৩০ জুন বুধবার ১৯৭১
বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলছে এবং প্রিয় মাতৃভূমি থেকে দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত তা চলবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এখন মাঝপথে রয়েছে। মুক্তিফৌজের বীর যােদ্ধারা রণাঙ্গনেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঔদ্ধত্যপূর্ণ বেতার ভাষণের জবাব দেবে। বাংলাদেশের জনগণ ইয়াহিয়ার ভাষণকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে । ইয়াহিয়ার শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সাথে একটি নিষ্ঠুর রসিকতা ছাড়া কিছু নয়। ওয়াশিংটনে জনৈক সরকারি মুখপাত্র বলেন, ২৫ মার্চের পর মার্কিন সরকার পাকিস্তানকে সামরিক অস্ত্রের জন্য কোনাে নতুন লাইসেন্স দেয়নি কিংবা মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনাে লাইসেন্স নবায়নও করেনি। তবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করার আগে পাকিস্তানকে যে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল তার একটি চালান নিয়ে আগামী এক বা দুমাসের মধ্যে অস্ত্র ও গােলাবারুদ বােঝাই পাঁচটি জাহাজ পাকিস্তানের পথে রওনা দেবে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু দফতরের হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন লন্ডনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতের উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে বিশ্বের বিভিন্ন সরকার ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলােকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আবেদন জানান তিনি । বলেন, পাকিস্তানের পূর্বাংশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশ্বাস ও সমঝােতার পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়ােজন রয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান দশ দিন অধিকৃত বাংলাদেশ সফর শেষে রাওয়ালপিন্ডি ফিরে যান। প্রাক্তন প্রাদেশিক মন্ত্রী হাশিম উদ্দিন আহমদ ময়মনসিংহে এক জনসভায় বলেন, সীমান্তবর্তী শহরগুলােতে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা (মুক্তিযােদ্ধা) অশুভ কর্মতৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের এই তৎপরতা গভীর উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে। দাড়িয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার। শরণ সিং বেলগ্রেডে প্রেসিডেন্ট টিটোর সাথে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলােচনা করেন। যুগােশ্লাভ প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের শরণার্থীদের দূরবস্থায় তার সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং সহযােগিতা ও সমর্থন দানের নিশ্চয়তা দেন।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান