দৈনিক ইত্তেফাক
২৫শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
গণদাবীর প্রশ্নে লেনদেনের কোনই অবকাশ নাই : লাহোরে শেখ মুজিবের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা
ইত্তেফাকের নিজস্ব সংবাদদাতা জানাইতেছে, গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদের দাবী-দাওয়ার প্রশ্নে আলোচনার অবকাশ আছে কিনা, লাহোরের সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান বলেন, জনগণের অধিকারের প্রশ্নে কোন লেনদেন হইতে পারেনা। জনগণের অধিকার আমরা কোনক্রমেই বিসর্জন দিব না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমগ্র দেশে আজ দাউ দাউ করিয়া আগুণ জ্বলিতেছে। দেশের উভয় অংশে প্রতিদিন নিরীহ মানুষ গুলী গোলার মুখে মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়িতেছে—ইহার একটা হিল্লা করিতেই হইবে। জনগণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াই একমাত্র পথ।
ইত্তেফাকের নিজস্ব প্রতিনিধি জানাইতেছেন যে, পিণ্ডিতে সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে ৬ কোটি মানুষের স্বার্থের প্রতিকূলে তিনি তাঁহার ছয়দফা কর্মসূচী বর্জন করিতে কখনই প্রস্তুত নন। তিনি বলেন, ডাকের ৬-দফা কর্মসূচী আসন্ন নির্বাচনে অংশ গ্রহণের প্রশ্নে বিরোধী দল সমূহের পূর্বশর্ত মাত্র এবং এই ৮-দফার মধ্যে একটি দফা ব্যতীত অপর সব কয়টি দফাই প্রশাসনিক নির্দেশ মারফত বাস্তবায়িত করা চলে।
সরকার যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছেন তাহা তাঁহার মনঃপূত হইয়াছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে শেখ সাহেব বলেন, জনগণের জন্য জনগণ কর্তৃক প্রণীত একটি শাসনতন্ত্রই আমাদের কাম্য। জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার বা অন্যবিধ যে সব টুকটাক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছে তাহা কাহারো দয়ার দান নয়। জরুরী অবস্থার ছত্রছায়ায় কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার ও ক্ষমতাসীন সরকারের আটগাট বাঁধার কাজেই জরুরী ক্ষমতা ব্যবহার করা হইয়াছে।
নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় আওয়ামী লীগ ও অপরাপর দলগুলির মধ্যে সক্রিয় সহযোগিতার কোন সম্ভাবনা আছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব বলেন, কেবল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যই আমরা একত্রিত হইয়াছি এবং যৌথ কর্মসূচীও পেশ করিয়াছি।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