You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.08.15 | কর্নেল ফারুক ও রশীদের সাক্ষাৎকার - বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড - সংগ্রামের নোটবুক

কর্নেল ফারুক ও রশীদের সাক্ষাৎকার-১

প্রশ্ন ১৫ই আগস্টের বিপ্লব জাতিকে একটি সম্ভাবনাময় নতুন প্রভাত উপহার দিয়েছে এবং একদলীয় স্বৈরাচারের জগদ্দল পাথর থেকে জাতিকে মুক্তির নবদিগন্তের সন্ধান দিয়েছে। বিপ্লবী পদক্ষেপের অব্যবহিত পরে সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে নজীরবিহীন সমর্থন অভিব্যক্ত হয়েছে তাতে এটা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে যে, জনগণ দীর্ঘ দিন থেকে এমন একটি মুহূর্তের জন্য প্রতীক্ষা করছিল। বিপ্লবের চুড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্ব মুহুর্তে আপনারা কিভাবে জনগণের এই অনুকূল মনােভাব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন?

জবাব । (ক) এ ব্যাপারে আমরা গভীর আস্থাবান ছিলাম যে, জনগণ এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের তরফ থেকে আমরা পূর্ণ সমর্থন ও সহযােগিতা পাব। সত্যি কথা বলতে কি, সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ও নিরংকুশ সমর্থন ও সহযােগিতা না পেলে বরং আমরা বিস্মিত হতাম।

(খ) ইউনিট কমান্ডার হিসেবে সেনা সদস্যদের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং আমরা সাধারণ সৈনিকদের মনােভাব জানতাম। আর সে কারণেই আমরা আন্তরিকভাবে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কখনও কুষ্ঠিত হইনি। আমরা কোনােরূপ দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছি।

(গ) বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈনিকরা দেশ মাতৃকারই সস্তান এবং বাংলাদেশের জনগণের মত আমরাও ছিলাম ভুক্তভােগী। অন্যদিকে মুক্তিসগ্রামের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীও জনগণের খুব নৈকট্য লাভ করে।  প্রশ্নঃ আগস্ট বিপ্লবের তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যসমূহকে চিহ্নিত করবেন

জবাবঃ তাৎক্ষণিক লক্ষ্যঃ আগ্রাসী বহিঃশক্তির মদদপুষ্ট গণবিরােধী আওয়ামী বাকশালী স্বৈরাচারের সুকঠিন শৃংখল থেকে মুক্তির স্বপ্ন ছিনিয়ে আনা এবং জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা। সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য বিপ্লবের তাৎক্ষণিক লক্ষ্য পূরণের অনিবার্য ফলশ্রুতি হিসেবে জাতীয় আর্থ-সামাজিক শক্তির স্বাভাবিক ও স্বচ্ছন্দ বিকাশের মাধ্যমে স্বতঃসিদ্ধ পদ্ধতিতে সঠিক ধারায় বিপ্লবী পরিবর্তন সূচিত করা। বিপ্লবের এই পর্বটি সম্পন্ন হবার পরে আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল ? বাংলাদেশকে তার স্বাভাবিক গতিধারায় পরিচালিত করে একটি আঞ্চলিক আর্থ-সামাজিক শক্তির মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা এবং একই সাথে বিশ্ব ইসলামী ঐক্যকে সংহত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

প্রশ্ন : কেউ কেউ আগস্ট বিপ্লবকে কতিপয় অসন্তুস্ট সামরিক অফিসারের হঠকারী পদক্ষেপ বলে চিহ্নিত করতে চান। এ প্রশ্নের জবাবে আপনারা কি বক্তব্য রাখবেন?

