বিলাতের পত্র পত্রিকার ভূমিকা ডিসেম্বর ৭১
১ ডিসেম্বর ‘দি টাইমস’ পত্রিকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ৩০ নভেম্বরে রাজ্য পরিষদে প্রদত্ত বক্তৃতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নাই বলে তিনি সরকারের মনােভাবের কথা উল্লেখ করেন। মিসেস গান্ধী আরাে বলেন, পাকিস্তান যদি শান্তির পক্ষে হয় তা হলে ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশ থেকে তার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে। ঐ রাতেই এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ভারতের দেশরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম বলেন, আত্মরক্ষার প্রয়ােজনে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীকে পূর্ববঙ্গে প্রবেশ করে পাকিস্তান সেনা বাহিনীকে মােকাবেলা করার অনুমতি দেয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ১ ডিসেম্বর ‘দি গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় ম্যাম ডীন কর্তৃক প্রেরিত এক খবরে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের কর্মতৎপরতার বিবরণ প্রকাশিত হয়। খবরে বলা হয় যে, প্রতিনিধি দল প্রায় ১০০টি দেশের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশে মুক্তিযােদ্ধাদের সাফল্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বাস্তবতা এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। ২ ডিসেম্বর জাতিসংঘ থেকে ‘দি গার্ডিয়ান’ পত্রিকার সংবাদদাতা ম্যাকম্ ডীন প্রেরিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। বিচারপতি চৌধুরী বলেন, মার্চ মাসে যখন ইয়াহিয়া খান পূর্ববঙ্গে’ গণহত্যা পরিচালনা করছিল তখন জাতিসংঘ ঐ জঘন্য অপরাধকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরিণ ব্যাপার বলে কোন আমলে আনে নি। আর এখন যখন বাংলাদেশে মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তান সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সফলতা লাভ করছে তখন জাতিসংঘের পক্ষে পূর্বের মতাে নিষ্ক্রিয়। থাকাই উচিৎ। তিনি বিবৃতিতে আরাে বলেন, বাংলাদেশ অতি শীঘ্র স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে এবং অনেক দেশের স্বীকৃতি লাভ করবে। তাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এই চূড়ান্ত বিজয়ের সময়ে জাতিসংঘের কোন পদক্ষেপ গ্রহণযােগ্য হবে না। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, এ সময়ে বিচারপতি চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানের জন্য জাতিসংঘে অবস্থান করছিলেন।
৩ ডিসেম্বর ‘দি টাইমস’ পত্রিকায় “India’s tactics in East Pakistan” শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধে বলা হয় যে, ভারতের অভ্যন্তরে “বাংলাদেশের শরণার্থীদের ভার বহন করতে ভারত যে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন অনেক কম ক্ষতির ঝুকি নিয়ে যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করে শরণার্থী দেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারলে উপমহাদেশে শান্তি ফিরে আসবে যুদ্ধ – উপায় হিসাবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়- No war avoided if the rulers of on the wall and give has yet begain. he insists, and war can be avoided if the Pakistan will read the writings on the wall and pendence to the peole of Bangladesh in accordance with their wishes” একই দিনে দি টাইমস্ পত্রিকায় কলিকাতা থেকে সা পরিবেশিত মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণ এবং ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বলা হয় যে, মুক্তিযােদ্ধাদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং না থাকায় পাকিস্তানী নিয়মিত সেনাবাহিনীর সাত কুলিয়ে উঠতে পারছেনা এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি সতে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক সীমান্ত এলাকায় কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখলের খবরও এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ৪ ডিসেম্বর বিলাতের সকল পত্রিকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধী ভারতে জরুরী অবস্থা ঘােষণা করে জাতির উদ্দেশ্যে যে বেতার ভাষণ প্রদান করেন তার বিবরণ প্রকাশিত হয় । মিসেস গান্ধী বলেন যে, পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে পূর্ণ যুদ্ধ ঘােষণা করেছে এবং দেশে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। ৪ ডিসেম্বর ‘দি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভূট্টোর ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি সম্বলিত একটি খবর প্রকাশিত হয় । মিঃ ভূট্টো এক জনসভায় ভারতীয় আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইয়াহিয়া খানকে ক্ষমতা ত্যাগ করে তার কাছে পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি করেন ৫ ডিসেম্বর “দি সানডে টাইমস্’ পত্রিকায় এনথােনি মাসকারেনহাস “Why they went te, war” শিরােনামে একটি বিশ্লেষণাত্মক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন বিশ্বের বড় বড় শক্তিশালী দেশগুলাের দীর্ঘ দিনের নীরবতা এবং ভারতে শরণার্থী প্রবেশের ফলে সৃষ্ট কি পারশাণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের ফলে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ প্রয়ােজন হলে তার বিশ্লেষণ ভারতের পক্ষে এছাড়া যে কোন বিকল্প ছিল না তা প্রবন্ধে মন্তব্য করা হয়। প্রববাে শুরুতেই উল্লেখ করা হয় যে, ‘The hard truth of the matter is that to was reluctantly forced to the conclusion that there could solution to the refugee problem other than war. Eight looking to the International Community for help disappointing.” একই দিনে ‘দি সানডে টাইমস্’ পত্রিকায় চলে slaughter” শিরােনামে একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সপ বন্ধ করার উপর গুরুত্ব দিয়ে মন্তব্য করা হয় যে, এখনও যদি পু মুজিবকে মুক্তি দিয়ে তার দাবি মেনে পূর্ববঙ্গে স্বায়ত্তশাসন এ বন্ধ হতে পারে।
৬ ডিসেম্বর “দি টাইমস’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, মুক্তিযােদ্ধাদের যােগিতায় ভারতের সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসাবে আক্ষায়িত করে যুদ্ধ বিরতির জন্য একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিলে উথাপন করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্যদেশগুলাের মধ্যে ১১টি নে প্রস্তাবের পক্ষে, সােভিয়েট ইউনিয়ন ও পােলান্ড প্রস্তাবের বিপক্ষে এবং বৃটেন ও ফ্রান্স ভােট দানে বিরত থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব পরিশেষে সােভিয়েত ইউনিয়নের ভিটো’ প্রয়ােগের ফলে কার্যকর করা সম্ভব হয় নাই ৬ ডিসেম্বরে ‘দি ডেহলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার এক খবরে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ব্যাপকতা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুদ্ধের জন্য ভারতকে দায়ী করে। যুদ্ধের গুরুত্ব উপলব্ধি করে মার্কিন সেক্রেটারী অফ স্টেট উইলিয়াম রজার্স বিদেশ সফর বাতিল করেন এবং প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ড. হেনরি কিসিংগারের নেতৃত্বে একটি এ্যাকশন গ্রুপ সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটরিং করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ৭ ডিসেম্বর ‘দি টাইমস্ দি গার্ডিয়ান’ এবং ‘দি ডেইলি টেলিগ্রাফ’ সহ সকল পত্র পত্রিকায় ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের খবর ব্যানার শিরােনামে প্রকাশিত হয়। এই স্বীকৃতি দানের সাথে সাথে বাংলাদেশ যে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি হলাে তার বাস্তবতা সম্পর্কে সকল পত্র পত্রিকা মন্তব্য করে বলা হয় যে, অল্প দিনের মধ্যে বাংলাদেশকে আরাে অনেক দেশ স্বীকৃতি দেবে। এই দিনের পত্র পত্রিকায় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি, মুক্তিযােদ্ধাদের অগ্রযাত্রা এবং যুদ্ধরত প্রতিপক্ষের পরস্পর বিরােধী দাবি সমূহের বিবরণ প্রকাশিত হয়। ৭ ডিসেম্বর বিলাতের সকল পত্র পত্রিকায় এই দিনটিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসাবে চিহ্নিত করে সম্পাদকীয় প্রবন্ধ প্রকাশ করে। ৭ ডিসেম্বর ‘দি টাইমস’ পত্রিকায় “The deadlock at the UN” শিরােনামে এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তীব্র সমালােচনা করা হয়। সম্পাদকীয় এর শুরুতেই মন্তব্য করা হয় “The United Nations Security council seems as powerless as ever to stop a war that nobody wants except the combatants. True, it is great power division that has brought the deadlock in New Youk as it did in the Past. একই দিনে ‘দি ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় সম্পাদকীয় নিবন্ধে ভারত কর্তৃক ‘লাদেশকে স্বীকৃতি দানের যৌক্তিকতাকে সমর্থন করে বলা হয় যে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে। রেই রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরােপের কয়েকটি দেশ ভারতকে অনুসরণ করবে। সম্পাদকীয় শব্দে এক পর্যায়ে মন্তব্য করা হয় “Given Indias policy and the stage ” has been reached on the ground in East Pakistan the decision had indeed become logical.
