শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ম্যাসচুসেটস আইন সভার প্রস্তাব | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ – কংগ্রেসসম্পর্কিত ভুক্তি – রেমারের বিস্তার s – E 9327
ম্যাসচুসেটস আইন সভার প্রস্তাব
_______________
জনাব হারিংটন। জনাব স্পীকার, আগস্টের ১১ তারিখে ম্যাসচুসেটস, সিনেট এবং আগস্টের ২৩ তারিখে ম্যাসচুসেটস প্রতিনিধিসভা পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধের সময় সেখানকার সরকারকে দেওয়া সকল অর্থনৈতিক এবং সামরিক সাহায্য বন্ধ করার প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। আমেরিকান অস্ত্র ব্যবহার করে বাংলার উপর চালিত নৃসংশতার বিরুদ্ধে সরকারী কর্মকর্তাদের কথা বলা খুবই প্রয়োজনীয় এবং আমি ম্যাসচুসেটস আইনপ্রণয়নকারীদের এই জ্ঞান এবং অনুকম্পার জন্য তারিফ করি।
এই জিনিসটা মাথায় রেখে, আমি প্রস্তাবের বিবরণী অন্তর্ভুক্ত করছিঃ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস এবং কমনওয়েলথের নাগরিকদের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধকালীন ত্রাণসরবরাহ বাদে পাকিস্তানে সকল অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য এবং বিক্রয় স্থগিত রাখার প্রস্তাব,।
যেহেতু, কমনওয়েলথের জনগণ পূর্ব পাকিস্তানের দুঃখজনক ঘটনা, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক অগণিত বেসামরিক মানুষ হত্যা এবং ৭০ লক্ষ শরণার্থীর ভারতে গমনের ব্যাপারে অত্যন্ত অবগত; এবং
যেহেতু, যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানে এর নিজের জনগণের উপর ব্যবহারের জন্য গোলাবারুদ এবং সামরিক যন্ত্রপাতি পাঠানো চালু রেখেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের কাছে ১০ লক্ষ ডলার পাকিস্তানের সাহায্যের জন্য ব্যয় করার অনুরোধ করেছে; এবং
যেহেতু, যখন চীন বাদে সকল সাহায্যকারী রাষ্ট্র সাময়িকভাবে সাহায্য দেওয়া বন্ধ করেছে, তখন আমেরিকা পাকিস্তানকে সামরিক এবং অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দমনমূলক কর্মকান্ড ও ঐ দেশের জনগণের উপর চালিত ক্রমাগত নৃশংসতাকে সমর্থন জানাচ্ছে; এবং
যেহেতু, যে অঞ্চল নিষ্ঠুরভাবে নিজদেশের জনগণকে দমন করে, ১৯৭০ এ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে নির্দেশিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জাঁকালো ভাবে প্রদর্শন করে, বন্যার মতো নিজ দেশের জনগণকে পড়শি দেশে শরণার্থী হিসেবে পাঠিয়ে দেয় এবং পুরো ইন্দো-পাক উপমহাদেশে শান্তি এবং নিরাপত্তা বিঘ্ন হওয়ার হুমকি হিসেবে দাঁড়ায়, সেই অঞ্চলে সহযোগিতা অব্যহত রেখে আমেরিকার এবং পাকিস্তানের আসল স্বার্থ কখনো রক্ষা হতে পারে না; এখন সেজন্য এটা হোক।
সমাধানকৃত, ম্যাসচুসেটস সিনেট আহ্বান জানায় কমনওয়েলথ ও সকল সংগঠনের জনগণ, ইউনিয়নগুলো এবং সেই স্থানে কার্যরত অন্যান্য সংস্থাগুলোকে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক কর্মকান্ড বন্ধ না হয়, বেসামরিক আইন পূনঃপ্রতিষ্ঠা না হয় এবং বেশীরভাগ শরণার্থী দেশে ফিরে আসার ক্ষমতা অর্জন না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তানে যেকোন রকম সামরিক সাহায্য অথবা বিক্রয়ের বিরোধিতা করতে এবং আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এবং বন্টনকৃত খাদ্য এবং অন্যান্য ত্রাণ সহযোগিতা ব্যতীত অর্থনৈতিক সাহায্যের বিরোধিতা করতে।
.
সমাধান হয়েছে, ম্যাসাচুসেটের মহামান্য সিনেট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস কে প্ররোচিত করেছে যাতে মিলিটারি অপসারণ এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিষয়ে খুব তাড়াতাড়ি একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ইতঃপূর্বের কারণ পর্যালোচনা করে এবং সেটা যাতে ভবিষ্যতেও বলবৎ থাকে।
সমাধান হয়েছে, এই সমাধানের কপিগুলো যাতে কমনওয়েলথের সেক্রেটারির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেসের প্রতিটি শাখার অধিষ্ঠিত কর্মকর্তাদের, কমনওয়েলথের প্রতিটি সদস্য কে অবিলম্বে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এই সমাধানে এই গৃহ যুদ্ধের পূর্ণ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস ও কমনওয়েলথের সদস্যদের অনুরোধ করা যাচ্ছে যাতে পাকিস্তানে মিলিটারি অপসারণ, অর্থনৈতিক অবস্থা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রিলিফ সাহায্যের ব্যতিক্রম ছাড়া যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
এখানে, পূর্ব পাকিস্তানের ট্রাজেডি এবং পাকিস্তান আর্মির ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে যেখানে তারা অজস্র সংখ্যক সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলেছে আর ৭০ লক্ষ মানুষকে ভারতে পাঠিয়েছে শরণার্থী হিসেবে তাদের সাথে ম্যাসাচুসেটের কমনওয়েলথ ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।
এখানে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পাকিস্তানকে মিলিটারি যন্ত্রপাতি, নৌবহর দিয়ে সাহায্য করছে তাদের নিজেদের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেবার জন্য এবং কংগ্রেসের কাছে ১৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান চেয়ে নিয়েছে পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য।
এখানে, যখন সব বড় বড় রাষ্ট্র , চীন ছাড়া পাকিস্তান সরকারকে মিলিটারি ও আর্থিকভাবে সাহায্য চালিয়ে যেতে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে তখনো যুক্তরাষ্ট্র তার সাহায্য চালিয়ে গেছে আর পাকিস্তানী আর্মিদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিপক্ষে চরম নির্মম অত্যাচারের পক্ষে রয়ে গিয়েছে।
এখানে আমেরিকার প্রধান আগ্রহ এবং পাকিস্তানের আসল আগ্রহ কখনোই পূর্ণ হবেনা যদিনা এইগুলো চলতে থাকে তা হল পাকিস্তানের লোকজনদের উপর অত্যাচার বন্ধ না হয়, ১৯৭০ এর নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক অগ্রধারা বজায় রাখা, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের শরণার্থী দের স্রোত ইন্ডিয়া – পাকিস্তান উপমহাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।
সমাধান হয়েছে, ম্যাসাচুসেটের হাউজের প্রতিনিধিরা কমনওয়েলথের জনগণ, সকল ফার্ম, অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান কে প্ররোচিত করেছে যাতে করে তারা খাদ্য ও রিলিফ সাহায্য ছাড়া সকল ধরনের মিলিটারি , অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করে যতদিন পর্যন্ত না পূর্ব পাকিস্তানে মিলিটারি আগ্রাসন বন্ধ হয়, জনগণের শাসন কায়েম হয়, সিংহভাগ শরণার্থী তাদের নিজ গৃহে ফিরে যায় এবং সেটা যেন চলতে থাকে।
সমাধান হয়েছে, ম্যাসাচুসেটের হাউজের প্রতিনিধিরা স্মরণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস কে যাতে করে উপরের বিষয় সাপেক্ষে মিলিটারি ও অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে এভাবেই চলতে থাকে।
সমাধান হয়েছে,সমাধানের কপিগুলো অনতিবিলম্বে কমনওয়েলথের প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেসের সকল শাখার কর্মকর্তা, কমনওয়েলথের সকল সদস্য কে পাঠানো হয়।
.
13.113.393-394
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশে শরণার্থী ত্রাণে অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য বিল ঃ সিনেটের কেনেডী | সিনেটের কার্যবিবরণী | ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
এস ১৪৮৭৬ জনাব কেনেডী কর্তিক কংগ্রেসে সিনেট নথি সেপ্টেম্বর ২, ১৯৭১
এস ২৫৬৮। ইন্ডিয়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানী শরণার্থী দের জন্য ত্রাণ সাহায্যের যথোপযুক্ত বিল। পররাষ্ট্র দপ্তরে এই কমিটিকে পাঠানো হল।
জনাব কেনেডী। জনাব প্রেসিডেন্ট প্রতিবেদনে বলেছে যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে মানুষের দুর্দশার স্রোত ইন্ডিয়ায় ধাবিত হচ্ছে।
বস্তুত, আমি যে মাসে পূর্ব পাকিস্তানের সীমানার ঘেঁষে ইন্ডিয়ার শরণার্থী ক্যাম্প থেকে ফিরে এসেছি, তখন দেখেছি প্রায় ১০ লক্ষ পূর্ব বাঙ্গালীদের মাঝে অমানবিক অবস্থা দেখা গেছে আর তাদের সরকারের দ্বারা দেশে গণহত্যার মত অবস্থা তৈরি হয়ে গেছে।
আজকের দিনে পূর্ব বাঙ্গালীর এই সত্য ঘটনা অনেকের কাছে দুঃস্বপ্ন মনে হতে পারে। যে অবস্থা আমি দেখেছি তাতে করে বিস্তারিত বলার দরকার নেই। প্রতিটা দিন তাদের দুঃখ দুর্দশা বাড়তেই আছে।
আজ সকালে নিউ ইয়র্ক টাইমে যে রিপোর্টটি করা হয়েছে সেখানে শরণার্থী নিয়ে আরও অনেক খবর লেখা হয়েছে যেখানে আমি চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলাম তা হল –
পাকিস্তানী আর্মি আর তাদের দোসররা মিলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি ছাড়া খুন, লুট আর অগ্নি সংযোগ করছে তাতে করে দেশের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়াটা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পরেছে আর বাঙ্গালী জনগণের বিজয়ের জন্য আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে।
জনাব প্রেসিডেন্ট, এই রিপোর্টে নতুন কিছুই নেই কিন্তু আমি এই কথাগুলো শুনেছি অগণিত শরণার্থীর কাছ থেকে যখন আমি তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম ইন্ডিয়া গিয়ে।
আরও কতদিন আমাদের সরকার আমাদের প্রেসিডেন্ট নিজে এই সময়টা কাটিয়ে দিবেন কম্বলে মুখ লুকিয়ে, আমাদের এই নীরবতা কি খুব বেশি কিছু করতে পারছে ? কোথায় গেলো আমাদের এই উদ্দেশ্য সাধনের পথ ? এই উদ্দেশ্য সাধনের পথ কি আমাদের কিছু ফলাফল দিতে পেরেছে ?
কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কোথায় আমাদের মূল্যবোধের পরিচয় ? কোথায় আমাদের এই লাখ লাখ শরণার্থী লোকের জন্য সমবেদনা ?
কখন আমাদের সরকার শেষপর্যন্ত তার এই নিশ্চুপতা থেকে বেরিয়ে এসে নেতৃত্ব দিতে পারবে আর দক্ষিণ এশিয়ার এই দুর্দশা থেকে মুক্তির একটি কিনারা খুঁজে বের করতে পারবে ?
কখন আমরা এই জাহাজ ভরা অস্ত্র সাহায্য স্থগিত করতে পারবো আর তার বিনিময়ে জরুরী ভিত্তিতে মানবিক ত্রাণ সাহায্য পাঠাতে পারবো ?
জনাব প্রেসিডেন্ট , এটা ছাড়া মানুষের জীবনের আরও মূল্য দিতে হবে ।
প্রতিটা দিন তাদের দুঃখ দুর্দশা বেড়েই চলেছে আর তাদের আরও আরও মৃত্যু। এবং প্রতিদিন ইন্ডিয়ার উপর নতুন করে বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমাদের সরকার তথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায় ছাড়া যেটা সত্যিকার অর্থে সুবিশাল জায়গার প্রয়োজনীয়তার সমানুপাতিক হবে।
.
প্রতিটি দিন উড়ো দূর্ভোগ এবং আরো মৃত্যু নিয়ে আসে। এবং প্রত্যেকটা দিন প্রকৃত পক্ষে মাঠ পর্যায়ের বিশাল চাহিদার সাথে সমান হারে ভারতের ওপর ভয়াবহ বোঝাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে যা ভারতকে আমাদের সরকার, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সমর্থন বিচার না করেই জোরপূর্বক বহন করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
আমাদের সরকারের নতুন হিসাবে বর্তমানে শরণার্থীদের দেখাশোনায় বিস্ময়করভাবে চলতি অর্থবছরে ভারতের খরচ দাঁড়িয়েছে, ৮৩ কোটি যা ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সাহায্য সংস্থাগুলোর বার্ষিক অনুদানের সমান। সাধারন মানবতা দাবি করে যে, আমদের এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে এই সহজ সত্যের মুখোমুখি হতে হবে যে, এই শরণার্থীর ভার ভারতের পক্ষে একা বহন করা সম্ভব নয়।
এই পর্যায়ে আমি আজকে ভারতে আন্তর্জাতিক শরনার্থী ত্রান প্রচেষ্টার সহায়তায় ৪০ কোটি অনুমোদনের একটি বিল চালু করছি। এই অংকটি আমরা ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে শতকরা হারে যে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে, আমরা বর্তমানে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সাহায্য সংস্থার সদস্য হিসেবে ভারতের জন্য যে পর্যায়ের সহায়তা দেই এটি তার সমতুল্য।
দক্ষিন এশিয়ার ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়কে আরো জানতে এবং আমাদের সরকার বর্তমানে কি করছে ও এই সমস্যায় সহায়তায় ভবিষ্যতে কি করতে প্রস্তুত আছে তার প্রমান রাখতে- আমি আজ ঘোষণা করছি যে, শরনার্থী প্রসংগে উপকমিটির পরবর্তি শুনানি আগামী সপ্তাহে শুরু হবে।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আমি আজকে যে বিলটি চালু করেছি তার বিষয়বস্তু প্রতিবেদনের এই অংশে মুদ্রিত করার জন্য সকলের সম্মতি প্রার্থনা করছি।
এস. ২৫৬৮
কংগ্রেস সম্মেলনে সিনেট ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ দ্বারা এটিকে চালু করা হোক। ১৯৬১ সালের বৈদেশিক সাহায্য আইনের সেই ৩০২ ধারার শেষে নিম্নলিখিত নতুন উপ-ধারাটি যোগ করে সংশোধন করা হয়েছেঃ
(চ) পাকিস্তানি শরনার্থী যারা ২৫ শে মার্চ,১৯৭১ এ অথবা এর পরে পাকিস্তান ত্যাগ করেছে এবং ভারতে চলে গিয়েছে তাদেরকে ত্রান ও পুনর্বাসন সহায়তা দিতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ব্যবহারের জন্য, ১৯৭২ অর্থ বছরে অনধিক ৪০ কোটির অনুমোদন দানের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির আছে।
.
13.114.395-396
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ভারত ও বাংলাদেশে সফলঃ কংগ্রেস সদস্য ফ্রিলিংঘুসেন এর সমীক্ষা | প্রেস বিজ্ঞপ্তি | ২৩ অক্টোবর, ১৯৭১ |
এইচ. বি. ফ্রিলিংঘুসেন- এর বক্তব্যের সারসংক্ষেপ
১৩ অক্টোবর, ১৯৭১
ভারত ও পাকিস্তানে ১২ দিনের ভ্রমণের উপর পযবেক্ষন সমূহ।
উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানে গৃহ অস্থিরতার ফলে পূর্ব পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশে সৃষ্ট মানবিক ত্রান সমস্যাগুলো সরেজমিনে দেখা এবং এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাচাই করা।
১। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশে অর্থবহ মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষ
প্রতিরোধ ও স্থিতিশীল অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো অত্যান্ত
জরুরী। ভারতের উপর থেকে বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝার চাপ কমাতে উদ্বাস্তুদের জন্য বাড়তি ত্রান সহায়তার ব্যবস্থা করাটাও প্রয়োজনীয়। সাম্প্রতিককালে তীব্র খরায় আক্রান্ত
এলাকাগুলোয় পানির ব্যবস্থা করাটাও প্রয়োজনীয় বটে।
উদ্বাস্তু সমস্যার তীব্রতা দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। ভারতীয়রা তাদের দেশে আগত উদ্বাস্তুদের হিসাব রাখছে এবং তাদেরকে আশ্রয় ও খাদ্য দিচ্ছে, তাদের প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৯০ লক্ষ উদ্বাস্তুকে তারা সেখানে দেখভালো করছে এবং তাদের এই প্রাক্কলিত হিসাবকে অস্বীকার করারমত কোন তথ্য আমার কাছে নেই।
২। ভারত ও পাকিস্তানে জরুরী মানবিক ত্রান সহায়তার জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সন সম্প্রতি যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার মঞ্জুরীর অনুরোধ করেছেন আমি বিশ্বাস করি কংগ্রেস তার অনুকুলে কাজ করবে। এই বিশাল পরিমান অর্থ দিয়ে দেশের আভ্যন্তরীণ প্রয়োজনগুলো মেটানো গেলেও কংগ্রেস এই মর্মে নিশ্চয়তা চাইবে যেন অন্যান্য দেশগুলোও এই জরুরী অবস্থায় যথাযথভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে। উদ্বাস্তুদের ত্রান সহায়তার জন্য আন্তর্জাতীক সম্প্রদায় ভারতকে মোট ১৮৬ মিলিয়ন ডলার দান করেছে বা দিয়েছে, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত ৮৯ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে যেটা তাদের দেয়া অর্থের প্রায় অর্ধেক। এই মাত্রায় ত্রান যেটা হয়তো প্রয়োজনীয়, অনুদানকৃত অর্থের ন্যায্য জবাবদিহীতার প্রশ্নটিও বাড়িয়ে তুলবে।
ভারত বর্তমানে ত্রান তৎপরতার সমন্বয়ের ক্ষেত্রে এবং সম্ভবত ভারত ও পূর্ব পাকিস্তান সিমান্তে চলমান ঘটনাগুলোর পরিমান হ্রাস্বে জাতি সংঘের জন্য এমনকি কোন ভূমিকার কথা চিন্তা করতেও অনিচ্ছুক। আমি এখনও ব্যক্তিগতভাবে আশাবাদী যে জাতি সংঘের কার্যকারিতা ও সঠিক তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য একটি পথ খুজে বের করা যাবে।
৩। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা এখন বাস্তব এবং এই আশঙ্কা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। দূর্ঘটনা বশতই হোক আর পরিকল্পিত অভিযানের মাধ্যমেই হোক, সশস্ত্র সংঘাত সহজেই শুরু হয়ে যেতে পারে। এই কারণে উভয় দেশেরই সর্ব্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করা চরম গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধ হবে চুড়ান্ত পরিনতি, এটা কোন সমাধান বয়ে আনবে না
বরং নি:সন্দেহে এমন একটা অঞ্চলে আরও ততধিক বিনাশ ঘটিয়ে দিবে যে অঞ্চল ইতিমধ্যেই বহু ক্ষয়ক্ষতির শীকার হয়েছে।
৪। রাজনৈতিক সমাধানের দিকে কিছু সফল অগ্রগতি অর্জন করা এবং তা দ্রুততার সাথে করাটা খুবই দরকারী। এই প্রকৃয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের
অংশগ্রহণ যদি সম্ভব করা যেত এবং অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর আলোকে বর্তমানের এই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির উদ্ভব না হতো তাহলে অগ্রগতির দিকে এটাই হতে পারতো মূল বস্তু।
ঘটনা যাই হোক, দ্রুত সামনে আগানোর পথে চেষ্টার কোন পথই বন্ধ রাখা যাবে না। কেবল মাত্র ভারত আর পাকিস্তানের উপরেই নয়, আন্তর্জাতীক সম্প্রদায়ের চেষ্টার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে।
সবশেষে আমি বিশ্বাস করি যে, পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন সামরিক সহায়তা সেটা চালানপথেই থাকুক আর নাই থাকুক, নির্বিশেষে তার সবকিছু অবশ্যই বন্ধ হবে। সংঘাত শুরুর পর থেকে পাকিস্তানে যে পরিমান সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে তা ডলার মূল্যে ও সামরিক মূল্যেও পাকিস্তানের কাছে অসাড় বলে পরিগনিত হচ্ছে এবং তা ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
মধ্যেকার সম্পর্কের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে।
.
13.115.397-398
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
বাংলার জনগণকে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার না দেওয়া পর্যন্ত সংকট অবসানের সুযোগ নাইঃ রোজেনথল |
কংগ্রেসের কার্যবিবরনী | ১৪ অক্টোবর, ১৯৭১ |
কংগ্রেশনাল রেকর্ড- মন্তব্যের সম্প্রসারন
পাকিস্তানের অবস্থান প্রতিবেদন
প্রতিনিধি পরিষদে
জনাব রোজেনথল। মাননীয় স্পিকার, পশ্চিম পাকিস্তানিদের পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের হিংস্র আক্রমনের ছয় মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। ইতমধ্যে আমেরিকার জনগণ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বর্ননা দেওয়া ধারাবাহিক রিপোর্টগুলোতে আশ্বস্ত। সেই ২৫শে মার্চ থেকে ধর্ষন, নির্যাতন, লুটপাট, হত্যা, দূর্ভিক্ষ এবং কৌশল্গতভাবে গ্রামের বাড়িঘর পোড়ানো অব্যাহত আছে।
কোন শেষ দেখা যাচ্ছে না। সীমানা পেড়িয়ে পালিয়ে আসা শরনার্থীদের সংখ্যা এখন ৯০ লাখে দাঁড়িয়েছে এবং ভারতের ত্রান কর্মীরা নিজেদেরকে আরো অতিরিক্ত ৩০ লক্ষ থেকে ১ কোটি দশ লক্ষ শরনার্থীর জন্য প্রস্তুত করছে যারা বছর শেষ হওয়ার আগেই আসবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। সবদিক থেকেই এটা আধুনিক ইতিহাসে মানব সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় দলগত প্রস্থান।
গত শীতে যে প্রাকৃতিক দূর্যোগে অর্ধ কোটি লোক মারা গিয়েছিল তার তুলনায় বর্তমান ব্যাপক হত্যাকান্ড দ্বিগুন প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং এটা সম্পূর্ণরূপে মানব সৃষ্ট।
পূর্ব বাংলার নেতা, শেখ মুজিবুর রহমান- যার দল ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঝুঁকি নিয়ে ৯৫ শতাংশ আসন পায়-বর্তমানে গোপনে পশ্চিমাঞ্চলের কারাগারে বন্দী এবং সামরিক সরকার কর্তৃক তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। যতক্ষন না তিনি মুক্তি পাচ্ছেন এবং যতক্ষন না পূর্ব বাংলা বাংলাদেশের জনগণকে আত্মনির্ধারন করতে দেওয়া হবে, ততক্ষন এই দূর্ভোগ সমাপ্তির কোন আশা থাকবে না।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে যে, পাকিস্তানের বর্তমান সমস্যাগুলো একটি “অভ্যন্তরীন” ব্যাপার এবং মার্কিন নীতির লক্ষ্য হলো একটি সর্বনাশা পরিস্থিতিকে প্রতিহত করতে পাকিস্তান সরকারের ওপর “চাপ” বৃদ্ধি করা। যদিও এই নিরপেক্ষতার ছদ্মবেশের আড়ালে সম্পূর্ণ অন্য একটি মিথ্যা গল্প লুকিয়ে আছেঃ মার্কিন অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম ও অর্থনৈতিক সহায়তার সরবরাহ জেনারেল ইয়াহিয়ার দমন কর্মসূচিকে প্রধান আর্থিক সহায়তা প্রদান করে অব্যাহত আছে। কিছু উৎসের হিসেবে বাংলায় পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্রের প্রায় ৮০শতাংশ আমেরিকার তৈরী।
৪ঠা আগস্ট তাঁর সংবাদ সম্মেলনে, প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার প্রশাসনের নীতি একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতির মাধ্যমে পরিষ্কার করেনঃ
আমরা মনে করি যে পাকিস্তানে আমাদের অর্থনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রেখে আমরা আমাদের সবচেয়ে গঠনমূলক ভুমিকাটি পালন করতে পারি………আমরা পাকিস্তান সরকারের ওপর জনগণের চাপের সাথে জড়াব না। তার ফলাফল হবে একেবারই বিপরীতমুখী। এই বিষয়গুলো আমরা শুধুমাত্র গোপন মাধ্যমে আলোচনা করব।
.
আমাদের সমাজ শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিতে মেয়েদের স্যাক্রিফাইসের বিষয়টা এমনভাবে উঠে এসেছে যে ছোট বেলা থেকে মেয়েদের স্যাক্রিফাইসের বিষয়গুলো শুনতে শুনতে পড়তে পড়তে এখন মনে হয় যে ছেলেরা আসলে কিছুই না, পুরুষদের কোন স্যক্রিফাইস নাই। আমরা মায়েদের নানান স্যাক্রিফাইসের কথা গল্প সাহিত্য নাটকে দেখি, মায়েদের স্যাক্রিফাইস মহিমামন্ডিত করে ফুটিয়ে তুলি কিন্তু বাবাদের স্যাক্রিফাইসগুলো কতখানি আলো পায়। কিংবা নারীদের সংসারে স্যাক্রিফাইসের কথা আমরা সব সময় পড়ি কিন্তু পুরুষদের স্যাক্রিফাইসের কথা কতখানি লেখা হয়? আমি মায়েদের বা নারীদের স্যাক্রিফাইস অস্বীকার করছি না। শুধু এটুকুই মনে প্রশ্ন জাগে পুরুষদের স্যাক্রিফাইসগুলো কি সমাজের চোখে পড়ে না। GMB Akash এর পেইজে এক বাবার ছবিতে তার কাহিনি পড়েছিলাম, যে নিদারুন কষ্ট করে নিজের সব চাওয়া পাওয়া ত্যাগ করে প্রতিদিন হাড় খাটুনি করে নিজের পরিবারের জন্য তিনবেলা ব্যবস্থা করেও তাকে প্রতি রাতে নিজের স্ত্রী মেয়েদের কাছ থেকে অপমান সহ্য করতে হত তারপরও প্রতিদিন সকালে সে বের হয়ে যায় এই পরিবারের সুখের জন্য হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খাটতে। সেই পোস্টটা মনে হয় আমার ওয়াল খুজলে এখনো পাওয়া যাবে। যাকগে!সেই পুরনো প্রশ্নে ফিরে যাই।
এই সমাজে নারীদের স্যাক্রিফাইসে যে রোমান্টিকতা খুঁজে পায়, পুরুষদের স্যাক্রিফাইসে তা অনুপস্থিত কেন? পুরুষদের কি কোন ত্যাগ নেই নাকি পুরুষদের আবেগ থাকে না সেটা সমাজ নির্ধারণ করে দিয়েছে? এত এত নারীবাদী, পুরুষবাদী নেই কেনো?
“Accept the things you cannot change. Have the courage to change the things you can change. And have the wisdom to know the difference.”
দেখতে দেখতে আজ এই দিনে দুবছর পূর্ণ করলো আমাদের প্রানের #আলোকিত_পাঠশালা!
এই দুবছরের প্রাপ্তি গুলোর দিকে তাকালে হয়তো আহামরি কিছুই আমরা করি নি আবার ছোট ছোট অনেক কিছুই অর্জন করে নিয়েছি। যেসব কলোনির বাচ্চারা সারাদিন খেলাধূলা মারামারি গালিগালাজে মেতে থাকত তাদের মাঝে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তোলা, নিয়ম শৃঙ্খলা আর ভাল ব্যবহারের বীজ তাদের মাঝে বপন করে দেওয়াটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল এবং আমরা দাবি করতেই পারি সে চ্যালেঞ্জ আমরা অনেকটা পূরণ করতে পেরেছি।
আমাদের আলোকিত পাঠশালার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল খোলা উঠোন থেকে স্কুলকে স্থায়ী রুমে স্থানান্তর করা। প্রায় এক বছর আমরা বাচ্চাদের অন্যের বাসার উঠোনে পড়িয়েছি, রোদ বৃষ্টি সহ্য করে। এক বছরের সংগ্রামে আমরা স্কুলের জন্য দুটি রুম ভাড়া করতে পারি। বাচ্চাদের ক্লাস নির্জঞ্জাট আর নিয়মিত হয়। এছাড়াও আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও গুটিকয়েক কাছের ডোনারদের চাঁদায় ও সাহায্যে এই দুবছর ধরে আলোকিত পাঠশালা নিজেরাই চালিয়ে আনা। শুনতে অবাক শুনালেও প্রতিমাসে পাঠশালার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য মাসে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ করা সহজ কোন ব্যাপার ছিল না। যেখানে আমরা বেশিরভাগই ছাত্র ও ছোটখাটো চাকুরীজীবী।
এর মাঝে এই আলোকিত পাঠশালার বাচ্চাদের নিয়ে আমাদের স্বপ্ন আরো বিস্তৃত হয়ে আরো ডালপালা ছড়িয়ে। সেই স্বপ্নগুলো এখন আমাদের একার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব না। তাই এই স্বপ্ন পূরণে আজ আপনাদের সাহায্য চাইছি।
যেহেতু এরকম একটি ফ্রি স্কুল চালানোর সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে অনিয়মিত ফান্ড তাই আমাদের ফান্ড শক্তিশালীকরণে আপনি বাড়িয়ে দিতে পারেন আপনার সাহায্যের হাত।
আমাদের আলোকিত পাঠশালায় এখন মোট ৪২ জন ছাত্র-ছাত্রী পড়ে। ক্লাস ওয়ান আর শিশু শ্রেনী এই দুভাগে ভাগ করে বাচ্চাদের পড়ানো হয়। আপনি মাসিক ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে আমাদের পাঠশালার যেকোন বাচ্চাকে Sponsor করতে পারেন। ৫০০ টাকা মাসিক হিসেবে বারো মাসে ছয় হাজার অর্থ্যাৎ বাৎসরিক ৬০০০/= টাকা চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে আপনি একটি শিশুর সারা বছরের শিক্ষার ভার নিয়ে নিলেন। এই চাঁদার টাকায় আমাদের আলোকিত পাঠশালার শিশুটি পাবে-
ফ্রি বই খাতা/ কলমসহ সকল প্রকার শিক্ষা সামগ্রী (অলরেডি এটা তাদের ফ্রি দেওয়া হয়)
বাচ্চাদের স্কুলের পোশাক ও জুতো।
ভলান্টিয়ারের পাশাপাশি নিয়মিত পাঠদানের জন্য স্থায়ী শিক্ষক। (আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা নিঃস্বার্থভাবে দুবছর ধরে নিজের ভাড়ার টাকা আর সময় ব্যায় করে বাচ্চাদের প্রতিদিন দুঘন্টা করে পড়িয়ে যাচ্ছেন। আমাদের ইচ্ছা আমাদের ফান্ড বড় হলে বাচ্চাদের জন্য আমরা আগ্রহী উপযুক্ত শিক্ষক রাখব, যারা দক্ষ ও পেশাদারী মনোভাব নিয়ে ক্লাস নিবেন। আমরা চাই ফ্রি স্কুল হলেও যেন এখানের বাচ্চারা প্রতিটি ক্ষেত্রে যেকোন প্রকার সরকারী/ বেসরকারী স্কুলের সুবিধাটুকু পাক)
প্রতি তিন মাসের ব্যবধানে মেডিক্যাল চেকআপ।
প্রতি সপ্তাহে একবার স্বাস্থ্যকর খাবার।
স্কুলে একটি স্বতন্ত্র পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা যাতে বাচ্চারা পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বাইরে বই থেকে জ্ঞান আহরণ করতে পারে এবং তাদের মাঝে বই পড়া অভ্যাস গড়ে উঠে।
বছরে একবার তাদের পার্ক বা কোন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরিয়ে নিয়ে আসা।
প্রতি শীতে বাচ্চাদের শীতের পোশাকের ব্যবস্থা করা। (অলরেডি এই শীতে আমরা বাচ্চাদের হাতে শীতের কম্বল তুলে দিয়েছি)
আমাদের এই লিস্টে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু যুক্ত হচ্ছে কারণ আমাদের এই সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাদের নিয়ে আমাদের স্বপ্ন অনেক বড়। এই স্বপ্ন পূরনণ অনেক ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে সম্ভব না আর এখানেই আপনাদের সাহায্যের বড় প্রয়োজন।
দুবছরের এই নতুন পথচলায় আপনিও শামিল হতে পারেন। সশরীরে আমাদের স্কুলে এসে কিংবা আমাদের পেইজে মেসেজ দিয়ে বা আমাদের ফোন দিয়ে আপনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা-
আলোকিত পাঠশালা ফাউন্ডেশন,
ছরারপার, টিবি গেইট (মডেল হাইস্কুল ও টিচার্স ট্রেনিং এর রাস্তা দিয়ে ভেতরে ব্রীজ পার হয়ে বাজারটা)শাহী ঈদগাহ, সিলেট।
ফোন –
মুহম্মদ আবু সালেহ (অর্থ সম্পাদক) – ০১৭১০১৮৬০২৬
নিশাত শাহরিয়ার (সহাকারী সম্পাদক) -০১৭৩১২৫৫৩০৮
আপনার একটুখানি সাহায্য বদলে দিতে পারে আলোকিত পাঠশালার শিশুদের জীবন।
মুখে যাই বলি না কেনো স্কুল নিয়ে কেয়ার করি তাই অণ্য কেউ না দৌড়ালেও নিজে দোউড়াই। গত ১ মাসে আমি নিজে ব্যাক্তিগত ভাবে কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি ফান্ডিং নিয়ে। এখন তারা বলেছেন সাহায্য করবেন আমাদের কিন্তু সব স্ট্রাকচার কমিটি নতুন করে করতে হবে যদি নতুন করে শুরু করতে চাই, তাই তারা সবার সাথে বসতে চান। সবাই রাজি থাকলে তাদের সাথে কথা বলে আমি ডেট ঠিক করতে পারি।
আর শবনমের অই স্ট্যাটসে আমি ছিলাম না তাই কিছু বলতে পারি নাই। আমার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ফাহাদ জানাইছে যা আমার মনে হয় সবাই দেখছেন। সেপ্টেম্বর এর পর থেকে যা ক্লাস হইছে আপার দুই মেয়ে করাইছে এমনকি বাসা পাল্টানোর পর আমি গিয়ে যা আর তাদের দিয়ে যা পারি ক্লাস করাইছে যদিও বই ছিল না পুরানো বই দিয়ে করাইতে হইছে। ক্লাস ওয়ানের আগের ছাত্র ছাত্রী কিছু ক্লাস টু তে গিয়ে ভর্তি হইছে তাই আমাদের ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা কিছু কমেছে। আম্মা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আর আপার মেয়েদের পরীক্ষা থাকায় এই কয়দিন ক্লাস বন্ধ আছে কারন আমি নিজে গিয়ে ক্লাস নেওয়া অই সময় সম্ভব ছিল না তাই তাদের সামনের মাসে বলে দেওয়া ছিল। আর রুমের ভাড়া প্লাস তাদের বেতন আমি আমার কাছে থাকা স্কুলের টাকা থেকে দেওয়া হয়েছে প্লাস সালেহ ভাইএর কাছ থেকে যা ছিল এখন আমার কাছে আছে ২৬০০/= পাওনা। যার হিসাব কাল আবার সালেহ ভাইকে বুঝাই দিব।
এবং এখানে বলা হয়েছে সব কিছু ভুলে যেতে। আমি স্কুল নিয়ে কেয়ার করি কিন্তু কোন Individual কে না সে আমাকে যাতা বলে গেছে আমি তা ভুলে যাব। এই ব্যাপার আমি ভুলতে পারব না। স্কুল নিয়ে থাকতে রাজি কিন্তু তোমাদের এই ডিসিশনও নেওয়া উচিত যে সেই মানুষটারে নিয়া তোমরা চলতে চাও না আমাকে সব কিছুর বাইরে রাখতে চাও। অন্য সব কিছুর সাথে এটারো ডিসিশন নাও কারণ আমি সেই মানুষের সাথে স্কুলএর কোন কিছুতে থাকতে পারব না। এটা আমার ইগো না এটা আমার আত্নসম্মানবোধ। কারন এক নাইম ছাড়া কাউরে দেখি নাই এটার প্রতিবাদ করতে বাকিরা চেয়ে চেয়ে দেখছে… সো!
বাকি যা বলার আমি কাল মিটিং এ বলব। এইখানে আমি ক্যাচাল পাড়তে চাই না। আমি জাস্ট আমার চিন্তাভাবনাগুলো জানালাম।
.
13.116.399
শিরোনামঃ বাংলাদেশের শরণার্থীঃ সিনেটর পার্সির বক্তৃতা ও উদ্ধৃতি
সূত্রঃ সিনেটের কার্যবিবরণী
তারিখঃ ১৮ অক্টোবর, ১৯৭১
কংগ্রেসিয় কার্যবিবরণী – সিনেট
১৮ অক্টোবর, ১৯৭১ এস ১৭০৪০
পাকিস্তানী শরণার্থী
জনাব পার্সিঃ মহামান্য রাষ্ট্রপতি, পূর্ব পাকিস্তান থেকে শরণার্থীদের অনবরত আগমন ইতোমধ্যে ভারতের অতিরিক্ত বোঝাই সম্পদের উপর নিদারুন চাপ সৃষ্টি করছে। কারণ- শরণার্থীদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৯০ লাখ পেরিয়ে গেছে। তাই পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে যাওয়ার মাধ্যমে এই শরণার্থীদের স্রোত ঠেকানোর জন্য ভারতের উপর চাপ বেড়েই চলেছে। ভারত এবং পাকিস্তানের উপর এখন যুদ্ধের খড়গ ঝুলে আছে। ২৬ অক্টোবর, ১৯৭১ এ নিউ ইয়র্ক টাইম্স এ প্রকাশিত ম্যালকম ব্রাউনের একটি কলামে পাওয়া যায়, “৫০১ জন শত্রুপক্ষকে ভারত এবং ভারতের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করে” পশ্চিম পাকিস্তানিরা হত্যা করেছে। তাছাড়া, টাইম্স আরও বিবৃতি দেয় যে, “এই পরিসংখান থেকে প্রতীয়মান হয় যে ১৯৬৫ এর ইন্দো-পাক যুদ্ধের পর এখনকার লড়াই আরো তীব্ররূপ ধারণ করেছে”।
এটা খুবই স্পষ্ট যে, ইন্দো-পাক সীমান্তে সেনা মোতায়েন আসন্ন যুদ্ধের সম্ভাবনাকে আরও তীব্র করে তুলে। ১৭ অক্টোবর, ১৯৭১ ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়ঃ
“কোন পক্ষই যুদ্ধ চায় না সেটাই ভেবে নেয়া হয়। প্রধান বিপত্তি হল পূর্ব পাকিস্তানের সীমানায় দুর্ঘটনাবশত তীব্রতা বেড়ে যাওয়া।“
ভারতে ক্রমশই বাড়তে থাকা পাকিস্তানী শরণার্থী বিষয়টাকে আরও ঘোরতর করে তুলেছে। ১০ অক্টোবর, ১৯৭১ এ নিউ ইয়র্ক টাইম্সে সিডনি হিলেল স্ক্যানবার্গ বলেন-
“ভারতের শরণার্থী গ্রহনের সদিচ্ছা সীমাহীন নয়-এর অবশ্যই একটি সীমা আছে এবং তা খুব শীঘ্রই অতিক্রম করে যেতে পারে।”
সম্প্রতি আমি নিজে পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতে গিয়েছিলাম এবং স্বচক্ষে আটটি শরণার্থী শিবিরের দুঃখ ও দুর্দশা দেখে এসেছি। অক্টোবর ১৪ এর নিউ ইয়র্ক টাইম্সে ম্যালকম ব্রাউন উদ্ধৃতি দেন-
“-ভারতে পালিয়ে আসা এই লাখো অসহায় শরণার্থীদের স্রোত বিপরীত মুখী হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ”
অবশ্যম্ভাবীভাবেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এই অবস্থায়, সকল আগ্রহী জাতির উচিৎ ভারত এবং পাকিস্তানের মাঝে শান্তি বজায় রাখতে কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা চালানো এবং পাকিস্তানী শরণার্থীদের পূর্ব পাকিস্তানে নিরাপদে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করা। আমাদের নিজেদের জরাজীর্ণ বিভাগ এ উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
.
13.117.400-401
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
সিনেটর হ্যারিসের প্রস্তাব ও বিবৃতি | সিনেটের কার্যবিবরণী | ৫ নভেম্বর, ১৯৭১ |
এস১৭৬৫৬ নভেম্বর ৫, ১৯৭১
কংগ্রেশনালরেকর্ড- সিনেট
সিনেট প্রস্তাবনা ১৯০: নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরী অধিবেশন অনুমোদনের নিমিত্তে একটি রেজ্যুলেশানের জমাদান।
(পররাষ্ট্র সম্পর্ক সংক্রান্ত কমিটির সাথে সম্বন্ধযুক্ত)
মিঃ ম্যানসফিল্ডঃ জনাব প্রেসিডেন্ট, ওকলাহামার সিনিয়র সিনেটর জনাব হ্যারিসের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমি উনার পক্ষে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করছি এবং সেটা উনার বিবৃতির সাথে একত্রে মুদ্রিত হবে কিনা সে বিষয়ে সর্বসম্মত মতৈক্যের আহবান করছি।
প্রস্তাবনাটি নিম্নরুপঃ
সিনেট প্রস্তাবনা ১৯০
যেহেতু বিগত কয়েক সপ্তাহে দক্ষিন এশিয়া থেকে আসা বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনের (রিপোর্ট) ভিত্তিতে এটা প্রতীয়মান হয় যে, ভারত এবং পাকিস্তান সরকারের মধ্যে যে কোন সময় খুবই খারাপ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে; এবং
যেহেতু জনবসতিপুর্ন এই দুই দেশের মধ্যে যে কোন রকম সংঘর্ষ বিশ্ব শান্তির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় হতে পারে এবং এতে বাইরের শক্তির অন্তর্ভুক্তি ঘটতে পারে; এবং
যেহেতু গনপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবাই দক্ষিন এশিয়ায় উত্তেজনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে; এবং
যেহেতু অতীতে জাতিসংঘে গনচীনের অনুপস্থিতি দক্ষিন এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিভাব বজায় রাখতে ইচ্ছুক সকল পক্ষের পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে মুক্তভাবে মতবিনিময় কষ্টসাধ্য করেছে; এবং
যেহেতু গনচীন এখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তাদের আসন গ্রহন করতে প্রস্তুত আছে; এবং
যেহেতু নিরাপত্তা পরিষদে প্রত্যক্ষ কিমবা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত পক্ষগুলোর আশু মতবিনিময় দক্ষিণ এশিয়ার এই ভিতীকর সংঘর্ষপুর্ন অবস্থা এড়িয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে। সুতরাং, সেটাই হোক।
সিনেট মনে করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত জাতিসংঘে তার প্রতিনিধিদলকে “দক্ষিন এশিয়ার শান্তির জন্য হুমকি” শিরোনামে একটি বিষয় নিরাপত্তা পরিষদের সভার আলোচ্য সুচিতে আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ করার প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের উচিত হবে নিরাপত্তা পরিষদে দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে একটি জরুরী সভা আহবান করা।
জনাব হ্যারিসের বিবৃতিটি নিম্নরুপঃ
মিঃ হ্যারিসঃ জনাব প্রেসিডেন্ট, গনপ্রজাতন্ত্রী চীনের জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তির মধ্যে দিয়ে গোটা পৃথিবী বর্তমানে একটি নতুন কুটনৌতিক যুগে প্রবেশ করছে। বিশাল জনসংখ্যা আর ভৌগলিক আয়তনের কারনে বরাবরই গনপ্রজাতন্ত্রী চীনের অন্যান্য জাতির নিতীনির্ধারনী বিষয়াদিতে গভীর প্রভাব রয়েছে। কিন্তু যেহেতু এতদিন পর্যন্ত এ বিষয়টি বিচ্ছিন্ন ভাবে ছিল, এটা কোন আন্তর্জাতিক সংকটের মুহূর্তে অন্যদের সাথে মুক্ত এবং অবাধ মতবিনিময়ের ক্ষেত্রে বিজড়িত হয়নি।
বরাবর রাজনৈতিক নিস্পত্তিতে বিলম্বই ছিল এর পরিনাম। এটা কোরিয়ার ক্ষেত্রে সত্য ছিল। এটা ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও সত্যি হয়েছে। আর আজ এটা বিশেষভাবে দক্ষিন এশিয়ার ক্ষেত্রেও সত্য।
দ্বিতীর বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই চলমান দ্বন্দ্ব বিশ্ব শান্তির জন্য বিরাট এক হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে। এটা শুধুমাত্র বিশাল জনসংখ্যার দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে একটি যুদ্ধ না হয়ে সম্ভবত একটি ধর্ম যুদ্ধতে পরিনত হতে পারে যাতে কিনা অগনিত মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটবে। এমনকি সেখানে গোটা বিষয়টার সাথে সম্পর্কিত বাইরের শক্তিগুলো, বিশেষত চায়না, সোভিয়েত রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশগুলো জড়িয়ে যাবার মত মারাত্বক বিপদের আশঙ্কাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে গোটা বিশ্ব একটি মারাত্বক যুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে যে যুদ্ধ্বে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশই জড়িত থাকবে, দ্বিতীর বিশ্বযদ্ধের মানদন্ডে যা কিনা হবে এক মহা বিপর্যয়।
একেবারে শুরু থেকেই আমরা জেনে আসছি যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি রাজনৈতিক মীমাংসা/নিস্পত্তি খুবই দুরহ/কষ্টসাধ্য হবে। কারনটি স্পষ্ট। শুধুমাত্র ভবিষ্যত দোদুল্যমান নয়, এর সাথে জড়িয়ে আছে পৃথিবীর দুটি বৃহৎ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাবে টিকে থাকার বিষয়টি। কিন্তু, যে কোন পরিস্থিতিতে, যেটা সরাসরি জড়িত রাষ্ট্রগুলোর জন্য দুরহ, গনপ্রজাতন্ত্রী চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র সেটাকে অসম্ভব করেছে। অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে এবং এক পক্ষের প্রতি তাদের সমর্থনের মাধ্যমে এবং একইসাথে একটি রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারের পরষ্পরের মধ্যে মতবিনিময়ে ব্যার্থতার কারনে তারা একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তির ক্ষেত্রকে সুগম না করে বিলম্বিত করেছে।
আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বশান্তির জন্য ভয়াবহ হুমকিস্বরুপ এই অবস্থার সমাধানের জন্য আমাদের কোন রাজনৈতিক আলোচনার জন্য অপেক্ষা করা আর সমিচীন নয়। সরাসরি জড়িত রাষ্ট্রদুটি, ভারত ও পাকিস্তান, এবং পরোক্ষভাবে জড়িত অন্যান্য বৃহত শক্তিসমূহকে অবশ্যই সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। এবং এক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি মঞ্চই আছে যেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, সেটা হচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘকে একটি অবলম্বনহীন আদলতে পরিনত করার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অনেক অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষকেরা বিশ্বাস করেন যে, পৃথিবী হয়ত আক্ষরিক অর্থেই একেবারে খাদের প্রান্তে অবস্থান করছে। সুতরাং এখন আমাদের পৃথিবীর একমাত্র আলোচনার ক্ষেত্র, যেটা কিনা সকল আগ্রহী পক্ষগুলোকে তাদের প্রতিপত্তি কিম্বা অবস্থান খর্ব না করে একত্রে আনতে পারে, সেটাকে উপেক্ষা করার সময় নয়।
অতএব, আজ আমি এমন একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করছি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট মনে করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত জাতিসংঘে তার প্রতিনিধিদলকে “দক্ষিন এশিয়ার শান্তির জন্য হুমকি” শিরোনামে একটি বিষয় নিরাপত্তা পরিষদের সভার আলোচ্য সুচিতে আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ করার প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা। এবং একইসাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের উচিত হবে নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে একটি জরুরী সভা আহবান করা।
আমি এই রেজ্যুলেশানের পক্ষে সমর্থন প্রত্যাশা করি যাতে বিশ্ব এই বিপদ অনুধাবন করে এটার মুখোমুখি হয় এবং এটাকে অপসারনের বা পরিহার করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহনের এই অনন্য কূটনৌতিক সুযোগ উপেক্ষা করা উচিত হবে না এবং আমি যেটা মনে করি তা হচ্ছে আমরা সবাই জাতিসংঘে গনপ্রজাতন্ত্রী চীনের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করতে পারি।
.
13.118.402-403
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পাকিস্তানে সমরসম্ভার প্রেরণ বন্ধে সিনেটর কেনেডীর সন্তোষ ও চারদফা কর্মসূচী প্রদান | সিনেটের কার্যবিবরণী | ৮ নভেম্বর ১৯৭১ |
এস ১৭৮২১ ৮ নভেম্বর, ১৯৭১
কংগ্রেসনাল রেকর্ড-সিনেট
পাকিস্তানে সমরসম্ভার প্রেরণ বন্ধ
মিঃ কেনেডী – মিঃ প্রেসিডেন্ট, সকালে পাকিস্তানে সমরাস্ত্রের চালান বন্ধের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের যে খবর এসেছে, কিছুক্ষণ আগে স্টেট ডিপার্টমেন্ট (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) আমাকে তার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। আমি বুঝতে পারছি এই নির্দেশের ফলে ৩,৬০০,০০০ ডলারের চালান বন্ধ হয়ে যাবে, একই সাথে আরো প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্ভাব্য বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা ২৫ মার্চের পর মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ও পাকিস্তান দুতাবাসের মধ্যে সম্পাদিত ২৪ টি “প্রস্তাব ও সমঝোতা চুক্তি” অনুযায়ী হবার কথা ছিল। তবে এই নির্দেশে ইতোমধ্যে কাস্টমস ছাড়পত্র পাওয়া এবং নিউ ইয়র্ক থেকে যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় থাকা ১৬০,০০০ ডলার সমমূল্যের সমরাস্ত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমি এও জেনেছি যে মার্চের শেষভাগ থেকে পাকিস্তানে পাঠানো সমরাস্ত্রের নথিভুক্ত মূল্য প্রায় ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের জাতীয় নীতিতে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমি প্রশাসনকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আর কোন কিছুই পাকিস্তানে অব্যাহত মার্কিন সামরিক চালানের চেয়ে প্রকটভাবে পাকিস্তানের সামরিক শাসনপদ্ধতির প্রতি আমাদের ব্যাপক সমর্থনকে ফুটিয়ে তোলেনা, আর দক্ষিণ এশিয়া সঙ্কটে উদ্দেশ্য সাধনের নামে চলমান আমাদের নীতির দৈন্যতা পূর্ব বাংলায় চলমান অব্যাহত আগ্রাসন এবং ভারতমুখী শরণার্থীর স্রোতের চেয়ে নগ্নভাবে আর কোণ কিছুতেই ফুটে ওঠেনা।
কিন্তু, এমনকি এই শেষ মুহুর্তে নেয়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের পদক্ষেপকে আমি স্বাগত জানাই এবং আমি আশা করি এটি দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে আমাদের নীতিকে নতুন পথে ধাবিত করবে। এছাড়াও আমাদের দেশের আরো অনেক কিছু করার আছে। তার কিছু আমার গত সপ্তাহের রিপোর্টে উল্লেখিত হয়েছে। রিপোর্টটি সাম্প্রতিক সময়ে আমার ভারতে শরণার্থী শিবির ভ্রমণ এবং শরণার্থী বিষয়ক উপকমিটি, আমি যার চেয়ারম্যান, তাতে শোনা বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
এই অনেক কিছুর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক রেডক্রস মিশনের প্রতিনিধিদের সাথে অতি সত্ত্বর শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার জন্য আমাদের সরকারী তরফ থেকে সহায়তা প্রদান করা। এ ধরনের সাক্ষাত পাকিস্তান এবং পূর্ব বাংলায় মিশনের ঘোষিত কার্যাবলীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। শেখ মুজিব এবং সাথে সাথে কারাগারে অন্তরীণ আরো অনেক মানুষের কল্যাণ ও ভবিতব্যের ব্যাপারে ইতিবাচক তথ্য এই অঞ্চলে বিদ্যমান উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করবে। শেখ মুজিবের একমাত্র অপরাধ হল সামরিক শাসনের অধীনে একটি অবাধ নির্বাচনে জয়লাভ করা, যার ফলাফল পরবর্তীতে তারা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। শেখ মুজিবের একমাত্র অপরাধ হল সামরিক শাসনের অধীনে একটি অবাধ নির্বাচনে জয়লাভ করা, যে নির্বাচনের রায় মানতে সেই সামরিক শাসকেরা পরে অস্বীকৃতি জানায়। ইসলামাবাদের বর্তমান সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে শেখ মুজিবের নেতৃত্বের যে ভাবমূর্তি, তাতে তার প্রতি ন্যায়বিচার এবং তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ইসলামাবাদ এবং এর বিরোধী বাঙ্গালী প্রতিপক্ষের মধ্যে কোন রাজনৈতিক সমঝোতা উৎসাহিতকরণ এবং সম্পন্ন করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
দ্বিতীয়ত, অন্যান্যদের সহায়তায় আমাদের সরকারের উচিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটির আলোচনায় পূর্ব বাংলার বেদনাদায়ক ঘটনা আলোচ্যসূচিতে আনার জন্য পদক্ষেপ নেয়া। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন প্রতিনিধির এই বিতর্কে অংশ নেয়া উচিত এবং সাধারন পরিষদকে পূর্ব বাংলার বেদনাদায়ক ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে একটি প্রস্তাবনা প্রদানের জন্য সক্রিয়ভাবে সহায়তা করা উচিত, যেখানে সকল সংশ্লিষ্ট পক্ষকে একটি রাজনৈতিক সমাধানের দিকে এগুনোর আহবান থাকবে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদারহস্তে এই লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ-শিশুর ত্রাণকার্যে সহায়তা করার আহবান জানানো হবে।
একইসাথে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের শান্তির প্রতি সৃষ্ট হুমকী এবং তার ফলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদ্ধতি হাতে নেবার জন্য এর মহাসচিবের উদ্যোগের প্রতিও আমাদের সমর্থন জানানো উচিত। ২০ জুলাই তারিখে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনায় মহাসচিব এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এই বলেঃ
শান্তিরক্ষায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এবং পারস্পরিক সমঝোতা আনয়নে বিভিন্ন দক্ষতার কারণে আমাদের অনতিবিলম্বে ইতোমধ্যে ঘটে যাওয়া মানবিক বিপর্যয় থামাতে এবং পরিস্থিতির আরো অবনতি ঠেকাতে আরো জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে, করা উচিত।
অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। এখন, অন্যান্যদের সহায়তায়, আমাদের সরকারের উচিত অতি সত্ত্বর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তাবে সম্মতি প্রদান করা। এই প্রস্তাবে তিন মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় মোটেই শান্তির সুবাতাস বইছে না।
তৃতীয়ত, পূর্ব বাংলা এবং দক্ষিণ এশিয়ার অব্যাহত অবনতিশীল পরিস্থিতির বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ বোঝাতে মাননীয় প্রেসিডেন্টের অতি সত্ত্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য লোকেদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য একজন বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করা উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব এবং বিগত দিনগুলোতে পাকিস্তানকে করা বিভিন্ন কুটনৈতিক ও বস্তুগত সহায়তার ফলে আমাদের হাতে রয়েছে এক অনন্য সম্ভাবনা, যার দ্বারা আমরা ইসলামাবাদ ও এর বিরোধী বাঙ্গালী পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য প্রয়োজনীয় আচরণকে উৎসাহিত করায় নেতৃত্ব দিতে পারি, যা এই বিক্ষুব্ধ এলাকায় শান্তি আনয়নে সহায়তা করবে।
সবশেষে, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, যাতে ভারতের শরণার্থী এবং পূর্ব বাংলার দুর্ভিক্ষের ঝুকিতে থাকা জনগণের সহায়তার পিছনে আমরা যৌক্তিক কারণ তুলে ধরতে পারি।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ এশিয়া আজ এক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, যা এক বৃহত্তর মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে। আমি বহু মার্কিন জনগণের দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে বলছি, এই অঞ্চলের আজকের পরিস্থিতির পিছনে এ অঞ্চলের প্রতি আমাদের সরকারের নীতির বিশেষ ভূমিকা আছে, কেননা আমাদের বিগত দিনগুলোর নীতি পাকিস্তানের একগুয়েমীকে প্রশ্রয় দিয়েছে এবং তাতে ভারত এবং পূর্ব বাংলার জনগণ হতাশ হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের আজকের ঘোষণাই দায়মুক্তি নয়, বরং আরো অনেক পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের সাথে বেমানান ও দক্ষিণ এশিয়ার স্বার্থহানিকর ধ্বংসাত্নক বৈদেশিক নীতির পথ থেকে সরে আসার পথে এগিয়ে যেতে হবে।
.
13.119.404-405
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পাক-ভারত সংঘাতে আমেরিকা যেন অবশ্যই না জড়ায়ঃ সিনেটর এলেন | সিনেটের কার্যবিবরণী | ২৯ নভেম্বর, ১৯৭১ |
মি এলেনঃ জনাব প্রেসিডেন্ট ,এশিয়াতে চলমান হিউমান ট্রেজেডি কোনমতেই যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানো যাবে না, যেখানে ভারত পাকিস্তান নতুন করে সীমান্তযুদ্ব স্থাপন করেছে এবং সর্বোপরি যুদ্বের হুমকি দিচ্ছে।এটি এবারই প্রথম না যে এই বড় দেশগুলি একে অন্যের উপর চড়াও হয়েছে,কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না দেশগুলোর নেতারা বোধশক্তি ফিরে পাচ্ছে কম্যুনিস্ট চীন আর রাশিয়ার মধ্যকার ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক শত্রুতার ইন্ধনে এই খন্ডযুদ্ব একটি রক্তস্রোতে পরিণত হতে পারে।
রেড চীন এই যুদ্বে পাকিস্তানকে যোগান দিচ্ছে আর অন্যদিকে রাশিয়া আর ভারত গত এপ্রিলেই একটি সমঝোতা চুক্তি সাক্ষর করেছে।
ভারত পাকিস্তান কর্তৃক উপামহাদেশে চলমান মানব দুর্দশার ব্যাপারে আমিরিকানরা উদাসীন এটি দায়ী করা যাবে না।
গত ২৫ বছরে আমিরিকানরা ভারতকে ৮০ বিলিয়নেরও বেশী সহায়তা করেছে যেটি অন্য কোনো দেশ পায়নি ,শুধুমাত্র দক্ষিণ কোরিয়া আর দক্ষিণ ভিয়েত্নাম ছাড়া যেখানে এখনো আমাদের মিলিটারী ফোর্স রয়েছে।একই সাথে আমরা পাকিস্তানকেও সহায়তা করেছি ৪.৫ বিলিয়নের মতো।এবং এই পরিমাণ গত মাসে সিনেটে পাশকৃত ১৯৭২ বৈদেশিক অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজ এর অধীনে ভারত ও পাকিস্তানের জন্য বরাদ্বকৃত যথাক্রমে ৪১৪ মিলিয়ন এবং ২২০ মিলিয়ন এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত নয়।এবং সেটি গত বছরের ট্র্যাজিক টাইফুন এবং ভারতে আগত মোটামুটি ১০ মিলিয়ন পাকিস্তানী শরনার্থীদের রিলিফের জন্যে ব্যাক্তিগতভাবে আমেরিকানদের ডোনেশনের মধ্যেও অন্তর্ভূক্ত নয়।
ভারতের ৫৫০ মিলিয়ন এবং পাকিস্তানের ১১০ মিলিয়ন মানুষের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের এই মানবিক সহায়তা সত্ত্বেও আমরা এখন জানি যে দেশগুলো কম্যুনিস্ট রাশিয়া ও রেড চীনের সাথে মৈত্রী স্থাপন করেছে।আমরা আমাদের সাহায্য সহায়তা কর্মকান্ডের এই ধরণের মূল্যায়ন পেয়েছি।
যুদ্বে যাওয়ার জন্যে ভারত ও পাকিস্তানের দুঃখজনক জেদ প্রমাণ করে যে বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে গিয়ে যুক্ত্ররাষ্ট্রের এই দেউলিয়া অবস্থা।নিরাপত্তা পরিষদের সম্পূর্ণ অধিকার আছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও ক্ষমতা ব্যবহারের যখনই কোথাও শান্তির উপরে হুমকি আসে।
কিন্তু এই রেকর্ড স্পষ্টভাবে এবং অভ্রান্তচিত্তে বিশ্ব শান্তি সংরক্ষণ সংস্থা হিসেবে ইউ এন ের ব্যর্থতা চিত্রায়ন করে। ১৯৪৭ সাল থেকে,ইউ এন গঠনের মাত্র এক বছর পর পুরো বিশ্বজুড়ে ৭৪টি যুদ্ব অথবা বেসামরিক লড়াই সংঘটিত হয়েছে।কিন্তু শুধুমাত্র ১০টি পরিস্থিতে নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক শান্তিরক্ষা বাহিনী অথবা পর্যবেক্ষক দল পাঠানো হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এতে বেশীরভাগ সময়ে বিপুল পরিমাণ সহায়তা করেছে।যদিও কিছু কার্যকলাপ ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছে যেমন সুয়েজ ক্যানলের ধারে ১৯৬৭ সালে ইউ এন বাহিনীর আকস্মিক অপসারনের দরূণ সৃষ্ট হও্য়া ৬ দিন ব্যাপী ইসরেয়েল এবং আরব স্টেটস মধ্যকার যুদ্ব,যে যুদ্ব যেকোনো সময় আবারও শুরু হতে পারে।এবং ইউ এন এখন কিনারে দাড়িয়ে নতুন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ব দেখছে।
যুক্ত্ররাষ্ট্র ইউ এন এর উপর অহেতুক আস্থা রেখে চলেছে ,কিন্তু বিশ্বের আর কোনো দেশ শান্তিপূর্ণভাবে তার আন্তর্জাতিক বিরোধের সমাধানের ইচ্ছে পোষণ করে না।যেখানে লক্ষাধিক মানুষ নিয়মিত ক্ষুধা আর দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করছে সেখানে বিপুল জনসংখ্যার অন্নসংস্থার লক্ষ্যে কৃষি অর্থনীতির উন্নয়ন অথবা কর্মস্ংস্থান ও তাদের মানুষের উপযুক্ত জীবনধারণের উদ্দেশ্যে কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেয়ে ভারত ও পাকিস্তান সরকার যুদ্বের পিছনে টাকা খরচে অধিক আগ্রহী ।
আমাদের আর কিছুই পাওয়ার নেই এবং সব কিছু হারাতে হবে যদি আমরা আরো একবার বৈদেশিক বিরোধে মধ্যস্থতা এবং পক্ষ নেও্য়ার চেষ্ঠা করি।সম্প্রতি কংগ্রেসের চাপের কারণে প্রেসিডেন্ট সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের মিলিটারী রসদ এর বিলি বিচ্ছিন্ন করবেন এবং আমি আশা রাখি উনি যুক্তরাষ্ট্রকে এই সমাধানের অযোগ্য বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে রাখতে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
যদিও আমি ব্যথিত মানব দুর্দশা ব্যাপারে যেখানেই হোক না কেন ,তথপি আমি ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান বিরোধ এর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার বিরুদ্বে।
.
.
13.120.406
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
সংকট গভীরতম হচ্ছে ফ্রিনিংঘুসেন | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
মি। ফ্রেলিংঘুসেন ঃ জনাব স্পীকার, আমরা সকলে জানি যে গতকাল আমাদের সরকার ভারতকে আর্ম শীপমেন্টের লাইসেন্স প্রদান স্থগিত করেছে।অতি স্বাভাবিক যে এই সিদ্বান্ত আমাদের দেশে হেডলাইনে জায়গা পাচ্ছে।এটি আশা করা যায় যে এই সিদ্বান্ত ভারত উপর প্রভাব ফেলবে।
আমার মতে ,এই পদক্ষেপ সময়োপযোগী এবং যথাযথ।পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশ শান্তির বিরুদ্বে গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হয়ে দাড়াচ্ছে।যদি ঐ অঞ্চলের এখনকার রিপোর্টের যথযথতা খতিয়ে দেখবার সুযোগ নেই,ভারত নিজেই স্বীকার করেছে যে তার বাহিনী ৫ মাইলেরও বেশী ভিতরে প্রবেশ করেছে।এটি সুস্পষ্ট যে ভারত নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে পাকিস্তানের উপরে তার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রয়োগ করছে।
এই সিদ্বান্ত দুঃখজনক এবং ঝুকিতে পরিপূর্ণ।ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে জানা নেই।অন্তত আমার কাছে এতি অশুভ সংকেত।মি স্পীকার,মিসেস গান্ধী পাকিস্তানের নিজেরদের সীমানায় সৈন্য ঘাঁটি স্থাপনের অধিকারের উপ্র চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
ভারতের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত,জনাব মহারাজকৃষ্ণা রাসগোপত্রা অতি দুঃখের সহিত জানিয়েছে যে “এটি কোনো কিছুই সমাধান করবেন না এবং বাংলায় কোনো রাজনৈতিক সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে না”
প্রশ্নাতীতভাবে জনাব স্পীকার আমাদের সরকারের সিদ্বান্ত এই পরিস্থিতির কোনো ‘সমাধান’ আনবে না।তবে এটি সুস্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র সবার উপরে একটি রাজনৈতিক সমাধান চায়,যেটি আনা আমাদের ক্ষমতার বাইরে।
সমস্যা হল ভারত এমনভাবে আচরণ করছে যেন তারা সামরিকভাবেই এটি সমাধানের সিদ্বান্ত নিয়ে ফেলেছে।যদি এটি হয় তবে আমাদের স্বীকার করতে হবে যে আমরা তার এই মনোভাব বদলাতে পারব না।আর্ম শীপমেন্ট স্থগিত করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারতের সিদ্বান্তের প্রতি ক্ষোভ জানাছে ।ভারতের নেয়া এই সামরিক হঠকারিতা একটি বড় ধরণের বিপর্যের প্ররোচনা দিচ্ছে এবং সর্বোপরি যুদ্বের সম্ভাবনা বৃদ্বি পাচ্ছে, যদি না এই অবস্থায় সংযত প্রদর্শন করা হয়।
.
13.121.407-411
শিরোনাম – সিনেটের প্রস্তাব – ২০৭, সিনেটর হ্যারিসের বক্তব্য এবং প্রেসিডেন্ট নিক্সনের উদ্দেশ্যে সিনেটরদের পত্র
সুত্র – সিনেটের কার্যবিবরণী
তারিখ – ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
এস২০৫৮০ কংগ্রেশনাল রেকর্ড – সিনেট
৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির জন্যে হুমকি সম্পর্কিত সিনেট রিজল্যুশন – ২০৭ উপস্থাপন
(বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির প্রতি নির্দেশিত)
মি. হ্যারিস – মি.প্রেসিডেন্ট, এই প্রশাসনের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কিত অধ্যায় দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ইতিহাসবিদদের অবশ্যই মনে থাকার কথা। প্রেসিডেন্টের গ্রেট ওয়াল সফরের কথা মানুষের মন থেকে মুছে যাওয়ার পর ১৯৭১ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক দুর্যোগের সময় নিক্সন প্রশাসনের ভূমিকার কথা লোকজনের মনে পড়বে।
মাসের পর মাস প্রশাসনের মিত্র এবং সমালোচকগণ দক্ষিণ এশিয়াকে বিশ্বশান্তির নতুন বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন – তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, এশিয়ায় আমেরিকার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিক্তির উপর ঝুলায়মান। আমাদের অপ্রতিরোধ্য নীতি দিয়ে আমরা দুই পক্ষের সংঘর্ষের ইন্ধন দিয়েছি। পাকিস্তানকে যথাসময়ে সাহায্য না দিয়ে তাদের ক্ষতি করেছি কারণ এতে করে নিজেদের জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলা হতো। অপরদিকে পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক নির্মম হত্যাযজ্ঞ বন্ধে ভারতের আবেদনে সাড়া না দিয়ে তাদের ও অপমান করেছি।
এপ্রিলে আমি পাকিস্তানকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেই । সহকারী স্বরাষ্ট্র সচিব সিসকোর সাথে কঠিন শর্তে এ ব্যাপারে আলোচনা করি,যাতে এ ব্যাপারে কেউ জানতে না পারে।
সর্বোপরি এটি একটি স্মরণীয় কাজ ছিল। মিত্রদের প্রতি সদয় হওয়া এবং বিবেকের তাড়না – এই দুইয়ের যে দ্বন্দ্বার্থক আহবান,তাতে গতকাল পর্যন্ত এই প্রশাসন একটি অনৈতিক সমর্থন অব্যাহত রাখে,যার চূড়ান্ত পরিণতি হলো পুরোদমে পাক – ভারত যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়া,যাতে একদম অন্তিম সময়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে সহকারী স্বরাষ্ট্রসচিব সিসকোর সাথে এসব সুবিধা না দেওয়ার ব্যাপারে কথা বলি।
বড় কথা হলো,এটি একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার ছিল। জাতীয় মতবিরোধী,মিত্রদের ছলছাতুরী এবং তাদের নিজস্ব বিবেক খাটিয়ে প্রশাসন একটি দেউলিয়া এবং অনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করে যা পাক-ভারত যুদ্ধে রূপ নেয় এবং সেটা প্রত্যাশিত ছিল। এবং শেষ সম্ভাব্য মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহে পিছিয়ে গেলো এবং তাদের বিলম্বিত এবং বিদ্বেষপূর্ণ কর্মকাণ্ডে সামঞ্জস্য আনার জন্যে ওরা ভারতে সামরিক জাহাজ পাঠাবে না বলে ঘোষণা দিলো এই সপ্তাহে তারা আমেরিকানদের সাথে ছিল কিন্তু পরবর্তীতে প্রধান অস্ত্র সরবরাহক হিসেবে রাশিয়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
মি. প্রেসিডেন্ট, গত কয়েকমাসের রেকর্ড একটি বিষয় প্রমাণ করে। মহাকৌশলের অনুমিত আঁকড়ে পড়ে থাকা কখনোই বিবেকবোধ এবং সমবেদনার পরিপূরক হতে পারে না। ড. কিসিঞ্জার একজন মেধাবী মানুষ হিসেবে স্বীকৃত এবং মি. নিক্সন পররাষ্ট্রনীতিতে তার অতীত অর্জনের জন্যে প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু যখন প্রেসিডেন্ট এবং তার উপদেষ্টাগণ পিকিং এ একটি প্রতীকী সফরের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকেন, তখন তাদের দেখে মনে হয় না তারা দক্ষিণ এশিয়ায় ঘটতে যাওয়া মানবিক নাটকের ব্যাপারে চিন্তা করে সময় নষ্ট করতে চান। এবং আমি মনে করি,এই সফর যতই প্রতীকী হোক – আমি স্বীকার করছি বিশ্ব শান্তির বিপর্যয় ঠেকাতে এবং আমাদেত জাতীয় ইমেজের অবনমন রোধে এটা খুব কম প্রভাব ফেলবে যে, আপনার প্রশাসনের অবহেলাই ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ ঘটিয়েছে। যদি ৭৫০ মিলিয়ন লোকের জন্যে আপনার চীন সফর করা লাগে, তবে ভারতে বসবাসরত ৬৯০ মিলিয়ন লোককে ও আপনার অবহেলা করা উচিত নয়।
কিন্তু এখন কী করা যায় – যুদ্ধ তো শুরু হয়ে গেছে। এখন এই একটা ভুলের ফলে ভারত এবং পাকিস্তানের একটা জেনারেশন আমাদের অবিশ্বাস করতে থাকবে ।
আমি বলি,সমস্যার বাস্তবতা বুঝে আমরা একটা শেষ চেষ্টা করে দেখতে পারি।
প্রথম বাস্তবতা হলো, পাকিস্তানের আগের অবস্থা এখন আর নেই। এই যে আগের অবস্থায় না থাকা এর কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ নেই কিন্তু এর শুরু হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানে তাদের রক্তচোষা শোষণের মাধ্যমে, একগুঁয়েমির মাধ্যমে এবং তাদের কিছু মূর্খ পরামর্শদাতা কমিউনিস্ট চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা।
দ্বিতীয় বাস্তবতা হলো,পৃথকভাবে পাকিস্তানের অস্তিত্ব টিকে থাকা। যদিও এখনো এই দুটি অংশ কীভাবে বিকশিত হবে সেটা স্পষ্ট নয়।তারা পৃথক এবং স্বাধীন অংশ হয়ে যেতে পারে। অথবা পূর্ব পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতার দাবি পূরণ করে তারা একত্রেও থাকতে পারে। আমার ব্যক্তিগত মত হলো, একটি স্বাধীন বাংলাদেশ এখন অপরিহার্য। কিন্তু পাকিস্তানের উচিত একটা শেষ চেষ্টা করা যাতে এরা শান্তিপূর্ণভাবে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় বাস্তবতা হলো, এই সমস্যা এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে জাতিসংঘের প্রতি যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র তার দ্বারা শান্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণবিতর্কের একটা গুণ সবসময় থাকে সেটা হলো,এটি জাতিকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে যায়, যার মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে অরক্ষণীয় পলিসিকেও রক্ষা করা যায়।
ভারত পাকিস্তান সংকটের ব্যাপারে চুপ থাকার যে আন্তর্জাতিক ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে তাতে করে এটা বলা যায় যে,এ ব্যাপারে আগ্রহী প্রত্যেকটি পক্ষই যে রকম থাকার কথা ছিল,তার চেয়ে কম আগ্রহ দেখাচ্ছে।
নিরাপত্তা পরিষদ আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে পাকিস্তানের সন্ত্রাস এবং হত্যাযজ্ঞ মোটাদাগে কমানো যেতো।
জাতিসংঘ বিষয়টি নিয়ে আগে থেকে ভাবলে ভারত যাদের প্রতি সহানুভূতিশীল তাদের বিরুদ্ধে তাদের ঘৃণিত প্রতিপক্ষ দিয়ে এই ট্রাজেডিকে লেলিয়ে দিতে পারতো না।
জাতিসংঘ এই পদক্ষেপ বন্ধ করলে কমিউনিস্ট চীন কীভাবে তাদের সুপরিকল্পিত ব্যবস্থার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে নারকীয় হত্যাকান্ডে মদদ দিয়েছে সেটা স্বীকার করতে বাধ্য হতো।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দ একটা পাবলিক ঘোষণা চাইলে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র এই নৃশংসতম হত্যাকান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে পাওয়ার পলিটিক্সকে উসকে দেওয়ার মত একটা অনৈতিক কাজ সম্পর্কে একটা ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হতো।
মি. প্রেসিডেন্ট, কেনেডির সময়কালের এবং আমাদের ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ের কথা একজন মহান আমেরিকান বোলস ভয়ার্তভাবে তার ডায়েরিতে লিখেছেন – যেসব অফিশিয়াল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের নৈতিক অবনমনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা বিপদেত সময় কোনো কুল কিনারা করে উঠতে পারে না।
এসব ক্ষেত্রে নৈতিক ক্ষেত্রে সৎ থাকার অপপ্রয়াস হিসেবে তথ্যে পক্ষপাতিত্ব থাকে, যা যুদ্ধের জন্যে অনুপ্রেরণাদায়ক। এবং এসব ক্ষেত্রে পাওয়ার পলিটিক্সের যারা অনুরাগী তারা নৈতিকতাকে অপ্রাসঙ্গিক মনে করে এবং পথ হারিয়ে ফেলে।
রাষ্ট্রদূত বোলসের এই পর্যবেক্ষণ হলো – এই সমস্যায় আমেরিকার অবনমন ছাড়া এটা কোথাও এতটা সত্য নয়। প্রেসিডেন্ট এবং তার উপদেষ্টাগণ যখন এই পলিসি নিয়ে ভাবছিলেন তখন মিলিয়ন মিলিয়ন লোক শরণার্থী হচ্ছিলো এবং লাখ লাখ লোক মারা যাচ্ছিলো
আমি জানি ওরা ভদ্র এবং ভদ্রলোক হিসেবে তাদের নিজেদের বিবেকের কথা শোনা উচিত। কিন্তু তারা শোনে নি। এখন ওরা আমেরিকার একটা জাতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কে এখানে টেনে নিয়ে এসেছে। তারা পরোক্ষভাবে এই শতাব্দীর সবচেয়ে নৃশংস সন্ত্রাসবাদে আমেরিকাকে অংশগ্রহণ করিয়েছে এবং শান্তি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। তারা একটি যুদ্ধ ডেকে এনেছে এবং এই চেম্বারের কেউ এর ফলাফল সম্পর্কে জানে না। আমি এখনো মনে করি,সঠিক কাজটি করতে আমাদের খুব দেরি হয়ে যায় নি।আসুন,এই ব্যাপার নিয়ে আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যাই,যেটা আমি এবং অন্যরা কয়েক সপ্তাহ আগে আহবান জানিয়েছিলাম। এখানে সব বড় বড় শক্তিগুলো চাইলে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাদের ও অংশগ্রহণ করতে বলা যায়,তবে সেটা স্বাধীন বাংলাদেশের উপর প্রভাব না খাটিয়ে এবং তাদের প্রতিনিধিসহ। এক্ষেত্রে আমরা পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দিতে পারি না।
সবশেষে, আমরা যে অসহায়ত্বের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তার প্রতি সৎ থাকার জন্যে নিজেদের জোর কর্তে পারি।
মি.প্রেসিডেন্ট, আজকে আমি একটা রিজলুশন উপস্থাপন করতে যাচ্ছি, যাতে সিনেটর বেহ,ক্রানস্টন,হার্ট,হ্যাটফিল্ড,হামফ্রে,ম্যাগোবার্ন,মনডেল,টুনে এবং উইলিয়ামসনসহ যা সিনেটের একটি বিষয়ে ঘোষণা দিবে যে,যুক্তরাষ্ট্র এই কোর্সটি অনুসরণ করে।
মি. প্রেসিডেন্ট, এই প্রশাসনের এবং সরকারের সদস্যরা তাদের বিবেকবোধ থেকে আমেরিকার হয়ে কথা বলবে।
সিনেট রিজল্যুশন ২০৭
যেহেতু উপমহাদেশের ভারত এবং পাকিস্তান সরকারের মধ্যে চলমান নিষ্ঠুরতার মধ্য দিয়ে একটি যুদ্ধ পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে; এবং
যেহেতু দুটি জনবহুল দেশের মধ্যকার এই দীর্ঘায়িত যুদ্ধ বিশ্বশান্তির জন্যে দুর্যোগ বয়ে আনবে এবং বহিঃশক্তিকে যুদ্ধে জড়াবে; এবং
যেহেতু যুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত পক্ষসমূহের নিরাপত্তা পরিষদে একটি মতবিনিময় সভার মাধ্যমে এই ভয়ানক সংঘর্ষ কমিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির পথ সুগম করা যায়; এবং
যেহেতু রাজনৈতিক এবং সামরিক সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে একটি গৃহযুদ্ধের অবস্থা দৃশ্যমান ; এবং
যেহেতু নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় সকল পক্ষই প্রতিনিধিত্ব করবে ; এবং
যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় চলমান অস্থিরতা নিয়ে খুব চিন্তিত, সুতরাং এর সমাধান হওয়া উচিত। সিনেট এটা মনে করে যে,
ক) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে “ দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির প্রতি হুমকি” শীর্ষক প্রস্তাবনা রাখবেন।
খ)যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ একই সাথে নিরাপত্তা পরিষদে যত দ্রুত সম্ভব একটি জরুরী সেশন আয়োজনের আহবান জানাবেন।
গ)বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা পরিষদের বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ একটি দাপ্তরিক প্রস্তাব রাখবেন ; এবং
ঘ)যদিও চলমান নৈরাজ্য বন্ধ করাই হবে নিরাপত্তা পরিষদের কাজ,যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদল সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন শেখ মুজিবের মুক্তির জন্যে, যাতে করে বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো যায়।
——-
দি প্রেসিডেন্ট
দি হোয়াইট হাউজ
ওয়াশিংটন ডিসি
ভারতের সাথে পাকিস্তানের চলমান যুদ্ধ সম্ভবত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধ, এবং সেটা কেবল বিশাল জনসংখ্যার জন্যে কিংবা অসংখ্য মৃত্যু ও একটি সম্ভাব্য ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক যুদ্ধের জন্যে নয়,বরং এর মাধ্যমে যে চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র কে টেনে নিয়ে আসা হয়েছে সেটাও এরর ভয়াবহতার কারণ।
আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারী সিনেট সদস্যগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বিশ্ববাসী এই এই ভয়ানক যুদ্ধ থামানোর জন্যে কোন ধরণের কুটনৈতিক কনভেনশনের অপেক্ষা করবে না।শুধুমাত্র একটি সংগঠনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত দুটি পক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত পক্ষসমূহের মধ্যে আলোচনায় বসতে পারে। সেটি হলো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
ভারত এবং পাকিস্তানের সংঘাতের মূল কারণ হলো পূর্ব পাকিস্তানের গণমতের উপর চাপ প্রয়োগ, এর ফলে অসংখ্য মানুষ ভারতে শরণার্থী হয়েছে যারা ভারতের উপর বোঝা। আমরা আরো বিশ্বাস করি যে,নিরাপত্তা পরিষদ বাংলাদেশ থেকেও প্রতিনিধি আহবান করবে।
এইসব দাবিগুলো মনে রেখে আমরা আপনাকে সম্মানের সাথে অনুরোধ করছি যে,
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে “ দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির প্রতি হুমকি” শীর্ষক প্রস্তাবনা আলোচ্য সূচিতে লিপিবদ্ধ করার প্রস্তাব রাখবেন এবং একই সাথেএকই সাথে নিরাপত্তা পরিষদে যত দ্রুত সম্ভব একটি জরুরী সেশন আয়োজনের আহবান জানাবেন।
যদিও চলমান নৈরাজ্য বন্ধ করাই হবে নিরাপত্তা পরিষদের কাজ,যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদল সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন শেখ মুজিবের মুক্তির জন্যে, যাতে করে বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো যায়।
ভারত পাকিস্তান এবং অন্য তিন প্রভাবশালী দেশের এই যুদ্ধ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ ভাগ লোকের সরাসরি ক্ষতি করবে। এই সম্ভাব্যতার পছন্দের ক্ষেত্রে, কারো মতামত যা ই হোক না কেন, এই দুর্যোগের তীব্রতা এতই প্রকট যে,এই সংকটকালে শান্তি আনয়নের জন্যে যুক্তরাষ্ট্র সব ধরণের পদ্ধতিই অনুসরণ করবে।
ওয়াল্টার এফ মনডেল,বব প্যাকউড,
ফ্রাঙ্ক ই মস,লি মিসাল্ফ,বার্চ বেহ,
ফিলিপ এ হার্ট,ফ্রেড,আর হ্যারিস, এলান ক্রানস্টন,উইলিয়াম প্রক্সমায়ার,জন বি টুনে, হার্বার্ট এইচ হামফ্রে।
ইউএস সিনেটরস
.
13.122.412
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশের প্রতি ভারতের স্বীকৃতি যুদ্ধের আগুনে ইন্ধন যোগাবেঃ সিনেটর বায়ার্ড | সিনেটের কার্যবিবরণী | ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
কংগ্রেশনাল রেকর্ড – সিনেট
এস ২০৬২১ ৬ ডিসেম্বর,১৯৭১
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো
পশ্চিম ভার্জিনিয়া রাজ্যের সিনেটর বায়ার্ড বলেছিলেন, “জনাব প্রেসিডেন্ট, ভারত-পাকিস্তান বিরোধটি যে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে মোড় নিচ্ছে, সে ব্যাপারে গত বুধবার,১ ডিসেম্বর আমি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলাম এবং এই রক্তক্ষয় এড়াবার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানিয়েছিলাম।
ভারত ও পাকিস্তান থেকে আসা খবরগুলো পরস্পরবিরোধী হলেও আমার আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কোনো পক্ষই আর কোনো ধরণের সতর্কতার ধার ধারছে না বলে মনে হচ্ছে। আজ সকালের রেডিওর খবর অনুযায়ী, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতের এ পদক্ষেপ পাকিস্তানকে আরো ক্রুদ্ধ করে তুলবে এবং যুদ্ধের আগুনে ঘৃতাহুতি দেবে।
গত রাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণের উদ্যোগে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান আসলেই এ ধরণের প্রস্তাবে কান দিত কি না, সেটা অবশ্য নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই, কিন্তু এই সংঘাত এড়িয়ে যাবার যে সামান্য সম্ভাবনা ছিল, ভেটো প্রয়োগের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনয়ন তাকে নস্যাৎ করে দিলো। এটি আমার মতে অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ক্ষমার অযোগ্য।
জনাব প্রেসিডেন্ট, আমি শুধু এই আশাবাদই ব্যক্ত করতে পারি, রাশিয়ানদের এমন নেতিবাচক পদক্ষেপ যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে একটি বাধা, তা গোটা বিশ্বের কাছে স্পষ্ট হবে। আমি আরো আশা করি, রক্তপাত থামাতে ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনে জন্য ভারত ও পাকিস্তানকে রাজী করাবার জন্য আরো উদ্যোগ নেয়া হবে।
.
13.123.413-414
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
শরণার্থীরা স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত সঙ্ঘর্ষ থামবে নাঃ সিনেটর কুপার | সিনেটের কার্যবিবরণী | ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
এস ২০৬৮৬ কংগ্রেস সভার কার্যবিবরণী ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ
বিধানিক অধিবেশন।
মিস্টার কুপার, জনাব রাষ্ট্রপতি, পাকিস্তান ও ইন্ডিয়ার মাঝে একটি পূর্ণ আকারের যুদ্ধ শুরু হয়েছে যার প্রধান কারণ হচ্ছে পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং নয় হতে দশ লক্ষ উদ্বাস্তুর ভারত গমন। ইতিমধ্যেই উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচুর হতাহতের খবর পাওয়া গিয়েছে, যেহেতু ইন্ডিয়ান এবং পাকিস্তানি আর্মি যুদ্ধের আধুনিক অস্ত্র নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালনা করছে।
ভারত এবং পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর এই নিয়ে তৃতীয়বার দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পাকিস্তানে ভয়াবহ মর্মান্তিক অবস্থার চূড়ান্ত পদক্ষেপ। এটা আমার দৃষ্টিভঙ্গি যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উপস্থিত সংঘাতের অবসান হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হবে যা নিশ্চিত করবে যে নয় হতে দশ লক্ষ উদ্বাস্তু পাকিস্তানে নিরাপদে ফিরে যেতে সক্ষম হবে, যারা পাকিস্তান সরকারের দমনমূলক কর্মসূচীর কারণে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।
সরকারের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে যথাযথ আইন প্রয়োগের ব্যবস্থাকে আমি এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি যার ফলে আশা করা যাচ্ছে যে ভারত উপমাহাদেশের এই যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব হবে।
নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পদক্ষেপ নেয়া।
জাতিসংঘের সনদের ৩৩ তম নিবন্ধটির অধীনে উপলব্ধ করা হয় যে, জাতিসংঘের কোনো সদস্যের যুদ্ধ সংক্রান্ত ব্যাপারে অনুরোধের ফলে যদি দেখা যায় যে আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণ বিপন্ন করার সম্ভাবনা রয়েছে,তাহলে তারা সমস্যার সমাধান চাইতে পারে আপস, তদন্ত, মধ্যস্থতা, মীমাংসা, সালিসি, বিচারিক বন্দোবস্ত, রিসোর্ট আঞ্চলিক সংস্থা বা ব্যবস্থা বা তাদের নিজস্ব পছন্দের অন্যান্য শান্তিপূর্ণ পদ্ধতির দ্বারা ।
আমি আশা করি যে নিরাপত্তা পরিষদ যে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ভারত ও পাকিস্তান সরকারের নিরাপত্তা পরিষদ তা ভালোভাবে গ্রহণ করবে যাতে খুব দ্রুত যুদ্ধটি শেষ করার ব্যবস্থা নেয়া যায়।
জাতিসংঘ তৈরি করা হয় যেন বিশ্বের দেশগুলি শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিরোধ সমাধান করতে পারে এবং বিবাদ ও বিরোধ রোধ করার জন্য যাতে তা যুদ্ধের দিকে মোড় না নেয়। এই দায়িত্ব সম্পর্কে তাদের ধারণা থাকা উচিত যে তাদের মূল উদ্দেশ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অথবা চীন গণপ্রজাতন্ত্রীর স্বার্থ নয় বরং পুরো বিশ্বের মানুষের বিশ্বাস ধরে রাখাটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের উচিত জাতিসংঘকে বাধ্য করা যাতে তারা নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব পালন করে অথবা সাধারন সভার মাধ্যমে তা পালন করে যদি নিরাপত্তা পরিষদ ব্যর্থ হয়।
আমি এক মিনিট আগে বলা বক্তব্যটি পুনরায় বলতে চাই যে, আমি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্যাটি তুলে ধরেছি। এবং বলেছি যে এর প্রধান কারণ হচ্ছে পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং ৯ হতে ১০ লক্ষ উদ্বাস্তুর ভারত গমন। কিন্তু এখন যেহেতু তারা যুদ্ধে উপনীত হয়েছে আসল প্রশ্ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কি তাদের দায়িত্ব নিবে যারা তাদেরই অন্তর্গত। আমি আশা করি এমনটাই হবে।
———————————————————————–
.
13.124.415-416
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ভেটোঃ কংগ্রেস সদস্য রেরিক এবং জেরাল্ড ফোর্ড-এর মন্তব্য | প্রতিনিধি পরিষদ কার্যবিবরণী | ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ কংগ্রেশনাল আভ্যন্তরীণ রেকর্ড এইচ ১১৭৮৯
জাতিসংঘের কফিনে আর একটি গজাল
জনাব র্যারিকঃ জনাব স্পীকার, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সপ্তাহান্তের কার্যকলাপ সবার চোখ খুলে দিতে পারে যারা কোনভাবে বিশ্বাস করেন যে জাতিসংঘ শুধুমাত্র বিশ্ব শান্তির পাথেয় হিসেবে কাজ করে।
রাশিয়া, দুইবার অস্ত্রবিরতি ও যুদ্ধবিরতির সমাধান কে প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে এইটাই প্রমাণ করেছে যে তারা বিশ্বের শান্তিতে বিশ্বাস করে না যখন জয় তাদের পক্ষে। বেশ লক্ষণীয় যে, জাতিসংঘের উল্লেখিত পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মধ্যমপন্থী অস্ত্রবিরতির এবং সীমানা থেকে ফেরত যাওয়ার যে সমাধানের তারা বিরুদ্ধে অবস্থান করছে তার একেবারেই বিপরীতে তারা অবস্থান করছে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে।
যুক্তরাষ্ট্র, যা জাতিসংঘের শান্তিপ্রক্রিয়াকে খর্ব করে তারা প্রথমে কোনো পক্ষকেই সমর্থন দেয় নাই এবং যখন তারা উভয়দিককেই হারানোর ভয় পায় তখন তারা অদ্ভুত যুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানকে সমর্থন করে আর এই যুক্তি হল তারা যেহেতু ভারতকে সমর্থন করে না সুতরাং পাকিস্তানই তাদের সমর্থনের দাবীদার। যেহেতু সোভিয়েত সবসময় বৃহত্তম জনসংখ্যার সঙ্গে অসমর্থন করে এবং কিছু কারণে সংখ্যালঘু-সচেতন সুতরাং এইরকম আক্রমনাত্মক ঘটনায় কম জনবহুল দেশের প্রতি সোভিয়েত পক্ষাবলম্বন কাউকে অবাক করার কথা নয়।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী এই ব্যাপারে এবং তারা কমিউনিস্ট দলগুলোর দ্বারা বহুল আলোচিত এবং বিতর্কিত কারণ তাদের আঞ্চলিক বিষয়গুলোর সমন্ধে বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তৃতার আড়ালে বহু নিরীহ মানুষ আবার যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছিল।
আমি মনে করি যে আমেরিকান মানুষজন রাষ্ট্রপতির উল্লেখিত অবস্থানকে সমর্থন করে একটি সার্বভৌম জাতি হিসেবে চায় যে তাদের ক্ষমতার অন্তর্গত সবকিছু করার হোক, প্রথমত, যুদ্ধ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা, এবং দ্বিতীয়ত,কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব বন্ধ করতে চাপ প্রয়োগ।
জাতিসংঘের ব্যর্থতা প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রের বুঝতে পারা উচিত যে জাতিসংঘের আমলাতন্ত্রের তুলনায় অনেক ভালোভাবে তারা নিজেরাই এই সমস্যার সমাধান অর্জন করতে সক্ষম।
ভারত পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবনা
জনাব জেরাল্ড আর. ফোর্ডঃ জনাব স্পীকার, ঘটনাক্রমে, তখনই ভারত-পাকিস্তান লড়াই তীব্রতর হয় যখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক গৃহীত যুদ্ধবিরতি এবং দ্বিপাক্ষিক সেনা প্রত্যাহারের প্রচেষ্টা সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
জনাব স্পীকার, জাতিসংঘের এখন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির রুপরেখা পরিচালনার দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদ থেকে সরিয়ে সাধারন সভার নিকট হস্তান্তর করা আবশ্যক। একমাত্র সেখানেই বিশ্বের শান্তিকামী জাতিরা তাদের ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারবে।
যদি এই প্রাণসংহারক যুদ্ধ থামাতে হয়, তবে অবশ্যই ভারত এবং পাকিস্তানকে তাদের সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার করে নিজ নিজ এলাকায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মোটকথা, জাতিসংঘে প্রবর্তিত যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবনার বিধানগুলো আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। সোভিয়েতের ভেটো উদ্ভূত পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করতে পারেনা। পারে শুধুমাত্র যুদ্ধ বন্ধ করে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার কোন রাজনৈতিক মীমাংসা।
জনাব স্পীকার, অপেক্ষমান বৈদেশিক সহায়তা বিলে ভারতের জন্য ৮৪,৩৫০,০০০ ডলার মূল্যের আর্থিক সাহায্য বরাদ্দ আছে। আমি নিশ্চিত ভারত তার নিজসৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় সাহায্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিকট আবেদন করবে। আমি বিশ্বাস করিনা যে, আমেরিকার জনগণ এবং তাদের কংগ্রেস প্রতিনিধিরা এধরনের আবেদন গ্রাহ্য করবে যা পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রয়াসে ভারতের সৈন্য নিযুক্তকরনে সহায়তা করবে। অর্থাৎ, যে দেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সহযোগীতা করতে অস্বীকৃতি জানায়, সে দেশ আমেরিকার জনগণ বা কংগ্রেসের কাছ থেকে কোন অনুকূল পরিবেশ আশা করতে পারেনা।
———————————————————-
.
13.125.417
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস সদস্য মিঃ সাইকাস | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী এইচ১১৮৮৯
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের নগ্ন আক্রমণ
মিঃ সাইকাস। মাননীয় স্পিকার, আমি নিশ্চিত যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের নগ্ন আক্রমণে আমেরিকা এবং বিশ্ব হতভম্ব। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর পূর্ব পাকিস্তানে নগ্ন আক্রমণে পৃথিবীর ঐ প্রান্তে শান্তি বজায় রাখতে ও পূর্ব পাকিস্তানে শৃঙ্খলা ও শৃঙ্খল সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আমাদের ও অন্যান্য রাষ্ট্রের সামর্থ্য ধ্বংস হয়েছে। অন্য রাষ্ট্রের স্বকীয়তা বিনষ্টে ভারত কর্তৃক এই নগ্ন যুদ্ধ কোরিয়া ও ইন্দো-চীনে কমিউনিস্ট আগ্রাসনের উদাহরণগুলোর সবচেয়ে সতেজ উদাহরণ যা আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখতে পাই।
আমরা সামরিক শক্তির দ্বারা একটি নতুন জাতির ভিত্তি স্থাপনের প্রক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি যা ভারত ও রাশিয়ার অংশ হবে। একে বাঁধা দেয়ার সামরিক শক্তি কিংবা সম্পদ পাকিস্তানের নেই। এতে অভ্যস্ত হয়ে জাতিসংঘ কোন প্রদক্ষেপই নিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই কঠোর সামরিক হস্তক্ষেপের আশা পোষণ করে না। যাই হোক, এখানে উল্লেখ্য যে, চলমান বৈদেশিক সাহায্য খাতে ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সহায়তা অন্তর্ভুক্তির জন্য কার্যমালা করে। এটি ভাল মনে রাখা ভাল যে শেষ পঁচিশ বছরে আমাদের রাষ্ট্র আমেরিকার রাজকোষের করদাতাদের টাকা থেকে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারতকে দিয়েছে। এটি সামরিক শক্তি তৈরি ও প্রধানত রাশিয়া থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কিনতে ভারতীয় তহবিলকে বিমুক্ত করে। আমেরিকার জনগণ ব্যতিত আর কারো কাছে একটি গোপনীয় নয় যে রাশিয়ার নৌবহর ভারত সাগর নিয়ন্ত্রণ করার নিমিত্তে ভারতীয় সমুদ্র বন্দরে বিশেষ সুবিধা ভোগ করে। ভারতীয় সাহায্যের এই কার্যবিধি বন্ধ করতে অতিসম্প্রতি আমরা আমাদের অনিচ্ছার কথা কংগ্রেসে প্রকাশ করেছি।
আমি বিশ্বাস করি যে অতিসত্বর কংগ্রেস যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা, প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে, মানুষকে দাসত্ববন্ধন ও অনৈতিক যুদ্ধের জন্য যেন-তেন ভাবে ব্যবহার হবে না বলে বিশ্বকে নিশ্চিত করতে প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বৈদেশিক সহায়তা উপযোজন বিলে লেখ্য ভাষায় উদ্বাস্তুর রিলিফ এবং পুনর্বাসন ও মানবিক সাহায্য ব্যতিত সহায়তা বাতিলের কথা বলে, যখন ভারত ও পাকিস্তান একে অন্যের সাথে সামরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত। এই উদ্দেশ্য সফল হবে তবে সম্ভবত শক্তির মাধ্যমে নয় সমর্থনযোগ্যতায়।
এই সকল বাস্তবতার প্রেক্ষিতে, যখন ভারত একটি আক্রমণকারী এবং যখন পাকিস্তান আক্রান্ত হয়েছে অথবা স্পষ্টত পাকিস্তান প্রজাতন্ত্রকে বিভাজিত করাই ভারতের লক্ষ্য, ঐ নিশ্চিত বাস্তবতায় নিশ্চুপ থাকাকে আমি সমর্থন করি না। এটি আমেরিকার জনগণের কাছে উন্মুক্ত করা ও প্রকাশ করা উচিৎ।
এই শোচনীয় অবস্থার উপর বর্ণনাগুলো এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো একে পক্ষপাতী করেছে এবং ভারতকে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে উস্কানি ছাড়া যুদ্ধবিগ্রহ সৃষ্টিতে ধাপে ধাপে ছদ্মবেশী হতে কাজ করছে। বাস্তবতা এখন পরিষ্কার এবং পরিশেষে, ভারতের সহায়তায় আমেরিকার তহবিলের কোন প্রকার অপচয় রোধে তাদের কাজ করা উচিৎ।
.
.
13.126.418-419
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ভারতের প্রতি মার্কিন মনোভাবের সমালোচনাঃ মিঃ হেলসটস্কির বিবৃতি | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
ই ১৩০৪০ প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী অতিরিক্ত সংযুক্তি ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১
প্রধানমন্ত্রী গান্ধীর যুদ্ধ সংকেত বিবৃতি
প্রতিনিধি সভা, ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১
মিঃ হেলসটস্কি। মাননীয় স্পিকার, ২৫ বছরের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার তৃতীয় বারের মত যুদ্ধের অবতারণা ঘটেছে। আমাদের সকলকে অবশ্যই এই মর্মান্তিক অবস্থার নিন্দা করা উচিৎ; একটি বড় ধরনের যুদ্ধ ছাড়াই দক্ষিণ এশিয়ায় অধিকতর রক্তপাত ও ধ্বংসের যথেষ্ট ভোগান্তি ইতোমধ্যে ঘটেছে।
যাই হোক, আমার হতাশা যে আমেরিকা শান্তি প্রতিষ্ঠার সামর্থ্যে ব্যর্থ হয়েছে, ভারত সরকারের প্রতি স্বরাষ্ট্র বিভাগের হিংসাপরায়ণ আচরণে আমি হতভম্ব হয়েছি। গেল সপ্তাহে সংস্থা কর্তৃক ইস্যুকৃত বিবৃতিগুলো আমাদের বিশ্বাস করায় যে ভারত বিনা উস্কানিমূলক আক্রমণের দোষে দুষ্ট।
স্বরাষ্ট্র বিভাগের আচরণ অদূরদর্শী ও ব্যপকভাবে পাকিস্তানী স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে ঝুঁকে রাখে, দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এটি’ই হওয়ার কথা। বস্তুত এটি’ই প্রতীয়মান করে যে, শত্রুভাবাপন্নের বাহুল্যতার সকল দায় ভার সম্পূর্ণভাবে ভারতের উপর বর্তায়।
ভারতীয় উপমহাদেশে চলমান টানাপড়েনের শুরু হয়েছিল গত মার্চে পাকিস্তানী স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের উপর পৈশাচিক আক্রমণের মাধ্যমে। জনপ্রিয়ভাবে নির্বাচিত আওয়ামীলীগকে দাবিয়ে রাখতে চেয়ে, ২৫ মার্চ, পাকিস্তান সরকার বাঙালিদের বিরুদ্ধে এক গনহত্যার যুদ্ধের অবতারণা করে যা ১০ মিলিয়ন উদ্বাস্তুকে ভারতে স্থানান্তর করে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে উন্নত রাষ্ট্রগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সম্পদ এই অঞ্চলের উদ্বাস্তুদের সহায়তায় প্রদান করেছে। তা সত্ত্বেও, ১০ মিলিয়ন উদ্বাস্তুবরণ ভারতীয় অর্থনীতি ও কলকাতার আশেপাশের অঞ্চল অসহনীয় করে তুলেছে।
মিসেস গান্ধী মাস কয়েক ধরেই বিশ্বকে হুশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন যে ভারত তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার এই হুমকি সহ্য করবে না। পাকিস্তানী গৃহ যুদ্ধের কেবল একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধান, উদ্বাস্তুদের ভারত থেকে সরাতে সক্ষম হলে, তার সম্পদের উপর অসহনীয় চাপ কমিয়ে ভারতীয় চরমপন্থা বন্ধ করতে পাড়ে।
জবাবে, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তানী সরকারের প্রতি তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থা পরিবর্তনে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা কোন দৃঢ় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করি নি যা বাংলাদেশের ভোগান্তির শেষ করে ও ভারতীয় অর্থনীতির উপর চাপ কমায়। তাহলে কেন স্বরাষ্ট্র বিভাগ আঘাত ও কষ্ট পায় যে ভারত তার শেষ মুহূর্তের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছে? সকলে সহজেই দেখতে পায় যে প্রশাসন ইয়াহিয়া খানের বাহিনীর প্রতি ঝুঁকে আছে এবং পরস্পরবিরোধী মনোভাব পূর্ব পাকিস্তানে গনহত্যার তাণ্ডব চালনার দিকে ধাবিত করেছে। স্বরাষ্ট্র বিভাগ দক্ষিণ এশিয়ায় তার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরদ্ধার করতে পাড়বে না যতক্ষণ না এটি বাংলাদেশের রক্তপাতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী স্বৈরতন্ত্রের সাথে সৌহার্দ্যের সমাপ্তি না করে এবং একটি শক্তিশালী ও নৈতিক সঠিক অবস্থান না নেয়।
মাননীয় স্পিকার। প্রধানমন্ত্রী গান্ধী গত সপ্তাহে তার সংসদে এই ইস্যুর রূপরেখা ও চলমান যুদ্ধের কারণগুলো ভারত যেভাবে দেখে তা দিয়েছিলেন। পর্যালোচনায় আমরা, দক্ষিণ এশিয়ান টানাপড়েনে স্বরাষ্ট্র বিভাগের নৈতিকভাবে ক্ষুব্ধ বিবৃতিতে আমরা ভাল ভাবেই মিসেস গান্ধীর বাকপটু বক্তব্য মনে রাখব।
.
13.127.420-425
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
সংঘর্ষের মূল কারণ প্রশাসনকে অবশ্যই উপলব্ধি হবেঃ সিনেটর কেনেডী | সিনেটের কার্যবিবরণী | ৭ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সিনেটের কার্যবিবরণী-সিনেট এস ২০৭২১
দক্ষিণ এশিয়ার সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি
মি. কেনেডিঃ মি. প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ এশিয়ার সংকটে প্রশাসনের নীতি বুদ্ধিবৃত্তিকে উপেক্ষা করে।
ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও সামরিক নির্যাতনের ৮ মাস পর- পুর্ব বাংলায় লাখ লাখ বেসামরিক লোক হত্যা ও এক কোটি উদ্বাস্তু ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর- হঠাৎ করে আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব স্বীকার করে যে দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু কখন এই যুদ্ধ শুরু হয়েছে? কে এটি শুরু করেছে? কী নিন্দনীয় হওয়া উচিত? এবং এ সম্পর্কে আমরা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কী করা উচিত?
সম্ভবত অনেক আমেরিকানের মনে এই চিন্তা যে ভারত সংকট সৃষ্টি করেছে। কিন্তু প্রমাণ দেখায় যে, মি. প্রেসিডেন্ট, এই যুদ্ধ গত সপ্তাহে সুপরিচিত সামরিক সীমা পারাপারের মাধ্যমে শুরু হয়নি, না গতমাসে ভারত ও পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান কামানের গোলাগুলিতে শুরু হয়েছে; এই যুদ্ধ ২৫ শে মার্চের কালো রাতে পূর্ব বাংলায় হওয়া মুক্ত নির্বাচন দমন করতে পাকিস্তান সেনাদলের বর্বর অত্যাচারের দ্বারা শুরু হয়েছে। ২৫শে মার্চের পরের ঘটনাবলী পর্যালোচনা- আমাদের স্মৃতিতে দ্রুত আঘাত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যাটি হল আজ, এবং একেবারে শুরু থেকেই ছিল, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসনকারী সামরিক শক্তি ও পূর্ব বাংলায় নির্বাচিত বিরোধী বাঙ্গালিদের মাঝে রাজনৈতিক বিরোধ।
এই যুদ্ধ আরম্ভের দলিলকরণে প্রকৃত ঘটনাসমূহ, এবং কে এটি শুরু করেছে, তা খুবই ভয়ানক এবং সন্দেহে থাকার মত যথার্থ রিপোর্ট করা হয়েছে, এমনকি একটি প্রশাসনের দ্বারা যারা এসব উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছে। ২৫ মার্চ হতে পূর্ব বাংলায় যে রক্তাক্ত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তার সত্যায়ণ করে অসংখ্য প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের দ্বারা এখন শত শত নিবন্ধ লিখা হয়েছে ও হাজার হাজার ছবি তোলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পররাষ্ট্র দপ্তরে আসা গোপনকৃত তারবার্তা শুরুতে পাকিস্তান সেনাদলের কর্মগুলোকে ‘গণহত্যা’ বলে চিহ্নিত করেছে। সামরিক কর্তৃপক্ষ বিদেশি সাংবাদিকদের বহিস্কার করেছে পাছে তারা এই মহাহত্যাকান্ড নথিভুক্ত করে, এবং বিদেশি ক্যামেরাম্যানদের ফিল্ম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এটা শুধুমাত্র এপ্রিলে পূর্ব বাংলা থেকে উদ্বাস্তুদের ঢল নামায় এই নির্যাতনের গল্প ধীরে ধীরে একে অপরকে খুশি করতে পারে। এমনকি এখনও, এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পূর্ণমাত্রা পুরোপুরি জানা হয় নি। তথাপি, রাতে সেনাদলসমূহ ঢাকায় চড়াও হওয়ার পর, তারা নির্বিচারে আবাসিক এলাকায় গোলা নিক্ষেপ করেছে, বিশ্যবিদ্যালয় ছাত্রদের বাসস্থানে আক্রমণ করেছে, এবং যেসব সন্দেহভাজন আওয়ামীলীগারদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব তাদের তারা কারাগারে নিয়েছে অথবা হত্যা করেছে। হাজার হাজার পূর্ব বাঙ্গালি পুরাপুরিভাবে উদাও হয়েছে এবং তাদের কথা আবার শোনা যায়নি। হাজার হাজার লোক মরেছে এবং আরও অনেক হাজার লোক গ্রামে আশ্রয় খুঁজেছে। ঢাকা ২৪ ঘন্টার মাঝে ভুতুরে শহর হয়ে যায়, এবং তারপরের কয়েকসপ্তাহ এটি পদাবনত ও শূন্য থাকে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী জনগণকে গ্রাম পর্যন্ত অনুসরণ করে। পর্যায়ক্রমে, ইয়াহিয়া শাসনের অনুগত এক পাকিস্তানি সাংবাদিকের মত, সৈন্যদলসমূহ আওয়ামীলীগের বিদ্রোহ দমন করতে এবং পুরো পূর্ব বাংলা জুড়ে আওয়ামী মিলিশিয়া নিশ্চিহ্ন করতে শুরু করে।
৪২১
আওয়ামীলীগকে পিষ্ট করতে পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীর গ্রামাঞ্চলে যাওয়ার পর, ভারতে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুরা হিন্দু হওয়াসহ সব প্রমাণ নির্দেশনা দেয় যে এই উদ্দেশ্যের সাথে সংখ্যালঘু হিন্দু জনসংখ্যার প্রতি প্রাথমিকভাবে পরিচালিত হওয়া সন্ত্রাসের নীতিও ছিল।
কিছু এলাকায়, গ্রীষ্মের শেষদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তান সৈন্যদল হিন্দু দোকানসমূহের উপর বড় হলুদ ‘এইচ H’ অংকন করে, যাতে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি চেনা যায়, আসলে যারা বিশেষ লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। তারা হিন্দুদের মত দেখাতেনয় তারা অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সদস্যরা-(যদিও তারা সেনাবাহিনির ত্রাস থেকে পুরোপুরি মুক্ত ছিল না) তাদের বাড়ি ও দোকানে “সব মুসলিম ঘর’ অংকন করে। এর ফলে, ছোট খ্রিষ্টান সম্প্রদায় তাদের দরজায় ক্রস লাগাচ্ছিল ও তাদের কাপড়ে লাল সুতায় ক্রস সেলাই করছিল। নাৎসীবাহিনীর খুব বেশি আগের ঘটনা নয় যখন জার্মানীতে অসংখ্য নাগরিককে জনসম্মুখে ধর্মীয় লেবেল প্রতিক দ্বারা চিহ্নিত করার হয়।
২৫শে মার্চের ধ্বংসাত্নক রাতের পর থেকে ভয় পূর্ব বাংলাকে ঘিরে ফেলে। বিশ্বব্যাংক মিশন, জুনের শুরুতে পূর্ব বাংলায় কিছুদিন ঘোরার পর, সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় যেঃ
সম্ভবত সবচয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, লোকজন সামনে পা বাড়াতে ভয় পাচ্ছে, যার ফলে, বাণিজ্য আক্ষরিকভাবে বন্দি হয়েছে, এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম সাধারণভাবে খুবই মন্দায় আছে।
পরিষ্কারভাবে, কিছু এলাকায় উন্নতি সত্ত্বেও এবং পুরো প্রদেশ একসাথে নিলে, ভারি যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ের পরেও ব্যাপক ভয় জনগণের মাঝে বিদ্যমান আছে। এটা প্রতীয়মান হয় যে এটা শুধু গ্রামাঞ্চলে ও মূলসড়কের গ্রামগুলোতে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সহগামী নয়, যদিও এই পর্যায়ে কেবল সৈন্যদলের উপস্থিতি প্রায়ই আতঙ্ক তৈরির জন্য যথেষ্ট মনে হয়। যাইহোক, কোন প্রশ্ন নেই যে সেনাবাহিনী তার শাস্তিমূলক কর্মকান্ড বজায় রাখছে, এমনকি যদি নির্দিষ্ট শক্তির দিকে পরিচালিত হয় (যেমন পরিচিত অথবা সন্দেহভাজন আওয়ামীলীগ সদস্য, ছাত্র, অথবা হিন্দু)। বিস্তির্ণ জনসংখ্যায় ভয় উৎপাদনে এগুলোর প্রভাব রয়েছে।
গ্রীষ্মের মাসসমূহ জুড়ে প্রতিবেদনের পর প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের প্রতিধ্বনি হয়- গত আগস্টে নতুন উদ্বাস্তু যাদের আমি ও মাঠ পর্যায়ের উদ্বাস্তু উপকমিটির সদস্যরা সাক্ষাৎকার নিয়েছে তাদের সাক্ষাতকারসহ ভারতে থাকা শত শত উদ্বাস্তুদের সাক্ষাৎকারেও একই কথার প্রতিধ্বনি হয়।
এই সময়কাল জুড়ে আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব এই দুঃখজনক ঘটনা নীরবে দেখেছে, প্রেসিডেন্টসহ আমাদের সরকারের কোন কর্মকর্তা পূর্ব বাংলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই বর্বরতা ও পর্যায়ক্রমিক অত্যাচারের নিন্দা করেনি- যে অত্যাচারে আমেরিকান বন্দুক ও বুলেট এবং বিমানের অংশগ্রহণ রয়েছে। এবং এমনকি গত কিছু সপ্তাহে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন নাটকীয়ভাবে তার সন্ত্রাস ও অত্যাচার বৃদ্ধি করেছে, তখন আমাদের জাতি নীরব অসাড় হয়ে বসে রয়েছে।
এখন ২৫ শে মার্চের ৮ মাস পর প্রশাসন আমাদের বলে যে- আমাদের উচিৎ নিন্দা করা, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচার নয়, ভারতের সীমান্তে ক্রমশ বেপরোয়া পরিস্থিতির প্রতি ভারতের প্রতিক্রিয়াকে। একটি পরিস্থিতি যাকে আমাদের দেশে হিসাব করেই উপেক্ষা করেছে। নিশ্চিতভাবেই, নিন্দাকরণ সমর্থনযোগ্য; কিন্তু আমাদের কী সমালোচনা করা উচিৎ?
৪২২
আমাদের নেতৃত্বের নীরবতাকে ,আমাদের নিন্দা করা উচিৎ, মি. প্রেসিডেন্ট। আমাদের দেশ যার পক্ষে দাঁড়ায় তার প্রতি কি আমরা এমনই অনুভূতিহীন যে আমাদের সরকার প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকে সামরিক শাসকদের বর্বর দমনকে সমর্থন করে পাশাপাশি তার জন্যে ক্ষমা চায়? আমরা কি এমনই অন্ধ যে আমরা একটি সরকারকে উপেক্ষা করতে পারি যে একজন রাজনৈতিক নেতাকে জেলে নিক্ষেপ করে, যার একমাত্র অপরাধ মুক্ত নির্বাচনে জয়লাভ করা?
মি. প্রেসিডেন্ট, আমাদের উচিৎ বিশ্বের নীরবতা এবং ভারতে উদ্বাস্তু প্রবাহের কারণে যে ব্যাপক মানব ভুগান্তি হয়েছে তার প্রতি অবহেলাকে নিন্দা করা। শুরু থেকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া অযৌক্তিকভাবে নিশ্চেষ্ট ও পুরাপুরি অযথার্থ। আধুনিক সময়ে মানব দূর্ভোগের স্রোতে অসমান এই ব্যাপারটিতে কম গরজ দেখানো হয়েছে ও কম গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। উদ্বাস্তুদের চাহিদা অবহেলা করে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের অর্থনৈতিক স্থীতি ও কল্যাণকে বিপদাপন্ন করে ভারতের জনগণকেও বিচ্ছিন্ন করেছি।
আমাদের আরও উচিৎ আমাদের অবহেলা ও অসাড়তাকে নিন্দা করা যার ফলে খাবার ও আশ্রয়ের জন্য প্রতিদিন ৪,৩০০ উদ্বাস্তু শিশু মারা যাচ্ছে। আমাদের উচিৎ পরিস্থিতিকে সমালোচনা করা যা আরও মিলিয়ন মিলিয়ন লোকের মৃত্যু ও দুর্ভোগের কারণ হয়েছে কারণ ভারতে রিলিফ এজেন্সিদের জন্য অপর্যাপ্ত তহবিল তৈরি করা হয়েছে।
মি. প্রেসিডেন্ট, ইসলামাবাদের সাথে সুবিধা বজায় রাখার জন্য পাকিস্তানকে নিন্দা করার অস্বীকৃতিকে ন্যয্যতা প্রদান করেছে। উদ্বাস্তুদের উপর উপকমিটির সামনে শুনানি, এবং অন্যখানে কংগ্রেস ও আমেরিকার জনগণকে বারবার ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে যখন আমাদের সুবিধা ও কূটনীতি কার্যকর হয়েছে। দুঃখজনকভাবে, মুক্ত ও অন্য জায়গায় খুব কম নথি রয়েছে যেখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে অনেক সুবিধাই নেয়া হয়েছে। এবং উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হিসেবে আমেরিকান সামরিক যোগান পরিবহনের লাইসেন্স বাতিলের ক্ষেত্রে- সুবিধাটি শেষ করা হয়েছে মাত্র মাস খানেক আগে, কিন্তু শুধুমাত্র ইসলামাবাদের সাথে পূর্ণ চুক্তির মাধ্যমে।
এবং তাই রেকর্ড পরিষ্কার যে- সমস্যা বৃদ্ধিকালীন মাস জুড়ে- আমাদের সরকার একটি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছিল যে শুধুমাত্র একটি নির্বাচনকেই চাপা দেয়নি বরং এই প্রক্রিয়ায় এমন সব নীতি ধ্বংস করেছে যার জন্য আমাদের দেশ মাত্র ২,০০০ মাইল দূরে ভিয়েতনামে অনেক সময় ধরে অনেক কিছু বিসর্জন দিচ্ছে। সম্ভবত ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের মাঝে একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে যে পাকিস্তানে আমরা নীতিসমূহের সমর্থনের ছুতা ধরছি না, যাতে করে, কার্যকর ক্ষেত্রে, কোন নীতিই ভঙ্গ হতে পারে না।
এবং এখন- পূর্ব বাংলায় গত কয়েকমাস জুড়ে সহিংসতার উপর পাকিস্তানি অনুভূতির সাথে সূক্ষ্ম তুলনায় আমাদের পার্থক্য হচ্ছে- আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব হঠাৎ করে ভারতকে নিন্দা করে। আমরা তাকে আমাদের হতাশা ও ব্যর্থতা, এবং পাকিস্তানের প্রতি আমাদের নীতির দেউলিয়াত্বের বলির পাঠা বানিয়েছি। আমরা শুধুমাত্র ভারতের প্রতি সামরিক সাহায্যই বন্ধ করিনি- যার উপর কেউই ঝগড়া করবে না- বরং আমরা অর্থনৈতিক ও মানবিক সাহায্য বন্ধেরও হুমকি দিচ্ছি।
প্রকৃতপক্ষে, গতকাল আমাদের সরকার প্রায় ৮৭.৬ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার উন্নয়ন ঋণ স্থগিত করেছে, যা শুধুমাত্র শাস্তিমূলক পদক্ষেপরূপেই ব্যাখ্যা করা যায়।
এই প্রশাসন মানবজাতির একপঞ্চমাংশের অধিকারী চীনের সাথে সম্পর্ক পূনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টার সঠিক গৌরব গ্রহন করেছে। কিন্তু আমরা কি একসঙ্গে মানবজাতির এক-ষষ্ঠমাংশের অধিকারী ভারতকে বিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছি- যা একটি গণতান্ত্রিক দেশ যাদের সাথে আমাদের অনেক বছরের উৎপাদনশীল সম্পর্ক রয়েছে?
৪২৩
মি. প্রেসিডেন্ট, শেষ সপ্তাহে প্রশাসন বিলম্বিতভাবে জাতিসংঘের দিকে মুখ ফিরিয়েছে, তার কাছে শান্তিরক্ষার পদ্ধতির প্রয়োগ চেয়েছে- একটি পদক্ষেপ যা আমদের অধিকাংশই মাসখানেক আগে সমর্থন করেছে। আমরা সবাইই আশা করি অবশেষে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্বস্তি আনতে যা প্রয়োজন আমাদের দেশ তা করবে।
মি. প্রেসিডেন্ট, আমি প্রশ্ন করি যখন এই উদ্বাস্তুদের সৃষ্টি হচ্ছিল তখন কেন আমরা জাতিসংঘে যাচ্ছিলাম না? কেন আমরা জাতিসংঘে যাচ্ছিলাম না যখন পূর্ব বাংলায় জনগনের উপর নিয়মানুযায়ী অত্যাচার ও নির্যাতন চল ছিল? জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটিতে, কেন আমরা এটি উপস্থাপন করিনি এবং গত ৩৬ ঘন্টায় যেসব বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে তার সাথে এটি অনুসরণ করিনি? বাঙ্গালিদের মানবিক প্রয়োজনীয়তার সময় কেন আমরা আমাদের চিহ্নিত করিনি? কেন আমরা ঐ সময় এই অত্যাচারের নিন্দা করিনি যে অত্যাচারের মানে হল অনেক হাজার লোকের হত্যা বা খুন? ঐ সময় আমরা কোথায় ছিলাম? এখন ভারতের কাজের নিন্দা করতে আমরা জাতিসংঘে যাচ্ছি।
নিরাপত্তা পরিষদে আমাদের সমর্থিত রেজ্যুলুশন আমরা যেসব উদ্দেশ্য খুজছি তার সহায়তা করে না। আমাদের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার এটি সহ কোন রেজ্যুলুশনই উদ্বাস্তু আন্দোলনের কারণসমূহ মোকাবেলা করে না, ভারত থেকে স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তনের সাথে জড়িত প্রয়োজনীয় জিনিসসমূহও মোকাবেলা করে না।
এটিই হল এই সংঘর্ষের ভিত্তি যা এখন বর্তমান আছে- ১০ মিলিয়ন উদ্বাস্তু তৈরির কারণ, পৃথিবীর এই অংশে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে তহবিল অপসারণ অনুসারে উদ্বাস্তুরা ভয়ানক ঝুকি উপস্থাপন করে, পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাও যা জড়িত আছে। এই বড় উদ্বাস্তু স্রোতের পেছনের কারণ নিয়ে টু শব্দটিও হয়নি। এটিই হল এই সমস্যার ভিত্তি। জাতিসংঘে আমাদের রেজ্যুলুশনে, কিভাবে উদ্বাস্তু তৈরি হয়েছে তা নিয়ে একটিও শব্দ নেই।
সমস্যা হল আমাদের সমর্থিত কোণ রেজ্যুলুশনই এই সংকটের মূল কারণ, বাংলাদেশ শক্তিসমূহের আগ্রহ, অথবা আশু প্রয়জনীয়তা, ইসলামাবাদ ও তার বাঙ্গালি বিরোধীদের মাঝে রাজনৈতিক দরকষাকষির সমঝোতার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করেনি। রেজ্যুলুশনের মূল অংশে কেবল ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধ বিরতির আবেদন করেছে, অনিবার্য কারণস্বরূপ এই যুদ্ধ চলছে- যে এই সংঘর্ষের উৎস এখনও পুঁজপূর্ণ।
এটা এমন একটি নিষ্ঠুর বিদ্রুপ যে সাউথ এশিয়া ও ভিয়েতনামে আত্মনির্ধারণ নিয়ে আমরা কথা বলি। আমরা ৫৫,০০০ আমেরিকান হারিয়েছি যারা সেখানে নিহত হয়েছে কারণ আমরা চাই যে দক্ষিণ ভিয়েতনামের লোকেরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরা নির্ধারণে সক্ষম হোক।
আমরা জানি যে পূর্ব বাংলার লোকেরা নির্বাচনে গিয়েছিল। এই নির্বাচনী মার্শাল ল’ এর অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে, শেখ মুজিব এবং আওয়ামীলীগ ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে জয়লাভ করে। এটা গণতান্ত্রিকভাবে হওয়া একটি নির্বাচনী, তাকে পুরো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার যথার্থ সমর্থনসহ। তথাপি, কী ঘটল? তাকে জেলে নিক্ষেপ করা হয়েছে কারণ তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। এখন আমরা আমাদেরকে চিহ্নিত করছি সামরিক শাসকদের সাথে যারা তাকে জেলে পুড়েছে। এরকম একটি নির্বাচনী নিশ্চিত করার জন্য ভিয়েতনামে ৫৫,০০০ আমেরিকান মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। তথাপি আমরা আমাদের চিহ্নিত করছি এমন একটি শাসকের সাথে যে যথাযথ নির্বাচিত কর্মকর্তাকে কোন নাগরিক বিচারের ছুতা ছাড়াই অথবা নির্বাচনে তার সাফল্যের স্বীকৃতি ছাড়াই তাকে জেলে পুড়েছে।
৪২৪
মি. প্রেসিডেন্ট, আমাদের সরকার ও জাতিসংঘকে অবশ্যই বুঝতে হবে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাদলের কর্মকান্ডই শক্তিগুলোর উন্মোচন করেছে যা দক্ষিণ এশিয়ায় এই যুদ্ধ তৈরি করেছে।
দক্ষিণ এশিয়া থেকে কোন পর্যবেক্ষকই এই গভীর অনুভূতি ছাড়া বের হতে পারবে না যে এই শক্তিসমূহ- জাতীয়য়াবাদ ও আত্মনির্ধারণ- অস্ত্রের শক্তি দ্বারা সফলভাবে আটকে রাখা যাবে না। পূর্ব বাংলার জন্য আত্মনির্ধারনের অধিকার- যার জন্য পূর্ব বাঙ্গালিরা শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচিত করেছে, এবং যার জন্য তারা এখন লড়ে ও মরে- কোন সন্দেহ ছাড়াই ঘটনাক্রমে অর্জন করা যাবে। শুধুমাত্র গঠন ও পরিস্থিতিই সন্দেহে থাকে।
গত মে’র মত যত প্রথমদিকে সম্ভব, আমাদের সরকারের প্রতি দাপ্তরিক প্রতিবেদন বলে যে পুর্ব বাংলার জনগণের বিশাল অংশ সম্ভবত চিরদিনের জন্য, পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার হতে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তারপরের ঘটনাসমূহ এইসব প্রাথমিক প্রতিবেদনের অভ্রান্ততা নিশ্চিত করেছে। এবং কারণ অনেক রক্ত ঝরেছে, খুব কম সন্দেহই আছে যে পূর্ব বাংলার জনগণ ও তার নেতৃত্ব ২৫ মার্চের আগে বিদ্যমান থাকা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া আবারও গ্রহন করবে।
এখনই ‘বাংলাদেশ’ অস্তিত্বশীল এই সত্য আমাদের সবার স্বীকার করে নেওয়ার সময়। শুধুমাত্র বাঙ্গালি সংখ্যাগরিষ্ঠদের মনেই নয়, বরং বর্তমান ঘটনাসমূহের বাস্তবতায়।
যদি আমরা সত্যিকারভাবেই এই সত্যকে স্বীকৃতি দেই- এবং পূর্ব বাংলা জুড়ে ক্রমবর্ধমান মানব-দুর্ভোগ ও প্রতিহিংসার রক্তপাত এড়াতে চাই- শান্তি ও স্বস্তির জন্য শর্ত হিসেবে নিম্নোক্ত আন্তঃসংযুক্ত পদক্ষেপসমূহ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করে।
প্রথমত, আমাদের অবশ্যই অনুমোদিত ও আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতায় পরিদর্শিত সকল সমরদলের তাৎক্ষণিক অচল যুদ্ধবিরতি খোঁজা দরকার। ১৫ থেকে ৩০ দিনের একটি সময়সীমা দেওয়া উচিৎ যা ‘শীতলকরণ’ সময়কালে সকল দলের অংশগ্রহনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুসমূহ সমাধানের প্রয়োজনে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যে প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, আমাদের অবশ্যই ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে এবং পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব বাংলায় শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তার বাঙ্গালি বিরোধীদের মাঝে তাৎক্ষণিক ও যুগপত আলাপ-আলোচনা খোঁজা দরকার।
ভারত-পাকিস্তান আলোচনার উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ পশ্চিম ফ্রন্টে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ফিরিয়ে আনা, এবং বর্তমান সামরিক বিরোধীতা থেকে সাধারণভাবে তৈরি হওয়া নতুন ইস্যুসমূহ সমাধান করা। পশ্চিম পাকিস্তানি-বাঙ্গালি আলাপআলোচনার উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ পূর্ব বাংলার ভবিষ্যৎ মর্যাদা নির্ধারণ, এবং ঐ পরিস্থিতি যা ভারত থেকে ১০ মিলিয়ন বাঙ্গালি উদ্বাস্তুদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেয়।
এবং আমাকে এখানে চাপ প্রয়োগের সুযোগ দেন, মি. প্রেসিডেন্ট, যে পূর্ব বাংলার ভবিষ্যত মর্যাদা যাই হোক- স্বাধীন অথবা স্বশাসনের যে রূপেই হোক- এটা সংকটপূর্ণ যে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিসমূহের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের জন্য আলোচনার সময় সকল দলের মাঝে একটি চুক্তিতে পৌছা উচিৎ। এই যুদ্ধে বন্দী হওয়া সকল পক্ষেরই জিম্মি রয়েছে। পাকিস্তান সেনাদল এখন অগণিত বাঙ্গালি গেরিলা এবং নির্বাচিত আওয়ামীলীগ কর্মকর্তা আটক করে রেখেছে। পালাক্রমে, এটা অনুমেয় যে অতিশীঘ্রই বাঙ্গালি গেরিলারা তাদের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপাদান আটক রাখবে। তদোপরি,
৪২৫
৭ থেকে ৮ মিলিয়ন বিহারী সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় পুর্ব বাংলায় রয়েছে, যখন, অবশই, শেখ মুজিবুরসহ প্রায় ১০ মিলিয়ন বাঙ্গালি পাকিস্তানে আছে।
যদি প্রতিশোধ ও সাম্প্রদায়িক-ধর্মীয় সংঘর্ষের একটি ভয়ানক, বোধহীন রক্তপাত এড়াতে হয়, তবে এই লড়াইয়ের সব দলকে অবশ্যই এই লড়াইয়ের সব জিম্মিদের সংরক্ষিত রাখতে হবে এবং সমবেদনা ও সংবরণের জ্ঞান এবং জেনেভা কনভেনশন মেনে চলতে হবে। জেনেভা কনভেনশনের প্রযোজ্যতা স্বীকৃতির ঘোষণার দ্বারা ভারত সরকার এই পথে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।
তৃতীয়ত, যুদ্ধের ফলে বাস্তচ্যুত হওয়া দুর্ভিক্ষের হুমকিতে থাকা মিলিয়ন মিলিয়ন লোকের স্বার্থে আমাদের অবশ্যই পূর্ব বাংলায় জাতিসংঘ রিলিফ মিশনের তাৎক্ষণিক পুনঃপ্রবর্তনের জন্য প্ররোচনা দিতে হবে।
পূর্ব বাংলায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রচেষ্টা সবসমই কার্যকর মাঠ কার্য থেকে আশা ও অনুপ্রেরণাই বেশি। এটার প্রয়োজনীয়তা শুধুমাত্র তখনই আসবে যখন বাংলার গ্রামাঞ্চলে শান্তি ফেরানো হবে।
তবুও, আগুয়ান পুনর্বাসন ও ত্রাণ সমস্যার সমাধানে এখনই চিন্তা শুরু করার দ্বারা আমাদের জাতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই পূর্ব বাংলার পুনর্গঠনে আমাদের দ্বায়িত্বকে স্বীকার করতে হবে। একসময় যখন আমাদের সরকার নিন্দায় ও দক্ষিণ এশিয়া সহায়তা বন্ধে বেশি আগ্রহী দেখা যায়। আমি আশা করি আমাদের জাতীয় আগ্রহ খুব শীঘ্রই ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতি খুঁজে পাবে অথবা এই অঞ্চলের সব জাতি আমাদের বিদেশ নীতি ও আমাদের মানবিক বোধের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
মি. প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ এশিয়ায় মানব বঞ্চনা ও সংঘাতের ভুত সদর্পে চলার সময় আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব দীর্ঘ ৮ মাস ধরে নীরব এবং প্রায় অসাড় ছিল। এটি এখন সংকটের শেষ ধাপে আছে- সাথে এমনকি এখন আরও বেশি উদ্বাস্তু বাড়ছে কারণ এই এলাকা জুড়ে সংঘাত বেড়েছে- কিন্তু আমি অনুভব করি আমাদের সরকারের জন্য এই অঞ্চলের শান্তি ও স্বস্তিতে ভূমিকা রাখার সুযোগ এখনও আছে। তাই আমি প্রশাসনকে প্ররোচনা দেই তার নীতি পরিবর্তন করতে। তাদের অবশ্যই এই সংঘাতের উৎস বিবেচনা করতে হবে, এবং পূর্ব বাংলায় মৌলিক রাজনৈতিক সমঝোতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। এর থেকে কোন কিছু কম হওয়ার মানে হল আরও যুদ্ধ, আরও উদ্বাস্তু, আরও বোধহীন মৃত্যু…
.
13.128.426-427
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের প্রশ্নই আসল সমস্যা। সিনেটর মস্কির ৪ দফা প্রস্তাব | প্রেস বিজ্ঞপ্তি | ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
সিনেটর এডমান্ড এস. মস্কি ভারত-পাকিস্তান বিরোধ এর উপর আজ(৭ই ডিসেম্বর) নিম্নোক্ত বিবৃতি জারি করেন।
যুক্ত্রাষ্ট্রের জন্য এটি ভারত পাকিস্তান মধ্যকার যুদ্বের মীমাংসা করার সময় নয়।এই সময় হল যুদ্ব শেষ করতে যুক্ত্ররাষ্টের সাহায্য করার,পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কষ্টের অবসান ঘটাতে সহায়তা করার,ঐ অঞ্চলের মানুষের জন্য স্থায়ী ও যথাযথ শান্তি প্রতিষ্ঠা করার।
এই কারণে আমি আমাদের সরকারকে তাড়না দিচ্ছি ইউনানেড ন্যাশনের অন্যান্য দেশের সাথে নিম্নোক্ত প্রস্তাবে যুক্ত হও্য়ার জন্যে ঃ
১। অবিলম্বে সকল সীমান্তে যুদ্ববিরতি এবং পশ্চিম সীমান্তে তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের মধ্যকার সামরিক বাহিনীর অপসারণ।
২।্পূর্ব বাংলা হতে ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তানের সকল বাহিনীর অপসারণ এবং শৃংখলা বজায় রাখতে,অবিলম্বে ভারত হতে আগত পূর্ব পাকিস্তানী শরনার্থীদের তত্ব্বাবধায়নে রাখতে ও যুদ্বে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের লক্ষ্যে ইউনাইনেড ন্যাশন এর শান্তিরক্ষা বাহিনী দ্বারা এদের প্রতিস্থাপন করা।
৩।পশ্চিম পাকিস্তান এর কতৃপক্ষ হতে শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি এবং ১৯৭০ ডিসেম্বর এর সাংবিধান সভা মোতাবেক মনোনিত পূর্ব পাকিস্তান এর প্রতিনিধি ও অন্যান্য যথাযথ প্রতিনিধির সমন্বয়ে পূর্ব পাকিস্তানের একটি প্রাদেশিক নেতৃ গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করা।
৪।সমতার ভিত্তিতের, দুই সত্ত্বার ভবিষ্যত নেতৃত্বের মধ্যে সম্পর্ক বিস্তারের লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান এর প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা।বাহিরের কোনো ক্ষমতার হস্তক্ষেপ ছাড়া অবশ্যই একটি চূড়ান্ত রাজনৈতিক নিস্পত্তি অর্জন করা।
পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের নিপীড়ন সত্ত্বেও পাকিস্তানে অস্ত্র চালান চলমান রাখতে প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে ‘এবসুলেট নিউট্রালিটি’ নীতি বজায় রাখতে দেখা গিয়েছে।
এটি কী ‘এবসুলেট নিউট্রালিটি’ ছিল যখন আমরা পূর্ব বাঙ্গালীদের গণহত্যা সত্ত্বেও পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছিলাম এবং যার ফলাফলে ভারতে ১০ মিলিয়ন শরনার্থী পালিয়েছে ?
“এটি কী ‘এবসুলেট নিউট্রালিটি’ ছিল স্টেট ডীপার্ট্মেন্ট মুখপাত্রের জন্য ভারতকে আগ্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা?
“এটি কী ‘এবসুলেট নিউট্রালিটি’ ছিল পাকিস্তানের সাথে একই রকম সহযোগীতা বন্ধ না করে ভারতের সাথে অর্থনৈতিক অঙ্গীকার প্রত্যাহার করা?
“এটি কী ‘এবসুলেট নিউট্রালিটি’ যখন আমরা অতি সহজেই যুদ্ববিরতির ডাক দিই যেটি পূর্ব বাংলার মানুষদের অত্যাচার করা পাকিস্তানী সৈন্যদের পদাধিষ্ঠিত করবে ?
“পূর্ব বাংলার ভবিষ্যত হল গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।ওখানে কোন স্থায়ী যুদ্বের পরিসমাপ্তি হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পূর্ব বাংলার মানুষ তাদের সুনিশ্চিত ও যথাযথ ভবিষ্যত দেখতে পাবে।ভবিষ্যত নির্ধারন আমাদের কাজ নয় কিন্তু আমরা ঐ অঞ্চলের মানুষের সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের মঞ্চ তৈরী করতে সাহায্য করতে পারি।“
.
13.129.428-432
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
উপমহাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে কংগ্রেস সদস্য মিঃ ই. গালাঘের বক্তৃতা | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
০৮,ডিসেম্বর ১৯৭১ এইচ ১২০৩৯
প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী
উপমহাদেশের পরিস্থিতি
মিঃ গালাঘেরঃ মাননীয় স্পীকার,আমি এই বিষয়টি উত্থাপন করেছি ভারতীয় উপমাহদেশে পুঞ্জীভূত সঙ্কটের সমালোচনা নিয়ে বৈদেশিক সাহায্য সম্পর্কিত বিতর্কে আমার কিছু সহকর্মীর করা সুনির্দিষ্ট মন্তব্যের জবাব দিতে। এ বছরের মে তে আমিই প্রথম পূর্ব পাকিস্তান সঙ্কট নিয়ে কংগ্রেস শুনানির আয়োজন করেছিলাম। কংগ্রেসের প্রথম সদস্য হিসেবে ভারতে শরনার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেছি এবং প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত পাকিস্তান সরকারকে সকল প্রকার সাহায্যের নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করেছি। সেখানকার অগ্রগতি সম্পর্কে আমি প্রতিনিয়ত অবগত থেকেছি। আমি এখন ভারতীয় উপমহাদেশের কিছু বিশেষ তথ্য ও এই বিষয়ের বেশ কিছু প্রমাণাদি নিয়ে কথা বলব। ভারতকে যেকোন দোষারোপ করার চেয়ে সত্যের অপলাপ আর কিছু হবে না। আর পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিয়োগান্তক বিভাজনের চেয়ে কিছুই ভারতীয় জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে না।
পটভূমি
এই সমস্যার মূল হচ্ছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ফল পাল্টে দেয়ার জন্য পুর্ব পাকিস্তানে বর্বোরোচিত নির্যাতন শুরু করল যে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দেশব্যাপী ৩১৩ টি আসনের মাঝে ১৬৭ টিতে জয় লাভ করে পাকিস্তানের উভয় অংশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং এর সমাধানও পুর্ব পাকিস্তানের ভেতরই প্রথিত আছে। ভারত এই সমস্যায় জড়িত পড়েছে কারণ বর্তমানে প্রায় ১০ মিলিয়ন শরনার্থী তার সীমান্তের ভেতর আবদ্ধ হয়েছে।
আমি শরনার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে যা দেখেছি শুধু বিতর্কের মাধ্যমে তা বোঝা যাবেনা। সংবাদপত্র,পত্রিকাগুলো চমৎকার বিবরণ এবং সাম্প্রতিক সময়ে টেলিভিশনগুলোর বস্তুনিষ্ঠভাবে নির্মমতা ও ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য মানুষের দুর্দশা তুলে ধরেছে। ভারতে পালিয়ে আসা শরনার্থীদের আগুনে নিক্ষেপ করা ব্যতীত পুর্ব পাকিস্তানের ও তার নিজের দেশের সীমান্ত বন্ধ করার কোন উপায় ছিল না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোন সভ্য সমাজ এধরনের কাজ করতে পারেনা। এই শরনার্থীরা ছিল সহায়হিণ,আতঙ্কিত তাদের কেউ কেউ ২৫০ মাইলের মত পায়ে হেটে এসেছে পাকিস্তানী সেনাদের থেকে পালিয়ে বাচতে যারা তাদের নিজের দেশের নিরীহ সাধারণ মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা,ধর্ষন আর লুণ্ঠন করছিল। পুর্ব পাকিস্তান চারদিক থেকে সম্পুর্নভাবে ভারতের সীমানা দ্বারা পরিবেষ্ঠিত এমনকি অনেক স্থানে চিহ্নিত করা উপায় নেই কোথায় পাকিস্থান সীমানা শেষ আর ভারতের সীমানা শুরু হয়েছে।
এই মানুষগুলোকে গ্রহন না করার একমাত্র বিকল্প ছিল সীমান্তের দিকে তাৎক্ষনিকভাবে মেশিনগান তাক করা এবং ৪-৫ মিলিয়ন শরনার্থীকে নির্মুল করে দেয়া। স্রষ্ঠাকে ধন্যবাদ যে ভারত ঐধরনের রাষ্ট্র নয় এবং তারা আতঙ্কিত অনাহারী বাঙ্গালীদের তার দেশে গ্রহণ করেছে। আমাকে প্রথম যখন উদ্ভুত হৃদয়বিদারক ঘটনার তথ্য সম্পর্কে অনুরোধ করা হয়েছিল তখন ১১ মে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক উপকমিটির উদ্বোধনী ভাষনে বলেছিলাম,’’ ভিয়েতনাম ও বায়াফ্রার জঘন্য বৈশিষ্ট্যগুলো একত্রিত করুন।‘’ “ আমাকে বলা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের কিছুই করা উচিত নয় কারণ আমরা চীন-সোভিয়েত —– এবং ভারতীয় উপমাহাদেশ এত জনবহুল যে সেখানে অতিরিক্ত ১০ মিলিয়ন মানুষ কোন পার্থক্য তৈরি করবেনা। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের এক নেতা শেষ বিষয়টি আমার কাছে একটি চিঠিতে সবচেয়ে ভালভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। আমি বিশ্বাস করি অধ্যাপক গ্যারেট হার্ডিন এবং আমার প্রতিক্রিয়া, উভয় বিষয়ের জন্য সহায়ক। ১৮ জুলাই প্রকাশিত আমাদের বিনিময়কৃত পত্র আমি আমার মন্তব্যের শেষে অন্তর্ভুক্ত করব।
ভারতঃ বেসামরিক আগ্রাসনের ভুক্তভোগী
মাননীয় স্পিকার, ভারতের অভ্যন্তরে শরনার্থী শিবিরগুলোতে পুর্বপাকিস্তানের শরনার্থীর সংখ্যা পৃথিবীর ৫৮ টি দেশের মোত জনসংখ্যার চেয়ে অধিক। সমগ্রমানব ইতিহাসে স্বল্পতম সময়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ স্থানান্তর এটি। ভারত শরনার্থীদের গ্রহণ করেছে একারণে নয় যে সে তাদের উৎসাহিত করেছে বা চেয়েছে। সে গ্রহন করেছে কারণ এছাড়া তার কোন উপায় ছিলনা।
সমগ্র পরিস্থিতির সবচেয়ে দুঃখজনক দিক হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী গান্ধীর সরকার নির্বাচনে এক অভুতপুর্ব জয় পেয়েছে এবং তার দেশের ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সুদীর্ঘ গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু শরনার্থীদের দেখভাল ও ভরনপোষনের ব্যয় ভারতের নিজস্ব জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানোর অগ্রগতিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে।
সুতরাং আমরা পাকিস্তান সরকারের নীতির ফলাফল দেখতে পাচ্ছি- বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্বারা ভীত সন্ত্রস্ত বাঙ্গালীদের একটি আন্তর্জাতিক সীমান্তের অপাড়ে ঠেলে দিচ্ছে যা ভারতের স্থিতিশীলতায় মারাত্নক হুমকি সৃষ্টি করছে।
এবং মাননীয় স্পীকার ভারত এখনো প্রায় ৮ মাস পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। শরনার্থী সমস্যা চলমান ছিল এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া পুর্ব পাকিস্তানের প্রকৃত অবস্থা গোপন করতে কিছু বাহ্যিক পদক্ষেপ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে সেনা অভিযান তেমন সঙ্কটজনক কিছুই নয়। আমার মনে হয় চলমান অস্ত্র হস্তান্তরের মাধ্যমে দৃঢ় সমর্থন সম্ভবত রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়াকে আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভারত কিছুই করেনি কিন্তু শরনার্থীদের দেখভাল করেছে যদিও তার সরকার সম্পুর্ন ভুল মার্কিন অস্ত্র নীতির স্বীকার। কংগ্রেসের অন্যান্য সদস্যদের সাথে আমি কিছু ভ্রান্ত তথ্য পেয়েছি এবং এটা হতে পারে ইচ্ছাকৃত তথ্যবিকৃতি অথবা না, সে বিষয় হচ্ছে অতি সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারকে অস্ত্র চালান হস্তান্তর চলমান ছিল।
আমাদের কখনই ভুলে গেলে চলবেনা ভারত পৃথিবীর গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সবচেয়ে বড়দেশ। প্রধানমন্ত্রী গান্ধীর নির্বাচনী জয় তার জাতিকে নতুন আশা এবং তাদের শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উপর নতুন বিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। ভারতের প্রতি সতর্ক আচরণ কি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে না? আমাদের বহুল প্রচারিত সংস্কৃতির স্বার্থে ভারতের অবস্থান সহানুভূতি ও পারস্পারিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিবেচনা করা উচিত নয় কি? মাননীয় স্পীকার আমরা সেটা করিনি এমনকি ভারত সরকারের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক এখন সব সময়ের তুলনায় সর্বনিম্ন পর্যায়ের। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই দুঃখজনক পরিস্থিতিতে ভারতের মর্যাদা ও গুরুত্ব হারানো দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ক্ষতির কারণ হয়ে থাকবে। যদি উন্নয়নশীল দেশগুলো সাম্যবাদ ও ফ্যাসিজমের কোন টেকসই বিকল্প খুজে পায় সেটা হবে গণতন্ত্র, কারণ গণতন্ত্র কার্যকর হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের মত দেশে না হলেও ভারতের মত দেশে সবচেয়ে প্রতিকুল পরিবেশেও গণতন্ত্র আসলেই কাজ করেছে। এবং এটা এখনও কার্যকর রয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনা ভারতের অগ্রগতিকে স্থবির করে দিয়েছে এবং ভারতের সদ্য শুরু হওয়া অভ্যন্তরীণ নীতি যেগুলো ফলপ্রসু হতে যাচ্ছিল সেগুলো সম্পুর্নভাবে নস্যাৎ হতে বসেছে। ভারতের গণতান্ত্রিক সফলতার জন্য ফলাফলগুলো জরুরী। দুঃখজনক ঘটনার ভেতরে আরও একটি দুঃখজনক ঘটনা।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিদাতা হিসেবে বিবেচিত
দীর্ঘ ৮ মাসের ধৈর্য,সহমর্মীতা ও সহনশীলতার পর ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঙ্গালীদের সহায়তা করতে তার সেনা পাঠিয়েছে। পুর্ব পাকিস্তানের জনগন যারা একটি পূর্ন আঞ্চলিক সায়ত্বশাসনের ভিত্তিতে ও পশ্চিম অংশের দীর্ঘ অর্থনৈতিক শোষনের বিরুদ্ধে একটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছে এবং ২৫ মার্চ পাকিস্তানের সেনা অভিযান শুরুর পর তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে স্বাগত জানিয়ে পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে নিবিড় সহযোগিতা করছে এবং মুক্তিবাহিনী ও স্বাধীনতাকামী মানুষের সাথে সমন্বয় করছে।
আমার ধারণা ভারত এখানে যুক্ত হয়েছে কারণ কোন ধরনের শক্তিশালী পদক্ষেপ ব্যতীত এই শরনার্থী মানুষদের ঘরে ফেরত পাঠাতে আর কোন সম্ভাব্য পথ দেখছিলনা। মাননীয় আমাকে বলতে দিন, আমি দুঃখিত যে ভারত এমনভাব তার জাতীয় নিরাপত্তা মুল্যায়ন করছে যেখানে সে সামরিক পদক্ষেপকে প্রয়োজনীয় বিবেচনা করেছে। এই যুদ্ধকে কেউ স্বাগত জানায়নি এবং সম্ভবত ভারতীয় নেতৃত্বর চেয়ে অধিক কেউই এর প্রয়োজনীয়তায় শংকিত হয়নি। নিশ্চিতভাবেই এই যুদ্ধ প্রধানমন্ত্রী গান্ধীর কাছে একটি অভিশাপ।
ভারতের পর্যাপ্ত ভুমি ও জনগোষ্ঠী রয়েছে তার নিশ্চয় এর বেশি প্রয়োজন নেই বা সে চায় না। একটি স্বাধীন বাংলাদেশ ভারতের অভ্যন্তরে মারাত্নক সমস্যা তৈরি করতে পারে কারণ অন্যান্য জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী একই দিকে ধাবিত হতে পারে সুনির্দিষ্ট করে বললে পশ্চিম বঙ্গ যেখানে ব্যাপক সংখ্যক শরনার্থী এই মুহুর্তে রয়েছে।
আমি আবারও বলছি ভারত পূর্ব পাকিস্তানের দিকে অগ্রসর হয়েছে কারণ তার নিকট ভবিষ্যতে ও অর্থনীতির উপর শরনার্থীর স্রোত থামাতে এটাই ছিল একমাত্র উপায়।
নির্বাচনে জয় পাওয়া ছিল বাঙ্গালীদের অপরাধ
মাননীয় স্পীকার আমাদের অবশ্যই বিস্মিত হওয়া উচিত যে এই যুদ্ধ যদি বৈশ্বিক রাজনীতিতে ঘৃণ্য ও বিদ্বেষী কর্মকান্ড হয়ে থাকে এবং রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানকে ভাঙ্গার জন্য হয়ে থাকে তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী কেন প্রতিটি শহরে,গ্রামে মুক্তিদাতা হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে। যদি পাকিস্তান সরকার এই ক্ষেত্রে আক্রান্ত হয়ে থাকে তবে কেন আক্রমনকারী আর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পাকিস্তানের মাটিতে ফুল আর উৎসাহ দেয়া হচ্ছে? কেন মাননীয় স্পীকার?
খুব সাধারণ, আমার মতে ভারত বাংলাদেশেরর বৈধ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। আওয়ামীলীগ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পুর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৬৭ আসনে জয়লাভ করেছে এবং এটা তাদের সাড়া দেশে সংখাগরিষ্ঠতা দান করেছে। আমি স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি যে কংগ্রেসের আমার কিছু সহকর্মী অত্যন্ত নজিরবিহীনভাবে এধরণের ব্যাপক বিস্তৃত নির্বাচনের বিজয়কে অগ্রাহ্য করছেন। আমি হতবিহবল হয়ে যাচ্ছি আমরা যারা জনগনের ইচ্ছার উপর নির্ভর করি তারা কিভাবে পুর্ব পাকিস্তানের মানুষের এধরণের অসাধারণ জয়কে উপেক্ষা করছি।
.
যারা অবাধ , নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের দাবী জানিয়েছিল তাদের উপর রীতিমত হত্যা , ধর্ষণ, লুটতরাজ, জ্বালাও-পোড়াও করা হত আর সেজন্যই প্রায় ১০ লক্ষ্য বাঙালী ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল -যা আমার দৃষ্টিতে পাকিস্থানের অভ্যন্তরীণ আইনের সর্বস্বতা নিয়ে প্রশ্ন দূর করে ।বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী প্রয়োজনে যুদ্ধ করে ভোটাধিকার নিজেদের নিয়ন্ত্রনে আনতে চেয়েছিল শুধু রিফিউজিদের জন্য নয়, একটি মানব জাতির অভ্যন্তরীণ সর্বস্বতা রক্ষার জন্য । কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিল অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালীদের যারা পূর্ব-পাকিস্থানকে পূর্নগঠিত করতে চেয়েছিল ।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিলেন যেন পরিকল্পনামাফিক তাদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে পিছুটানতে পারে আর যদি তারা সেটা করে শুধুমাত্র ঐক্যবদ্ধ পাকিস্থানের কারনেই করবে। কিন্তু প্রতিটি ধাপেই বাঙালীদের বিরোধীতার সম্মুখীন হল। তাই তিনি আঞ্চলিক এবং জাতীয় সমাবেশ করার জন্য কিছু পূর্ব-পাকিস্থানীদের নিয়োগ দিলেন ।যাদের অনেকেই আওয়ামীলীগের সাধারণ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে ।অথচ প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও তারা আওয়ামীলীগের বড় বড় নেতাদের সাথে লেনদেন করার চেষ্টা করেছিল ।কিন্তু তখনো বাংলার একচ্ছত্র মুখপাত্র ,আসল নেতা শেখ মুজিবর রহমান পাকিস্থান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে কারারুদ্ধ ছিলেন।বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শেখ মুজিবকে বিনা-বাক্যে মুক্তি দেবার কথা বলাবলি হচ্ছিল যা প্রসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সেদিকে কর্ণপাত করেনি অথচ ভারতকে আক্রমণকারী হিসাবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছিল ।
উপেক্ষিত আলোচ্য বিষয়ঃ
মাননীয় স্পিকার , আজকে আমি বাংলাদেশের সংকটপূর্ণ অবস্থার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য দীর্ঘায়িত করতে চাইনা ।দলিল টা বিশ্বাসযোগ্য নয় কারন যখন ভারত সরকারের সাথে দমন , সমবেদনা , ধৈর্য্য ,রাষ্ট্রনায়কত্ব তুলনা করা হয় তখন বিশেষত উদ্ভট বলে মনে হয়েছে । তাছাড়া গোটা বিশ্বের নিকট জাতিকে যথেষ্ট দোষারোপ করা হয়েছে ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্থান সরকারকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগীতা করতে শুরু করলো আর এই সহযোগীতার হাত টা বাঙালীদের ধ্বংস করার কাজে লাগাতে লাগলো । মূলত ২৫ মার্চে পাকিস্থানের সেনাবাহিনীর পৈশাচিক আক্রমনের পরেই মূল সংগ্রাম শুরু হয় । এক পর্যায়ে “জাতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধে” রূপধারণ করে । শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয় , চীনও তাদের সাহায্যের হাত বাড়ীয়ে দিয়েছিল নিরীহ বাঙালীদের ধ্বংস করার জন্য ।
উপসংহারঃ
সবশেষে আমি কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি –
প্রথমতঃ সংকট শুরু হয়েছে মূলত যখন ইয়াহিয়া খান তার সেনাদের অবাধ ,সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বাতিল করে বিজয়ী দল ও তার সমর্থকদের মেরে ফেলার আদেশ দেন ।
দ্বিতীয়তঃ প্রায় ১০ লক্ষ রিফিউজি ভারতে আশ্রয় নিয়েছে এবং ভারত চাইলেই পূর্ব-পাকিস্থানের সীমানায় প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করে দিতে পারত ।
তৃতীয়তঃ ভারতের সার্বভৌমত্ব ও সার্বিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে বেসামরিক লোকদের আগ্রাসনে ,তাছাড়া রিফিউজিদের জন্য মানবিক প্রয়াস অব্যাহত রাখা কঠিন ছিল বৈকি যেখানে জাতিসংঘ ও তার সদস্যরা বরাবরই উপেক্ষা করে গেছে ।
চতুর্থতঃ ভারত প্রায় ৮ মাস আমাদের জ্বালাতন ,অত্যচার সহ্য করেছে যা অনেকেই স্বীকার করেছেন ।
পঞ্চমতঃ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবকে খালাস দেবার কোন ইঙ্গিত তো দিলেন না বরং নিজেকে গোটা পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী দাবী করলেন ।তার সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সকল প্রচেষ্টা বাঙালীরা প্রত্যাখ্যান করলেন এবং বিশ্বজুড়ে অনেক জ্ঞানীগুণী পর্যবেক্ষক এটাকে “ সৌন্দর্যবর্ধক” হিসাবে গ্রহন করল ।
ষষ্ঠতঃ ভারত যাদের সাহায্যের আবেদন উপেক্ষা করেছিল সেই অসহায় অতিরিক্ত রিফিউজি কষ্ট দুর্দশা থেকে পরিত্রান পাওয়ার একমাত্র উপায় হিসাবে অভিনয়কে বেছে নিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঙালীদের জীবন বাচাতে । কারন সেখানে পাকিস্থানের সেনাবাহিনীদের দ্বারা বাঙালী হত্যার কোন অন্ত ছিল না । প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আক্রান্তদের পাকিস্থানের নাগরিক হিসাবে উল্লেখ করতে লাগল । অথচ নিজের লোক দাবী করার পরেও সাধারণ জনসাধারণের উপর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন ।
সপ্তমতঃ ভারতীয় সৈন্যদেরকে বাংলাদেশের লোকজন “মুক্তিদাতা” হিসাবে স্বাগত জানাচ্ছে ।
মাননীয় স্পিকার ,কোন ফলপ্রসূ ঘটনাই সংকট সৃষ্টির জন্য ভারতকে দায়ী করতে পারে না যদি গভীর ভাবে ভাবা যায় ।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিবেচনায় রেখে ভারতের মানহানী করার জন্য এমন কোন ঘটনা তৈরী করো এবং চলমান ট্র্যাজেডী যেন আরো বেগবান হতে থাকে ।
.
13.130.433
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
নতুন জাতি হিসাবে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবেঃ ম্যাকক্লসকি | প্রেস বিজ্ঞপ্তি | ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
সংবাদ সূত্রঃ
পল এন. ম্যাকক্লসকি জুনিয়র
ডিসেম্বর ৯, ১৯৭১
কংগ্রেসম্যান পল এন. ম্যাকক্লসকি আজকে বলেছেন “ আমার কাছে যা মনে হচ্ছে, নতুন জাতি হিসাবে বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতেই হবে”।
ওয়াশিংটনের অফিস থেকে পাঠানো বিবৃতিতে ম্যাকক্লসকি বলেছেন যে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির ব্যাপারে তার ‘একটিমাত্র সন্দেহ’ আছে।
“ সেই সন্দেহটি হচ্ছে গত বছরের স্বাধীন নির্বাচনে সরকার চালানোর জন্য নির্বাচিত ১৬৭ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে যথেষ্ঠ সংখ্যক বেঁচে আছেন কিনা”।
“ যদি থাকে তাহলে আমার কাছে মনে হচ্ছে এই দেশের উচিত তার উপনিবেশ বিরোধী ঐতিহ্য অনুসরণ করা এবং নতুন জাতি হিসাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া”।
ম্যাকক্লসকি বলেছেন “ পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের কার্যকলাপকে মাথায় রেখে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের একত্র হওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছে। “ গত আট মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা হওয়া মানুষের হিসাব দুই লাখ থেকে দশ লাখের মধ্যে হবে। মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার একটা পদ্ধতিগত চেষ্টা ছিল যারা ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে অবিশ্বাস্যকর জয়লাভ করেছিল”।
“ বর্তমানে ভারতীয় সীমান্তে বাস করা এক কোটি শরণার্থীর জন্যই শুধু নয়, সাথে পূর্ব পাকিস্তানের বাকি প্রায় সাত কোটি মানুষের জন্যও জাতিসংঘের ত্রান কার্যক্রমের সম্পুরক হিসেবে আমাদের উচিত ব্যাপক আকারে যুক্তরাষ্ট্রের ত্রান প্রচেষ্টা প্রস্তুত রাখা। হিসাবমতে শরণার্থী শিবিরেই শুধু প্রতিদিন চার হাজারের বেশি শিশু অপুষ্টি এবং রোগের কারনে মারা যাবে”।
সহকর্মীদের প্রতি এক চিঠিতে ম্যাকক্লসকি বর্তমান সংকট লাঘব না হওয়া পর্যন্ত দিনে ৩৩ সেন্ট, মাসে ১০ ডলার অনুদানের মাধ্যমে এক কোটি আমেরিকানকে এক কোটি পাকিস্তানিকে সাহায্য করার জন্য ‘মানুষ মানুষের জন্য’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহনের আহবান জানিয়েছেন।
.
13.131.434-436
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
যুক্তরাষ্ট্রের উচিত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করাঃ হেরসটাস্কির বক্তৃতা ও প্রস্তাব | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
এইচ ১২২০২ কংগ্রেসনাল রেকর্ড-হাউস ডিসেম্বর ৯, ১৯৭১
নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ
জনাব হেরসটাস্কি। মাননীয় স্পীকার, নতুন রাস্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদানের উপর আমি আজকে একটা সাধারন হাউস প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছি।
আমার বক্তব্যের শেষে রেকর্ডে আমি আমার প্রস্তাবটি যুক্ত করে দিবো যেটা নিজেই নিজের হয়ে কথা বলে। আওয়ামী লীগ এবং পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক জনগনের উপর জঘন্য নির্যাতনের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার সেই অঞ্চলের নাগরিকদের যেকোন প্রকার আনুগত্যকেই অস্বীকার করেছে। গৃহযুদ্ধ যা ইয়াহিয়া খান দ্বারা ২৫ মার্চ শুরু হয়েছিল এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক শুরু হওয়া লড়াই এক রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানের ভাগ্য বন্ধ করে দিয়েছে।
মাননীয় স্পীকার, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেই অঞ্চলের আজকের সকালের প্রতিবেদন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে একসময়ের পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ঘিরে এবং প্রায় পরাজিত করে ফেলেছে। খুব অল্পসময়ের মধ্যে এই শক্তির হাতে কেন বিজয় থাকবে না তার কোন কারন আমি খুঁজে পাই না।
বাস্তবতার উপর ব্যবস্থা নিলে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এইসব সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো বিবেচনায় নেয়া এবং নতুন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়া। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বাস্তবতার কারনগুলো আমাদের সরকারের নির্যাতনকারী ইয়াহিয়া খানকে সমর্থন দেয়ার নির্দয় নীতিকে উল্টে দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তব জীবনযাত্রার মুখোমুখি দাড় করানো উচিত।
২৫ মার্চ থেকে আমাদের সরকার নিরবতার মাধ্যমে পূর্বের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারের গনহত্যাকে সমর্থন করেছে। ভারতের প্রচন্ডভাবে প্রতিবাদ করেছে যে হোয়াইট হাউস এবং ফগি বটনের মাধ্যমে বধির ইয়াহিয়া খানের উপর চাপ প্রয়োগ করেই এই গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে যা কিনা এক কোটি শরণার্থীকে কলকাতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের সরকারের অসারতা এবং এর স্নায়ুযুদ্ধের প্রতি দুর্বলতা, যেখানে ইয়াহিয়া সরকারের অব্যাহত সমর্থন প্রয়োজন, একমাত্র দক্ষিণ এশিয়ার অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে এবং ভারতে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দিকে নিয়ে যাবে। গৃহযুদ্ধ শুরু অবার পর প্রশাসন কর্তৃক ৮ মাস পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহই ভালোভাবে উদাহরনসহ বুঝাতে পারে বাংলাদেশ ট্রাজেডির প্রতি আমাদের সরকারের দ্বিমুখী নীতির দৈন্যতাকে।
যদি যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার সুনাম পুনরুদ্ধার করতে চায় এবং সামনের দশকে যেকোন ধরনের প্রভাব আশা করে তবে আমাদের দ্ব্যর্থ এবং পাকিস্তানি সরকারের দমন নীতি শেষ হতেই হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা দ্রুত পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক এবং সামরিক পরিস্থিতির আলোকেও যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে ইয়াহিয়ার একনায়কতন্ত্র থেকে আলাদা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তাই দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার নীতি বদলানো উচিত। আমার আজকের পেশ করা প্রস্তাবটি একটি অবাধ ও নতুন দক্ষিণ এশিয়া নীতি কাঠামোর ধারনা দেয় যেটা যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করবে।
বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতার জন্য সাহসী সংগ্রামকে বিলম্বিত আমেরিকার স্বীকৃতির বাইরে আমার প্রস্তাবনা দক্ষিণ এশিয়ার সকল ক্ষেত্র থেকে বিদেশী সৈন্যদের প্রত্যহারসহ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান জানাচ্ছে। অন্যান্যগুলোর মধ্যে এর মানে হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য এবং কাশ্মীর থেকে পাকিস্তানি সৈন্য প্রত্যাহার। বর্তমানে বাংলাদেশে অবরুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকেও আমাদের অস্বীকার করা উচিত না। গত ৯ মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক নৃশংসতার আলোকে এটা বিস্ময়কর না যে বাংলাদেশে এই বেঁচে যাওয়াদের উপর প্রতিশোধ নেয়া শুরু হতে পারে। যদিও সাধারন নৈতিকতা এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাতে কোন প্রতিশোধের প্রয়োজন নেই। একইভাবে, আমার প্রস্তাবনা পাকিস্তানি সৈন্যদের তড়িৎ এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য আহবান জানাচ্ছে। বর্তমানে পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত বাঙালীদের একইরকম ব্যবস্থার জন্য আমাদের অবশ্যই চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
এবং আমার প্রস্তাবনা অবশ্যই স্বীকৃতি দিচ্ছে যে বর্তমানে ভারতে লক্ষ লক্ষ গৃহহীন শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের জন্য অবিলম্বে প্রচেষ্টা করা উচিত। পৃথিবীতে ভুক্তভোগীদের ত্রাণ দেয়ার আমাদের ঐতিহ্যগত আমেরিকান নীতি বলে যে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায় অনুদান এবং সামগ্রী সরবরাহে আমরা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রথমে আছি।
মাননীয় স্পীকার, আমি বিশ্বাস করি পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের জন্য সময় এবং বিলম্বিত চিন্তাবোধ বাংলাদেশকে স্বীকৃতির পথে নিয়ে যাবে। এমন একটা নীতি শুরু করতে পারি না কেন যে নতুন রাষ্ট্রের জনগণ যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের সাবেক সরকারের থেকেও সম্পূর্ণ আলাদা? পররাষ্ট্র বিষয়ে আমাদের অবশ্যই ন্যায়বিচার এবং নৈতিকতা বোধকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের প্রতি আমাদের নীতির দীর্ঘ বিলম্বিত পরিমার্জনের মাধ্যমে আমরা শুরু করতে পারি।
প্রস্তাবনা
দক্ষিণ এশিয়ার সংকটের প্রতি সংসদের উৎকন্ঠা প্রকাশ করছি।
যেহেতু গত বছর পূর্ব বাংলার জনগণ অবিশ্বাস্যকরভাবে নিজ সংকল্প এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য ভোট দিয়েছিল, এবং
যেহেতু সেই অঞ্চলের বেসামরিক জনগণের উপর পাকিস্তান সরকার নির্দয় নির্যাতন চালিয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে এবং এক কোটি শরণার্থীকে ভারতের দিকে ঠেলে দিয়েছে, এবং
এর ফলে পাকিস্তানি সরকার যেহেতু পূর্ব বাংলারর উপর নৈতিক কর্তৃত্ব হারিয়েছে এবং স্থায়ীভাবে সেই অঞ্চলের জনগণদের আলাদা করে দিয়েছে, এবং
নৃশংস এবং অগণতান্ত্রিক পাকিস্তান সরকারের প্রতি সমর্থন বন্ধ করে নৈতিক কর্তব্য নির্ধারণে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার যেহেতু ব্যর্থ হয়েছে, এবং
যেহেতু ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে লড়াই বর্তমান সংকটকে বাড়িয়ে দিয়েছেঃ তাই-
হাউজের দৃশ্যপট এই যেঃ
(১) যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের উচিত দক্ষিণ এশিয়া নীতি বিশেষভাবে পরিবর্তনের জন্য, বিশেষ করে ভারত সরকারের সাথে এর অবনমিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে, অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
(২) ভারত এবং পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহে উপর বর্তমান নিষেধাজ্ঞা অনির্দিষ্টকালের জন্য বৃদ্ধি করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত দক্ষিণ এশিয়ায় যেকোন সামরিক সম্পৃক্ততা সুন্দরভাবে এড়িয়ে চলা।
(৩) রাষ্ট্রপতির উচিত মুক্ত এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়া।
(৪) কাশ্মীরসহ বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারত থেকে সকল বিদেশী সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারসহ দক্ষিণ এশিয়ায় সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চাপ প্রয়োগ করা।
(৫) সকল রাজবন্দী ও শরনারথীর শীঘ্র প্রত্যাবসান এবং বন্দীদের সাথে ব্যবহার ও যুদ্ধ পরিচালনা আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সম্পূর্ন সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
(৬) শান্তি পুনঃস্থাপনের সাথে সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য বাংলাদেশে স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত, এবং
(৭) এই প্রস্তাবনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহন করা এবং পূর্ণ অর্থনৈতিক ও মানবিক সাহায্য সরবরাহ করা উচিত।
.
