শিরোনাম |
সূত্র | তারিখ |
১৯১। দিনাজপুর শহরের সকল বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে একত্রে ক্লাশ করার নির্দেশ এবং আরো কয়েকটি ঘোষণা | সরকারী দলিলপত্র জনসংযোগ বিভাগ দিনাজপুর | ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
১০-৯-৭১ রিকসা
(১) সকলের অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে, দিনাজপুর শহরে অবস্থিত বাংলা মিডিয়ামের সকল হাই স্কুলের ছাত্রীদের একত্রে কেবল মাত্র গভর্ণমেণ্ট গার্লস হাই স্কুলে ক্লাশ হইবে। সুতরাং সারদেশ্বরী গার্লস স্কুল, দিনাজপুর হাই স্কুলের মহিলা বিভাগ, ঈদগাহ বস্তি গার্লস স্কুল ও কলেজিয়েট গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের ক্লাশ প্রত্যেকদিন গভর্ণমেণ্ট হাইস্কুলে বেলা ১১ টায় বসিবে।
(২) ক। রেল বাজারের হাট খোলা হইয়াছে। এখন হইতে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার ও রবিবার রেল বাজারের হাট আগের মত স্বাভাবিক বসিবে।
খ। বিভিন্ন মহল্লায় অবস্থিত সমস্ত কসাইখানা ও তরিতরকারীর দোকান অবিলম্বে উঠাইয়া গুদরি বাজারে বসাইতে হইবে ও আগের মত সেখানে প্রত্যেকদিন বেচা-কেনা করিতে হইবে। নুরুল আমিন মার্কেট আগের মত চালু থাকিবে।
গ। কোন ব্যক্তিকে রাস্তায় কিংবা ফুটপাতে কোন জিনিস বিক্রয় করিতে দেওয়া হইবে না। এইরূপ ব্যক্তিকে তাহার নিকটবর্তী বাজারে জিনিসপত্র বিক্রয় করিতে বলা হইতেছে।
(৩) প্রত্যেক দিন রাত ১১টা হইতে সকাল ৪ টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকিবে।
বাই অর্ডার
এম এল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর
দিনাজপুর
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৯২। অধিকৃত বাংলাদেশের পাক-সামরিক চক্রের বেসামরিক গভর্ণর ডাঃ মালিক-এর বক্তৃতা-বিবৃতি |
দৈনিক পাকিস্তান ২৭ সেপ্টেম্বর |
২৭ সেপ্টেম্বর, ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১ |
.
নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলুনঃ
ছাত্রদের প্রতি গভর্ণরের উপদেশ
.
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম মালিক ছাত্রদিগকে ক্লাসে যোগদান এবং আগামীদিনের নেতা হিসেবে জাতিগঠনমূলক কাজের দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত করে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্যে আবেদন জানিয়েছেন। এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয় যে, গতকাল রোববার বিকেলে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের এক বিশেষ অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে গভর্ণর ছাত্রদের এই মর্মে উপদেশ দেন যে, স্ব স্ব ক্ষেত্রে পারদর্শিতা ও উত্তম দেশ সেবার উপযুক্ত করে নিজেদেরকে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলার প্রতি অনুগত হওয়া ছাত্রদের অপরিহার্য কর্তব্য।
গভর্ণর মালিক পাকিস্তানের সেবায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করার উদ্দেশ্যে সত্যের পতাকাকে সমুন্নত রাখা যায় এমনভাবে চরিত্র গড়ে তোলার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যতীত কোন লোকই কোন রকমের উন্নতিসাধন করতে পারেন না এবং সে জন্যই জাতি যাতে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে পারে, তার জন্য প্রত্যেকটি স্থানে আমাদের যথোপযুক্ত লোকের দরকার এবং এভাবে উপযুক্ত নেতৃত্বের শূন্যতা আমাদের পূরণ করতে হবে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ডাঃ মালিক বলেন, জাতি এক চরম সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে চলেছে।
তিনি বলেন, এটা আমাদের বিবেকের সংকট-বিশ্বাসের মহান গুণাবলী দ্বারা জাতিকে প্রেরণা যোগানো, ন্যায়বিচারের আদর্শপূর্ণ বাস্তবায়নের ব্যর্থতা এবং সমাজ জীবনে সততা, ভ্রাতৃত্ববোধ, জ্ঞাতিভাব ও সহনশীলতার অভাবেই এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। গভর্ণর ছাত্রদিগকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ক্লাশে যোগদান থেকে অনুপস্থিত না থাকার উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ছাত্ররা ক্লাশে যোগদানে বিরত থাকলে তা শুধু তাদের নিজের জন্যই ক্ষতিকর হবে না, উপরন্তু জাতির কল্যাণ ও অগ্রগতিও তাতে বিঘ্নিত হবে। অথচ আমরা সবাই জাতির কল্যাণ ও অগ্রগতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
.
.
দৈনিক পাকিস্তান
২৯ সেপ্টেম্বর,
নাগরিকদের প্রতি গভর্ণর
সংহতি বিনষ্টের তৎপরতার
বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন
.
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম মালিক পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি ধ্বংসের প্রয়াসে লিপ্ত শত্রুদের তৎপরতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্যে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। এপিপির খবরে প্রকাশ, গভর্ণর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গভর্ণর ভবনে ঢাকার ত্রিশটি ইউনিয়ন কমিটির প্রতিনিধি ও প্রভাবশালী নাগরিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
সভায় গভর্ণরের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও প্রাদেশিক মন্ত্রীগণ উপস্থিত ছিলেন। গভর্ণর বলেন যে, শত্রুর এজেন্টরা তাদের হীন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সমাজ জীবনকে বিপর্যস্ত ও জনগণকে বিপথগামী করার প্রয়াসে সম্ভাব্য সব রকম পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন যে, পরিস্থিতির এখন অনেক উন্নতি হলেও আত্মপ্রসাদের কোন অবকাশ নেই বরং সদা জাগ্রত থাকতে হবে।
ডাঃ মালিক এই নজির বিহীন সংকটের মুখে শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্য বজায় রাখার জন্য সকল শ্রেণীর নাগরিকের প্রতি আবেদন জানান। তিনি দেশের সংহতি ও অখন্ডতা রক্ষার জন্যে নতুন করে শপথ গ্রহণেরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, পাকিস্তান একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ হিসেবে টিকে থাকবে, না আমরা শেষ হয়ে যাব সেইটেই আমাদের সামনে প্রশ্ন।
তিনি সর্বাপেক্ষা গুরুতর এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার জন্যে জনগণের সক্রিয় সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করেন। অতীতে আমাদের ব্যর্থতার কারণ বর্ণনা করে গভর্ণর বলেন যে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের নীতি শিক্ষাকে আমরা পুরোপুরি গ্রহণ করিনি। তিনি বলেন যে, আমাদের কথা, কাজ, চিন্তা ও অনুভূতির মধ্যে কখনো সামঞ্জস্য ছিল না। ফলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত আমরা ইতিহাসের এক নজিরবিহীন সংকটের সম্মুখীন হই।
গভর্ণর বলেন যে, তার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়তির প্রতি সত্যিকার বিশ্বাস ও সমস্যা সমাধানের জন্য সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের মাধ্যমেই জাতি তার লক্ষ্য হাসিল করতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি জনগণের প্রতি আদর্শকে উন্নত করার আহ্বান জানান। অতীতের তিক্ততা ও ভুল বুঝাবুঝি ভুলে জাতি একটি নয়া অধ্যায় শুরু করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। গভর্ণর আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা ও সর্বস্তরে কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতার ব্যাপারে ঢাকার নাগরিকগণকে তাদের বিশেষ দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে নির্মূল করার জন্যে কোন ত্যাগই বিরাট বলে মনে হয়া উচিত নয়। পরে ঢাকা শহর শান্তি কমিটির প্রেসিডেন্ট ও সাবেক এম পি এ জনাব সিরাজ উদ্দীন আহমদ ঢাকার নাগরিকদের পক্ষ থেকে গভর্ণরকে আশ্বাস দিয়ে বলেন যে, পাকিস্তান রক্ষার জন্য যে কোন পরিস্থিতির মোকাবিলা এমন কি শেষ রক্তবিন্দু বিসর্জন দিতেও তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
.
.
দৈনিক পাকিস্তান
৩রা অক্টোবর
খুলানায় গভর্ণর
বাস্তুত্যাগীদের প্রতি পুনরায় দেশে ফেরার আহ্বান
(নিজস্ব প্রতিনিধি প্রেরিত)
.
খুলনা ২রা অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক যে সব পূর্ব পাকিস্তানী ভারতীয় প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে চলে গেছে তাদের প্রতি দেশে ফিরে আসার জন্য আর একবার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ সকালে এখানে স্থানীয় অফিসার ও শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমাবেশে ভাষণদানকালে গভর্ণর বলেন, সরকার বাস্তুত্যাগীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছেন এবং ইতিমধ্যেই তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন।
পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারত পরিচালিত ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের নিন্দা করে তিনি বলেন, এসব কার্যকলাপের দ্বারা তারা লক্ষ লক্ষ লোকের দুঃখ দুর্দশা সৃষ্টি করেছে। শিল্প কারখানার ক্ষতি সাধন করে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ব্যক্তিরা শ্রমিকদের বেকার করে দিয়ে এই দুর্দিনে দুঃখ-কষ্টে ফেলেছে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
তিনি জনসাধারণকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ভারতীয়দের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের ও আমাদের দেশকে ধ্বংস করা। তিনি শিক্ষিত লোকদের প্রতি গ্রামে গিয়ে জনসাধারণের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার আবেদন জানিয়ে বলেন, দুষ্কৃতকারীরা ও দেশের শত্রুরা জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
তিনি বলেন, যেসব দুষ্কৃতকারী জনসাধারণের সম্পত্তি নষ্ট করছে এবং দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে তাদের কেউ কেউ আমাদের আত্মীয় স্বজন হলেও তারা সবাই আমাদের শত্রু। ইতিপূর্বে স্থানীয় জেলা স্কুল মিলনায়তনে রাজাকারদের উদ্দেশ্যে ভাষণদানকালে গভর্ণর তাদের প্রতি সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজে আত্মনিয়োগ করার এবং সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পুত চরিত্রের দ্বারা জনগণের স্নেহ ও ভালবাসা লাভ করার আহ্বান জানান।
পরে গভর্ণর ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত লোকেদের জন্য খোলা সাহায্য শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং জেলা কর্মকর্তাদের ক্ষতির প্রয়োজনীয় সাহায্য দেয়ার নির্দেশ দেন।
.
.
দৈনিক পাকিস্তান
১৬ অক্টোবর।
সিলেটের সমাবেশে গভর্ণর মালিক
বিপথগামীদের প্রতি শত্রুদের অভিসন্ধি
অনুধাবনের আহ্বান
.
সিলেট ১৫ই অক্টোবর (এপিপি)। আজ প্রাদেশিক গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক পাকিস্তানকে খন্ড-বিখন্ড করার ভারতীয় দাবীতে বিভ্রান্ত লোকদের প্রতি এর বিপজ্জনক পরিণাম এবং শত্রুদেশের আসল অভিসন্ধি অনুধাবনের উপদেশ দিয়েছেন। তিনি এখানে শহরের বিভিন্ন স্তরের লোকদের এক জনসমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন। গভর্ণর বলেন,
নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ন্যায্য দাবী-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করা দোষের নয় কিন্তু তা কোন মতেই দেশের শান্তি, সংহতি ও অখন্ডতার বিনিময়ে চলতে পারে না। তিনি দুঃখ করে বলেন, যখন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তাদের প্রাপ্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার লাভের আকাঙ্খা করছিল তখন চরমপন্থী লোকেরা এমনকি দেশকে বিচ্ছিন্ন করার দাবী তুলছিল।
এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে গভর্ণর সীমান্ত অতিক্রম করে দেশত্যাগীকারী পাকিস্তানীদের শত্রুর হাতকে শক্তিশালী করে নিজেদের ভুলটাকেই চিরস্থায়ী না করার এবং হাজার হাজার লোকের দুঃখ কষ্ট আরো না বাড়ানোর আহ্বান জানান।
উদ্বাস্তুদের দুর্দশায় বিচলিত গভর্ণর তাদের প্রতি এই মুহুর্তের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেদের শুভবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হওয়ার এবং তৎকালীন সমাজের শোষকদের শোষণ মুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠিত নিজেদের বাসভূমিতে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তিনি কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধ্বংস সাধনের পথ বেছে নেওয়ার জোর নিন্দা করেন। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস করে শুধু জনসাধারণের দুঃখ-কষ্টই বাড়ানো যায়।
শিক্ষা বর্জনের সর্বনাশা প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে গভর্ণর বলেন, এই আত্মঘাতী নীতি শুধু ব্যক্তি নয় গোটা জাতির পক্ষেই ক্ষতিকর। এর ফলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে তা কখনোই পূর্ণ হবে না। মুসলমানরা এভাবে ইংরেজী শিক্ষা বর্জন করে পিছিয়ে পড়েছিল। লোকজনের প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে জেলা কর্তৃপক্ষের উৎসাহব্যঞ্জক রিপোর্টের উল্লেখ করে গভর্ণর সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি সহানুভূতি ও তাদের সদয় ব্যবহার করার জন্য আহ্বান জানান।
গভর্ণর প্রত্যাবর্তনকারীদের দ্রুত পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছেন। সিলেট জেলার এ যাবৎ প্রায় ৪৭ হাজার পাকিস্তানী, অধিকাংশই অননুমোদিত পথে ফিরে এসেছেন বলে জেলা কর্তৃপক্ষ গভর্ণরকে জানিয়েছেন। এদের মধ্যে ৩০ হাজারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক। ট্রেনিং প্রাপ্ত সশস্ত্র লোকজনসহ প্রকৃত পাকিস্তানীরা সীমান্ত অতিক্রম করে বহুস্থানে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে গভর্ণরকে জানানো হয়।
সরকারী কর্মকর্তা ও চা বাগান মালিকদের সাথে গভর্ণরের আলোচনায় আরো জানা গেছে যে ১০০ চা বাগানে কাজ চলছে এবং ৮৪টি চা বাগানে শতকরা ৬০ ভাগ শ্রমিক কাজে যোগদান করেছে। চা বাগান মালিকদের একজন প্রতিনিধি গভর্ণরকে বলেন, চা বাগানগুলোর উন্নতি ঘটছে।
গভর্ণর জেলার ফসলের অবস্থা, স্বাস্থ্যরক্ষা পরিস্থিতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সভায় কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি রাজাকার বাহিনী পুনর্গঠনের এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির পর্যাপ্ত সরবরাহ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছেন। তারা বাইরের আক্রমণের মোকাবেলায় সর্বস্তরের লোকের পূর্ণ ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষার আশ্বাস দিয়েছেন।
গভর্ণর পরে স্থানীয় রাজাকার ট্রেনিং কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি তাদের শত্রুর মোকাবিলায় সম্পুর্ণ প্রস্তুত থাকার এবং সাহসিকিতার সাথে তা প্রতিরোধ এবং জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
হেলিকপ্টার যোগে গভর্ণর স্থানীয় সালটিকর বিমান বন্দরে অবতরণ করলে স্থানীয় পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক অফিসাররা গভর্ণরকে অভ্যর্থনা জানান। সেখান থেকে সোজা তিনি হযরত শাহজালালের (রঃ) মাজারে যান এবং ফাতেহা পাঠ করেন।
.
দৈনিক পাকিস্তান
১৮ অক্টোবর।
ময়মনসিংহের জনসভায় গভর্ণর মালিক
ভারতীয় হুমকি মোকাবিলায়
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
.
ময়মনসিংহ, ১৭ অক্টোবর (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক আজ জনসাধারণকে সব রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক ও অবিভাজ্য শক্তি নিয়ে ভারতীয় আক্রমণের হুমকি মোকাবিলায় আহ্বান জানান। তিনি স্থানীয় সার্কিট হাউস ময়দানে এক জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন।
গভর্ণর বলেন, কে কতটা দোষী একথা বলার সময় এটা নয়। এখন শত্রু দেশের সংহতি বিনাশে উদ্যত। অন্য সব স্বার্থকে ভুলে এমন সব কিছুর ওপর দেশের স্বাধীনতা রক্ষার প্রশ্নকে স্থান দিতে হবে। পাকিস্তানই যদি না থাকলো তবে বাঁচবে কে এবং পাকিস্তান থাকলে কেউ মরবে না।
ভারতের পূর্ব পাকিস্তানে আধিপত্য বিস্তারের জন্য অভিসন্ধির মুখোশ উদঘাটন করে ডাঃ মালিক বলেন, পাকিস্তানের সৃষ্টিকে স্বীকার করতে না পারার দরুনই ভারত এগুলো করছে। পশ্চিম বঙ্গে ক্ষুধা, দারিদ্র ও ভেঙ্গে পড়া অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত এই অঞ্চলকে গ্রাস করার চেষ্টা করছে বলে গভর্ণর উল্লেখ করেন।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমনকি এখনো পশ্চিম বঙ্গের তুলানায় পূর্ব পাকিস্তানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং খাদ্য সস্তা দরে পাওয়া যায়।
গভর্ণর একটি কঠোর বাস্তব দিকের প্রতি বিপথগামী লোকদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি তাদের এ কথাটা ভেবে দেখতে বলেন যে, যখন পশ্চিম বাংলার লোকেরা দিল্লির হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাচ্ছে না তখন পূর্ব পাকিস্তানীদের পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কেন? তিনি বলেন, বাংলা বলতে পশ্চিম বঙ্গ, পূর্ব বঙ্গ উভয়কেই বুঝায়।
তাই বাংলা যদি স্বাধীন হয় তাহলে তাতে পশ্চিম বঙ্গও থাকা উচিত। অতএব দেখা যাচ্ছে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের নামে পূর্ব বাংলাকে ভারতের সাথে যুক্ত করার জন্যে এ আন্দোলন। এই মুহূর্তে প্রত্যেক পাকিস্তনীকে তিনি যেখানেই থাকুন, ভারতের এই খেলা বুঝে নিতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে এটাকে ব্যর্থ করে দিতে হবে।
উদ্দীপ্ত জনতাকে উদ্দেশ্য করে গভর্ণর বলেন, বিশ্বাসঘাতকেরা পেছন থেকে ছুরি না মারা পর্যন্ত মুসলমান কখনো কোন যুদ্ধে হারেনি। যারা কথায় এবং কাজে শত্রুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিইয়েছেন তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে বলে গভর্ণর আশা প্রকাশ করেন।
এই প্রসঙ্গে তিনি স্বাধীন বাংলার প্রবক্তাদের মীরজাফরের ভাগ্যের কথাটা একবার স্মরণ করতে বলেন। জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, ক্লাইভ ও অন্যান্যরা তাকে বাংলার মসনদে বসানোর অঙ্গীকার করেও তা পালন করেনি। তাই তিনি তাদের এই ঐতিহাসিক সত্য অনুধাবনের এবং দেশে ফিরে আসার পরামর্শ দেন।
রাজাকারদের উদ্দেশ্য করে গভর্ণর বলেন নিষ্ঠা ও একাগ্রতাই নিয়ে তাদের কাজ করে যেতে হবে। বাইরের শত্রুদের প্রতিরোধ করা ছাড়াও তাদের সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। গভর্ণর শান্তি কমিটির সদস্যদের সাথে দেখা করেন এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি শান্তি কমটির সদস্যদের কয়েকটি সুপারিশ আগ্রহ সহকারে শোনেন।
দৈনিক পাকিস্তান
২৩ অক্টোবর।
এ অবস্থায় নিখুঁত নির্বাচন
হতে পারে না
-মালিক
.
পূর্ব পাকিস্তানের আসন্ন নির্বাচন হয়ত নিখুঁত হবে না, কিন্তু এটা শাসন ব্যবস্থাকে আবার চালু করার পক্ষে সহায়ক হবে। প্রাদেশিক গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক গত মঙ্গলবার এ এফ পি -এর প্রতিনিধিকে এ কথা বলেছেন। গতকাল শুক্রবার পিপিআই এ খবর পরিবেশন করেছে।
ডাক্তার মালিক এই সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রদেশের এখনকার অস্বাভাবিক অবস্থায় সন্তোষজনক নির্বাচন হতে পারে না। শাসন ব্যবস্থাকে আবার চালু করা গেলে সেটাই হবে এর সাফল্য। বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী দলের ৭৮ জন অযোগ্য ঘোষিত জাতীয় পরিষদ সদস্যের স্থলে আগামী ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানীরা নয়া সদস্য নির্বাচিত করবেন।
জানুয়ারীতে প্রাদেশিক পরিষদের ১০৫ টি আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত নির্বাচনে পরাজিত ৬টি দক্ষিণ পন্থী এবং ধর্মীয় রাজনৈতিক দল এর মধ্যেই জাতীয় পরিষদের ৭৮টি আসন নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে এরূপ খবরের প্রতি গভর্ণরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গভর্ণর বলেন, এ ধরনের মৈত্রী জোটকে খুব বেশী গুরুত্ব দেয়া ঠিক হবে না।
গভর্ণর বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সব কটি দলেরই যে আইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগে ৬ দফার (কয়েকটি দল ছাড়া) অনুরুপ অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি রয়েছে।
ডাঃ মালিক বলেন, তার কাছে অভ্যন্তরীণ ও বৈদিশিক নিরাপত্তা প্রত্যেকটা জেলায় সুষ্ঠভাবে খাদ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করে নির্বাচনের স্থান।
————————-
দৈনিক পাকিস্তান
১ নভেম্বর।
সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে ডাঃ মালিকঃ
সেনাবাহিনীর ২৫ শে মার্চের কার্যক্রমে
পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে
.
লাহোর ৩০ শে অক্টোবর (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক বলেছেন, ভারত পাকিস্তানে আক্রমণ চালালে তাকে প্রচন্ড আঘাত হানার ক্ষমতা ও যোগ্যতা পূর্ব পাকিস্তানীদের রয়েছে বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস। স্থানীয় উর্দু মাসিক পত্রিকা উর্দু ডাইজেষ্টের সম্পাদক জনাব আলতাফ হোসেন কোরেশীর সাথে এক সাক্ষাৎকারে গভর্ণর এ কথা বলেছেন। গভর্ণর মালিক একটা একটা করে প্রশ্নের জবাব প্রদান করেন।
প্রশ্নঃ- আওয়ামীলীগের পরিকল্পনা নেহায়েতই একটা সুযোগের ফলশ্রুতি অথবা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের আবরণে কয়েক বছর আগে শুরু করা সুপরিকল্পিত সংগ্রামেরই পরিণতি কি না?
উত্তরঃ- হ্যাঁ। আমার তাই মনে হয়।
প্রশ্নঃ- বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী বলে মনে করেন কি?
উত্তরঃ- যেভাবে তার অভ্যুদয় দেখেছি তাতে নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানী আদর্শের পরিপন্থী।
প্রশ্নঃ- সামরিক বাহিনীর তৎপরতার পর সারা পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক সফর করে আমার এরূপ ধারণা হয়েছে যে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান থেকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থাকে মুছে ফেলতে চেয়েছে। এরূপ মনোভাবের অধিকারী লোকের সাথে এখন কি একত্রে কাজ করা সম্ভব?
উত্তরঃ- ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা ও ক্ষমার মনোভাব নিয়ে এবং যারা ইসলাম বিশ্বাসী তারা যদি ইসলামের শিক্ষাকে কাজে প্রয়োগ করেন, মহানবী (দঃ) ও তাঁর সাহাবারা যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা একসাথে থাকতে পারি।
প্রশ্নঃ- ইসলাম ছাড়া পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বন্ধনে আর কোন গ্রন্থি আছে বলে আপনি মনে করেন কিনা। যদি না থাকে তাহলে কোন পথে এগুলো জনগণের মধ্যে সত্যিকার ইসলামী আদর্শের উদ্বোধন ও অনুশীলন ঘটানো যাবে?
উত্তরঃ- পাকিস্তান অর্জনে আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি ইসলামের আদর্শ মোতাবেকই সাধারণ লক্ষ্য, আশা আকাঙ্খা, উদ্দেশ্য ও আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য একত্রে বসবাসের ইচ্ছাই আমাদের বন্ধন। ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক বিকাশের ইচ্ছাও আর একটি কারণ, যখন আমরা বলি, আমরা মুসলিম এবং ইসলামের অনুসারী, সাথে সাথেই ইসলামী ভাতৃত্ববোধ সামনে এসে যায়। আর এজন্যই ইকবাল বলেছেন, মুসলমানদের কাছে ‘সারা জাহান হামারা’।
প্রশ্নঃ- কোন কোন মহলের ধারণা যারা পাকিস্তানকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে তারা এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছে। এরূপ ধারণাকে আপনি যুক্তিসঙ্গত মনে করেন কি?
উত্তরঃ- যে মহল এরূপ ধারণা পোষণ করেন এরূপ ব্যক্তি সম্পর্কে তাদের হাতে সুস্পষ্ট তথ্য থাকলে তাদের যুক্তি ঠিক, অন্যথায় নয়।
প্রশ্নঃ- আপনি কিভাবে বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালীদের সম্পর্কের উন্নতি করতে চান। অবাঙ্গালীরা নিজেদের রাষ্ট্রে সম মর্যাদার নাগরিক হিসেবে ভাবতে তাদের মধ্যে এরূপ কোন মনোভাব জাগানোর পরিকল্পনা আপনার আছে কি?
উত্তরঃ- এর জবাবটাও দু’অংশের বন্ধন সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবেরই অনুরুপ হবে।
প্রশ্নঃ- সেনাবাহিনীর তৎপরতা অপরিহার্য দায়িত্বসমূহ পালনের সকল লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছে কি?
উত্তরঃ- ২৫ শে মার্চের রাতে সেনাবাহিনী যে কার্যক্রম নিয়েছে তাতে পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে।
প্রশ্নঃ- আপনার বেসামরিক সরকার পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করছে কি?
উত্তরঃ- বর্তমান সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্যে বেসামরিক পরশাসন ও সেনাবাহিনীকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা দু’পায়ে হাঁটি এবং আমরা তাই করছি।
প্রশ্নঃ- আপনার মন্ত্রীরা কেউই তেমন বিশিষ্ট ব্যক্তি নন। এটা কি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে অথবা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে কি?
উত্তরঃ- আমার মন্ত্রীরা বিশিষ্ট ব্যক্তি নন একথা আমি স্বীকার করি না। তাদের মধ্যে দু’জন জনাব আবুল কাসেম ও জনাব সোলায়মান সারা পাকিস্তানে পরিচিত। প্রথমজন পাকিস্তান কাউন্সিল মুসলীম লীগের সাধারণ সম্পাদক। এক সময়ে জাতীয় পরিষদে ডেপুটি স্পীকার ছিলেন এবং অতীতে গণ পরিষদের সদস্য ছিলেন। জনাব সোলায়মান একজন বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা এবং পাকিস্তান কৃষক-শ্রমিক পার্টির সভাপতি। তিনি বেশ কয়েক বছর জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন।
প্রশ্নঃ- আপনার বর্তমান মন্ত্রীদের দ্বারা বর্তমান সংকটের সমাধান হবে কি?
উত্তরঃ- আমার সেটাই বিশ্বাস।
————————–
দৈনিক পাকিস্তান
২৬ নভেম্বর।
করাচীতে ডাঃ মালিক
রাজাকারদের ভূমিকার প্রশংসা
.
করাচী, ২৫ শে নভেম্বর, (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক দুষ্কৃতকারীদের নাশকতামূলক তৎপরতা কার্যকরভাবে রোধ করার ব্যাপারে গতকাল পূর্ব পাকিস্তানে রাজাকারদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
ঢাকা থেকে এখানে আগমনের পর বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করছিলেন।
ডাঃ মালিক বলেন যে, রাজাকাররা চমৎকার কাজ করছে। তারা দেশ প্রেমিকদের জান মাল রক্ষা করছে এবং নিজেদের জীবনের বিনিময়ে রাষ্ট্র বিরোধী ব্যক্তিদের নাশকতামূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রহরা দিচ্ছে।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে আইন ও শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
———————-
দৈনিক পাকিস্তান
২৭ শে নভেম্বর।
পিন্ডিতে গভর্ণর মালিক
জনসাধারণ বুঝতে পেরেছে
বাংলাদেশ আন্দোলন একটা ভাওতা
.
রাওয়ালপিন্ডি, ২৬ শে নভেম্বর (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিক আজ এখানে বলেন যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর পর কতিপয় বিদ্রোহী ও ভারতীয় চর ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এখন বুঝতে পেরেছে যে স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনই একটা ভাওতা।
এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে গভর্ণর বলেন যে, এমনকি নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কিছু সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বর্তমানে যারা ভারতে রয়েছেন তারাও এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে তারা তাদের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক প্রতারিত হয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ডাঃ মালিক বলেন, তার কাছে এ ধরনের সঠিক খবরও আছে যে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের এসব নেতা ও কর্মীরা পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসার জন্য খুবই আগ্রহী। কিন্তু তাদের কড়া পাহারায় রাখা হয়েছে। প্রহরী, ভারতীয় পুলিশ ও সামরিক নিরাপত্তা বাহিনীর লোকদের ছাড়া তারা এক পা-ও বাড়াতে পারেন না।
মুক্তিবাহিনীর ছদ্মাবরণে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালানোর জন্য ভারতে যথাযথ ট্রেনিং লাভের পর পূর্ব পাকিস্তানে আগত সেসব হতাশ যুবকদের বহুসংখ্যকই আত্মসমর্পণ করেছে এ ঘটনা থেকেই উপরোক্ত বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর বীর সশস্ত্র বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করে এ মর্মে আশা প্রকাশ করেন যে, জনসাধারণ, রাজাকার, পুলিশ ও মুজাহিদদের সক্রিয় সহযোগিতায় সশস্ত্র বাহিনী শত্রুকে চরম পরাজয় বরণে বাধ্য করবে।
৫৫২
পাকিস্তানীরা যথা সময়েই শত্রুচরদের উৎখাত করবে। পূর্ব পাকিস্তানকে ভারতে কুক্ষিগত করার জন্যই পাকিস্তান সীমান্তে তারা আক্রমণ শুরু করেছে। এ উদ্দেশ্য সাধনে ভারতীয় বাহিনী শুধুমাত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশের চেষ্টা করছে না, অধিকন্তু ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বেসামরিক নাগরিকদের ওপরও গোলাবর্ষণ করছে।
এসব সত্ত্বেও জনসাধারণের মনোবল অটুট রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তারাবির নামাজ কালে মসজিদে, জনসমাগমপূর্ণ বাজার এলাকা ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ভারতীয় চরদের বোমা নিক্ষেপের বিষয়ও গভর্ণর বর্ণনা করেন।
পাকিস্তানের আদর্শের প্রতি দিন দিনই জনসাধারণের আস্থা জোরদার হচ্ছে এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় তারা সর্বশক্তি দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করছে বলে গভর্ণর জানান।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৯৩। অধিকৃত বাংলাদেশ ডাঃ মালিক মন্ত্রীসভায় সদস্যদের বক্তৃতা-বিবৃতি | দৈনিক পাকিস্তান ও পাক সমাচার |
২০ সেপ্টেম্বর ৩০ নভেম্বর, ১৯৭১ |
দৈনিক পাকিস্তান
২০ সেপ্টেম্বর।
শ্রমমন্ত্রী সোলায়মান –
এ সংকটে ঐক্যবদ্ধ থাকুন
.
পূর্ব পাকিস্তানের শ্রম, সমাজ কল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী জনাব এ, এস সোলায়মান জাতির এ সংকট মুহূর্তে জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। গতকাল রোববার ঢাকা থেকে দশ মেইল দূরবর্তী মিরপুরে এক সভায় তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। সভায় জনাব সোলায়মান বলেন যে, আমাদের বীর জনসাধারণ শত্রুকে নির্মূল করে দিয়েছে। শত্রুরা পাকিস্তান ভাঙতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, সাড়ে সাত কোটি মানুষের ত্যাগ স্বীকারের ফলশ্রুতি হলো পাকিস্তান। তাই বিশ্বের কোন জাতিই পাকিস্তানকে ভাঙতে পারবে না। জনগণের কল্যাণ সাধনে সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্যে তিনি জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। কৃষক শ্রমিকের অবস্থার উন্নতি সাধনই সরকারের লক্ষ্য বলে তিনি জানান।
জনাব সোলায়মান আরো বলেন, প্রথমে আমরা মুসলমান তারপর বাঙালী, পাঞ্জাবী, সিন্ধু ও পাঠান। জনসাধারণকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, আমরা যদি মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যাই তাহলে পাকিস্তানও থাকবে না।
বর্তমান পরিস্থিতির উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন যে, এক্ষণে সমগ্র বিশ্বই আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আসল মতলব অনুধাবন করতে পেরেছে। তাই অধিকাংশ দেশই পাকিস্তানকে জানিয়েছে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন। আর যে শত্রুরা পাকিস্তানকে দুর্বল করতে চেয়েছিল তারা হয়েছে নির্মূল। পাকিস্তান সঠিক পথেই রয়েছে। কোন দেশই পাকিস্তানের ক্ষতি করতে পারবে না।
মন্ত্রী আরো বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান চান যে, দেশে গণতন্ত্র চালু থাকুক। তাই তিনি প্রদেশে বেসামরিক গবর্ণর ও মন্ত্রীদের নিয়োগ করেছেন। প্রদেশের পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে যেতে পারে তজ্জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতা করার জন্যে তিনি জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।
……………
দৈনিক পাকিস্তান
২০ সেপ্টেম্বর।
কাসেম
জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টিই মন্ত্রীদের
প্রধান কর্তব্য
.
পিপিআই’র খবরে প্রকাশ, গবর্ণরের মন্ত্রী পরিষদের প্রবীনতম সদস্য জনাব আবুল কাসেম গতকাল রোববার ঢাকায় বলেন যে প্রকৃত ঘটনা সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করে জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করাই হচ্ছে তাঁর ও তাঁর সহকর্মীদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। জনগণের জন্যে তাঁর মতে কি কি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, জনাব কাসেম সে সম্পর্কে পিপিআই প্রতিনিধির সাথে আলোচনা করছিলেন।
তিনি বলেন যে, আমাদের জনগণের কাছে প্রকৃত ঘটনা ব্যাখ্যা করা হলে তারা তা অনুধাবন করতে পারবে এবং এভাবেই তাদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে। তিনি বলেন যে, শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের জান ও মাল রক্ষা এবং প্রত্যাগতদের সব রকম সাহায্য দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় সংকল্পের কথা জনগণের কাছে বলার জন্যে মন্ত্রীরা শীঘ্রই প্রদেশে গণসংযোগ সফরে বের হবেন।
জনাব কাসেম বলেন যে, প্রয়োজনের সময় জনগণের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন যে, মন্ত্রীদের প্রচেষ্টা সফল করার জন্য জনগণ এগিয়ে না আসলে তারা (মন্ত্রীরা) কিছুই করতে পারবেন না।
……………
পাক সমাচার
১ অক্টোবর।
শিক্ষামন্ত্রী জনাব আব্বাস আলী খান-
শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন
.
পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী জনাব আব্বাস আলী খান দেশের বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিকে পুরোপুরি ঢেলে সাজাবার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
গত ২১শে সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যুবসমাজ যাতে ইসলামের সত্যিকার শিক্ষা লাভ করতে পারে তার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক ও পুরোপুরি পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রশ্নটিকে যদি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার না দেয়া হয় তবে যুব সমাজ অন্ধকারাচ্ছন্নই রয়ে যাবে এবং তাদের যে লক্ষ্যস্থল সেই পাকিস্তানের আদর্শ থেকে তারা বহুদূরে সরে থাকবে।
জনাব আব্বাস আলী খান বলেন, ইসলামী অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষা ছাড়া আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে পাকিস্তানের পটভূমিকা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারবো না।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাই আমাদের সকল ক্ষতির কারণ। বর্তমানের ধর্মনিরপেক্ষ ও অর্থহীন শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন না করা হলে আমরা কিছুতেই আমাদের ধ্বংসকে রোধ করতে পারবো না।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই সব ক্ষতি পূরণের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে তিনি খুব শিগগীরই বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ভাইস চ্যান্সেলর ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের এক সম্মেলন আহ্বান করতে পারেন। তিনি বলেন দেশের সাধারণ মানুষও এই চায়।
জনাব আব্বাস আলী খান বলেন, অবশ্য এই পরিবর্তন রাতারাতিই সাধিত হবে না। এই পরিবর্তন হবে পর্যায়ক্রমে এবং দ্রুততার সাথে। রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভবপর নয় এবং তাতে করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হতে হবে যাতে আমরা বিজ্ঞানী, দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার গড়ে তুলতে পারবো আর সে সাথে গড়ে তুলতে পারবো খাঁটি মুসলমান। তিনি বলেন, ধরম মানে শুধু আচার অনুষ্ঠানই নয়। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন। আমাদের রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্যপ্রভৃতি সবই অবশ্যই ইসলামের ভিত্তিতে হতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষায়তনে ছেলেমেয়েদের যে সহ-শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে সে সম্পর্কে তাঁর মত জানতে চাওয়া হলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বয়স্থা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তিনি বলেন, এ ব্যবস্থা অবশ্য পরিত্যাজ্য।
……………
পাক সমাচার
১ অক্টোবর।
বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব আখতার উদ্দিন আহমদ-
সংহতি রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান
.
প্রাদেশিক বাণিজ্য ও শিল্প এবং আইন বিষয়ক মন্ত্রী জনাব আখতার উদ্দিন আহমদ পাকিস্তানের সংহতি, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ২৬শে সেপ্টেম্বর বিকেলে মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউটে তেজগাঁও ও রমনা থানা সম্বর্ধনা কমিটি কর্তৃক তাঁর সম্মানে আয়োজিত এক সম্বর্ধনা সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। পাকিস্তানের আন্দোলনের পটভূমি ব্যাখ্যা করে জনাব আখতার উদ্দিন বলেন, উপমহাদেশের এই অংশের মুসলমানরা হিন্দুদের দ্বারা নিষ্ঠুরভাবে শোষিত হয়েছেন। হিন্দুদের সাথে একত্র বসবাস করা একদম অসম্ভব জেনেই কায়েদে আজমের নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয় এরই পরিণতি স্বরুপ মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি জনসাধারণ বিশেষ করে তরুণ সমাজকে দেশের বর্তমান সংকট মুহূর্তে তাদের উপর যে গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা অনুধাবনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আল্লাহ না করুক, পাকিস্তান যদি ধ্বংস হয়ে যায় তা হলে মুসলমানরা তাদের আলাদা বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলবে এবং হিন্দুদের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়বে।
পাকিস্তানকে সকল রকম শোষণমুক্ত একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার ব্যাপারে তিনি জনগনকে সরকারের সাথে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
……………
পাক সমাচার
১ অক্টোবর।
জাতিসংঘের প্রতি প্রাদেশিক তথ্যমন্ত্রী
জনাব ওবায়দুল্লাহ মজুমদার-
পাকিস্তানী উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনের নিশ্চয়তা বিধান করুন।
.
ভারতের তথাকথিত আশ্রয় শিবিরে যে উদ্বাস্তু সীমাহীন দুর্দশায় তাদের দিন কাটাচ্ছে, ভারত যাতে তাদের পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেয় তার নিশ্চয়তা বিধান তথা এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী জনাব ওবায়দুল্লাহ মজুমদার ২৮শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের প্রতি আকুল আহ্বান জানান।
বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত এমএএন জনাব মজুমদার দু মাস কাল ভারতীয় শিবিরে কাটিয়ে পাকিস্তান প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি উদ্বাস্তুদের জীবন-যাত্রার এক করুণ চিত্র তুলে ধরেন। তারা দারিদ্র ও ব্যাধির কবলে পড়ে অসহায় হয়ে কাতরাচ্ছেন। মৃত্যু তাদের গ্রাস করছে।
ভারতের তথাকথিত শিবিরের জীবনযাত্রা সম্পর্কে তার তিক্ত অভিজ্ঞতা হতে জনাব মজুমদার বলেন যে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কর্মী, নবনির্বাচিত এমএএন ও এমপিএ, ছাত্র ও সাধারণ মানুষসহ সকল পাকিস্তানী উদ্বাস্তুই আজ বিভ্রান্ত ও হতাশাগ্রস্তও। তারা সকলেই ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে। ভারত তার গোপন স্বার্থ উদ্ধারকল্পে এদের ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, কতিপয় উগ্রপন্থী ছাড়া সকলেই আজ অবস্থার স্বীকার হয়েছে। এদের সকলেই নিজের দেশে স্বাধীন ও সম্মানিত নাগরিক হিসাবে পুনরায় নতুন করে জীবন শুরুর নিমিত্ত তাদের ঘরবাড়ীতে ফিরে আসার জন্য খুবই আগ্রহী ও মরিয়া হয়ে উঠেছে কিন্তু ভারতের প্রচারণার মাধ্যমে যে সব বিদ্বেষপূর্ণ হীন প্রচারণা চলছে। তথা আরও নানা রকম বাধা সৃষ্টির দরুন তারা তাদের বাড়ী ঘরে ফিরতে পারছে না।
মন্ত্রী বলেন, তিনি তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারেন যে ভারত সর্বদাই উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বাড়িয়ে বলছে। তিনি আরও জানান যে, হিন্দু মুসলমানদের প্রতি দু-রকম ব্যবহার করা হচ্ছে, তাও তিনি দেখেছেন। তিনি নিজে স্ত্রী পুত্রসহ প্রায় দু’মাসকাল যে ক্যাম্পে অবস্থান করেছেন, সেটা ছাড়াও আগরতলা, বেলেনিয়া ও অন্যান্য স্থানের শিবির তিনি পরিদর্শন করে তা প্রত্যক্ষ করেছেন।
এসব ক্যাম্পের সাধারণ অবস্থা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন যে, এসব ক্যাম্পের অবস্থা খুবই অস্বাস্থ্যকর। লোকজনদের স্বল্প পরিসরে ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়েছে। খাদ্য সরবরাহও খুবই অনিয়মিতও। চিকিৎসার অভাবে পুষ্টিহীনতার দরুন আমি নিজেই প্রতিদিন শিশুদের মরতে দেখেছি। তিনি বলেন, তবে পাকিস্তানী এমএনএদের একটা মাত্র সুবিধা দেয়া হয়, তা হলো একটা ছোট্ট ঘরে তাদের দু-তিনজনকে একটা খাটিয়ার ওপর একত্রে থাকতে দেয়া হয়। অন্যদের নিজেদেরই তাদের ব্যবস্থা করে নিতে হয়।
জনাব মজুমদার বলেন যে, ভারতে অবস্থানকালে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ঢাকা জেলার প্রায় ৩০ জন এমএএন ও এমপিএ- এর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। তিনি এদের সকলকেই হতদ্যেম ও আতংকগ্রস্ত দেখতে পান। কলকাতাসহ পশ্চিম বঙ্গের অপরাপর অংশে যেসব এমএএন ও এমপিএ অবস্থান করছেন, তাদের অবস্থাও একইরুপ। আমি সেখানে শুনেছি যে, তারাও পাকিস্তানে ফিরে আসার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সকল বাধা সৃষ্টি করছে বলে তিনি জানান।
জনাব মজুমদার বলেন যে, তিনি নিজে প্রথম সুযোগ গ্রহণ করেই পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি সব সময়েই পাকিস্তানী ছিলাম, সর্বদাই পাকিস্তানী এবং কখনই পাকিস্তান বিরোধী নই। তবে গোলযোগের সময় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তথায় আশ্রয়গ্রহণে বাধ্য হই। তবে তথায় থাকাকালে সব সময়ই আমি সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ খুঁজছিলাম এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তথা অপরাপর ভারতীও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এড়িয়ে পলায়নের প্রথম সুযোগই আমি গ্রহণ করি।
ছাত্রদের সম্পর্কে জনাব মজুমদার বলেন, তথায় বহুসংখ্যক ছাত্রের সাথেই তার সাক্ষাৎ হয়েছে। এদের অনেকেই তার ছাত্র। তাদের হত্যা করা হবে এ ধরনের গুজবে আতংকগ্রস্ত হয়ে তারা ভারত গমন করে। ভারতে ছাত্রদের আশ্রয় স্থানও নেই। খাবার ব্যবস্থাও নেই। কোন রকম কাজ না করে শুধু ঘুরে বেড়ানোর কোন অধিকার তাদের নেই এধরণের তিরস্কার ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের অহরহই করছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তাদের সামরিক ট্রেনিং প্রদানের নির্দেশ প্রদান করছে।
তিনি বলেন যে, খাওয়া থাকার ব্যবস্থা না থাকায় তারা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ট্রেনিং গ্রহণের জন্য নাম লিখাচ্ছে। ট্রেনিং ক্যাম্পে তাদের মস্তিষ্ক ধোলাই করা হচ্ছে। অতঃপর পূর্ব পাকিস্তানের ব্রীজ, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ বিনষ্ট করার কাজে নিয়োগ করা হচ্ছে। তাদের কাজের ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ করা নজর রাখে। মন্ত্রী বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন যে, এদের মধ্যে অনেকেই তাদের মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র পুকুর ও জঙ্গলে ফেলে দিয়ে পাকিস্তান থেকে ফিরে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে তাদের সফল অভিযানের কাহিনী শুনায়। এ-ভাবেই অবস্থার শিকারে এসব তরুণরা নিজেদের জান বাঁচাতে চেষ্টা করে।
জনাব মজুমদার পাকিস্তানে ফিরে এসে পুনরায় পড়াশুনা শুরু করার জন্য তরুণ সমাজের প্রতি আবেদন জানায়। তিনি বলেন, এদের জন্য আমার প্রাণ কাঁদছে, কারণ শিক্ষক হিসাবে আমি বহুকাল তাদের মধ্যে অতিবাহিত করেছি। নিজের দেশের সেতু ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে তারা শুধু ভারতের গোপন দুরভিসন্ধি পূরণের পক্ষেই কাজ করছে। মাই নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে একদিন তারা তাদের এ ধরনের কাজের জন্য অনুতপ্ত হবে।
……………
দৈনিক পাকিস্তান
২ অক্টোবর।
আউংশুপ্রু-
প্রদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের
অভিযোগ মিথ্যা
.
পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মিঃ আউংশুপ্রু গতকাল শুক্রবার প্রদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের নির্যাতন ও হয়রানি সংক্রান্ত ভারতীয় অভিযোগ খণ্ডন করেন। এপিপির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে প্রেসিডেন্ট ও গভর্নর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের বারবার পুরোপুরি রক্ষার আশ্বাস এবং সমান অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দানের নিশ্চয়তা দিয়েছে।
তিনি বলেন যে, প্রাদেশিক মন্ত্রীদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে প্রদেশের পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে জনমনে আস্থা সৃষ্টি করা। এ কাজে সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যাপারে আরো গুরুত্ব আরোপ করবেন। পূর্ব পাকিস্তানের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা অনুগত, শান্তিপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক এবং তাদের প্রতি সরকারের আচরণ খুবই চমৎকার ও উদার।
তাদের কখনো বিরক্ত করা হয়নি। সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর লোকেরা বরং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহায়ক। মন্ত্রী বলেন, ভারত পাকিস্তানের ঐক্য নষ্ট করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের জন্য ভারতীয়দের কোন প্রীতি নেই। সে পাকিস্তানকে ধ্বংসের নীতি অনুসরণ করে চলছে। ভারতীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রীর সাথে যৌথ সম্মেলনের ব্যাপারে গভর্নর ডাঃ মালিকের প্রস্তাব সম্পর্কে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হলে মন্ত্রী বলেন যে এই প্রস্তাব সম্পর্কে ভারতের কাছ থেকে এখনো কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, সংখ্যালঘুই হোক আর যেই হোক পূর্ব পাকিস্তানের কারো জন্য ভারতের ভালবাসা নেই।
মিঃ আউংশুপ্রু পূর্ব পাকিস্তানে বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংসের ভারতীয় প্রচারণাকে ডাহা মিথ্যা বলে বর্ণনা করেন।
…………………
দৈনিক পাকিস্তান
১৩ অক্টোবর।
খুলনায় রাজস্ব মন্ত্রী
রাজাকারদের ভূয়সী প্রশংসা
.
খুলনা, ১১ই অক্টোবর (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের রাজস্ব মন্ত্রী মওলানা এ,কে,এম ইউসুফ রাজাকারদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। গতকাল এখানে জেলা স্কুল মিলনায়তনে তিনি রাজাকারদের এক সমাবেশে ভাষণ দান করছিলেন। দুষ্কৃতিকারী ও ভারতীয় সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীদের কার্যকলাপ দমনের জন্য রাজাকাররা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে এতে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, রাজাকাররা শুধু অনুপ্রবেশকারীদের হামলাই সাফল্যের সাথে প্রতিহত করেনি, তারা বেশ কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী ও ভারতীও ছাপমারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদও উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। মওলানা এ,কে,এম ইউসুফ ভাষণ দানকালে ঘোষণা করেন যে, দেশের সার্বভৌমত্বের উপর হামলার যেকোন অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের পেছনে আমাদের সাহসী জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।
এর পূর্বে সমাবেশে ভাষণ দানকালে খুলনায় ডেপুটি কমিশনার এবং জেলা রাজাকার কমান্ডার খুলনায় রাজাকারদের কার্যকলাপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। রাজস্ব মন্ত্রী আজম খান কমার্শিয়াল কলেজ মিলনায়তনে ইসলামী ছাত্রসংঘ আয়োজিত এক সভায়ও ভাষণ দেন।
তিনি ছাত্রদের পড়াশুনায় মনোযোগ দানের আহ্বান জানান। তিনি ছাত্রদের নিকট পাকিস্তান আন্দোলন পটভূমি ব্যাখ্যা করেন। সীমান্তের অপর পারে চলে যাওয়া ছাত্রদের দেশে ফিরে এসে জাতি গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহণেরও আহবান জানান।
………………
দৈনিক পাকিস্তান
১৮ অক্টোবর।
অর্থমন্ত্রী আবুল কাসেমের বেতার ভাষণ
উদ্বাস্তুদের প্রতি স্বদেশে ফিরে আসার আহ্বান
.
পূর্ব পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল কাসেম গত শনিবার প্রদেশবাসীর উদ্দেশ্যে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র থেকে এক ভাষণদান করেন। নিম্নে তার পূর্ণ বিবরণ দেয়া হলোঃ
“জাতীয় জীবনের চরম সন্ধিক্ষণে প্রদেশে মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছে। এমন সংকটকালে মন্ত্রীসভায় যোগদান করে যে দায়িত্ব বরণ করে নিয়েছে তা অত্যন্ত গুরুতর ও দুর্বহও। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই এ গুরুভার কাঁধে নিয়েছি। কারণ এটিকে জাতীয় ও মানবিক কারণ বলেই মনে করেছি। বহিঃশত্রুর চক্রান্তে যখন দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন, জনজীবন বিপর্যস্ত, প্রতিটি মানুষ দিশেহারা তখন শুধুমাত্র নীরব, নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালন করাকে জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করারই সামিল বলে গণ্য করেছি।
তাই আমাদের ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে আমরা এগিয়ে এসেছি। আমাদের সাফল্য নির্ভর করছে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতার উপর। একটি বিদেশি শক্তির চক্রান্তের ফলে প্রদেশে হত্যা, লুণ্ঠন ও সম্পদ নাশের যে নারকীয় বিভীষিকার সৃষ্টি হয়েছিল তাতে পাকিস্তানের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয় এবং পরিস্থিতি সামরিক হস্তক্ষেপকে অনিবার্য করে তোলে।
রাস্ত্রবিরোধী শক্তিগুলোর অশুভ তৎপরতা তখন প্রদেশময় পরিব্যাপ্ত হয়ে পড়েছিল। সেগুলোকে দমন করার জন্য সৈন্যবাহিনীকে কর্তব্যভার গ্রহণ করতে হয়। রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলো তাদের কৃত পাপের দায়িত্ব নিরপরাধ মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়ে সরে পড়লো। মানুষ তখন একান্ত অসহায়, বিমূঢ়, হতবাক ও দিশেহারা। তাদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। তাদের এমন অসহায় অবস্থায় আমরা চুপ থাকতে পারিনি।
আমরা এগিয়ে এলাম। শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করলাম। শান্তি কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করা হলো। অচিরেই তা সাড়া দেশে সম্প্রসারিত হয়। আতংকগ্রস্ত ভেঙ্গে পড়া মানুষের মনে নিরাপত্তার ভাব ফিরে আসতে লাগলো। ছেড়ে যাওয়া বাড়িঘরে তারা ফিরে এলো। অনেকটা আস্থা ও স্বস্তির ভাব তারা ফিরে পেলো। খোদার দরবারে অশেষ শুকুরিয়া, সমগ্র প্রদেশের মানুষ যখন হাহাকার করছে সেই মহাসংকটের দিনে আমরা এগিয়ে এসে অন্ততঃ কিছু জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে পেরেছি।
মাসুম মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার যে সংকল্প গ্রহণ করেছি আল্লাহতা’য়ালা তা রক্ষার জন্য যেন তওফিক দান করেন।
প্রিয় ভাই-বোনেরা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ঘৃণ্য কারসাজিতে দেশের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। পাকিস্তানের ভিত্তিমূলে সে মারণ আঘাত হানতে উদ্যতও। সর্বশক্তিতে এবং সর্বস্ব পণ করে প্রতিহত করতে হবে। পাকিস্তান আমাদের সে বাঁচলে আমরা বাঁচবো জাতি হিসাবে অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবো।
আমাদের ঈমান-আমান, সুখ-সমৃদ্ধি সবই পাকিস্তানের অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং আজকের সংগ্রাম হবে পাকিস্তানকে রক্ষা করার সংগ্রাম, পাকিস্তানবিরোধী চক্রান্তকে বানচাল করে দেয়ার সংগ্রাম। এ কথা উপলব্ধি করতে হবে যে, এই গরীব দেশের মানুষের শ্রমে, অর্থে ও রক্তে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে তিল তিল করে যে সম্পদ গড়ে উঠেছে তা ধ্বংস করে দেয়ার অর্থ প্রদেশের মানুষকেই বঞ্চিত করা, তাদের এবং ভাবী বংশধরদের চরম সর্বনাশ সাধন করা।
পরের উস্কানীতে নিজের ঘরে কি কেউ আগুন লাগায়। নিজেদের ঘরে আগুন দেওয়ার খেলায় যারা মত্ত হয়ে উঠেছে তারা কি এর পরিণাম একবারও ভেবে দেখবে না। দেশের শিল্পবাণিজ্য, রেল, ষ্টীমার, বাস-ট্রাক, ষ্টীমার-লঞ্চ, সড়ক, সেতু ইত্যাদি সম্পদ আপনাদের অর্থে ও কল্যাণেই গড়ে উঠেছে। এগুলো যারা ধ্বংস করে দিচ্ছে তারা আপনাদেরই সর্বনাশ সাধন করছে। আবার এগুলো গড়ে তুলতে কত শ্রম ও সময়ের দরকার হবে। আর সে অর্থ আসবেই না কোথা থেকে। এদেশের কোটি কোটি অনাহারী-অর্ধাহারী মানুষকেই তো সে অর্থ যোগাতে হবে। চক্রান্তপরায়ণ প্রতিবেশীর প্রচারণায় ও মিথ্যা স্তোক বাক্যে বিভ্রান্ত হয়ে যারা আত্মঘাতী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়ছে তারা কি একবার ভেবে দেখবে না যে, এসব কার্য দ্বারা তারা কার দুরভিসন্ধি চরিতার্থ করছে আর কাদের ধ্বংস ও বিনাশের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিকল করে দিয়ে প্রদেশের সর্বত্র খাদ্যশস্য পৌঁছানো ব্যাহত করার হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, সুতরাং এ কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে যারা এসব নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত রয়েছে অথবা যারা তাদের কাজে সাহায্য করেছে তারা প্রদেশের জনগণের কল্যাণকারী নয়, তারা তাদের পরম শত্রু। এরা গণদুশমন, এরা মানবতার শত্রু। দেশের অস্তিত্বের মূলে এরা আঘাত হানছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিপর্যয় দেখা দিবে।
প্রদেশে দারিদ্র ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তাতে প্রদেশের গোটা জনসমষ্টিই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে। তাই আসুন, সর্বশক্তি প্রয়োগ করে এই সব গণদুশমনদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। বিভ্রান্ত হয়ে যারা এদেশ ছেড়ে শত্রু দেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের আবেদন, আপনারা আপনাদের নিজেদের হাতে গড়া পাকিস্তানের পাক ভূমিতে নির্ভয়ে ফিরে আসুন এবং পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করুন।
এদেশ আপনাদেরই এদেশে সসম্মানে বাস করার আপনাদের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। সে অধিকার কেউ হরণ করে নিতে পারবে না। আমি নিশ্চিত আশ্বাস দান করছি। আপনাদের আশংকার কোন কারণ নেই। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। যাঁরা গৃহহীন হয়েছেন তাঁদের পুনর্বাসন করা হবে। যারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তাঁদের জীবন-ধারণের ব্যবস্থা করা হবে। পরভূমে পরপ্রত্যাশী হয়ে বহু দুঃখে, বহু বিড়ম্বনায়আপনারা দিন অতিবাহিত করেছেন। কিন্তু মন আপনাদের পড়ে আছে ফেলে যাওয়া পাকিস্তানের প্রিয়তম বাস্তুভিটার উপর।আপনাদের বাস্তুভূমি আপনাদের গৃহাঙ্গন হাতছানি দিয়ে আপনাদের ডাকছে-আপনার ফিরে আসুন। আপনাদের নিরাপত্তার পূর্ণ দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করেছি। আপনার ফিরে এলে সব সমস্যার সমাধান আমরা একত্রে বসে করতে পারবো। দুষ্কৃতিকারীদেররোষানলের শিকার হয়ে আপনাদের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত, অনেকেই সর্বস্বান্তহয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত নিরাপরাধ ব্যক্তিদের এবং সর্বহারাদের পুনর্বাসনের নানাবিধ ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে।
আপনাদের স্বাভাবিকজীবনধারায় পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংকল্প নিয়েই আমরা মন্ত্রিসভায় যোগদান করেছি। পরম নিষ্ঠার সাথে এ সংকল্প আমরা পালন করে যাব। এ ব্যাপারে আমাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা একান্ত অপরিহার্য। হতাশা বর্জন করে দৃঢ় মনোবল নিয়ে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। এ বিশ্বাস আপনাদের রাখতেই হবে যে, দুর্যোগের অবসান ঘটবেই জীবনে আবার প্রতিষ্ঠিত হবেন।
সুদিন আবার আসবে। বিধ্বস্ত গৃহের আঙ্গিনা আবার আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠবে। এ সবগুলোই নির্ভর করেছে পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও নিরাপত্তায়। সুখি ও শক্তিশালী পাকিস্তান আপনার সুখ ও শক্তির উৎস। অখন্ড পাকিস্তানই আপনাদের সুখ-সমৃদ্ধি ও মর্যাদাকে সুনিশ্চিত করতে পারে।
পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যে আমরা সবাই যদি অবিচল থাকতে পারি তাহলে দুশমন রাষ্ট্রের শক্র শক্তিগুলো আপনা থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়বে। সকল দুরভিসন্ধি বানচাল হয়ে যাবে। শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরে আসবে সকল অচলাবস্থার অবসান ঘটবে। জীবন আবার গতিময় হয়ে উঠবে। আসুন আমরা সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানের দুশমনদের মোকাবিলা করি এবং পাকিস্তানকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নতুন শপথ গ্রহণ করি।
আল্লাহ আমাদের সহায়ক হবেন”।
……………………….
দৈনিক পাকিস্তান
২০ অক্টোবর।
শিক্ষামন্ত্রীর বেতার ভাষণ
ছাত্রদের প্রতি ফিরে আসার আহ্বান
.
প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী জনাব আব্বাস আলী খান গতকাল মঙ্গলবার সীমান্তের ওপারে বা এপারে ছাত্র সমাজের প্রতি নির্ভয়ে দেশে ফিরে এসে তাদের শিক্ষা জীবন শুরুর আকুল আবেদন জানিয়েছেন। এপিপির খবরে প্রকাশ, এক বেতার ভাষণে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট যে সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করেছেন তা আমাদের শুভেচ্ছারই প্রমাণ বহন করছে।
তিনি বলেন যে, আমাদের মধ্যে যারা শক্রর দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হয়েছে, শিক্ষা জীবনে তাদের পুর্নবাসন করাই আমাদের কর্তব্য। তিনি বলেন যে, তাঁর কাছে সব ছাত্রই নির্দোষ। তাদের সকল অপকর্মের জন্য বিপথগামী নেতৃত্ব ও ভুল শিক্ষানীতিই দায়ী।
বর্তমান সরকার এই শিক্ষানীতি পরিবর্তনে বদ্ধপরিকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন যেছাত্রদের যাতে একটা বছর নষ্ট করতে না হয়, তার জন্য কিছু করা যায় কিনা সরকার তা বিবেচনা করে দেখছে।
…………………
দৈনিক পাকিস্তান
২২ অক্টোবর।
সিলেটের গ্রামে আইনমন্ত্রী
দেশকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য
জনগণ ভোট দেয়নি
.
মৌলবী বাজার, ১৯শে অক্টোবর। -আইন ও পার্লামেন্টারী মন্ত্রী জনাব জসীম উদ্দিন আহমেদ রাজনগর থানা ট্রেনিং ও উন্নয়ন কেন্দ্রে এক বিরাট জনসভায় ভাষণদানকালে বলেন, তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস জনগণ বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের ৬ দফার পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ভোট দিয়েছেন। ভারতের সাহায্যে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য নয়।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট দেশে গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এ সম্পর্কে তিনি নয়া শাসনতন্ত্র ও জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের উল্লেখ করেন। মন্ত্রী বলেন নয়া শাসনতন্ত্রে জনগণের আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটবে।
আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনতাঁর দলেরও দাবী এবং দলীয় প্রধান জনাব নূরুল আমিন শাসনতন্ত্রে অন্তর্ভূক্তির জন্যে প্রেসিডেন্টের কাছে আট দফা দাবী পেশ করেছেন। মন্ত্রী বানারাইতে তাঁর গ্রামের বাড়ী যান এবং পারিবারিক গোরস্তানে ফাতেহা পাঠ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় সেনাবাহিনীর হাত শক্তিশালী করার জন্য তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।
………………………………
দৈনিক পাকিস্তান
২২ অক্টোবর।
কুষ্টিয়া গ্রামে নওয়াজেশ আহমেদ
ভারতীয় প্রচারণায় কর্ণপাত না করার আহ্বান
আলমডাঙ্গা, (কুষ্টিয়া) ২ মে অক্টোবর। -খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী জনাব নওয়াজেশ আহমেদ যে সকল উদ্বাস্তু এখনো সীমান্তের অপর পারে রয়েছেন তাদের সত্বর এসে পাকিস্তানের প্রকৃত নাগরিকের মতো স্বাভাবিকজীবন শুরু করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
মন্ত্রী চার দিনব্যাপী কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা সফর উপলক্ষে ঢাকা থেকে এখানে এসে এক সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। জনাব নওয়াজেশ আহমেদ বলেন যেসরকার ইতিমধ্যেই প্রত্যাবর্তনকারীদের বাড়ী-ঘরে ত্বরিত পুনর্বাসনের উপর্যুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, তারা এখানে পুরোপুরি নিরাপদে থাকবেন। তিনি তাঁদের সীমান্তের ওপারের অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণায় কর্ণপাত না করার উপদেশ দেন।
মন্ত্রী ছাত্রদের নিয়মিত ক্লাসে যোগদান এবং পাকিস্তানের খাঁটি দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে ভবিষ্যতের দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তাদের উপকারের জন্যই সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রমজানের ছুটি বাতিল করেছেন।
…………………………
দৈনিক পাকিস্তান
২৭ অক্টোবর।
বুদ্ধিজীবীদের প্রতি তথ্যমন্ত্রী
মাতৃভূমি রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর
পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান
.
কুমিল্লা, ২৬ শে অক্টোবর। -পূর্ব পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী জনাব মুজিবুর রহমান বুদ্ধিজীবীদের বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জনমত গঠন করে ভারতীয় হামলার মুখে মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি স্থানীয় টাউন হলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও শিক্ষক সমাবেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। মন্ত্রী বর্তমানে সংকটের সঠিক ঐতিহাসিক পটভূমি তুলে ধরার ক্ষেত্রে শিক্ষাবিদদের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করেন।
জনাব রহমান আবুল কালাম আজাদ, আবদুল গাফফার খান ও গান্ধীর অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে ভারতের বর্তমান ভূমিকা পূর্ব পাকিস্তানিদের জনগণের প্রতি সহানুভুতি থেকে উদ্ভূত নয় বরং পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য।
…………………
পাক সমাচার
২৯ অক্টোবর।
শ্রমমন্ত্রী জনাব এ,এস,এম সোলায়মানের আহ্বান
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য তৎপর হতে হবে
.
পূর্ব পাকিস্তানের শ্রম, সমাজকল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এ,এস,এম সোলায়মানের সকল রকমের ভারতীয় ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতার বিরুদ্ধে সর্বদা সতর্ক থাকার জন্য শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের প্রতি গত ২৪শে অক্টোবর আবেদন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী লোকেরা আমাদের শক্রদের হাতের পুতুল হিসেবে কাজ করছে।
টাঙ্গাইলে সমাজের বিভিন্নস্তরের লোক ও শান্তি কমিটি কর্মীদের এক সমাবেশে তিনি ভাষণদানকালে উক্ত মন্তব্য করেন।
জনাব সোলায়মানদেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সবাইকে নিজ নিজ শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক তৎপরতার গতি অব্যাহত রাখার জন্য পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যাতে বিঘ্নিত না হয় সে সেদিকে নজর রাখতে হবে এবং জনগণকে স্বাভাবিককাজ কর্ম চালিয়ে যেতে দিতে হবে। তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে তাদের অন্তর্ঘাতী কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে দেওয়া হলে তাতে শক্রদের উদ্দেশ্যই হাসিল হবে।
মাতৃভূমি রক্ষার জন্য আত্মত্যাগের প্রয়োজন
মন্ত্রী জনাব এ,এস,এম সোলায়মান পাকিস্তানের জন্য বাঁচা ও পাকিস্তানের জন্য মরার জন্য জনগনের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
নারায়নগঞ্জ মহকুমার বৈদ্যের বাজারে এক বিরাট জনসভায় তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। জনাব সোলায়মান তার ভাষণে বলেন, মাতৃভূমি রক্ষার জন্য আত্মত্যাগের চেয়ে বড় ত্যাগ আর কিছুই হতে পারে না। তিনি ঘোষণা করেন যে, বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাঅক্ষুন্ন রাখার জন্য সকল দেশপ্রেমিক নাগরিক আজ ঐক্যবদ্ধ।
জনাব সোলায়মান তার নিজ থানা সফরে গেলে তাকে বিপুলভাবে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, দেশ বিভাগের আগে কিংবা জনাব সোলায়মানই হচ্ছে নারায়নগঞ্জ মহকুমা থেকে নিযুক্ত প্রথম মন্ত্রী
……………………….
পাক সমাচার
২৯ অক্টোবর।
চট্টগ্রামে অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল কাসেম’র আশ্বাস
প্রতি ইউনিয়নে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাজাকার থাকবে
.
প্রদেশে হিংসাত্মককার্যকলাপের যে সকল বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি সম্পর্কে নিরাশ না হওয়ার জন্য প্রাদেশিক অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল কাসেম জনগনের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। সরকার নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বনকরছে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে আয়োজিত বিভিন্ন স্তরের লোকের এক সমাবেশে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার রাজারকারকে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। ট্রেনিং শেষে এদেরকেঅস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করে প্রতি ইউনিয়নে নিয়োগ করা হবে। রাজাকারদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে এক লাখে উন্নীত করা হবে। প্রতি ইউনিয়নে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাজাকার থাকবে। এ ছাড়া রয়েছে পুলিশ বাহিনী। ইতিমধ্যে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি পুলিশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসছে। তিনি বলেন, বেসামরিক সরকার গঠনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে জনমনে আস্থার ভাব ফিরিয়ে আনা। ইনশা আল্লাহ শীঘ্রই অবস্থার উন্নতি হবে।
সীমান্ত অতিক্রম করে যে সকল যুবক ভারতে চলে গেছে তাদের উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, ভারতীয় মিথ্যে প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে অপর পারে গিয়ে তারা যে ব্যবহার পেয়েছে এবং যে অশেষ দুর্গতি পুইয়েছে তাতে তাদের ভ্রান্তি কেটে গেছে। এখন উচিত স্বদেশেতাদের প্রত্যাবর্তন করা। তারা আমাদেরই ছেলে। তারা রাগ করে পালিয়ে গেছে। আমরা তাদের মাফ করে দিয়েছি। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, কেন আপনারা আপনাদের ভাইকে হত্যা করবেন?
একজন মোহাজের বক্তার প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, মোহাজেরদের প্রতি এখানে যা ঘটে গেল একজন বাঙ্গালী মুসলমান হিসেবে তিনি তার জন্য লজ্জিত ও দুঃখিত। এতিম, বিধবা ও অভিভাবকহীন মোহাজের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা সরকার করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
এ ছাড়া গত গোলযোগে স্থানীয় যে সকল লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সরকার তাদের পুনর্বাসন সহায়তা করবেন। মোট কথা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি লোকের পুনর্বাসনের জন্য এক ব্যাপক পরিকল্পনার তৈরি করা হচ্ছে। এ কাজ সম্পন্ন হলেই এর বাস্তবায়নের হাত দেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, যখন কোন দুর্যোগ আসে তখন ভাল ও মন্দ সকল লোকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেরুপভাবে গত গোলযোগে পূর্ব পাকিস্তানে এমন কোন লোক নেই যিনি কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তিনি বলেন, আমরা অনেক ভুল করেছি। এর জন্য প্রায়শ্চিত্ত হয়েছে। এখন আমাদের উচিত সবকিছু ভুলে যাওয়া।
পাক-ভারত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ভারতীয় রণহুংকারের কাছে পাকিস্তান নতি স্বীকার করবে না। আমরা জানি কি করে যুদ্ধ করতে হয়। শক্র নিশ্চিহৃ করতে আল্লাহ মুসলমানদের সহায় হবেন ইসলামের ইতিহাসে এর বহু নজির রয়েছে।
……………………..
পাক সমাচার
২৯ অক্টোবর।
সাহায্য মন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল হকের আবেদন
দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে
.
