You dont have javascript enabled! Please enable it! বিলাতের পত্র পত্রিকার ভূমিকা সেপ্টেম্বর ৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

বিলাতের পত্র পত্রিকার ভূমিকা সেপ্টেম্বর ৭১

১ সেপ্টেম্বর ‘দি ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় মিস ক্লেয়ার হােলিংওয়ার্থ প্রেরিত সংবা নিবন্ধে পূর্ববঙ্গের গভর্নর ও সামরিক প্রশাসক লেঃ জেঃ টিক্কা খানকে বাদ দিয়ে গভ, পদে ডাঃ এ. এম. মালিককে এবং সামরিক প্রশাসক পদে লেঃ জেঃ নিয়াজীকে নিয়ে খবর পরিবেশন করে মন্তব্য করা হয় যে, টিক্কা খানের অপসারণে আপাতত ‘পূর্ববঙ্গের জনগণ খুশি হবেন। নিবন্ধে আরাে উল্লেখ করা হয় যে, ডাঃ মালিক বাঙালি হলেও তিনি পাকিস্তানী সামরিক কমান্ডার দালাল হিসেবে চিহ্নিত হবেন। “দি ডেইলি টেলিগ্রাফ’ একই দিনে অপর এক খবরে পাকিস্তান মিশনসমূহে কর্মরত বাঙালি কূটনৈতিকদেরকে পদত্যাগ করতে বৃটেন উৎসাহ দিচ্ছে বলে অভিযােগ করা হয়। খবরে আরাে উল্লেখ করা হয় যে, লন্ডনে বাংলাদেশ মিশন স্থাপনের বিষয় পাকিস্তানের প্রতিবাদের যে ব্যাখ্যা বৃটেন প্রদান। করেছে তা পাকিস্তানের কাছে গ্রহণযােগ্য নয়।  ৩ সেপ্টেম্বর ‘দি টাইমস্’ পত্রিকায় বৃটিশ শ্রমিক দলীয় প্রভাবশালী এম, পি ও সাবেক মন্ত্রী পিটার শাের এর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। মিঃ শশার সপ্তাহব্যাপী পশ্চিম পাকিস্তান ও ভারত সফর শেষে লন্ডনে ফিরে সাক্ষাৎকার দেন। তিনি পাকিস্তানকে সকল প্রকার বৃটিশ ঋণ ও অর্থনৈতিক সহযােগিতা বন্ধ করে দেয়ার জন্য বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক ডগলাস হিউমের কাছে প্রস্তাব করেন। তিনি এই প্রস্তাবে যুক্তি হিসাবে বলেন যে, ‘পূর্ববঙ্গ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং পাকিস্তান দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। এই কঠিন সত্যকে গ্রহণ করতে হবে। একই দিনে ‘দি গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় পাকিস্তান দূতাবাসসমূহে কর্মরত বাঙালীরা যাতে পদত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে যােগ দিতে না পারে তার পদক্ষেপ হিসাবে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত অফিসারদের পাসপাের্ট জমা দেয়ার নিদেশের খবর প্রকাশিত হয়। এর ফলে পাকিস্তানের দুর্বলতা আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ লাভ করে। ১০ সেপ্টেম্বর “দি ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় জুলফিকার আলীকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিয়ােগের দাবির সমালােচনা করে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। মাচ মাসে ইয়াহিয়া-মুজিব আলােচনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য ভুট্টোকে দায়ী করে সম্পাদকীয়তে মন্তব্য কম। হয় যে, সমগ্র পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেখানে ভূট্টোর দল পেয়েছে ৮৫টি ৭ আর শেখ মুজিবের দল পেয়েছে ১৬২টি সেখানে ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রী নিয়ােগের দাবি স যুক্তিহীন। সম্পাদকীয়তে আরাে বলা হয় যে, পূর্ববঙ্গের স্বায়ত্তশাসনের দাবি মে ইয়াহিয়া খানের উচিত শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে একটা আপােষ ফরমুলায় উপনীত হওয়া।    

একই দিনে শিরােনামে একটি সংবাদ নিন একই দিনে ‘নিউ ষ্ট্যাটসম্যান’ পত্রিকায় “Bangladesh must be freed” মে একটি সংবাদ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধের শুরুতেই উল্লেখ করা হয় যে, “At heart of the great crisis in Bengal is the breakup of this state of Pakistan. What Jinnah created with his fanatical resolve in 1947 has now been irrevocably destroyed by the stupidity of Yahya Khan and the ferocity of his generals. ১১ সেপ্টেম্বর ‘দি টাইমস্’ পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দানের জন্য পাচ দল সমন্বয়ে ‘কনসালটেটিভ কমিটি গঠনের খবর পরিবেশিত হয়। বিপ্লবী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনকে কমিটির আহ্বায়ক করে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (ন্যাপ ভাসানী পন্থী), মনি সিং (বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টি), মনােরঞ্জন ধর (বাংলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেস), অধ্যাপক মুজাফফর আহম্মদ (মুজাফফর পন্থী ন্যাপ), খন্দকার মােস্তাক আহম্মদ (বিপ্লবী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের দুইজনসহ আট সদস্য বিশিষ্ট কনসালটেটিভ কমিটি গঠিত হয়। এই খবরে প্রবাসীদের মধ্যে ঐক্য আরাে সুদৃঢ় হয় এবং মুক্তিযুদ্ধে সহযােগিতা ও সমর্থনের উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। ১৪ সেপ্টেম্বর ‘দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী এসােসিয়েশন’ এর সম্মেলনের উত্থাপিত বাংলাদেশ সম্পর্কিত খবর প্রকাশিত হয়। সম্মেলনের প্রথম দিনে (১৩ সেপ্টেম্বর) বৃটেনের সাবেক মন্ত্রী আর্থার বটমূলী পূর্ববঙ্গে পাকিস্তান সামরিক সরকারের বল প্রয়ােগ ও হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার জন্য নিন্দা জানিয়ে সংখ্যাগরিষ্ট দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তির দাবি করেন। সংবাদে আরাে জানা যায় যে, ভারতীয় লােকসভার স্পীকার মি, ধিলন তার বক্তৃতায় পূর্ব বঙ্গের সমস্যা ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধের পরিবর্তে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্য যুদ্ধ বলে সম্মেলনে মন্তব্য। করেন। ১৪ সেপ্টেম্বর ‘দি টাইমস্ পত্রিকায় ফিলিপাইনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত বাঙালি কূটনীতিবিদ খুররম খান পন্নী এবং নাইজেরিয়ার পাকিস্তান হাই কমিশনের চ্যান্সেরীর কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জায়গীরদারের পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে বাংলাদেশের পক্ষে যােগদানের খবর প্রকাশিত হয়। খবরে মন্তব্য করা হয় যে, এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন কূটনীতিবিদ বাংলাদেশে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পরিচালিত গণহত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে বাংলাদেশের পক্ষে যােগদান করেছে। একই দিনে ‘দি ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় মিস ক্লেয়ার হােলিংওয়ার্থ একটি বিশ্লেষণ মূলক প্রবন্ধে “খ করেন যে, মস্কো-দিল্লী মৈত্রী চুক্তির সম্ভাব্য ফলাফলের কথা চিন্তা করে পাকিস্তানের মারক সরকার উদ্বিগ্নবলে মনে হচ্ছে। এই সংকট আরাে ঘনীভূত হলে পাকিস্তান চীনের সাহায্য পাবে কিনা প্রবন্ধে সে ব্যাপারে সন্দেহ পােষণ করা হয়।

১৫ সেপ্টেম্বর ‘ইভিনিং স্টান্ডার্ড’ পত্রিকার খবরে প্রকাশ, ইরানের শহn পরিস্থিতির ব্যাপারে পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে as পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি শেখ মুজিবকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দানের আহ্বান । “পূর্ববঙ্গের সমস্যা সমাধানে পাকিস্তান ও ভারতের সাথে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব সংবাদে আরাে বলা হয়, ইরানের শাহ এর যমজ বােন প্রিন্সেস আশরাফ পাহলভি । শাহ এর পক্ষে উপরােক্ত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তিনি ইতােমধ্যে পিত মস্কো সফর শেষে ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথের সঙ্গে নৈশভােতে মিলিত হবেন এবং পূর্ব বঙ্গের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কথা বলবেন বলেও সং উল্লেখ করা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর দি ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় ফরাসী বামপন্থী রাজনীতিবিদ, প্রখ্যাত সাহিত্যিক, মুক্তিযােদ্ধা, জেনারেল দ্যা গলের মন্ত্রী সভার সদস্য ৬৯ বছর বয়স্ক আদ্রে মালরাে এর এক চাঞ্চল্যকর বিবৃতি প্রকাশিত হয়। বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ সমর্থন করে যুক্তি প্রদর্শন করেন এবং পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যােগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি আরাে বলেন যে, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য রওয়ানা হওয়ার তারিখ শ্রীঘ্রই ঘােষণা করা হবে। “দি টাইমস্ পত্রিকায় ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখে ইংল্যান্ডের স্কারবারাতে অনুষ্ঠিত লিবারেল পার্টির সম্মেলনে পার্টির নেতা পার্লামেন্ট সদস্য জন পারডাে কর্তৃক বাংলাদেশ সংগ্রামকে সমর্থন করে যে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় তার বিবরণ প্রকাশিত হয়। প্রস্তাবে বলা হয় যে, অবিলম্বে পূর্ববঙ্গ থেকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় বৃটিশ সরকার কর্তৃক একটি কমনওয়েলথ সম্মেলন আহ্বান করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে হবে। ১৮ সেপ্টেম্বর দি ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় “অপারেশ ওমেগা” কর্তৃক পীস টিমের বাংলাদেশে প্রবেশকালে গ্রেফতারকৃত সদস্যদের মুক্তির খবর পরিবেশন করা হয়। | ২০ সেপ্টেম্বর মনিং ষ্টার’ পত্রিকায় ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যার্থে লন্ডনের ওভাল ক্রিকেট ময়দানে আয়ােজিত পপ উৎসবের খবর প্রচারিত হয়। খবরে বলা হয় যে, পপ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সমর্থনকারী প্রায় ৩৩ হাজার তরুণ তরুণী যােগদান করেছে। টিকিট বিক্রির আয় থেকে ১৫ হাজার ২শ’ পাউন্ড শরণার্থীদের সাহায্যে প্রেরণ করা হবে বলেও সংবাদে উল্লেখ করা হয়।

২৪ সেপ্টেম্বর “দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক ডগলাস্ হিউমের হাউস অব কমনসে ভাষনের বরাত দিয়ে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যােগদানকালে তি” মহাসচিব এবং বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সাথে আলােচনাকালে পাকিস্তানে পংকজনক পরিস্থিতি এবং পূর্ববঙ্গ’ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের উপর বিশেস অr আরােপ করবেন বলে পার্লামেন্টে তিনি আশ্বাস দেন। ২৭ সেপ্টেম্বর দি গার্ডিয়ান পাত্রণ পাকিস্তানেও বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিদাবি করার খবর মহমানের মুক্তিদাবি করার খবর পরিবেশিত হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর করাচীতে করাচীতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কাউন্সিল অধিবেশনে উপরােক্ত দাবি উত্থাপন করা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর “দি টাইমস্’ পত্রিকায় মস্কো সংবাদদাতা ডেভিড বােনাভিয়া প্রেরিত কোসিগিন বৈঠকের বিবরণ প্রকাশ করা হয়। ক্রেমলিন প্রাসাদে সফররত ভারতের সনমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সম্মানে আয়ােজিত মধ্যাহ্ন ভােজ সভায় বক্তৃতায় সােভিয়েত ধানমন্ত্রী কোসিগিন বলেন, পূর্ববঙ্গে পাকিস্তানের পরিচালিত নৃশংশ কর্মকাণ্ড কোনক্রমেই সমর্থনযােগ্য হতে পারে না। তিনি পূর্ববঙ্গের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমুন্নত রেখে অবিলম্বে পূর্ববঙ্গের সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধানের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেন। ৩০ সেপ্টেম্বর ‘দি টাইমস্ পত্রিকায় পূর্বের দিনে জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত বটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক ডগলাস হিউমের বক্তৃতার উল্লেখ করে এক সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয় যে, একমাত্র আওয়ামী লীগের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলােচনার মাধ্যমেই নিজের দেশ থেকে পালিয়ে আসা লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের শালীনতাপূর্ণ জীবনে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব। আওয়ামী লীগ গত নির্বাচনে পূর্ববঙ্গের’ জনগণের স্বাভাবিক মুখপাত্র হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ আলােচনা মার্চ মাসের আলােচনার পরিবেশ থেকে অবশ্য ভিন্নতর হতে হবে এবং পাকিস্তানে কারারুদ্ধ বিচারাধীন শেখ মুজিবকে মুক্ত মানুষ হিসাবে আলােচনায় উপস্থিত থাকার সুযােগ থাকতে হবে। সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা 2761″ It would enter fresh negotiations in a very different mood from that of last march. At the same time Shaikh Mujib must be associated in freedom with such negotiations. Of course an acknowledgement of these necessities would reopen the question of future relations of East and West Pakistan. That can not be evated…….

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান – ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন