সামাজিক পরিবেশ স্বাভাবিক রাখুন
শনিবার থেকে লাগাতর অস্তোদয় নিষ্প্রদীপ সুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতার পথে যানবাহনের সংখ্যা কমতে সুরু করেছে। রবিবার থেকে প্রাইভেট বাসের মালিকরা সন্ধ্যা ৬টায় শেষ খেপ গাড়ী ছাড়া ঠিক করেছেন। রাষ্ট্রীয় পরিবহন এবং ট্রাম চলাচল চালু থাকলেও তাও বেশ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। অথাৎ মাত্র ২ দিন যুদ্ধ হতে না হতেই আমরা যেন স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সুরটি হারিয়ে ফেলছি। বলা নিষ্প্রয়ােজন যে এটা বাঞ্ছনীয় নয়। সঙ্কট যে রকমই হক আর যত বড় হয়েই দেখা দিক কাজ কারবার, অফিস আদালত স্কুল কলেজ, হাসপাতল, রেশন দোকান, তার ও ডাক বিভাগ, জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, এক কথায় প্রাত্যহিক জীবনের জন্যে যা কিছু প্রয়ােজনীয়, তার ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। যেহেতু তাই হল নিশ্চিত জয়ের পথে শ্ৰেষ্ঠ সহায়ক।
আর এইসব প্রতিষ্ঠান সচল রাখতে হলে চাই অনেক রাত্রি পর্যন্ত মানুষের চলাফেরার সুযােগ ব্যাহত বা সঙ্কুচিত হতে না দেওয়া। যানবাহনই হল স্বাভাবিকতা রক্ষার প্রধান উপায়। তা সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্ধান করলে অনিবার্যভাবেই দেখা দেবে রকমারি বিশৃঙ্খলা। প্রথমত নৈশকর্মী যারা তারা এর ফলে বিপন্ন হয়ে পড়বেন এবং তাতে কাজের গতি সঙ্কুচিত বা ব্যাহত না হয়ে পারবে না। দ্বিতীয়ত মানুষের অবাধ চলাচল থাকলেই রকমারি গুজব দিকে দিকে ছড়াবে যা আজকের পরিবেশে হতে দেওয়া কোন কারণেই শ্রেয় নয়। তা ছাড়া সমাজ জীবনের আনাচে কানাচে যে সব অবাঞ্ছিত মানুষ বদমায়েসীর ব্যবসা করে, তারা এই সুযােগ নিতে পারবে না, যদি পথঘাট অন্ধকার নামার সঙ্গে সঙ্গে ঝিমিয়ে না পড়ে।
বলার প্রয়ােজন নেই যে অনেক স্কুলেই এখন বাৎসরিক পরীক্ষা চলছে। সামনে রয়েছে টেষ্ট পরীক্ষা। এই উপলক্ষে বহু পড়ুয়া এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় পড়তে যায়। যানবাহনের চলাচল অনির্ভরযােগ্য হয়ে পড়লে, তারা বিষম বিপাকে পড়বে। কাজেই শুধু নিম্প্রদীপেই যেন অসামরিক কর্তৃপক্ষের সমস্ত উদ্যম নিঃশেষ হয়ে না যায়। সহসা বিপদ দেখা দিলে পথচারীরা যাতে নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। মুনাফা শিকারীরা যাতে মৌকা পেয়ে না যায় বা গুণ্ডা, গাঁটকাটা এবং ছিনতাইবাজরা যাতে নেকড়ের মত অন্ধকারে হানা দিয়ে বেড়ানর সুযােগ না পায়, সর্বপ্রযত্নে তা দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে রণাঙ্গনে যেমন যুযুধান সৈনিকেরা লড়ছেন, গৃহাঙ্গনে তেমনি প্রতিটি মানুষকেও সাহস সংহতি ও কল্যাণ বুদ্ধি নিয়ে লড়তে হবে। সুস্থ সমাজের সেই নৈতিক প্রভাবই প্রতিফলিত হবে সফল সামরিক প্রচেষ্টার মধ্যে। বিপর্যস্ত সমাজ বিপদেরই বেড়াজাল সৃষ্টি করে।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১