উত্তরঃ এটা সত্যের অপলাপ মাত্র। ১৯৭২ সালের শেষের দিকেই সামরিক বাহিনীর অধিকাংশ অফিসারের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, আমাদের মুক্তি সংগ্রামের কষ্টার্জিত সাফল্যকে আত্মসাৎ করা হয়েছে এবং একটি আগ্রাসী শক্তির কাছে মীরজাফররা দেশের আজাদী বন্ধক দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সকলেই অনুভব করছিলেন যে, দেশে মারাত্মক একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে।

শেখ মুজিবসহ বহু সংখ্যক রাজনৈতিক নেতার সাথে দেশের ভয়াবহ অত্যাসন্ন বিপর্যয় নিয়ে সামরিক বাহিনীর বেশ কিছু উচ্চপদস্থ অফিসার ব্যক্তিগতভাবে জাতীয় সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন। তারা শেখ মুজিবের মনােভাব বদলাতে চেয়েছেন, কিন্তু শেখ মুজিবের ঔদ্ধত্যের কাছে সকল আন্তরিক প্রয়াস ব্যর্থ হয়ে যায়। উপরন্তু ঐ সব দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিক অফিসারকে তাদের সরলতা ও দেশপ্রেমের জন্য বিভিন্ন কায়দায় তিরস্কৃত ও অপদস্থ হতে হয়েছে।  ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে অধিকাংশ বিজ্ঞ সামরিক অফিসারের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, দেশের এই সংকটকলে কিছু একটা করা উচিৎ। কিন্তু কেউই এটা নির্ণয় করতে পারছিলেন না যে, কিভাবে সে দায়িত্বটা পালন করতে হবে। | প্রকৃতপক্ষে আগস্ট বিপ্লবের সংগঠকরা ১৯৭৩ সালের শেষদিক থেকেই পরিস্থিতির উপর তীব্র নজর রেখে আসছিলেন। তারা গােটা পরিস্থিতি নিরীক্ষা ও মূল্যায়নের মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম নির্ধারণ করার ব্যাপারে সক্রিয় ছিলেন।

১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে একটি যৌক্তিক কার্যক্রমের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করে বিস্তারিত কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয় এবং একটি খসড়া সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। গােপনীয়তা রক্ষা করার স্বার্থেই বিস্তারিত কার্যক্রমের পরিকল্পনা প্রণয়নে জন্য প্রায় ৬ মাস কেটে যায়। কেননা এটি বেশ কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহের কার্যকরণের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চূড়ান্ত আঘাত হানার দুটি নির্ধারিত সময়সূচি ছিল। সত্যি কথা বলতে কি, দুটি বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিপ্লবের মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ১৫ই আগস্ট ছিল চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের সর্বশেষ সময়সূচি । ১৫ই আগস্টের মধ্যে আমাদের কাছে এটা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, ১৫ই আগস্ট হচ্ছে চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মােক্ষম সময়। চুড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ১২ই আগস্ট ও ১৪ই আগস্টের মধ্যবর্তী সময়কে বেছে নেয়া হয়। পরিকল্পনা কার্যকরী করার আদেশ প্রদান করা হয় ১৫ই আগস্ট এবং ঐ দিনই সূর্যাস্তের অব্যবহিত পর থেকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়। উপরিউক্ত বিস্তৃত ব্যাখ্যা থেকে এটা খুব সহজেই বােঝা যায় যে, ১৫ই আগস্টের পদক্ষেপ আকস্মিক বা হঠকারী সিদ্ধান্তের ফল নয়। দ্বিতীয়তঃ এটা স্বীকার করতে দোষ নেই যে, আমরা অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ ছিলাম সত্য, কিন্তু সেনাবাহিনীর অধিকাংশ সদস্য ও দেশের সাধারণ মানুষ কেন বিক্ষুব্ধ ছিল? আপনি কি চান যে আমরা এবং দেশের বাকী জনগণ আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা ও অধিকার হারিয়েও অসন্তুষ্ট ও বিক্ষুব্ধ না হয়ে বিদেশী শক্তির মদদপুষ্ট আওয়ামী বাকশালীদের পুত্রদের মীরজাফরী ভূমিকায় সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকতাম। | প্রশ্নঃ ১৫ই আগস্টকে কেন্দ্র করে দেশে বেশ কিছু গুজব চালু আছে। আপনারা এই পটভূমিতে জাতিকে সঠিক তথ্য জানানাের কোন দায়িত্ব অনুভব করেন কিনা? বিপ্লবের প্রকৃত ঘটনা প্রবাহ জাতিকে অবহিত করার কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন কি?

