৬ কার্তিক ১৩৭৮ রবিবার ২৪ অক্টোবর ১৯৭১
-শান্তিপূর্ণ পথে বাংলাদেশ সমস্যার নিস্পত্তির জন্য ভারতের প্রধামন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র সফর উদ্দেশে দিল্লী ত্যাগ করেন। পূর্বাহ্নে বাংলাদেশ নেতৃবৃন্ধের সাথে ইন্দিরা গান্ধীর আলোচনা হয়। সফরে সুফল না হলে পাকিস্তানী দখলের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা অবলম্বনে প্রয়োজনীতা বিবেচনা করে দেখা হবে।
-ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তিন সপ্তাহব্যাপী বেলজিয়াম, অষ্ট্রিয়া, বৃটেন যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্স ও পশ্চিম জার্মানী সফরে শুরুতে ব্রাসেলস পৌঁছান। সেখানে তিনি বেলজিয়ান প্রধানমন্ত্রী এম গ্যান্টন ইয়েলকেনস (Mgastan Eyspkens) সাথে আলোচনা করেন।
-বিদেশ সফরে রওনা হওয়ার আগে এক বেতার ভাষণে শ্রীমতি গান্ধী বলেন বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতামত বিনিময় করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তবে ভারতের কর্মপন্থা ভারত সরকার কর্তৃক নির্দ্ধারণ করা হবে। তাড়াহুড়া করে কিংবা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে না। (দি গার্ডিয়ান)
-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল থেকে রসায়ন বিভাগের ছাত্র হুমায়ুন আহমেদ (বর্তমান জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক) সহ দু’জন অন্য বিভাগের ছাত্র ও একজন দারোয়ানকে দুপুর বেলা হল ঘেরাও করে পাকসেনারা ধরে নিয়ে যায়। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক গিয়াসউদ্দীন সাহেবও এ দিন ধরা পড়েন। বন্দী শিবিরে অমানুষিক অত্যাচারের শিকার হন। বন্দী শিবিরে ইংরেজী বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ হোসেন বর র্বরপাক সেনাদের অত্যাচার মানসিক ভারসাম্য হাড়িয়ে ফেলেন।
-পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বিশেষ দূত হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য শুরুতে কায়রো পৌঁছেন।
-জাতিসংঘ পাকিস্তানী প্রতিনিধি দলের সদস্য শাহ আজিজুর রহমান বলেন, কল্পিত বাংলাদেশ আজ বিলীন হতে চলছে। এটা এখন আর কোন পরিক্ষার বিষয় নয়।
-পোস্তাগোলার একটি ম্যাচ ফ্যাক্টরীতে বিস্ফোরন ঘটানো হয়। (দৈঃপঃ)
-সোভিয়েত উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলাই ফিরুবিন দক্ষিণ এশিয়া দপ্ত্রে নিয়োজিত কয়েকজন পরামর্শদাতাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রধামন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের সঙ্গে বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে আলচনা করেন। উল্লেখ্য ভারত সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তির ৫ ও ৯ ধারা অনুযায়ী ভারত জরুরী পরিস্থিতি সম্পর্কে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠানের জন্য ২২ অক্টোবর মিঃ ফিরুবিন দিল্লী পৌঁছান। (দি টাইমস ২৫/১০/৭১)
-সুনামগঞ্জের সেলা সাব সেক্টরের প্রধান সংগঠক জনাব আবদুল হক এম এন এ নেতৃত্বাধীণ মুক্তি সংগ্রাম কমিটির পাশাপাশি শরণার্থী শিবিরে আসা মহিলারাও মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। গোবিন্দগঞ্জের হেমেন্দ্র দাশ পুরকায়স্তের নেতৃত্ব নিবেদিতা দাস পুরকায়েস্ত, যুথিকা দাস, সুধারনী কর, প্রমিলা দাস, রমা রানী দাস, প্রমুখ মহিলা বৃন্দ আহত যোদ্ধাদের সেবা যত্নে এগিয়ে আসেন। অঞ্জলী লাহিড়ী নামে এক সমাজ কর্মীর সহযোগিতায় তারা চিকিৎসার জন্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে সরবরাহ করতেন। উল্লেখ্য জনাব আবদুল হক এম এন এ জীপ দুর্ঘটনায় ডিসেম্বর ১৯ মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু বরণ করেন।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী