মস্কোয় পার্টি কংগ্রেসে
‘বাংলাদেশের’ কমিউনিস্টদের বক্তব্য
(দর্পণের সংবাদদাতা)
বাংলাদেশ থেকে একদল কমিউনিস্ট এখন মস্কোয়। ওরা সােভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির চব্বিশতম কংগ্রেসে যােগদান করছেন ভ্রাতৃত্বমূলক সদস্য গােষ্ঠী হিসেবে।
এদের মধ্যে অনেকেই হালে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন দীর্ঘ কুড়ি বছর পর। নতুন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার প্রথমেই এদের ছেড়ে দিয়েছে। কেউ কেউ সরাসরি জেলের দরজা থেকে অস্ত্র নিয়ে রণাঙ্গনে, আর নেতৃস্থানীয় কয়েক জন মস্কোয়।
পাকিস্তানে কমিউনিস্ট পার্টি দীর্ঘ কুড়ি বছর বেআইনী আছে। অনেকে জেলে, কেউ নিহত হয়েছেন, আবার কেউ দীর্ঘ অত্যাচারের পর পঙ্গু হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টির নেত্রী ইলা মিত্রের উপর পাক পুলিশ মিলিটারির অমানুষিক এবং পাশবিক অত্যাচারের কথা এখনও হয়ত অনেকের মনে আছে।
বাংলাদেশের যারা মস্কোয় গেছেন তাদের দাবি অবিলম্বে তাদের দেশের অস্থায়ী সরকারকে সােভিয়েট ইউনিয়ন স্বীকৃতি দিক এবং তারপর অস্ত্র সাহায্য।
তারা ওখানে একটি রিপাের্ট পেশ করেছেন। তাতে ওদের বক্তব্য যে সােভিয়েট ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলাে বাংলাদেশের এবং পাকিস্তানের গণআন্দোলনের প্রতি কোনাে সমর্থন জানায়নি।
বরং শাসক-শােষকদের নানা সাহায্য করে এসেছে। এইভাবে সাহায্যপুষ্ট হয়ে শােষকরা তাদের অত্যাচারের পরিধি ও গভীরতা নিঃসঙ্কোচে বাড়িয়ে গেছে।
রিপাের্টে আরও বলা হয়েছে যে, এশিয়া আফ্রিকার কিছু দেশ নতুন স্বাধীন হবার পর নিজেদের স্বার্থে বিশ্ব রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের নিরপেক্ষ বলে জাহির করে সাম্রাজ্যবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক উভয় রাষ্ট্র গােষ্ঠীর কাছ থেকেই আর্থিক ও অস্ত্র সাহায্য পেয়ে আসছে। এই সব তথাকথিত নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বিদেশি সাহায্য পুষ্ট হয়ে নিজেদের দেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের টুটি টিপে ধরেছে।
গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করার নীতি কিন্তু সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ায় কোনাে ক্ষোভ সঞ্চার করেনি। এই দুনিয়ার সমস্ত সাহায্য এই সমস্ত নয়া স্বাধীন রাষ্ট্র বরাবরই পেয়ে আসছে। কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে এই সাহায্যের পরিমাণ বেড়েছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্টরা সােভিয়েত নেতাদের বলার চেষ্টা করবেন যে, অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যারা গণতান্ত্রিক দুনিয়ার কোনাে সাহায্য না পায়। এই সাহায্য আন্দোলনের ক্ষতি করে এবং সেই দিক থেকে সাম্রাজ্যবাদী শশাষণ জিইয়ে রাখে।
সূত্র: দর্পণ
০৯.০৪.১৯৭১