ডেইলি টেলিগ্রাফ, ৩ নভেম্বর, ১৯৭১
পূর্ব পাকিস্তানে গেরিলার রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ করছে
-ঢাকায থেকে ক্লেয়ার হলিংওর্থ
চল্লিশ হাজার বাংলাদেশ গেরিলা এখন পূর্ব পাকিস্তানের অপারেশন চালাচ্ছে। তারা পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে নাজেগাল করছে। ভারত সীমান্তের ১৩০০ মাইল বিস্তৃত এলাকায় তারা অবস্থান করছে।
সেখানে প্রতিদিন প্রায় ২০ জন মিলিটারি হতাহত হচ্ছে। এর কারণ শহরে মুক্তিফৌজ ও গেরিলাদের আক্রমণ বেড়েছে। তারা এখন তাদের শক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাদের সাথে স্থানীয় লোকদের সাপোর্ট আছে।
সেদিন চট্টগ্রাম মার্কেটে বিকেলে বন্দুকযুদ্ধে ২ জন পাকসেনা, ১ জন পাক পুলিশ ও ১ জন গেরিলা নিহত হয়।
মার্চের পর মার্শাল ল জারি করার পর থেকে দিনের বেলায় এটাই প্রথম পথের উপর যুদ্ধ।
পুরনো ঢাকায় অনেকক্ষণ ধরে গুলি বিনিময় চলেছে। প্রতি রাতে ৩/৪ টা বিস্ফোরণ ঘটছে। সকালে কিছু সনাক্তবিহীন লাশ পাওয়া যাচ্ছে।
সমর্থনের জোয়ার
এক পাকিস্তান আর্মি অফিসার আমাকে বললেন: “গত দুই মাসে মুক্তিফৌজদের প্রতি সাধারণ মানুষের সাপোর্ট জোয়ারের মত বেড়েছে।”
এটা সেনাবাহিনীকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। গ্রাম অঞ্চলের এলাকায় অল্প লোক দিয়ে এলাকা দখল করে রেখেছে – বিশেষ করে মেইন রাস্তা থেকে দূরের এলাকাগুলো। গেরিলারা সেগুলোকে ‘মুক্তঅঞ্চল’ ঘোষনা দিয়েছে। শুধু রাতেই নয় এখন দিনের বেলাতেও তাদের দখল বজায় আছে।
ঢাকায় গতকাল দুটি বোমা দিয়ে একটি গ্যারেজ এবং একটি পেট্রল স্টেশন ধ্বংস করা হয়। রবিবার রাতে শহরের কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন বিল্ডিং উড়িয়ে দেয়া হয়। কয়েক রাত আগে গেরিলারা টেলিভিশন স্টুডিও বিল্ডিং ধ্বংস করে।
ব্যাংক ডাকাতি আরও বেড়ে গেছে কারণ তিন গ্রুপ গেরিলাদের খাবার ও অন্যান্য খরচ বাবদ অর্থের প্রয়োজন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরে চাহিদা বেশী।
স্কুল ধ্বংস করা হচ্ছে। অনেক অভিভাবক তাদের বাচ্চাদের এখন বাড়ীতেই রাখছেন।
ক্রমবর্ধমান স্পর্ধা
কর্তৃপক্ষ স্থানীয় অধিবাসীদের উপর “শাস্তিমূলক কর” চালু করতে চাচ্ছেন। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দারা হয়ত গেরিলাদের দমাতে চেষ্টা করতে পারে অথবা গেরিলাদের থেকে ক্ষতিপূরণ নিতে পারে।
তবে এটা বর্তমান হারে মুক্তিফৌজদের থেকে আদায় সম্ভব নয়। গত সপ্তাহে এক হাজার গেরিলা বরিশালের বন্দরের কাছে একটি সম্মেলন করেছে। স্বাধীনতার পতাকা নিয়ে আর্মি পোস্টের থেকে মাত্র ৩ মাইল দূরে তারা অবস্থান করছিল।