৩০ নভেম্বর মঙ্গলবার ১৯৭১
মুক্তিবাহিনী পচাগড় মুক্ত করে। পাকিস্তানি মুখপাত্র রাওয়ালপিন্ডিতে বলেন, পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী ১৮টি স্থানে ভারতীয়রা (মুক্তিবাহিনী) আক্রমণ পরিচালনা করে। রংপুর ও দিনাজপুরের পঞ্চগড়ে প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হয়। পাকিস্তানি বাহিনী পচাগড় ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ভারতীয়রা পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে তাদের চাপ অব্যাহত রেখে কিছু লাভ করেছে। মুখপাত্র স্বীকার করেন, পচাগড় ছাড়াও যশােরের চৌগাছা, জীবননগর ও সিলেটের আটগ্রাম পাকবাহিনীর হাতছাড়া হয়ে গেছে। এ ছাড়া মুক্তিযােদ্ধারা চট্টগ্রাম-কুমিল্লা সীমান্তে বিলােনিয়া এলাকা দখলের জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করে রেখেছে। রাওয়ালপিন্ডিতে ইয়াহিয়া-ভুট্টো-আমিন যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২২ জন বাঙালি পুলিশ অফিসারকে ঢাকায় সামরিক আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেওয়া হয়। রাওয়ালপিন্ডিতে এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গােলাম আজম বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সদস্য এবং রাজাকাররা পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য প্রাণ দিচ্ছে। আমরা এটা আমাদের কর্তব্য মনে করেই বিচ্ছিন্নতাবাদী (মুক্তিযােদ্ধা) ও রাষ্ট্রবিরােধী (আওয়ামী লীগ) লােকদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীকে সহযােগিতা দান করছি। যেসব দেশপ্রেমিক পূর্ব পাকিস্তানি দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য কাজ করছেন তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পূর্বাঞ্চল সফর করা উচিত। গেরিলারা ইউনাইটেড ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে সশস্ত্র হামলা চালান এবং নারায়ণগঞ্জের গােদনাইলস্থ ওই একই ব্যাংকের শাখা লুট করেন। | ঢাকায় প্রাদেশিক জামায়াতে ইসলামীর সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়, ভারত পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের কিছু এলাকা দখল করে সেখানে তথাকথিত বাংলাদেশ সরকারকে বসানাের ব্যর্থ চেষ্টা করছে। দেশপ্রেমিক প্রদেশবাসীকে যেকোনাে মূল্যে ভারতের এ অপচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে। নইলে মুসলমানদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান