You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.18 | সানডে টাইমস, ১৮ এপ্রিল ১৯৭১ পাকিস্তান: কথা বলার সময় এসেছে - সংগ্রামের নোটবুক

সানডে টাইমস, ১৮ এপ্রিল ১৯৭১
পাকিস্তান: কথা বলার সময় এসেছে

সানডে টাইমসের গত দুই সংখ্যায় আমরা পূর্ব পাকিস্তানে আমাদের বিশেষ সংবাদদাতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। এর সাথে অন্যান্য সোর্স থেকে পাওয়া খবরে এটাই প্রমাণিত হয় যে পশ্চিম পাকিস্তানের জোর করে চাপানো সিদ্ধান্ত সেখানে একটি ভয়ানক সাম্প্রদায়িক রক্তগঙ্গা সৃষ্টি করেছে এবং পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের গণতান্ত্রিকভাবে প্রকাশিত অভিলাষকে বুলেট দিয়ে দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরবর্তি পাতায় একই সংবাদদাতা পশ্চিম পাকিস্তান ভিজিট করার পরে সেখানকার প্রভাব ও তাদের কাজ সমপর্কে উল্লেখ করেছেন। সন্দেহ নেই যে একটি ভয়াবহ ভুলের জন্য ভয়াবহ ট্রাজেডি সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ নির্মম্ভাবে প্রত্যক্ষ করছে কীভাবে একটি জাতি আরেকটি জাতিকে হত্যা করছে। কিন্তু উপমহাদেশে বা তার বাইরে এমন কেউ নেই যে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারকে হত্যাকাণ্ড থেকে ফেরাবে।

জেনারেল ইয়াহিয়া খান ন্যায়বিচার করতে যেয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। পাকিস্তানে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য তার দেয়া নির্বাচন প্রশংসনীয় উদ্যোগ ছিল। সেই নির্বাচনে শেখ মুজিব ও তার দল পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ জয়যুক্ত হয়। রাজ্য প্রধান হিসেবে ইয়াহিয়া খানের দায়িত্ব ছিল পূর্ব বাংলার বিচ্ছিন্নতাবাদ নির্মুল করতে সেখানকার একতা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু মুজিব আলোচনার চূড়ান্ত পর্বে সহমত হননি।

তাছাড়াও এটা অনুমেয় যে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যে সিদ্ধান্তই নিক তাতে সামরিক শক্তি প্রদর্শন বাড়বে এবং বাঙ্গালীর আকাঙ্ক্ষা অবদমিত হবেনা। রক্তপাতের বাইরে ইয়াহিয়া খানের অবশ্যম্ভাবী সিদ্ধান্ত হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানে মাওবাদীদের পথ খোলা। এদিকে নকশাল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। কিন্তু মুজিব যৌক্তিকভাবেই তার অবস্থান ধরে রেখেছেন।

ইসলামাবাদের উপর এখন শোচনীয় মেঘ জমে আছে। এখন অন্যান্য সরকার – এমনকি ব্রিটিশ সরকারেরও দায়িত্ব আছে এটাকে সমাধান করার। স্যার স্যার অ্যালেক ডগলাস হোম বলেছিলেন ‘এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ – শুধু এটা বলেই শেষ করা যাবেনা। আভ্যন্তরীণ ব্যাপার হতে পারে কিন্তু এখানে আছে অন্যায় আর মানবতাবিরোধি অপরাধ। যেখানে ভারত, চীন ও রাশিয়া জড়িত সেটাকে আভ্যন্তরীণ বলার কোন মানে নেই।

সময় এসেছে। এখন ব্রিটিশ সরকারকে প্রকাশ্যে পুর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলির বিরুদ্ধে তার বিতৃষ্ণা প্রকাশ করতে হবে। অধিক প্রথাগত, এবং ব্যক্তিগত, কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে, ইয়াহিয়া খানকে জানাতে হবে যে (যদি ইতিমধ্যে না করা হয়) তার পলিসি কতটা বিপজ্জনক এবং ভুল। দরকার হলে পাকিস্তানে বৈদেশিক সাহায্যের সরবরাহকারীদের এইড দেয়া বন্ধ করার ব্যাবস্থা করতে হবে। সবশেষে পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ও পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করতে হবে। যত দ্রুত ইয়াহিয়া বুঝতে পারবেন যে আলোচনার জন্য মুজিবকে ঢাকায় পাঠাতে হবে ততই মঙ্গল।