You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.19 | পূর্ববঙ্গ নয়, বাংলাদেশ’ | দর্পণ - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্ববঙ্গ নয়, বাংলাদেশ’

পূর্ব বাংলায় ওরা নিজেদের দেশকে গত তেরাে বছর ধরে ‘বাংলাদেশ’ বলে আখ্যা দিয়েছে—পূর্ব পাকিস্তান বলতে ওরা ঘৃণা বােধ করে।
শেখ মুজিবর রহমান নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, বুর্জোয়া গণতন্ত্র হত্যার ব্যবস্থা শাসক শ্ৰেণীই নিজের স্বার্থে করে, মেহনতি মানুষ চিরকালই শান্তিপূর্ণ উপায়ে তার দাবি আদায় করতে চায়।
ওদের সমস্যা কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত পাঞ্জাবি শাসক-শােষক শ্রেণীর ঔপনিবেশিক শােষণ। সেই ১৯৫২ সাল থেকে ওরা এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছে। শােষণের কায়দা চির পুরাতন।
নরম-গরম অনেক রাজনৈতিক দল মানুষকে বিভক্ত রেখেছিল। শেষ পর্যন্ত মিলিটারি শাসন দিয়ে ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত শােষণ চালিয়ে গেছে পাঞ্জাবি ও সিন্ধি কায়েমী স্বার্থের দল।
পূর্ব বাংলায় মেহনতি মানুষ শেষ পর্যন্ত গণসংগ্রামের জোয়ারে সবকিছু ধুয়ে দিয়ে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি আদায় করে। ১৯৭০ সালের সাতই ডিসেম্বর নির্বাচন হয়।
ওখানকার মানুষ অনেক অভিজ্ঞ। তাদের বােকা বানানাে গেল না। বহু পার্টি সৃষ্টি করে শাসক শােষক শ্ৰেণী যেমনটি চেয়েছিল তা পেল না।
সাতই ডিসেম্বরের নির্বাচনে মুজিবর রহমানের দল, আওয়ামী লীগ, নির্বাচনে অপর সকলকে ঝেটিয়ে বিদায় করে দিল।
ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টো অনেক শলা পরামর্শ করতে লাগলেন আর মাঝে মাঝে মুজিবরের সঙ্গে সাক্ষাৎ চলতে লাগল। মুজিবরের একটি কথা ছয় দফা দাবির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ জিতেছে—এই দাবির ব্যাপারে কোননা দেয়া নেয়ার প্রশ্ন উঠতে পারে না।
সঙ্গে সঙ্গে ইয়াহিয়া-ভুট্টো চক্র তারস্বরে চিৎকার করল যে, পূর্ব বাংলায় পাকিস্তান সংহতি বিরােধী কার্যকলাপে লিপ্ত। অত্রএব মার্চ মাসের তিন তারিখে নির্ধারিত এ্যাসেম্বলির ঢাকা অধিবেশন হতে পারবে না।
ভুট্টো বললেন যে, তার দলের সদস্যদের পক্ষে ঢাকায় যাওয়া নিরাপদ নয়। ওরা ঢাকা অধিবেশন বয়কট করলেন।
এর আগে আরও অনেক চক্রান্ত হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে অবনতি ঘটিয়ে একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার।
কিন্তু কোনাে কিছুই পূর্ব বাংলার মানুষকে বিচলিত করতে পারেনি। ওরা মিলিটারির কামান বন্দুকের সামনে হাজারে হাজারে এগিয়ে এল। সারা পূর্ব বাংলা শহীদের রক্তে লাল হয়ে গেল।
মুজিবর বললেন, আমরা লাখে লাখে মরেছি বন্যায় আর দুর্ভিক্ষে, এবার মরার জন্য প্রস্তুত আছি গুলির মুখে। আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ, আমাদের দাবি পশ্চিমী শােষণ বন্ধ কর।’

সূত্র: দর্পণ, ১৯.০৩.১৯৭১