মুজিবের চারদফা দাবি প্রেঃ ইয়াহিয়া নীতিগতভাবে মেনে নিলেন
গৌহাটি ২৫ মার্চ-পাকিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কট সুরাহায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর যে চার দফা দাবি পেশ করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নীতিগতভাবে তা মেনে নিয়েছেন।’ আজ অপরাহ্নে ঢাকা বেতার মারফত এই খবর পাওয়া গেল। জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যােগদানের শর্ত হিসাবে আওয়ামী লীগ নেতা এ মাসের গােড়ায় যে চারটি দাবি পেশ করেছিলেন, সেগুলি হল-(১) সামরিক আইন প্রত্যাহার, (২) সৈন্যদের ব্যারাকে প্রেরণ, (৩) সৈন্যদের গণহত্যা সম্পর্কে তদন্তের নির্দেশ ও (৪) নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। ‘শহিদদের রক্তধারা যেন ব্যর্থ’ না হয় বাংলাদেশ এর নেতা শেখ মুজিবর রহমান আজ পাকিস্তানের শাসকদের উদ্দেশে এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন যে, বাংলা দেশ-এর সাড়ে সাত কোটি মানুষের উপরে বাইরে থেকে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। বাংলাদেশের জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। আর কোন শক্তি তাদের দাবি উপেক্ষা করতে বা দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু বলেছেন যে, জনগণ যেন ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকেন।
শান্তিপূর্ণ অহিংস অসহযােগ আন্দোলন বানচাল করার সব অপচেষ্টা রুখতে হবে। শহীদদের রক্তধারা ব্যর্থ হতে দেওয়া চলবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রীতাজুদ্দিন আহমেদ বলেছেন যে, তাদের দল তথা বাংলাদেশের জনগণ কী চান তা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে সবিস্তারে বলা হয়েছে আর কিছু বলার দরকার নেই। তবে আরও ব্যাখ্যার দরকার থাকলে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের সঙ্গে তাঁরা আরও আলােচনায় প্রস্তুত। যাই হােক, অনিশ্চয় অবস্থা বেশিদিন থাকতে পারে না। বর্তমান সংকটের দ্রুত সমাধান কাম্য। ওদিকে ভুট্টো সাহেব এখনও তার পুরনাে গান গেয়ে চলেছেন। আজও সকালে তিনি ইয়াহিয়ার সঙ্গে ৪৫ মিনিট কথা বলেন। ভুট্টো যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানে এখনও নারাজ। শ্রী ভুট্টো আজ বলেন : সাংবিধানিক প্রশ্ন নিয়ে গতকাল আওয়ামী লীগ এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের মধ্যে আলাপ-আলােচনার ফলে একটি নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, এই নতুন পরিস্থিতির কথা তাকে জানানাে হলে আজ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকার অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন : নতুন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈঠক স্থগিত রাখতে হয়। আজ সন্ধ্যায় ওই বৈঠক বসার কথা ছিল। শ্রী ভুট্টো বলেন : শেখ মুজিবরের চার দফা দাবির ব্যাপারে তাঁর দলের নীতিগতভাবে কোন আপত্তি নেই। তারা চান, দেশের উভয় অংশেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা হােক। শ্রী ভুট্টোর মতে, আওয়ামী লীগের স্বাধিকার দাবি নিছক স্বায়ত্তশাসনের চেয়েও বেশি প্রায় সার্বভৌমত্বের কাছাকাছি। পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন : তিনি এখনও এক ইউনিটের ফরমুলা নিয়ে পীড়াপীড়ি করছেন-এ কথা বলা ঠিক নয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক। ঢাকায় তিনি আর কতদিন থাকবেন জানতে চাওয়া হলে শ্রী ভুট্টো বলেন : যদি কোন বােঝাপড়া পৌছানাে যায়, তবে, তিনি আরও দু-একদিন থাকতে পারেন। তা না হলে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যাবেন। তবে তার উপদেষ্টারা ঢাকায় থেকে যাবেন।
আজ সকালে প্রেঃ ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর শ্রী ভুট্টো সাংবাদিকদের বলেন : তিনি শ্রী মুজিবরের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চান। কিন্তু মুজিব আমার সঙ্গে দেখা করতে নারাজ। পূর্ব পাকিস্তানকে কার্যত স্বাধিকার দিয়ে প্রেসিডেন্ট আজ এক ঘােষণা করবেন বলে আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় পূর্ব বাংলায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। ঢাকায় বিক্ষোভকারীরা মুজিবর আমাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা কর না শ্লোগান দিতে থাকেন । শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে আভাস পাওয়া গিয়েছে, প্রেসিডেন্টের খসড়া ঘােষণাপত্রে যে স্বাধিকারের ব্যবস্থা রয়েছে, মুজিবর আজ রাত্রে হয়তাে এক নির্দেশনামা প্রচার করে তা কার্যকর করতে বলবেন। এদিকে শেখ মুজিবর আজ ঢাকার তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকে বসেন।
Reference:
২৬ মার্চ ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা