You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.02.19 | আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের পূর্বে শেখ মুজিবের 'পিণ্ডি গমনে অসম্মতি : ‘মুক্ত নাগরিক' হিসাবে নয়, প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাবের জের | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
১৯শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের পূর্বে শেখ মুজিবের ‘পিণ্ডি গমনে অসম্মতি :
‘মুক্ত নাগরিক’ হিসাবে নয়, প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাবের জের
(ষ্টাফ রিপোর্টার)

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান সর্বশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিণ্ডি গমনে অসম্মত হইয়াছেন এবং সংশ্লিষ্ট মহলকে স্পষ্টতঃ জানাইয়া দিয়াছেন যে, আগরতলা মামলাটি সমগ্রভাবে প্রত্যাহৃত না হইলে তিনি সরকার ও বিরোধীদলের প্রস্তাবিত আলোচনায় শরিক হইবেন না।
শেখ সাহেবের এই মূহূর্তে ‘পিণ্ডি গমনে আপত্তির কারণ, তাঁহাকে পূর্বকথিত ‘মুক্ত নাগরিক’ হিসাবে গণ্য করার পরিবর্তে প্যারোলে পুলিস প্রহরাধীনে ‘পিণ্ডি লইয়া যাওয়ার কথা উঠে এবং শেখ সাহেব ও তাঁর প্রহরীদের জন্য লাহোরের বিমানে ৫টি সিটও বুক করা হয়।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিবর রহমান আগরতলা মামলাটি সমগ্রভাবে প্রত্যাহৃত না হওয়া পর্যন্ত ‘পিণ্ডি গমনে অসম্মতি জানান। এদিকে, মামলাটি প্রত্যাহারের ব্যাপারে আইন বিভাগ কর্মরত রহিয়াছেন এবং সে ব্যাপারে যে কোন মুহূর্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হইতে পারে বলিয়া যে সংবাদ পাওয়া গিয়াছিল তাহার পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিশেষ করিয়া গতকল্য (মঙ্গলবার) সকালে ‘পিণ্ডিতে মিঃ ব্রোহী ও আইন মন্ত্রী জাফরের মধ্যে আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের প্রশ্নে অনুষ্ঠিত বৈঠককে কেন্দ্র করিয়া বিভিন্ন মহলে এই ধারণাই জন্মিয়াছিল যে, মামলাটি এই দিনই (মঙ্গলবার) প্রত্যাহৃত হইবে এবং শেখ সাহেবও ’পিণ্ডি যাইবেন। বলা বাহুল্য, এ ধারণা ‘পিণ্ডি মহলেও জন্মে। এতদসত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন অগ্রগতির সংবাদ পাওয়া যায় না।
এই অবস্থায় শেখ সাহেব গতকল্যই নিজদলের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজুদ্দীন আহমদকে পিণ্ডি প্রেরণ করেন। জনাব তাজুদ্দীন পিণ্ডি গিয়া ‘ডাক’ নেতৃবৃন্দের এবং বিশেষ করিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিবর্গের নিকট শেখ সাহেবের সর্বশেষ অভিমত পেশ করিবেন
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, সরকার ও বিরোধীদলের প্রস্তাবিত আলোচনা বৈঠকে কেবলমাত্র শেখ সাহেবই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করিবেন এবং তিনি প্রয়োজন মনে করিলে অপর একজন প্রতিনিধি মনোনীত করিতে পারিবেন বলিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এমতাবস্থায়, শেখ মুজিবর রহমানকে বাদ দিয়া আওয়ামী লীগ ‘পিণ্ডি আলোচনায় শরিক হইতে পারে না এবং করিবেও না।

তাজুদ্দীনের বক্তব্য
এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হইয়াছে যে, ছয়দফাপন্থী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজুদ্দীন আহমদ গতকল্য (মঙ্গলবার) এখানে বলেন যে, আগরতলা মামলা হইতে মুক্তি পাইবামাত্র শেখ মুজিবর রহমান রাওয়ালপিণ্ডির আলোচনা সভায় শরিক হইবেন।
রাওয়ালপিণ্ডি যাত্রার প্রাক্কালে গতকাল ঢাকা বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, আওয়ামী লীগের কথা হইল এই যে, কেবলমাত্র আগরতলা মামলা প্রত্যাহৃত ও শেখ সাহেবকে মুক্তি দেওয়া হইলেই আওয়ামী লীগ প্রধান গোলটেবিল বৈঠকে শরিক হইবেন।
স্থানীয় কোন একটি দৈনিকে প্রকাশিত একটি খবর সম্পর্কে মন্তব্য করিতে বলা হইলে জনাব তাজুদ্দিন বলেন যে, “এ সম্পর্কে এই মুহূর্তে আমি কোন মন্তব্য করিব না।” তবে তিনি বলেন যে, রাওয়ালপিণ্ডিতে গিয়া তিনি খবরটির সত্যাসত্য যাচাই করিয়া দেখিবেন এবং প্রয়োজন হইলে একটি বিবৃতি দিবেন।
রাওয়ালপিণ্ডি গমনের প্রাক্কালে জনাব তাজুদ্দিন কুর্মিটোলায় গিয়া শেখ মুজিবরের সহিত সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন যে, পিণ্ডির প্রস্তাবিত বৈঠকে শেখ সাহেবেরই আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রতিনিধি হওয়ার কথা। জনাব তাজুদ্দীন বলেন যে, অবশ্য শেখ সাহেব যদি বৈঠকে যানই তাহা হইলে তিনি আর একজন প্রতিনিধি মনোনীত করিতে পারেন।
জনাব আহমদ আরও বলেন, ৬-দফা পন্থী আওয়ামী লীগকে যদি গোল টেবিলে শরীক হইতে হয় তাহা হইলে শেখ মুজিবকে সেখানে চাই-ই।
জনাব তাজুদ্দীন বলেন যে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে শেখ সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া সেখান হইতে সোজা তিনি বিমান বন্দরে আসিয়াছেন। তিনি শেখ সাহেবের কোন বাণী বহন করিতেছেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে জনাব তাজুদ্দীন বলেন : “তেমন বিশেষ তাজুদ্দীন কিছু নয়।” অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, শেখ সাহেবের “কিছু বক্তব্য” তিনি বহন করিয়া লইয়া যাইতেছেন, তবে সে বক্তব্য ইতিপূর্বেই রাওয়ালপিণ্ডির সংশ্লিষ্ট মহলে পৌঁছাইয়া দিয়াছেন।” জনাব তাজুদ্দীন আহমদ বলেন যে, গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদের বৈঠকে যোগদানের জন্য তিনি পিণ্ডি যাইতেছেন।
তিনি বলেন যে, গোলটেবিল বৈঠকে ৬ দফা পন্থী আওয়ামী লীগের পক্ষে যোগদানের জন্য কেন্দ্রীয় ডাক শেখ মুজিবর রহমানকে মনোনীত করিয়াছেন এবং প্রেসিডেন্ট আইয়ুবও বৈঠকে শেখ সাহেবের উপস্থিতির প্রস্তাবটি গ্রহণ করিয়াছিলেন।

বিচারপতি মুর্শেদ
একই বিমানে পিণ্ডি রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে বিচারপতি মাহবুব মুর্শেদ বলেন যে, তিনি এখনও বিশ্বাস করেন যে, শেখ মুজিবর রহমান, ভূট্টো ও মওলানা ভাসানীর যোগদান ব্যতীত কোন আলোচনা বৈঠকই সফল হইতে পারে না। -এপিপি

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