জবাব ঃ এ খবর আমরা রাখি। ১৫ই আগষ্টের বিপ্লবী পদক্ষেপ নিয়ে দেশে যথেষ্ট গুজব চালু আছে। এ সব আমরা জানি। তবে আমরা আশাবাদী যে, সময়ে এ সৰ গুজবের ফানুস নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। হ্যা, আমরা জনগণকে প্রকৃত সত্য। জানাবার জন্য সব সময়ই প্রস্তুত। জনগণ চাইলেই আমরা ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়ের পর্দা উন্মোচিত করবাে।

আমরা নিজেরা কিছু বিশ্লেষণধর্মী পেপারওয়ার্ক তৈরি করছি, যাতে বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির প্রকৃত দিক-নির্দেশিকা থাকবে। অবশ্য জনগণ যদি সেটা গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকেন, তবেই এই ধরনের প্রত্যাশা পােষণের সার্থকতা থাকতে পারে।

প্রশ্ন। কেউ কেউ মনে করেন যে, আগস্টের সকালে বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে শাস্তি দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু এর কোনটাই করা হয়নি। আপনারা এই হত্যাকাণ্ডের স্বপক্ষে আপনাদের যুক্তি-তথ্য পেশ করবেন কি?

জবাবঃ শেখ মুজিব, শেখ মনি এবং আবদুর রব সেরনিয়াবাত এই তিন জনের প্রত্যেকেই নিজ নিজ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বিপ্লবীদের কাছে আত্মসমর্পণ করার অনুরােধ জানানাে হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার মদমত্ততা এবং তাদের স্বভাবসুলন্ত অহমিকা তাদেরকে এতটা অন্ধ করেছিল যে, আত্মসমর্পণের পরিবর্তে এরা গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে বেশ কয়জন বিপ্লবী সৈনিক ও অফিসার আহত হন এবং কয়জন মৃত্যুবরণ করেন। ফলে বিপ্লবীরা নিজেদের আত্মরক্ষার প্রয়ােজনে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন ও স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলিবর্ষণ করে মীরজাফরদের দুর্গগুলাে। বিধ্বস্ত করে দিতে বাধ্য হন। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং এই অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেকেই ঘরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। | তবে এটাও সত্য যে, শেখ মুজিব, শেখ মনি ও আবদুর রব সেরনিয়াবাতের। ব্যাপারে বিপ্লবীদের এই সিদ্ধান্ত ছিল যে, দেশ ও জাতির স্বার্থে চরম। বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে বিচারের মাধ্যমে ফায়ারিং স্কোয়াডে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।  শেখ মুজিব এবং তার সহযােগীরা যে পদ্ধতি চালু করেছিলেন, সেই পদ্ধতিতে জাতীয় বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে তাদেরকে গণ আদালতে বিচার করার কোন পথ। খােলা ছিল না। তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে আমাদের বিপ্লবী কার্যক্রম সফল করার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক আগ্রাসনের কবল। থেকে মুক্ত করা সম্ভব হত না।

প্রশ্নঃ ১৯৭৫ সালের ৩রা ও ৪ঠা নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে। ভ্যক্ষভাবে কে বেশি লাভবান হয়েছে বলে আপনারা মনে করেন।

জবাব ঃ জেনারেল জিয়াউর রহমান, অধিকাংশ উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার। এবং উর্ধ্বতন সরকারি আমলারাই এর দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে লাভবান হয়েছে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের মত নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের একটি দেশ রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামের ভূমিকাকে কিভাব মূল্যায়ন করতে চান?

