দি বাল্টিমোর সান, জুলাই ১৬, ১৯৭১
পাকিস্তানে অস্ত্র বহনকারী শিপিং এজেন্ট প্রতিবাদের সম্মুখীন
তেরো জন প্রতিবাদকারী- তার মধ্যে এক জন মাত্র পাকিস্তান থেকে- শহরের একটি অফিস বিল্ডিংয়ের সামনে মিছিল করে প্রতিবাদ জানায়, কথিত এক মিলিটারি কার্গো পাকিস্তানে পাঠানোর ব্যাপারে এই প্রতিবাদ।
৪৫ মিনিটের এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে প্রতিটি মিছিলকারির হাতেই ছিল বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড যেগুলো নিয়ে তারা কালভার্ট ও রেডউড স্ট্রিটের কেইসার বিল্ডিংয়ের সামনে অবস্থান করে।
তাদের থেকে দুজন নেতা পরে ইস্ট ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সির একজন প্রতিনিধির সাথে আলাপ করে, এই বিল্ডিংয়ে প্রতিষ্ঠানটি অফিস রয়েছে। এই এজেন্সিটি আগামীকাল বিকেলে ম্যাককোমাস স্ট্রিটের পোর্ট কোভিংটন টারমিনালে পদ্মা নামে পাকিস্তানি একটি মালবাহী জাহাজ আসার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
গন্তব্য করাচি
পাকিস্তানি জাহাজটি, যার গন্তব্যস্থল করাচি, বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিতর্কের বিষয় ছিল। রিপোর্টে জানা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহের লাইসেন্সের অনুমোদন দেবে না, তবে আগের নির্ধারিত শিপমেন্টগুলো হতে দেবে। পাকিস্তানি সরকার পূর্ব পাকিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি বিদ্রোহ দমন করেছে তবে গেরিলা আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিবাদকারিদের মুখপাত্র বিন ময়ের দাবী করেন পদ্মা জাহাজটিতে আটটি সেবার জেট, বিমান যন্ত্রাংশ ও খুঁটিনাটি, গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং ২০০০ রাউন্ড অ্যামিনিশন ভরা রয়েছে।
ম্যানেজারের সাথে আলোচনা
আমেরিকান ফ্রেন্ডস সার্ভিস কমিটিস এর জ্যাক প্যাটারসন এবং ডায়ানা স্ক্রাম মিছিল থেকে এগিয়ে যান ইস্ট-ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সিস এর ম্যানেজার ওয়াল্টার স্পাইকার এর সাথে পদ্মা’র ব্যাপারে আলাপ করতে।
মিসেস স্ক্রাম মি. স্পাইকারকে জানান তার সংগঠন, ফ্রেন্ডস অফ ইস্ট বেঙ্গল এই জাহাজটির অবস্থান এবং বহনকৃত মালামাল সম্পর্কে বেশকিছু পরস্পর বিরোধী রিপোর্ট পেয়েছে।
মি. স্পাইকার বলেন, ‘আমাদেরকে কেউ কল করেনি’ এবং সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেন আগামীকাল জাহাজটি এসে পৌঁছাবার কথা। “পদ্মা এখন সাগরে রয়েছে, মন্ট্রিল (যা কানাডার শেষ বন্দর) এবং বাল্টিমোর এর কোনো এক জায়গায়”, মি. স্পাইকার আরও জানান। “আমি যতটা জানি ডকে শেষ তক যা ঘটেছে সে অনুযায়ী কোনো সামরিক মালামাল পদ্মায় উঠাবার কথা নয়”
.
তোমরা নিয়ে নিতে পারো
মি. স্পাইকার এর জানামতে সেই জাহাজে আছে কেবলই ১,৮০০ টন ওজনের সাধারণ কার্গো যার মধ্যে রয়েছে স্টিল, ময়দা এবং কাঁচের জিনিষপত্র। “আপনারা এসে আমাদের মালামাল লোড করা দেখতে পারেন”, তিনি সমাপ্তি টানেন, “যদি আপনারা সেখানে কোনো প্রকারের সামরিক মালামাল লোড করতে দেখেন, তবে সেগুলো সব আপনাদের”
এই তথ্য নিয়ে মি. প্যাটারসন এবং মিসেস স্ক্রাম প্রতিবাদকারিদের কাছে ফিরে যান, যারা তখনও পিকেটিং করছিল। প্রতিবাদকারিরা তাদের এই প্রতিনিধিদের ঘিরে দাঁড়িয়ে ঘোষণা শোনেন, এর সাথেই সেদিনকার প্রতিবাদ এর সমাপ্তি ঘটে।
মি. ময়ের জানান তার সংগঠন জেনেছে যে আগামীকাল অস্ত্র উঠানো করা হবে, যদিও মি. স্পাইকার জোর দিয়ে বলেছিলেন বাল্টিমোর এ কোনো সামরিক কার্গো উঠবে না।
চার্লস জোনস, যিনি লোকাল ৮২৯, ইন্টারন্যাশনাল লংশোরম্যান’স অ্যাসোসিয়েশন এর ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, জানান তিনি পদ্মা’র শিপমেন্ট এর সাথে জড়িত এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেন তাকে জানানো হয়েছে বাল্টিমোর এ কোনো গোলাবারুদ, কোনো সামরিক মালামাল অথবা সামরিক সংশ্লিষ্ট কোনো সরঞ্জাম উঠানো হয়নি। প্রতিবাদকারিরা জানায় তারা আজ বেলা ১২টায় কেইসার বিল্ডিং এর সামনে সমবেত হবে। সেখান থেকে তারা ১০০ নং ব্লক-এর সাউথ গে স্ট্রিট এর অবস্থিত ইউনাইটেড স্টেটস কাস্টমস অফিস এর দিকে মিছিল করে এগিয়ে যাবে এবং কর্মকর্তাদের সাথে পদ্মা’র ব্যাপারে কথা বলবে।আগামীকাল কোভিংটন টারমিনাল বন্দরে ‘নন-ভায়োলেন্ট নেভি’’দের একটি অবরোধ ধার্য রয়েছে।
জাহাজ অবরোধকারি ৭ যুবককে পুলিশ আটক করেছে ১৫১১তে
– অ্যান্টেরো পাইটিলা
পানিতে নেমে পাকিস্তানি জাহাজ পদ্মাকে ডকে অনুপ্রবেশে বাধাদানকারী সাত যুবককে গত রাতে বাল্টিমোর পুলিশ দুটি বোট সহযোগে গ্রেপ্তার করেছে। ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। পুলিশ তাদেরকে পদ্মা জাহাজটির খুব কাছে অবস্থানকালে দুটি ক্যানো এবং একটি কায়াক থেকে উদ্ধার করেছে। এই পদ্মা জাহাজটি করাচির যেটি সম্পর্কে কথিত রয়েছে যে সামরিক সরঞ্জাম বহন করে পাকিস্তান নিয়ে যাচ্ছে যদিও তেমন শিপমেন্টের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়োছে।
যাদেরকে নৌযান চলাচলে বাধাদানকারি এবং পুলিশের আদেশ অমান্যকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন, ওয়েইন লসার, স্যালি উইলোবি, রিচার্ড টেইলর, মাই স্কট, স্টেফানি হলিম্যান এবং চার্লস গুডউইন। সকলকেই ফিলাডেলফিয়া’র অধিবাসি বলে জানা গেছে। প্রাথমিক শুনানি সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে বেলা ৯টায় অনুষ্ঠিত হবার কথা।
.
পাশে দাঁড়াল আরও ২ জন
আরও দু’টি ক্যানোতে করে ৫ জন প্রতিবাদকারি জাহাজটির পাশে অবস্থান করার অনুমতি পেয়েছে। আটটার কিছু আগে পাইয়ার ৮এ জাহাজটি নোঙর করেছে।
এর আগে গতকাল, ইন্টারন্যাশনাল লংশোরমেন অ্যাসোসিয়েশন তাদের বাল্টিমোর এর এক অধিবাসীকে পদ্মায় কাজ করতে নিষেধ করে, কারণ হিসেবে তারা পূর্ব পাকিস্তানকে দুর্দশাগ্রস্ত করছে এমন গৃহযুদ্ধের ব্যাপারে ‘নিরপেক্ষ’ থাকতে চায়। এদিকে নিউ ইয়র্কে জাহাজটির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ট অ্যালান এলিয়া, যিনি ইস্ট ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সির ভাইস প্রেসিডেন্ট, জানিয়েছেন জাহাজে কোনো সামরিক মাল-সরঞ্জাম ছিল না। তিনি জানিয়েছেন, তার কোম্পানি লংশোরমেন’স ইউনিয়ন এবং ফেডেরেল মেরিটাইম কমিশন বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আনয়নের চিন্তা করবে যদি লংশোরমেন সকালে কাজ করতে না আসে।
মি. এলিয়ার বরাতে জানা যায় লংশোরমেন এর তিনটি দল আজ সকাল ৭টা থেকে কাজ শুরুর কথা। তিনি আরও জানান বাল্টিমোর নির্ধারিত যে মাল-সরঞ্জাম জাহাজে তোলার কথা রয়েছে তার মধ্যে কোনো প্রকার সামরিক মালামাল নেই।
“পুরো ব্যাপারটাই হাস্যকর”, এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে এজেন্টটি বলেন। তিনি উল্লেখ করেন তিনি জাহাজের মালামাল পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতেও রাজি আছেন যদি কোনো প্রকার সামরিক মালামাল না পেলে পরিদর্শক এই আয়োজনের খরচাদি বহন করেন। লোকাল ৮২৯ মায়ামি থেকে একটি বয়কট আদেশ পায়, যেখানে এর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ একটি সম্মেলনে যোগ দেবার কথা।
ইউনিয়নের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট চার্লস (বাক) জোনস জানান টেলিফোনে এই নির্দেশের পেছনে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। “উইলিয়াম হিয়ালে যিনি আমাদের আন্তর্জাতিক ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি জানান যে, আমাদের ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট টমাস জি. গ্লিসন বলেছেন এই কার্গোতে কেউ কাজ করবে না। তিনি কোনো ব্যাখ্যা দিতে বলেননি।”
একটি বিপ্লব চলছে
তিনি এরপর যোগ করেন, “সেখানে [পাকিস্তান] একটি বিপ্লব বিদ্যমান, তাই না? আমরা কোনোভাবে তাতে জড়িত থাকতে চাইনা।”
বিকেল জুড়ে, যখন পদ্মা চেসাপিক আর ডেলাওয়ার ক্যানেলে ছিল, পোর্ট কোভিংটন এর কাছে তিনটি ক্যানো, দুটি কায়াক আর একটি রো-বোট এর একটি বহর ঘোরাফেরা করছিল।
নৌকাগুলোতে ছিলেন ফ্রেন্ডস অফ ইস্ট বেঙ্গল এর সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ফিলাডেলফিয়া ভিত্তিক এই সংগঠনটি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার রয়েছে। খবর রয়েছে যে দ্য আমেরিকান ফ্রেন্ডস সার্ভিস কমিটি, দ্য কোয়েকার অর্গানাইজেশন এবং গত কালকের প্রতিবাদীদের সাথে এই সংগঠনের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। তারা গত গ্রীষ্মে এজউড আর্সেনাল এ বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার এর বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন।
গ্রুপটির পরিকল্পনা
প্রায় ৩৫ সদস্যের এই গ্রুপটির প্রতিনিধি চার্লস ওয়াকার বলেন, তাদের বিক্ষোভকারীরা পদ্মাকে পোর্ট কোভিংটনে নোঙর করতে বাধা দেবার চেষ্টা করবে।
তিনি আরও জানান, যদি তাদের নোঙরে বাধা প্রদান বিফল হয়, তবে তারা সেটিকে বন্দরে অবরুদ্ধ রাখবেন। এই পদ্মাকে নিয়ে যত দ্বন্দ্বের সূচনা ২২শে জুন থেকে, যখন ওয়াশিংটন থেকে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয় জাহাজটি নিউ ইয়র্ক থেকে ছাড়বে। আগস্টের মাঝামাঝি করাচিতে পৌঁছবার কথা রয়েছে জাহাজটির, বয়ে নিয়ে যাবে আটটি এয়ারক্রাফট, প্যারাশুট এবং “হাজার হাজার পাউন্ড ওজনের সামরিক বিমান ও গাড়ির যন্ত্রাংশ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম”, টাইমস এ লেখা হয়েছে।
সমরাস্ত্র বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা
পাকিস্তানে সমরাস্ত্র বিক্রি’র উপর ২৫শে মার্চে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক নিষেধাজ্ঞার বরাত দিয়ে পেপারটি বলে, “অজ্ঞাতনামা এক কর্মকর্তা বলেছেন ‘কিছু গলদ আছে বলেই প্রমাণ পাওয়া গেছে।’”
নিউ ইয়র্ক ছাড়ার পর পদ্মা জাহাজটি কানাডার উদ্দেশ্য পাড়ি জমায়, যেখানে কর্মকর্তারা আর কোনো প্রকার শিপমেন্টের উপর নিষেধাজ্ঞা অর্পণ করেন।
.