সাহায্য ও পুনর্বাসন মন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল হক সম্প্রতি চট্টগ্রাম বলেন যে, রাজনৈতিক গোলযোগ ক্ষতিগ্রস্ত উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য একটি সর্বাত্মক স্কীম তৈরি করা হচ্ছে।
জেলা কাউন্সিল হলে চট্টগ্রাম পৌরসভা ও শহর কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণদানকালে তিনি বলেন যে, জনগনের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে যাতে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে জন্য দেশের এই অত্যন্ত সংকটকালে তিনি তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
মন্ত্রী মানসিক পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বলেন যে, অতীতের বিরোধ ভুলে গিয়ে আমাদের দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করা উচিত। তিনি বলেন যে, বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে যে আদর্শের উপর পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে তার উপর ভিত্তি করেই আমাদের সমাজব্যবস্থা পুনরায় পুনর্গঠন করা যেতে পারে।
প্রাদেশিক রিলিফ ও পুনর্বাসন দফতরের মন্ত্রী অধ্যাপক শাসসুল হক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ না করার ব্যাপারে জাতিসংঘের নীতি কার্যকারী করার জন্য তিনি জাতিসংঘের প্রতিও আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, যদি জাতিসংঘ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতীয় হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়, তবে এর পরিণতির দায়িত্ব তাদেরও গ্রহণ করতে হবে।
বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগ দল হতে নির্বাচিত সদস্য অধ্যাপক হক বলেন যে, জনগন আওয়ামী লীগকে ৬ দফা অথবাস্বায়ত্তশাসনেরদাবীতেই ভোট দিয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় ষড়যন্ত্রকারীরা ভারতের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে বিচ্ছিন্নতার দাবী করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আব্রাহাম লিঙ্কনের সময়কার আমেরিকার অবস্থার উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিদ্রোহী কখনই সাফল্য লাভ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দেশত্যাগকারীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত এই দেশত্যাগীর সংখ্যা অতিরঞ্জিত করে বলছে।
মন্ত্রী উপস্থিত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের তাদের ছেলেমেয়েদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার আহ্বান জানান। তার মতে, জাতীয় আদর্শের প্রতি উদাসীনতাই আজকের সংকটের কারণ।
সিটি কলেজের অধ্যক্ষ জনাব রেজাউল করিম সভায় সভাপতিত্ব করেন।
…………………
পাক সমাচার
২৯ অক্টোবর।
বরিশালে শান্তি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে
শিল্পমন্ত্রী জনাব আখতারউদ্দিনের আহ্বান
.
প্রাদেশিক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব আখতারউদ্দিন আহমদ পাকিস্তানের সংহতি ও অখণ্ডতার জন্যে দুষ্কৃতিকারী ও ভারতীয় এজেন্টদের ঘৃণ্য তৎপরতা দৃঢ়তার সাথে প্রতিহত করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তার দলীয় কর্মী ও শান্তি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্য ভাষণ দিচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, ইসলাম ও মুসলমানদের নিরাপত্তার জন্যই পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবহনে সংকট দূরীকরণের ব্যবস্থা
প্রাদেশিক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব আখতারউদ্দিন আহমদ বলেন যে, প্রদেশের পরিবহন সংকট দূরীকরণের জন্য শিগগিরই ট্রাক ও কোষ্টারের আরো চালান এসে পৌঁছাবে।
সম্প্রতি স্থানীয় বণিক সমিতিতে ভাষণদানকালে মন্ত্রী বলেন যে, নতুন চালান ৯০০ ট্রাকও জাপানী কোষ্টারসমূহও এসে পৌঁছাবে। আরও আমেরিকান কোষ্টার ও ক্ষুদ্র নৌযান পূর্ব পাকিস্তানে আসার পথে রয়েছে। এগুলো সরকার চার্টার করেছে বলে তিনি জানান।
মন্ত্রী ব্যবসায়ীদের ট্রাক খরিদ করার আহ্বান জানান। এসব ট্রাক কিস্তির ভিত্তিতে খরিদ করা যাবে। ব্যবসায়ীরা কোষ্টারসমূহও খরিদ করতে পারবেন বলে মন্ত্রী জানান।
স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্যও জনাব আহমদ ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেন। এসব শিল্প প্রদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে বিশেষ সহায়ক হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শিল্প বাণিজ্য খাত বর্তমানে যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে, তার উল্লেখকরে মন্ত্রী এ মর্মে আশ্বাস প্রদান করেন যে, সেসব অসুবিধা দূরীকরণে সরকার ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
দৈনিক পাকিস্তান
১২ নভেম্বর।
নান্দাইলে পূর্তমন্ত্রী
ভারতের দ্বিমুখী হামলার বিপদ
সম্পর্কে সচেতন থাকার আহ্বান
নান্দাইল (ময়মনসিংহ), ১১ই নভেম্বর (এপিপি)।-পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ত, বিদ্যৎ ও সেচ মন্ত্রী জনাব এ, কে মোশাররফ হোসেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের দ্বিমুখী আক্রমণের বিপদ সম্পর্কে পুরো সচেতন থেকে নিজেদের প্রস্তুত থাকার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত সোমবার এখানে তিন মাইল দূরবর্তী নান্দাইল রেলস্টেশনে এক বিরাট জনসভায় মন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ হামলা ছাড়াও আদর্শিক ও সাংস্কৃতিকআক্রমণ চালাচ্ছে। মন্ত্রী জনসাধারণকে প্রত্যক্ষ হামলার চেয়ে বেশী শক্তিশালী সাংস্কৃতিক আক্রমণের প্রতিক্রিয়া অনুধাবন করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বর্তমান সংকটে পাকিস্তান আরো শক্তিশালী হয়েছে ও একটি দৃঢ়ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে।
দৈনিক পাকিস্তান
৩০ নভেম্বর।
জনগনের উদ্দেশে মাওলানা ইসহাক
সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সংযোগিতার আহ্বান
শাহজাদপুর (পাবনা), ২৯শে নভেম্বর (এপিপি)। -পূর্ব পাকিস্তানের মৌলিক গণতন্ত্র বিভাগের মন্ত্রী মওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বিচ্ছিন্নতাবাদী ও বৈদেশিক হামলাকারীদের উৎখাতের ব্যাপারে সশস্ত্র বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সাথে পূর্ণসহযোগিতা করার জন্য জনগনের প্রতি আকুল আবেদন জানান।
গতকাল স্থানীয় থানা উন্নয়ন কেন্দ্রে সমাজের বিভিন্ন স্তরে লোক ও সহকারী অফিসারদের এক সমাবেশ ভাষণদানকালে মন্ত্রী বলেন, জনগণকে একদিকে যেমন বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার দিকে তীব্র নজর রাখতে হবে, তেমনি আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শক্রদের উৎখাতের ব্যাপারে সশস্ত্র বাহিনীর সাথে পূর্ণ সহযোগিতাও করতে হবে।
তিনি বলেন, ইসলামের অনুশাসন মোতাবেক আমাদের জীবন ধারা গড়ে তুলতে হবে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের মধ্যকার আঞ্চলিক সংকীর্ণ মনোভাব পরিত্যাগ ও ভাষার ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মুসলমান হিসেবে আমাদের সংস্কৃতি যে এক, তা অনুবাধন করতে হবে এবং আমরা একত্রে বসবাস করতে চাই-এই দৃঢ় সংকল্পে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৯৪। নিলাম সাহায্য লাইসেন্স ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত কয়েকটি সরকারী ঘোষণা | সরকারী দলিলপত্র জনসংযোগ বিভাগ দিনাজপুর | ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
পেট্রোল ও ডিজেল তৈল ফ্রী করা হইয়াছে, পেট্রোল ও ডিজেল তৈল কিনতে কোন পারমিট লাগিবে না।
ঘরবাড়ি মেরামত ও ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের খয়রাতি সাহায্যের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। দরখাস্তের ফরম নিজ নিজ মহল্লার পিস কমিটির মেম্বারগণের নিকট পাওয়া যাইবে।
আগামী ২৮ শে সেপ্টেম্বর মংগলবার সকাল ১০টায় সুইহারি রাইস মিলে অনুমান ২০০ মণ চাউল প্রকাশ্যে নিলাম বিক্রয় হইবে।
সর্বসাধারনের অবগতির জন্যে জানানো যাইতেছে যে, দিনাজপু টাউনে প্রত্যেক বাড়িঘর, দোকান প্রভৃতির সম্মুখ ও আশপাশ হইতে জংগল ও আবর্জনা অবিলম্বে পরিস্কার করানো হয়। আগামী ২৮শে সেপ্টেম্বর মংগলবার মার্শাল ল’ কতৃপক্ষ কতৃক পরীক্ষা করা হইবে। বাড়িঘর, দোকান ইত্যাদি স্থানের সম্মুখে কিংবা আশেপাশে অপরিস্কার পাওয়া গেলে সেই স্থানের মালিককে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল কোর্ট কতৃক ১০০ শত টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হইবে।
এতদ্বারা জানানো যাইতেছে যে, আগামী ২৮শে সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় কতোয়ালী থানায় মালিকবিহীন তিনটি ট্রাক, একটি বাস, একটি জিপ প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয় হইবে।
এতদ্বারা জানানো যাইতেছে যে, যাহারা গোলযোগের জন্যে সময়মত মটরবাস ইত্যাদির লাইসেন্স, রুট পারমিট করিতে পারে নাই বা লাইসেন্স ও রুট পারমিট খোয়া গিয়াছে, তাদেরকে লাইসেন্স ও রুট পারমিট এর জন্য আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বর এর মধ্যে দরখাস্ত করিতে বলা যাইতেছে।
প্রত্যহ রাত ১১টা হইতে সকাল ৪টা পর্যন্ত কারফিউ বলবত থাকিবে।
বাই অর্ডার
এম,এল এডমিনিস্ট্রেটর
দিনাজপুর
তারিখঃ ২৪-৯-৭১
.
.
শিরোনামঃ ১৯৫। নিহত রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের পরিবারের জন্য গম বরাদ্দের বিজ্ঞাপন
সূত্রঃ সরকারী দলিলপত্র
তারিখঃ ২ অক্টোবর, ১৯৭১
.
পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার
ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়,যশোর
.
রশিদ নং : (৪) তারিখ : অক্টোবর/৭১
প্রেরক : জনাব তাজুল হক
অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার(জেনারেল)
সদর/ঝিনাইদহ/মাগুরা/নড়াইল
বিষয় : নিহত রাজাকার এবং শান্তি কমিটির সদস্যদের পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত সাধারণ ত্রাণের নির্দেশনা।
নিহত রাজাকার এবং শান্তি কমিটির সদস্য যারা দুর্বৃত্ত বিদ্রোহীদের দ্বারা নিহত হয়েছে,তাদের পরিবারের নিকট ত্রাণের গম প্রদান করা উচিত।সেটা পরিবারের সদস্যসংখ্যা অনুপাতে দেয়া হবে।এই প্রেক্ষিতে সাধারণ ত্রাণের বিভিন্ন কোটায় আরো ১০০স্তূপ গম যোগ করা হল।এটা প্রত্যেক উপজেলার জন্য বরাদ্দ।বন্টনেরক্ষেত্রে খন্ডকালীন নিয়মানুসরণ করা হবে।উদাহরণস্বরূপ,প্রতিসপ্তাহে বরাদ্দকৃত গম তিন সের করে পাবে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক এবং দেড় সের করে পাবে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক।হিসাবনিকাশ সঠিক রাখার জন্য পরিমাণ ঠিকঠাক মেনে চলতে হবে-
উপজেলা অফিসার সদর- ৪০০স্তূপ
উপজেলা অফিসার ঝিনাইদহ- ২০০স্তূপ
উপজেলা অফিসার মাগুরা- ২০০স্তূপ
উপজেলা অফিসার নড়াইল- ২০০স্তূপ
__________
১০০০স্তূপ
অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার(জেনারেল)
যশোর
রশিদ নং : 5(রোমান হরফে লিখতে হবে)/২১/৭১/১০৪(৪)/i(৬)RR। তারিখ :২/১০/৭১
অনুলিপি প্রদান কর হয়েছে,
১)ASMLA, যশোর।যা আমার চেম্বারে জেলা শান্তি কমিটির প্রধানের উপস্থিতিতে উল্লেখিত আলোচনা সাপেক্ষে অন্যান্য দিনের মতো স্বাক্ষরিত হয়েছে।
২)জেলা প্রশাসক,জেনারেল অফিসারের নির্দেশমত যশোরে প্রয়োজনীয় কার্যকর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
নং,সেকশন-২(রোমান হরফ)\১৫৯৭-FR
তারিখ-২৩-৯-৭১।
৩)জেলা শান্তি কমিটির প্রেসিডেন্ট যশোর,আলোচনা সাপেক্ষে কার্যদিবসে স্বাক্ষরিত।
৪)চেয়ারম্যান,উপজেলা শান্তি কমিটর সদর/ঝিনাইদহ/মাগুরা/নড়াইল,প্রয়োজনীয় কার্যক্রমেরর জন্য।
৫)চেয়ারম্যান,যশোর শহরের শান্তি কমিটি,প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের জন্য।
৬)জেলা রাজাকার সমন্বয়কারী সামরিক কর্মকর্তা,যশোরের প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের জন্য।
টি.হক
২-১০-৭১
অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার(জেনারেল)
যশোর
.
.
শিরোনামঃ ১৯৬। ৯৪ নং সামরিক বিধি জারি
সূত্রঃ পাকিস্তান অবজারভার
তারিখঃ ১২ অক্টোবর, ১৯৭১
.
