতাদিক পাকিস্তানি আশ্রয় নিয়ে আছেন। সকলেই প্রতিক্ষা করছেন মুক্তিবাহিনী এবং তাদের মিত্রবাহিনী কখন কিভাবে ইয়াহিয়া-র শেষ যুগের পতন ঘটান। সময় তাদের কাটছে না। সময় তার দুঃসহ বােঝা নিয়ে ভালী হয়ে বসেছে তাদের কাঁধে। তাই চরমতম দূর্যোগের ঘনায়মান ছায়ার তলায় বসে তারা দাবা এবং পিংপং খেলে এবং প্রচুর মদ্যপান করে সেই দীর্ঘতম দিনটির জন্য প্রতীক্ষারত। আর ওদিকে বকেয়া পাকিস্তানের জন্য শেষ লড়াই করবেন কি খােদা হাফেজ বলে আত্মসমর্পণ করবেন তারই পরিকল্পনায় মেষ কয়টি বিনিদ্র রাত যাপন করছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী ও তার হতাবশিষ্ট অনুচরগণ। ঢাকায় পাঠান সাম্রাজ্যের দ্বিতীয়বার সমাধির সব আয়ােজন সম্পূর্ণ।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১