You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.06.24 | বাংলার বাণী সম্পাদকীয় | প্রশংসনীয় উদ্যোগ | বাঙালি মহিলাদের নির্যাতন | শেখ মণি - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার বাণী
ঢাকা: ২৪শে জুন, রোববার ৯ই আষাঢ়, ১৩৮০

বাঙালি মহিলাদের নির্যাতন

ন্যায়, নীতি, মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধকে যখন মানুষ বেমালুম ভুলে যায় তখন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে ঠিক আজকের পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক সামরিক জান্তার হাতের পুতুল জুলফিকার আলী ভুট্টো তাই হয়েছেন। সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি বাঙালিকে পাকিস্থানে জিম্মি রূপে আটকে রেখে ভুট্টো সাহেব দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম হোতা হিটলারকেও ছাড়িয়ে গেছেন। হিটলারের ইহুদি নিধন যজ্ঞ মেতে উঠেছিল আর ভুট্টো সাহেব মেতে উঠেছেন বাঙালি নিধন যজ্ঞ। পাকিস্তানে আটক নিরীহ-নিরপরাধ বাঙ্গালীদের একমাত্র অপরাধ ওরা বাঙালি। ওদের দেশ বাংলাদেশ ওরা আসতে চায়।
রাতের অন্ধকারে বাঙালি অফিসারদের গ্রেফতার করে অজ্ঞাত নামা স্থানে পাঠানো থেকে আরম্ভ করে যত রকমের অকাজ কুকাজ আছে তাই তিনি করেছেন এ পর্যন্ত। তাতেও যখন কিছু হচ্ছে না তখন বাঙালি মহিলাদের নির্যাতন করার জন্য মাঠে নেমেছেন।
সংবাদে প্রকাশ পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বর্তমানে বাঙালি মহিলাদের জেলে নিক্ষেপ করছেন। গত ৮ ই জুন করাচির ‘মর্নিং নিউজ’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে যে, জিন্না পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিসিনের একজন সাবেক মহিলা নাফিসা খাতুনকে গত ৫ই মে আটক করে জেলে পাঠান। তুমি যখন সিন্ধু-বেলুচিস্তান হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এক রিট আবেদন করেন তখন তার এই আটকাদেশের খবর প্রকাশ হয়।
পাকিস্তানের ভুট্টো সাহেব উটপাখির মতো বালুতে মুখ বুজে আছেন বলে আসল সত্য ও বাস্তবতাকে দেখতে পাচ্ছেন না। কোন ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন তিনি হয়েছেন অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও সংকট এ পড়ে ভুট্টো সাহেব হাবুডুবু খাচ্ছেন। হিন্দু বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষেরা আজ স্বাধিকারের দাবিতে সোচ্চার। তাদের বিদ্রোহী কণ্ঠকে দমন করার জন্য ভুট্টো সরকার সৈন্যবাহিনী পাঠিয়েছেন। ঠিক যেমনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমন করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। একদিকে এ সমস্যা অন্যদিকে ভারতে পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীদের আটক প্রশ্ন নিয়ে পাকিস্তানের জনসাধারণ বিক্ষুব্ধ। যুদ্ধবন্দীদের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। অথচ ভুট্টো সাহেবের অহেতুক টালবাহানা তে প্রশ্নটি পাথর চাপা পড়ে গেছে। ভুতের সরকার চিনার মার্কিন চালে পড়ে দাবার গুটির মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও ভারত পূর্ব পর সামগ্রিক অবস্থার কথা বিচার বিশ্লেষণ করে এবং উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি লক্ষ্য রেখে যুদ্ধ ঘোষণা প্রকাশ করেছেন। এতে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর ছাড়া আর সব যুদ্ধবন্দীদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এবং পাকিস্তানে আটক বাঙ্গালীদের স দেশে ফিরিয়ে আনা এবং বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানের যেহেতু ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সে দেশে যাবার অনুমতি দানের ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের মানবিক আহবানে সাড়া না দিয়ে ইরানের যোগসাজেশে আবার এক যুদ্ধের আগুন জালানো যায় কিনা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। ভূট্টো সাহেব হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন বলে আজ নারী নির্যাতনের মত ন্যাক্কারজনক কাজ করতেও পিছপা হচ্ছেন না। এর পরিণতি যে শুভ হতে পারেনা বাংলাদেশের ইতিহাসে তার প্রমান। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য তার স্বাভাবিক পরিণতি হলো ধ্বংস ও পতন।

প্রশংসনীয় উদ্যোগ

মিরপুর মহম্মদপুরে ব্যাপকহারে বিদ্যুৎ চুরি হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। কেবলমাত্র ঢাকা নগরীতে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার বিদ্যুতের বিল বকেয়া রয়েছে বলে স্থানীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুসারে জানা যায়। দেশের অন্যান্য জায়গায়ও এমনিতর অবস্থা বিরাজ করছে সন্দেহ নেই। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং বিল আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। খবরে প্রকাশ তড়িৎকৌশল ছাত্ররা বিদ্যুতের বিল আদায়ে সাহায্য করছেন। তড়িৎ ছাত্রদের এহেন স্বতঃস্ফূর্ত কার্যকলাপ নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগ্রাম থেকে শুরু করে নানাবিধ জাতীয় কল্যাণকর কাজে ছাত্রদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার কথা নতুন করে উল্লেখের অপেক্ষা রাখেনা । এবং তাদের নিঃস্বার্থ সেবার ফলে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রমে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসছেন। তাদের কাজের প্রশংসা করছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ, ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধার ইত্যাদি খাদ্য দপ্তরের উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে যেমন সহযোগিতা করেছেন তেমনি সরকারের ভুল নীতির সংশোধনের সরকারকে সচকিত করে তুলেছেন। দেশের নাগরিক হিসেবে এবং একজন ছাত্র হিসেবে লেখাপড়ার সঙ্গে দেশের এবং জাতীয় স্বার্থে জনকল্যাণমূলক কাজে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা দানই হচ্ছে প্রতিটি ছাত্রের কর্তব্য। আশার কথা অতীতের ন্যায় এখনো ছাত্র সমাজ সেদিকে সচেতন রয়েছেন।
কেবলমাত্র ছাত্র সমাজ সচেতন থাকলেই চলবে না ছাত্রদের সঙ্গে দেশের আপামর জনগণ বিভিন্ন কল্যাণকর কাজে সরকারের সঙ্গে সক্রিয় সহযোগিতা করলে কোন সমস্যাই সমস্যা হয়ে থাকতে পারে না। এবং সেজন্য আমরা মনে করি জনগণ অতীতের ন্যায় এখনো ছাত্রদের সঙ্গে এগিয়ে আসবেন। জনগণকে এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে ব্রতী হওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন