You dont have javascript enabled! Please enable it! মসজিদে রাজনৈতিক তৎপরতা- বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ - সংগ্রামের নোটবুক

মসজিদে রাজনৈতিক তৎপরতা

শ্ৰেণীচরিত্রের বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, দেশ-কাল নির্বিশেষে একই শ্রেণীর লােকগুলাের মধ্যে একটা পরিষ্কার অভিন্নতা রয়েছে। একই শ্রেণীর লােক তিনি বা তারা ইউরােপের হােন কিংবা এশিয়ার হােন, বাংলাদেশের হােন কিংবা পাকিস্তান, ভারত অথবা মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশের হােন তাদের কাজকর্ম, চলন-বলন, আচার-আচরণ, এক কথায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই অভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। ভারতে ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারী বিজেপি রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার শ্লোগান দিচ্ছে। সারা দেশব্যাপী রথযাত্রার মহড়া করছে। মন্দিরগুলােকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরান, আলজিরিয়া প্রভৃতি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পবিত্র ইসলামকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারকারী এক শ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী “ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শ্লোগান দিচ্ছে। কথায় কথায় মুসলিম উম্মা’, ‘তওহিদী জনতা’ প্রভূতি ধ্বনি তুলছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে মসজিদ গুলাে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। এই শ্রেণীর লােকেরা যে কোন ধর্মের অনুসারী হােন না কেন, তাদের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন আর তা হচ্ছে ধর্মপরায়ণ বৃহত্তম জনগােষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা উইরােপেও এককালে খ্রিষ্টধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ব্যবসা জমজমাট ছিল। এটাকেই বর্তমানে ইউরােপে মৌলবাদ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে শিক্ষার প্রসারের ফলে বর্তমানে ইউরােপ পােপবাদী অভিশাপ থেকে অনেকটা নিস্কৃতি পেয়েছে। সেখানে ধর্মের শ্লোগান তুলে এখন আর বাজিমাৎ করা যায় না। অবশ্য এখনাে খ্রিষ্টিয়ান ডেমােক্র্যাটিক পার্টি থাকলেও তাদেরকে ধর্মীয় শ্লোগান ছেড়ে আর্থসামাজিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের নিকট যেতে হচ্ছে কিন্তু এশিয়ায় ধর্মের নামে রাজনীতির ব্যবস্থা এখন তুঙ্গে বলা চলে।

বিশেষ করে বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক, এখানে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের স্বার্থকে ইসলামের স্বার্থ হিসেবে, দেশের স্বার্থ হিসেবে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এই মুখচেনা মহলটির সমালােচনা পবিত্র ইসলামের সমালােচনা বলে আস্ফালন করা হচ্ছে। একাত্তরের ঘাতক-দালাল গােলাম আযমদের বিচারের দাবিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে অভিযােগ করা হচ্ছে, বিচারপ্রার্থীদের ভারতের দালাল হিসেবে সংবাদপত্রে নাম-তালিকা ছাপান হচ্ছে। মুক্তিযােদ্ধাদের বলা হচ্ছে দেশের শত্রু। আর যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরােধিতা করেছে এবং এখনাে যারা বাংলাদেশকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি, তারাই এখন খাটি দেশপ্রেমিক ও বাংলাদেশের রক্ষক সেজে বসেছে। এ কথাগুলােই একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলােতে অন্যভাবে বলা হতাে। মুক্তিযােদ্ধারা দুষ্কৃতকারী হিন্দুবাহিনী, ভারতের চর। তারা পাকিস্তান ও ইসলামের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। পাকিস্তান রক্ষা করা না হলে এই এলাকায় ইসলাম থাকবে না। ইসলাম রক্ষার স্বার্থেই পাকিস্তান রক্ষার জন্য জীবনপণ করতে হবে।’ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ২১ বছর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরােধীদের কাছ থেকেই এ কথাগুলাে আমাদের ভিন্ন সুরে সবক নিতে হচ্ছে। এর চাইতে মর্মান্তিক আর কি হতে পারে! একাত্তর সালে কোন মুক্তিযােদ্ধা কি ভুলেও কল্পনা করেছিল, ঘাতকদের বিচার দাবির জন্য তাদেরকে স্বাধীন বাংলাদেশে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযােগ মাথায় নিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে?

বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ইসলামের শ্লোগানধারী ধর্মব্যবসায়ীরা মসজিদ গুলোকে  তাদের রাজনৈতিক প্রচার-প্রপাগাণ্ডার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে। মসজিদগুলােতে তারা খােবা বা ভাষণদান এবং তফসীর ও ওয়াজ নসিহতের ছদ্মাবরণে নিজেদের রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা প্রচার করছে। মসজিদে, দল-মত নির্বিশেষে সকল স্তরের মাজ পড়ার জন্য গিয়ে থাকে। এই সুযােগে ধর্মব্যবসায়ীরা পবিত্র ইসলামের নামে নিজেদের রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা সবার কাছে উপস্থাপনের সুযােগ পায় এই সুযােগ অন্য কোন রাজনৈতিক দলের ভাগ্যে জোটে না। এই জন্য আলজিরিয়া সরকার মসজিদে সকল প্রকার রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ ঘােষণা করেছেন। কারণ, ইসলামী স্যালভেশন ফ্রন্ট আলজিরিয়ার মসজিদগুলােকে তাদের রাজনৈতিক তৎপরতার। একেকটা আখড়ায় পরিণত করেছিল বাংলাদেশেও পবিত্র ইসলামের শ্লোগানধারী কয়েকটি রাজনৈতিক দল। মসজিদগুলােকে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত করেছ  বিভিন্ন মসজিদে প্রায়ই দেখা যায়, ইমাম সাহেব কিংবা তার মনােনীত লােক ওয়াজ-নসিহত ও তফসীরের নাম করে দাড়িয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেন এক ভাড়াটিয়া তথাকথিত তফসীরকারককে পবিত্র কোরআনের আয়াত ব্যাখ্যার ছদ্মাবরণে বিভিন্ন ছাত্রীবাস সম্পর্কে অশােভন মন্তব্য করতে শােনা গেছে পবিত্র কোরআনের তফসীর দূরের কথা, সাধারণ বক্তৃতায়ও কোন শিক্ষিত লােক এ ধরনের মন্তব্য করতে পারে না। আবার কোন কোন দলীয় ইমাম সাহেব খােত্বার বাংলা ভাষণের নাম করেও রাজনৈতিক মন্তব্য করেন। এমনও শােনা যায়, পবিত্র ইসলামের মুখােশধারী কোন কোন রাজনৈতিক দল মসজিদে তাদের কর্মীদের অস্ত্র পরিচালনা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সীর এসব ব্যাপারে অজানা থাকার কথা নয়।

কিন্তু সামরিক বলুন, স্বৈরাচারী বলুন। আর গণতান্ত্রিক বলুন, কোন সরকারই এসব রাষ্ট্রবিরােধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। সরকার হয়তাে মনে করতে পারেন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তারা  ইসলামের মুখােশধারীদের ব্যবহার করছেনষ্ঠাই কৌশলগত কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা ঠিক হবে না। কিন্তু সরকার তাদের ব্যবহার করছেন, না সরকারকে তারা ব্যবহার করছে বলা মুশকিল। স্বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবােধ-৪ এরূপ পরিস্থিতিতে কয়েকটি দল সম্প্রতি মসজিদে রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ করার জন্য দাবি জানিয়েছে। তাদের এই দাবি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও যথার্থ। কারণ ‘মসজিদ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘সেজদার স্থান’। সাধারণত যে ঘর নামাজের জন্য তৈরি করা হয়, একে মসজিদ বলা হয়। একটি হাদীসে মহানবী (সঃ) বলেছেন, “আল্লাহর জিকির বা ইবাদতের জন্য মসজিদ নির্মিত হয়েছে।” এবং “নিশ্চয় মসজিদ আল্লাহর ইবাদতের জন্য। সুতরাং সেখানে আল্লাহর সাথে অন্য কারাে ইবাদত করাে  মহানবীর (সঃ) উক্ত হাদীসের আলােকে এ কথা বলতে হয়, মসজিদ হচ্ছে। একমাত্র আল্লাহতায়ালার ইবাদতের স্থান। কারাে রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা প্রচার করার স্থান মসজিদ নয়। মসজিদে এ ধরনের কার্যকলাপ ইসলাম অনুমােদন করে না। এমনকি কোন মুসল্লীর নামাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ার মত শব্দ করে মসজিদের ভিতরে কোরআন তেলাওয়াতও শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়।

কেউ হয়তাে বলতে পারেন- ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহানবীর (সঃ) আমলে অনেক রাষ্ট্রীয় কাজ মসজিদে সমাধান করা হতাে। কয়েকটি অমুসলিম প্রতিনিধি দলকে মহানবী (সঃ) মসজিদে নববীতে সাক্ষাদান করেন। এমনকি গনিমতের সম্পদও মসজিদে বন্টন করা হয়েছে। এ ধরনের আরাে অনেক কাজ মসজিদে নববীতে করা হয়েছে। তাহলে বর্তমানে মসজিদে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানাে যাবে না কেন? ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইবাদত ছাড়াও কিছু রাষ্ট্রীয় সমস্যা মসজিদে নববীতে সমাধানের তথ্য কেউ অস্বীকার করছে না। কিন্তু কিরূপ পরিস্থিতিতে এসব কাজ মসজিদে নববীতে করা হয়েছে এবং আজো মুসলিম সমাজে সে অবস্থা বিরাজ করছে কিনা তাও দেখতে হবে। মহানবী (সঃ) মদীনায় হিজরতের পর অন্যান্য সমস্যা ছাড়াও মুহাজিরদের পুনর্বাসনের ব্যাপারটি ছিলাে এক বিরাট সমস্যা। বাসস্থানের অভাবে বেশ কয়েকজন সর্বহারা সাহাবা মসজিদে নববীতেই পড়ে থাকতেন। তাদের “আসহাবে সােফা’ বলা হতাে। এরূপ অবস্থায় সে সময় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাজকর্ম করার জন্য আলাদা ভবন বা সচিবালয় নির্মাণ করা ছিল কল্পনাতীত ব্যাপার। তাই এরূপ নাজুক পরিস্থিতিতে মহানবী (সঃ)-কে বাধ্য হয়ে কিছু রাষ্ট্রীয় কাজ মসজিদে নববীতে করতে হয়েছে।’ এরপর ধীরে ধীরে মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়। তখন এসব কাজ আর মসজিদে নববীতে করা হতাে না। হযরত ওমরের (রাঃ) খেলাফতের সময় থেকে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাজ মসজিদ থেকে অন্যত্র স্থানান্তর শুরু হয়।

হযরত ওমর (রাঃ) তার খেলাফত আমলে মসজিদে নববীতে উচ্চঃস্বরে কথা বলার প্রতিও নিষেধাজ্ঞা আরােপ করেছিলেন। একবার দু’ব্যক্তি মসজিদে নববীতে উচ্চ কণ্ঠে কথা বলছিল। খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) তাদের ডেকে পাঠান। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, “তােমরা কারা, কোথাকার বাসিন্দা?” তারা বললাে, “আমরা তায়েফের অধিবাসী। হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, “তােমরা মসজিদে নববীতে উচ্চকণ্ঠে কথা। বলছাে কেন। যদি তােমরা এই শহরের অধিবাসী হতে, আমি তােমাদের কঠিন শাস্তি প্রদান করতাম।”  মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাজকর্ম মসজিদে নববীর বাইরে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। মসজিদে আল্লাহতায়ালার ইবাদত-বন্দেগী ছাড়া সব কাজকর্ম নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি মসজিদে উচ্চকণ্ঠে কথা বলাও কঠিন শাস্তিযােগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। বর্তমানে যারা পবিত্র মসজিদকে রাজনৈতিক তৎপরতার আখড়ায় পরিণত করছে, তারা হয় এসব তথ্য জানে না কিংবা জেনেও না জানার ভান করছে। তাছাড়া আর একটা বিষয় বিবেচনার দাবি রাখে। সেকালে বর্তমানের মত বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে যদি কোন একটি দলকে মসজিদে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাবার সুযােগ দেয়া হয়, তাহলে অন্যরাও এই সুযােগ নেয়ার জন্য এগিয়ে আসবে। এভাবে দেশের প্রতিটি মসজিদ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর পরিবর্তে রাজনৈতিক সভা-সমিতির মিলনায়তনে পরিণত হবে। সংঘর্ষ, হানাহানি, বােমাবাজি ইত্যাদি বিষয়গুলাে নাই বা বললাম।

