নিউ ইয়র্ক টাইমস, বুধবার। ১৪ জুলাই ১৯৭১
পাকিস্তানের নিন্দা
গত মাসে পূর্ব পাকিস্তানে বিশ্বব্যাংকের এলতি মিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলায় পশ্চিম পাকিস্তানের বিধ্বংসী সামরিক অভিযান চলছে। এতে করে ইসলামাবাদে ইয়াহিয়া খানের সরকারকে দেয়া সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়টি পুনির্বিবেচনার কথা বলা হয়েছে।
গতকাল এই কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতাংশ থেকে জানা যায় উক্ত অঞ্চল জুড়ে মৃত্যু ও ধ্বংসলীলা চলছে। একটি মিশনের সদস্য জানান কুষ্টিয়ার শহর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বোমাবর্ষনের ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরের মত দেখাচ্ছিল। এখানে পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনী বারো দিন ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। সেনাবাহিনী জনসাধারণের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে বিশেষ করে হিন্দু ও আওয়ামী লীগের সন্দেহভাজন সদস্যদের জন্য।
এর আগে প্রকাশিত রিপোর্টে পূর্ব পাকিস্তানের বর্বর কর্মকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীকে কোন প্রকার আমেরিকান সামরিক সরঞ্জামের চালান পাঠানো ঠিক হবেনা। যেগুলো রওনা দিয়েছে সেগুলো থামাতে হবে যেমন করে যুদ্ধ শুরু হবার কারণে খাদ্য চালান চট্টগ্রাম পোর্টে আসা থামানো হয়েছিল। বিদেশী আক্রমণ বন্ধ হবার আগ পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা ছাড়া আর কোন অস্ত্র সহায়তা না দেওয়াই উচিৎ। এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা পলাতক বা কারাগারে আছেন তাদের কাছে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেয়া উচিৎ।
বিশ্বব্যাংক উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত রাখার জন্য শক্তিশালী যৌক্তিক অবস্থান নিয়েছে। পক্ষান্তরে পাকিস্তানের সরকারি দাবি মিশন জানায়, ‘পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক আছে। এমনকি খারাপ দিকে যাবার কোন লক্ষণ নেই।’রিপোর্টে বলা হয় জনগণের মধ্যে ভীতি ও নিরাপত্তা হীনতা তৈরি হয়েছে এবং যোগাযোগ ব্যাবস্থা পুরো ধ্বংস হয়েছে। পরিশেষে রিপর্টে বলা হয় নতুন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রচেষ্টা অন্তত আগামী বছর বা ৬ মাসের জন্য বন্ধ রাখা উচিৎ।
প্যারিসে গত মাসে পাকিস্তানের সাহচর্যে থাকা এগারো-জাতির সম্মেলনে দশ টি সদস্য দেশে এই মতের সঙ্গে একমত। শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপ্রত্যাশিতভাবে একমত পোষণ করেনি। পাকিস্তানে আমেরিকান উন্নয়ন সহায়তার ধারাবাহিকতা আন্তর্জাতিক ঐক্যমত্যের মুখে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে তা প্রমাণিত।