জবাব ঃ প্রচলিত অর্থে ইসলাম একটি ধর্ম মাত্র নয়। পরিপূর্ণভাবেই ইসলাম একটি আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক জীবন দর্শন এবং সমগ্র মানবতার জন্য। ইসলামের আবেদন সমভাবে সত্য। যারা স্বেচ্ছায় ঘােষণা করে যে, “আল্লাহ ছাড়া। সার্বভৌম মা’বুদ নেই, মুহম্মদ রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ তাদের জন্য। ইসলাম হচ্ছে জীবন পথের অনস্বীকার্য একটা দিক-নির্দেশিকা। এই মৌল বিশ্বাসকে যারা মুখে স্বীকার করবেন এবং জীবনে কার্যকরভাবে প্রয়ােগ করবেন। তারাই মুসলমান।

সুতরাং আমরা মনে করি, শতকরা নব্বই ভাগ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের দেশে কোন ধরনের ইজম’রাষ্ট্র পরিচালনার দিক-নির্দেশিকা হবে, সে প্রশ্নে কোন সওয়াল। জবাবের অবকাশ থাকতে পারে না। সংখ্যালঘুদের অধিকার অবশ্যই সংরক্ষিত ও সুনিশ্চিত করা হবে, তবে সেটা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগােষ্ঠীর ন্যায়সংগত অধিকারের বিনিময়ে নয়।

এ ব্যাপারে যদি আমরা এক মত হই যে, নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান, তাহলে কোন ব্যক্তি, দল ও সংগঠনের পক্ষে ইসলামের পরিপন্থী কোন ইজম প্রতিষ্ঠার দাবী জনগণের ইচ্ছার চূড়ান্ত অস্বীকৃতি বলে চিহ্নিত হতে বাধ্য। কিন্তু যদি কোন প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তি, দল বা সংগঠন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু

জনগােষ্ঠীর আবেগ ও ইচ্ছাকে বাস্তব রূপ দিতে সচেষ্ট হয় তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের স্বাধীনতা রয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায়, সংখ্যালঘুদের প্রতি সংখ্যাগুরু জনগােষ্ঠীকে হতে হবে সহনশীল ও মানবিক আচরণে উদার। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় সংখ্যাগুরু জনগােষ্ঠীকে অবশ্যই সক্রিয় ও সচেতন হওয়া দরকার। বিশেষতঃ ইসলাম সংখ্যালঘুদের সর্বাত্মক স্বার্থে নিরাপত্তা দানের যে নিশ্চয়তা দিয়েছে, বর্তমান সভ্যতা তার চেয়ে কোন ভালাে ব্যবস্থা দিতে পারেনি।

বাংলাদেশের জাতীয় নীতি প্রণয়নে কোন ধরনের ইসলামী পদ্ধতি উপযােগী ও প্রয়ােগযােগ্য, সেটা নিয়েই কেবল আলােচনা হতে পারে। যদি এই অযৌক্তিক সমীকরণ গ্রহণযােগ্য বলে প্রতিপন্ন হয়, তাহলে আমরা খুব স্পষ্টভাবেই বলতে চাই যে, জাতীয় দিক-নির্দেশ চিহ্নিত করার প্রশ্নে কোন দ্বিধা সংশয়ের প্রশ্নই উঠে না। ঠিক একই ভাবে রাজনৈতিক প্রবঞ্চনা ও শঠতার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে লক্ষ্যহীনতার দিকে ধাবিত করারও কোন অবকাশ থাকবে না।

সাক্ষাৎকার-২

প্রশ্ন ঃ ১৯৭৫ সনের ৩রা নভেম্বরের অভ্যুত্থান সম্পর্কে অনেকেই মনে করেন; ওটা। ছিল আসলে ক্ষমতা দখলের জন্য রুশ-ভারতের অনুগত চক্রের একটি অপপ্রয়াস। ৩রা নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে আপনাদের বক্তব্য কি? | উত্তরঃ উপরােক্ত ধারণা আংশিক সত্য। ওটা অ্যুথান ছিল না; ছিল সেনাবাহিনীর কতিপয় হিংসুক, পরশ্রীকাতর ও উচ্চাভিলাষে অন্ধ সামরিক অফিসারের বিদ্রোহ। বস্তুতঃ ১৫ই আগস্টের সফল বিপ্লব ও তার প্রতি দেশের আপামর গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন, তাদের মধ্যে হিংসা ও পরশ্রীকাতরতার উদ্রেক করে। রুশ-ভারতের এজেন্টরা সে সময় চেয়েছিল ক্ষমতা দখল করে দেশে ভয়াবহ গােলযােগ সৃষ্টি করতে।

প্রশ্ন ঃ ৭ই নভেম্বরের বিপ্লব কিভাবে সংঘটিত হয়েছিল বলে আপনারা মনে করেন?

