৫ মে বুধবার ১৯৭১
চট্টগ্রামের রামগড় সীমান্তে মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। চট্টগ্রামে সাবেক জাতীয় পরিষদের স্বতন্ত্র গ্রুপের নেতা আমিনুল ইসলাম এক বিবৃতিতে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের (মুক্তিবাহিনী) বিরুদ্ধে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীকে অভিনন্দন জানান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ কমন্সসভায় বলেন, ব্রিটিশ সরকারের ধারণা ভারতে পূর্ব পাকিস্তানের আশ্রয়প্রার্থীদের সমস্যা ক্রমে দুরূহ হয়ে পড়ছে। আশ্রয় প্রার্থীদের সংখ্যা প্রতিদিন ২০ হাজার করে বাড়ছে। আমি মনে করি, ঢাকার বর্তমান পরিস্থিতি দেখার জন্য সেখানে একটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল পাঠানাে প্রয়ােজন। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট নিরসনে ব্রিটিশ সরকার প্রয়ােজনে কমনওয়েলথের সাহায্য নিতে সঙ্কোচ করবে না। আমাদের সাহায্য সংস্থাগুলাে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ভারতে সাহায্যসামগ্রী নিয়ে যেতে তৈরি রয়েছে। ভারতে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত চেস্টার বােলস্ নিউইয়র্ক টাইমস’-এ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কার বিরুদ্ধে এবং কি কারণে আমাদের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহার করা হবে তা না জেনে বন্ধুভাবাপন্ন সরকারগুলােকে অস্ত্রশস্ত্র দেওয়া নির্বুদ্ধিতা। আমার মনে হয়, অবিলম্বে দুটি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এক. মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম অপব্যবহারের জন্য আমাদের উচিত পশ্চিম পাকিস্তান সরকারকে কড়া প্রতিবাদ জানানাে এবং সাহায্য দান অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া। দুই. আমাদের উচিত নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকে এশিয়ায় শান্তি ক্ষুন্ন হবার বিষয়টি আলােচনার মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। এটা খুবই স্পষ্ট এশিয়ায় শান্তি ক্ষুন্ন হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের লড়াই সেখানকার ঘরােয়া বিষয় নয়। একটি সশস্ত্র সংখ্যালঘু কর্তৃক বিশাল সংখ্যাগুরুকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টায় যে ‘অভ্যন্তরীণ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা মীমাংসার জন্য জাতিসংঘের একটি বিশেষ ধরনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু সংক্রান্ত হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান জেনেভায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ভারতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের সাহায্য ও সহযােগিতার জন্য ভারত সরকার জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা থেকে পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগীদের নিয়ে ভারতে যে সমস্যার উদ্ভব হয়েছে তা মানবিক। ভারতের রাজ্যগুলােতে অসংখ্য উদ্বাস্তু মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান প্রত্যাশী। আমরা উদ্বাস্তুদের সাময়িক খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি, কিন্তু কেউ আশা করেন না এসব হতভাগ্য স্থায়ী উদ্বাস্তুতে পরিণত হােক। আমরা চাই, পূর্ব পাকিস্তানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হােক—যাতে নতুন করে শরণার্থী ভারতে না আসে এবং দেশত্যাগীরা স্বদেশে ফিরে যান। আমাদের সংস্থা ইতােমধ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান