নবী-রাসূল সম্পর্কে মওদুদীর ধৃষ্টতা
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই মানুষের সুষ্ঠু চিন্তা, জ্ঞানের প্রসার ও পরিপকৃতার মূল ভিত্তি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন মানুষ যতােই মেধাবী হােক না কেন তার মধ্যে স্বচ্ছ চিন্তাধারার বিকাশ অনেক ক্ষেত্রে হয় না। নিজের চেষ্টাসাধনায় যখন যা শেখে বা জানে তাই বলে এভাবে সে অজস্র স্ববিরােধী উক্তি করে থাকে। আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন মানুষটি যদি উচ্চাভিলাষী হয়, তাহলে তাে কথাই নেই। সে ধরাকে সরা জ্ঞান করে বসে। মনে করে তার মতাে জ্ঞানের অধিকারী লােক পৃথিবীতে আর কেউ জনেনি। এ জাতীয় লােকের মুখে অন্যের সমালােচনা ছাড়া প্রশংসা ভুলেও শােনা যায় না। আমাদের এই বক্তব্যের দৃষ্টান্ত হচ্ছেন। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী সাহেব। কর্ম ও রাজনৈতিক জীবনের পঞ্চাশ বছরে তার বক্তৃতা বা লেখায় কারাে প্রশংসা বড় একটা দেখা যায়নি। তাঁর এই সমালােচনা রাজনৈতিক ব্যাপারেই সীমিত ছিলাে না, ধর্মীয় বিষয়েও তিনি অনেক বাড়াবাড়ি করেছেন। নবী-রাসূল, সাহাবা কেরাম, ইমাম-মুজতাহিদ ও মুসলিম মনীষীদের সম্পর্কেও তিনি অনেক ধৃষ্টতামূলক উক্তি করেছেন। আমরা এক্ষেত্রে তাঁর বিভিন্ন লেখা থেকে কিছু উদ্ধৃতি দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করছি। নবী-রাসূলদের নিস্পাপ হওয়া সম্পর্কে সকল মত ও পথের ইমামমুজতাহিদ, আলেম-ওলামা ও ইসলামিক চিন্তাবিদরা অভিন্ন মত পােষণ করেন। কিন্তু শুধু মওদুদী সাহেব ভিন্ন মত পােষণ করেন। তিনি বলেছেন, “ইসমত বা নিস্পাপ হওয়াটা মূলত নবীদের প্রকৃতিগত গুণ নয়। বরং নবুয়তের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের জন্য আল্লাহ তায়ালা কৌশলগতভাবে তাদেরকে ভুলত্রুটি ও পদস্খলন থেকে নিরাপদ রেখেছেন। নতুবা তাদের উপর আল্লাহ তায়ালার হেফাজত ক্ষণিকের জন্য উঠে গেলে সাধারণ মানুষের মতাে তারাও ভুলভ্রান্তিতে পড়তে পারেন। এখানে একটি সূক্ষ্ম বিষয় এই যে, আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করেই প্রত্যেক নবীর উপর থেকে কোনাে না কোনাে সময় তার হেফাজত উঠিয়ে নেন এবং তাঁকে দু’ একটি গুনাহে লিপ্ত হতে দেন।
তাতে করে মানুষ যেন নবীদেরকে খােদা বলে ধারণা না করে এবং জেনে রাখে এরাও মানুষ।” (তাফহিমাত, ২য় খণ্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা-মওদুদী)। মওদুদী সাহেবের এই উক্তিটি ব্যাখ্যার প্রয়ােজন নেই। অত্যন্ত স্পষ্ট। ইসলামের নামে তিনি সম্পূর্ণ ভুল ও বাতিল ধারণা প্রকাশ করেছেন। তিনি তার এই অভিমত প্রমাণের জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন নবী ও রাসূলের নিস্পাপ জীবনকে কলংকিত করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। হযরত মূসা (আঃ) সম্পর্কে মওদুদী সাহেব বলেছেন, “নবী হওয়ার পূর্বে হযরত মুসা (আঃ) দ্বারা একটি বড় গুনাহ হয়েছিল। তিনি এক ব্যক্তিকে কতল করেছিলেন।” (রাসায়েল ও মাসায়েল, ১ম খণ্ড, ৩১ পৃষ্ঠা-মওদুদী) মওদুদী সাহেব পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে হযরত ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে বলেছেন, “এখানে আর একটি প্রশ্নের, উদ্রেক হয় যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন নক্ষত্র দেখে বলেছিলেন, ‘এটা আমার প্রতিপালক’ এবং চন্দ্র-সূর্য দেখে এগুলােকে নিজের প্রতিপালক হিসেবে অভিহিত করেন তখন সাময়িকভাবে হলেও তিনি কি শিরক-এ নিপতিত হননি? (তাফহিমুল কোরআন, ১ম খণ্ড, ৫৫৮ পৃঃ) মওদুদী সাহেব তার তফসীরে হযরত ইউনুস (আঃ) সম্পর্কে বলেছেন, “কোরআনের ইংগিতগুলাে ও ইউনুসের পুস্তিকা (সহিফা) বিস্তারিত পর্যালােচনা করলে এটা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, হযরত ইউনুস দ্বারা নবুয়তের দায়িত্ব পালনে কিছুটা অবহেলা বা অসতর্কতা হয়েছিলাে। সম্ভবত অধৈর্য হয়ে তিনি সঠিক সময়ের আগেই বাসস্থান ত্যাগ। করেছিলেন। (ঐ, সূরা ইউনুস) এক্ষেত্রে মওদুদী সাহেব হযরত ইউনুসের (আঃ) উপর তিনটি দোষা আরােপ করেছেন। প্রথমত, তিনি নবুয়তের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি আল্লাহ্ তায়ালার নির্ধারিত সময়ের আগেই অধৈর্য হয়ে বাসস্থান ত্যাগ করেন। তৃতীয়ত, তিনি নিজের সম্প্রদায়ের নিকট আল্লাহ্ তায়ালার প্রমাণ (হুজ্জত) পরিপূর্ণ করেননি। মওদুদী সাহেব হযরত ইউসুফকে (আঃ) বিংশ শতাব্দীর ঘৃণ্য ডিকটেটর মুসােলিনীর সাথে তুলনা করেছেন।
তিনি আল্লাহর নবী হযরত ইউসুফের মর্যাদাকে মুসােলিনীর সমমর্যাদার বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, “ইউসুফের (আঃ) দাবি নিছক অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রার্থনাই ছিলাে না, যেমনটি কোনাে কোনাে লােক ধারণা করে থাকে বরং তা ছিলাে ডিকটেটরশীপ লাভের দাবি। এর ফলশ্রুতি হিসেবে হযরত ইউসুফের (আঃ) যে মর্যাদা অর্জিত হয়েছিলাে, তা ছিলাে অনেকটা বর্তমান মুসােলিনীর মর্যাদার অনুরূপ।” (তাফহিমাত, ২য় খণ্ড, ১১২ পৃঃ)। পবিত্র কোরআনে হযরত ইউসুফের নামে একটি সূরা রয়েছে। উক্ত সূরাকে আল্লাহ তায়ালা সুন্দরতম কাহিনী’ আখ্যায়িত করেছেন। আর মওদুদী সাহেবের ভাষায় হযরত ইউসুফ ডিকটেটরশীপের দাবি করেছিলেন। তিনি হযরত ইউসুফকে ইতিহাসের অন্যতম ঘৃণ্য ব্যক্তি মুসােলিনীর সমমর্যাদায় নামিয়ে এনেছেন। আল্লাহ তায়ালার সম্মানিত নবী সম্পর্কে এর চেয়ে ধৃষ্টতামূলক উক্তি আর কি হতে পারে? হযরত দাউদ (আঃ) সম্পর্কে মওদুদী সাহেব বলেছেন, “উরইয়ার স্ত্রীর ব্যাপারটির মূলতত্ত্ব শুধু এতটুকু ছিল যে, হযরত দাউদ (আঃ) সমকালীন ইসরাইলী সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উরইয়ার নিকট তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অনুরােধ করেছিলেন। …(তাফহিমাত, ২য় খণ্ড, ৪২ পৃঃ)। হযরত দাউদ (আঃ) সম্পর্কে জনাব মওদুদী আরাে বলেছেন, “এর দ্বারা স্বভাবতই প্রকাশিত হয়, যে কাজ তাঁর (হযরত দাউদ) দ্বারা হয়েছিলাে তাতে তার কুপ্রবৃত্তির কিছু না কিছু দখল বা প্রভাব ছিলাে।
তার শাসকসুলভ অসংগত ব্যবহারেরও কিছুটা সম্পর্ক ছিলাে। আর তা এমন কাজ ছিলাে, যা ন্যায়পরায়ণ কোনাে শাসকের জন্য শােভনীয় ছিলাে ।” (তাফহিমুল কোরআন, ৪র্থ খণ্ড, ২২৭ পৃঃ) পবিত্র কোরআনে হযরত দাউদের (আঃ) প্রতি আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর বিশেষ অনুগ্রহের কথা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা হযরত দাউদের উচ্চ প্রশংসা করেছেন। কিন্তু মওদুদী সাহেব এই মহান মর্যাদার অধিকারী রাসূলকে কুপ্রবৃত্তির বশীভূত ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী’ বলে মন্তব্য করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। সত্যি মওদুদী সাহেবের এসব বাতিল ধ্যান-ধারণা দেখে যেকোন বিবেকবান লােক বিস্মিত না হয়ে পারেন না। মওদুদী সাহেব তার বিভিন্ন লেখায় মহানবী (সঃ) সম্পর্কেও সমালােচনা করেছেন, তাঁর সম্পর্কে ধৃষ্টতামূলক উক্তি করেছেন। দজ্জাল সম্পর্কিত হাদীসগুলাে সম্পর্কে আলােচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন “এ সম্পর্কে যেসব কথা হুজুরের নিকট থেকে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মূলত এগুলাে ছিলাে তার অনুমান (কিয়াস)। এসব সম্পর্কে তিনি নিজেও সন্দিহান ছিলেন। এসব কথা তিনি ওহী লাভের ভিত্তিতে বলেননি, বরং অনুমান করে বলেছিলেন।…..(রাসায়েল ও মাসায়েল, ৫৫-৫৬ পৃঃ -মওদুদী) মহানবীর (সঃ) হাদীস সম্পর্কে মওদুদী সাহেব বলেছেন, “হাদীস কিছু লােক থেকে কিছু লােক পর্যন্ত অর্থাৎ মানুষের মুখে মুখে বর্ণিত হয়ে আসছে। এসব বড়জোর সঠিক বলে ধারণা করা যায়, কিন্তু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা যায় না। আর এ কথা স্পষ্ট যে, আল্লাহর ধর্মের যেসব বিষয় এত গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলাের দ্বারা ঈমান ও কাফেরের পার্থক্য পিরষ্কার হয়ে যায়, সেগুলাে কয়েকজন লােকের বর্ণনা নির্ভর করে মানুষকে বিপদাপন্ন করা আল্লাহ তায়ালা কখনাে পছন্দ করতে পারেন।
।” (ঐ, ৬৭ পৃঃ) পবিত্র কোরআনের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে মওদুদী সাহেব বলেছেন, “কোরআন করিম হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট; কিন্তু নাজাত বা মুক্তির জন্য নয়।” (তাফহিমাত, ১ম খণ্ড, ৩১২ পৃঃ) ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইহকালের কল্যাণ এবং পরকালের নাজাত বা মুক্তিলাভই হচ্ছে হেদায়েত বা সৎপথ গ্রহণের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। মওদুদী সাহেবের মতে পবিত্র কোরআন হেদায়েতের জন্য। যথেষ্ট, মুক্তির জন্য নয়। তার এই উদ্ভট উক্তি থেকে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, তাহলে মুক্তির জন্য মানুষ অপর কোন্ ধর্মগ্রন্থ অনুসরণ করবে? সেসব কি মওদুদী রচনাবলী? মনে হয় স্পষ্ট বলতে সাহস না করলেও কৌশলে তিনি তাই বােঝাতে চেয়েছেন। নবী-রাসূলদের পরই সাহাবাদের মর্যাদা। তাঁদের সম্পর্কে মহানবী (সঃ) বলেছেন, ‘আমার সাহাবারা নক্ষত্রের মতাে। তাদের মধ্যে যাকে তােমরা অনুসরণ করবে, সঠিক পথ লাভ করবে। আর মহানবী প্রশংসিত সাহাবা কেরামও মওলানা মওদুদীর সমালােচনা থেকে অব্যাহতি পাননি। তাঁদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “দীর্ঘ দিনের শিক্ষাদীক্ষার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে রণাঙ্গনে নিয়ে আসেন। তাদের মন-মানসিকতায় মহাবিপ্লব চিত্রিত হওয়ার পরও ইসলামের প্রাথমিক যুদ্ধগুলােতে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের মূল তাৎপর্য অনুধাবনে সাহাবা কেরামরা বার বার ভুল করতেন।” (তরজমানুল কোরআন, রবিউসসানী, ১৩৫৭ হিঃ)। মওদুদী সাহেব সাহাবাদের সম্পর্কে বলেছেন, “সাহাবায়ে কেরামের অনেকে মনগড়া হাদীস বর্ণনা করেছেন।” (তরজমানুল কোরআন, ৩৫শ সংখ্যা) “সাহাবাদের মধ্যে জাহিলিয়াতের বদস্বভাবের পুনরাবৃত্তি ঘটে।” (তাফহিমাত, ২য় খণ্ড, ১৫৫ পৃঃ)। “অনেক সময় সাহাবাদের মধ্যেও মানবিক দুর্বলতা প্রাধান্য লাভ করতাে।