উত্তরঃ পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৫ই আগস্টের বৈপ্লবিক পদক্ষেপ অনন্য বলে বিবেচিত। প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্কন্ধে জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার সংরক্ষণের যে নৈতিক দায়িত্ব অর্পিত, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট তারিখে সেনাবাহিনীর সে দায়িত্বই নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে (অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে সেনাবাহিনীকে এই দায়িত্ব সাধারণতঃ পালন করতে না দিয়ে তাদেরকে দিয়ে সরকার এবং শাসকদের নিরাপত্তা বজায় রাখা হয়)। প্রতিরক্ষা বাহিনীর উল্লিখিত নৈতিক দায়িত্ব এবং কর্তব্যের জন্যই তারা জনগণ কর্তৃক সম্মান এবং প্রশংসা লাভ করেন। রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল্যবােধ ১৫ই আগস্টের বৈপ্লবিক পদক্ষেপ-এর মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭৫ সনের ৭ই নভেম্বর হচ্ছে আর একটি অনন্য ঐতিহাসিক ঘটনা যেদিন কোনরূপ নেতৃত্বের অপেক্ষা না করে সিপাহী জনতা স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার অভিন্ন উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে এক বিপ্লবের সূচনা করে। এই ধরনের গতিশীল ঐক্য পুনঃ প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে যদি। (১) জনগণকে তাদের অধিকার অর্জন ও কর্তব্য পালনে নিরংকুশ স্বাধীনতা দেয়া হয় (২) যদি অভিন্ন জাতীয় লক্ষ্য নির্ণীত হয় যেখানে জনগণ জাতি হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করতে পারে) এবং যদি (৩) বস্তুনিষ্ঠভাবে জাতীয় দিক নির্দেশ নিরুপণ করা যায় (যার মাধ্যমে ব্যক্তি এবং জাতির কল্যাণ সমভাবে অর্জিত হবে)। উল্লেখযােগ্য যে, আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যম গৃহীত স্বল্পকালীন বৈপ্লবিক পদক্ষেপ-এর ফলে উপরােক্ত তিনটি শর্তের বীজ কার্যকারীভাবে রােপিত হয়েছিল। তাই ৭ই নভেম্বরের সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান ছিল আসলে ১৫ই আগস্টের বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত গতিশীল জাতীয় ঐক্যের অনুরণন এবং বিস্ফোরণ। ১৯৭৫ সনেরই ৭ই নভেম্বরের পর যে সব সামরিক ও বেসামরিক নেতা নিজস্ব স্বার্থ ও লােভ চরিতার্থ করার দুরভিসন্ধিতে লিপ্ত হয়েছে তারা সাফল্যমণ্ডিত হতে পারেনি এবং কখনও পারবে না।

একমাত্র ১৫ই আগস্ট ও ৭ই নভেম্বরের বৈপ্লবিক পদক্ষেপ এবং জনগণের আশাআকাক্ষার স্বার্থে নিজের একীভূত করা ছাড়া ব্যক্তি ও জাতীয় পর্যায়ে কেউ সাফল্যলাভ করতে পারবে না। | প্রশ্ন : ৩রা নভেম্বর বিদ্রোহ সংগঠনের পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণগুলাে খােলামেলাভাবে আপনারা বলবেন কি? সেই সময়কার চিফ অব স্টাফ হিসেবে জেনারেল জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ও দায়িত্ব কি ছিল? | উত্তর : আমরা পূর্বেই বলেছি যে, সেনাবাহিনীর কতিপয় নগণ্য সংখ্যক অফিসার হিংসা, উচ্চাভিলাষ এবং পরশ্রীকাতরতায় জড়িয়ে সুগভীর ষড়যন্ত্রের ক্রীড়ানকে পরিণত হয়েছিল। সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে জেনারেল জিয়াউর রহমান চায়নি যে, বিপ্লবের পর পরই বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা কিংবা পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্য থেকে কাকেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়ােগ করা। তিনি এটাও চাননি যে, দেশে তাড়াতাড়ি একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালু করে তার সাথে বৃহত্তর জনগােষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে। অতৃপ্ত বাসনা, উচ্চাভিলাষ এবং লােভ জেনারেল জিয়াকে এমনভাবে পেয়ে বসেছিল যে, তিনি চাইতেন, যে কোনাে মূল্যে প্রেসিডেন্ট পদে অভিষিক্ত হওয়া। যার জন্যে ৩রা নভেম্বরের বিদ্রোহের জন্য তিনি যে কেবল দায়ীই ছিলেন তাই নয়, বরং সে বিদ্রোহের তিনি ছিলেন প্রধান পৃষ্ঠপােষক। এর জন্য তিনি বাকশাল ও জাসদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন। এর প্রমাণ নিম্নোক্ত ঘটনাবলিতেই স্পষ্ট

১। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।

২। জাতীয় শত্রু ও গণবিরােধী শক্তিসমূহের পুনর্বাসন এবং ৩রা নভেম্বরর বিদ্রোহ সংগঠনকারী অফিসারদের নানাবিধ সুযােগ-সুবিধা প্রদান।

৩। ১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বরের বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী দেশরক্ষা বাহিনীর হাজার হাজার লােককে চাকুরী থেকে বরখাস্ত, কারারুদ্ধ এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদান।

৪। খন্দকার মােশতাককে অন্যায়ভাবে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অভিযােগে অভিযুক্ত করে তাকে রাজনৈতিক তৎপরতায় অংশ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত করা।

৫। কর্নেল ফারুককে মিথ্যা অভিযােগে কারারুদ্ধ করা।

৬। আমাদের দুই জনকে (রশিদ এবং ফারুক) অন্যায় ও অবৈধভাবে এবং জোর করে নির্বাসনে প্রেরণ।

প্রশ্ন : আপনারা প্রেসিডেন্ট জিয়াকে সর্বদাই একজন ক্ষমতালিন্দু ব্যক্তি ও ৩রা নভেম্বরের বিদ্রোহের পৃষ্ঠপােষক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু দেশের প্রায় সর্বমহল এই মর্মে অবহিত যে, ৩রা নভেম্বরের বিদ্রোহীরা তাকে আটক করে রাখে এবং ৭ই নভেম্বরের সিপাহী জনতা তাকে বিপ্লবের মাধ্যমে মুক্ত করে আনে। এতদসংক্রান্ত কোন্ তথ্যগুলাে সঠিক?

