ওয়ার্কার প্রেস, ডিসেম্বর ১১ , ১৯৭১
পশ্চাদগামী পাকিস্তানীদের প্রতিশোধ
একজন বিদেশী সাংবাদিক
বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাকিস্তানি সৈন্যরা ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর হাতে অপসৃত হবার পথে তাদের পরাজয়ের গ্লানি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উপর ভয়ানক প্রতিশোধ হিসেবে প্রয়োগ করছে।
চট্টগ্রাম থেকে রিপোর্টে জানা যায় এখনও ইয়াহিয়া খানদের বাহিনীর হাতে, শহরেরশত শত শ্রমিক নিহত হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে ভারতীয় সৈন্যদের আক্রমণের কারণে আর্মি ইউনিট চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রপথে পালানর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চট্টগ্রামে ট্রেড ইউনিয়নগুলোর প্রচুর কেন্দ্র থাকার জন্য সেখানে প্রচুর শ্রমিকদের অবস্থানের আছে। সে কারণে এই এলাকা ছিল সবচেয়ে সক্রিয় যা প্রথম দিন থেকেই খানের বাহিনীকে প্রতিরোধের দিকে অন্যতম ছিল।
পূর্ব বাংলা ধরে রাখতে না পেরে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যত ইচ্ছা বাঙ্গালী শ্রমিক নিহত করেছে বাংলাদেশের উপর ঘৃণা স্বরূপ।
যখন ভারতীয় বাহিনী এই সপ্তাহের শুরুর দিকে যশোর ঢুকে তখন তারা আশেপাশের গ্রামগুলোতে প্রচুর ধ্বংস যজ্ঞ দেখতে পান।
ইতালীয় ক্যাথলিক পুরোহিতদের একজন যিনি পাকিস্তান দখলদারদের ওখানে বসবাস করতেন তিনি সংবাদদাতাদের বলেন যে স্বাধীনতার আগে গত সপ্তাহ এখানকার পরিস্থিতি খুব কঠিন ছিল।
নিপীড়ন ক্রমাগত নিষ্ঠুরতাকে হার মানছিল। যশোর সেনানিবাসের ভিতরে ছিল হত্যা আর নির্যাতনের কেন্দ্রবিন্দু।
মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের সৈন্য শহরের উপকণ্ঠে সমবেত হয়। পাকিস্তানি সেনারা এখনো জিম্মি রেখেছিল ।
ভারতীয় সমর্থিত আওয়ামী লীগের দ্বারা গঠিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধান নেতৃবৃন্দ রাজাকারদের ধরার জন্য আবেদন জানান।
এই নেতারা এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনেক জায়গায় তাদের প্রশাসন স্থান করেছে । যেখানে মুক্তিযুদ্ধ কমিটি ইতিমধ্যে স্থানীয়ভাবে প্রশাসনের কাজ শুরু করেছেন।
প্রায় দেড় লাখ অনিয়মিত বাহিনীর বাঙ্গালীদের কাছে থাকা অস্ত্র নিয়েও তারা শঙ্কিত। তারা আশা করছেন যাতে কোন নতুন আন্দোলন মাথা চারা দিয়ে না ওঠে।
প্রতিক্রিয়াশীল মতামত প্রকাশিত হয় নয়া দিল্লির প্রতিনিধি হুমায়ুন চৌধুরীর খবরে যেখানে বলা হয় যে মুক্তিবাহিনীকে ভারতের পশ্চিম সীমান্তে সংগ্রামে অংশ নিতে পাঠানো উচিত । এই সপ্তাহের শুরুর দিকে এই প্রস্তাব করা হয়।
কিন্তু কর্মী এবং বাংলাদেশের কৃষক দেড় ভারতের কাশ্মীরে যেতে আগ্রহী হয়নি – যা ছিল পশ্চিমে ভারতের মূল যুদ্ধ ক্ষেত্র।
চৌধুরীর প্রস্তাব ছিল বাঙ্গালী বিদ্রোহী যোদ্ধাদের ঠেকানোর প্রথম পদক্ষেপ যাতে ভারতীয় রুলিং ক্লাসের সাথে বুর্জোয়াদের আইন বাংলাদেশ বলবত থাকে।
প্রাভদা গতকাল স্বতন্ত্র্র ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের বর্তমানে পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে ভারতের সাথে যোগদান করতে। বর্ষীয়ান ভাষ্যকার ইউরি জুখভ আবারও পাকিস্তান সরকারের ওপর মস্কোর আহবানকে জোর দিয়ে প্রচার করেন যেখানে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নিষ্পত্তির পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধের কথা বলা ছিল।