You dont have javascript enabled! Please enable it! বাকশাল প্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান - সংগ্রামের নোটবুক

বাকশাল প্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান

বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গঠিত জাতীয় দল বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক-আওয়ামী লীগ’ বা বাকশালের পরিপ্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রের মধ্যে বলা হলােঃ “রাষ্ট্রপতির নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এই সংবিধানের দ্বিতীয়ভাগে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের কোনাে একটা পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করিবার উদ্দেশ্যে জাতীয় দল (বাকশাল) গঠন করতে পারবেন। তাই বাকশাল গঠন করে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বাস্তবায়ন ও কার্যকর করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ব্যবস্থা নিলেন, যে মূলনীতিতে বলা হয়েছেঃ “রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতি সাধন যাহাতে নাগরিকদের জন্যে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়ঃ

ক. অন্ন বস্ত্র আশ্রয় শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবন ধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা;

খ, কর্মের অধিকার অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করিয়া যুক্তিসঙ্গত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার;

গ. যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনােদন ও অবকাশের এবং ঘ, সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার ….।”

“নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যােগাযােগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্যে রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।” “কর্ম হইতেছে প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয় এবং প্রত্যেকের নিকট হইতে যােগ্যতানুসারে ও প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী’—এই নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্যে পারিশ্রমিক লাভ করিবেন।”  “রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিশাবে কোনাে ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভােগ করিতে পারিবেন না এবং যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিমূলক ও কায়িক সকল প্রকার শ্রম সৃষ্টিধর্মী প্রসারের ও মানবিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণত্ব অভিব্যক্তিতে পরিণত হইবে।” জাতীয় দল বাকশাল গঠন করে বঙ্গবন্ধু বৃহত্তর জনগােষ্ঠীর মৌলিক চাহিদার। এই প্রাথমিক গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রয়াসী হলেন। তিনি মৌলিক মানবাধিকারের নেপথ্য নিয়ন্ত্রণকারী মুষ্টিমেয় টাউট রাজনীতিক, মতলববাজ আমলা, দুর্নীতিবাজ, মুনাফাখখারী, ফটকাবাজারী, চোরাকারবারী, চোরাচালানী, কালােবাজারী, মজুতদারী, সম্পদের মধ্যস্বত্বভােগী ও শােষক প্রতারকগােষ্ঠীর সীমাহীন ও ফ্রিস্টাইল অধিকারকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষুধা দারিদ্র অশিক্ষায় অজ্ঞতায় অবহেলায় নিপীড়নে নির্যাতনে অত্যাচারে শোষণে ও নিষ্পেষণে জর্জরিত সমাজের বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবি মেহনতী জনগণের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে মােলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে বাকশাল কর্মসূচী বা দ্বিতীয় বিপ্লবের বা সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি প্রদান করে প্রকৃত গণতন্ত্রকে নিশ্চিত ও সুসংহত করেছেন।

সূত্র : বঙ্গবন্ধু-দ্বিতীয় বিপ্লবের রাজনৈতিক দর্শন – আবীর আহাদ