You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.04.07 | বাংলার বাণী সম্পাদকীয় | এ যাত্রা শুভ হোক | বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস | ‘গাধা পানি খায় তবে-’ | শেখ মণি - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার বাণী
ঢাকা: ৭ এপ্রিল শনিবার, ২৪শে চৈত্র, ১৩৭৯

এ যাত্রা শুভ হোক

আজ নতুন জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হচ্ছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত জাতীয় সংসদের অধিবেশন থেকেই শুরু হবে জাতির নবযাত্রা। সোনার বাংলা গড়ার সুমহান প্রত্যয় সামনে রেখে নতুন জাতীয় সংসদ আজকের অধিবেশনে শপথ গ্রহণ করবে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এই অধিবেশনেই স্পিকার নির্বাচিত হবেন। সর্বোপরি অধিবেশনে ভাষণ দেবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। আজকের প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত হবার পর একদিনের জন্যেও অধিবেশন মুলতবি থাকবে। আগামী ৯ তারিখে তা আবার বসবে। জাতীয় সংসদের অধিবেশনের মাধ্যমেই শুরু হবে দেশে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের জয়যাত্রা। নানা প্রতিবন্ধকতায় নিমজ্জিত দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সংসদ তার কার্যতৎপরতা চালিয়ে যাবে। দেশের প্রতিটি বিষয়ের উপর সংসদ সদস্যগণ তাদের সুচিন্তিত অভিমত পোষণ করে আইন প্রণয়ন করবেন। অগ্রযাত্রার পথে সংসদ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। নবগঠিত দেশের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মনে দেশপ্রেমের যে নিদর্শন রয়েছে তার সার্বিক বহিঃপ্রকাশ ঘটবে তাদের কর্ম চাঞ্চল্যে। দেশ আজ নতুন দিকে অগ্রসরমান। লক্ষ রয়েছে সমাজতন্ত্রের উত্তরণ। পথ আমাদের পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের। এছাড়া রয়েছে দেশে বহুবিধ সমস্যা ও কলুষ প্রশাসনযন্ত্র। এ সকল প্রতিকূলতাকে উত্তরণ করে জাতিকে এগিয়ে যেতে হবে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যপথে। জাতীয় সংসদের এই উদ্বোধনী অধিবেশন বলে প্রত্যেক সংসদ সদস্যকেই একবার মনে রাখতে হবে-জাতি কত বড় মহান দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করেছে। শপথ বাক্য পাঠের মাঝেও স্মরণ করতে হবে তাদের সোনার বাংলা গড়ার নির্বাচনী ওয়াদার কথা।
জাতীয় সংসদের শুভ উদ্বোধনী অধিবেশনকে সামনে রেখে আমরা সকল সদস্যের পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেবো তাদের ঐতিহ্যবাহী সংগ্রামের ইতিহাসের কথা। বঙ্গবন্ধুর বিশাল জনপ্রিয়তার ছত্রছায়ায় নির্বাচন বৈতরণী পার হওয়ার কথা। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সংসদ সদস্যদের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেই চলব তারা যেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের সংগ্রামে সঠিকভাবে আত্মনিয়োগ করেন। যেকোন মূল্যেই হোক না কেন জাতির কল্যাণের জন্যে, বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি চিরস্থায়ী করার নিমিত্তে সকল সদস্যকে উৎসর্গিত প্রাণ হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালে থেকেই আমরা গোটা জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ঘোষণা করছি আমাদের যাত্রা শুভ হোক, আমরা আমাদের লক্ষ্যস্থলে পৌঁছানোর সকল সংগ্রামে যেন জয়ী হতে পারি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৫ তম বার্ষিকী। সারা বিশ্বব্যাপী আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মূল স্লোগান হচ্ছে বাড়ীতেই স্বাস্থ্যের জন্ম। প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। ডাক টিকিট-প্রকাশিত হয় স্বাস্থ্যের গুনকীর্তন করে রাস্তায় রাস্তায় প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং সংবাদপত্রের পাতায় স্বাস্থ্য উপকারিতা ও স্বাস্থ্যহীনতার অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মহল নানা আলোচনা করেন। আমরা নিজেরাও জানি যে, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কি স্বাস্থ্য রক্ষার প্রতি যত্নবান? কিংবা স্বাস্থ্যকে সুস্থ সবল ও অটুট রাখার জন্য সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যায়? বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনসাধারণকে স্বাস্থ্য নামক অমূল্য সম্পদটির প্রতি আরো বেশি আগ্রহী করে তোলার জন্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিরবিচ্ছিন্ন প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রয়াস এর প্রতি যথাযথ ভাবে সাড়া দেয়ার জন্য তাই প্রতিটি নাগরিককে সচেতনতার পরিচয় দেয়া বাঞ্ছনীয়।
বাংলাদেশের জনসাধারণের দিকে যদি আমরা দৃষ্টি ফেরায় তাহলে দেখতে পাব যে রোগ-শোক-জরা এবং আমাদের বেশিরভাগ মানুষের জীবনকে অভিশাপ্ত করে তুলেছে। অন্যান্য সমস্যার মত স্বাস্থ্য সমস্যা আমাদের নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনকে অতিশয় বিশময় করে তুলেছে। দেহ ও মনের প্রশান্তির না থাকলে আমরা জাতি হিসেবে দিন দিন নির্জীব হয়ে যাব এবং আমাদের কর্মক্ষমতাও ক্রমাগত অবলুপ্ত হতে থাকবে। তাছাড়া যেসব শিশুরা ভবিষ্যতে জাতির নেতৃত্ব দান করবে এবং দেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত করবে, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশই জরাজীর্ণতা ও অকাল ব্যাধির কবলে মৃত্যুমুখে পতিত হয় ,নয়তো জীবনের সঙ্গে ধু্ঁকেধুঁকে বেঁচে থাকে। যদিও এরকম ভাবে বেঁচে থাকা মৃত্যুরই নামান্তর, তবুও এরাই একদিন জাতির কর্ণধার হিসেবে আবির্ভূত হবে। তখন কি এরা নিজেদের জীবন টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে, না দেশকে সমৃদ্ধ করার কাজে আত্মনিয়োগ করবে? আমরা জানি স্বাস্থ্য এমন একটি জিনিস, যাকে হারালে কোন কাজই সার্থকতা লাভ করতে পারেনা। এমতাবস্থায় আমাদের নিজ নিজ স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং পরিবারের প্রধান দের নিজ নিজ সন্তান-সন্ততিদের স্বাস্থ্যের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে।
স্বাস্থ্য মানব জীবনের এক পরম সম্পদ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও স্বাস্থ্যই আনন্দ জল পরমায়ুর উৎস বলে উল্লেখ করেছেন। শুধু বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে স্বাস্থ্যরক্ষা নিয়ে চিন্তাভাবনা করাটাই যথেষ্ট নয় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে স্বাস্থ্যকে সজীব রাখার জন্য এবং স্বাস্থ্যহীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য যত্নবান হওয়া দরকার। পুষ্টিকর খাদ্য এবং খাদ্যপ্রাণ যুক্ত খাবার তালিকা প্রস্তুত করা একান্ত বাঞ্ছনীয়। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান। অতএব, তরিতরকারি, শাকসবজি ইত্যাদি দিয়েই আমাদের স্বাস্থ্যকে সবল রাখার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। স্বাস্থ্যকে জীবনের অন্যতম প্রধান সম্পদ হিসেবে গণ্য না করলে শুধু বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালনের মধ্যেই স্বাস্থবান জাতি গড়ে উঠবে না।

‘গাধা পানি খায় তবে-’

প্রচলিত গল্পে বর্ণিত আছে যে, গাধা যখন পানি খায়, তখন ঘোলা করেই খায়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর অবস্থাও হয়েছে তথৈবচ। প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেছে, অবশেষে প্রেসিডেন্ট ভুট্টো পাকিস্তানের বিরোধী দলীয় সংযুক্ত গণতান্ত্রিক শিবিরকে স্বীকার করেছেন। এবং জনাব ভুট্টো সাহেব শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছেন। ইতিপূর্বে জনাব ভুট্টো জমিয়েতুল উলুমাই পাকিস্তানের নেতা মাওলানা আহমদ শাহ নুরানীকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন যে, তার বিরুদ্ধে প্রদত্ত বিবৃতি প্রত্যাহার না করলে তিনি বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে কোনো রকম আলাপ আলোচনা করবেন না। এবং ভুট্টো সাহেব জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক বেতার ভাষণে হম্বিতম্বি করে বলেছিলেন যে, তিনি সংযুক্ত গণতান্ত্রিক শিবিরকে স্বীকার করবেন না। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে জনাব ভুট্টো তার সংকল্পে অটল থাকতে পারলেন না।
আমরা বরাবর লক্ষ্য করছি যে, ভুট্টো সাহেব মুখে যা বলেন, কাজে তা করে না। এক্ষেত্রেও জনাব ভুট্টো চরিত্রগত কোন পরিবর্তন হয়নি। তিনি যা ‘না’ করেছেন, তাই শেষ পর্যন্ত ‘হ্যাঁ’ করেছেন। এতে আমরা কিছুমাত্র অবাক বা বিস্মিত হইনি। কারণ আমরা ভুট্টো সাহেব কে হারে হারে চিনি।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চে বিরোধীদলকে অপাংতের করে রাখার জন্য সরকার চেষ্টার কার্পণ্য করেননি। কিন্তু তিনি হালে পানি পাচ্ছেন না। ফলে বিরোধীদলীয় নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু তবুও ভুট্টো সাহেব বড় বড় বুলি কপচানোটা ছড়াতে পারেননি। আসলে এটা তার মজ্জাগত হয়ে গেছে। জনাব ভুট্টো কখন যে কি বলেন আর কখন যে কি করেন, নিজেও ভেবে দেখার অবকাশ পান না। সেজন্যেই শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে বিরোধীদলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে ইচ্ছে করে, ‘সেই তো নথ খুললি তবে কেন লোক হাসালি।’

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন