1971.09.05 | ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references)
৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ আজকের এদিনে
বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতারে এক ভাষণে বলেছেন আসন্ন জাতিসংঘ অধিবেশনের প্রাক্কালে ইয়াহিয়া খান তার অপকর্ম আড়াল করার জন্য একটি পুতুল বেসামরিক শাসন পুনঃ প্রবর্তনের চেষ্টা করছেন। জলে-স্থলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য সাফল্যের বিবরণ দিয়ে বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে ক্ষমতার ভিত্তিতে ভাঙন ধরেছে এবং বাংলাদেশে সামরিক শাসকচক্রের মুষ্টিমেয় নিরাপদ এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে এসেছে। তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, গত জুলাই মাসে এমএনএ ও এমপিএরা তাদের সম্মেলনে তারা শপথ নেন তারা বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। জনপ্রতিনিধিদের হাস্যকর বিচার প্রচেষ্টা এবং তাঁদের বিষয়সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা সত্ত্বেও তাদের সঙ্কল্পের কোন নড়চড় হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের প্রহসনের বিরুদ্ধে অন্যান্য দেশের সরকার, জনগণ এবং আইন বিশেষজ্ঞসহ নানা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় করে তোলার সব ধরনের চেষ্টা করা সত্ত্বেও বর্বর শাসক গোষ্ঠীর ঔদ্ধত্য এর উপর বিশেষ কোন প্রভাব পড়েনি। শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য তাদের কাছে তিনি আবার আবেদন জানান। তিনি বলেন জাতিসংঘ পূর্ব পাকিস্তানে যে ত্রান সহায়তা দিচ্ছে তা বাংলাদেশের মানুশের কাছে না পৌঁছে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জীবন ধারনে ব্যাবহার করা হচ্ছে। [*]
পাকিস্তান সরকারে বলেছে মামলায় অভিযুক্ত এমএনএ, এমপিএ এবং সরকারি কর্মকর্তা ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের ক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষমা প্রযোজ্য হবে না। [**]
৮ নং সেক্টরের বয়রা সাব সেক্টরের একদল মুক্তিযোদ্ধা একটি টহল দলের দায়িত্বে যশোরের ঝিকরগাছার গোয়ালহাটিতে ছিলেন। তাদের মুল বাহিনী ছিল আরও পিছনে। বিকেলের পরপর ১৫০ জনের মতো পাকিস্তানি সেনা ও রেঞ্জারের একটি দল গঙ্গানন্দপুর থেকে গোয়ালহাটির দিকে এগোতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আসা মাত্রই তারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে নিরাপদ অবস্থানে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে নুর মোহাম্মদ শেখ আহত হন এবং পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাক বাহিনী তাকে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে এক জঙ্গলে ফেলে দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। এ আক্রমনে পাক বাহিনীর ২৩ জন নিহত হয় তারা তাদের লাশ ফেলে দিয়ে চলে যায়।
ক্ষমা প্রকাশের পর বন্দী মুক্তি
দেশের ৬টি কারাগার থেকে হাজারের বেশি বন্দিকে সাধারন ক্ষমায় মুক্তি দেয়া হয়েছে। এসকল আটকের প্রায় পুরা অংশই ২৬ মার্চের আগের বন্দী। ২৬ মার্চের পরের বন্দীদের মধ্যে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী এবং পুলিশের কিছু সদস্য আছেন। মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যাক্তিগন তাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেন এবং পাকিস্তানের সংহতি ও কল্যাণের জন্য কাজ করিতে দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করেন। মুক্তিলাভের পর তারা পাকিস্তান জিন্দাবাদ কায়েদে আজম জিন্দাবাদ ধ্বনি ও দেশাত্মবোধক গান গেয়ে জেল থেকে বের হয়ে আসেন। বাকী যারা আছেন তারা আদালতের মাধ্যমে অপরাধ খণ্ডন করে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। [**]
গভর্নর সকাশে হেনরি
পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘের ত্রান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব এ নিয়োজিত জাতিসংঘ সহকারী মহাসচিব পল মার্ক হেনরি গভর্নর এ এম মালিকের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। [**]
পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবী করেছে কুমিল্লার ফরিদগঞ্জের কামালপুরে রাজাকার এবং মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যরা ৩ জন ভারতীয় চরকে হত্যা করেছে। [**]
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় আল বদর বাহিনী প্রচুর অস্র উদ্ধার করেছে। [**]
ভারতে বাংলাদেশ মিশন খোলায় পাকিস্তানের প্রতিবাদ
পাকিস্তান সরকার ভারতের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত এ চিবকে কে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে তলব করে তার দেশে বাংলাদেশ সরকারের মিশন প্রতিষ্ঠার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। প্রতিবাদ লিপিতে পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা খুন্ন করার জন্য ভারত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে প্রকাশ্য যোগসাজসে লিপ্ত রয়েছে ভারত সরকারের এ কাজের মাধ্যমে উহার আরও একটি প্রমান পাওয়া গিয়েছে। একই সাথে পূর্ব পাকিস্তানে বিদ্রোহীদের সাহায্য সহযোগিতা এবং অনুপ্রবেশের মাধ্যমে সশস্র তৎপরতার সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য গভীর উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। ভারতের প্রভাবশালী কর্মকর্তা ডিপি ধরের সাথে বাংলাদেশ সরকারের বৈঠকেও পাকিস্তান সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। [**]
প্রতিরক্ষা দিবসে ইয়াহিয়ার বানী
রাওয়ালপিন্ডিতে প্রতিরক্ষা দিবসের বানীতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এক বানীতে বলেন পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতির জন্য আমরা পুরোপুরি সঙ্গবদ্ধ ও প্রস্তুত রয়েছি। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বাহিরের কোন হস্তক্ষেপ সহ্য করব না। আমরা স্বাধীন গর্বিত ও মর্যাদা পূর্ণ জাতি। পাকিস্তানের সশস্র বাহিনী বিদ্রোহী ও সশস্র অনুপ্রবেশ কারী নির্মূলে যে বেবস্থা নিয়েছে জাতি এ জন্য তাদের প্রতি চীর কৃতজ্ঞ থাকবে। তিনি ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে নিহত শহিদদের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। [**]
অপারেশন ওমেগা
অপারেশন ওমেগার স্বেচ্ছাসেবকেরা এবারও পেট্রাপোল সীমান্ত হয়ে সড়কপথে বাংলাদেশের বেনাপোলে প্রবেশ করেন। ৪০০ মিটার যাওয়ার পর তিনজন পাকিস্তানি সেনা তাঁদের পথরোধ করে। কিছুক্ষণ কথা-কাটাকাটির পর তিন সেনা ফিরে যায়। দলটি আরও এগিয়ে গেলে কয়েকজন পাকিস্তানি এসে দলটিকে ঘিরে ফেলে। ঘণ্টাখানেক বিতর্কের পর সেনারা তাদের সবাইকে ধরে নিয়ে যায়। [*]
নেপাল সফর শেষে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং কাঠমান্ডুতে সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে ভারত অবশ্যই বাংলাদেশ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জাতিসংঘের কোনো সংস্থায় তুলবে। তিনি বলেন দুদেশ শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার জন্য পূর্ব বঙ্গে অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টির পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। [*]
ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী জনজীবন রাম বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর হাতে পাকিস্তানি বাহিনীর দারুণ ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে। পাকিস্তানি বাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে কোনো অপচেষ্টা শুরু করলে তা অঙ্কুরেই শেষ করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া আছে। [*]
মাহমুদ আলী
পিডিপি পূর্ব পাকিস্তান আঞ্চলিক প্রধান মাহমুদ আলী রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। [**]
শান্তি ও কল্যাণ পরিষদ সভাপতি মৌলবি ফরিদ আহমেদ গভর্নর এ এম মালিকের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। [**]
সুত্রঃ [*] ভারতের যুগান্তর ও কালান্তর পত্রিকা।
[**] পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত সকল পত্রিকা ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১।
Prepared by Salah Uddin