ভারত সরকার মারফত সােভিয়েত বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিচ্ছে
(দর্পণের সংবাদদাতা)
ভারত সরকার বাংলাদেশের সরকারকে জানিয়েছেন যে, তাঁরা সমর্থন করতে পারেন এমন একটি সরকার যেটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করবে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নয়। নয়াদিল্লীর তরফে মুজিবনগরের কাছে এই বক্তব্য রেখেছেন কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রকের নীতি নির্ধারক কমিটির চেয়ারম্যান শ্রীডি পি ধর।
বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া সংবাদে প্রকাশ যে, ধর সাহেব যে দলগুলাে নিয়ে সরকার গঠন করা উচিত বলে জানিয়েছেন সেগুলাে হলাে, আওয়ামী লীগ, দুই ন্যাপ, মণি সিংয়ের কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশের জাতীয় কংগ্রেস। অবশ্য এটা সকলেই মেনে নিয়েছেন যে এই ধরনের মন্ত্রীসভাতেও আওয়ামী লীগের সদস্যই বেশি থাকবে।
আওয়ামী লীগ অবশ্য এখনই এ ধরনের কোনাে কোয়ালিশনের পক্ষে সায় দিতে প্রস্তুত নয়। এই দলের নেতাদের মতে এখনই এ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে নতুন সংবিধান ও পরবর্তীকালে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে যে অবস্থা দাঁড়াবে সেইটাই মেনে নেয়া উচিত। ভারত সরকারের এই ধরনের বক্তব্যে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলেও জানা গেছে। শােনা যাচ্ছে যে, দিল্লী যদি এই নিয়ে বেশি চাপ দেয় এবং যদি সরকারের তরফে সেই চাপ স্বীকার করে নেয়ার কোনাে ইঙ্গিত দেখা দেয়, তাহলে মন্ত্রিসভার অন্তত দু’জন সদস্য পদত্যাগ করবেন। এই প্রসঙ্গে যাদের নাম শােনা যাচ্ছে তারা হলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খােন্দকার মােস্তাক আলী (আহমদ) ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামরুজ্জামান সাহেব।
দিল্লী এই নিয়ে এত চাপ দিচ্ছে কেন? জানা গেছে যে চাপটি নাকি আসলে সােভিয়েত ইউনিয়নের সৃষ্টি। মস্কো চায় স্বাধীন বাংলাদেশে এমন একটি সরকার যার মাধ্যমে নিজের উদ্দেশ্য সাধিত হয় এবং রাজনৈতিক প্রভাব বজায় থাকে। এর জন্য প্রয়ােজন তার প্রতি আস্থাভাজন মণি সিংয়ের কমিউনিস্ট পার্টি ও মােজাফফর আহমেদ সাহেবের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে সরকারে স্থান দেওয়া। এর সঙ্গে দিল্লী মওলানা ভাসানীর ন্যাপকে যুক্ত করেছে, কারণ মাওলানার যা বিপুল জনসমর্থন তাতে তার দলকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অপর ন্যাপটিকে সরকার স্থান দিলে বিক্ষোভের সম্ভাবনা থাকবে। তাই সব দিক দিয়ে বাঁচিয়ে এই কোয়ালিশন বা জাতীয় সরকারের পরিকল্পনা।
সূত্র: দর্পণ
০৩.১২.১৯৭১