ইসলামে জবরদস্তি নেই
আজ থেকে ২৬ বছর আগের কথা। ১৯৬৫ সালের জুন মাসের এক পড়ন্ত বিকেলে রাওয়ালপিণ্ডির আইয়ুব হলে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ লাইব্রেরীতে বসে সংসদের কার্যবিবরণী পড়ছিলাম। সঙ্গে ছিলেন সহযােগী বন্ধু পাকিস্তানের চৌকস সাংবাদিক সালামত আলী খান। তিনি তখন দৈনিক পাকিস্তানের পিণ্ডি প্রতিনিধি ছিলেন। আমি দৈনিক পাকিস্তানে (বর্তমান দৈনিক বাংলা) ছিলাম। সেই সুবাদে তার সাথে ঘনিষ্ঠতা। আমি তখন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ইন্টারপ্রেটার হিসেবে যেতাম। অফুরন্ত সময় ছিল। অধিবেশনের পর পরিষদের কার্যবিবরণীগুলাে দেখে সময় কাটাতাম। সেদিন সম্ভবত ১৯৫২ সালের কার্যবিবরণীর পাতা উল্টাতে গিয়ে একটি বক্তৃতার প্রতি আমার দৃষ্টি পড়লাে। বক্তৃতাটি ছিল পাকিস্তানের প্রথম বিরােধীদলীয় নেতা মিয়া ইফতেখারউদ্দীনের। তিনি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনকে লক্ষ্য করে বলেছেন, “মিঃ প্রধানমন্ত্রী! আপনাদের পতন আর আমাদের উত্থান অবধারিত। তবে সংসদের নেতা হিসেবে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার কর্তব্য হচ্ছে এই উত্থানপতনের মধ্যে একটা ভারসাম্য রক্ষা করা। যদি তা না করেন তাহলে আপনাদের পতন আর আমাদের উত্থানের মাঝখানে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে, তা এমন একটা শক্তি এসে পূরণ করবে, যা আপনাদের, আমাদের, এমনটিক গােটা জাতির জন্য হবে চরম অকল্যাণকর। মিয়া ইফতেখারউদ্দীনের এই প্রজ্ঞাময় বক্তব্য ১৯৫২ সালের পাকিস্তানের অনেক রাজনীতিকের পক্ষেই উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ১৯৬৫ সালে আমাদের মত সাধারণ লােকদেরও বুঝতে অসুবিধা হয় নি। কারণ তখন মিয়া ইফতেখারউদ্দীনের ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তব রূপ আমাদের সামনেই ছিল। মুসলিম লীগ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভের সুযােগ না দেয়ায় সে শূন্যস্থান দখল করে নিয়েছিলাে সামরিক শক্তি। আর আইয়ুব-ইয়াহিয়াদের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক দমননীতিই আমাদেরকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে বাধ্য করেছিলাে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পাকিস্তানীদের বােধধাদয় হয় নি। এখনাে সেখানে ভিন্ন আবরণে সামরিকতন্ত্র দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। সেদিন টিভির পর্দায় বাংলাদেশের পঞ্চম জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশন দেখতে দেখতে মিয়া ইফতেখারউদ্দীনের ঐতিহাসিক বক্তব্যটি বার বার মনে পড়ছিলাে। পার্লামেন্ট বা জাতীয় সংসদ হচ্ছে যে কোন দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী প্রতিষ্ঠান, আইনসভা। এখানে জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কথা বলবেন, জনগণের কল্যাণে আইন প্রণয়ন করবেন, জাতীয় সংসদের নিকট এটাই জাতির স্বাভাবিক প্রত্যাশা। বিশেষ করে বর্তমান জাতীয় সংসদ একটি ব্যতিক্রমধর্মী জাতীয় সংসদ। গণআন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের ফল হচ্ছে এই সংসদ। আমরা সাধারণ মানুষরা স্বভাবতই আশা করেছিলাম, গত ১৯ নভেম্বর তিন জোট ঘােষিত সার্বভৌম সংসদের নিকট অস্থায়ী সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের ঐতিহাসিক পর্বটি উদ্বোধনী অধিবেশনেই সম্পন্ন হবে।
সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার প্রধান দায়িত্ব ছিল বিএনপি’র। কিন্তু আমরা সবিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলাম, সংসদনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগই নিলেন না। তিনি জাতির নিকট প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বেমালুম উপেক্ষা করলেন। তিনি বরং মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে গণআন্দোলনে শহীদ ও অন্যান্য মৃতদের স্মরণে ইসলামী প্রথার আবরণে এক অনৈসলামিক নজির স্থাপন করলেন। শােক প্রকাশের কনভেনশন দাড়িয়ে নীরবতা পালনের পরিবর্তে তিনি মাগফেরাত কামনা করে মােনাজাতের ব্যবস্থা করলেন। মুসলিম মৃতদের জন্য মােনাজাতের মাধ্যমে মাগফেরাত কামনা পুণ্যময় পন্থা হলেও নানা কারণে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে তা ইসলামসম্মত হয় নি। বলা চলে এই মােনাজাত ইসলামের নামে একটি অনৈসলামিক কাজ হয়েছে। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবােধের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানমন্ত্রীর এই মােনাজাতের মূল্যায়ন করা যেতে পারে। সবাই জানেন, পাকিস্তান আমলে আমরা বাঙালীরা যখনই আমাদের রাজনৈতিকঅর্থনৈতিক অধিকারের দাবি উত্থাপন করতাম, তখন পাকিস্তানী শাসক ও শােষক গােষ্ঠীর তরফ থেকে জিগির তােলা হতাে, ইসলাম বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ভারত ও অন্যান্য বহিঃশত্রুর ইঙ্গিতে বাঙালিরা ইসলাম ও পাকিস্তানকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এভাবে একটি ভুয়া শ্লোগান তুলে দেশের বৃহত্তর জনগােষ্ঠীকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হতাে। কিন্তু এই জুজুর জয় দেখিয়ে বাঙালীদের বেশিদিন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা সম্ভব হয় নি। আমরা মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লােকেরা পবিত্র ইসলামের নামে এই অন্যায়-অত্যাচার ও শােষণের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াই। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ি। সে সংগ্রামে আল্লাহতায়ালা আমাদের কামিয়াব করেন। তাদের করেন লাঞ্ছিত ও পরাজিত। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, আল্লাহতায়ালা পবিত্র ইসলামের নামে পাকিস্তানীদের গণবিরােধী ভূমিকা পছন্দ করেন নি। সেদিন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আমাদের চারটি সম্প্রদায়ের সম্মিলিত সংগ্রামের পেছনে একটি যৌথ চেতনা ও মূল্যবােধ কার্যকর ছিলাে। যাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবােধ নামে অভিহিত করি।
আর তা হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশ হবে একটি জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সমাজজীবনে আমরা আমাদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিধান ও রীতিনীতি পালন করব। কিন্তু রাষ্ট্রীয় জীবন হবে সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ। রাষ্ট্রীয় জীবনে এক ধর্মের রীতি-নীতি অন্য ধর্মের অনুসারীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে বস্তুত মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোেধ বাংলাদেশের চারটি সম্প্রদায়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক সনদ। অন্য তিনটি সম্প্রদায়, তারা সংখ্যায় যত কমই হােক না কেন, তাদের দিক থেকে এই সনদ লংঘন না করা পর্যন্ত আমরা মুসলমানরা কোন অবস্থাতেই তা লংঘন করতে পারি না। এ রকম কিছু করা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও সম্পূর্ণ অবৈধ। পবিত্র কোরআনে এরূপ করতে মুসলমানদের বারণ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেছেনঃ “তবে অংশীবাদীদের মধ্যে যাদের সাথে তােমরা চুক্তিতে আবদ্ধ ও পরে যারা তােমাদের কোন ক্রটি করে নি এবং তােমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করে