হাজার হাজার শরণার্থী বনগাঁয় উপনীত মাথা গোঁজবার কোন ঠাই নেই : অবিলম্বে আচ্ছাদনের ব্যবস্থা চাই
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ১২ জুলাই— ওপার বাঙলার বরিশাল ও ফরিদপুর জেলা থেকে হাজার হাজার শরণার্থী বনগাঁয় এসে পৌঁছেছেন। কিন্তু তাদের আশ্রয়ের কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় আজ তাঁরা সারাদিন অবিশ্রাম বৃষ্টিতে অসহায়ভাবে ভিজেছেন।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিষদের সম্পাদক শ্রীগােপাল বন্দোপাধ্যায় আজ বনগাঁয় শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে কলকাতায় ফিরে এসে বলেন, শিশু-নারী-বৃদ্ধ নির্বিশেষে শরণার্থীরা যেভাবে দাঁড়িয়ে ভিজছেন, তাতে আশঙ্কা হচ্ছে, এঁদের অনেকেই শুধু জলে ঠাণ্ডায় মারা যাবেন।
এই নবাগত শরণার্থীদের মধ্যে যারা কোনওক্রমে মাঠের মধ্যেই রান্নার ব্যবস্থা করেছিলন, প্রচণ্ড বৃষ্টির ফলে সেই সব উনুনও নিভে গিয়েছে। মাথার উপরে বিনা আচ্ছাদনে, অনাহারে অর্ধাহারে এই সব হাজার হাজার শরণার্থীকে দিন কাটাতে হচ্ছে।
শরণার্থীদের চাপে স্থানীয় প্রশাসনও এখন বিপর্যস্ত। অফিসাররা বলেছেন, এখন তাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। কমিউনিস্ট কর্মীরা শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য প্রাণপণ পরিশ্রম করেছেন, কিন্তু তারাও হিমসিম খেয়ে যাচ্ছেন— এই বিপুল সমস্যার মােকাবিলা করা সরকারী উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব নয়।
শ্ৰীবন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এক কথায় এই মুহুর্তে বনগাঁয় শরণার্থীদের ব্যাপারে একটা চরম অব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে। অবিলম্বে শরণার্থীদের রান্না করা আহার্য ও মাথার উপরে অন্ততঃ আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করা দরকার।
বক্তৃতা মঞ্চের তলা দখল করার জন্য কাড়াকাড়ি
বর্ষায় কাক-ভেজা শরণার্থীরা মাথা গুজবার একটু জায়গার জন্য দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
আজ বনগাঁয় কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে একটি জনসভা আহত হয়েছিল। জনসভা উপলক্ষে নির্মিত মঞ্চে তলাটাই বৃষ্টির হাত থেকে মঞ্চ বাঁচাবার জায়গা হয়ে উঠেছে। বস্তুত মঞ্চ নির্মিত হবার পরেই তার তলায় আগে কে গিয়ে স্থান নেবে সেজন্য শরণার্থীদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়।
সূত্র: কালান্তর, ১২.৭.১৯৭১