এবং সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান কামনা করেন। পিটার শাের বলেন যে ত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে হলে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা । অপরিহার্য। মিঃ ডগলাসম্যান পাকিস্তানের যুদ্ধ বন্ধ করার লক্ষ্যে হাউজে উ যে প্রস্তাব তৈরি করেছেন তাতে এ পর্যন্ত হাউজের উভয়পক্ষের ১০০ জন সদ করেছেন বলে হাউজকে অবহিত করেন। তিনি তার বক্তব্যে এক পর্যায়ে প্রশ্ন : Right Hon. Gentleman aware ol the widespread Iccling Pakistan, after the events of the last few weeks, can never be country” তিনি পাকিস্তানে’ এই অন্তর্ঘাতি যুদ্ধ বন্ধ করার লক্ষ্যে বৃটিশ সরকারকে সকল প্রকার প্রভাব ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অনুরােধ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী উপসংহারে বলেন যে, উপরােক্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পিটার শাের বলেন যে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ভাবে নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবের মুক্তি বার লক্ষ্যে হাউজ উথাপনের জন্য ১০০ জন সদস্য স্বাক্ষর ঘর বক্তব্যে এক পর্যায়ে প্রশ্ন রাখেন “Is of the widespread feeling that ‘পূর্ববঙ্গে গণহত্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য (২০ এপ্রিল, ‘৭১)
বৃটিশ পার্লামেন্টে বিরােধী দলীয় মাননীয় নেতা হ্যারল্ড উইলসনের পূর্ববঙ্গ’ পরিস্থিতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ বলেন, যথাসময়ে পূর্ববঙ্গের পরিস্থিতি সম্পর্কে হাউজকে অবহিত করা হবে। বিরােধী দলীয় নেতা মি, উইলসন পূর্ব বাংলায়’ গণহত্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি পরিদর্শন দল প্রেরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন। একই প্রসঙ্গে লিবারেল পার্টির সদস্য ডেভিড স্টীলের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্ব বাংলায় একটি রাজনৈতিক সমাধান ও সংঘর্ষের অবসানের উপযুক্ত পন্থা অবলম্বনের জন্য বৃটিশ সরকার স্বচেষ্ট ও সক্রিয় আছে। শ্রমিক দলের সদস্য ও বাংলাদেশের কট্টর সমর্থক এম, পি, পিটার শাের পূর্ববঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক সরকারের গৃহিত দমননীতি পরিহারের জন্য পাকিস্তানের সামরিক সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে বৃটিশ সরকারের নীতি নির্ধারনের জন্য পার্লামেন্টে জরুরী ও পূর্ণাঙ্গ আলােচনা অনুষ্ঠানের জন্য। দাবি জানান। শ্রমিক দলীয় অপর এক সদস্য উইলিয়াম হ্যামিলটন প্রশ্নোত্তর পর্বে আলােচনায় অংশগ্রহণ করে পূর্ব বাংলায় পাকিস্তান সামরিক সরকার পরিচালিত গণহত্যার প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। পাকিস্তানকে সাহায্য প্রদান সংক্রান্ত বির্তক (২৬ এপ্রিল, ‘৭১) ২৬ এপ্রিল, ১৯৭১ হাউজ অব কমনস-এ পাকিস্তানে ভবিষ্যতে বৃটিশ সাহায্য প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে মাননীয় এম, পি মিঃ প্রেনটিস এক প্রশ্ন উত্থাপন করেন। প্রশ্নের জ” বৈদেশিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী রিচার্ড উড বলেন, আগামী জুলাই মাসে অনুষ্ঠিতব্য এ ন্য দাতা দেশ ও সংস্থার সাথে আলােচনা করে এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে পূর্ব পাকিতা প্রকল্পে কাজ চলছে সে সকল প্রজেক্টে যাতে সাহায্য অব্যাহত থাকে তাও ল বলে তিনি আশ্বাস দেন। পাকিস্তানে বৃটিশ সাহায্য সংক্রান্ত বিতর্ক হবে। তবে ‘পূর্ব পাকিস্তানে’ যে সকল অব্যাহত থাকে তাও লক্ষ্য রাখা হবে হায্য সংক্রান্ত বিতর্কে প্রেনটিস্ ছাড়াও উইলকিনসন, পিটার শোর, মিঃ বাস প্রমুখ সম্মানিত এম, পি, বৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন। মিঃ বার্নস এর এক প্রশ্নের জবাবে বৃটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী স্যার আলেক ডগলাস হিউম হাউজকে জানান যে, পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ পরিস্থিতি তিনি পর্যালোচনা করেছেন।
