যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে নির্বাচনের রায় মেনে নিতে হবে
পাক-কর্তৃপক্ষের প্রতি সােভিয়েত প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
আলবৰ্গ (ডেনমার্ক), ৫ ডিসেম্বর-“যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে পাকিস্তানকে গত বছরের নির্বাচনের রায়কে সম্মান দিতে হবে এবং ভারত থেকে শরণার্থীদের পূর্ব বাঙলায় নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের নিশ্চয়তা দিতে হবে।” আজ এখানে সােভিয়েত প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেন। এ-পি জানাচ্ছে, কোসিগিন বলেছেন এই উপ মহাদেশ শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইলে এই পথ খােলা আছে।
সােভিয়েত প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন এখানে সরকারী সফরে এসে নর্থ জটল্যান্ড শহরের সিটি হলে গতকাল একথা বলেন।
কোসিগিন বলেন, হিন্দুস্তান উপমহাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য সর্বপ্রথমে পূর্ব-বাঙলায় পাক কর্তৃপক্ষের স্থানীয় জনগণের উপর নির্মম দমননীতির ফলে যে বিপজ্জনক অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে তার সমাধান করা।
তিনি বলেন, ১৯৭০-এর ডিসেম্বরে পূর্ব-বাঙলার জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে যে রায় দিয়েছিলেন তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অতীব জরুরী। ঐ নির্বাচনেই মুজিবর রহমানকে ক্ষমতায় নির্বাচিত করা হয়েছিল। তিনি সেই মার্চ থেকে জেলে আটক আছেন।
১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে পূর্ববাংলার জনগণের যে মতামত ব্যক্ত হয়েছে তার প্রতি উপযুক্ত মর্যাদাদান করা বিশেষ জরুরী। এই নির্বাচনের রায়েই শেখ মুজিবর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন ফলে বিগত মার্চ মাসে পূর্ববাঙলা পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনী আক্রমণের পরিণতিতে গ্রেপ্তার করা হয়।
শ্রীকোসিগিন বক্তৃতা প্রসঙ্গে আরও বলেন যে, সােভিয়েত ইউনিয়ন অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের সম্মুখ সংঘাত লক্ষ্য করেছেন, তিনি বলেন যে, এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটি ব্যাপক আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা প্রয়ােজন।
তিনি আরও বলেন যে, আমরা মনে করি, যে সকল পক্ষ এই সংঘর্ষে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে পড়েছে এবং যারা জনগণের শান্তি ও প্রগতি কামনা করেন তাদের সকলেরই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই সংশস্ত্র সংঘর্ষ বন্ধের জন্য অবিলম্বে প্রচেষ্টা চালানাে প্রয়ােজন।
তিনি আরও বলেন যে, সােভিয়েত ইউনিয়ন সর্বদাই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পক্ষে।
পরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কোসিগিন বলেন, ভারত উপমহাদেশে যুদ্ধের অবসান এবং পাকিস্তান ও বাঙলাদেশ শক্তি দুটির মধ্যে এক শান্তিপূর্ণ মীমাংসা হােক সােভিয়েত ইউনিয়ন তা-ই চায়।
তাঁকে প্রশ্ন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে তার দেশ প্রস্তুত কিনা। উত্তরে তিনি বলেন, মস্কোতে এখনও এ-সম্পর্কে কোনও বিতর্ক হয়নি।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী জেন্স অট্টো ক্রার্গ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
প্রশ্ন ছিল, জাতিসংঘে চীনের অংশগ্রহণ পাক-ভারত সংঘর্ষ মীমাংসার পথে সাহায্য করেছে কিনা। কোসিগিন উত্তর দেন, “আমি মনে করি না এ ধরনের কিছু হয়েছে।”
আজও নরওয়ে যাত্রার পূর্বে তিনি জানান, ভারত উপমহাদেশের পরিস্থিতির জন্য তিনি তাঁর স্কান্ডনােভিয়ান দেশে সফরের সূচী বাতিল করেছেন না।
একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ইস্রায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার কোনও প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে না।
সূত্র: কালান্তর, ৭.১২.১৯৭১