You dont have javascript enabled! Please enable it! দি সান বালটিমোর, জুন ৯, ১৯৭১ দুইজন সিনেটর পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধের আবেদন জানান - সংগ্রামের নোটবুক

দি সান বালটিমোর, জুন ৯, ১৯৭১
দুইজন সিনেটর পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধের আবেদন জানান
অ্যাডাম ক্লাইমার
দি সান-এর ওয়াশিংটন দপ্তর থেকে

ওয়াশিংটন, জুন ৮ – যতক্ষণ পর্যন্ত না পাকিস্তানের সরকার তাদের নীতি পরিবর্তন করছে যাতে করে উদ্বাস্তুরা তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে ততক্ষণ পর্যন্ত সেখানে সবধরনের সাহায্য বন্ধ করে রাখা উচিত। সিনেটরদ্বয় উইলিয়াম বি. স্যাক্সবি (রিপাবলিকান, ওহাইও অঙ্গরাজ্য) এবং ফ্রাংক চার্চ (ডেমোক্র্যাট, আইডাহো অঙ্গরাজ্য) আজ এই জোরালো আবেদন জানান।

তাঁরা ঘোষণা করেন যে তাঁরা আগামি সপ্তাহে বৈদেশিক সাহায্য আইনের খসড়া সংশোধনের দাবী সিনেটে উত্থাপন করবেন পাকিস্তানে যেকোন সামরিক অথবা অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ রাখতে যতক্ষণ পর্যন্ত না ভারতে অবস্থানরত ৫০,০০,০০০ উদ্বাস্তু তাদের দেশে ফিরে যাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণকাজ শুরু হচ্ছে।

সিনেটর চার্চ যুক্তি তুলে ধরেন যে এই সংশোধনটি একটি “গৃহযুদ্ধ”-এর এক পক্ষ – পাকিস্তানের সরকার – এর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পরিহার করার জন্যে অতিব জরুরী। তিনি বলেন এটি একটি “নিরপেক্ষ” দাবী এবং পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনধিকারচর্চা এর উদ্দেশ্য নয়। তবে প্রশ্নের সম্মুখীন হলে তিনি স্বীকার করেন যে এই সংশোধন চাওয়া হচ্ছে পাকিস্তানের সরকার যাতে পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের প্রতি তাদের নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় – যথেষ্ট উদার ধরণের নীতি পরিবর্তন প্রয়োজন যাতে করে উদ্বাস্তুরা তাদের দেশে ফিরে যাওয়াকে নিরাপদ মনে করে।

যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলারের সংস্থান করবে

ইতিমধ্যে, চার্লস ব্রেই, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র, ঘোষণা দেন যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে আরো ১ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলারের সাহায্য সংস্থান করবে যাতে করে তারা পাকিস্তানী উদ্বাস্তুদের সাহায্য করতে পারে। এটি পূর্বে ঘোষিত দুই কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলারের সাথে যোগ হবে।

এই সংস্থানের, এক কোটি মার্কিন ডলার যাবে খাদ্য সরবরাহে, এবং বাকি অংশ যাবে চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অন্যান্য প্রয়োজনে, মার্কিন পররাষ্ট্র সচিবের উদ্বাস্তু বিষয়ক বিশেষ সহকারী, ফ্রান্সিস এল. কেলোগ, ঘোষণা করেন।

মিঃ কেলোগ জানান সীমান্ত পার হয়ে প্রতিদিন ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ জন শরণার্থী ভারতে আসছেই, এবং যুক্তরাষ্ট্র এদের মধ্যে থেকে ১২,৫০,০০০ জনের খাদ্যের সংস্থানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তিনি বলেন ভারত সরকারের আনুমানিক হিসাবে শরণার্থীদের বর্তমান সংখ্যা ৪৭ লাখ হবে।

তিনি আরো জানান সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ ১০,০০,০০০ টি কলেরা-নীরোধি টিকা পাঠাবে।

সামরিক বাহিনীর বিশেষ প্রতিনিধিদলের আগমন

এদিকে নয়াদিল্লীতে, বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০ পরিবহন বিমানে করে ২৭-সদস্য বিশিষ্ট মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ প্রতিনিধিদল এসে পৌঁছেছেন। তাঁরা ত্রিপুরা রাজ্যের বিমান ঘাঁটিগুলো পরিদর্শন করবেন, যেগুলো কিনা পূর্ব পাকিস্তানের পূর্বে অবস্থিত, সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্যে যে আকাশপথে শরণার্থীদেরকে (যাদের সংখ্যা বর্তমানে ৫,০০,০০০ যেখানে ত্রিপুরা রাজ্যের জনসংখ্যাই হচ্ছে পনের লক্ষ) ভারতেরই অপেক্ষাকৃত লঘুবসতিপূর্ণ এলাকায় সরিয়ে নেয়া যায় কিনা। তাঁরা জানান, যদি তা সম্ভব মনে হয় তাহলে আরো তিনটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান সেখানে পাঠানো হবে।

এই সিনেটরদ্বয় তাদের এই সংশোধনী প্রস্তাবটি আগামী সপ্তাহে পেশ করবেন যখন সিনেট-এর বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি এই বৈদেশিক সাহায্য আইনের খসড়াটি নিয়ে আলোচনায় বসবে। উক্ত কমিটি এর আগে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে – যেটি এখনো সিনেট-এ উত্থাপিত হয়নি – যা কিনা পাকিস্তানে আরো সামরিক সাহায্য প্রেরনে বাধা দেবে। এই দক্ষিন এশীয় দেশটি মুলতঃ মার্কিন সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত, কিন্তু ১৯৬৫-এর পাক-ভারত যুদ্ধের পর থেকে সেখানে শুধুমাত্র খুচরা যন্ত্রাংশ এবং গোলাবারুদই পাঠানো হয়েছে।

সিনেটর চার্চ অনুমান করেন বর্তমানে মুলতবী হয়ে থাকা অর্থনৈতিক সাহায্যের পরিমান হবে ৮ কোটি মার্কিন ডলার। তিনি বলেন যে তিনি জানেন না কি পরিমান সামরিক সাহায্য প্রদানের সম্ভাবনা রয়েছে। গত অক্টোবর মাসে হওয়া বিমান এবং সৈন্যবাহী সাঁজোয়া যান-এর বিক্রয় প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি।

উভয় সিনেটর অভিযোগ করেন যে পাকিস্তানের সরকারকে সাহায্য প্রদান করাতে মার্কিন সরকারকে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। সিনেটর স্যাক্সবি অভিযোগ করেন যে সামরিক বাহিনী শেখ মুজিবর রহমান এবং তাঁর মধ্যপন্থী, মুলতঃ পশ্চিম-ঘেঁষা দল আওয়ামী লীগ কে “নিষ্পিষ্ট করেছে”, যারা কিনা কিছুদিন আগেই জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছে।

সিনেটর স্যাক্সবি ডাঃ জন ই. রোড-কেও উপস্থাপন করেন, যিনি একজন চিকিৎসক হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা’-এর সাথে পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন। ডাঃ রোড যুক্তি তুলে ধরেন যে ত্রাণকাজ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমেই হতে হবে কেননা গত ডিসেম্বরের ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার সময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা সুষ্ঠুভাবে ত্রাণকাজ পরিচালনায় অক্ষম।

তিনি বলেন মার্কিন সাহায্য – যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই মুলতবি হয়ে আছে – এটাই বোঝায় যে “যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে এক পক্ষকে সাহায্য করছে”। তিনি আরো বলেন “গণহত্যা যে চালানো হয়েছে তা নথিভুক্ত আছে”।