১৯৬৭ইং সনের পর ছােট খাট মেরামত এর চুক্তি ব্যতিরেকে বৃটেনের সাথে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য অস্ত্র সরবরাহের চুক্তি হয়নি বলেও তিনি হাউজকে অবহিত করেন। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও আলােচনা (৪ মে, ‘৭১) ৪ মে, ১৯৭১ সনে হাউজ অব কমনস্ এ বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী মাননীয় এডওয়ার্ড হাথ “পাকিস্তান’ এর রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থী সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রথম বারের মতাে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতির একটি রাজনৈতিক সমাধানের কথা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নিজেই ব্যক্ত করেছেন। আমরা আশা করি, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এই মর্মে বাস্তব পদক্ষেপ নেবেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত আরশাদ হােসেনের সাথে গত সপ্তাহের তাঁর বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা তিনি পার্লামেন্টকে অবহিত করে মিঃ হীথ বলেন যে, পাকিস্তানে সাহায্য প্রদানের পূর্বঘােষিত নীতি এখনও অনুসরণ করা হবে। শরণার্থী সমস্যার বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাউজকে জানান যে, আমাদের সর্বশেষ খবর মােতাবেক পূর্ব পাকিস্তান থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০,০০০ শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছে এবং প্রতিদিন প্রায় ২০,০০০ শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করছে। শরণার্থীদের ক্যাম্পে সাহায্য প্রেরণের বিষয়ে সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার সাথে যােগাযােগ রাখছেন বলেও তিনি হাউজকে অবহিত করেন। পূর্ব পাকিস্তান’ এর এহেন দুর্যোগ মুহূর্তে বৃটিশ জনগণ ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, At the same time, there is a deep feeling in this country and the house about the problems which exist. This was shown in the different situation which arose when part of East Pakistan was hit by the hurricane and there was an upsurge of voluntary effort which amazed the world, as I known from my own contacts. There is similarly today a very deep feeling about the situation. I think it is quite natural that many in this country and the House would want to help. হাউজে প্রশ্ন উত্থাপন ও আলােচনায় অংশগ্রহণ করেন মাইকেল বার্নস, পিটার শাের, হিউজ ফ্রেজার, জন ম্যানডেলসন, বিগ্স ডেভিডসন এবং মি. ডালিয়েল প্রমুখ সম্মানিত এম. পি. বৃন্দ।
‘পূর্ব পাকিস্তান’ পরিস্থিতিতে পাকিস্তান’ পরিস্থিতিতে প্রস্তাব উত্থাপন ও সাধারণ আলােচনা (১৪ মে, ১৯৭১) ১৪ মে, ১৯৭১ তারিখে বৃটিশ পার্লামেন্টে পূর্ব পাকিস্তান’ এর পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রস্তাব উথাপন এবং সাধারণ আলােচনার জন্য পূর্ব থেকেই দিন ধার্য করা হয়েছিল। নির্ধারিত এই দিনে সকাল ১১-০৫ মিনিটে লন্ডনের কেনসিংগটন নর্থ থেকে নির্বাচিত শ্রমিক দলীয় এম, পি রুস ডগলাস ম্যান পর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবে বলা হয় যে, “That the House, deeply concerned by the killing and destruction which has taken place in East Pakistan, and the possible threat of food shortages later this year calls upon Her majestys Government to use their influence to secure on end to the strise, the admission of United Nations or other international relief orgamsations and the achievenient of political settlement which will respect the democratic rights of the people of Pakistan. তিনি ইতােপূর্বে যে ৩০০ এম পি এর স্বাক্ষর যুক্ত প্রস্তাবটি জমা দিয়েছিলেন (প্রস্তাব নং-৫০৯)। বর্তমান প্রস্তাবটি তার চেয়ে সামান্য পরিবর্তিত অবস্থায় উথাপনের কথা হাউজকে অবহিত করে বলেন যে, একটি প্রস্তাবে ৩০০ জন সম্মানীত এম. পি. এর সমর্থন পার্লামেন্টে এক নজিরবিহীন ঘটনা। এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে জন ষ্টোন হাউজ ও তার বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় শরণার্থী শিবির এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কিছু এলাকা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ব্রুস ডগলাস ম্যান বলেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পরিচালিত জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ বাঙালি প্রাণ হারিয়েছে (পাকিস্তানের সরকারী হিসাবে ১৫০০০) এবং প্রাণভয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ২০ লক্ষ লােক ভারতে পালিয়ে এসেছে। তিনি।
রণার্থী শিবিরগুলাের করুণ অবস্থা এবং খাদ্য সংকটের কথা হাউজকে অবহিত করে বলেন। যে, অনতিবিলম্বে আন্তর্জাতিক ত্রাণ তৎপরতা শুরু না হলে সেখানে দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ লােক। মৃত্যুবরণ করবে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্মমতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বক্তৃতায় এক AICI COTT “Time and again we were told the same story: troops of the West Pakistan military Authorities had entered the village, which had not been defended, had shot the men in the fields and killed the women and children and then, having killed a great number of people from the village, had burnt it down and . উগলাস ম্যান তার দীর্ঘ ২২ মিনিটের বক্তব্যে পাকিস্তানের জন্ম ইতিহাস, পূর্ব। “কস্তানের দীর্ঘ দিনের বঞ্চনা ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের ফলে সৃষ্ট অবিশ্বাস এবং গত
করে চলছে। তিনি পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পুর্নগঠনে সাহায্য প্রদান সংৰ পরবর্তি পর্যায়ে বিবেচনা করা হবে বলেও হাউজকে অবহিত করেন। এই পর্যায়ে আলাে অংশ গ্রহণ করেন ডেনিস হীলি, গ্রেভি জেনার, জর্জ কানিংহাম, স্যার এফ কেনে জাড এবং মিসেস জুডিথ হার্ট প্রমুখ সম্মানিত এম. পি. বৃন্দ। ত্রাণ সাহায্য সংক্রান্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি (৮ জুন, ৭১) ‘পাকিস্তান’ এর সর্বশেষ পরিস্থিতি, ত্রাণ কার্যক্রম এবং বৃটেনের ত্রাণ সাহায্য প্রেরণ সম্পর্কে ৮ জুন বৃটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী আলেক ডগলাস হিউম হাউজে বিবৃতি প্রদান করেন। স্পীকারের অনুমতি নিয়ে বিবৃতির শুরুতে হাউজকে অবহিত করেন 61, “Since the House debated the situation in Pakistan, there has been a serious deterioration of now of refugee from East Pakistan to India. The number is now estimated as upwards of 4 million” তিনি বিবৃতিতে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে তিনি সিয়াটো সভায় যােগদানের জন্য লন্ডনে অবস্থান কালে আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে এ বিষয়ে আলােচনা করে জাতিসংঘকে পর্যাপ্ত ত্রাণ সাহায্য প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য যৌথ ভাবে অনুরােধ করেছিলাম। জাতিসংঘের মহাসচিব উথানট ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী ‘পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য যে আবেদন করেছিল তাতে প্রথমই বৃটিশ সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ পাউন্ড এবং আরাে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার পাউন্ডেশ খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে বলে তিনি হাউজকে অবহিত করেন। জাতিসংঘ তাদের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় যাতে অর্থকষ্টের সম্মুখীন না হন তার ব্যাপারে বৃটিশ সরকার সর্বাত্মক সহযােগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া, ইতােমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের শরণাথাদের সাহায্যে বৃটিশ বেসরকারী ত্রাণ সংস্থাগুলাে যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাতে বৃটিশ সরকার যে সকল সহযােগিতা ও অর্থ সাহায্য প্রদান করেছে তার বিবরণ তিনি বিবৃতিতে উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির পর হাউজ অব কমসের বিরােধী দলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন বক্তব্য রাখেন। মিঃ উইলসন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড দ্বিতীয় মাহযুদ্ধের পর জঘন্যতম ট্র্যাজিডি আখ্যায়িত করে বলেন, “Is the Right Hol Gentleman aware that the whole House and. I believe, al constituents throughout the country regard this in ter sheer scale as the worst human tragedy that the w known since the war, apart from war itself?”
মিঃ উলসন ছাড়াও মিসেস জুডিথ হার্টি, বয়েড কার্পেন্টার, মাইকেল স্টুয়াট, সাল, স্যার এইচ. লেগে বােকী, ডগলাস ম্যান, স্যার এফ. বেনেট, আলত্রে tragedy that the world has * এফ. বেনেট, আলফ্রেড মরিস, স্যার
সম্পর্কে মি. হিউম বলেন; our aim is to play our full part wilh th International community in bringing an end to suffering and the return of normal conditions to this troubled part of the subcontinent, including making it possible for the return of the refugees to their homes. মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিবৃতির পর মিঃ হিলী, মিঃ ব্রেইন, জন স্টোনহাউজ, মিঃ পারদো, বিগস ডেভিসন, মিঃ পেগেট, মিঃ মলী এবং মিসেস জুডিথ হার্ট প্রমুখ সম্মানীত এম. পি. বৃন্দ মন্ত্রীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং আলােচনায় অংশ গ্রহণ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪ নভেম্বরে প্রদত্ত বিবৃতি বৃটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ মন্ত্রী সম্প্রতি বৃটেনে সফররত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ও তার বৈঠকের বিষয় এবং পূর্ব বাংলার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে ৪ নভেম্বর হাউজে বিবৃতি প্রধান করেন। তিনি পূর্ব বঙ্গের জরুরী অবস্থার প্রেক্ষিতে বৃটিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রদান দু’টি নীতির প্রতি হাউজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে, প্রথম নীতি হলাে ত্রাণ সাহায্য প্রদান। এ পর্যন্ত বৃটিশ সরকার শরণার্থীদের সাহায্যার্থে ভারতকে মােট ১৫ মিলিয়ন (১৫০ লাখ) পাউন্ড এবং পূর্ব পাকিস্তানকে ২ মিলিয়ন (২০ লাখ) পাউন্ড সাহায্য প্রদান করেছে বলে তিনি হাউজকে জানান। বৃটিশ সরকারের দ্বিতীয় নীতি উপমহাদেশে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকে যথাসম্ভব যুদ্ধ থেকে নিবৃত করার প্রয়াস সম্পর্কে তিনি হাউজকে অবহিত করেন। উপমহাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে পরিমাণ জটিল আকার ধারণ করেছে তার শান্তিপূর্ণ সমাধানকল্পে ভারত-পাকিস্তান আলােচনার প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে মিঃ হিউম গুরুত্ব আরােপ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৬ ডিসেম্বরে প্রদত্ত বিবৃতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বৃটিশ সরকার এবং হাউজের সকল সদস্যের উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়ে ৬ ডিসেম্বর আলেক ডগলাস হিউম হাউজে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন। তিনি বলেন যে, ৩ ডিসেম্বরে প্রথম আক্রমণ ও প্রতি আক্রমনের রিপাের্ট প্রাপ্তির পরপরই বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুদ্ধ যথার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি হাউজে বলেন “In spite of our efforts and those of other powers. India and Pakistan have been to the Calamity of war. Our immediate concern must now be to try to the lighting and to contribute to a sane and civilised solution that takes account of the wishes of the peoples affected.”
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ১৩ ডিসেম্বরে প্রদত্ত বিবৃতি
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ ও যুদ্ধের অবসানের প্রাককালে বৃটিশ পার্লামেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৩ ডিসেম্বর তারিখে বিবৃতি প্রদান করেন। বাংলাদেশে মার্চ মাসে হওয়ার পর থেকে উপমহাদেশের পরিস্থিতি এবং তাদের ভাষায় পূর্ব পাতি বিষয়ে বৃটিশ পার্লামেন্টে যে সকল বক্তৃতা বিবৃতি আলােচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১. ২ বিবৃতি ছিল তার সর্বশেষ ঘটনা। বিবৃতিতে মিঃ হিউম উপমহাদেশে যুদ্ধের দিন পরিস্থিতির ক্রমাবনতির কথা উল্লেখ করে বলেন, “The hostilities between India and Pakistan continue. Indian forces have advanced deep into East Pakistan, have captured the town of Jessore and have now virtually surrounded Dacca. Fighting is also continuing on the border between India and West Pakistan particularly in the chhamb area where Pakistani forces have penetrated into Indian territory.” যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে পরস্পর বিরােধী তথ্যাদি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন যে, পরিস্থিতি যতই বিয়ােগান্ত হােক না কেন উপমহাদেশে যুদ্ধ বিরতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বৃটিশ সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান – ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন