You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.02.25 | লাহোর ও চাকলালা বিমান বন্দরে নেতৃসম্বর্ধনার নয়নাভিরাম দৃশ্য : উল্লসিত জনতার চাপে শেখ মুজিবের ভিন্নপথে নিষ্ক্রমণ | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
২৫শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
লাহোর ও চাকলালা বিমান বন্দরে নেতৃসম্বর্ধনার নয়নাভিরাম দৃশ্য :
উল্লসিত জনতার চাপে শেখ মুজিবের ভিন্নপথে নিষ্ক্রমণ

রাওয়ালপিণ্ডি, ২৪শে ফেব্রুয়ারি- আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান আজ সন্ধ্যায় লাহোর হইতে এখানে আসিয়া পৌঁছিয়াছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা বিমান বন্দরের বিরাট জনতার ভিড় এড়াইবার জন্য পাইলটের দরজা দিয়া বাহির হইয়া একখানা মোটরে চড়িয়া চলিয়া যাওয়ায় তাহাকে খোশ আমদেদ জ্ঞাপনের জন্য বিমান বন্দরে সমাগত জনতাকে হতাশ হইয়া ফিরিতে হয়।
রাত্রি ৮-১০ মিনিটের সময় বিমানবন্দরে অবতরণ করিলে ‘পিণ্ডি-ঢাকা এক’ ধ্বনিরত বিরাট জনতা বিমানখানা ঘিরিয়া ফেলে। ফলে গ্যাংওয়ে বন্ধ হইয়া যায়। বিমান হইতে অবতরণের জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রায় ৪০ মিনিট জনতার সহিত লুকোচুরি খেলিতে হয়।
শেখ মুজিবর রহমানকে পথ করিয়া দেওয়ার জন্য তাঁহার নিজের এবং মালিক গোলাম জিলানীর পুনঃ পুনঃ আবেদন নিবেদনও ব্যর্থ হইয়া যায়।
দুইজন স্থানীয় ছাত্র নেতা শেখ আব্দুর রশীদ ও হিশামুল্লাহ শেখ মুজিবর রহমানকে পথ করিয়া দেওয়ার জন্য জনসমুদ্রের প্রতি বার বার আবেদন জানান। কিন্তু তাহাতে কোন কাজ হয় না।
অবশেষে নেতৃবৃন্দ বাধ্য হইয়া পাইলটের ককপিটের কাছে একখানা গাড়ী প্রেরণ করেন এবং শেখ সাহেব উহাতে উঠিয়া সোজা পূর্ব পাকিস্তান হাউজে চলিয়া যান। তিনি সেখানে অবস্থান করিতেছেন।
শেখ মুজিবর রহমানকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপনের জন্য যাহারা চাকলালা বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন তাহাদের মধ্যে নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান, মিয়া মমতাজ দৌলতানা, সর্দার শওকত হায়াত খান ও মুফতি মাহমুদের নাম উল্লেখযোগ্য।

লাহোরে সম্বর্ধনা
সকালে সদ্য কারামুক্ত আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রাণঢালা সম্বর্ধনা জ্ঞাপনের জন্য লাহোর বিমান বন্দরে এক অভূতপূর্ব জনসমাবেশ ঘটে।
শেখ মুজিবর রহমানকে লইয়া আগত বিমানখানা দৃষ্টিগোচর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য কণ্ঠে জিন্দাবাদ ধ্বনি দ্বারা জনতা তাঁহাকে অভ্যর্থনা জানায়।
বিমানবন্দরে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে এয়ার মার্শাল আসগর খান, লেঃ জেনারেল আজম খান, মিয়া মাহমুদ আলি আসুরী, মালিক গোলাম জিলানী ও জনাব রহীমের নাম উল্লেখযোগ্য। বিমান বন্দরে উপস্থিত বিরাট জনতা সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গাইয়া বিমান বন্দর ছাইয়া ফেলে। ফলে বিমানের পার্কিং বে-তে অবতরণ দুঃসাধ্য হইয়া পড়ে। শেষ পর্যন্ত বিমানখানা টেক্সীওয়েতে অবতরণ করে।
এই পর্যায়ে জনাব ভুট্টো বিমান হইতে মাথা বাহির করিয়া জনতাকে সরিয়া যাইতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাহার কথায় কর্ণপাত না করিয়া বরং তাহাকে বিমান হতে অবতরণ করিতে বাধ্য করে। অতঃপর তাহাকে একখানা ট্রাকে তুলিয়া দলীয় কর্মিগণ শোভাযাত্রা সহকারে বিমান বন্দর ভবনের বাহিরে লইয়া যায়।
অনুরূপভাবে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমানকেও বিমান হইতে নামাইয়া শোভাযাত্রা সহকারে নিয়া যাওয়া হয়। বিমান হইতে অবতরণের পর তাহাকে একে একে মাল্য ভূষিত করেন এয়ার মার্শাল আসগর খান, বিচারপতি মোর্শেদ ও জেনারেল আজম।
বিমানবন্দর হইতে জাতীয় বীরকে বিরাট এক শোভাযাত্রা সহকারে আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম জিলানীর গুলবাগস্থ বাসভবনে লইয়া যাওয়া হয়। প্রেসিডেণ্ট হইতে চাহি না
আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান লাহোর বিমান বন্দরে নীতিগতভাবে অত্যন্ত দৃঢ়তার সহিত তাহার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন যে, পার্লামেন্টারী পদ্ধতির সরকারই তাহার দলের দাবী এবং তাহারা প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার পছন্দ করেন না। এমতাবস্থায় তাহার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না।
কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টে তিনি জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের যে দাবী উত্থাপন করিয়াছেন তৎসম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হইলে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন যে, ব্যাপারটা খুবই পরিষ্কার এবং তিনি গতকাল ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে যাহা কিছু বলিয়াছেন তাহাতে তিনি অটল। তবে তিনি ব্যাপারটা কোন সম্মেলন টেবিলে উত্থাপনের পূর্বে ডাক নেতৃবৃন্দ ও দল নিরপেক্ষ নেতৃবৃন্দের সহিত আলোচনা করিবেন বলিয়া জানান।

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