উত্তরঃ প্রথমে কথা হচ্ছে তার স্বসৃষ্ট স্টাইলে নিজের বাসভবনে তিনি আটক ছিলেন। দ্বিতীয়তঃ তিনি তার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ও পদাতিক বাহিনীর একটি কোম্পানির প্রহরাধীন ছিলেন। সেখানে তার ব্যক্তিগত স্টাফ অফিসারও ছিলেন। বিদ্রোহ দমনের জন্য তিনি নিজে কোন উদ্যোগই নেননি। উপরন্তু প্রতিরক্ষাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক প্রেসিডেন্ট কর্তৃক এই ব্যাপারে তাকে সুস্পষ্ট নির্দেশ প্রদান করা সত্ত্বেও তিনি বিদ্রোহ দমন করতে অস্বীকার করেন। তাঁর বাসভবনের টেলিফোন বারবারই সম্পূর্ণরূপে কাজ করছিল। তার স্ত্রী আমাদের এই মর্মে নিশ্চিত করেছিলেন যে, তিনি গ্রেফতার কিংবা আটকাবস্থায় নেই। টেলিফোনে তার সাথে কথা বলতে চাইলে তার স্ত্রী জানান যে, তিনি কতিপয় সামরিক অফিসারের সাথে আলাপ করছেন। এরপর বঙ্গভবন থেকে তাকে যতবারই ফোন করা হয়েছে ততবারই তিনি ফোনে। কথা বলতে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে অর্থাৎ ৭ই নভেম্বর পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেকটা বিভ্রান্তির বশবর্তী হয়েই ১৫ই আগস্টের মূল্যবােধে উজ্জীবিত সিপাহী জনতা সেই সময় দুই জনকে মুক্ত করে আনে, যে দুই জনকে (অর্থাৎ খন্দকার মােশতাক এবং জেনারেল জিয়া) ১৫ই আগস্টের পর নিয়ােগ করা হয়েছিল। সিপাহী জনতা আমাদের সাথেও যােগাযােগ করেছিল যাতে আমরা দেশে প্রত্যাবর্তন করি। চিফ অব আর্মি স্টাফ-এর পদবী অপব্যবহার করে জিয়া সর্বদাই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জনগণ ও সৈনিকদের ধোকা দিয়েছেন। | বাংলাদেশের সব চাইতে বেশি ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়েও তিনি অসহায়ভাবে নিহত হয়েছিলেন তারই ঘনিষ্ঠ সহচরদের হাতে যারা এক সময় তার পর্যায়ক্রমিক বিশ্বাসঘাতকতা এবং সন্ত্রাসের পেছনে মদদ যােগাতাে।

প্রশ্নঃ এই মর্মে বিভিন্ন মহলে গুজব আছে যে, জিয়ার শাসনামলে প্রায় এক ডজনের মত ব্যর্থ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। এইসব ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সাথে জড়িয়ে সামরিক বাহিনীর বহু অফিসার ও জোয়ানকে নাকি নৃশংসভাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এই ব্যাপারে আপনাদের কিছু বলার আছে কি? | উত্তর ঃ এইগুলাে সব গুজব এবং মিথ্যা। জিয়ার শাসনামলে একমাত্র অভ্যুত্থান করেছে তারাই যারা তার সামরিক ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী এবং সেই অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন। তার ঐ সব উত্তরাধিকারীদের একাংশ বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষমতা উপভােগ করছে। অতীতে যে সব অভ্যুত্থান সম্পর্কে গুজব ছড়ানাে হয় তা ছিল আসলে পূর্ব থেকে উদ্দেশ্য প্রণােদিতভাবে পরিকল্পিত ব্যাপার। এইসব তথাকথিত অ্যুত্থানের কথা জিয়া সেই সময়কার ডাইরেক্টর অব ফোরসেজ ইন্টেলিজেন্স এবং মিলিটারী ইন্টেলিজেন্স ডাইরেকটরেট-এর সাহায্যে রটনা করিয়েছিলেন নিম্নোক্ত উদ্দেশ্যে ঃ (১) প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ বিভিন্ন স্তরের জাতীয়তাবাদী শক্তিসমূহকে চিহ্নিত করার একটা ক্ষেত্র সৃষ্টি করা (২) ভয়ভীতি ও ত্রাস সঞ্চার করে তার মাধ্যমে অর্জিত ফল তার রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি চরিতার্থ করার কাজে লাগানাে এবং (৩) বাইরের জগতের সামনে নিজেকে খুব শক্তিশালী এবং স্বীয় অবস্থানকে অত্যন্ত সুসংহত প্রমাণ করা।

প্রশ্ন ঃ কর্নেল তাহেরের ভূমিকা ও পরিণতি সম্পর্কে আপনারা কি জানেন?

উত্তর : জেনারেল জিয়া এবং মঞ্জুরের সাথে কর্নেল তাহেরের গভীর হৃদ্যতা ছিল। জেনারেল জিয়া কর্নেল তাহেরের মাধ্যমে জাসদের যােগসাজশে তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার ষড়যন্ত্র করে। জিয়া ক্ষমতা দখল করার পর কর্নেল তাহেরকে নিঃশেষ করার পথ বেছে নেন। কেননা, তার মাধ্যমেই জাসদের সাথে জিয়ার যােগসূত্র রচিত হয়েছিল। তিনি এতদসংক্রান্ত সকল সাক্ষ্য-প্রমাণ গায়েব করার সিদ্ধান্ত নেন। আর এই উদ্দেশ্যে (ক) জাসদের গণবাহিনীর হাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানাে ও (খ) জাসদের সাথে রাজনৈতিক যােগসাজশ ধামাচাপা দেবার জন্য জেনারেল জিয়া হিংসাত্মক পথ বেছে নেন। কেননা, এই দুটো বিষয় প্রমাণ হলে জিয়ার রাজনৈতিক মৃত্যু অনিবার্য হয়ে উঠত।

১৫ই আগস্টের বিপ্লবের পর কর্নেল তাহের আমাদের সাথে বেশ কয়েকবার দেখা করতে আসেন। তিনি জিয়ার পক্ষ থেকে আমাদেরকে মােশতাককে অপসারিত করার প্রস্তাবও দিয়েছেন। মােশতাকের পরিবর্তে আমরা যাতে জিয়াকে প্রেসিডেন্ট মনােনীত করি, সে ব্যাপারে কর্নেল তাহেরের পীড়াপীড়ির অন্ত ছিল না। এ ক্ষেত্রে জাসদ আমাদেরকে সকল বাকশালী চক্র নিশ্চিহ্ন করার ক্ষেত্রে সহযােগিতারও আশ্বাস দেন।  আমরা পূর্বাপর এই ষড়যন্ত্রমূলক কুমন্ত্রণার বিরােধিতা করে আসছি। আমরা তাদেরকে সংবিধানিক উপায়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় নেবার পরামর্শ দিয়েছি। প্রস্তাবিত নির্বাচনে খন্দকার মােশতাকের অংশগ্রহণ সম্পর্কিত প্রশ্নেও আমরা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তাদেরকে বলেছি যে, তিনি যদি রাজনৈতিক কার্যক্রমে  অংশ নিতে চান তাহলে নির্বাচনের ছয় মাস আগেই প্রেসিডেন্টর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। কর্নেল তাহেরকে আমরা আরও বলেছি যে, দেশের জনগণই হচ্ছে সবকিছুর শ্রেষ্ঠ বিচারক। জনগণই চাইলে তারা বাকশালীদের রাজনৈতিক ভাবে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারবেন। আমরা কোন ব্যক্তি বা গােষ্ঠীকেই বিশৃংখলা বা গােলযােগ সৃষ্টির সুযােগ দিতে পারি না। জনগণ যদি জিয়াকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায় তাহলে জিয়াকে সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।

প্রশ্নঃ ৩রা নভেম্বরের বিদ্রোহের মূল লক্ষ্যই ছিল আগস্ট বিপ্লবের ফলশ্রুতিকে নস্যাৎ করা। অন্যদিকে ষড়যন্ত্রকারীদের পরিকল্পনা জানা সত্ত্বেও খন্দকার মােশতাক নাকি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি করেন। তার এই ভূমিকা গ্রহণের উদ্দেশ্য কি?

উত্তরঃ এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। মােশতাক ইচ্ছা করেই কতিপয় জেনারেলদের সুপরামর্শ দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন (ক) তদানীন্তন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা জনাব এম, এ, জি, ওসমানী (খ) নবনিযুক্ত চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ ও বিডিআর-এর ডাইরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান এবং (গ) চিফ অব আর্মি স্টাফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। | পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ প্রমাণ করে যে, এ সব জেনারেলরা বাংলাদেশের। শত্রুদের ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করেছেন। | এ ছাড়া যদি অন্য কোন কারণ থেকে থাকে, তবে মােশতাক নিজেই সে ক্ষেত্রে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারবেন।

প্রশ্নঃ কারাে কারাে মতে, খন্দকার মােশতাকের আওয়ামী লীগ ঘেঁষানীতিই বিদ্রোহের পটভূমি তৈরি করেছে। এই ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য কি?

উত্তর : এটি একটি অর্থহীন যুক্তি।

সূত্র : ফ্যাক্টস্- এন্ড ডকুমেন্টস্–বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড – অধ্যাপক আবু সাইয়িদ