বাংলাদেশের মত বহুদলীয় সমাজব্যবস্থায় মসজিদের ইমাম নির্বাচন ও তার ভূমিকা সম্পর্কেও একটা নীতিমালা থাকা উচিত। ইসলামে ইমামের যেসব যােগ্যতার উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব ছাড়াও তার আর একটা যােগ্যতা থাকা বাঞ্ছনীয়। তাঁকে অবশ্যই রাজনৈতিক দিক থেকে নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব হতে হবে। কারণ মসজিদে সকল দলের লােকেরাই নামায পড়তে যান। এরূপ অবস্থায় ইমাম সাহেব যদি দলীয় ব্যক্তিত্ব হন, অন্য দলের লােকদের তার প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আস্থা না থাকাই স্বাভাবিক। এরূপ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ভিন্নদলীয় লােকদের নামায হবে কিনা বলা মুশকিল দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায়, বায়তুল মােকাররমের খতিব মওলানা ওবায়দুল হক সম্প্রতি জামাতে ইসলাম আয়ােজিত একটি জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন। তার বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে সমালােচনা-পাল্টা সমালােচনা হয়েছে। তাঁর সম্পর্কে সমালােচনার জবাবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, তিনি গােলাম আযমের মুক্তি দাবি করেননি। তাঁর বক্তব্য সম্পর্কে কোন প্রকার আলােচনা-সমালােচনায় আমরা যেতে চাই  তবে এই সমাবেশ যে জামাতের উদ্যোগে আয়ােজিত হয়েছে, তা একটা ওপেনসিক্রেট ব্যাপার কিন্তু বায়তুল মােকাররমের মুসল্লীরা কি সবাই জামাতী? মওলানা সাহেব নিজেও স্বীকার করবেন, সবাই জামাতী নন। তাহলে জামাতবিরােধী মুসল্লীদের মনে মওলানা সাহেব সম্পর্কে যেসব প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে তিনি সেগুলাে দূর করবেন কি করে? জাতীয় মসজিদের খতিব হওয়া সত্ত্বেও দলবিশেষের রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রাখা কি ইস্টলামের দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েজ হয়েছে তাছাড়া তিনি নিজেও এক সময় মওদুদী তথা জামাতী ধ্যান-ধারণার বিরােধী ছিলেন। মওদুদীর বাতিল ধ্যান ধারণা সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করা পবিত্র দায়িত্ব বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তার এই বক্তব্য একাধিক বই-পুস্তকেও রয়েছে। কিন্তু জামাতীরা কি করে তাকে ম্যানেজ করে ফেললাে, সত্যি ভাববার বিষয়। কেউ কেউ বলতে পারেন, তাহলে ইমাম সাহেবরা কি মসজিদে ভাষণ দেবেন না?  অবশ্যই দেবেন। তবে তাদের সে ভাষণ হবে অরাজনৈতিক। দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য শিক্ষামূলক। জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা, যেমন সন্ত্রাস, জনবিস্ফোরণ প্রভৃতি বিষয়ে তাদের ভাষণ হবে পথনির্দেশক তাতে মুসল্লীদের নিকট ইমাম সাহেবদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পাবে। এ জন্যই আমরা মনে করি, দেশের মসজিদগুলােকে রাজনৈতিক তৎপরতামুক্ত করার দাবি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত সঙ্গত দাবি। সবার এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত।

সূত্র : বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ – মওলানা আবদুল আউয়াল