প্রতিবেদন অগ্রাহ্য
তিনি বলেন যে, কানাডিয় কর্মকর্তাবৃন্দ একটি কার্গো উঠাতে বাধা দিয়েছে যেটিতে, “৪৬ বাক্স যন্ত্রাংশ এবং সরঞ্জাম” ছিল।
তিনি টাইমস’এর প্রতিবেদনটিকে অগ্রাহ্য করে বলেন, “এটা হাস্যকর। কেউ ভুল তথ্য পেয়েছিল। আমাদের কোনো সামরিক কার্গো ওঠানো হয়নি, কোনোটিতেই নয়। আমাদের ১০ বাক্স স্মোক সিগন্যাল আছে। এখন এটাকে যদি গোলাবারুদ বলেন…” এজেন্ট বলেন। কার্গোতে এয়ারক্রাফট থাকার ব্যাপারটিকেও তিনি উড়িয়ে দেন এবং বলেন বিমান সংক্রান্ত যা ছিল সেগুলো হচ্ছে, অল্টিমিটার, “বিমানের যন্ত্রাংশ, নাট এবং বল্টু।”
তবে প্রতিবাদকারিরা – যাদের মধ্যে প্রায় দশজন পাকিস্তানি এবং ভারতীয় ছিলেন – অটলভাবেই দাবী করতে থাকেন কার্গোতে সামরিক জিনিসপত্রই ছিল। তারা গতকাল প্ল্যাকার্ড বহন করেছেন যেগুলোতে লেখা ছিল, ‘পাকিস্তানকে থামাও – গণহত্যা হচ্ছে – অস্ত্র পাঠিও না।”
গ্রুপটি লংশোরমেন এর পদ্মায় কাজ না করবার ব্যাপারে গৃহীত সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান যদিও এটির বাল্টিমোর এর কার্গো সামরিক মালামালের ছিল না।
দ্য বাল্টিমোর সান, শুক্রবার, জুলাই ১৬, ১৯৭১
পাকিস্তানি অস্ত্রবাহী জাহাজে মালামাল উঠাতে ডক ইউনিয়নের অস্বীকৃতি
আমেরা পাইটিলা কর্তৃক
লংশোরমেন মালামাল উঠাতে অস্বীকার করায় পাকিস্তানি জাহাজ পদ্মা আজ বাল্টিমোর ছেড়ে মোবাইল, আলা-এর উদ্দেশ্যে রওনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। লোকাল ৮২৯ এর সদস্যরা ইন্টারন্যাশনাল লংশোরমেন’স অ্যাসোসিয়েশন এর টমাস জি. গ্লিসন (ইউনিয়নটির প্রেসিডেন্ট) কর্তৃক আদেশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন পোর্ট কোভিংটনে অবস্থানকৃত জাহাজটিতে কাজ না করার জন্য। তার মতে, তার ইউনিয়ন পাকিস্তানী গৃহযুদ্ধে ‘নিরপেক্ষ’ থাকতে চায়।
এই যুদ্ধে, স্টেট ডিপার্টমেন্টের হিসাবমতে কমপক্ষে ২০০,০০০ লোকের প্রাণহানী ঘটেছে এবং ষাট লাখ লোক ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত ন্যাশনাল শিপিং কোম্পানী অফ করাচি, পাকিস্তান এর এজেন্ট দ্য ইস্ট ওয়েস্ট শিপিং কোম্পানী একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছে ফেডেরেল মেরিটাইম কমিশনকে, তাতে অভিযোগ করেছে যে লংশোরম্যানের এই কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের বাণিজ্যে সরাসরি বিঘ্নের সামিল।
এই টেলিগ্রামে কমিশনের চেয়ারম্যান মিসেস হেলেন ডেলিচ বেন্টেলিকে এই বিবদমান পরিস্থিতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ করা হয়েছে। তবে একজন মুখপাত্র বলেছেন, কমিশন এখনই কোনো হস্তক্ষেপে যাবে না বরং পরিস্থিতিটির নিরিখ করবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে যোগাযোগে এই শিপিং এজেন্সি জানিয়েছে যে, পদ্মার কার্গো হিসেবে এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এর থেকে যাচ্ছে: ফার্মাসিউটিক্যাল সাপ্লাই, কীটনাশক, অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম এবং বৈদ্যুতিক জেনারেটর।
তবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিশ্চিত করেছে যে, এর কার্গোতে অস্ত্রশস্ত্র ছিল যার রপ্তানী লাইসেন্স ২৫শে মার্চের আগে দেয়া হয়েছিল, পাকিস্তানে এমন ধরণের মালামাল পাঠানোর প্রতি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে।
পদ্মা’র কার্গোতে থাকা সামরিক সরঞ্জাম এর পরিসংখ্যান এবং আর্থিক মূল্যমান দেয়া হলো: বিমানের যন্ত্রাংশ ৯২৪,৩২৯ মার্কিন ডলার, সামরিক যানবাহনের যন্ত্রাংশ ১৮৪,১৮৭ মার্কিন ডলার, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ ২৫,৪১৭ মার্কিন ডলার, জাহাজের যন্ত্রাংশ ৪৫,১১৭ মার্কিন ডলার এবং যুদ্ধাস্ত্র বা আর্টিলারি এর যন্ত্রাংশ ২,৮৩০ মার্কিন ডলার।
সামরিক সরঞ্জাম হিসেবে আছে ২২ ক্যালিবার এর ২,২০০ রাউন্ড গোলাবারুদ যা যুদ্ধাস্ত্র বা আর্টিলারি এর সাথে। এগুলো সবই গত মাসে নিউ ইয়র্ক থেকে পদ্মা জাহাজটিতে ওঠানো হয়েছে বলে স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে।
জাহাজটি এর পরে মন্ট্রিলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়, যেখানে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সরবরাহকৃত সেবার জেট এর যন্ত্রাংশের ৪৬টি ক্রেট নেবে। ক্রেটগুলো ওঠানোর ক্ষেত্রে কানিডিয় সরকার বাধা দিয়েছে। শিপিং এজেন্ট বলেন, বাল্টিমোরে পদ্মা জাহাজটি পানিতে বেশি ভাসছিল যাতে তা অর্ধেক খালি বলেই বোঝা যায়, এতে বেসামরিক জিনিসপত্র ওঠাবার কথা।
এই মালামালের মধ্যে অজ্ঞাত পরিমাণের ইলেক্ট্রোলাইটিক টিনের পাত আছে, যা এখন জাহাজঘাটাটির একটি ওয়্যারহাউসে আছে এর প্যাকেজের গায়ে পরিচিত এআইডি চিহ্ন আড়াআড়ি রাখা হাত দেখা যায়।
এদিকে মোবাইল এ জাহাজটিতে আরও ইস্পাতের পন্য ওঠাবার জন্য অপেক্ষায় আছে। উপকূলীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় ফিলাডেলফিয়া ভিত্তিক ফ্রেন্ডস অফ ইস্ট বেঙ্গল এর ৩০ জন সদস্য এবং সহানুভূতিশীলগণ পোর্ট কোভিংটনের গেটে ইট-পাটকেল ছুঁড়েছে এবং জাহাজের কাছে ক্যানোতে করে নিজেদের প্ল্যাকার্ডে প্রতিবাদ প্রদর্শন করেছে।
কয়েদে রাত্রিযাপন
বুধবার রাতে যখন পদ্মা জাহাজটি পোর্ট কোভিংটনে পৌঁছায়, দুটি নৌকায় করে সিটি পুলিশ তিনটি ক্যানোভর্তি বিক্ষোভকারিদের গ্রেফতার করে।
সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট লকআপ-এ পুরো রাত আটক থাকার পর ফিলাডেলফিয়ার ৬ জনের প্রত্যেকে রায় ছাড়াই নিরীক্ষাকাল (প্রোবেশন) লাভ করে, নৌযান চলাচলে বাধাসৃষ্টি এবং এক পুলিশের আদেশ অগ্রাহ্য করাই তাদের অপরাধ। একজন প্রতিবাদি অভিযোগ থেকে রেহাই পায়।
পোর্ট কোভিংন এর গেট এর কাছে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রতিবাদকারিরা জানায় তারা তাদের প্রতিবাদকে আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
ওয়াশিংটন স্টার, শুক্রবার, জুলাই ১৬, ১৯৭১
বাল্টিমোর-এ অস্ত্রবাহী জাহাজ নিয়ে প্রতিবাদ
বাল্টিমোর (এপি) পদ্মা আজ বাল্টিমোর এ নোঙর করতে বাধা দেবার কর্মসূচী চলমান থাকার কথা। কথিত রিপোর্টে জানা গেছে পাকিস্তানি এই জাহাজটি এর যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রদেশে অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে যাবে।
একজন অফিসার জানান সবাইকে নৌযানকে মুক্তভাবে যাতায়াতে বাধাপ্রদানের অভিযোগে আটক করা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, “তাদেরকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই বরং আটক করা হয়েছিল।”
ইতোমধ্যে বিতর্ক চলমান রয়েছে যে পদ্মায় নির্ধারিত মালামাল তোলা হবে কিনা।
তবে, বাল্টিমোর এর স্থানীয়দেরকে ইন্টারন্যাশনাল লংশোরমেন’স অ্যাসোসিয়েশন নির্দেশ দিয়েছে জাহাজটিতে মালামাল না উঠাতে। বিক্ষোভকারিদের মতে এই জাহাজে করে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম পাকিস্তানে নেয়া হচ্ছে, যদিও এমন মালামাল পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে, জাহাজটির যুক্তরাষ্ট্রীয় এজেন্ট ইস্ট-ওয়েস্ট শিপিং এর দাবী এমন কোনো সামরিক মালামাল জাহাজটি বহন করছে না।
সান্ধ্য বুলেটিন
ফিলাডেলফিয়া, শুক্রবার জুলাই ১৬ ১৯৭১
পাকিস্তানগামী জাহাজ অবরোধকারী ৬ জনের মুক্তি
বাল্টিমোর – ছয় জন ফিলাডেলফিয়ান, যারা পাকিস্তানগামী একটি জাহাজে মালামাল ওঠাতে বাধা প্রদানের জন্য ক্যানো এবং কায়াক ব্যবহার করে পথ রোধ করায় গ্রেফতার হয়েছিল, গতকাল তারা একটি সতর্কতা প্রদর্শনপূর্বক মুক্তি পেয়েছেন।
ড. চার্লস কান, যিনি ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়ার একজন শিক্ষক এবং এই গ্রুপের নেতা, জানিয়েছেন তার অনুসারীরা আবারও পদ্মা নামক জাহাজটিতে মাল ওঠানোতে বাধা দেবে পেনসিলভেনিয়াতে এলে।
ড. কান এর সঙ্গে আটক হওয়া আরেক ফিলাডেলফিয়ান হলেন রিচার্ড টেইলর, গ্রিন এর কাছে সেজউইস্ক স্ট্রিট থেকে, ম্যালকম স্কট, পেলহাম এর কাছে হর্লটার স্ট্রিট থেকে, স্যালি উইলোবি আর স্টেফানি হলিম্যান ৪৪তম এর কাছে পাইন স্ট্রিট থেকে, চার্লস গুডউইন, ৫০তম এর কাছে উইলো অ্যাভিনিউ থেকে এবং মিডিয়ার থেকে ওয়েইন লসার। তারা সারা রাত কয়েদে আটক ছিলেন।