২৬ ভাদ্র ১৩৭৮ রোববার ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
-আখাউরার উত্তর পূর্বে মুকুন্দপুরে মুক্তিবাহিনী শত্রুসেনাবাহী একটি ট্রেন আক্রমণ করে বিধ্বস্ত করে। অন্যত্র কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা সফল আক্রমণ চালিয়ে ৬০ জন পাক সেনাকে খতম ও ২৪ জনকে আহত করে। কুমিল্লার শালদা, কায়েমপুর, লক্ষ্মীপুর, মির্জানগর, রঘুরামপুর ও জগন্নাথদিঘি এলাকায় উল্লেখিত ক্ষয়ক্ষতি হয়।
-নাইজেরিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জনাব মহিউদ্দিন জায়গীদার লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনে যোগদান করেন।
-কুয়ালামপুরে কমনওয়েলথদেশ সদস্য দেশগুলোর সম্মলনে ভারত পাকিস্তানের উপর শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চাপ দিতে বলে।
-পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির সহ-সভাপতি মাহমুদ আলী পাকিস্তান সরকারের বিশেষ দূত হিসাবে ইউরোপ ও আমেরিকা সফর শেষে ঢাকায় বলেন, ইউরোপের বেতার টিভি, সংবাদপত্রগুলো একই সুরে প্রচার করে চলেছে যে, পুর্ব পাকিস্তানে একটা অঘটন ঘটে গেছে। পাকিস্তান সাম্প্রতিক নির্বাচনে যে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার অর্জন করেছে তাদের ক্ষমতা না দিয়ে সেনাবাহিনী সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের জনগণের দাবি নস্যাৎ করতে চায়। কারণ নির্বচনের ফলাফল পশ্চিম পাকিস্তানীদের মনপুত হয়নি। ইউরোপের বুদ্ধিজীবীরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন, যা ঘটবার ঘটেছে, এখন যারা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তাদের নেতার সাথে আপোষ করে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বিদেশীদের এই ভুল ধারন সম্পর্কে আমারা তাদের জানিয়েছি যে, ২৫ মার্চ সৈন্যবাহিনী তলব করার পর পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটেছে তার বিবরণ বিদেশী পত্র-পত্রিকায় থাকার কথা নয়। কারণ তখন বিদেশী সাংবাদিকদের নিরাপত্তার কারণে ঢাকা ত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনায় পূর্ব পাকিস্তানে কত লোক মারা গেছে যুক্তরাষ্টড়ের পত্র-পত্রিকা গুলোতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।আমরা সেখানকার সাংবাদিক বলছি কত লোকমরেছে সেটা প্রশ্ন হচ্ছে সৈন্য তলব করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল কিনা?
-কেনো ৭০ লাখ লোক ভারতে চলে গেল এ সম্পর্কে ও তারা প্রশ্ন করেছে। আমরা বলছি গ্রামের লোকে যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। সৈন্য বাহিনী দেখলেই তারা ভয় পায়। তাই সৈন্যদের আসার কথা শুনে তারা গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশসমূহে এই ধারণা জন্মেছে যে, পাকিস্তান নির্বাচনে যারা সংখাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তাদের সাথে আপোষ না করলতে বর্তমান সমস্যার সামাধান হবে না। আমরা তাদের বলছি যে, নীতিগতভাবে আমরা এর বিরোধী নই। তবে নির্বাচনে যে দল জয়ী হয়েছে সেই দলের নেতা পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছেন। এমন নেতৃত্ব সাথে আপোষ হতে পারে না। আজ তার সঙ্গে যদি কোন মীমাংসায় আসতে হয় তবে তা অখণ্ড পাকিস্তানের ভিত্তিতে হতে হবে। (দৈঃ পাঃ/আঃ/ বাংলার বাণী)
-লন্ডনের এ্যান্টনী ম্যাসকারেনহাসের দ্যা রেইপ বাংলাদেশ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব হয়। এই গ্রন্থই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম গ্রন্থ। পাকবাহিনীর নারকীয় গনহত্যার বীভৎস কাহিনী সমৃদ্ধ তথ্য ও বস্তুনিষ্ট প্রতিবেদন। উল্লেখ্য, গণহত্যার বিস্তৃত বিবরণ সানডে টাইমসে জুন ১৩ ছাপা হয়। এজন্য এ্যান্টসী ম্যাসকারেনহাস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তান থেকে তাঁর পরিবার নিয়ে লন্ডনে আসার পরই এপ্রিলে ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতা ও গণহত্যার সংবাদ প্রকাশ করেন। এ গ্রন্থটি তারই ঐ প্রতিবেদনের অনুসিদ্ধান্ত।
-Keeping’s contemporary Archives(পৃঃ২৪৯৮৯) লিখছে, ‘ The guerrillas activities were directed particularly against communication. 9t was reported on sept12 that 90 percent of the culverts and small bridges on the roads linking Dacca with Camilla, Jessore and Kushite had been destroyed, and that road and rail deliveries were estimated to have been reduced to 10 percent of capacity”
-নগরকান্দা (ফরিদপুর) থানা কানাই লাল ঘোষ সহ ৩২ জনের এ মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করে মধুমতির পাড়ে এসে পৌঁছে। তাঁরা মাঝি কান্দায় আব্দুল হামিদের (প্রাক্তন পুলিশ) নেতৃত্বধীন কাজ শুরু করে। এ অঞ্চলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ মোল্লার দল পাকবাহিনী সঙ্গে সংঘর্ষে শুরু থেকে লীপ্ত ছিল। উল্লেখ্য এই সব মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ী-ঘর মে মাসে পাকসেনারা পুড়িয়ে দিয়েছিল।
-The times reported on Sept12: “Military terror is continuing in East Pakistan… Political suspects are still ‘lifted’, although care is taken to their arrests unobtrusive. Army reprisals continue to be savage. In the last week of August 70 suspects were taken from seven villages, lined up and shot. Their homes were destroyed.”
-ভারতে শরণার্থীদের করুণ অবস্থা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য কলেকার প্রাদুর্ভাব হয়। এ সম্বন্ধে The Times (sept.12) আরো লিখেছে, “ An estimated 1,500,000 of the 8,500,000 Bengali refugees are living in knee-deep water or in mud. As a result, sanitation in the flooded camps in now existent and cholera has broken out again.
-উল্লেখ্য, ইয়াহিয়া খান বলেছেন ভারতে পাকিস্তানী আশ্রয় নিয়েছে মাত্র ২০ লক্ষ বাকীগুলো হলো ১৯৪৭ সালের উদ্বাস্তু। ওদের দিয়ে শিবিরগুলো ভরা হয়েছে। (হায়রে সত্য ভাষণ। হায়রে দেশ। হায়রে নেতৃত্ব।) সেনেটর এডওয়ার্ড কেনেডী বনগাঁ শরণার্থী শিবিরগুলা (আগষ্ট ১০-১১) সরজমিনে পরিদর্শন করেছে। ১৬ আগষ্ট দিল্লীতে মিঃ এডওয়ার্ড কেনেডী দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, আমি নিশ্চিত যে, পাকবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালিয়েছে… শরণার্থীদের এত দুঃখের কাহিনীর সান্ত্বনা হবে তখন, যখন শরণার্থীরা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করবে এবং শেখ মুজিবের মুক্তি ও পূর্বপাকিস্তানের রাজনৈতিক সমাধান হবে।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী