You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.25 | বাঙলাদেশের জনগণের গ্রহণযােগ্য রাজনৈতিক সমাধানের পথ জাতিসঙ্ঘে বাতলাতে হবে- জাতিসঙ্ঘ দিবসে শরণ সিং-এর আহ্বান | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশের জনগণের গ্রহণযােগ্য রাজনৈতিক সমাধানের পথ জাতিসঙ্ঘে বাতলাতে হবে
জাতিসঙ্ঘ দিবসে শরণ সিং-এর আহ্বান

নয়াদিল্লী, ২৪ অক্টোবর (ইউ এন আই)-আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীশরণ সিং জাতিসঙ্রে কাছে এই দাবি করেন যে, পাকিস্তান সরকার যাতে তার নির্যাতনের নীতি বদল করে ও বাঙলাদেশের জনগণের গ্রহণযােগ্য এক রাজনৈতিক সমাধানে আসে, তা তাঁদের দেখা উচিত।
আজ এখানে জাতিসঙ্ঘ দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাঙলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে গ্রহণযােগ্য এক রাজনৈতিক সমাধানে উপনীত হওয়া অতীব জরুরী, যাতে শরণার্থীরা দেশে ফিরে যেতে পারেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানকে দায়ী করে বলেন যে, ভারত সীমান্ত বরাবর প্ররােচনামূলক কার্যকলাপ ও বিরাট সৈন্য সমাবেশ করে তারা তাদের বিশ্ববিবেক কাঁপানাে পূর্ববাঙলার অভূতপূর্ব গণহত্যার অপরাধ” ঢাকবার চেষ্টা করছে।
শ্রীশরণ সিং বক্তৃতা প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক বহু প্রশ্নের আলােচনা করেন। তিনি জাতিসজ্ঞে জনগণতান্ত্রিক চীনের আসনলাভের পক্ষে জোরের সঙ্গে বলেন। তিনি বলেন যে, জনগণতান্ত্রিক চীনের অবিলম্বে জাতিসঙ্ঘে আসন পাওয়া দরকার। এতে জাতিসঙ্রে লক্ষ্য অর্জনেই সহায়তা হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি বিভক্ত জাতিগুলির যেমন দুই জার্মান, দুই কোরিয়া, ভিয়েতনাম প্রভৃতি জাতিসঙ্ঘে আসনের পক্ষে বলেন।
শ্রীশরণ সিং বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তান অসফলভাবে হলে তার আক্রমণাত্মক মনােভাব ও ভারত-সীমান্ত বরাবর সেনাবাহিনী সজ্জিত করে এক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে, যাতে পূর্ববাঙলার মমান্তিক ঘটনাবলীর দায়িত্ব থেকে সে বিশেষ দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে পারে “অবশ্য আমরা সকলেই জানি পূর্ববাঙলার সমস্যা এক রাজনৈতিক সমস্যা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, ভারত আন্তর্জাতিক পরিবারের পক্ষ থেকে বাঙলাদেশ শরণার্থীদের দেখাশুনা করছে এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত বাঙলায় শান্তি পুনঃ প্রতিষ্ঠা হয় তারা সসম্মানে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার মধ্যে দেশে ফিরে যেতে পারেন, ভারত যতদিন এ কর্তব্য করে যাবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলিতে জাতিসঙ্ঘের চমৎকার সাফল্য হলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্র সম্পর্কে তা বলা যায় না।
বিশ্ব উত্তেজনা প্রশমনে জাতিসঙ্ঘের কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, অনেকগুলি ক্ষেত্রে এতে সাফল্য দেখালেও এখনও বহু জরুরী সমস্যা সমাধানের আশায় পড়ে রয়েছে। বিশ্বের বহু স্থানে সংখ্যালঘু সরকার গুলি দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে, আফ্রিকায় বহু দেশে জনসাধারণের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করা অব্যাহত রয়েছে।
ইউরােপের প্রসঙ্গে তিনি সদ্য সম্পাদিত পােলিশ, পশ্চিম জার্মানী ও বার্লিন সম্পর্কে চতুর্শক্তি শক্তির চুক্তির প্রশংসা করেন, ইন্দোচীন সমস্যার সমাধানের জন্য তিনি অবিলম্বে সমস্ত বিদেশী শক্তির সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন, জাতিসঙ্রে উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রতিনিধি মিঃ জন ম্যাকডিয়ারামিড। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সমাজের গভীর উদ্বেগের বিষয় উল্লেখ করে ভারতে আগত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের সেবায় ভারত সরকারের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন যে সমস্যার তুলনায় শরণার্থীদের ত্রাণকার্যে আন্তর্জাতিক সাহায্যের পরিমাণ খুবই কম। এখন ক্রমেই সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধির যথাসাধ্য প্রয়াস করা হচ্ছে।
কলকাতায় আলােচনা সভা
আজ সন্ধ্যায় কলকাতা তথ্য কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে এক আলােচনা সভায় জাতিসংঘ দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। সভার উদ্বোধন ও সভাপতিত্ব করেন ইন্ডিয়ান ইনৃস্টিট্ট’এর ডিরেক্টর শ্রী এম কৃষ্ণমূর্তি। | শ্রী কৃষ্ণমূর্তি চীনকে রাষ্ট্রসংঘ গ্রহণ ও নিরাপত্তা পরিষদে এশিয়ার দেশগুলির প্রতিনিধিত্বসহ ছ’টি প্রস্তাব সভায় আলােচনার জন্য উপস্থিত করেন।
সর্বশ্রী এল আর হরিয়াল, পি চ্যাটার্জি ও আই বি ভট্টাচার্য আলােচনায় অংশ গ্রহণ করে ঔপনিবেশিকতা ও জাতি বৈষম্য দূরীকরণে রাষ্ট্র সংঘের ব্যর্থতার সমালােচনা করেন। বিশেষভাবে তাঁরা বাঙলাদেশ প্রশ্নে রাষ্ট্রসংঘের নীরবতার তীব্র সমালােচনা করেন।

সূত্র: কালান্তর, ২৫.১০.১৯৭১