13.132.437-441
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
দক্ষিণ এশিয়ায় অনুসৃত মার্কিন নীতিঃ সিনেটর কেনেডির ভাষণ | সিনেটের কার্যবিবরণী | ১১ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
ডিসেম্বর ১১,১৯৭১ |
কংগ্রেসের রেকর্ড- সিনেট দক্ষিণ এশিয়ায় অনুসৃত মার্কিন নীতি |
Page: 437
মিঃ কেনেডি। মিঃ প্রেসিডেন্ট, একটি দুঃখজনক জ্ঞানহীন যুদ্ধ – একটি অযাচিত ও জ্ঞানহীন যুদ্ধ আজ দক্ষিণ এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। কেন বা কার জন্যে এই যুদ্ধ আর এর জন্য কেই ই বা দায়ী এই নিয়ে গত কয়েকদিন যাবত অনেক লেখালেখি হয়েছে।
গত ৩ দিন যাবত হোয়াট হাউস ও স্টেট ডিপার্ট্মেন্ট এর অনেক উচ্চ পদস্থ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা দক্ষীন এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে তাদের প্রশাসনিক পদক্ষেপ ব্যখ্যা করেন, যদিও অধিকাংশ আমেরিকানদের সেইটা বোধগম্য হয় নি।
এইসকল পক্ষে –বিপক্ষের ব্যখ্যা ও দলিলের বাইরের বিবৃতি দেওয়ার পরেও ৮ মাস ধরে পশ্চিম বাংলা তে চলা সমস্যার প্রতি দেশের প্রশাসনিক নীতি অস্পষ্টই থেকে যায় ।
এই ৮ মাস ধরে পশ্চিম বাংলাতে চলা রক্তক্ষয়ী সমস্যার পরেও আমাদের সরকার পাকিস্থান কে পররাষ্ট্র নীতি তে অনেক ছাড় দিয়েছে, এই নিষ্ক্রিয়তা না থাকলে হয়ত পশ্চিম পাকিস্থানি সামরিক বাহিনী দ্বারা পুর্ব বাংলার সাধারন জনগনের উপর অত্যাচার ও গণহত্যা কমানো যেতো। আমেরিকার সামরিক বাহিনী হতে পাকিস্থান সামরিক বাহিনীর জন্যে পাঠানো অস্ত্র ও যুদ্ধের সরঞ্জাম পাঠানো বন্ধ করা গেলে এই বিশাল গণহত্যা রোধ করা সম্ভভ ছিলো। কিন্তু নিশ্চিত ভাবেই এ বিষয়ে কোন দ্বিমত পোষন করা হয়নি, আর যার মাধ্যমেই বোঝা যায় যে আমরা সমস্যাগুলোর গভীরতা বুঝে উঠতে পারি নি।
এই বিষয় নিয়ে অজ্ঞাতনাম হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাগণ ব্যস্ত ছিলেন, তাঁরা যুদ্ধের সমস্যা সমাধানারে জন্যে এটাকে “ সময়ের বিপরীতে দৌড় “ বলে আখ্যায়িত করেন। কিন্ত মিঃ প্রিসেডেন্ট, এইটা আমাদের দ্বায়িত তাদের কে প্রশ্ন করা যে কখন এবং কি ভাবে এই “ সময়ের বিপরীতে দৌড়’’ আরম্ভ হবে।
এইটা কি জুলাইয়ের মাঝামাঝি আরম্ভ হয়েছিলো ? অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান অবস্থা শুরুর চাইতে বেশী ভালো নয়, এবং জুলাই ৭- ১৪ তারিখের ভিতরে আমাদের সরকারের এ বিষয়ে প্রভাবিত করার সুযোগ ছিলো।
আমাদের অবগতির জন্য জানার দরকার যে, তখন পশ্চিম বাংলাতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী দ্বারা হাজার হাজার নিরাপরাধ মানুষকে গণহত্যা ও আওয়ামী লীগ দলের সদস্য হত্যা চলছিলো। দৈনিক প্রায় ৪৫ হাজার করে মোট ৭০ লাখের উপরে উদ্বাস্তু ভারতে প্রবেশ করে যুদ্ধের
Page:438
ভয়াভহতা থেকে বাচার জন্য। তাদের নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবর রহমান তখনো কারাগারে। পশ্চিম পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট ইয়া হিয়া খান শেখ মুজিব কে দেশদ্রহিতার মামলায় কারাগারে প্রেরণ করেন এবং পরিসস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিষ্ক্রিয় সরকার গঠন করে, ভিবিন্ন শহরের সামরিক শাসন আরো জোরদার করেন।
সাময়িক এই বিশাল উদ্বাস্তু ও শরনার্থীদের পুনর্বাসন করতে ভারত সরকার হিমসিম খাচ্ছে । চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও নূন্যতম বাসস্থান, খাবার ও ঔষধের অভাবে সাধারণ বর্ষার বৃষ্টিতেই অসংখ্য লোক মারা যাচ্ছে। এই শরনার্থীদের জন্য ভারত দেশী ও বিদেশী সব ধরনের সাহায্য নেওয়া সত্ত্বেও এই ধরনের ধকল সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারন যুদ্ধের ভয়াভহতা এর চাইতে শরনার্থী শিবিরের অবস্থা ভালো থাকায় অনাবরত শরনার্থী প্রবেশ করছিলো।
এই ভয়াভহ অবস্থার ভিতরেই, জুলাই মাসে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও পাকিস্থান সফরে যান হেনরি কিসিঞ্জার। তিনি ভারত ও পাকিস্থানের প্রতিনিধিদেরকে এ বিষয়ে নেতাদের সাথে বৈঠক করতে বলেন । আমেরিকানরা দক্ষিণ এশিয়ার চলমান সহিংসতা নিয়ে চিন্তিত এবং সরকারের উপর মহল ও এই বিষয়ে প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত, দক্ষিণ এশিয়ায় চলমান সহিংসতা ও যুদ্ধ নিয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা দেখে কংগ্রেসের অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়ি, যেইটা আমাদের ২৮ জুনের শরনার্থী বিষয়ক সাবকমিটির মিটিং এ পরিষ্কার করে তুলে ধরা হয় , যেইখানে আমি সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করি ।
যখন মিঃ কিসিঞ্জার সবার আগোচরে কয়েকদিনের জন্য ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্ট ইয়া হিয়া খান ও গোপনে জেলে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন, আমাদের সকলের আশা ছিলো যে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার এই সমস্যার মূল সমস্যা সমাধান করতে পারবেন।
কিন্তু এখন আমরা যা জানতে পারলাম যে, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার মূল সমস্যা সমাধান বা আলোচনা নিয়ে মটেই ভ্রক্ষেপ করেননি বরং তিনি চায়নার প্রতি এমেরিকার নীতি বা পলিসি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র দের মতে সত্যিই যদি আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যা বা “ সময়ের বিপরীতে দৌড়’’ নিয়ে ভাবতাম , তাহলে গত জুলাইয়ে প্রেসিডেন্টের কার্যক্রম কোথায় ছিলো ?অবশ্যই গত ৪ মাসের পুরানো পশ্চিম বাংলার সমস্যার শান্তিপুর্নসমাধান নিয়ে ভাবা হয় নি । বরং তিনি দক্ষিণ এশিয়ার উদ্বাস্তু সমস্যার শান্তিপুর্ণ সমাধান নিয়ে ভ্রক্ষেপ না করে এটিকে এড়িয়ে যান।
মিঃ প্রেসিডেন্ট,আমি গত ৩ দিন আগে চায়নার চার ভাগের এক ভাগ জনগনের সাথে পুনরায় সম্পর্ক প্রতিস্থাপনের জন্য এই ব্যবস্থাপনাকে সাধুবাদ জানাই । কিন্তু একই সময়ে পৃথিবীর বৃহত্তম গনতন্ত্রের দেশ ভারতের, ৬ ভাগের ১ ভাগ জনগনের সমস্যা আমলে না নিয়ে স্বল্পকালীন
Page: 439
ভুল মতামত বা কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকেবিচ্ছিন্ন করে ফেলি । চায়নাকে নতুন ভাবে প্রাধান্য দিয়ে, আমরা আমাদের ২৫ বছরের ভারতের সাথে ফলপ্রসূ সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত ভুলে যাচ্ছি ।
সত্যি বলতে দক্ষিণ এশিয়ায় গত ৮ মাস ধরে চলা সহিংসতা বন্ধে আমাদের সরকার ক্রমাগত গুরুত্বে অবহেলা করে গেছে । এমনি শুরুর দিকে যখন ২৫ মার্চ কালো রাতে এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় ,আমাদের সরকারের কাছে গোপন খবর থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এইটা এড়িয়ে যায়। তাঁরা এটাকে জরুরী ভিত্তিত্বে দেখলেও, গনমাধ্যম সেই হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে আভাস পেত, কিন্তু সেইটা এই সরকার এড়িয়ে যায়।
এই শুরুর দিকের সহিংসতা ও আমাদের সরকারের নিষ্ক্রিয়তা দেখে আমার দুশ্চিন্তা হয় যেইটা ১ এপ্রিল এর সিনেটে পেশ করা হয়। আমি ৬ এপ্রিলে রাজ্য প্রধান রজারের কাছে চিঠির মাধ্যমে আমার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরি । আমার চিঠির অংশবিশেষ
পুর্ব পাকিস্তান থেকে আসা খবরে চলমান গৃহযুদ্ধের কারনে মানুষের নির্মমতা ফুটে উঠছে । অবিচারে ছেলে,মেয়ে গণহত্যার বিষটি আমি গভীর ভাবে সিনেটের সামনে তুলে ধরা হয় । সর্বশেষ পাওয়া তথ্যই আমার দুঃস্বপ্নকে তুলে ধরে।
সত্যি বলতে , পুর্বপাকিস্তানের এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখার পরেও আমাদের সরকারের দেশের ভিতরে ও প্রকাশ্যে নিশ্চুপ থাকা টা আমাকে অনেক মানসিক ভাবে চাপে ফেলেছে।
আমি বিশ্বাস করি যে, আমেরিকার দেওয়া অস্ত্র দিয়েই যখন পূর্ব পাকিস্তানে নির্বিচারে সাধারণ জনগনকে হত্যা করা হচ্চিলো তখন আমাদের সরকারের এইটার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া উচিৎ ছিলো । বিশেষকরে, কিভাবে এই সহিংসতা বন্ধ করা যায় এ নিয়ে আমাদের পরোক্ষ বা প্রত্যাক্ষ ভাবে যা করার দরকার সেইটা করা উচিৎ ছিলো । আমাদের প্রত্যক্ষ ভাবে এই যুদ্ধে খতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন কাজে সহযোগিতা করা উচিৎ ছিলো । এই বেপারে আমাদের সরকারের কার্যক্রম থাকলে আমি ও অন্যান্য এমেরিকানরা স্বস্তি বোধ করতো ।
সেইসাথে, আমাদের সরকার পূর্ব বাংলার খাদ্য সঙ্কট,নারীদের সমস্যা ও যুদ্ধে আমাদের অস্ত্রের ব্যবহার এইগুলো নিয়ে চিন্তা করে নি । এই বিষয়গুলো ,মিঃ প্রেসিডেন্ট নভেম্বরের ১ তারিখে , শরনার্থী বিষয়ক সাবকমিটির রিপোর্টে পরষ্কার তুলে ধরা আছে ।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, গত ৮ মাস ধরে চলা গতহত্যা ও সাধারন মানুষের উপরে চলা অত্যাচার দেখেও আমাদের উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তা গন এটাকে নিশ্চুপ থেকে এড়িয়ে যান আর এখন এত দিন পরে তাঁরা এটাকে সময়ের বিপরীতে যাত্রা বলছে শান্তি রক্ষার জন্যে । কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই টা মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই শুরু হয়েছে যা কিনা বাস্তবায়নের জন্য খুবি হাস্যকর ।
Page: 440
এক নাম না জানা রাষ্ট্রীয় বিভাগের উৎস হতে পাওয়া,কথাগুলর কারনে,আমেরিকান কর্মকর্তারা সপ্তাহিক ছুটি জুড়ে ভারতীয়দের নিন্দা করেছিল,- ‘ভারত পূর্ব পাকিস্তানে খুব দ্রুত সরাতে চেয়েছিল রাজনৈতিক বিবর্তন প্রক্রিয়ার জন্য যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রচার করছিল’। একটি প্রধান সঙ্কটের মধ্যে খাদ্য পাঠাতে হয়েছে দীর্ঘ ৮ মাস -যেখানে শরণার্থী শিবিরে শিশুদের মধ্যে ৪,৩০০ প্রতিদিন হারে মারা যাচ্ছে, এবং অসংখ্য হাজারের ও বেশি খাদ্য ও আশ্রয়হারা। যদি আমেরিকাকে প্রতিদিন গড়ে ৪৫,০০০ এর উপরে সীমান্ত পার হওয়া এই রকম বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেয়া লাগত, তাহলে, হয়ত আমরাও দ্রুত সেটা থেকে সরে যেতাম।
যদিও সশস্ত্র বাহিনীর অবলম্বন আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কখনই ফলপ্রসূ না, অবশ্যই, মার্জনীয়, আমরা একেবারে নিরাশ হতে পারিনা যে দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি উপেক্ষিত হয়েছে ঐ দিক থেকে যেখানে পাকিস্তান ও ভারতের সশস্ত্র বাহিনী এখন লড়াইয়ে জড়িত যা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ২৫ শে মার্চ রাতের আক্রমণের থেকেই শুরু । কিন্তু এখন এই অর্পিত “দোষ”, যা এই প্রশাসনিক নিয়ম অনুসারে ,শুধুমাত্র পাল্টা-শোধই নয়, অসততাও বটে ।
এই ধারনা বিবৃত হয় এই সপ্তাহে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র দ্বারা যে কিনা বিভিন্ন রকম ভ্রান্ত ধারনা জানায়, মিঃ প্রেসিডেন্ট, সেইসাথে নির্দিষ্ট তথ্যকে রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল/মিথ্যা বর্ণনা উপস্থাপিত হয়। উদাহরন সরূপ, বিবৃতিতে ছিল যে “ নীতিগতভাবে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে, এবং , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রদত্ত ভারতকে “যুদ্ধ এড়ানোর জন্য এবং আলোচনার মাধ্যমে সন্ধি স্থাপন করার একটি পরিকল্পনা তে, পাকিস্তান সরকার এর সম্মতি ছিল ।
বেশ, সকল তথ্য এখন বেরিয়ে আসছে, এবং তারা নথিতে দেখায় যে ঘটনাচিত্র তুলনামুলক অনেক বেশী জটিল ছিল বিধায় মুখপাত্ররদের আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে, এবং এতাও বিশ্বাস করতে হবে যে আলোচনার জন্য তথাকথিত পরিকল্পনা বাস্তবিকের চেয়ে কিছু কম ছিল। বস্তুত,মাঠ পরজায়ের অফিসিয়াল রিপোর্ট থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, অনেক যোগ্যতা ছাড়াই, উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধি সঙ্গে একটি অঙ্গীকার করাতে আলোচনার দায়িত্বগ্রহণ করাতে , কোন সময়েই রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের সম্মতি ছিল না। আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে বলা যায়, পূর্ববাংলার সংকট কালের মুক্তি অথবা অন্তরআত্মা ব্যক্তি-শেখ মুজিব এর সাথে সরাসরি কোন সন্ধি স্থাপনে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান কোন সময়ই সম্মত ছিল না ।
আরো কষ্টদায়ক যে এখনো,মিঃ প্রেসিডেন্ট, এই সপ্তাহে ওহিও থেকে বিশিষ্ট সিনিয়র সিনেটর দ্বারাপাকিস্তানি একরোখা কাজের প্রমাণপত্র উপস্থাপিত হয়, সম্প্রতি যিনি কিনা ভারত ও পাকিস্তান উভয় দর্শন করে আগত ব্যক্তি। তার দর্শনের উপর রিপোর্টিং, সেনেটর SAXBE রাজ্যের, এবং আমি তাঁকে উদ্ধৃত করছিঃ
আমি প্রস্তাব রাখসি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি যে তিনি একমত আছেন অন্তত পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন সঙ্গে। তিনি আমাকে বলেছেন, তিনি এই কাজ করতে ইচ্ছুক ছিলেন এবং তাঁকে আন্তরিকও মনে হয়েছিল। কিন্তু ১০ ঘন্টা পরের কথা, পাকিস্তানি প্লেন ভারতের ভিতরে ছয় সামরিক এয়ার ফিল্ড বোমাবর্ষণ করেছিল, এবং এর মাধ্যমে, পালাক্রমে, ভারত দ্বারা একটি ভূমি আক্রমণের সূত্রপাত ঘটে।
ইয়াহিয়া খান আমাকে মিথ্যা বলেছিল। আমার সাথে কথা চলাকালীন সময়ে সে বোমা মিশন পরিকল্পনায় ছিল।আমি বিশ্বাস করি গলাগুলির যুদ্ধ প্রতিহত করা যেত এবং ভারতকে একটি আক্রমণ শুরু করা থেকে বিরত রাখা যেত , যদি পাকিস্তান স্বায়ত্তশাসনকে মঞ্জুর করত পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি।
সমভাবে ধকলছিল, মিঃ প্রেসিডেন্ট, কর্মকর্তাদের ক্ষেত্র থেকে পাওয়া গতকালকের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেয় যে মোটামুটি আগে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বানের মাধ্যমে ভারতকে নির্দেশ দিয়েছিল নতুন দিল্লির মধ্যে সতর্কবানী পৌঁছে দিতে যে আমেরিকান সূত্র পূর্বাভাস দিচ্ছে পাকিস্তান পাশ্চাত্য উত্তেজনা বাড়তে বরাবরই পরিকল্পনারত রয়েছে
Page: 441
যদি ভারত সীমান্তের বাংলার গেরিলারা, মুক্তিবাহিনী দল, পূর্ববাংলায় পূর্ব সীমান্তেতাদের কার্যক্রমকে তীব্রতর করে তোলে। ভারতীয় নেতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল এমন একটি উদ্দীপনাময় সহিংসতার ব্যাপারে, এমনকি এটি পাকিস্তান দ্বারা প্রারব্ধ যে,“ইন্দো-আমেরিকান সম্পর্কের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে।” সেখানে একটু পরামর্শ ছিল যেমন একটি উন্নয়ন যামার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। শান্তি বা সরাসরি আলোচনার জন্য শেখ মুজিবকে সাথে নিয়ে জনশ্রুতি দিয়ে কোন পরিকল্পনই তাদের ছিল না- শুধু সতর্ক করে দেয়া হচ্ছিল ভারত যদি বাংলার গেরিলাদের সমর্থনকে হ্রাস না করে তখন যুদ্ধ হবেঅনিবার্য, অথবা একারনেই হয়ত আমেরিকান কর্মকর্তাহতে ২ মাস পূর্বে- অক্টোবরে কোনো অর্থপূর্ণ বিকল্পপন্থা ভারতকে দেয়া হয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে।
মিঃ প্রেসিডেন্ট,যেহেতু আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব অবিশ্বাস্যভাবে নীরব রয়েছে গত ৮ মাসেসময় ধরে, মানুষের বঞ্চনা ও সহিংসতার ভূত যা দক্ষিণ এশিয়াকে গ্রাস করছে। এটা এখন সংকটের পরবর্তী পর্যায়,কিন্তু সুযোগ এখনও বিদ্যমান, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরজন্যশান্তি ওমুক্তির দিকেএকটি ইতিবাচক অবদান রাখবে।
আমরা নিজেরাই এই সংকট সমাধান করতে পারবো না,এবং কোন উপায়েই আমাদের সরাসরি জড়িত হওয়া আনুচিত। কিন্তু একটি দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা ইতিপূর্বেই “জড়িত”- আমাদের বন্দুক এবংসরঞ্জামও জড়িত,আমাদের অর্থনৈতিক সহায়তা, এবং আমাদের কূটনীতি জড়িত, – তাই এটা কোন প্রশ্নই রাখেনা যে আমাদের জড়িত হওয়া উচিত কি না, কিন্তু কিভাবে আমাদের জড়িত হওয়া উচিত, আমাদেরউচিতআমাদের বর্তমান সম্পৃক্ততাকে ব্যবহার করা।
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেআমাদের সরকারকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন:
আমি আশা করি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আছে তার প্রজ্ঞা ও সুবিশাল মর্যাদা। যা ব্যবহৃতহবে পূর্ব বাংলার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক সমাধানখুঁজে পেতে। আমার পক্ষ থেকে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব আমাদের জনগণের উত্তেজনা প্রশমন করতে। তাসত্বেও, সত্য বলতে আমরা যেই অবস্থায় ছিলাম,আমি যদি সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি না করতাম তাহলে অবস্থা আরো সোচনীয় হত।
মি: প্রেসিডেন্ট, এই সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের সাহায্যের প্রতি আমাদের দৃড় আস্থা রাখতে হবে যেটা পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে সাহায্য করবে এবংএকই সাথে ভারত-পাকিস্থান সম্পর্কও ইসলামাবাদ বাংলাদেশী প্রতিপক্ষ এর সাথে তাদের নেতা মুজিবের সাথে সমস্যাস মাধানে ভূমিকা রাখবে।
ভারত-পাকিস্তান আলোচনার উদ্দেশ্য হবে ১৯৬৫ সালের পশ্চিম সীমান্তযুদ্ধবিরতিপুনরুদ্ধার করা, যখনইসলামাবাদ- বাঙ্গালিদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পূর্ববাংলার ভবিষ্যৎ অবস্থানির্ধারণ করবে।
এই ক্ষেত্রেরঅর্থ হবেযুদ্ধের ধারাবাহিকতা এবং এমনকি এর চেয়েও দুঃখজনক ঘটনা। তাই আমি আবারো বলছি যেসহিংসতার উৎস বিবেচনা করে আমাদের সরকার তার নীতি নির্ধারণের কাজ শুরু করতে হবে, শুধুমাত্র এর প্রকাশেই নয়- এবং পূর্ববাংলায় রাজনৈতিক নিষ্পত্তির দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা…..
.
13.133.442-443
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পাকিস্তানের জন্য মার্কিন যুদ্ধ জাহাজঃ সিনেট স্টিভেনশন-এর বিবৃতি | সিনেটের কার্যবিবরণী | ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ এস ২১৬২৯
কংগ্রেশনাল রেকর্ড- সিনেট
পাকিস্তানের জন্য ইউএস নৌ জাহাজ
জনাব স্টিভেনশন। প্রেসিডেন্ট মহোদয়, ভারত এবং পাকিস্তান বিষয়ে নিরপেক্ষতার নাম করে আমাদের প্রশাসন ভিনদেশের ভুখন্ড থেকে মিলিটারী বাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়ে যুদ্ধ বিরতি আহবান করেছে।
এক পক্ষের চাইতে অন্য পক্ষকে বেশী অনুগ্রহ করার এ এক অদ্ভুত নিরপেক্ষতা। পশ্চিম পাকিস্তানীদের গণহত্যার আরো এক নতুন ধাক্কার শিকার বাঙ্গালীরা আমাদের নীতিকে নিরপেক্ষতা হিসেবে দেখবে না। যদি একটি নতুন জাতির জন্ম নিরোধ করা হয় তবে যারা যুদ্ধ করেছে এবং সেই জাতি সৃষ্টির জন্য রক্ত দিয়েছে তারা কোনভাবেই নিরপেক্ষতা হিসেবে মানবে না। যে নীতি আত্মস্থির করতে বাধা দেয় এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশকে বৈরী করে সে নীতি চরম ভুল।
নানা পন্থায় পাকিস্তানকে সমর্থন করে কিভাবে আমরা এ পর্যন্ত নিরপেক্ষ ছিলাম তা অন্যেরা দেখিয়েছেন।
আমাদের ভাব দেখানো নিরপেক্ষতা আরো প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে যখন ইউএস নৌবাহিনীর দুটি রণতরী বর্তমানে পাকিস্তান নেভীর পক্ষে নিয়োজিত আছে। এদের মধ্যে যেটি আক্রমণ ডুবোজাহাজ তা প্রয়োজনীয় কংগ্রেশনাল আইনি অনুমোদন ব্যাতিরেকেই ঋণচুক্তির মাধ্যমে কেনা হয়েছে।
রণতরীগুলোর একটি হল ডায়াব্লো, যার দৈর্ঘ্য ৩১১ ফুট, ১০ টর্পেডো টিউব বিশিষ্ট ২৪০০ টন আক্রমণ সাবমেরিন। অন্যটি মিশন সান্তা ক্লারা, দৈর্ঘ্য ৫৩০ফুট, ১৬,৬৫০ টন ক্ষমতা এবং ১৬০ জন ক্রু বিশিষ্ট। পাকিস্তানীরা এদের নতুনভাবে নামকরণ করেছে যথাক্রমে দ্য গাজী এবং দ্য ঢাকা।
ইউএস সরকারের জাহাজ-লোন কর্মসূচীর আওতায় পাকিস্তানকে এই জাহাজগুলো প্রদান করা হয়েছে, এই কর্মসূচীতে ৩৭টি দেশের কাছে ইউএস নেভীর ২৯৫টি জাহাজ ধার দেওয়া আছে।
পাকিস্তানের বেলায়, পাকিস্তানকে মিলিটারি সহায়তা দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় চাইনিজ এবং সোভিয়েত প্রভাব খর্ব করার কথিত প্রচেষ্টা হিসেবে ধরে নিলেও এসব জাহাজের ঋণ কিভাবে যথার্থ হল তা বোঝা মুশকিল। প্রকৃত সত্য হল যে এসব জাহাজ এমন একটি দেশকে দেয়া হল যেটির চীন কিংবা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে কোনো সাধারণ নাব্য জলসীমাই নেই, যা আছে ভারতের সাথে। ফলাফল হল দক্ষিণ এশিয়ায় সোভিয়েত প্রভাব কমল না বরং বিপরীত হল। কেবল ভারতের সাথে সংঘর্ষের জন্য পাকিস্তানকে জাহাজ, ট্যাংক এবং অন্যান্য মিলিটারী সরঞ্জাম সরবরাহ করে আমরা ভারতে সোভিয়েত প্রভাবই বৃদ্ধি করছি এবং এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করছি যাতে উপমহাদেশে পরাশক্তিগুলো পরোক্ষভাবে অস্ত্রের মহড়া দিতে পারে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমরা দেখতে পাচ্ছি চূড়ান্ত বিচারে ভারত পাকিস্তানের সাধারণ মানুষগুলোই এর মূল্য দিচ্ছে।
পাকিস্তানকে ধার দেওয়া জাহাজের বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে গোটা জাহাজঋণ প্রকল্পেই এক মারাত্মক ত্রুটি দৃষ্টিগোচর হয়। যদি যুক্তরাষ্ট্র মালিকানাধীন জাহাজ অন্য রাষ্ট্রকে ধার দেওয়া হয় এবং তা পরবর্তীতে সামরিক সংঘর্ষে ব্যবহৃত হয় তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অপরাধের দায় অনেক বেশী বর্তায় যা একেবারে বিক্রয় বা অনুদান দিলে হয় না।
ঋণ প্রোগ্রামের ভারসাম্যমূলক সুবিধা এই যে আমরা আমাদের জাহাজ পরবর্তীতে ফেরত পাই। বাস্তবে, যদিও এ সুবিধা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। যখন গ্রহীতা দেশটি মেরামত এবং যন্ত্র সংযোজনে জাহাজটির পেছনে ব্যয় করে ফেলে তখন জাহাজটি ফেরত দেবার জন্য আমরা আর জোর করতে পারিনা। এমনকি অনেকসময় ধারের আইনি মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আমরা জাহাজ চাইতে পারিনা যেমনটা চিলি, পেরু এবং পাকিস্তানের ক্ষেত্রে হয়েছে।
এমন ঋণ, যা আদৌ কোন ঋণই নয়, এর মাধ্যমে আমাদের কোনো লাভই হয় না অথচ অনেক বড় ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়। আইনি মেয়াদ শেষ হবার পরও জাহাজ রেখে দেবার অনুমতি দেয়ার মাধ্যমে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অন্যান্য আইনি বাধ্যবাধকতা না মানার জন্য উৎসাহিত করি। নিয়ন্ত্রণ নেই কিন্তু মালিকানা ধরে রেখে আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতির ঝুঁকিতে থাকছি। ইকুয়েডর যখন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া জাহাজ দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ফিশিং বোট পাকড়াও করে অথবা ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য পাকিস্তানকে জাহাজ দেওয়া হয় সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্বার্থই নেই।
এ সমস্ত কারণে জাহাজ ঋণ প্রোগ্রাম শীঘ্রই বন্ধ করে দেওয়া যায় কিনা তা গভীর বিবেচনা করে দেখা উচিত।
.
13.134.444-445
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
এন্টারপ্রাইজ বঙ্গোপসাগরে কেন? সিনেটর ইগলটন-এর বক্তৃতা | সিনেটের কার্যবিবরণী | ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
এস ২১৬৯৪ ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১
কংগ্রেশনাল রেকর্ড- সিনেট
ইন্দো-পাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ?
জনাব ইগলটন। প্রেসিডেন্ট মহোদয়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারিয়ার জাহাজ এন্টারপ্রাইজ বঙ্গোপসাগরে কেন? কেন আমেরিকার বাহিনী এশিয়ার নয়া যুদ্ধক্ষেত্রে ছুটে যাওয়ার খবর আসলো?
প্রকৃত সত্য হল দ্য এন্টারপ্রাইজ যে বঙ্গোপসাগরে আছে তা তর্কাতীত। সিবিএস এর মার্ভিন কালব আজ সকালে এমনি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের মন্তব্য এখনো “মন্তব্য নেই” এবং পরিস্থিতির আলোকে একে হ্যাঁ সূচক ধরে নেওয়া যায়।
সচিব লেইর্ড, সোমবার সকালে তার বিবৃতিতে বলেন যে তিনি জাহাজের গমনাগমন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে পরোক্ষ ইঙ্গিতে বলেন, “ কয়েকটি বহর অপসারণ কাজে অংশ নেবার পরিকল্পনা করছে।” প্রথম পঠনে কারো মনে হতে পারে এর অর্থ হচ্ছে আমেরিকানদের অপসারণ কাজ এবং প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের উদ্ধারকর্মে অধিকারে কারো কোনো প্রশ্ন নেই।
যাহোক, ঢাকায় যেসব আমেরিকানগণ রয়ে গেছে তারা স্বেচ্ছাতেই আছেন বলে প্রতীয়মান হয়। আজ সকালের নিউ ইয়র্ক টাইমস এ প্রতিবেদন মোতাবেক –
ঢাকায় থেকে যেতে চাওয়া বিদেশীদের মধ্যে ৪৭ জন আমেরিকান রয়েছেন যারা পূর্বপাকিস্তানের দখলকৃত রাজধানী থেকে আকাশ পথে অপসারণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেননি।
হয়তো পূর্বপাকিস্তানের অন্যান্য জায়গায় আরো আমেরিকান রয়েছেন যাদের উদ্ধার করা প্রয়োজন।
কিন্তু অন্যান্য আমেরিকান নাগরিকদের উদ্ধারের জন্য সচিব মহোদয়ের কাছে কোনো সূত্র আছে কি? সৈন্য বাহিনী নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ধাবমান এন্টারপ্রাইজ কি, কথার কথা, পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর উদ্ধারেই যাচ্ছে?
শুনতে প্রথমে এ এক অনুগ্রহ প্রদর্শনের মত শোনাবে যদিও এই একই সৈন্যবাহিনী যখন কসাইয়ের মত বাঙ্গালী নিধন করছিল তখন প্রশাসনের অনুগ্রহ কোথায় ছিল এমন প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু বাস্তবে, পাকিস্তানী সৈন্য উদ্ধার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার শামিল হতে পারে কারণ পরবর্তী মীমাংসার ঘুটি হিসেবে ভারত চাইবে কত বেশী সৈন্য বন্দী করা যায়।
পাকিস্তানী সৈন্যদের উদ্ধারে পেন্টাগনের মনোভাব যাই থাকুক না কেন, প্রেসিডেন্ট মহোদয়, আমি বলতে চাই যে এন্টারপ্রাইজের উপস্থিতি সন্দেহাতীতভাবে পূর্বপাকিস্তানে নিয়োজিত বাহিনীর জন্য স্বস্তিস্বরূপ এমনটা পাকিস্তানী উপর মহল চিন্তা এবং আশা করবে- যার মানে দাঁড়ায়, নিয়োজিত বাহিনীর উপর নির্দেশ আসবে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার অর্থাৎ সেখানে নিশ্চিতভাবে অপ্রয়োজনীয় আরো হত্যাকান্ড চলবে। তাহলে, এই পরিস্থিতি থেকে সম্পূর্ণ সরে থেকে পাকিস্তানী বন্দিগণের হেফাজতের জন্য রেডক্রসকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে ভারতকে চাপ দেওয়াই কি অধিকতর মানবিক হবে না?
আরেকটি প্রশ্নঃ দ্য এন্টারপ্রাইজ জাহাজটি ভারতে রাশিয়ার প্রভাব হ্রাস করতে বঙ্গোপসাগরে “পতাকা প্রদর্শন” করতে গেছে? যদি কমান্ডার ইন চীফ এর তাই মনে থাকে তাহলে তিনি কতটুকু যেতে চান? ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন? ঐ এলাকায় রাশিয়ান জাহাজগুলোকে আক্রমণ করবেন? তা যদি না হয় আমরা কি কাগুজে বাঘের মত দেখাচ্ছি না?
প্রেসিডেন্ট মহোদয়, আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই ভারতে রাসিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে গত গ্রীষ্মে ইন্দো-সোভিয়েত মিত্রতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার সূত্রে যখন আমাদের প্রশাসন পূর্বপাকিস্তান ইস্যুতে একেবারেই জড়িত হতে চাইছিল না। আশি লক্ষ থেকে এক কোটি শরণার্থী ভারতে পালিয়ে গেছে যা সেখানে সীমিত সম্পদের ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানে তাঁর বন্ধুদের ওপর প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের কি যথেষ্ট প্রভাব ছিল না যে তাদের এই অন্তসারশুন্য দমনপীড়নের ব্যাপারে বোঝানো যেত? পাকিস্তানের কার্যক্রমে আমরা যদি চুপ না থেকে তীব্র ধিক্কার জানাতাম তবে কি এখনকার সংঘাত আগেভাগেই নিরস্ত হত না?
যখন ভারতের বন্ধু প্রয়োজন ছিল তখন রাশিয়া সেখানে গেছে এবং আমরা ছিলাম না। ভারতীয় উপমহাদেশে যখন ক্রমেই অবধারিত হচ্ছিল আমরা তা প্রতিরোধে কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেইনি।
প্রেসিডেন্ট মহোদয়, আমরা যা করছি তাতে মনে হচ্ছে এতে কমপক্ষে পূর্ব পাকিস্তানীদের দূর্দশাকাল দীর্ঘতর হবে এমনকি আমেরিকানদের এশিয়াতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে।
আমরা পূর্বপাকিস্তানীদের কোন ধরণের উপকার করতে পারিনি, শান্তি রক্ষার্থে সময়মত ব্যবস্থা নিতে পারিনি কিন্তু একটি আঞ্চলিক যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বড় শক্তিগুলোকে মুখোমুখি করার ঝুঁকি নিতে একেবারেই দেরী করিনি।
আমি স্বীকার করছি, প্রান্তিক ভাবে হলেও এশিয়ায় আরেকটি যুদ্ধে আমরা জড়িত হব এমন কল্পনা করাও কষ্টকর। এটি প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের গুয়াম মতবাদ এবং “শান্তির প্রজন্ম” প্রত্যাশার সাথে যায় না। প্রশাসন জড়িত হতে চায় তা আমি এখনো বিশ্বাস করতে চাই না। পাকিস্তানের সাথে মিত্রতা চুক্তির জন্য কোনো প্রচেষ্টা চালানো হয়নি এটি আমাকে আশ্বস্ত করে যদিও সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে।
কিন্তু পাকিস্তান এবং ভারতের ক্ষেত্রে আমি আমাদের একটার পর একটা ভ্রান্ত নীতি দেখেছি তাই দূর্ঘটনাক্রমে জড়িত হয়ে পড়া এড়াতে পারার দক্ষতা আমাদের আছে কিনা তাই ভাবছি।
প্রেসিডেন্ট মহোদয় স্পষ্টতই দক্ষিণ এশিয়ায় সোভিয়েত ভুমিকাকে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে নিয়েছে – এতই গুরুত্বের সাথে যে একজন উচ্চপদের হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের দীর্ঘলালিত মস্কো সফর বাতিলের সম্ভাবনা নিয়ে কথা তুলেছেন। পাশাপাশি, উদ্দেশ্য যাই হোক, এন্টারপ্রাইজকে প্রেরণ সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তাই আজ আমার উদ্দেশ্য হল কংগ্রেস সদস্য এবং আমেরিকান জনগণদের কিছু সতর্ক বার্তা দেওয়া যাতে পরে আমাদের বুঝতে না হয় “অনেক দেরী হয়ে গেছে”।
.
13.135.446
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ভারতের ভূমিকা সম্পর্কে কংগ্রেস সদস্য ফ্রিলিংঘুসের | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
১৫ ডিসেম্বর,১৯৭১ কংগ্রেশনাল রেকর্ড–অভ্যন্তরীণ এইচ১২৬৪১
ভারত আশার আলো দেখালো
জনাব ফ্রেলিংসন। মাননীয় স্পিকার, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক বাহিনীর কোন প্রকার তৎপরতা না দেখাটা অসম্ভব। প্রতিবেশী দেশ ভারত, আপাতদৃষ্টিতে সাফল্যের সঙ্গে দেশটির মধ্যে বিভাজন তৈরী করছে। যেহেতু এটি একটি বড় দেশ এবং সামরিক শক্তিও অনেক বেশি। সুতরাং দেশটির উন্নতি কোন বিস্ময়কর কিছু নয়।
সবচেয়ে হতাশাজনক ব্যাপার হল, প্রকৃতপক্ষে বিস্ময়কর-যে, পৃথিবীর সকল দেশ এই ব্যাপারটি বসে বসে কেবল দেখা ছাড়া আর কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। যদিও জাতিসংঘের বেশিরভাগ দেশ সামরিক শক্তি ব্যাবহারের বিরোধিতা করেছিল এবং অস্রবিরতি ও পারস্পরিক সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু এই সম্পর্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কতৃক প্রকাশিত কোন বিবৃতির বিবরণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
কিছু যুক্তি, মিস্টার স্পিকার, যেহেতু এটা অবশ্যম্ভাবী যে পূর্ব পাকিস্তান অবশেষে স্বাধীন হবে, সুতরাং এই স্বাধীন হওয়ার প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করার জন্য ভারতকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা যায়। কিন্তু আমি প্রথমত এই যুক্তি গ্রহণ করতে পারি না। আমার মতে, ভারতের কাজকর্ম পরিষ্কারভাবেই আক্রমনাত্মক। তাদেরকে ক্ষমা করা উচিৎ নয়। তাদের পুরাতন শত্রুর বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি ভারতের নিজের এবং জাতিসংঘের দেশগুলোর জন্যে অনেক বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
.
.
13.136.447
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
কংগ্রেস সদস্য মিঃ রেরিক কর্তৃক জাতিসংঘের সমালোচনা | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ |
ডিসেম্বর ১৫, ১৯৭১ ই ১৩৫০৭
কনগ্রেশনাল রেকর্ড — (বিস্তারিত মন্তব্য)
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা: আন্তর্জাতিক কমিউনিজম প্রসারের নিমিত্তেই প্রতিনিধিদের সম্মেলনে
ডিসেম্বর ১৪, ১৯৭১
জনাব রেরিকের বক্তব্য অনুযায়ী,
“মাননীয় স্পিকার, আমরা বারবার শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘের অকার্যকারিতার প্রমাণ পেয়েছি।
জাতিসংঘ বর্তমানে, কিংবা কখনোই শান্তি বজায় রাখতে সক্ষম প্রতিষ্ঠান ছিল না। বরং ইতিহাসের প্রামাণ্য তথ্য উল্টোটাই নির্দেশ করে – কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের যুদ্ধ বস্তুত জাতিসংঘেরই যুদ্ধ ছিল।
মাননীয় স্পিকার, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় অনুদান কমিয়ে দেয়া নয়, বরং কমিউনিস্ট অধ্যুষিত এই প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করে নেয়াটাই হল প্রকৃত সমাধান। ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত তিনবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়েছে; তিনবারই সোভিয়েত রাশিয়ার পক্ষ থেকে সে প্রস্তাবে ভেটো দেয়া হয়েছে।
এর ফলাফল সন্দেহাতীতভাবে স্পষ্ট। এখন যেহেতু চীনও নিরাপত্তা পরিষদে আসীন, আমরা ধারণা করে নিতে পারি যে, এই দুই কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের অন্তত যে কোন একটির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত প্রস্তাবগুলোকেও ভেটো দেয়া হবে-যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা তাদের বৈশ্বিক কমিউনিস্ট কর্তৃত্বের কাছে নতি স্বীকার করছি।
না মাননীয় স্পিকার, জাতিসংঘ তহবিলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনুদান কমিয়ে দেয়া কোন সমাধান নয়। জাতিসংঘ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অঙ্গ-সংগঠন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে আসাটাই হল সমাধান।
আমার সহকর্মীদের আমি আবারও বলছি – ১০ নং ‘অব্যাহতি পিটিশন’ স্বাক্ষরের মাধ্যমেই তা করা সম্ভব, যা আমি মাননীয় স্পিকারের টেবিলে ইতিমধ্যে পেশ করেছি। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্টদের এই বিতর্ক-সংঘে যুক্তরাষ্ট্র আদৌ সদস্য হিসেবে যুক্ত থাকবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে বিচার বিভাগীয় জনপ্রতিনিধি কমিটির ‘এইচ. আর. ২৬৩২’ প্রয়োগ করে হাউজের সদস্যদের ভোট দানে বাধ্য করা সম্ভব।“
————-
.
13.137.448-449
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাক ভারত যুদ্ধঃ কংগ্রেস সদস্য ফ্যাসেল এর বক্তৃতা | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ কংগ্রেশনাল রেকর্ড–অভ্যন্তরীণ এইচ ১২৭৩৩
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ
জনাব ফ্যাসকেল। মাননীয় স্পিকার, পূর্ব পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ সত্ত্বেও বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুটি দেশের মধ্যে এইরূপ যুদ্ধ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যথাসাধ্য চেষ্টা করা আবশ্যক।
এতকিছুর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোথায়? এই বিষয়ে আমি সম্পূর্ণভাবে একমত যে, আমাদেরকে অবশ্যই যুদ্ধে জড়িয়ে পরা থেকে বিরত থাকা লাগবে। কিন্তু আমরা যদি দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাপারটি প্রভাবিত না রাখতে পারি, তাহলে আমরা প্রভাব ধরে রাখতে পারবো না। এখন পর্যন্ত ঐ প্রভাবটি তেমন ভাবে ব্যাবহার করা হয়নি। আরও এক বছর আগে থেকে বর্তমান সংকটের শুরুতেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সকল আবেদন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করে আসছে, যারা কিনা একটি মুক্ত নির্বাচনে গিয়ে সন্ত্রাস ও অত্যাচারের একটি শাসন প্রবর্তন করেছিলো।
প্রেসিডেন্ট খান ছিলেন অত্যন্ত বিশ্বস্ত। এজন্য আমরা উনার কাছে কৃতজ্ঞ। আর আমি নিশ্চিত যে, যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানকে দেয়া সকল প্রতিশ্রুতি আমরা অত্যন্ত গুরুত্তের সাথে রক্ষা করবো।
অবশ্য ভারত যে উদ্বাস্তুদের বৃদ্ধি ঠেকাতে সশস্ত্র পন্থা অবলম্বন অবলম্বন করছে না, সেই ব্যাপারটি ভুল ও হতে পারে। আমারা যুক্তরাষ্ট্রেবাসী নিজেরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করা উচিৎ যে, এই দেশগুলো ভারতকে একটি শান্তিপূর্ণ বিকল্প আশায় দিতে পারবে কি? এই যুদ্ধটি প্রতিরোধ করতে প্রকৃতপক্ষে কি করেছি?
বিশ্বের অন্যান্য এলাকার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় যে, ১৯৭১ সালে উপমহাদেশের তৎকালীন সামগ্রিক নীতি কোন বাস্তবতার দেখা পায়নি। মনে হচ্ছে যেন আমরা পুরাতন ব্যাপারগুলোর উপরেই নতুন প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করছি। সুতরাং আমাদের প্রায় সম্পূর্ণ সমর্থন থাকলো পাকিস্তানের প্রতি।
আমার মনে হচ্ছে যে আমাদের নীতিগুলোর যথার্থতা কেবল আমাদের নীতির ব্যাপারেই না, বরং আমাদের নিজস্ব স্বার্থের ভিত্তিতেও ভুল। কিন্তু এখন অধিকার বা ভুলগুলো নিয়ে বিতর্ক করার সময় না। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ ভারতের এই আপাত বিজয়ের প্রাক্কালে অপ্রয়োজনীয় রক্তপাত রোধ করার করার জন্য কাজ করা। আজ সকালে সমুদ্রে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলোর গতিপথ এবং গতকাল মস্কো থেকে জারী হওয়া একটি বেনামী সতর্কবার্তা থেকে অনুমান করা যায় যে, প্রেসিডেন্ট উপমহাদেশের ব্যাপারে সম্ভবত কিছু একটা করার চিন্তা করছেন।
মাননীয় স্পিকার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রাণনাশের বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টার ব্যবহার করার ব্যাপারে আমি কোন বিরোধিতা করবো না। কিন্তু একটি গুরুতর পদক্ষেপ কেবলমাত্র তখনই গ্রহণ করা উচিত, যখন নিচের ব্যাপারগুলো সম্মুখে চলে আসে,
প্রথমত, যদি এটি মানবিক কাজের জন্য অপরিহার্য হয়;
দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসকে যতটা সম্ভব পূর্ণ পরামর্শ দেয়া যায়; এবং
তৃতীয়ত, যদি আমাদের যেকোনো মানবিক প্রচেষ্টায় ভারত সরকারের সম্মতি পাওয়া যায়।
আমি সম্পূর্ণ এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ব্যবহারের বিরোধিতা করছি যতক্ষণ না পর্যন্ত কংগ্রেস সম্পূর্ণ আত্মরক্ষামূলক বা মানবিক উদ্দেশ্যে এই শক্তি ব্যবহারের পরামর্শ না দেয়া হয়।
যদি এর মধ্যে কোনটি সম্পূর্ণ করা হয়, তাহলে আমি আশা করি রাষ্ট্রপতি নিজে থেকেই কংগ্রেসকে বিশ্বের প্রধান প্রধান উন্নয়ন কর্মে কাজ করার পরামর্শ দিবেন।
.
13.138.450
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
কংগ্রেস সদস্য পল ম্যাকক্লস্কির ৩ দফা | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ কংগ্রেশনাল কার্যবিবরণী-মন্তব্য সংযোজন ই১৩৭১৪
কংগ্রেস প্রণীত ভারত ও পাকিস্তান সহায়তা
জনাব, ম্যাকক্লস্কি। মাননীয় স্পিকার, আজ, ১৯৭১ সালে শেষ সভা হিসেবে, কংগ্রেস ভারত ও পাকিস্তানে উদ্বাস্তুদের সহায়তায় একটি উপযোজন বিল প্রনয়ন করেছে।
বাস্তব প্রেক্ষিতে নিক্সন প্রশাসন আজ বঙ্গোপসাগরে রাজনৈতিক শক্তির অন্বেষণ করছে, এবং প্রশাসন বিশেষ প্রেক্ষিতে গত ৯ মাস ধরে পূর্ব পাকিস্তানী নেতাদের কৌশলগত ফাঁসিকে কেন্দ্র করে আবৃত বাস্তবতাগুলোকে স্বেচ্ছাকৃত আড়াল করছে, আমি মনে করি এই উপযোজনকে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক পরিচালনা নীতি পরিবর্তনে সুপারিশ করা আমাদের উপর আরোপিত হয়।
আমি, অতএব, যুক্তরাষ্ট্র ক্রিসমাস অনুষ্ঠানে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্য তিন দফা ঘোষণা করব।
প্রথম। নতুন জাতি হিসেবে আমাদের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ, সাথে আশা থাকবে যে এক বছর আগে স্বাধীনভাবে নির্বাচিত পূর্ব পাকিস্তানের বেঁচে থাকার লড়ায়ে টিকে থাকা নেতারা নতুন জাতির জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে তাদের ঘোষিত কার্যক্রম পরিচালনা করতে পাড়বে।
দ্বিতীয়। সামরিক বাহিনী পাঠানোর পরিবর্তে আমাদের উচিৎ বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করতে বঙ্গোপসাগরে খাদ্য ও চিকিৎসা তরী পাঠানো। বর্তমান সময়ে, চিকিৎসা তরী, ইউ এস এস, সাঙ্কচুয়ারি, ক্যালিফোর্নিয়ার মারে দ্বীপে পরবর্তী যাত্রার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি বাংলাদেশে পারমানুবাহী সরঞ্জাম ও শক্তিবাহিনীবাহী অন্যান্য তরীর স্থলে সাঙ্কচুয়ারিকে পাঠানোর পরামর্শ দিব।
তৃতীয়। শেখ মুজিব ও অন্যান্য পূর্ব পাকিস্তানী নেতাদের মুক্তি দিতে ও পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীকে, যারা কেবলই আত্মসমর্পণ করেছে, স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য পাকিস্তানের উপর সম্ভাব্য সকল চাপ প্রয়োগ করা উচিৎ আমাদের।
যুদ্ধে, পশ্চিম পাকিস্তানের অসভ্য নিপীড়ন ও গণহত্যায় আমাদের মৌন সম্মতি যার সূচনায় ভূমিকা রাখে, ভারতের আগ্রাসনের ব্যাপারে নিন্দা করার পরিবর্তে আমাদের উচিৎ একটি নতুন গণতান্ত্রিক সরকারকে সমর্থন জানানোর এবং পুনরায় কোন রক্তপাত ছাড়া উভয় পক্ষের সকল বন্দী বিনিময়ের চেষ্টা করা। অস্ত্র পাঠানোর পরিবর্তে আমাদের উচিৎ খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ ও সুবিধা পাঠানো, বিশেষভাবে এই ক্রিসমাসের সময়ের প্রেক্ষিতে আমরা যেখানে আমেরিকায়, বিপুল সমৃদ্ধির জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা।
পরিশেষে, কংগ্রেসকে আমাদের উচিৎ পরামর্শ দেয়া যে, প্রশাসনের বাস্তব সত্য আড়াল করাতে মৌন সম্মতি আর না দেয়, যা এই শাসনতন্ত্রের অধীনে আমাদের নিজস্ব কংগ্রেশনাল দায়িত্ববোধের জন্য অপরিহার্য। স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ধারাবাহিক অস্বীকৃতি এই শাসনতন্ত্রের অধীনস্থ দায়িত্ববোধের কংগ্রেসকে প্রদান করে। গণহত্যা ব্যাপারে, যা পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয়েছিল গত মার্চ মাসে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন আনয়নে এক মর্মান্তিক বিলম্বের ঘটনা ঘটে, যা অসমর্থনীয় ছিল এবং আছে।
.
13.139.451
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বিটলস সংগীতানুষ্ঠানে বাংলাদেশে শান্তির জন্য ৫ সহস্রাধিক মার্কিন নাগরিকের যে আবেদনটি প্রচার করা হয়েছিলঃ কংগ্রেস সদস্য বিংহ্যাম | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
ডিসেম্বর ১৭, ১৯৭১ ই ১৩৭৯১
কংগ্রেশনাল রেকর্ড- মন্তব্য বিশ্লেষণ
পূর্ব বাংলায় শান্তি স্থাপনের জন্য পিটিশন (আবেদন)
মিন্টার বিংহাম, মাননীয় স্পিকার, ১ আগস্ট ১৯৭১ রবিবার, নিউইয়র্ক শহরের মেডিসন স্কয়ারে ৪০,০০০ মানুষ একত্রিত হয়েছিল। অরিজিনাল বিটলস এর কিংবদন্তী দু’জন ব্যান্ড তারাকাসহ ‘বিটলস-ব্যান্ড-গ্রুপ’ সমবেত দর্শকদের জন্য গান পরিবেশন করে। কনসার্টের সকল অর্থই জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় পূর্ব-বাংলার বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষদের জন্য পাঠানো হয়েছে।
কনসার্টে ৫,০০০ এর অধিক মানুষ একটি আবেদন পত্রে স্বাক্ষর করে। পশ্চিম পাকিস্তান সরকার অন্যায় ও অন্যায্যভাবে যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন সকল প্রকার সহযোগিতা ও সম্মতি তুলে নেয়-সেই মার্কিন সরকারের প্রতি আহবান করে কনসার্টে সমবেত মানুষেরা। সরকারের ১২নং সাংবিধানিক-নীতির ১নং অনুচ্ছেদ সম্পর্কে বলা প্রয়োজন। এই নীতিতে সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারক কমিটির উল্লেখ আছে।
পূর্ব বাংলা সম্পর্কিত চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। যখন থেকেই চুক্তিটি প্রকাশিত ও প্রচারিত হতে শুরু হয়েছে তখন থেকেই মূলত শান্তি বাস্তবায়ন এগিয়েছে। কিন্তু বাস্তুচ্যুত অভিবাসী সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে যা শীঘ্রই সমাধান হওয়া জরুরী।
আবেদন পত্রের বিষয়বস্তু এবং যারা আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন তাদের সকলের নামঃ
আবেদন
মানবতার স্বার্থে পূব বাংলায় শীঘ্রই শান্তি ফিরে আনতে হবে। নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর সামরিক হামলা অনতি-লম্বে বন্ধ করতে হবে। গৃহহারা, বাস্তু-চ্যুত অভিবাসীদের করুণতর অবস্থার নিরসন করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত অবশ্যই পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর বর্বরোচিত নৃশংস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানী জান্তা ও সামরিক শক্তিকে সকল প্রকার সহযোগিতা, বিশেষত আর্থিক সহযোগিতা, বিশেষত আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের সিদ্ধান্ত থেকে মার্কিন সরকারের সরে আসতে হবে। পূর্ব-বাংলার অসহনীয় দুর্ভোগের নিরসনের আশু পদক্ষেপ নিতে হবে।
.
13.140.452
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশ একটি নতুন জাতিঃ সিনেটের চার্ট | সিনেটের কার্যবিবরণী | ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
এস ১৮৬০ কংগ্রেশনাল কার্যবিবরণী-সিনেট ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১
বাংলাদেশঃ একটি নতুন জাতির জন্ম
জনাব চার্ট। মাননীয় রাষ্ট্রপতি, স্বাধীনতার জন্য সফলভাবে তার যুদ্ধের অনুগমন করে, ভারতের সহযোগিতায়, বাংলাদেশ একটি নতুন জাতি, হতে চলেছে। সকল প্রতিবেদন মতে, এটির রাষ্ট্র ধারণা সমাজতান্ত্রিক গনতন্ত্র, এর অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, যা হোক, পশ্চিমা পর্যবেক্ষকের মতে, “পশ্চিম পাকিস্তানের অংশ থাকাকালীন যেকোনো সময়ের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ভাল হবে।”
.
13.141.455-460
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পাকিস্তানসংকটেরপটভূমি | রিপনসোসাইটি | ৩এপ্রিল১৯৭১ |
পাকিস্তানঃসংকটেরপটভূমি
একটিরিপনসোসাইটিপ্রতিবেদন
এপ্রিল৩, ১৯৭১
এই প্রতিবেদনটি রিপন সোসাইটির হয়ে পর্যালোচনাকরেছেননিম্নোক্ত কমিটিঃ
জে লি অসপিটজ
সভাপতি
রিপন সোসাইটি।
স্টিফেন এ মার্গ্লিন
অধ্যাপক, হিসাব বিজ্ঞান
হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়।
কাস্টাভ এফ পাপেনেক
প্রভাষক, হিসাব বিজ্ঞান এবং
প্রাক্তন পরিচালক, উন্নয়ন উপদেষ্টা সেবা
হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়।
পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের ইতিহাস
অনেক কারণেই পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান কখনোই একদেশ হতে পারেনি। এমনকি সবচেয়ে কঠিন সময়েও পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পর্ক অতি টলমলে ছিল। তারা বস্তুত ১০০০ মাইল দূরে ছিল, তারা ভিন্ন ভাষায় কথা বলে, তাদের সংস্কৃতি ও ভিন্ন, অর্থনীতি ও ভিন্ন। তাদের শুধুই মিল ছিল ধর্মে , কিছুটা ইতিহাসে এবং একই কেন্দ্রীয় সরকারে ।
পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন হয় ২৪ বছর আগে, পূর্বের বাঙ্গালিরা এই সন্ধির থেকে খুব সামান্যই উপকৃত হয়েছে বরং তাদের সীমিত নিরাপত্তার ফলে তারা কখনোই জমি ফেরত পাবেনা, পুনর্দখলও করতে পারবেনা ।
এটি ক্রমেই প্রতীয়মান হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানিদের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্বার্থ ধারাক্রমে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অধীনস্থ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ পরিকল্পনা পরিষদও দুই রাষ্ট্রের বর্ধমান অর্থনৈতিক অসমতার সরকারী বিজ্ঞপ্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের পরিকল্পনা পরিষদের বিশেষজ্ঞদের সভার একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এ দেখে যায় যে, ১৯৫৯-৬০ সালে যেখানে গড় আয় পূর্বের থেকে পশ্চিমে ৩২ একক বেশি ছিল সেখানে ১০ বছর পর ১৯৬৯-৭০ সালে এই অসমতা প্রায় দ্বিগুন হয়ে ৬১ এককে পরিণত হয়েছে।²
কেন্দ্রীয় সরকারের শুল্ক , আমদানী নিয়ন্ত্রণ, শিল্পকারখানার লাইসেন্সিং, বৈদেশিক সাহায্য বাজেট এবং বিনিয়োগ বরাদ্দ প্রভৃতিউচ্চমানের কারখানা গড়ার কাজে সরাসরি বিনিয়োগ ও আমদানী করতে ব্যবহার করছে যার লাভজনকতা পূর্ব পাকিস্তানের শুল্ক ও আমদানী কোটার দ্বারা বেষ্টিত একটি বাজার নিশ্চিত করবে। যদিও শ’এর মধ্যে ৫৬ জন পাকিস্তানি পূর্বে বসবাস করে, কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন খরচের পূর্ব পাকিস্তানের ভাগ ১৯৫০/৫১-১৯৫৪/৫৫ এর দিকে সর্বনিম্ন শতকরা ২০ এবং ১৯৬৫/৬৬-১৯৬৯/৭০ এর দিকে শতকরা ৩৬ এর মত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব বিনিয়োগের ভাগ শতকরা ২৫ এর নিচে । ঐতিহাসিকভাবে, পাকিস্তানের রপ্তানি আয়ের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ আসে পূর্ব পাকিস্তানের পণ্য থেকে, প্রধাণত পাট ও চামড়া শিল্প থেকে। তারপরও বৈদেশিক আমদানী অংশ (যা রপ্তানী আয় ও বৈদেশিক সাহায্য থেকে আসে) ২৫- ৩৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। মূলত, পূর্বের আদায়কৃত টাকার উদ্ধৃত অংশ পশ্চিমের বৈদেশিক হিসাবের ঘাটতি পূরণে ব্যয় হয় যা ১৯৪৮/৪৯ থেকে ১৯৬৮/৬৯ সালে এক সরকারী প্রতিবেদন অনুযায়ী আনুমানিকভাবে ২.৬ বিলিয়ন পুঁজি স্থানান্তরের উপায় হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে থাকা বিশাল সরকারী কর্তাব্যক্তিদের কারণেই পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অধীনস্থতা সৃষ্টি হয়।
১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন আমলে যখন আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসেন, কেন্দ্রে পূর্ব পাকিস্তানিদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব খুব অল্পই ছিল। শুধু মাত্র সহযোগী বাঙ্গালীরাই রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়োগ পেত, এবং শক্তিশালী বেসামরিক চাকুরীতে অতি ক্ষুদ্র অংশই জায়গা পেত। সামরিক বাহিনীতে বাঙ্গালীদের অবস্থান আরো শোচনীয় ছিল, ১০ শতাংশ এরও কম ।
পূর্ব ও পশ্চিমের বর্ধমান অস্থিরতা যা ১৯৬৯ এ বিক্ষোভ ও ধর্মঘট এ চূড়ান্ত পরিনতি পায়, এর ফলে আইয়ুব খান , যার বিরুদ্ধে বাঙ্গালীরা ১৯৬৫ তে প্রবল ভাবে ভোট করে, পদত্যাগে বাধ্য হন। ১৯৬৯ এর বসন্তে ক্ষমতায় আসে ইয়াহিয়া খানের মার্শাল ল শাসন যা সবসময়ইজনপ্রিয় নির্বাচনের পর এক অন্তবর্তীকালীন সরকার হিসেবে প্রতিস্থাপনের আভাস দিচ্ছিল। রাজনৈতিক ও সামাজিক বলয়ে সামরিক বাহিনী কোন নতুনত্ব আনছিল না। যা হোক , মিলিটারীরা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছিলঃ তারা একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে, গণপরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদ উভয়ের জন্য।
এই নির্বাচন “এক নাগরিক এক ভোট” এর ভিত্তিতে ছিল । যার মানে, গণপরিষদে পূর্ব পাকিস্তানিদের মোটামুটিভাবে ৫৫ শতাংশ আসন বরাদ্দ ছিল। দুইটি দল এই নির্বাচনে কর্তৃত্ব প্রদর্শন করে। পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমানের দল, আওয়ামী লীগ, গণপরিষদের ১৬৯ টির মধ্যে ১৬৭ টি আসনে জয় লাভ করে, অন্যদিকে পশ্চিমে জুলফিকার আলী ভুট্টোর দল আনুমানিকভাবে ১৪০ আসনের ৮০ টিতে জয় লাভ করে। আওয়ামী লীগের আসলে গণপরিষদের সংখ্যাধিক্যের জন্য যথেষ্ঠ ভোট ছিল।
আওয়ামী লীগ একক প্রচারেই চলছিল যা হল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন৭। ২৫ শে মার্চ রাতের গোলাগুলি শুরুর আগ পর্যন্ত , তারা স্বাধীনতার কথা কখনো ঊঠায় নি, শুধু পশ্চিমের সাথে শিথিল ঐক্যের আবেদন করেছিল। যেখানে কাগজে কলমে তারা কেন্দ্রীয় সরকারকে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় ভোট পেয়েছিল, কিন্তু তারা সম্ভবত অনুভব করেছিল যে তারা সেটি করতে পারছেনা, এমনকি , সামরিক, বেসামরিক ও বড় বড় ব্যবসা গুলো পশ্চিমাদের হাতেই ছিলো। অতএব তারা এমন একটি সরকারের ব্যবস্থা চেয়েছিল যায তাদেরকে তাদের প্রয়োজনীয় স্বার্থগুলো নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা দিবে। পশ্চিমের প্রতিষ্ঠিত স্বার্থান্বেষী দল, বিশেষত, সামরিক বাহিনী যাদের অর্থবরাদ্দ হুমকির মুখে ছিল এবং বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যারা পূর্বের বাজার ও বৈদেশিক লেনদেন হারানোর পর্যায়ে ছিল, তারা পূর্বের সার্বভৌমত্বের প্রবল প্রতিবাদ করে।
যখন এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পূর্ব পাকিস্তানিরা তাদের স্বায়ত্বশাসনের দাবি থেকে পিছু হটবেনা, রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চের গণপরিষদের সভা পিছিয়ে দেন। ফলে ১লা মার্চের বিক্ষোভ সংঘটিত হয় যাতে শতাধিক মানুষ পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়। এই প্ররোচনার পরও শেখ মুজিব আলোচনার দুয়ার খোলা রাখেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান এর জবাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সাথে আলোচনা দুই সপ্তাহের জন্য ঝুলিয়ে রাখেন। অতীত ঘাটলে বুঝা যায় যে এটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানে তাদের সামরিক বাহিনী বহাল করার সময় নেওয়ার জন্য তাদের একটি চাল । ২৫ শে মার্চ , সামরিক কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগ কে বেআইনী ঘোষণা করে, এদের নেতাকে গ্রেপ্তার করে এবং কামান , স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র (বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরবরাহকৃত) দিয়ে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর গুলি বর্ষণ করে।৯
সামরিক বাহিনীর কর্মকান্ড সন্ত্রাসের রাজত্বের মাধ্যমে নগরবাসীদের মধ্যে ত্রাস হিসেবে প্রতীয়মান হয়। বাছবিচার ছাড়াই হত্যাকান্ড এবং ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকে। প্রথম তিন দিনে ১৫০০০ এর ও বেশি লোক মারা যায় বলে প্রতিবেদনে দেখা যায়।
নিকট ভবিষ্যতে দেখা যায় সামরিক বাহিনী প্রধান নগরীগুলোতে ভয় দেখাতে সক্ষম হয়, কিন্তু এখনো গ্রামাঞ্চলের প্রকৃত অংশে তারা নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এইসামরিক অবস্থা অসমর্থনীয়। বৈরী পরিবেশে এবং যৌক্তিক বিচারে, এখন যেই ৬০,০০০ পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য পূর্বে অবস্থান করছে, তা বজায় রাখা কঠিন হবে। তাছাড়া সীমানা পাহারা দেওয়া ও তাদের প্রতিহত করার জন্য বাঙ্গালীদের অস্ত্র যোগাড় করা থেকে বাধা দেওয়া সামরিক বাহিনী দ্বারা সম্ভবপর না।
বাঙ্গালিরা তাদেরকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষনা দিয়েছে এবং তারা লড়াই করতে সংকল্পবদ্ধ। পরিশেষে , তারা জিতবেই। কত সময়ে, কত প্রাণের বিনিময়ে, কত ধংসের মধ্য দিয়ে সেই স্বাধীনতা আসবে সেটিই প্রশ্ন।
সাম্প্রতিক নির্বাচন পূর্ব পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম এমন একটি দল দিয়েছে। বেসামরিক যুদ্ধের চেয়ে বর্তমান অবস্থা হচ্ছে এক রাষ্ট্রের দ্বারা অন্য রাষ্ট্রের উপর সেনাবাহিনী দিয়ে আক্রমণ, একটি যথাযথ নির্বাচিত সরকারের পতনের জন্য এবং জনগনকে আয়ত্তে নেয়ার জন্য।
আনর্জাতিক সম্প্রদায়ে এক স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান
বাংলাদেশের, পূর্ব পাকিস্তানিদের তাদের আকাঙ্ক্ষিত জাতির জন্য পছন্দের নাম, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা বাধ্যতামূলক। পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের পশ্চিম বাংলার মধ্যে একই ভাষা-বাংলা ভাষার সাংস্কৃতিক বন্ধন ছাড়াও শক্তিশালী অর্থনৈতিক বন্ধনে আগ্রহ অনুরূপ। পশ্চিম বাংলার কয়লা ও লোহার আকরিকের নিকটবর্তী সরবরাহের দ্বারাপূর্ব পাকিস্তানের শিল্পায়ন বিশালভাবে উপকৃত হবে। এমনকি কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য, সমবায়ের মাধ্যমে, বিশেষত বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্যে, সেচ নিয়ন্ত্রন সমৃদ্ধ করতে বেশিরভাগ বিনিয়োগ ভারতের দ্বারাই করতে হবে। ভারত শুধু জলনিয়ন্ত্রনের মাধ্যমেই উপকৃত হবে না, বরং পূর্ব পাকিস্তানের বাজারে সরাসরি প্রবেশ এবং আসামে প্রবেশের উন্নত ব্যবস্থার ফলে তারা সুবিধা লাভ করবে। ঐতিহাসিকভাবে, পূর্ব পাকিস্তানের সাথে ভারতের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে পারস্পরিক স্বার্থ জড়িয়ে থাকলেও, তাদের সম্পর্ক উন্নয়নে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার সবসময় বাধা প্রদান ও নিরুৎসাহিত করে আসছে। বিশেষ করে, পশ্চিম পাকিস্তানিরা বিশ্বাস করতো, যুদ্ধ করে বিজয় লাভ ব্যতীত, পূর্বের বাজারে ভারতের অর্থনৈতিক আগ্রহ কে কাজে লাগানোই তাদের কাছে কাশ্মীর দাবীর একমাত্র উপায় ।
এক স্বাধীন বাংলাদেশ চীনের সাথে ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক বন্ধন সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু তা হবে বর্তমান চীন ও পাকিস্তানের বানিজ্যে ও সহযোগিতার মাপকাঠিতে অতি ক্ষীণ। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সংযোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনে যত সময় লাগবে এর নিয়ন্ত্রণও সময়ের সাথে, মধ্যপন্থী আওয়ামী লীগের হাত থেকে সংগ্রামী ও বাম্পন্থীদের হাতেও যেতে পারে যেমন জাতীয় আওয়ামী পার্টির কাছে (যারা ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেয়নি)
সাম্প্রতিক বছরগুলোয়, ইউ, এস, এস, আর পশ্চিম পাকিস্তানীদের উপর প্রভাব বিস্তারের জন্য চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় নামে, সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার নামে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। এর নতুন প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কে সোভিয়েত ইউনিয়ননের যোগাযোগ পশ্চিম পাকিস্তানেসামরিক শাসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। যদিও এটি অনুমান করা কঠিন ছিল যে সোভিয়েতদের আচরণ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি কেমন ছিল, তাও সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বন্ধন চীনের সাথে বন্ধন থেকে কখনোই দৃঢ় হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতিঃ অতীত ও ভবিষ্যত
যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের সম্ভাব্য ধারা গভীরভাবে নির্ভর করে বর্তমান সংকটে তাদের নীতির উপর, বিশেষত পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্তের উপর। যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সম্ভাবনার প্রশংসা করতে, সামান্য ইতিহাস সাহায্য করবে।
১৯৫০ এর প্রথম দিকে, যখন পাকিস্তান “সিয়াটো” ও “সেন্টো” -র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তিতে যোগদান করে, সে মার্কিনদের থেকে বিশাল অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পায়। ১৯৬৯ এর মধ্যে অর্থনৈতিক সাহায্যের পরিমান ৩ বিলিয়ন ডলারের মত হয় এবং সামরিক সাহায্য , প্রায় ১.৫ থেকে ৫২ বিলিয়নের মধ্যে ছিল বলে অনুমান করা হয়। এই সহায়তার অন্তর্ভূক্ত ছিল এফ-১০৪ স্টার ফাইটার, এফ-৮৪ সাব্রে জেট, সি-১৩০ পরিবহন, প্যাটন ট্যাংক, সাঁজোয়া বাহক, ভারী অস্ত্র এবং স্বয়ংক্রীয় অস্ত্র। অত্যাধুনিক সরঞ্জামের এই সহায় স্পষ্টভাবে প্রতিরক্ষা জন্যই ছিল , সাম্যবাদীদের সম্ভাব্য আক্রমণকারী হিসেবে দেখা যাচ্ছিল এই প্রসঙ্গে ই এগুলো সরবরাহ করা হয়। ১৯৬৫ এর ইন্দো-পাকিস্তান সীমানা যুদ্ধের পর, যখন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশে অস্ত্রের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, পাকিস্তান সরকার ভারতের অন্য শত্রুদের যেমন, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সমর্থন খোঁজে।
পাকিস্তানি এই উদ্যোগ সহানুভূতির সাথেই চীন গ্রহন করেছিল, সম্ভবত ভারত-চীন সংঘাতের কারণেই না , বরং “সিয়াটো” ও ‘সেন্টো’ তে এটি বিরোধের প্রতিনিধিত্ব করে সেই জন্য। চীনা সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা বৃদ্ধি, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকেও অনুরূপ প্রস্তাবকে উৎসাহিত করে, যারা পশ্চিম ক্ষমতার সাথে পাকিস্তানের সামরিক জোট ছোটানোর জন্য তৎপর। সম্ভবত যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্বাস করে যে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রভাব বিস্তারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, অথবা সম্ভবত পেন্টাগন ও পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোর মধ্যে দীর্ঘ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের নিছক প্রেরণার কারণে, ১৯৬৭ এ অস্ত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা সরানোর প্রচেষ্টা জোরালো হয়। পূর্বে আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্রগুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশ জার্মানী ও তুর্কি তে নাম মাত্র দামে বিক্রীর প্রচেষ্টা করা হয় এই নিশ্চয়তার সাথে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এগুলোর বদলে নতুন অস্ত্র সরবরাহ করবে। ১০
যদিও জনসন প্রশাসনের এই বিশেষ পদক্ষেপ, উপযুক্ত সরঞ্জামে সজ্জিত তৃতীয় দেশগুলোর এই ব্যবস্থার প্রতি অনিচ্ছার কারনে প্রতিহত হয়, ১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসে নিক্সন প্রশাসন এফ-১০৪ স্টার ফাইটার, বি-৫৭ বোমারু বিমানের একটি দল ১১ এবং ৩০০ কামান সহ এমন কিছু আইটেম পাকিস্তান কে নিজ থেকেই প্রদান করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেখলে, ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ স্বাধীন বাংলাদেশের জরুরী অবস্থা ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে বিরোধ মিটানোর ইউ, এস এর বৈদেশিক নীতির যে লক্ষ্য তাতে সহায়তা করবে। কাশ্মীর সমস্যা , যে বিষয়ে পূর্ব পাকিস্তান কখনোই মাথা ঘামায়নি, তা ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান কে বিভক্ত করতেই থাকবে। কিন্তু একটি পৃথক সত্তা হিসাবে, পশ্চিম পাকিস্তান ভারতের সাথে এই দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল টানাপোড়েন চালিয়ে যেতে সক্ষম হবেনা, যা এই দরিদ্র দুটি দেশের অপ্রতুল সম্পদ কে নিঃশেষ করছে।
স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান সম্ভবত একটি সরকারী পশ্চিমা নীতি অনুসরণ করবে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির সহায়তার বিধানের সাথে এক হতে পারে। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের কাছে ইউ.এস. সহযোগিতা অব্যাহত থাকার ফলস্বরুপ যদি এই স্বাধীনতার সংগ্রাম দীর্ঘায়িত হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে বামপন্থী শক্তির উত্থানের ফলে ইউ এস সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আর উন্নয়ন হবেনা। ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস-এর রিপোর্টগুলি নিশ্চিত করে যে পূর্ব পাকিস্তানে সন্ত্রাসের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়ান এবং চীনা অস্ত্রের পাশাপাশি এখন আমেরিকান অস্ত্রও ব্যবহৃত হচ্ছে। আমেরিকান সরকার অবশ্যই নিরস্ত্র সাধারণ জনগণের হত্যাকারী দল অথবা পূর্ব পাকিস্তানিদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণের জন্য সংগ্রামের জোরপূর্বক দমনকারই দল হতে চাইবে না। যেহেতু প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহারের চুক্তিতেই অস্ত্র গুলো সরবরাহ করা হয়েছিল, সেখানে নিরস্ত্র নাগরিকদের গণহত্যা জন্য এগুলো ব্যবহারে ইউ, এস প্রতিবাদ জানাতেই পারে।
সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য অব্যাহত রাখা এই ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সকল সহায়তা পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারের দিকে প্রবাহিত করতে বাধ্য। পরিশেষে , যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অক্টোবর ১৯৭০ এর অস্ত্র প্রস্তাবের আওতায় সকল সরবরাহ প্রতিরোধ করা উচিত, ভবিষ্যতেও কোন অস্ত্র লেনদেন এড়ানো উচিত এবং পাকিস্তানের সকল অর্থনৈতিক সহযোগিতা বন্ধ করা উচিত। এমন পদক্ষেপ, কূটনৈতিক চাপ ও নৈতিকতার সাথে, সকল বৈরীতার অবসান ঘটতে পারে এবং গণতান্ত্রিক সরকারের প্রাথমিক গঠনের দিকে ধাবিত করতে পারে।
NOTES
- Reports of the Advisory Panels for the Fourth Five Year Plan 197 -7 ,Vol. I,
Planning Commission, Government of Pakistan, July, 1970.
- Planning Commission, op. cit,p. 2.
- Soligo. R. and Stern, J. J., “Tariff Protection, Import Substitution, and Investment
Efficiency.” Pakistan Development Review, Summer 1965. This demonstrates the
inefficiency of nearly all industries.
- Planning Commission, op. cit., p. 6.
- Foreign Trade statistics,various issues, Central Statistical Office, Government of
Pakistan.
- Planning Commission, op. cit. Appendix III.
- The Six-Point autonomy program of the Awami League is-
(1) Establishment of a federation “on the basis of the Lahore Resolution and the
Parliamentary framework of government with supremacy of legislature directly
elected on the basis of adult franchise.”
(2) Federal government shall deal with only two subjects; that is defense and
foreign affairs and all other residuary subjects should rest in the federating states.
(3) There should be either two separate but freely convertible currencies for the
two wings or one currency for the whole country, provided that effective
constitutional provisions were made to stop the flight of capital from East to West
Pakistan. There should be separate banking reserves and a separate fiscal and
monetary policy for East Pakistan.
(4) It denies the centre the right of taxation and vests it in the hands of the
federating states with the centre receiving a fixed share.
(5) Foreign trade: Five steps
(a) There shall be two separate accounts for foreign exchange earnings.
(b) Earnings of East Pakistan shall be under the control of East Pakistan
and the same for West Pakistan.
(c) Foreign exchange requirements of the federal government shall be met
by the two wings cither equally or in a ratio to be fixed.
(d) Indigenous products shall move free of duty within the wings.
(e) The constitution shall empower the unit governments to establish trade
and commercial relations with, set up trade missions in, and enter into
agreements with foreign countries.
(6) Setting up a militia or para-military force by East Pakistan.
- Papanek, G. F. Pakistan s Development: Social Goals andPrivate Incentives,
Harvard University Press, 1967.
- The Washington Post, March 30, gives a graphic account of the massacres
committed
with the use of armored units in Dacca, the regional capital of East Pakistan.
- Bowles, Chester, Promises to Keep: My Years in Public Life 19 1-19 9,p.
521, Harper and Row, 1971.
- Bowles, op cit., p. 522.
.
13.142.461-462
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
‘পূর্ব পাকিস্তান বায়াফ্রা নয়’ | গুস্তাভ এফ, পাপানেক, জান, ডব্লিউ টমাস | ৮ এপ্রিল, ১৯৭১ |
পূর্ব পাকিস্তান বায়াফ্রা নয়
স্বাধীনতার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের (অথবা বাংলাদেশ, যেহেতু সেখানকার অধীবাসীরা এই নামটিই ব্যবহার করে) সংগ্রামকে প্রায়ই বায়াফ্রার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যর্থ আন্দোলনের আলোকে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে, যেখানে নাইজেরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারই শেষপর্যন্ত জয়ী হয়েছে। বায়াফ্রা মডেল অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন কর্মকান্ডের নীতিমালা প্রণয়ন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করা কূটনৈতিকভাবে ব্যাপকভাবে ভেঙে পড়া একটি সৈন্যদলকে বিগত যুদ্ধটিই আবার লড়তে পুনরায় প্রস্তুত করার সমকক্ষ হবে। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন সফল হবেই, তা আগে হোক কিংবা পরে এবং দুটি আন্দোলনের পরিস্থিতির মধ্যে ছয়টি প্রধান পার্থক্য ব্যাপারটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
প্রথমত, এটি পাকিস্তানের অধিকাংশ জনগণ ধারণকারী অঞ্চল যার অধিবাসীরা স্বাধীনতা চায়। পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি জনগণ পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ যারা তাদের ৮৫ শতাংশ ভোট স্বাধীনতাকামী দলকে দিয়েছে। সেখানে নাইজেরিয়ায় বাইয়াফ্রার প্রধান সমর্থকেরা মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশেরও কম।
দ্বিতীয়ত, পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধরত পশ্চিম পাকিস্তানের ৬০০০০ সৈন্য তাদের পশ্চিমাঞ্চলের কর্মক্ষেত্র থেকে আকাশপথ/পানিপথ অনুযায়ী ৩০০০ মাইল রাস্তা দ্বারা বিচ্ছিন্ন। স্বাভাবিকভাবে অঞ্চলদুটি ১০০০ মাইল দূরে যা ভারতীয় অঞ্চল দ্বারা পৃথক হয়েছে। ভারত সরকার তাদের আকাশপথ পাকিস্তানের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়ায় পূর্ব পাকিস্তানে মালামাল পাঠাতে পশ্চিম পাকিস্তানের বিমানকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের পাশ দিয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে। কোন উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক বাঁধা না থাকায় নাইজেরিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার সৈন্যদের স্থলপথেই মালামাল সরবরাহ করতে পারে এবং রণক্ষেত্রে নিয়োজিতরা মূল সরবরাহ কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়না।
তৃতীয়ত, প্রকৃতপক্ষে স্বীকৃত সংজ্ঞানুযায়ী বিবেচনা করলে সেখানে কোন রণক্ষেত্র নেই। প্রত্যেকটি স্থানই একেকটি বিচ্ছিন্ন রণক্ষেত্র এবং পুরো শহরজুড়ে সৈনিকদের ভিত্তিগুলো বিদ্রোহীদের সাগরে একেকটি ছোট দ্বীপের মত। যখন এটা লেখা হচ্ছিল তখন কৃষিপ্রধান পূর্ব পাকিস্তানের সেইসব শহরগুলো সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে ছিল যে শহরগুলোতে পূর্ব পাকিস্তানের মাত্র দশ শতাংশ লোক বসবাস করে। বোমাবাজি এবং বিমান থেকে গুলিবর্ষণের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা এখনো পর্যন্ত অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমেরিকার বিমানশক্তি ভিয়েতনামের গ্রামগুলো নিয়ন্ত্রণে যতটা সফল হয়েছিল, তার থেকে বেশি সাফল্য এখানে আশা করা যাচ্ছেনা।
চতুর্থত, বহিঃশক্তির হুমকির অনুপস্থিতিতে নাইজেরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সমস্ত সৈন্যশক্তিকে বায়াফ্রান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের চেপে ধরার জন্য ব্যবহার করতে পেরেছিল। বিপরীতে, ভারতীয় আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে পাকিস্তান তাদের অধিকাংশ সৈন্যদের সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত করছে।
পঞ্চমত, বাহির থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহের অভাবে বায়াফ্রান সৈনিক প্রতিরোধ শেষ পর্যন্ত গুঁড়িয়ে গিয়েছিল। মাঝখানে ভারতীয় জলাভূমি, পাহাড়, জঙ্গল প্রভৃতি পার করে ১০০০ মাইল দীর্ঘ দূরত্বের পূর্ব পাকিস্তানে যেকোন বস্তু পৌঁছাতে গেলে বাস্তবিকভাবেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সীমান্ত ব্যবহার করা। যদিও ভারতীয় সরকার অস্ত্র সরবরাহ থামিয়ে দিতে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল তবুও তা কার্যকর হয়নি। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনে অপরিসীম সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ভারত প্রতিবেশী বাঙালীদের তাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় থাকার ব্যবস্থা করেছে। তাদের মনোভাব এমন যেন পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব বন্দুকচালকের কোন অভাব হবেনা।
সর্বোপরি, পূর্ব পাকিস্তানে এত বড় একটি সৈনিক বিরোধের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন তা পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থানুযায়ী নাইজেরিয়ার বায়াফ্রার চেয়েও নাজুক। পাকিস্তানের সীমিত রপ্তানি আয়ের ৪৫ শতাংশই আসে পূর্ব পাকিস্তানের পাট রপ্তানি থেকে। পূর্ব পাকিস্তানে এবছর পাট চাষের পরিমাণ অত্যল্প হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পকারখানা এবং সৈনিকদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করা পাকিস্তান সরকারের কোষাগারে প্রচুর চাপ তৈরি করবে (বিমানের জ্বালানীর আমদানী মূল্য ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে)। বর্তমানে পাকিস্তানে রপ্তানি মজুদ আশঙ্কাজনকভাবে কম এবং বিদেশী সাহায্য ছাড়া পাকিস্তান সরকারের পক্ষে এই যুদ্ধের ব্যয় বহন করে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রাখা সম্ভব নয়।
এই ঘটনাগুলো একত্রে বিবেচনা করলে তা পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনের সফলতার দিকেই নির্দেশ করে বলে প্রতীয়মান হয়। দুইটি দূরবর্তী এলাকা নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা পাকিস্তানের একটি মহৎ প্রচেষ্টা ছিল যার জন্য পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ লোক তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে। কিন্তু বিগত দুই সপ্তাহের রক্তবন্যার পর পূর্ব পাকিস্তান স্বেচ্ছায় পাকিস্তানের অংশ থাকবে না বলেই প্রতীয়মান হয় এবং ওপরে দর্শিত কারণগুলোর ফলে তাদের সেই কাজের জন্য বাধ্য করাও সম্ভবপর হবেনা। সংগ্রাম যত দীর্ঘতর হবে, পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান ততই নিঃস্ব হতে থাকবে এবং তত বেশি রক্ত মাটিতে প্রবাহিত হবে। পাকিস্তান সরকারের প্রতি আমেরিকার সাহায্য মধ্যস্ততা নয় তা উপরের প্রসঙ্গের প্রেক্ষিতে স্পষ্টতই বলার উর্ধ্বে। যতক্ষণ না তারা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সরাসরি সাহায্য করছে ততক্ষণ এটা অবশ্যই পক্ষপাতিত্ব।
বিশ্লেষণের জন্য তুলনা সবসময়ই দূর্বল বিকল্প। কিন্তু পাকিস্তানের বিবাদপূর্ণ পরিস্থিতিকে আরো অস্থির করে তুলতে জোর দেওয়া এবং পরিচিত অবস্থা তৈরিতে সচেষ্ট আমেরিকানরা আমাদের নিজস্ব স্বাধীনতা আন্দোলনকে বায়াফ্রার চেয়ে উপযুক্ত উপমা হিসেবে খুঁজে পাবে।
৮ এপ্রিল, ১৯৭১
গুস্তাভ এফ, পাপানেক
জন উব্লিউ, থমাস
.
13.143.463-464
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পাকিস্তান সংকত-ঘটনা ও পরিণতি: এনো ব্রাউন টেলর এর প্রতিবেদন | বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন | ১১ এপ্রিল, ১৯৭১ |
পাকিস্তান সংকট: প্রকৃত ঘটনা এবং প্রভাব
এনো ব্রাউন টেলর
বাংলাদেশ (বাঙালী জাতি) অর্গানাইজেশন
এপ্রিল ১১, ১৯৭১
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবার্ট জে, ম্যাক্লস্কি বলেছেন, “বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত ঘটনাবলীর মধ্যে নির্ভরযোগ্য ঘটনাগুলো খুঁজে বের করা এবং তাদের ফলাফল মূল্যায়ন করা অসম্ভব ছিল।”
এটা সত্যি নয়। আমরা হয়তো “প্রকৃত লাশের সংখ্যা” পাচ্ছিনা, তবে ভয়ংকর কিছু “ঘটনার সংগ্রহ” আমাদের সামনে দৃশ্যমান হচ্ছে। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে অপসারিত ইউরোপীয় এবং আমেরিকারনরা চাক্ষুষ দেখা নির্বিচার হত্যা এবং পাশবিকতার বর্ণনা দিচ্ছেন। সৈন্যরা সংবাদমাধ্যম নিষিদ্ধ করার পর যুদ্ধসাংবাদিকরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন, নতুবা তাদের ঢাকায় থাকতে হত। আল্লাহ, অখন্ডতা এবং জাতীয় ঐক্যের নামে চট্টগ্রামে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা বাঙালীদের কব্জিতে দড়ি বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে সেই অবস্থাতেই মৃত্যুর জন্য ফেলে রেখে গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তাদের নিজেদের কবর খুঁড়তে বাধ্য করে তাদের গুলি করেছে, শহরের সমস্ত বস্তি পুড়িয়ে দিয়েছে… শরণার্থীদের ওপর গঠিত সিনিয়র এডওয়ার্ড কেনেডির উপকমিটির কাছে নির্বিচার হত্যা, ভিন্নমতাবলম্বী নেতা ও ছাত্র খুন এবং প্রতি দিন প্রতি ঘন্টায় মারা যাওয়া ও দূর্দশার শিকার হাজার হাজার সাধারণ মানুষের খবর পৌঁছেছে।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর থেকে পূর্বাঞ্চল সবসময় পশ্চিম দ্বারা শোষিত হয়ে এসেছে। ভারতীয় অঞ্চল দ্বারা ১১০০ মাইল দূরত্বে অবস্থিত অঞ্চলদুটি ভাষা, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পূর্ব পাকিস্তান সবসময় উপনিবেশ, কাঁচা পাটের উৎস এবং পশ্চিম পাকিস্তানী পণ্যের আবদ্ধ বাজার হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। আমেরিকার সাহায্য এবং বৈদেশিক রাজস্বের অধিকাংশই শাসনকর্তা পশ্চিম পাকিস্তানিদের পকেটে চালান হয়ে গেছে। বাঙালীদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানী জনগণের আচরণ ছিল ঘৃণাপূর্ণ এবং উপেক্ষার।
পাশবিকতার দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ভিত্তি নষ্ট করে দেয়া, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হত্যা এবং কারাবাস দেয়ার মাধ্যমে তাদের এই ঘৃণা প্রকাশিত হয়েছিল এবং তা এখন সাধারণ মানুষকে হত্যা করতে উদ্দীপ্ত করছে। তাদের এই উপেক্ষার জবাব পরিণামে পাওয়া যাবে। শেষপর্যন্ত তা জয়ী হতে পারবে না। পূর্ববাংলা গেরিলা যোদ্ধাদের জন্য এক আদর্শ অঞ্চল এবং প্রথাগত যোদ্ধাদের জন্য নরকস্বরূপ। সেখানে চলাচলের রাস্তা খুবই কম এবং বর্ষাকালে তৃণভূমি ও ধানক্ষেতও খালে পরিণত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পকারখানার কেন্দ্রগুলোকে উড়িয়েও তাদের খোড়া করে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ খুবই সোজা, সেগুলো প্রতিটিই পশ্চিম পাকিস্তানে। এমনকি তারা ঢাকা বা যশোরের মত শহরকে ধ্বংস করেও পূর্ব পাকিস্তানকে ভেঙে দিতে পারবে না। কারণ, পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ অঞ্চলই গ্রাম এবং তা ৫৫১২০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে অবস্থিত যা বোমাবাজির মাধ্যমে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। পুরো বিশ্বই পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর ক্ষুব্ধ এবং দেশটি সবার কাছেই ঘৃণার চোখে বিবেচিত। ঢাকা বিমানবন্দর উড়িয়ে দেয়ার ফলে বস্তুত পাকিস্তানি সৈন্যরাই প্রতিকূলতার সাগরে পরিত্যাক্ত হবে।
আমেরিকার নিরপেক্ষতা এবং নাক না গলানো আচরণের পুরোটাই ধোঁকাবাজি। পাকিস্তানে এর প্রচুর ক্ষমতা রয়েছে (১৯৬৯ সাল পর্যন্ত এটি শিল্পক্ষেত্রে ৩০০ কোটি এবং প্রতিরক্ষা খাতে ২০০ কোটি ডলার সাহায্য পেয়েছে)। গত অক্টোবরে আমেরিকা ১ কোটি ডলারেরও ওপরে অস্ত্রসস্ত্র বিক্রির জন্য মধ্যস্ততায় এসেছে। এটা খুব দ্রুতই তাদের পাওয়ার কথা। অস্ত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আমেরিকা ১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধকে কোণঠাসা করে দিয়েছিল। আমেরিকা যদি এখনই এর সাহায্য বন্ধ করে দেয় এবং একইসাথে বিশ্বব্যাঙ্ক ৩০ জুন পর্যন্ত এর ভিতর ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দেয় তাহলে পাকিস্তান আড়াই মাসের ভিতর দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে (ওয়াশিংটন পোস্ট, এপ্রিল ১১)। সংক্ষেপে, কথার মত কাজেও আমেরিকাকে নিরপেক্ষ হতে হবে।
অথবা তারা তাদের স্বার্থের জন্য পূর্বাবস্থান বজায় রাখতে পারে। তারা এই নির্বিচার হত্যা বন্ধ করতে পারে এবং এর জন্য পশ্চিম পাকিস্তানকে তাদের চীনের কাছে হারাতে হবেনা। সেটা ১৯৬৫ সালেও হয়নি। চীন শুধুমাত্র পাকিস্তানের পদ্ধতির সাথে তাল মিলাতে না পেরে তাদের সাহায্য করতে পারেনি। পাশাপাশি পাকিস্তানকে তোষামোদ করা ‘পুঁজিবাদী’ শোষকগোষ্ঠী’র পক্ষে থাকা জনপ্রিয় একটি আন্দোলনের বিরোধীতার দ্বার উন্মোচন করে দিতে পারে।
অপরপক্ষে, প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ যেভাবেই হোক না কেন, আমেরিকা যদি পরিণামে বিজয়ীর বদলে অদূরদর্শীতার নিদর্শন দেখিয়ে আপাত দৃষ্টিতে বিজয়ী পশ্চিম পাকিস্তানকে সাহায্য করে তবে একে অনেক কিছুই হারাতে হবে। এর ফলে আরেকটি ভিয়েতনামের পরিণতি আমাদের দেখতে হতে পারে। সাম্প্রতিক নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়া আওয়ামীলীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান একজন নিয়ন্ত্রিত পাশ্চাত্যমনা ব্যক্তিত্ব। তাঁর ছয় দফা দাবী পূর্ব পাকিস্তানের শিকার হওয়া রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যাকে নতুন রূপ দিতে পারত যেখানে জাতীয় ‘অখন্ডতা এবং ঐক্য’ ধরে রাখাই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের প্রথম প্রিয় পন্থা। পূর্ব বাংলাকে এখনও পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক ভেবে সন্দেহের চোখে দেখা হয়েছে; নির্বাচনে বামপন্থী আওয়ামী দল খুব কমই সমর্থন পেয়েছে এবং পশ্চিম বাংলার মাও নকশালরাও আর পূর্বের দিকে এগোয়নি। কিন্তু ব্যর্থতা এবং হতাশা নিয়ন্ত্রিতদের শুধু চরমপন্থীই বানিয়ে দিতে পারে। মুজিবুর রহমানকে কারাবাস দেয়া এবং তাঁর শহীদ হওয়া আরেকটি হো চি মিন ঘটনার জন্ম দিতে পারে।
এই কারণ এবং প্রভাবগুলো জনাব ম্যাক্লস্কি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দ্রুত বিবেচনায় আনতে হবে।
.
13.144.465
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব পাকিস্তান | ওয়াশিংটন পোষ্ট | ১২ এপ্রিল, ১৯৭১ |
১২ই এপ্রিল, ১৯৭১ এ প্রকাশিত, আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির কাছে একটি আবেদন
মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ
এদেশে যে সকল রিপোর্টগুলো পৌছেছে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে পাকিস্তান সরকার শান্তিপূর্ণ আলোচনা এবং পূর্ব পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পরিত্যাগ করেছে এবং এর নিজের জনগণের একটি বড় অংশকে সামরিক বাহিনী দ্বারা আয়ত্বে আনতে চেষ্টা করছে। এই পর্যায়ে এটি নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে ট্যাংক, প্লেন ও অস্ত্র ব্যবহারসহ, আক্ষরিক অর্থে হাজার হাজার লোককে হত্যা করে আধুনিক যুদ্ধের আতংক ছড়াচ্ছে।
বহিরাগতরা পাকিস্তান সরকারের চরম সমস্যা ও উদ্বেগে সহানুভুতিশীল হতে পারে, কিন্তু যখন সে নিজের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তখন তারা নিরব থাকতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি যে, একটি জনগোষ্ঠি যারা সর্বসম্মতভাবে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ হিসেবে কথা বলেছে এবং যাদের চাওয়া এত যুক্তিসংগত তাদের উপর, অস্ত্র ব্যবহার করে নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কোন সরকারের নেই।
আমরা সবাই বহু বছর ধরে পাকিস্তানের সমস্যা এবং একটি ভালো জীবন যাপনের জন্য পশ্চিম ও পূর্ব উভয় অংশে এর জনগণের সংগ্রাম নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা একটি আরো উন্নত জীবনের দিকে ও গনতন্ত্রের দিকে হওয়া অগ্রগতিতে উৎসাহীত হয়েছি। কিন্তু আমাদের আশংকা যে পাকিস্তান সরকারের বর্তমান কার্যধারা শুধুমাত্র দূর্যোগ ডেকে আনতে পারে। মানবতার খাতিরে এবং আপনাদের দেশের প্রতি ভালবাসা থেকে, সব হারানোর আগেই একটি যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করার জন্য এবং যত দ্রুত সম্ভব পূর্ব পাকিস্তানে বৈধ ও প্রতিক্রিয়াশীল সরকার পুনঃস্থাপন করার জন্য আপনাদের কাছে আমদের অনুরোধ।
ড. ফ্রাংক, সি. চাইল্ড ড. এডওয়ার্ড এস. ম্যাসন
ড. এডউইন এইচ. ক্লার্ক (২য়) জনাব জন ডাব্লিউ. মিলর
ড. পল জি. ক্লার্ক ড. গুস্তাভ এফ. পাপানাক
ড. জেমস কোলম্যান ড. হান্না পাপানাক
ড. এডওয়ার্ড সি. ডিমোক, জুনিয়র ড. স্টিফেন এইচ রোবক
ড. রবার্ট ডর্ফম্যান ড. পিটার রজার্স
ড. ওয়াল্টার পি. ফ্যালকন ড. জেমস এ. এফ. স্টোনার
ড. জন সি. এইচ. ফেই ড. জন ডাব্লিউ . থমাস
ড. রিচার্ড ডাব্লিউ. গ্যাবেল ড. ডি. ওয়েন থম
ড. রবার্ট গুমার ড. বারবারা ওয়ার্ড (লেডি জ্যাকসন)
ড. গ্যারি হুফবুর ড. স্ট্যানিস্লউ ওয়েলিজ
ড. জন আইজ্যাক ড. উইনস্টোন ডাব্লিউ. ভেটেল
ড. কিরোমিতসু কানেডা ড. জেরম বি. ভিজার
ড. মোউরিক ডি. কিলব্রিজ ড. ওয়েইন উইলকক্স
ড. স্টিফেন আর. লুইস জুনিওর
অনুসন্ধান, প্রস্তাবনা, অনুদানের জন্য আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব পাকিস্তানের কাছে লিখুন। ৮১, কিবার্ন রোড। বেলমন্ট, মাস ০২১৭৮
.
13.145.466-467
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত পাকিস্তানের সমরাস্ত্র সম্পর্কে মিঃ চেস্টার বাউলস-এর বিবৃতি | নিউইয়র্ক টাইমস | ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১ |
জনাব চেস্টার বাউলস-এর পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত সমরাস্ত্র
নিউইয়র্ক টাইমস, ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১
এসেক্স, কানেটিকাট- পূর্ব পাকিস্তানে এখন যে সাংঘাতিক সংগ্রাম চলছে তা, কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে বা কি জন্য ব্যবহৃত হবে তা সামান্যই বিবেচনা করে “বন্ধুসুলভ সরকারের” হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার বোকামির আরো একটি প্রমান।
১৯৫৪ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে পাকিস্তান(পশ্চিম পাকিস্তানকে বোঝানো হচ্ছে) সরকারের জন্য লক্ষ্য লক্ষ্য ডলারের সামরিক সরঞ্জামের কর্মসূচি ১৯৬৫ সালে ভারতকে আক্রমন করতে পাকিস্তানিদের সক্ষম ও উৎসাহিত করেছিল।এখন(কিছু সোভিয়েত ও চীনা সরঞ্জামসহ) এটা পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পুর্ব পাকিস্তানে তাদের সহজাত দেশবাসীদেরকে দমন করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে যারা সম্প্রতি মহান স্বাধীনতার জন্য ব্যাপকহারে ভোট দিয়েছে।
এটি বিশেষত একটি ভুয়া উপস্থাপন কারন আমাদের অস্ত্র কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের সরকারের সামান্যতম দায়িত্ব আছে বলে তারা মনে করেন বলে মনে হয় না।নিঃসন্দেহে এটা পুরো পরিস্থিতিকে ধামাচাপা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।
এমনকি যখন আন্তর্জাতিক রেড ক্রসকে পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়, যখন সকল বিদেশী সংবাদদাতাদের ঝটিতে দেশের বাইরে বের করে দেওয়া হয়, এবং যখন ঢাকায় আমাদের কন্স্যুলেট জেনারেলের দৈনিক স্থানীয় সংবাদ পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ব্যপক সামরিক অভিযান বিশদভাবে বর্ননা করে, আমাদের সরকার বলেছে কি ঘটছে তা সে জানত না এবং তাই মন্তব্য করার মত কোন অবস্থানে ছিল না।
এটি কেবলমাত্র তখনই ঘটে যখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় ৫০০ আমেরিকান শরনার্থী সংবাদ মাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতার বর্ননা দিল যে, আমাদের সরকার পশ্চিম পাকিস্তানী সরকারকে একটি প্রায় ক্ষুদ্র প্রতিবাদের প্রস্তাব দেয়।
আমার কাছে মনে হয় দুইটি পদক্ষেপ, একসাথে নেওয়া উচিত। প্রথমত, আমাদেরকে পশ্চিম পাকিস্তানী সরকারের যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জামের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদ গড়ে তোলা উচিত এবং চিকিৎসা সরবরাহ ও খাদ্য ছাড়া অন্য সকল সাহায্য অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।দ্বিতীয়ত, এই সংঘাত স্পষ্টত এশিয়ার শান্তির প্রতি যে হুমকির সৃষ্টি করেছে তা মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ বিবেচনার জন্য আমাদের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠক ডাকা উচিত।যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের মুখপাত্র ইতমধ্যেই প্রথম পরামর্শটি উপেক্ষা করেছেন এবং দ্বিতীয়টি এই মর্মে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ একটি “অভ্যন্তরীন বিষয়” যাতে আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার নেই। কিন্তু কংগোতে যুক্তরাষ্ট্রের ভুমিকার কি হবে, দক্ষিন আফ্রিকা, দক্ষিন রোডেশিয়া, সাইপ্রাসের ক্ষেত্রে?
যখন শান্তি এত ব্যপক আকারে হুমকির সম্মুখীন, তখন জাতিসংঘ দ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সেটাকে সমাধা করার জন্য সম্ভাব্ যেকোন কিছু করার দায়কে অগ্রাহ্য করেছে। এই দায় বিশেষত তখনই স্পষ্ট হয় যখন “অভ্যন্তরীন বিষয়টি” একটি সুসজ্জিত সংখ্যালঘু সেনাবাহিনীর ১০০০ মাইলের বেশি বিদেশী এলাকা পৃথকীকৃত, ভিন্ন ভাষাভাষী এবং গভীর অন্তঃনির্মিত সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব ও ভিন্ন অর্থনৈতিক স্বার্থ দ্বারা বিভক্ত একটি রাষ্ট্রের অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে দমনের চেষ্টার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।
যদি আমরা যুদ্ধ বন্ধের জন্য বিশ্বের মতামত সংগ্রহের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের কথা চিন্তা করি, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যে কিনা সীমাবদ্ধতার একটি হালকা অজুহাতে তার প্রতিক্রিয়াকে সীমিত করেছে, প্রায় নিশ্চিতভাবে আমাদের অবস্থানকে সমর্থন করবে। এটা বিশেষত এই কারনে যে চীন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সমস্যাকে প্রভাবিত করার জন্য এই অবস্থাকে ধরে রেখেছে, এমনকি যদি এটা তাদেরকে পশ্চিম পাকিস্তানের ডানপন্থী সামরিক স্বৈরতন্ত্রের সাথে সমঝতা এনে দেয় তবুও।
এমন একটা মুহূর্তে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যুত্থান হয়েছে যখন দক্ষিন এশিয়ায় রাজনৈতিক স্থিরতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। ডিসেম্বরে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর আওয়ামী লীগের পাকিস্তানে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত অবাধ নির্বাচনে অপ্রতিরোধ্য জয় শুধুমাত্র প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের দ্বার খুলে দেয়নি বরং ভারতের সাথে বানিজ্যের ব্যাপক সম্প্রসারন ও দুই দেশের মধ্যকার দ্বন্দ নিরসনের দ্বারও উন্মুক্ত করেছে।
দুই মাস পর ভারতে মিসেস গান্ধীর হঠাৎ বিপুল ভোটে নির্বাচন তাকে শুধুমাত্র ভারতের জনগণের দারিদ্র নিরসনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টার ভাড়ই দেয়নি বরং ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে এর সম্পর্ক উন্নয়নের দায়িত্বও দিয়েছে। দুঃখজনকভাবে পাকিস্তান সরকারের কার্যকলাপ একটি রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল, প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিতে বসবাসরত ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের আশাকে কিছু সময়ের জন্য ধ্বংস করেছে। সকল সম্ভাব্য উপায়ে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে শেষ পর্যন্ত বের করা হবে। যদিও তাদের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বিদ্যমান, তবুও আগামী বর্ষায় আতংকিত গ্রামাঞ্চলে খাদ্য ও সামরিক সরঞ্জাম নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে।একটি স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যুদয় প্রায় নিশ্চিত।
কিন্তু যদি যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ সম্মিলিতভাবে অন্য পন্থা অবলম্বন করে এবং বর্তমান সংঘাতকে এর অবশ্যম্ভাবী রক্তাক্ত চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে যেতে দেয়। সাত কোটি তীব্র অসন্তুষ্ট জনগণ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান একটি রাজনৈতিক শুন্যতায় পরিনত হবে যারা ভারতের সবচেয়ে চরম উপাদান থেকে সাহায্যের একমাত্র আশা করছে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এটা বিশেষত সম্ভাব্ যদি শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি গভীরভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ইতমধ্যেই মারা গিয়ে থাকেন।
বিপদ বাড়ার সাথে সাথে মিসেস গান্ধীর সরকার ক্রমান্বয়ে এর ভারতের জনগণের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি্র জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম থেকে সরে আসবে, এর পরিবর্তে এর উত্তর ও পূর্ব সীমান্তকে সুরক্ষিত করতে রাজনৈতিক ও সামরিক সমস্যার দিকে নজর দিবে।