তারা একে অপরকে আক্রমণ করে বসতেন এবং পরস্পরে গালিগালাজ শুরু করতেন।” (তরজমানুল কোরআন, ৩শ সংখ্যা) ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) সম্পর্কে মওদুদী সাহেব লিখেছেন, “ইসলাম মানুষকে এই নির্দেশ দেয় যে, সে যেন কখনাে রিপুর প্রভাবে প্রভাবিত না হয় …এটা অত্যন্ত সূক্ষ্ম ব্যাপার। একবার হযরত আবু বকর সিদ্দিকের মতাে রিপুর তাড়নামুক্ত খােদাভীরু ও আল্লাহতে নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিও তা পূরণ করতে ব্যর্থ হন।” (ঐ) তরজমানুল কোরআনের একই সংখ্যায় হযরত ওমর (রাঃ) সম্পর্কে মওদুদী সাহেব বলেছেন, “বিশ্ব প্রতিটি উচুর সামনে মাথা নত করতে অভ্যস্ত ছিলাে এবং প্রত্যেক বুজুর্গ মানুষকে সাধারণ মানুষের স্তর থেকে কিছু না কিছু উর্ধে ধারণা করে আসছিল। এই ধারণার প্রভাব বিলুপ্ত হওয়ার পথও কখনাে কখনাে স্পষ্ট হয়ে উঠতাে..। সম্ভবত এই ব্যক্তিশ্রেষ্ঠত্বের ধারণাই রাসূলুল্লাহর ইন্তেকালের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও কিছুক্ষণের জন্য হযরত ওমরকে পরাভূত করে ফেলেছিলাে।” (ঐ) খেলাফতে রাশেদার প্রতি জাহিলিয়াতের হামলার বর্ণনা প্রসঙ্গে মওদুদী। সাহেব হযরত ওসমানের (রাঃ) সমালােচনা করে বলেছেন, “একদিকে ইসলামী রাষ্ট্র দ্রুত সম্প্রসারণের দরুন কাজ দিন দিন কঠিনতর হচ্ছিলাে, অপরদিকে হযরত ওসমান যার উপর এই বিরাট কাজের বােঝা ন্যস্ত করা হয়েছিল, তিনি ততটা যােগ্যতা ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন না যা তাঁর পূর্বসূরীদের ছিলাে। এজন্য জাহেলিয়াত ইসলামী সমাজব্যবস্থায় অনুপ্রবেশের পথ পেয়ে যায়।” (তাজদীদ ও এহইয়ায়ে দিন, ৩৩ পৃঃ)। হযরত ওসমান (রাঃ) হত্যাকাণ্ডের প্রতিশােধের দাবি উঠানাে হলে হযরত মায়াবিয়ার লােকদের উদ্দেশ্যে চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ) বলেন, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যথাসময়ে অবশ্যই এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশােধ নেয়া হবে। কিন্তু মওদুদী সাহেব হযরত আলীর (রাঃ) এই জবাবের সমালােচনা করে বলেন, “ইনসাফ করাে, তুমি যদি মায়াবিয়া হতে কিংবা মায়াবিয়া না হও অন্তত সিরিয়ার একজন সাধারণ নাগরিক হতে, তাহলে বর্ণিত পটভূমির প্রেক্ষিতে তুমি কি আলীর জবাবকে একটা বাহানা, গড়িমসি, ছলনা ও অস্বীকৃতি ছাড়া সৎ উদ্দেশ্য প্রণােদিত মনে করতে?” (তাজাল্লী, ডিসেম্বর, ১৯৫৭) উপমহাদেশের আলেম সমাজ মওদুদীর এসব উক্তির কঠোর সমালােচনা করলেও জামায়াতীরা এসব সঠিক বলে বিশ্বাস করে। মওদুদী রচনাবলী কোরআন-হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা ও ধর্মতত্ত্ব হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। দেশের আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণী, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের ধর্মপরায়ণ সাধারণ মানুষের মধ্যে এসব বই-পুস্তক ও কোরআনের তফসীর পরিকল্পিতভাবে ছড়ানাে হচ্ছে। ইসলাম সম্পর্কে সীমিত জ্ঞানসম্পন্ন ধর্মপরায়ণ লােকেরা মওদুদীর ইসলামের নামে আপত্তিকর ও চটকদার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। মওদুদীর অনুসারীরা তাকে মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ বলে প্রকাশ করে। এজন্য দেশের সচেতন নাগরিক, বিশেষ করে আলেম সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। আর এটা করা আলেম সমাজেরই ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব।
সূত্র : মুখোশের অন্তরালে জামাত