You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.19 | পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন সম্পর্কে ঢাকার ডেপুটি হাইকমিশনার | দর্পণ - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন সম্পর্কে ঢাকার ডেপুটি হাইকমিশনার

ঢাকায় ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার শ্রীকে,সি, সেনগুপ্ত আওয়ামী লীগের দুর্বার আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী চরিত্রের অথবা পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে পরিণত করার কোনাে পরিকল্পনা এই আন্দোলনের পিছনে আছে বলে মনে করেন না।
পিকিংপন্থী কম্যুনিস্ট এবং মৌলানা ভাসানী সার্বভৌমত্বের শ্লোগান দিলেও মুজিবুর একে ‘উগ্রপন্থী ও প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিকর বলে মনে করেন। মুজিবুরের লক্ষ্য পাকিস্তানের কাঠামাের মধ্যে বাঙালির স্বাতন্ত্রের স্বীকৃতি লাভ। পূর্ব পাকিস্তানের সাত কোটি লােক তার ডাকে সমবেত হয়েছে। জানা গেছে, এটাই হলাে শ্রীসেনগুপ্তর অভিমত। গত সােমবার রাতে তিনি কলকাতা হয়ে দিল্লী গেছেন। পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা পর্যালােচনার জন্য শ্রীসেনগুপ্তকে দিল্লীতে ডাকা হয়েছে। দিল্লী রওনা হবার আগে তিনি পশ্চিমবঙ্গের চিফ সেক্রেটারিকে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে আওয়ামী লীগের আন্দোলন ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করেন।
সারা পূর্ব পাকিস্তানে হাজার হাজার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকের অদ্ভুত শৃঙ্খলাবােধের নজির ইতিহাসে নেই। এদের কর্মতৎপরতা আন্দোলনকে সাম্প্রদায়িক বা ভাষাভিত্তিক দাঙ্গার আত্মবিধ্বসী পথে নিয়ে যেতে দেয়নি। তার কারণ জনগণ ইতিমধ্যে জেনে গেছে শাসক শ্রেণীর সেইসব কৌশল, যা কোনাে আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করতে তারা ব্যবহার করে এবং তারপর আন্দোলনকে একেবারে খতম করার জন্য দমন নীতি চালায়।
শ্রীসেনগুপ্ত পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক চেতনার গভীরতা লক্ষ করেছেন। তার অভিমত এই যে, সামরিক বাহিনী ও আমলাতন্ত্রের সাহায্যে যে পাঞ্জাবি চক্র পাকিস্তান শাসন করছে তাদের নতি স্বীকার করতে হবে—যেমন ইতিপূর্বে তারা পূর্ব পাকিস্তানিদের চাপের কাছে হার মেনেছে।
পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক চক্র পাঞ্জাবি কায়েমী স্বার্থের দাসানুদাস এটা আজ পরিষ্কার। ভুট্টোর পূর্ব পাকিস্তানে আসার মুরােদ নেই।
মুজিবুরের আন্দোলন পাকিস্তানের রাজনীতিতে দূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করবে। তার ছয় দফা দাবি, যাতে শুধু প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে-পশ্চিম পাকিস্তানের অন্য চারটি প্রদেশকে উৎসাহিত করছে।
এই ঘটনা ভুট্টো ও তার পিপলস পার্টিকে পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য প্রতিনিধিদের থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। তিনশাে তেরাে জন সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে পশ্চিম পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের একশাে চুয়াল্লিশ জন প্রতিনিধি। ভুট্টো তিরাশি জনের এবং মুজিব একশাে সাতষট্টি জনের আনুগত্য লাভ করেছেন। ভুট্টোর প্রতি সমর্থন সিন্ধু ও পাঞ্জাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ যেখানে কায়েমী স্বার্থ তার ও তার দলের পৃষ্ঠপোেষক।
পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য অধিকাংশ দল ছয় দফা দাবির ভিত্তিতে মুজিবের সমর্থক। তার মানে তার একশাে সাতষট্টি জন সদস্যের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের একষট্টি জনের সমর্থন তিনি পাবেন। এতে মুজিব পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জাতীয় নেতা হয়ে উঠবেন।
মুজিব কেন্দ্রীয় সরকারে অধিষ্ঠিত হলে পাক-ভারত সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে বলে আশা করা যায়। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে একথা মনে করে যে, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ক জিইয়ে রাখছে প্রতিরক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি করার জন্য যাতে পাঞ্জাবি আমলা ও আর্মির সুবিধা হয়।

সূত্র: দর্পণ ১৯.০৩.১৯৭১