টাইমস, লন্ডন, এপ্রিল ১৩, ১৯৭১
হাজারো সন্তন্ত্র মানুষ এখনো ঢাকা থেকে পালাচ্ছে।
ডেনিস নিলড থেকে
ঢাকা, এপ্রিল মাস। এই ভীত এবং বিনয়ী শহরের বনের উপর সবুজ এবং সাদা পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার ঝাপটানি শুনা যায়। বাংলাদেশের পতাকা, পাকিস্তানের পূর্ব অংশের ৭৫ মিলিয়ন মামুলী বাঙ্গালীদের স্বাধীনতার ইচ্ছা হয় নিমজ্জিত অথবা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। একটি পতাকার দর্শন এখন সংক্ষিপ্ত মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকি হবে।
ইয়াহিয়া খানের সৈন্যরা শহরে জীপ এবং ট্রাক নিয়ে ইচ্ছামত টহল দিচ্ছে এবং তাদের রাইফেলস এবং সাব-মেশিন গান তৈরি রয়েছে। জেলায় পরিপূর্ণ শ্রমিক শ্রেণী কালো মরুভুমির ছাই এবং দগ্ধ বাঁশ স্ট্যাম্পের মাঝ দিয়ে ঘোরাঘুরি করছে।
২৫শে মার্চ রাতে বিচ্ছিন্নবাদী আওয়ামীলীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলন দমন করার জন্য দিয়াশলাইয়ের কাঠের মত কুঁড়ে ঘরগুলো দগ্ধ করা হয়েছে।
ঢাকার কূটনৈতিকদের অনুমান অনুযায়ী সুন্দরভাবে প্রস্তুত হয়ে প্রায় ৬০০০ মানুষের উপর প্রবল আক্রমন চালানো হয়েছে।
সৈন্যবাহিনীর রাইফেলের আকস্মিক আঘাত রাতে এখনো স্বরাঘাত করছে আওয়ামীলীগের অফিসার, বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য বিশিষ্ট বাঙ্গালীদের উপর। “এটা গেস্টাপো নিয়ম।” একজন পশ্চিম কূটনৈতিক মন্তব্য করেন, “সেনাবাহিনী গণহত্যা সংঘটিত করার অঙ্গীকার করেছে।”
পশ্চিম পাকিস্তানের মামুলী অবাঙ্গালীদের দ্বারা পরিচালিত লুটপাতের সময় সেনাবাহিনী অন্ধ হয়ে যায়। হাজার হাজার পরিবার এখনো শহর থেকে তাদের গ্রামে পালিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে। ছত্রাবাসগুলোতে সহিংসতা এবং গুলির গর্ত আকীর্ণ ভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। নিরপেক্ষ পযবেক্ষকদের অনুমান অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৫০০ ছাত্রকে গুলি অথবা মেরে ফেলা হয়েছে যখন সেনাবাহিনী শহরটি দখলের সময় তারা প্রতিরোধ করেছিল।
প্রত্যক্ষ দর্শীদের দাবী অনেককে সারিদদ্ধভাবে দেয়ালের বিপরীতে দাঁড়া করান হয়েছিল এবং মেশিন গানের গুলির দ্বারা কেটে ফেলা হয়েছিল। অন্তত আটজন অনুষদের বিশিষ্ট অধ্যাপকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশদের নিরস্ত্র করা হয়েছিল। বেঁচে যাওয়া পূর্ব বাংলা রেজিমেন্ট এবং পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস যারা প্রতিরোধের নেতৃত্ব দিয়েছিল। অনেককেই বন্দী করা হয়েছিল।
ঢাকাকে রাত ৯ টা থেকে ভোর পাঁচটার কারফিউ দিয়ে আটকানো হয়।
সেনাবাহিনী এবং অবাঙ্গালি লুটপাট কারী দলের মনোযোগ এড়াতে অনেক বাঙ্গালী পরিবাররাতে তাদের ঘরে বাতি বন্ধ করে বাড়িতে বসে ছিল।
সবচেয়ে সিনিয়র আমলারা তাদের ডেস্কে ফিরে এসেছে যদিও তাদের কর্মীরা কাজ থেকে অনেক দূরে ছিল। দোকান গুলি পুনরায় খোলা হয়ে ছিল এবং অপরিহার্য সেবা সমূহ স্বাধীনভাবেই কাজ করছিল।
সৈন্য অভিযান জোরদার করতে সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে সিনিয়র আমলাদের পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিমান যোগে অব্যাহতভাবে আনা হচ্ছিল যাতে দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা যায়।
যখন থেকে ইয়াহিয়া খানের দেশ অটুট রাখার সিধান্তের নেয়া হয় তারপর বিশ্বাস করা হয় যে প্রায় ১০০০০ সৈন্য আনা হয়েছে। আনুমানিক ৩৫০০০ সৈন্য আনা হয়েছে। পূর্ববর্তী রিপোর্ট অনুযায়ী ৭০০০০ সৈন্য ছিল।প্রদেশের পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে অন্যায়ভাবে যত্ন করা হয়েছিল।
রাস্তার হকারদের পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা বিক্রির দুম বাণিজ্য চলছে যা আত্মসমর্পণের প্রতীক বহন করে। একজন বাঙ্গালী কৃষক বলেন,“ বাংলাদেশের কেউই ফিস ফিসের উপরে শব্দ করে না। আমরা পাকিস্তানী পতাকা উত্তোলন করেছি শুধুমাত্র বন্ধুকের ভয়ে।” “বীর বাংলাদেশ এখনো আমাদের অন্তরে রয়েছে।”
এ পি মাইকেল হরন্সবাই লিখেছেনঃ
পাকিস্তান বাহিনীর ইউনিট ক্রমাগতভাবে পূর্ব বাংলা পশ্চিম সীমান্তবর্তী শহর বরাবর আজ প্রচণ্ড চাপ দিয়ে চলছে। “বাংলাদেশ” স্বাধীনতা আন্দোলনের কার্যক্রম কৃশ নিয়ন্ত্রনের জন্য। সেনাবাহিনীর এই অঞ্ছলে নিজস্ব প্রতিপাদন করা শুধুমাত্র কিছু দিনের ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে। এইভাবে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান শহরগুলোর কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে করতে পিছনে যাচ্ছে।
বিমান আক্রমন এবং আর্টিলারি গোলাবর্ষণ ভারতীয় গোয়েন্দা দ্বারা আজ রিপোর্ট করা হয়েছিল উভয় দিনাজপুর, মধ্য উত্তর, এবং কুষ্টিয়া ও আরো দক্ষিণে। রাজশাহী এবং পাবনা শহর সেনাবাহিনীর চাপে রয়েছে। একমাত্র নিয়মিত প্রতিরোধ বাহিনী হলো পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস এবং বেঙ্গল রেজিমেন্ট যারা খুবই কম সংখ্যক এবং দুর্বল ভাবে সজ্জিত।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইউনিট যশোর থেকে পশ্চিমের প্রায় এক মাইল দূরের ভারতীয় সীমান্তের থেকে রিপোর্ট করেছে। গত সপ্তাহে কয়েক হাজার শরণার্থী সীমান্ত পাড় হয়েছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তাৎক্ষনিক সরবরাহ সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে না যদিও তারা তাদের বাড়ির ১০০০ মাইল দূরে থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ঢাকা ও যশোরে সেই সাথে সিলেট ও কুমিল্লার পূর্বাঞ্চলীয় শহর গুলোতে সরবরাহ এবং শক্তি বৃদ্ধি হচ্ছে বিমান দ্বারা। সেনাবাহিনী জলপথও নিয়ন্ত্রণ করছে।