1971.09.16 | ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references)
ভারতের সংবাদপত্র গুলো বলেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নীতি নির্ধারক কমিটির চেয়ারম্যান ডিপি ধর মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের সাথেও বৈঠক করেছেন। বৈঠকে জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকার কি কি বক্তব্য তুলে ধরতে পারে সে বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী খন্দকার মুস্তাকের নেতৃত্ব এ গঠিত প্রতিনিধিদলটি দিল্লী হয়ে নিউইয়র্ক যাত্রা করবেন। মিশন টি জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করবেন। দলে পর রাষ্ট্র সচিব মাহ বুবুল আলম চাষি, কূটনীতিক আবুল ফতেহ, ন্যাপ প্রধান মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী থাকবেন। কূটনীতিক আবুল ফতেহ, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক যাবেন। [কালান্তর/আনন্দবাজার ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা কমিটি গঠন
পাকিস্তান সরকারের মুখপাত্র বলেছে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব টিএন কাউল এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈদেশিক নীতি নির্ধারক কমিটি চেয়ারম্যান ডিপি ধর কলকাতায় প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছেন। তারা কলকাতা থেকে ফিরে এ ঘোষণা দিয়েছেন। কমিটিতে আছেন মওলানা ভাসানী, অধ্যাপক মজাফফর আহমেদ মনি সিং, মনোরঞ্জন ধর, তাজউদ্দীন এবং খন্দকার মোস্তাক। [পাকিস্তান/ইত্তেফাক/সংবাদ/অবজারভার ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
বাংলাদেশ কম্যুনিস্ট পার্টি সুত্র জানিয়েছে বাংলাদেশের সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও রাষ্ট্রদূত কমরুদ্দিন আহমেদ এবং সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও সাংস্কৃতিক বেক্তিত্ত সরদার ফজলুল করিম ঢাকায় পাক বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। [কালান্তর/আনন্দবাজার ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ ভারতের কোন এক স্থান থেকে বিবৃতিতে ঐতিহাসিক শিক্ষা দিবসে ঐক্যবদ্ধভাবে পাকিস্তানী শত্রুদের মোকাবেলা করে শহীদদের আত্মার প্রতি সন্মান জানানোর জন্য বাংলাদেশের জনগনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম জোরদার করার উদ্দেশ্যে ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দল ও গণসংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য পাঁচটি দলের প্রতিনিধি সমন্বয়ে পরামর্শক কমিটি গঠনকে তিনি স্বাগত জানান। [কালান্তর/আনন্দবাজার ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
কুয়ালালামপুরের পাকিস্তান হাই কমিশন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি ইউনিয়নে বেআইনিভাবে পূর্ব পাকিস্তান ইস্যুতে কথা বলার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন যেহেতু বিষয়টি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় তাই এ বিষয়ে কথা বলার কোন অধিকার সদস্য রাষ্ট্রদের নেই। অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য তামিলনাড়ু বিধানসভার স্পিকার কে এ মথিয়ানগন বলেন, বাংলাদেশের নিরীহ লোকদের হত্যা বন্ধ করার জন্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশ এবং অন্যান্য সংস্থার সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া দরকার। [কালান্তর/আনন্দবাজার ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
পাকিস্তান বলেছে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে অনেক দেশই পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বক্তব্য প্রদান করেছে। দেশ গুলি হল কঙ্গো, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও মরিশাস। [পাকিস্তান ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১] সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য এস এস গুরুপদস্বামী তাঁর এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হবে কি না, সম্মেলনের প্রতিনিধিরাই তা ঠিক করবেন। [ইত্তেফাক /সংগ্রাম ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে জেনারেল নিয়াজী
লেঃ জেনারেল নিয়াজী চট্টগ্রাম এলাকা সফরে স্থানীয় রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন তাদের সাথে মত বিনিময় এবং শান্তি কমিটির নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফেরত আনা এবং দেশ পুনর্গঠন কাজে লাগানোর জন্য রাজাকার ও শান্তি কমিটির নেতাকর্মীদের উপদেশ প্রদান করেন। তিনি বলেন তারা যদি সত্যিকারের দেশ প্রেমিকের ন্যায় জীবন যাপন শুরু করে তবে তারা হবে দেশের জাতীয় সম্পদ। তিনি বাছাই করে সমুলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নির্মূল করার আহবান জানান যাতে শান্তি প্রিয় নাগরিকের কোন অসুবিধা না হয়। তিনি নাগরিকদের ইসলামী রীতি নীতি কঠোর ভাবে অনুসরনের আহবান জানান। তিনি বলেন যখনি আমরা ইসলামী রীতি নীতি অবজ্ঞা করেছি তখনি আমরা অন্য এর পদানত হয়েছি। পরে তিনি রাঙ্গামাটি সফর করেন। সেখানে তাকে চাকমা প্রধান ও নির্বাচিত এম.এন.এ রাজা ত্রিদিব রায় অভ্যর্থনা জানান। নিয়াজি সেখানে শান্তি কমিটি আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন। পরে তিনি স্থানীয় ব্রিগেড দপ্তরে যান সেখানে উপস্থিত রাজাকার, এপকাফ ও সাধারন সৈন্যদের সাথে মতবিনিময় করেন। এখানে তিনি বলেন বর্তমান সৈন্য দ্বারাই বিদ্রোহীদের নির্মূল করতে খুব বেশী সময় লাগার কথা নয়। সফরকালে স্থানীয় জিওসি নিয়াজির সাথে ছিলেন। [ইত্তেফাক / সংগ্রাম ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
ইয়াহিয়ার আমন্ত্রনে নুরুল আমীনের পশ্চিম পাকিস্তান গমন
পিডিপি প্রধান নূরুল আমিন পিটিআই প্রতিনিধিকে জানান, তিনি প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে পশ্চিম পাকিস্তান যাচ্ছেন। তিনি এ আলোচনায় দুষ্কৃতকারীদের অত্যাচারে এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যে আরও অর্থ বরাদ্দের দাবি করবেন বলে জানান। তাহার সহিত একই বিমানে পিডিপি নেতা মাহমুদ আলী করাচী যাচ্ছেন। মাহমুদ আলী সেখান থেকে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিবেন। [পাকিস্তান/ইত্তেফাক/সংবাদ/অবজারভার ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
সারদা, চট্টগ্রাম, ভালুকায় মুক্তিবাহিনীর হামলা
৭নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী মর্টারের সাহায্যে সারদায় পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর সৈন্য ও রাজাকার ৩০ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়। চট্টগ্রামের কেসি দত্ত রোডে মুক্তিবাহিনী গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে তিনজন আহত হয়। পাকিস্তান সরকারের দাবী মতে কয়েকজনকে আটক করা হয়। ময়মনসিংহ এর ভালুকার উথুরায় রাজাকারদের সমর্থন করায় মুক্তিবাহিনীর একটি দল গ্রামের এক বাড়িতে হামলা করে দুইজনকে হত্যা করে। [পাকিস্তান/ইত্তেফাক/সংবাদ/অবজারভার ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
সিলেটে নিজামী
সিলেট শহরে জালালাবাদ ছাত্র সমিতি এবং ইসলামী ছাত্রসঙ্ঘের যৌথ ভাবে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রায় হাজার খানেক লোক উপস্থিত হয়। সমাবেশে ইসলামী ছাত্রসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী ভাষণ দেন। নিজামী তার ভাষণে ভারতের কঠোর সমালোচনা করে বলেন পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়। পাকিস্তান রক্ষায় এখন প্রয়োজন ইসলামী শিক্ষা ব্যাবস্থা এবং ইসলামী সংবিধান। [সংগ্রাম ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
গভর্নর সকাশে বৌদ্ধ প্রতিনিধিদল
পাকিস্তান বৌদ্ধ কৃষ্টি সংঘের প্রধান বিশুধানন্দ মহাথেরো এবং অপর চার সদস্য গভর্নর এ এম মালিকের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। অপর সদস্যরা হলেন বিশ্বেশ্বর চৌধুরী, মনদা রঞ্জন বড়ুয়া ও সুদাত্ত বড়ুয়া। প্রতিনিধিদল বৌদ্ধদের সমস্যা এবং মন্ত্রীসভায় একজন বৌদ্ধ প্রতিনিধি রাখার ব্যাপারে গভর্নরের সাথে আলাপ করেছেন। [সংগ্রাম ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]
Prepared by Salah Uddin