You dont have javascript enabled! Please enable it! জামায়াতের রাজনীতি কি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ? - সংগ্রামের নোটবুক
জামায়াতের রাজনীতি কি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ?

পবিত্র ইসলামের মুখােশধারী জামায়াত একটি ফ্যাসিবাদী ধ্যান-ধারণার বাস্তবরূপ। বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে ক্ষমতার মসনদ দখল করাই তার চরম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। জামায়াতের রূপকার মওলানা মওদুদী ও জামায়াতের বিগত ষাট বছরের কর্মতৎপরতা তা-ই প্রমাণ করে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্যে হাতিয়ার হিসেবে তারা পবিত্র ইসলামকে বেছে নিয়েছে। জামায়াতের স্থপতি মওলানা মওদুদী প্রথম জীবনে হায়দরাবাদের নিযামের স্বার্থে পবিত্র ইসলামকে ব্যবহার করেন। বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির দালালীর সময়ও ইসলাম ছিল তার একমাত্র হাতিয়ার। ইসলামের নামেই তিনি কংগ্রেস ও তার নেতৃবৃন্দকে গালিগালাজ করেছেন। মুসলিম লীগ ও তার নেতৃবৃন্দ এবং পাকিস্তানের বিরােধিতায়ও তিনি একই অস্ত্র ব্যবহার করেন। মহিলাদের সামাজিক মর্যাদা দেয়ার বিরােধিতায়ও যেমন ইসলামকে ব্যবহার করা হয়েছে, আবার ষাটের দশকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নার সমর্থনে ইসলামই ছিলাে জামায়াতের হাতিয়ার। ইসলামের নামেই মওলানা মওদুদী বলেছেন, গণতন্ত্র অভিশপ্ত। আবার এই পবিত্র ইসলামের নাম মুখে নিয়েই তিনি বলেছেন, ইসলামের সারকথাই হচ্ছে গণতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের বিরােধিতায়ও জামায়াতের হাতিয়ার ছিলাে ইসলাম। লুটতরাজ, নারী ধর্ষণ ও নিরীহ নাগরিকদের হত্যাযজ্ঞে জামায়াত পাক দখলদার বাহিনীর সহযােগিতা করেছে ইসলামের নামে। এক পর্যায়ে নিজেদের কর্মীদের রাজাকার, আলবদরের সাইনবাের্ডে বাঙ্গালী নিধন অভিযানে নামিয়ে দেয়। আর এসব নাকি তারা এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও পাকিস্তান রক্ষার জন্য করেছে। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলােতে জামায়াতিদের স্লোগান ছিলাে-উপমহাদেশের এই অংশে পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে না পারলে ইসলামকে রক্ষা করা যাবে না। ভারত বাংলাদেশ দখল করে নেবে। ইসলাম ও মুসলমানদের নাম-নিশানাও এদেশে থাকবে না। ইসলাম রক্ষার জন্যই পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু জামায়াত প্রাণপণ চেষ্টা করেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ভারত এদেশ দখল করে নেয়নি। ইসলাম ও মুসলমানরাও এদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি।

আগে যেমন ছিলাে আজো তেমনি আছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, পবিত্র ইসলামের নামে জামায়াতের স্লোগান কতাে অন্তঃসারশূন্য, কতাে অবাস্ত ব! এজন্যই উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ একবাক্যে ফতােয়া দিয়েছেন ইসলামের নামে মওদুদীর ধ্যান-ধারণা বিভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা। মওদুদী জামায়াত একটি বাতিল ফেরকা। এই জামায়াত থেকে দূরে থাকা মুসলমানদের ফরজ। মওদুদীর অনুসারীদের পেছনে নামায পড়া জায়েজ নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখানে অবস্থানকারী জামায়াতিরা ঘাপটি মেরে থাকে এবং গােপনে ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালাতে থাকে অপরদিকে গােলাম আযমসহ যারা পাকিস্তানে গিয়েছিল, তারা বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে। তারা মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রো-ডলার সমৃদ্ধ রাজতান্ত্রিক দেশগুলাের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তােলে। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা বিরােধীদের পুনর্বাসন নীতির সুযােগে জামায়াতিরা পরাজিত শক্তি হয়েও পুনরায় স্বনামে আত্মপ্রকাশের সুযােগ লাভ করে। বর্তমানে পাইপলাইনে পেট্রো-ডলার আসছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে জামায়াতিরা মায়াকান্না করছে। কিন্তু অর্থ সরবরাহকারী রাজতান্ত্রিক দেশগুলােতে যে মানুষের মৌলিক অধিকার বলতে কিছু নেই, সে সম্পর্কে টু শব্দটিও করছে না। জামায়াত যে ইসলামের মুখােশধারী একটি ফ্যাসিস্ট চক্র, তাদের এই দ্বিমুখী ভূমিকা থেকেই তা পরিষ্কার প্রমাণিত হয়।

সারকথা, জামায়াতের অতীত ও বর্তমান ভূমিকার জন্যে যেকোনাে সাধারণ মানুষও নির্দ্বিধায় বলবে, জামায়াত বাংলদেশে পরাজিত শক্তি আর ইসলাম রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের পর পরাজিত শক্তিকে জীবনে বেঁচে থাকার সুযােগদান করলেও কোনাে অবস্থায়ই রাজনৈতিক অধিকার প্রদান করেনি। ইসলামের বিগত দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে পরাজিত শক্তিকে রাজনৈতিক অধিকার দেয়ার একটি দৃষ্টান্ত ও কেউ দেখাতে পারবে না। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহানবীর (সঃ) আমলে পরাজিতদের অপরাধের ধরন অনুযায়ী হত্যা কিংবা দাসদাসীতে পরিণত করা হতাে। পরবর্তীকালে পরাজিতদের জিম্মি হিসেবে গণ্য করা হতাে। তাদের নিকট থেকে জিজিয়া কর আদায় করা হতাে। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে পরাজিতদের মতামতের কোনাে মূল্য দেয়া হতাে না। তাদের কোনাে প্রকার রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। সুতরাং বাংলাদেশেও পরাজিত শক্তি জামায়াত ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকেই রাজনৈতিক অধিকার পেতে পারে না। এদিক থেকে বলা যায়, বাংলাদেশে পরাজিত শক্তি জামায়াতের রাজনৈতিক তৎপরতা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেই অবৈধ। অথচ ইসলামের নামেই জামায়াতিরা বাংলাদেশে ইসলাম বিরােধী কাজটি করে যাচ্ছে। এব্যাপারে দলমত নিবিশেষে সবাইকে, বিশেষ করে আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের সতর্ক হওয়া এবং সাধারণ মানুষকে জামায়াত সম্পর্কে সতর্ক করা ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। 

সূত্র : মুখোশের অন্তরালে জামাত – মাওলানা আব্দুল আউয়াল