ওয়াশিংটন পোস্ট, ১৯ আগস্ট ১৯৭১
মার্কিন বিমানে বাঙলায় সৈন্য পাঠানো হচ্ছে
পাকিস্তানি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের সাথে এক মার্কিন কোম্পানি থেকে ভাড়া নেওয়া দুটি জেট বিমান পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ফ্লিটে একত্রিত করা হয়েছে, যা পাকিস্তান সরকারের কেন্দ্রীয় সরকার সৈন্যবাহিনী আনা-নেয়া এবং বঙ্গপ্রদেশের অঞ্চল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করছে, এটি সরকারি সূত্র থেকে জানা যায়।
বোয়িং ৭০৭-র উভয় প্লেন, ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজের কাছ থেকে লিজে নেয়া, এটি নিজেকে আমেরিকা সবচেয়ে বড় ইউএস চার্টার বিমান হিসেবে নিজেদের বর্ণনা করে। তার ব্যাবসার অর্ধেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে।
এই লিজ স্টেট ডিপার্টমেন্ট, কমার্স ডিপার্টমেন্ট এবং সিভিল এ্যারোনটিক্স বোর্ডের জ্ঞ্যাতসারে এবং স্পষ্ট অনুমোদন দিয়ে করা হয়েছিল।
সম্প্রতি পূর্ব পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা এবং বেসরকারি ব্যক্তিদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে পিআইএ জেটলাইনার আহত সৈন্যদের বহন করার জন্য এবং প্রতিস্থাপন করতে ব্যবহৃত হয়।
পিআইএ, পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার। তাদের নিজস্ব সাতটি বোয়িং ৭০৭ এর পাশাপাশি দুটি ভাড়া দেওয়া বিমান আছে। বিমানটি পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক রুটগুলির পাশাপাশি বিস্তৃত আন্তর্জাতিক রুটগুলিও পরিচালনা করে।
দুইটি ভাড়া করা বিমানের জন্য পিআইএ ওকল্যান্ড, ক্যালিফ বেইজড বিশ্বব্যাপী এয়ারওয়েজকে মাসে এক ১৭০০০০ ডলার দিচ্ছে। তারা পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সেবা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনকে চূর্ণ করার প্রচারাভিযান চালানোর জন্য দরকারি মিলিটারি কার্যক্রম চালানোর জন্য তাদের এটা দিচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজ ইউএস মিলিটারি এয়ারলিফট কমান্ডের চুক্তির অধীনে রয়েছে এবং ভিয়েতনাম থেকে আমেরিকান সৈন্যদের আনানেয়ার একটি প্রধান বিমান।
ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চুক্তিতে গত বছরে প্রায় ২৬ মিলিয়ন ডলার এবং ১৯৬৯ সালে ৫১ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি ছিল – কোম্পানির কর্মকর্তা একথা জানান।
জুন মাসে পাকিস্তানকে ওয়ার্ল্ড এয়ারঅয়েজ যে দুটো প্লেন দিয়েছে তা গত গ্রীষ্মে নতুন রিলিজ হয়। এটি দুটি ৭০৭ -এর পরিবর্তে প্রতিস্থাপন হয়। সিএবি সূত্রে জানা গেছে, এগুলো যাত্রীদের পাশাপাশি মালামাল পরিচালনা করতে সক্ষম।
পিআইএ তাদের স্বাভাবিক বাণিজ্যিক সেবা বৃদ্ধি করার জন্য গত গ্রীষ্মকালে এটি ব্যাবহার শুরু করে। জুনের শুরুতে চুক্তি নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। বাঙালিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রায় দুই মাস পর বাণিজ্য অধিদপ্তর ১৮ জুন একটি নতুন লাইসেন্স প্রদান করে। এটা স্পষ্ট ছিল যে অতিরিক্ত প্লেন পাকিস্তানকে বাণিজ্যিক কাজের পাশাপাশি সামরিক পরিবহনের জন্য ব্যাবহার করবে।
বাণিজ্য বিভাগের সূত্র জানায় লাইসেন্সটি প্রত্যাহারের কোথা ছিল এবং লাইসেন্সগুলি ছাড়া ইজারা অবৈধ হবে।
যেহেতু লাইসেন্স দেয়া হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন প্লেনগুলি সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে কোম্পানির কর্মকর্তা কেবলই বলেছিলেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত নন।
তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজের বিমানগুলির আমেরিকান ক্রুরা বিভিন্ন সময়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানের ক্রুদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের লোকদের বলেছেন যে সেগুলোতে সৈন্য আনা-নেয়া করা হয়না।’’
যাইহোক, তিনি যোগ করেন, “আমি বুঝতে পারি যে কেন সেটা বলেছেন। যাই হোক না কেন”
পাকিস্তানি এয়ারলাইনের এয়ার ট্রাফিক লাইন অনুসারে এগুলো পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে এবং বিদেশে ভ্রমণের অধিকার রাখে। ওয়ার্ল্ড এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রের’ মধ্যে উড়ানোর কারণে পিআইএ তাদের চুক্তির শর্তগুলি ভঙ্গ করছে।
“যদিও পূর্ব পাকিস্তান প্রকৃতপক্ষে একটি যুদ্ধক্ষেত্র তা আসলে আমি বলতে পারি না।” তিনি যুক্ত করেন।
দুই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি লোক যারা সম্প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা থেকে বেরিয়ে এসে বলেছেন তারা দেখেছেন যেপিআইএ বোয়িং ৭০৭-এর থেকে সশস্ত্র পাকিস্তানি সৈন্যদের নামানো হচ্ছে এবং বোমা বিস্ফোরণে আহত সৈন্যদের সেটিতে করে ফেরত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তাদের কেউ বলতে পারেননি যে এগুলো সেই লিজ নেয়া প্লেন কিনা। ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজের কর্মকর্তা বলেন যে কোম্পানির লোগো সরানো হয়েছে এবং পিআইএ সনাক্তকরণ লোগো দ্বারা সেগুলো প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
“কিন্তু এটা সত্যিই একটি গৌণ বিষয়,” সোর্সদের একজন বলেন। “আসল বিষয় হল যেহেতু তারা দুটি আমেরিকান-মালিকানাধীন প্লেন পেয়েছে যা তারা বাণিজ্যিক ব্যবহারের পাশাপাশি জেটগুলিকে সামরিক কাজেও ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। এবং আপনি যেভাবেই দেখুন না কেন আমরা তাদের সাহায্য করছি।”
স্টেট ডিপার্টমেন্ট সূত্রে বলা হয়েছে যে মার্কিন সরকার চুক্তিটি “বাণিজ্যিক বিষয় হিসেবে” দেখেছে। তিনি বলেন, বিমানের ব্যবহারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
“আমরা ধারণা করতে পারিনা যে এই প্লেন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ছাড়া অন্যান্য উদ্যেশ্যে ব্যবহার করা হবে না,” উৎস বলেন। “যদি আমরা অন্য তথ্য পাই তবে আমাদের বিষয়টি আবার পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু আমি জানি না আসলে আমরা কি করব।”
– লুইস এম সাইমন্স।