ভারত পাক সরকারের মুজিবর বিরােধী চক্রান্ত
(রাজনৈতিক সংবাদদাতা)
পূর্ব বঙ্গ স্বাধীকার দাবির উত্তাল আন্দোলনে দিল্লী প্রচণ্ড ভীত। ওরা ভাবছে পূর্ব বাংলার আন্দোলনের রেশ পশ্চিম বাংলায় অনুরূপ আন্দোলন গড়ে তুলবে।
তাই দিল্লী মনে করে যদি পূর্ব বাংলায় আন্দোলন মিলিটারি দিয়ে দমন করা যায় তাহলে পশ্চিম বাংলায় এ ধরনের আন্দোলন হতে পারবে না। এখানে হত্যার সংবাদ প্রচার হলে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে।
এই ব্যাপারে ইতিমধ্যে দিল্লী ইসলামাবাদ গােপন আলােচনা শুরু হয়েছে বলে প্রকাশ।
দিল্লী মােটামুটি রাজি হয়েছে ভারতীয় আকাশ দিয়ে সৈন্যবাহী পাক বিমান চলাচলের সুযােগ দিতে। বিমান চলাচল বন্ধ ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় বিমান চুরির পর। ভারত দাবি করেছিল কোনাে আলােচনা হবে না যদি পাকিস্তান বিমানের জন্য ক্ষতিপূরণ না দেয়। এই দাবি এখন আর উত্থাপিত হচ্ছে না।
হালেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্তা জেনারেল মানেকশ কলকাতায় এসে আরও সৈন্যবাহিনী আনার পরিকল্পনা করেছেন।
ইন্দিরা গান্ধী আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জগজীবন রামও হঠাৎ এসে উপস্থিত হলেন। সরেজমিনে তদন্ত হল পূর্ববঙ্গের আন্দোলনের ব্যাপারে কী প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে হতে পারে। আর ঐ আন্দোলনের জোয়ার এখানে এসে পৌছলে কী করা দরকার।
এখন পরিষ্কার যে, পশ্চিমবঙ্গে সেনাবাহিনীর অবতরণ শুধুমাত্র এ রাজ্যে এখন শান্তি-শৃঙ্খলা সমস্যার সঙ্গে জড়িত নয়।
সেনাবাহিনী স্পষ্টই ঘােষণা করেছে যে, নির্বাচনের পরেই যে ওরা চলে যাবে এমন কোনাে আশ্বাস দেওয়া যায় না।
দিল্লী পশ্চিমবঙ্গের সরকারি প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত ওড়িয়া সহচরী নন্দিনী সৎপথীকে কলকাতায় বসিয়ে রাখা হয়েছে।
তবে ওদের আশা যে, পশ্চিমবঙ্গে পূর্ববঙ্গের অবস্থা হয়ত হবে না। মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি মুজিবরের আওয়ামী লীগের মতাে অত শক্তিশালী হতে পারবে না।
যে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি এখানে সৃষ্টি করা হয়েছে তাতে এখানকার মানুষ পূর্ববঙ্গের মতাে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না। উগ্রপন্থী, বাংলা কংগ্রেস, আট পার্টি আর নব কংগ্রেসের নতুন ভাবমূর্তি সব মিলিয়ে হয়ত মার্কসবাদীদের ঠেকাতে পারবে।
সূত্র: দর্পণ, ১২.০৩.১৯৭১