দৈনিক ইত্তেফাক
২৫শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
ঢাকা ত্যাগকালে মুজিব : দল গঠনের স্বাধীনতা বিধান করিতে হইবে
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
শেখ মুজিবর রহমান তাঁর দলীয় নয়জন প্রতিনিধি সমভিব্যহারে গতকাল (সোমবার) লাহোরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগকালে ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, দল সংগঠনের স্বাধীনতা এমনকি কম্যুনিষ্ট পার্টি সংগঠনের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
‘পিণ্ডির উদ্দেশ্যে লাহোর যাত্রার প্রাক্কালে শেখ মুজিব তেজগাঁও বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করিতেছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব বলেন যে, লাহোরে তিনি নির্দলীয় বিশিষ্ট নেতা এয়ার মার্শাল আজগর খান, জেনারেল মোহাম্মদ আজম খান, বিচারপতি জনাব এস, এম, মোর্শেদ, জনাব ভুট্টো এবং তার ব্যক্তিগত বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করিবেন। তারপর তিনি ‘পিণ্ডি গমন করিবেন এবং সেখানে ডাক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করিবেন।
সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, লাহোরে তিনি কয়দিন থাকিবেন তা নির্ভর করিতেছে সেখানকার আলাপ আলোচনার উপর। লাহোরে আলোচনা শীঘ্র সম্পন্ন হইলে তিনি শীঘ্র পিণ্ডি গমন করিবেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ সাহেব বলেন যে, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের স্বাধীনভাবে তাদের কর্মসূচী প্রচারের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা উচিত—এমনকি কম্যুনিষ্ট পার্টিকেও স্বাধীনভাবে কাজ করার স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষপাতী।
পররাষ্ট্রনীতি ও শাসনতন্ত্র সম্পর্কে তিনি এই পর্যায়ে সরাসরি কোনরূপ আলোচনায় যাইতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন যে, কিছু একটা ঘটিতে পারে এই অনুমানের উপর নির্ভর করিয়া আলোচনা করা এই পর্যায়ে সমীচীন নয়।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, গত দশ বৎসরে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্বাভাবিক ফলশ্রুতি হিসাবে দেশব্যাপী সহস্র শ্রেণীর সমস্যা সৃষ্টি হইয়াছে। সমস্যা যে কত ব্যাপক তার পরিধি নির্ণয় করাই আজ দুরূহ ব্যাপার হইয়া দেখা দিয়াছে। এইসব সমস্যাকে দেশবাসীর আশা-আকাংখার প্রেক্ষিতে সমাধান করাই আজ আমাদের দায়িত্ব।
ডাকের ৮-দফা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, ডাকের ৮-দফা কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী নয়, ইহা বিশেষ একটা পরিস্থিতিতে প্রদত্ত পূর্বশর্ত মাত্র এবং আমাদের বিরোধীপক্ষের সঙ্গে আলোচনার সূত্রপাতের ন্যূনতম একটা ভিত্তি মাত্র।
জনৈক সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব বলেন যে, ১১- দফার তিনি শুধু সমর্থকই নন, তাঁর দলের ছয় দফা ছাত্ররা তাদের সংগ্রামী ১১-দফায় স্থান দিয়াছেন দেখিয়া তিনি গৌরববোধ করিতেছেন।
আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলের সদস্য মেসার্স তাজুদ্দিন আহমদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মোমেন, জহুর আহমদ চৌধুরী, আবদুল মালেক উকিল, এম, এ, আজিজ, মইজউদ্দিন এবং এম, রহমান একই বিমানে লাহোর যান। সোহরাওয়ার্দী তনয়া বেগম সোলায়মান, তার স্বামী এবং বিশিষ্ট আইনজীবী ডক্টর কামাল হোসেনও একই বিমানে লাহোর যান।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