নি তাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পালন করবে।” (৯৪)। পবিত্র কোরআনের এই ভাষ্যটি অত্যন্ত স্পষ্ট। এর ব্যাখ্যা করার কোন প্রয়ােজন নেই। এই ভাষ্য অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অপর তিনটি সম্প্রদায়ের তরফ থেকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবােধ লংঘন না করা পর্যন্ত আমরা মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাদের উপর উক্ত মূল্যবােধবিরােধী কোন রীতি-নীতি রাষ্ট্রীয়ভাবে চাপিয়ে দিতে পারি না।
পঞ্চম জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনে শহীদদের উদ্দেশ্যে মােনাজাত মুসলমানদের কাছে যতই পুণ্যময় হােক না কেন, এ যে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবােধবিরােধিতা কারাে অস্বীকার করার উপায় নেই। এমনকি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এই মােনাজাত অনুমােদনযােগ্য নয়। কারণ স্বৈরাচারবিরােধী বিগত আন্দোলনে শুধু মুসলমানরাই শাহাদাত বরণ করেননি। তাদের মধ্যে অন্য ধর্মের অনুসারীও রয়েছেন। আর ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে শুধু মুসলমান মৃতদের জন্যই মাগফেরাত কামনার বিধান রয়েছে। তাছাড়া সংসদ সদস্যদের মধ্যে অমুসলিমরাও রয়েছেন। মােনাজাতের মাধ্যমে ভিন্ন ধর্মের একটি রীতি অমুসলিম সংসদ সদস্যদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় ব্যাপার নিয়ে এ ধরনের জবরদস্তি ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামে বিবেকের ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ জোর করে কারাে উপর চাপিয়ে দেয়া কোন সত্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের কাছে আর সত্য থাকে না। সত্যের অন্বেষণ এবং তা অনুসরণের অপরিহার্য শর্ত হলাে বিবেকের স্বাধীনতা। পবিত্র কোরআনে মহানবী (সঃ)কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে । “এবং যদি তােমার প্রতিপালক ইচ্ছে করতেন তাহলে নিশ্চয়ই পৃথিবীর সবাই। একযােগে বিশ্বাস স্থাপন করতাে। তা সত্ত্বেও কি সবাই মুমিন বা বিশ্বাসী না হওয়া পর্যন্ত। তুমি মানুষের উপ্র বলপ্রয়ােগ করবে?”(১০ ঃ ৯৯)। বিবেক এবং নিজের মনােনীত জীবন পদ্ধতি অনুসরণের স্বাধীনতার প্রতি গুরুত্বারােপ করে পবিত্র কোরআনে আরাে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে ? “ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে কোন প্রকার বলপ্রয়ােগ নেই।” (২ঃ ২৫৬) এভাবে পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে মানুষের বিবেক ও জীবন পদ্ধতির স্বাধীনতার কথা অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে।
মহানবী (সঃ) ও খােলাফায়ে রাশেদীনের জীবনাদর্শেও ইসলামের এই উদারতার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। একবার বর্তমান সিরিয়ার নাজরান থেকে একটি খ্রিষ্টান প্রতিনিধিদল ধর্মীয় ব্যাপারে মতবিনিময় করার জন্য মদীনায় আসেন। সন্ধ্যার সময় প্রার্থনা করার জন্য তারা মহানবীর (সঃ) কাছে একটু জায়গা চান। সে সময় মুলসমানদেরও মাগরিবের নামায পড়ার সময়। অগত্যা মহানবী (সঃ) মসজিদের নববীর একটা অংশ খ্রিষ্টানদের প্রার্থনা করার জন্য ছেড়ে দিলেন। অপর অংশে তিনি সাহাবীদের নিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করলেন। দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের (রাঃ) একজন অমুসলিম ক্রীতদাস ছিল। খলিফার ক্রীতদাস অমুসলিম থাকাটা কিছু সংখ্যক মুসলমান পছন্দ করছিলেন না। তারা খলিফার আগােচরে তাকে ইসলাম প্রহণের জন্য পীড়াপীড়ি করেন। কিন্তু ক্রীতদাসটি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। এ ব্যাপারে খলিফার নিকট অভিযােগ করা হয়। খলিফা হয়রত ওমর (রাঃ) অভিযােগকারীদের বললেন, ক্রীতদাসটির এরূপ বলার ন্যায়ত অধিকার রয়েছে। পরধর্মের প্রতি, পরমতের প্রতি সহিষ্ণুতা ও মর্যাদা প্রদানের এর চেয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আর কি হতে পারে! অথচ বর্তমানে আমাদের দেশে রাজনৈতিক স্বার্থে মহান ও উদার ধর্ম পবিত্র ইসলামকে সংকীর্ণ চিত্রায়িত করা হচ্ছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলাে, প্রধানমন্ত্রী যখন মােনাজাত করার প্রস্তাব করেন তখন সংসদে সরকারী ও বিরােধীদলের মিলিয়ে প্রায় দু’ডজন আলেম ছিলেন, তারা কেউ টু-শব্দটিও করলেন না। আলেম হিসেবে তাদের তাে ইসলামের এসব রীতিনীতি জানা থাকার কথা।
বাংলাদেশ জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষরদানকারী রাষ্ট্র। জাতিসংঘ সনদের ৫৫ ধারার (গ) অনুচ্ছেদে গােষ্ঠী, ভাষা, ধর্ম এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য মানবিক ও মৌলিক অধিকারগুলাে সংরক্ষণ ও মর্যাদা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেদিন সংসদে মমানাজাতের মাধ্যমে এই অধিকার উপেক্ষা করা হয়েছে। আরাে লক্ষণীয় ব্যাপার হলাে, সেদিন সংসদে কয়েকজন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সদস্যও ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন অভিক্ত পার্লামেন্টারিয়ান ও বিশিষ্ট আইনবিদ সুধাংশু শেখর হালদার এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। কিন্তু তারাও নীরব ছিলেন। তারা ইচ্ছে করলে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৬৩ বিধির উল্লেখ করে তাদের বিশেষ অধিকার ক্ষুণ হওয়ার প্রশ্ন তুলতে পারতেন। তারা মাননীয় স্পীকারের নিকট তাদের ধর্মীয় অধিকারের নিশ্চয়তা চাইতে পারতেন। তারা বলতে পারতেন। মাননীয় স্পীকার, আমরা এখন কি করব? সময় পেলে আরাে বলতে পারতেন, গণআন্দোলনে শহীদদের মাগফেরাত কামনা করে যে মােনাজাত করা হচ্ছে তাতে অমুসলিম শহীদদের মাগফেরাত করা হবে কিনা ; আপনাদের ধর্ম তাদের মাগফেরাত কামনা সমর্থন করে। কিনা। যদি না করে তাদের আত্মার প্রতি কিভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে। কিন্তু সুধাংশু শেখর হালদার ও সেনবাবুর নীরব থাকার অন্তর্নিহিত রহস্য বােঝা যায়নি। সারকথা, সংসদ নেত্রী যদি সেদিন চিরাচরিত কনভেনশন দাড়িয়ে নীরবতা পালন উপেক্ষা না করতেন আমাদের মত সাধারণ মানুষদের মধ্যে এতাে সব প্রশ্ন দেখা দিতে । একাধিক ধর্মের অনুসারী লােকদের অনুষ্ঠানে মৃতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের তাৎপর্য কোন অবস্থায়ই অস্বীকার করা যায় না। কারণ তাতে প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্মের পথ-নির্দেশের আলােকে মৃতদের জন্য মাগফেরাত কিংবা সৎগতি কামনা করতে পারে। তাতে কোন প্রকার বিভ্রান্ত দেখা দেয় না। কারাে ধর্মীয় অধিকারও ক্ষুণ হয় না। কিন্তু মনে হচ্ছে সংসদ নেত্রী নির্বাচনী জনসভায় ‘বিসমিল্লাহ কায়েমের শ্লোগানের কৌশলটা সংসদেরও ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। কিন্তু এই কৌশল আর যাই হােক, জাতির জন্য ক্ষতি ছাড়া কল্যাণ বয়ে আনবে না। বিগত ১৭ বছরে এই কৌশল। ব্যবহারের পরিণতিতে স্বাধীনতাবিরােধী ব্যক্তি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। স্বাধীনতাবিরােধীরা সংসদের সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন। তারা সংসদে মােনাজাত পরিচালনা করছেন। এই কৌশলের মাধ্যমে জাতি এছাড়া আর কিছুই পায়নি।
১৯৮৮
সূত্র : বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ – মওলানা আবদুল আউয়াল