৯৪ নং সামরিক বিধি
৯৪ নং সামরিক বিধি নিম্নে বর্ণিত হল-
১। এই প্রবিধান বিদ্যমান কোন আইনের ব্যাত্যয় না ঘটিয়ে ১০ অক্টোবর ১৯৭১ থেকে কার্যকর হবে এবং এই সময়ে বলবত অন্যান্য আইনের সাথে যুক্ত হবে।
২। এই প্রবিধানে, যদি কোনকিছু মূল বিষয় বা প্রসঙ্গ বিরুদ্ধ না হয়, রাজনৈতিক দল বলতে বোঝায় এমন একদল ব্যক্তি যারা কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করার জন্য কোন রাজনৈতিক মতকে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
৩। কোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি এমন কোন মতামত প্রচার করবে না যা পাকিস্তানের নিরাপত্তা, আদর্শ এবং সংহতির জন্য বিদ্বেষমূলক অথবা the Legal
Framework order.1970 (P.O No. 2 of 1970) এর ধারা ২০ এ ঘোষিত নীতিসমূহের সঙ্গে বৈরিতাপূর্ন।
৪। রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি জন্য নিষিদ্ধ রাজনৈতিক কার্যক্রমসমুহঃ
ক) বলপ্রয়োগ, সংঘাত, ভীতি প্রদর্শন অথবা আঘাত করার হুমকি প্রদান কিংবা কোন বিষয়ে কারো সমর্থন আদায়ের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদান।
খ) এমন আচরণ যা কোন ব্যক্তির জান-মালের ক্ষতি সাধন করে।
গ) সরকারি অফিস, কর্পোরেশান কিংবা বিধিবদ্ধ কোন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ।
ঘ) সরকারি অফিস, কর্পোরেশান কিংবা বিধিবদ্ধ কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিকে তার কর্তব্য পালনে পালনের সময় প্ররোচিত করা কিংবা প্ররোচিত করার প্রচেষ্টা।
ঙ) এমন কোন কার্যক্রম যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
চ) গণমাধ্যম কিংবা গণমাধ্যম কার্যালয়ে এমন কোন চাপ প্রয়োগ কিংবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কার্যক্রম যা তাদের মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
ছ) অন্য কোন রাজনৈতিক দলের বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনার ক্ষেত্রে শিষ্টাচারের সীমা লঙ্ঘন করে এমন আচরণ।
অথবা
এইচ) জাতীয় পরিষদের নির্বাচন, প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন কিংবা উপনির্বাচন সম্পাদনের ক্ষেত্রে বাঁধা প্রদান কিংবা তার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালনো।
৫ (১) এ প্রেক্ষিতে যেন জেলা প্রশাসক কিংবা তার অনুমোদিত ব্যক্তি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে সেই উদ্দেশ্যে তাদের ক্ষমতা প্রদান করা হবে যেন একাধিক রাজনৈতিক দলের মিছিল বা সভা কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে যেকোন প্রকারের সংঘাত এড়িয়ে চলা যায়। কোন ব্যক্তি যদি কোন রূপ সভা-সমাবেশ বা মিছিলের আয়োজন করতে চায় সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক কিংবা তার অনুমোদিত ব্যক্তির নিকট উপযুক্ত কারণ প্রদর্শনপুর্বক প্রস্তাবিত কর্মসূচির দিন-তারিখ-সময় রুট এর তথ্য লিখিতভাবে জানাতে হবে।
(২) উপ-অনুচ্ছেদ এক এ বর্ণিত এমন কোন বিজ্ঞপ্তি যদি জেলা প্রশাসক কিংবা তার অনুমোদিত ব্যক্তি গ্রহণ করে থাকেন এবং তাতে যদি এক বা একাধিক দলের সভা-সমাবেশ কিংবা মিছিলের আবেদন থাকে এবং তা যদি একই তারিখে হয়, সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক কিংবা তার অনুমোদিত ব্যক্তি সভা বা মিছিল আয়োজনে অসুবিধা দূরীকরণ অথবা সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তার বিবেচনামত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
৩) কোন জন সভা কিংবা শোভাযাত্রা উপ-অনুচ্ছেদে (১) এ বর্নিত পুর্ব ঘোষণা ছাড়া এবং উপ-অনুচ্ছেদে (১) এ বর্ণিত নির্ধারিত স্থান ছাড়া অনুষ্ঠিত হতে পারবে না।
৪) কোন রাজনৈতিক গণ সমাবেশে কিংবা শোভাযাত্রায় কোন ব্যক্তি ভয়ংকর অস্ত্র কিংবা কাউকে আঘাত করা যায় এমন কোন বস্তু বহন করতে পারবে না।
৭ (এ) কোন ব্যক্তি যখন কোন সমাবেশে বক্তব্য দিবে এমন কোন বক্তব্য প্রদান করবে না-
বি) উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এমন বক্তব্য যার দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল, সম্প্রদায়, বর্ণ, গোত্র, উপদল, উপজাতির এবং প্রচারিত ধর্মসমূহের মধ্যে বিদ্বেষ এবং বৈরিতা তৈরি করে।
সি) জনগণকে উত্তেজিত এবং সংঘাত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বক্তব্য।
৮। কোন রাজনৈতিক সমাবেশে এমন কোন প্ল্যাকার্ড, পোস্টার কিংবা স্লোগান প্রদর্শন করা যাবে না ।
এ) ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায়, বর্ণ, গোত্র, উপদল, উপজাতি এবং ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের মধ্যে বৈরিতা কিংবা বিদ্বেষ তৈরি করে।
বি) মানুষের ভেতর উত্তেজনা তৈরি করে সংঘাতের মাধ্যমে জান-মালের ক্ষতি করে,
৯) কোন রাজনৈতিক দল কর্তৃক আয়োজিত কোন শোভাযাত্রা কিংবা সমাবেশে কোন ব্যক্তি বাঁধা প্রদান কিংবা ব্যহত করার চেষ্টা কিংবা বাঁধা প্রদান কিংবা ব্যহত করার কারণ হবে না।
১০) কোন ব্যক্তি রাজনৈতিক দলের সদস্য বা বার্তাবাহক, রাজনৈতিক সমাবেশ কিংবা শোভাযাত্রার আয়োজন করতে পারবে না যদি সে ব্যক্তি
এ) কোন অপরাধে কিংবা রাজনৈতিক কোন অপরাধের জন্য আদালত কর্তৃক কারাদন্ড কিংবা নির্বাসন দণ্ড ভোগ করে থাকে তবে তার শাস্তি ভোগের ৫ বছর সময়কাল অতিক্রম করার পূর্বে।
বি) পাকিস্তান সরকারের কোন সরকারি অফিস, কর্পোরেশান কিংবা বিধিবদ্ধ কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় চাকরীচ্যুত, কিংবা বরখাস্ত হওয়ার ৩ বছর সময় অতিক্রম হওয়ার পুর্বে।
১১) প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক কর্তৃক জারিকৃত ‘সামরিক আইন বিধি নাম্বার ৭৬’ এর দ্বারা বাতিল হল।
১২) এ বিধির যেকোন প্রবিধানের বিরুদ্ধাচারণ অবশ্যই শাস্তিযোগ্য এবং বিরুদ্ধাচারণের জন্য ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং তা ৫ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৯৭। জনসাধারনের উদ্দ্যেশ্যে কয়েকটি সরকারী ঘোষোণা (সাহায্য,নিলাম,উপনির্বাচন) | জনসংযোগ বিভাগ দিনাজপুর | ১৪ অক্টোবর, ১৯৭১ |
তারিখঃ ১৪ অক্টোবর, ১৯৭১
আগামী ১৮ই অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় এসডিও সাহেবের বাড়ির নিকট রিলিফ গোডাউনের সম্মুখে অনেকগুলো জিনিস প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রয় হইবে।
জিনিসের নামঃ রেডডও, হ্যাজাক লাইট, স্টোভ, টেবিল ও দেওয়াল ঘড়ি, গ্রামোফোন, রিফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল ইত্যাদি। বিস্তারিত বিবরণ রিলিফ অফিসে পাইবেন।
দিনাজপুর জেলার জাতীয় পরিষদসমূহের উপনির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের নিকট হইতে নমিনেশন পেপার রিটার্নিং অফিসারের নিকট দাখিলের তারিখ ২০শে অক্টোবর, নমিনেশন পেপার বাছাই করার তারিখ ২২শে অক্টোবর, নমিনেশন পেপার প্রত্যাহার করার শেষ তারিখ ২৮ অক্টোবর।
প্রাদেশিক পরিষদসমূহের উপনির্বাচনের জন্যে নমিনেশন পেপার গ্রহণ করা হইবে ২১শে অক্টোবর, নমিনেশন পেপার বাছাই করা হইবে ২৩শে অক্টোবর, নমিনেশন পেপার প্রত্যাহার করার শেষ তারিখ ২৮ অক্টোবর।
বাড়িঘর মেরামতের খয়রাতি সাহায্য পাওয়ার দরখাস্তের ফরম যাহারা এখনও জমা দেন নাই, তাহারা যান ১৫ অক্টোবর মধ্যে টাউন হলের পার্শব পিস কমিটির অফিসে অবিলম্বে জমা দেন।
প্রত্যেক রাত ১২টা পর্যন্ত কারফিউ বলবত থাকিবে।
বাই অর্ডার-
এম, এল এডমিনেস্ট্রেটর
দিনাজপুর
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৯৮। রাজাকারদের প্রতি জেনারেল নিয়াজীর আহবান | দৈনিক পাকিস্তান | ২০ অক্টোবর, ১৯৭১ |
জেনারেল নিয়াজী- রাজাকারদের প্রতি নিঃস্বার্থ সেবায় আহবান
পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক ও ‘খ’ অঞ্চলে সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেনারেল এ,এ,কে নিয়াজী গতকাল মংগলবার রাজাকারদের প্রতি শৃংখলা ও জাতির প্রতি নিঃস্বার্থ সেবার গুনাবলী অর্জনের আহবান জানান। এপিপির খবরে প্রকাশ, জেনারেল নিয়াজী পাবনায় রাজাকারদের এক সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। এতে শান্তি কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জেনারেল নিয়াজী স্থানীয় ট্রেনিং স্কুলে ট্রেনিং গ্রহণরত রাজাকারদের পরিদর্শন করেন। জিওসি তার সাথে ছিলেন। জেনারেল রাজাকারদের বলেন যে, তাদেরকে দেশ রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব মহান সুযোগ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন যে, এই মহান দায়িত্ব পালনের জন্য গভীর শৃংখলাবোধ ও আদর্শের প্রতি নিঃস্বার্থ নিষ্ঠার প্রয়োজন। জেঃ নিয়াজী বলেন যে, পাকিস্তান রক্ষা করা প্রকৃতভাবে তাদের নিজেদের বাড়ীঘর রক্ষার শামিল। তিনি বলেন যে, মানুষের জন্যে মৃত্যু অনিবার্য। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু হচ্ছে গৌরবমন্ডিত। তিনি বলেন যে, এর স্বারা তার সমস্ত পাপ মুছে যায় এবং সে আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হয়। এর আগে পাবনায় পৌছলে এক বিরাট উতফুল্ল জনতা জেঃ নিয়াজী কে সংবর্ধনা জানায়। পরে তিনি রাজশাহী যান। সেখানে তিনি ছাত্র ও বিশিষ্ট নাগরিকদের এক বিরাট সমাবেশে ভাষণ দেন। তিনি শান্তি কমিটির সদস্যদের সাথে দেখা করেন। রাজশাহী সমাবেশে ভাষনদানকালে জেনারেল নিয়াজী বলেন যে, অভ্যন্তরীন গোলযোগ বা দেশদ্রোহীদের চক্রান্তের দ্বারা দুর্বল হয়ে পড়া ছাড়া মুসলমানেরা ইতিহাসে আর কখনও পরাজয় বরণ করেনি।
তিনি ভাষাগত ও সংকীর্ণ সংস্কারের উস্কানি দিয়ে জনসাধারনের মধ্যে বভেদ সৃষ্টি করতে চায় এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্যে জনগনের প্রতি আহবান জানান। প্রেসিডেন্ট যে সাধারন ক্ষমা প্রদর্শন করেছেন সে সম্পর্কে জেঃ নিয়াজী বলেন যে, যারা ফিরে এসেছে তাদের সবাই ক্ষমা ও পূনর্বাসন করা হয়েছে।
তিনি দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রতি শত্রুর ঘৃণ্য উদ্দ্যেশ্য নস্যাত করে জাতিগঠনের কাজে আত্মনিয়োগের উদ্দ্যেশ্যে দেশে ফিরে আসার ব্যাপারে আহবান জানান। তিনি বলেন যে, যে কোন ঘরোয়া বিরোধ থাকলে তাতে প্রতিবেশীদের অযথা হস্তক্ষেপের সুযোগ না দিয়ে ঘরের মধ্যেই তার সমাধান করা উচিৎ। পুল উড়িয়ে দিয়ে বা খাদ্যশস্য পরিবহনে বা শিল্প উতপাদনে বাধা দিয়ে যারা সাধারন মানুশের জন্যে অর্থনৈতিকভাবে অসুবিধার সৃষ্টি করতে চাচ্ছে তাদের সনাক্ত ও নির্মুল করার জন্যে তিনি জনসাধারনের আহবান জানান। জেনারেল নিয়াজী ভাষনের পুর্বে স্থানীয় জনগন সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা বক্তৃতা ও কবিতা পাঠ করেন।
তারা মাতৃভূমির প্রতিরক্ষার জন্য তাদের শেষ রক্তবিন্দু বিসর্জনের শপথ গ্রহণ করে। সবার শেষে জেনারেল নিয়াজী গারীতে রাজশাহী বাজারের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় সেনাবাহিনীর দফতরে যান। সেখানে তাকে রাজশাহী জেলার সীমান্ত এলাকা থেকে সম্প্রতি উদ্ধারকৃত বিপুল পরিমান অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য দেখানো হয়।
স্থানীয় কমান্ডার জেনারেল নিয়াজীকে জানান যে, বর্ষা শেষ হবার সাথে সাথে দুস্কৃতিকারীদের তৎপরতা ক্রমশ কমে আসছে। জেনারেল নিয়াজী সৈন্যদের পরিদর্শন করেন এবং তাদের সাথে ঘরোয়াভাবে আলাপ করে। তিনি দেশ রক্ষার জন্য তাদের পুরোপুরি প্রস্তুত ও তাদের উচ্চ মনোবল লক্ষ্য করেন।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৯৯। ডোমারে জেনারেল নিয়াজী | দৈনিক পাকিস্তান | ৪ নভেম্বর, ১৯৭১ |
ডোমারে জেনারেল নিয়াজী
ভারত প্রদেশবাসীর শুভাকাঙ্ক্ষীর
হতে পারে না
.
পূর্বাঞ্চলের কমান্ডারের কমান্ডার ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসন লাফটেন্যান্ট জেনারেল এ, কে, নিয়াজী বলেছেন, যে ভারত প্রতিদিন আমাদের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর উপর গোলাবর্ষণ করে বহু নিরাপরাধ নারী- পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছে সে পূর্ব পাকিস্তানের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়, জেনারেল নিয়াজী গতকাল রংপুর জেলার নীলফামারীর উত্তরে ডোমারে শান্তি কমিটির সদস্যদের এক সমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন।
তিনি ঐ এলাকায় এক দিনের সফর করেন। জেনারেল নিয়াজী রংপুর এবং লালমনিরহাটও সফর করেন। উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসারগণও তাঁর সাথে ছিলেন। জেনারেল নিয়াজী স্বাধীনতা পূর্বকালে হিন্দু শাসনাধীনে উপমহাদেশের মুসলমানদের দুর্দিনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, ভারত আবারও এই প্রদেশকে তাঁর পদানত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি ভারতের দুরভিসন্ধি সতর্ক থাকার জন্য জনগণকে হুঁশিয়ার করে দেন এবং মুসলিম জাতি হিসাবে স্বাধীনতার মূল্য উপলব্ধি করার আহ্বান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, দাসত্বের জীবনযাপনের চেয়ে মাতৃভূমির জন্য মৃত্যুবরণ অনেক সম্মানজনক। ভারতের কথা ও কাজের মধ্যে অসঙ্গতির উল্লেখ করে জেনারেল নিয়াজী বলেন, একদিকে ভারত পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্য দরদ দেখিয়ে গর্ববোধ করছে, অপরদিকে আমাদের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর উপর অবিরত গোলাবর্ষণ করে বহু নিরাপরাধ নারী- পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করছে। তিনি আরও বলেন যে, ভারত অন্তর্ঘাতীদের ট্রেনিংদান ও অস্ত্রসজ্জিত করে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়ে জনগণের দুর্দশা বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছুই লাভ করছে না।
তিনি জিজ্ঞাসা করেন, আই অংশের জনগণের জন্য ভারতের সমবেদনা দেখানোর কি এইটাই পন্থা? জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তানের শত্রুদের বিতারনে রংপুর জেলার জনগণের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। এ ব্যাপারে রাজাকারদের কথা বিশেষ করে উল্লেখ করে বলেন যে, রাজাকাররা পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষার জন্য মূল্যবান প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন প্রত্যেক মুসলমান ইসলাম ও তাঁর মাতৃভূমির জন্য একজন নিবেদিত মুজাহিদ।
এর আগে সেখানকার স্থানীয় কমান্ডার রাজাকার আল- বদর ও আল- শামস বাহিনীর তৎপরতার কথা জেনারেল নিয়াজীকে জানান। এরাও স্বতন্ত্রভাবে ও নিয়মিত সৈন্যদের সাথে একযোগে বিভিন্ন দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে পালন করে যাচ্ছে। স্থানীয় কমান্ডার নিয়াজীকে জানান যে, প্রধানত রাজাকদের সদা জাগ্রত থাকার দরুনই আই এলাকার ভারতীয় চরেরা একটিও সেতু অথবা কালভার্ট ধ্বংস করতে পারে নি। সম্প্রতি ভারতীয় চরদের সঙ্গে সৈন্য ও রাজাকারদের বিভিন্ন সংঘর্ষে যেসব অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরকদ্রব্য আটক করা হয় জেনারেল নিয়াজী তাও দেখেন। জেনারেল মোটরযোগে ডোমার ও লালমনির হাটের যান। সেখানে রাস্তার দু’পাশের সারিবদ্ধ জনতা জেনারেলকে দেশাত্মবোধক ধ্বনি দিয়ে অভিনন্দন জানায়।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২০০। সামরিক আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ও ৪ জন অধ্যাপকের দণ্ড ঘোষণা | দৈনিক পাকিস্তান | ১০ নভেম্বর, ১৯৭১ |
চারজন প্রফেসর দণ্ডিত
ঢাকার বিশেষ সামরিক আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন প্রোফেসরকে দণ্ডিত করা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেককে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রেস রিলিজে উল্লেখ করা হয়েছে।
এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয় যে, তাদের শম্পদের শতকরা পঞ্চাশ ভাগ বাজেয়াপ্ত করারও নিরদেশ দেয়া হয়েছে।
এই চারজন অধ্যাপকের বিচার তাদের অনুপস্থিতিতেই করা হয়েছে।
২৫ নম্বর সামরিক বিধির অধীনে আনীত অভিযোগসমূহের জবাবদানের জন্য তাদেরকে গত ৮ই সেপ্টেম্বর ঢাকার ৬ নম্বর সেক্টরের এসএলএমএ- র আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
দণ্ডিত প্রফেসরগণ হচ্ছেনঃ
১। প্রফেসর মজাফফর আহমদ চৌধুরী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২। প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৩। প্রফেসর সারোয়ার মুরশেদ, ইংরেজী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৪। প্রফেসর মযহারুল ইসলাম, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২০১। ১৩ জন সি, এস, পি সহ ৫৫ জন অফিসারকে দণ্ড ঘোষণা | দৈনিক পাকিস্তান | ১০ নভেম্বর, ১৯৭১ |
সামরিক আদালতে-
১৩ জন সিএসপি সহ ৫৫ জন
অফিসার দণ্ডিত
ঢাকার বিশেষ সামরিক আদালত পূর্ব পাকিস্তানে নিয়োজিত ১৩ জন সিএসপি অফিসারকে দণ্ডিত করেছেন। আদালতে এঁদের প্রত্যেককে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
এপিপির খবর প্রকাশ, দণ্ডিত অফিসারদের সম্পত্তির শতকরা ৫০ ভাগ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অফিসারগণ আদালতে হাজির হতে ব্যর্থ হওয়ায় ৪০ নম্বর সামরিক আইন মোতাবেক তাদের অনুপস্থিতিতেই তাদের বিচার করা হয়। এসব অফিসারকে ২৫ নম্বর সামরিক আইন বিধি মোতাবেক দায়েকৃত অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য ৬ নম্বর সেক্টরের শাব মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটের সামনে হাজির হতে বলা হয়েছে।
আদালতে এদের প্রত্যেককে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। এদের ৫০ ভাগ সম্পত্তি বাজেয়াফত করা হয়েছে।
শেষোক্ত অফিসারদেরকেও তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার করা হয়েছে। তাদেরকে ২৫ নম্বর সামরিক আইন বিধি মোতাবেক অভিযোগের জবাব দেবার জন্য ১৯৭১ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর ৬ নং সেক্টরের সাব- মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটরের আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
দণ্ডিত অফিসারগণ হচ্ছেনঃ
১। কে, এইচ আসাদুজ্জামান, জয়েন্ট সেক্রেটারী, ফিনান্স ডিপার্টমেন্ট, ঢাকা, সিএসপি।
২। এইচ, টি, ইমাম, ডিসি, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিএসপি।
৩। জনাব আবদুস সামাদ, ডিসি, সিলেট, সিএসপি।
৪। মোহাম্মদ এন কিউ খান, ডিসি, পাবনা, সিএসপি।
৫। সৈয়দ আবদুস সামাদ, রিহ্যাবিলিটেশন অফিসার, চট্টগ্রাম, সিএসপি।
৬। কুদরত- ই এলাহী চৌধুরী, এডিশনাল ডিসি, রাজশাহী, সিএসপি।
৭। মোহাম্মদ খুশরুজ্জামান চৌধুরী, এসডিও, কিশোরগঞ্জ, সিএসপি।
৮। কাজী রুকুনউদ্দীন আহমদ, এসডিও, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিএসপি।
৯। ওয়ালিউল ইসলাম, এসডিও, বগুড়া, সিএসপি।
১০। আকবর আলী খান, এসডিও, হবিগঞ্জ, সিএসপি।
১১। কামাল উদ্দীন সিদ্দীক, এসডিও নড়াইল, সিএসপি।
১২। মোহাম্মদ তৌফিক- ই ইলাহী চৌধুরী, এসডিও মেহেরপুর, সিএসপি।
১৩। সাদত হোসেন, এ্যাসিসটেন্ট কমিশনার, যশোর, সিএসপি।
১৪। আলতাব হোসেন খান, ইপিসিএস, পাবনা।
১৫। যিতেন্ত্র লাল চক্রবর্তী, ইপিসিএস, ফরিদপুর।
১৬। আলতাব হোসেন, ইপিসিএস, রংপুর।
১৭। এ, কিউ, এম কামরুল হুদা, ইপিসিএস, ময়মনসিংহ।
১৮। মোঃ আবদুল মতিন সরকার, ইপিসিএস, রংপুর।
১৯। হেলাল উদ্দিন কান, ইপিসিএস, ময়মনসিংহ।
২০। আবদুল লতিফ, ইপিসিএস, রাজশাহী।
২১। আবদুল হালিশ, ইপিসিএস, টাঙ্গাইল।
২২। জিয়াউদ্দীন আহমদ, ইপিসিএস, ঢাকা।
২৩। খিতিশ চন্দ্র কুণ্ডু, ইপিসিএস, ঢাকা।
২৪। কাজী লুৎফর হক, ইপিসিএস, ঢাকা।
২৫। মাখন চন্দ্র মাঝী, ইপিসিএস, ঢাকা।
২৬। মোঃ মিজানুর রহমান, ইপিসিএস, নোয়াখালী।
২৭। আবদুল কাদের মুন্সি, ইপিসিএস, খুলনা।
২৮। দ্বীজেন্দ্র নাথ ব্যাপারী, ইপিসিএস, বাকেরগঞ্জ।
২৯। মানিক লাল সমাদ্দার, ইপিসিএস, ফরিদপুর।
৩০। আলতাব উদ্দীন, ইপিসিএস, সিলেট।
৩১। ক্ষান্ত মোহন দাস, ইপিসিএস, সিলেট।
৩২। আমিয়াংশু সেন, ইপিসিএস, সিলেট।
৩৩। মোঃ ইসহাক, ইপিসিএস, চট্টগ্রাম।
৩৪। মোঃ আবদুল আলী, ইপিসিএস, ফরিদপুর।
৩৫। এ কে এম রুহুল আমিন, ইপিসিএস, কুমিল্লা।
৩৬। ইয়াকুব শরিফ, ইপিসিএস, বাকেরগঞ্জ।
৩৭। প্রিয়দারঞ্জন দাস, ইপিসিএস, চট্টগ্রাম।
৩৮। জ্ঞানরঞ্জন সাহা, ইপিসিএস, বরিশাল।
৩৯। অমরেন্দ্র মজুমদার, ইপিসিএস, নোয়াখালী।
৪০। গোলাম আকবর, ইপিসিএস, ঢাকা।
৪২। অনিল চন্দ্র সাহা, ইপিসিএস, ময়মনসিংহ।
৪৩। সুবির কুমার ভট্টাচার্য, ইপিসিএস, বরিশাল।
৪৪। আবদুল লতিফ ভূঁইয়া, ইপিসিএস, কুমিল্লা।
৪৫। এ, এইচ, এম আবদুল হাই, ইপিসিএস, রাজশাহী।
৪৬। মোঃ আমানত উল্লাহ, ইপিসিএস, ঢাকা।
৪৭। রিয়াজুর রহমান, ইপিসিএস…..
৪৮। এ এস এম রমিজ উদ্দীন, ইপিসিএস (০৮) ঢাকা।
৪৯। জ্যোতিবিনোদ দাস, ইপিসিএস (৪০৪) নোয়াখালী।
৫০। আফি্যুর রহমান, ইপিসিএস, রাজশাহী।
৫১। বিভূতি ভূষণ বিশ্বাস, ইপিসিএস, (১৯৯) ফরিদপুর।
৫২। জিতেন্দ্র লাল দাস, ইপিসিএস (১৮৩) সিলেট।
৫৩। খান আমীর আলী, ইপিসিএস, বরিশাল।
৫৪। যোগেশ চন্দ্র ভৌমিক, ইপিসিএস, কুমিল্লা।
৫৫। জহিরুল হক ভূঁইয়া, ইপিসিএস (১৪৪) ঢাকা।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২০২। খুলনায় শ্রমিক সমাবেশে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী | দৈনিক পাকিস্তান | ১৫ নভেম্বর, ১৯৭১ |
খুলনায় শ্রমিক সমাবেশে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী
ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের শিল্প উৎপাদন
বাড়ানোর আহ্বান
.
খুলনা, ১৪ই নভেম্বর (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী শিল্প শ্রমিকদের প্রতি সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের শিল্পোন্নয়নের গতি বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন। জেনারেল ফরমান আলী আজ খালিশপুর হাউসিং ষ্টেট ময়দানে পূর্ব পাকিস্তান লেবার ফেডারেশন আয়োজিত এক বিরাট শ্রমিক সমাবেশ ভাষণ দিচ্ছিলেন।
তিনি শ্রমিকদের প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছিন। কারণ উৎপাদন বাড়লে শুধু দেশ নয় শ্রমিক মালিক সবাই উপকৃত হবে, তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সব সময় শ্রমিকের কল্যাণ চেয়েছে। ১৯৬৯ সালে সরকার শ্রমিকদের বেতন ৮৫ টাকা থেকে ১২৫ টাকায় বৃদ্ধি করেছেন। জেনারেল ফরমান আলী বলেন, মিলগুলোতে উৎপাদন না বাড়লে এবং শান্তি না থাকলে মালিক পক্ষ কর্মসংস্থানও বাড়াতে পারবেন না।
শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রমিকদের রাজনৈতিক ট্রেড ইউনিয়ন তৎপরতায় লিপ্ত হওয়া উচিৎ নয়, কারণ তাতে তাদের ভালো হবে না। তিনি বলেন, সুস্ত ট্রেড ইউনিয়ন দেশে আদর্শ শ্রমিক বাহিনী গড়ে তুলতে সাহায্য করে, যা দেশের আর্থিক দিক দিয়ে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার সহায়ক হবে।
ভারতের যুদ্ধের হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বিপুল হর্ষধনির মধ্যে বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত। বাইরের কোন শক্তি পাকিস্তানের সংহতি ও অখণ্ডতা বিনষ্ট করতে সক্ষম হবে না। জেনারেল বলেন, খুলনা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য স্থানের যে উন্নতি ঘটেছে, তা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ফলেই সম্ভব হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার আগে এসব এলাকা হিন্দুদের শোষণের চরণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ভারতের তথাকথিত ‘বাংলাদেশ’ প্রচারণা সম্পর্কে জেঃ ফরমান আলী ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষতি না করে পশ্চিমবঙ্গকে স্বাধীনতা প্রদানের আহ্বান জানান।
.
.
শিরোনামঃ ২০৩। পরিখা খননের নির্দেশ
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ১৯ নভেম্বর, ১৯৭১
.
প্রেস নোট
ভবন প্রাঙ্গনে অবিলম্বে পরিখা খনন
সমাপ্ত করতে হবে
.
প্রদেশের বিভিন্ন গুরুত্ত্বপূর্ণ শরের বিল্ডিংসমূহের মালিক তথা দখলদারিদের অবিলম্বে পরিখা খননের কাজ সমাপ্ত করার ব্যাপারে তাদের দায়িত্বের কথা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রেস নোটে সরকার জানানঃ এটা উল্লেখযোগ্য যে কিছু দিন আগে এক সরকারী প্রেস নোটে প্রদেশের সকল গুরুত্বপুর্ন শহরের বিভিন্ন সুবিধাজনক জায়গায় পরিখা খননের সরকারী সিদ্ধান্ত বিষয়ে ঘোষণা করা হয়।
সরকারের এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা ও অপর কতিপয় শহরে অবশ্য কিছু কিছু পরিখা খনন করা হয়েছে। এসব পরিখা বাজার, পার্ক ও রাস্তার পার্শ্বেই প্রধানত খনন করা হয়েছে।
তাই উপরোক্ত ধরণের বিল্ডিংসমূহের মালিক তথা দখলদারীদের এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্বের কথা আর একবার স্মরণ করিয়ে দেয়া যাচ্ছে এবং বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে পরিখা খননের কাজ সমাপ্ত করার অনুরোধ জানান যাচ্ছে। এপিপি এ খবর পরিবেষণ করে।
.
.
শিরোনামঃ ২০৪। ভারতের সর্বাত্মক আক্রমণ
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১
.
যশোর সীমান্তে সাঁজোয়া বাহিনী
জঙ্গী বিমান ও ট্যাঙ্ক ব্যবহার
১৮ টি ট্যাঙ্ক খতিগ্রস্তঃ
৬৩০ জন ভারতীয় সৈন্য হতাহত
সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় হামলা
আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই
পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে
ভারতের সর্বাত্মক আক্রমণ
.
আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই ভারত পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়েছে। কয়েক মাসব্যাপী ছোট ছোট হামলা, ছোট-বড় সংঘর্ষ এবং পূর্ব পাকিস্তানের চারদিকে সুপরিকল্পিতভাবে ১২ টি পদাতিক ডিভিশন মতায়নের পর এই হামলা চালানো হলো।
গতকাল সোমবার ঢাকায় এপিপি পরিবেশিত খবরে প্রকাশ, ভারতীয়রা আন্তর্জাতিক সীমান্ত আক্রমণ করে আমাদের এলাকায় খানিকটা ঢুকে পড়তে সক্ষম হয়, কারণ কেউ এটা ভাবতে পারেননি যে, তারা সকল প্রকার আন্তর্জাতিক রীতিনীতি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করবে এবং হীনভাবে এক সর্বাত্মক হামলা চালাবে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী যশোর সেক্টরে তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে। সেখানে ৯ ভারতীয় পদাতিক ডিভিশন, ৪ ভারতীয় মাউন্টেন ডিভিশন ও দুটি ভারতীয় ট্যাঙ্ক রেপিমেন্ট আক্রমণ চালায়।
যশোরে সারা রাত এবং সকালেও প্রচণ্ড লড়াই চলতে থাকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বহু সৈন্য হতাহত হয়, কিন্তু ভারী ও প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের ফলে তাঁরা তাদের আহত সৈন্যদের এবং অধিকাংশ মৃতদেহ সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়। উক্ত এলাকায় যে কিছু সংখ্যক মৃতদেহ পড়ে থাকে তাতে দেখা যায় যে, ৪২ ভারতীয় মাউন্টেন ব্রিগেড ও ৩৫০ ভারতীয় মাউন্টেন ব্রিগেড এই আক্রমণ নেতৃত্ব দেয়। প্রাথমিক রিপোর্টে প্রকাশ, ১৩০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছে। এক হিসাবে প্রকাশ, সম্ভবত ৫০০ ভারতীয় সৈন্য আহত হয়েছে।
পাকিস্তানী সৈন্যদের মধ্যে হতাহতের সংখ্যা হচ্ছে ৭ জন নিহত ও ৪০ জন আহত। পাকিস্তানী সৈন্যরা ১৮ টি ভারতীয় ট্যাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত করলে যশোরে ভারতীয় সাঁজোয়া হামলা ব্যর্থ হয়ে যায়। আরো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এই আশংকায় ভারতীয় সাঁজোয়া বাহিনী তাদের বিশ্বাসঘাতকমূলক ও কাপুরুষোচিত হামলা বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যশোর সীমান্তে সাফল্যজনকভাবে ভারতীয় আক্রমণ প্রতিহত করে। এখনো লড়াই চলছে।
যশোরে ভারতীয় ন্যাট ও মিগ বিমানগুলোও হামলায় অংশগ্রহণ করে এবং পাকিস্তানী এলাকায় অনেকখানি অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নভারন, সারসা, মানুরা নামক তিনটি গ্রামের অসামরিক বাসিন্দাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। ভারতীয় বিমান বাহিনী এভাবে ৭৯ জন অসামরিক ব্যক্তিকে নিহত ও ১৩০ জনকে আহত করে। ডিভিশন ও কতিপয় ট্যাঙ্কের সাহায্যে আক্রমণ চালানো হয়।
দিনের শুরুতেই এই আক্রমণ চালানো হয়। সংখ্যা অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানী সৈন্যরা সুপরিকল্পিত ও কৌশলী তৎপরতার মাধ্যমে সাফল্যজনকভাবে ভারতীয় বাহিনীর হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী শত্রুর ৫৮ জন সৈনিককে হতাহত করে। আমাদের পক্ষের ১১ জন প্রাণ হারায়।
ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাওয়া খবরে প্রকাশ, ২৩ মাউন্টেন ডিভিশনের দুটি ব্রিগেড চট্টগ্রাম সেক্টরের উত্তর-পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাকিস্তানী অবস্থানগুলো আক্রমণ করে। আশংকা করা হচ্ছে যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় পূর্ব পাকিস্তানে আরো কয়েকটি ফ্রন্ট খুলবে। ইতিমধ্যে যশোর, সিলেট ও চট্টগ্রাম সেক্টর থেকে সংঘর্ষের আরো খবর এসে পৌঁছেছে।
পাকিস্তানী সৈন্যরা গত রোববার যশোরের উত্তর-পশ্চিমে এক রেজিমেন্ট ট্যাঙ্কের সমর্থনপুষ্ট নিয়মিত ভারতীয় বাহিনীর দুটো পদাতিক ব্রিগেড শক্তির এক বড় রকমের হামলা প্রতিহত করেছে। ঢাকায় প্রাপ্ত খবরে এ কথা জানা গেছে বলে এপিপির খবরে প্রকাশ।
ইউনিটগুলো প্রথম জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলস ও ৩৫০ নম্বর পদাতিক ব্রিগেডের ৪ নম্বর শিখ নাইটের অন্তর্ভুক্ত। পাকিস্তানী সৈন্যরা সাফল্যের সাথে হামলাকারীদের হটিয়ে দেয়। সংঘর্ষে শত্রুদের ৯০ জন নিহত ও ১৬০ জন আহত হয়। পাকিস্তানীদের পক্ষে ৪ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়। এক সংঘর্ষে শত্রুদের ৭ টি ট্যাঙ্ক বিদ্ধস্ত হয়। রোববারের হামলাটি ছিল পূর্ববর্তী ভারতীয় হামলাগুলোর চেয়ে বেশী মারাত্মক।
সারা রাত ভারতীয় ফিল্ডগান ও মাঝারী ও ভারী মর্টারের গোলাবর্ষণ করা হয়। ভোরের দিকে গোলাবর্ষণ থামলে সাঁজোয়া বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট ভারতীয় সৈন্য ও তাদের চররা পাকিস্তানী অবস্থানগুলির ওপর হামলা চালায়। পাকিস্তানী সৈন্যদের পাল্টা আক্রমণের মুখে ভারতীয় বাহিনী অগ্রসর হতে ব্যর্থ হয়।
কুমিল্লা থেকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, নিয়মিত ভারতীয় সৈন্যদের সমর্থনপুষ্ট ৪ শত ভারতীয় চর কুমিল্লা জেলার লক্ষণীপুর ফাঁড়িতে হামলা চালায়। কিন্তু সে হামলা ব্যর্থ করে দেওয়া হয় এবং বিপুল সংখ্যক হতাহত হওয়ার পর অনুপ্রবেশকারীরা পালিয়ে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর জেলা থেকেও হামলার অনুরুপ খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু সদা জাগ্রত পালিস্তানী সৈন্যরা এসব হামলা পর্যুদুস্ত করে।
অপর দিকে ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনী সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামে গোলাবর্ষণ অব্যহত রেখেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো হচ্ছেঃ
সিলেট আটগ্রাম, রাধানগর, জৈন্তাপুর। কুমিল্লায় কাইয়ুমপুর, মুকন্দপুর, সালদা নদী, অরগঙ্গা, মঙ্গলপুর, হরিমঙ্গল ও বড় জালা। ময়মনসিংহে কামালপুর ও করইতলা। যশোর চৌগাছা। কুষ্টিয়া দর্শনা। রংপুরে অমরখানা।
.
.
শিরোনামঃ ২০৫। দুষ্কৃতকারী ধরে দেয়ার পুরষ্কার ঘোষণা
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৫ নভেম্বর ১৯৭১
.
সরকাররের সিদ্ধান্ত
দুষ্কৃতকারী গ্রেফতার বা খবরের জন্য
পুরষ্কার দেওয়া হবে
.
যে সব অনুগত্য ব্যক্তি দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতারের মত নির্ভরযোগ্য খবর দেবে বা নিজেরা দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের কাছে পেশ করবে সরকার তাদের যথোপযুক্ত পুরষ্কার দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে গতকাল বুধবার এক প্রেসনোটে জানান হয়েছে।
ক) দুষ্কৃতকারী গ্রেফতার অথবা দুষ্কৃতকারীদের সাথে সফল মোকাবেলার জন্য খবর দেওয়ার জন্য ৫০০.০০ টাকা।
খ) ভারতের ট্রেইনিং প্রাপ্ত দুষ্কৃতকারী গ্রেফতারের জন্য ৭৫০.০০ টাকা।
গ) রাইফেল, বোমা, বা ডুপ্লিকেটিং মেশিন বা অপরাধ করা যায় এমন অন্য কোন আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতারের জন্য ১০০০.০০ টাকা।
ঘ) দুষ্কৃতকারী দলের নেতা গ্রেফতারের জন্য ২০০০.০০ টাকা
বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ উদ্ধার অথবা দুষ্কৃতকারীদলের নেতা গ্রেফতারের জন্য ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বড় অংকের পুরষ্কার দেবার বিষয় বিবেচিত হতে পারে।
জেলা পুলিশ সুপারিনটেডেন্ট ১ হাজার টাকা পর্যন্ত পুরষ্কার মঞ্জুর করতে পারবেন।
দুষ্কৃতকারীদের শ্রেণীবিভাগ নিম্নরূপ হবেঃ
ক। তথাকথিত মুক্তিবাহিনীর নিয়মিত সদস্য, তথাকথিত মুক্তিবাহিনী ভর্তিতে সাহায্যকারীরা ।
খ। স্বেচ্ছায় বিদ্রোহীদের খাদ্য, যানবাহন ও অন্যান্য দ্রব্য সরবরাহকারী।
গ। স্বেচ্ছায় বিদ্রোহীদের আশ্রয়দানকারী।
ঘ। বিদ্রোহীদের ‘ইনফরমার’ বা বার্তাবাহকরুপে যারা কাজ করে এবং
ঙ। তথাকথিত মুক্তিবাহিনী সম্পর্কিত নাশকতামূলক লিফলেট, প্যাম্পলেট, প্রভৃতির লেখক বা প্রকাশক।
.
.
শিরোনামঃ ২০৬। যশোরের জনসভায় জেঃ নিয়াজী
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১
.
যশোরের জনসভায় জেনারেল নিয়াজী
জনগন ভারতের হীন দুরভিসন্ধি
সফল হতে দেবে না
.
পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কমান্ডার ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেঃ এ, এ, কে নিয়াজীর সভাপতিত্বে গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় যশোরের জনসাধারণ ভারতীয় হামলা প্রতিহত করার ব্যাপারে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে।
এপিপির খবরে প্রকাশ জনসাধারণ বিপুল সংখ্যক জাতীয় পতাকা এবং ইংরেজী, উর্দু, বাংলায় ‘ভারতকে খতম কর’, ‘রক্ত দিয়ে আমরা জাতীয় সংহতি রক্ষা করব’, ‘আমরা আমাদের বীর সশস্ত্র বাহিনীকে সালাম জানাই’ প্রভৃতি দেশাত্ববোধক শ্লোগান লিখিত বড় বড় ব্যানার বহন করে।
তাঁরা তাদের স্বদেশ রক্ষার কাজে আত্ননিয়োগেও অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। সভায় ভাষণ দানকালে জেঃ নিয়াজী যশোরের জনসাধারণের বীরত্ব পূর্ণ মনোবলের প্রশংসা করেন। যশোরের জনসাধারণকে মুজাহিদ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন যে, যশোরের সর্বশেষ ভারতীয় হামলা জনসাধারণের দৃঢ় মনোবলকে ইস্পাততুল্য করেছে জানতে পেরে তিনি পুনরায় আশ্বস্তবোধ করেছে।
জেনারেল নিয়াজী বলেন, পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিকই বিশ্বস্তভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সহযোগিতা প্রদান করে প্রতিরক্ষার কাজে সহায়তা করতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা এক বিশ্বাসঘাতক শত্রুর সম্মুখীন হয়েছি। তাঁরা অভ্যন্তরীন কোন্দল তথা সরাসরি আক্রমণের দ্বারা আমাদের পরাজিত করতে চায়। কিন্তু পাকিস্তানের জনসাধারণ তাঁর সে হীন দুরভিসন্ধি সফল হতে দেবে না বলে তিনি ঘোষণা করেন। জেঃ নিয়াজী সংক্ষেপে উপমহাদেশের ইতিহাসের রূপরেখা বর্ণনা করে স্বাধীনতা পূর্বকালীন মুসলমানদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ভারত মুসলমানদের তাঁর অধীনস্থ করার জন্য পুনরায় চেষ্টা করছে, কিন্তু তাঁকে সে সুযোগ দেওয়া হবে না। জেঃ নিয়াজীর ভাষণের পর সশস্ত্র বাহিনীর বিজয় ও পাকিস্তানের সংহতির জন্য সভায় মোনাজাত করা হয়।
যশোরে গিয়ে জেঃ নিয়াজী নবনির্বাচিত স্থানীও এম,এন,এ ও শান্তি কমিটির সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। হর্ষোৎফুল্ল বিপুল সংখ্যক তরুণ ও ছাত্র বিভিন্ন ও শ্লোগান ধ্বনি দিয়ে ও ভারতীয় হামলার নিন্দাসূচক প্লাকার্ড বহন করে তাঁকে অভিনন্দন জানায়।
পরে জেঃ নিয়াজী মোটরযোগে যশোর শহরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেন এবং জনসাধারণ তাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত রয়েছেন দেখতে পান।
.
.
শিরোনামঃ ২০৭। রাজাকার কোম্পানী কমান্ডারদের বিদায়ী কুচকাওয়াজে জেনারেল নিয়াজী
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৮ নভেম্বর, ১৯৭১
.
সাভারে বিদায়ী কুচকাওয়াজে জেঃ নিয়াজী
রাজাকারদের উচ্চমনোবল ও
আত্মপ্রত্যয়ের প্রশংসা
.
গতকাল শনিবার ঢাকা থেকে ১৫ মাইল দূরে সাভারে রাজাকার কোম্পানী কমাণ্ডারদের প্রথম দলের বিদায়ী কুচওকায়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এপিপি পরিবেশিত এই খবরে প্রকাশ, ইষ্টার্ণ কমাণ্ডার ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন- শাসনকর্তা লেঃ জেঃ এ, এ, কে নিয়াজী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং আভিবাদন গ্রহণ করেন।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কোম্পানী কমাণ্ডারের পদমর্যাদা পর্যন্ত জুনিয়র নেতৃত্ব রাজাকারদের নিজেদের উপরই ন্যস্ত করা হয়েছে। কোম্পানী কমাণ্ডারদের প্রথম দলের দু সপ্তাহ ট্রেনিং গতকাল সমাপ্ত হয়। পরবর্তী কোর্স সোমবার থেকে শুরু। কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের পর জেঃ নিয়াজী এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে তাদের দক্ষতার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন যে, রাজাকারদের প্রসন্ন বদন, আত্মপ্রত্যয় ও উচ্চমনোবল দেখে তিনি বিশেষভাবে মুগ্ধ হয়েছেন। রাজাকারদের ভূমিকা সম্পর্কে ভাষণদান প্রসঙ্গে তিনি বলে, একদিকে তাদের ভারতীয় চরদের সকল চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে এবং অপরদিকে বিপদগামী যুবকদের সঠিক পথে আনার চেষ্টা করতে হবে।
জেনারেল নিয়াজী কুচকাওয়াজের পর রাজাকার কোম্পানী কমাণ্ডারদের সাথে ঘরোয়া ভাবে দেখা করেন এবং করমর্দন করেন। তারা দেশের সংহতি রক্ষার জন্য দেশপ্রেমমূলক শ্লোগান দেন।
দৈনিক পাকিস্তান
২৮ শে নভেম্বর, ১৯৭১
জেনারেল নিয়াজীর হিলি পরিদর্শন
.
ইষ্টার্ণ কমাণ্ডার ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেঃ এ এ কে নিয়াজী গতকাল শনিবার হিলি এলাকা পরিদর্শন করেন। তিন দিন যাবৎ এখানে তীব্র সংঘর্ষ হচ্ছে। এপিপি পরিবেশিত এই খবরে বলা হয়েছে যে শুক্রবারও সীমান্তের ওপার থেকে পাকিস্তানী অবস্থানের উপর ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনী গোলাবর্ষণ করে।
জেনারেল নিয়াজী যখন সৈন্যদের দেখার জন্য অগ্রবর্তী এলাকার যাচ্ছিল তখন ভারতীয় কামানের ছয়টি গোলা এসে পড়ে। তবে কোন ক্ষতি হয়নি। জেনারেল নিয়াজীর বিভিন্ন বাঙ্কার সৈন্যদের সাথে দেখা করেন। তিনি তাদের সাথে ঘরোয়া ভাবে আলোচনা করেন। তিনি তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও উচ্চমানোবল লক্ষ্য করেন। সংখ্যায় কম হলেও তাঁরা ভারতীয়দের বারংবারের হামলা প্রতিহত করে।
হিলি এলাকা সফর করে জেঃ নিয়াজী বিদেশী সাংবাদিকদের একটি দলকে সাক্ষাৎ দান করেন। ভারতীয় হামলার স্বাক্ষর পরিদর্শনের জন্য তাঁরা হিলি এলাকা সফরে যান। যুদ্ধে তিনটি ভারতীয় ট্যাংক অকেজো করে দেয়া হয় এবং ১৫০ ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। তিনি গতকাল বিকেলে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন।
দৈনিক পাকিস্তান
৩০ নভেম্বর, ১৯৭১
বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে জেনারেল নিয়াজী
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে
.
নিউওয়ার্ক, ২৯ শে নভেম্বর (এপিপি)- পূর্বাঞ্চলীয় কমাণ্ডারের লেঃ জেনারেল এ এ কে নিয়াজী গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এক বিদেশী সাংবাদিককে বিলেছেন যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে বলেই তিনি মনে করেন। গত ২১ নভেম্বর ভারত যে আক্রমন শুরু করেছে, তার কথা তিনি উল্লেখ করে বলেন, তাদের যা কিছু আছে সব নিয়েই তাঁরা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হয়ে গেছে। জেনারেলের মন্তব্যগুলো গত শনিবারের নিউওয়ার্ক টাইমস পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশ করা হয়। জেঃ নিয়াজী বলেন, তাদের সৈন্যদের শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁরা একমাত্র যে সাফল্য অর্জন করেছে তাহলে দেশের অভ্যন্তরে নিজেদের লোকজনকে সন্ত্রস্ত করা।
জেনারেল বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী নেতৃত্ব দুর্বল এবং তাদের সৈন্যর’ দুর্বল। সংখ্যায় কম হলেও পাকিস্তানী সৈন্যরা ভারতীয়দের পর্যুদস্ত করেছে। পাকিস্তানের প্রতি একজনের জায়গায় ভারতের সৈন্য তিনজনেরও বেশী। তিনি বলেন, পাকিস্তানী সৈন্যদল অদ্বিতীয়। আমরা কখনো পরাজিত হয়নি। ইতিহাস দেখুন।
আমি চ্যালেঞ্জ করছি, ইতিহাসে আমাদের বিজয় ছাড়া আর কিছু পাবেন না। আমরা কখনো পরাজিত হইনি এবং ভারতীয়রা কখনো জিততে পারেনি। আমি অতি সহজেই প্রতি একজনে তাদের তিনজনকে ধরে নিতে পারি।
.
.
শিরোনামঃ ২০৮। ২২ পুলিশ অফিসারকে হাজির হওয়ার নির্দেশ
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক
তারিখঃ ১ ডিসেম্বর, ১৯৭১
.
২২ জন পুলিশ অফিসারকে
হাজির হওয়ার নির্দেশ
.
সারদা পুলিশ একাডেমীর প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপালসহ ২২ জন পুলিশ কর্মচারীকে আগামী ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় এম, পি, এ হোষ্টেলে অবস্থিত ৬ নং সেক্টরে উপ-সামরিক আইন প্রশাসকের নিকট উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে বলিয়া গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাকায় ওপিপি পরিবেশিত সংবাদে বলা হয়েছে।
তাহাদের বিরুদ্ধে ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন পরিচালকের ১২০ নং আদেশের সহিত পঠিত এন এম আর ২৫ বিধি অনুযায়ী আনয়ন করা হইয়াছে।
‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেঃ এ এ কে নিয়াজী এম এল আর ৪০ বিধি অনুযায়ী প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে নিম্নলিখিত ২২ জন পুলিশ অফিসারকে উপরোক্ত উপ-সামরিক আইন পরিচালকের নিকট হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়াছেনঃ-
১। পঙ্কজ কুমার মল্লিক, ইনস্পেক্টর অফ পুলিশ, সারদা পুলিশ একাডেমী।
২। এস, আই মোঃ বাদশা মিয়া, বরিশাল জেলা।
৩। এস, আই সায়েদুজ্জামান, ও, সি, বেনাপোল তলল্লাশী ফাঁড়ি।
৪। এস, আই শামসুল আলম, সেকেণ্ড এস আই, খিকরাগাছা থানা।
৫। ওস, আই মফিজুদ্দিন আহমদ, ও, সি কোটচাঁদপুর থানা।
৬। এস, আই কাঞ্চন কুমার ঘোষল, সিনিয়র সি, এস, আই, ঝিনাইদহ কোর্ট।
৭। এস, আই আবদুল হাকিম, থার্ড এস, আই, ঝিনাইদহ থানা।
৮। এস, আই আবদুল মতিন, থার্ড এস, আই, মহেষপুর থানা।
৯। এস, আই আবদুল লতিফ, ও, সি, কালিগঞ্জ থানা।
১০। এস, আই চৌধুরী আবদুর রাজ্জাক, ডি, আই, ও, ঝিনাইদহ।
১১। এ, এস, আই আবদুল গফুর, ঝিকরগাছা থানা।
১২। এস, আই ফজলুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা।
১৩। এস, আই মকবুল আহমদ, কুষ্টিয়া জেলা।
১৪। এস, আই মোঃ ইয়ার আলী, কুষ্টিয়া জেলা।
১৫। এস, আই মফিজুর রহমান হক, কুষ্টিয়া জেলা।
১৬। আর্মড, এস, আই নুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা।
১৭। সে, এস, আই আজিজুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা।
১৮। ইন্সপেক্টর ক্ষিতিশ চন্দ্র দে, কুষ্টিয়া জেলা।
১৯। শৈলেন্দ্র কিশোর চৌধুরী, ভাইস-প্রিন্সিপাল সারদা পুলিশ একাডেমী।
২০। বজলুর রহমান, এস, পি, পার্বত্য চট্টগ্রাম।
২১। মোশাররফ হোসেন ডি, আই, জি, চন্দ্রঘোনা।
২২। আব্দুল খালেক পি, এস, পি, প্রিন্সিপাল, সারদা পুলিশ একাডেমী।
তাহাদিগকে আগামী ৭ই ডিসেম্বর সকাল ৮টায় তাহাদের বিরুদ্ধে আনীত উপরোক্ত অভিযোগের জবাব দানের জন্য ৬ নং সেক্টরের উপ-সামরিক আইন প্রশাসকের নিকট হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। তাহারা যদি নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে হাজির হইতে ব্যর্থ হন তাহা হইলে তাহাদের অনুপস্থিতিতে ৪০ নং সামরিক আইন বিধি অনুযায়ী তাহাদের বিচার করা হইবে।
.
.
শিরোনামঃ ২০৯। সিলেটের জনসভায় জেঃ নিয়াজী
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক
তারিখঃ ২ ডিসেম্বর, ১৯৭১
.
সিলেটের জনসভায় জেঃ নিয়াজী
গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করা হইবে
.
সিলেট, ১লা ডিসেম্বর (পিপিআই)।– এখানে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় এই মর্মে ঘোষণা করা হয় যে, ১৯৪৭ সালের গণভোটে সিলেটবাসী তথাকথিত বাংলাদেশের পক্ষে নহে, পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেয় এবং মাতৃভূমি রক্ষার জন্য সিলেটবাসী তাহাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত বিসর্জন দিবে।
সিলেটে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পূর্বাঞ্চলীয় কমাণ্ডের কমাণ্ডার এবং ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেঃ এ এ কে নিয়াজী প্রধান অতিথিরুপে উপস্থিত ছিলেন। সীমান্তের অগ্রবর্তী এলাকার সেনাবাহিনী পরিদর্শনের জন্য তিনি সিলেটে আগমন করেন।
সভায় উপস্থিত জনতা ভারতীয় আক্রমণের নিন্দা করিয়া এবং সেনাবাহিনীর প্রতি তাঁদের সমর্থনের বিষয় উল্লেখ করিয়া বিভিন্ন শ্লোগান প্রদান করে।
জনতা লেঃ নিয়াজী এক খণ্ড কোরআন শরীফ উপহার দেয় এবং তাহারা পবিত্র কোরানের নামে শপথ করিয়া সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মাতৃভূমি রক্ষার অঙ্গীকার করে।
উক্ত সভায় সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জনাব আজমল আলী ভারতীয় আক্রমণ ও হস্তখেপের নিন্দা করিয়া বক্তৃতা করেন।
জনতার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা প্রসঙ্গে জেঃ নিয়াজী বলেন যে, যে কোন মূল্যে মাতৃভূমির রক্ষায় সেনাবাহিনী যখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তখন কোন এলাকা হইতে পশ্চাৎপ্রসারণের কোন প্রশ্নই উঠে না।
তিনি বলেন যে, শত্রুর সঙ্গখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে আমাদেরকে পরাভূর করা যাইবে না। আমরা সব সময় সংখ্যায় অল্প এবং সম সময়ই বিজয়ী হইয়াছি। আমরা আমাদের সেই অতীত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করিব।
সবশেষে লেঃ নিয়াজী পথভ্রষ্ট ও ভারতীয় হাতে ক্রীড়নক ব্যক্তিদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তাহাদের হীন কার্যকলাপ বন্ধ করিয়া ক্ষমতা গ্রহণের এখনও সময় আছে। তাহারা যদি সঠিক পথ অনুসরণে ব্যর্থ হয় তবে তাহারা ধ্বংস হইবে বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন।
ইতিপূর্বে সীমান্ত এলাকায় সৈন্যদের পরিদর্শনকালে লেঃ নিয়াজী দারূন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তাহাদের সাহস এবং বীরত্বপূর্ণ কাজের প্রশংসা করেন। তিনি সৈন্যদেরকে বলেন যে, তাহারা তাঁদের গৌরবদীপ্ত ঐতিহ্যের মান বজায় রাখিয়াছেন। সৈন্যদেরকে লেঃ নিয়াজী জানান যে, তাহাদের পশ্চাতে দেশবাসীর এবং মুসলিম বিশ্বের সমর্থন এবং সহানুভূতি রহিয়াছে।
.
.
শিরোনামঃ ২১০। প্রতিষ্ঠান সমূহে বোমা বিস্ফোরণের দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের, এই মর্মে শিক্ষা বিভাগের একটি চিঠি
সূত্রঃ সরকারী দলিলপত্র উদ্ধৃতিঃ এক্সপেরিয়েন্স প্রাগুপ্ত
.
পূর্ব পাকিস্তান সরকার
শিক্ষা অধিদপ্তর
সাধারন বিভাগ
.
.
নং: জি/১-১৩-৭১-১৩৪০(৮)ইডেন তারিখ- ৩-১২-৭১
হইতে: জনাব জয়নুল আবেদীন, ইপিএসএস
সেকশন অফিসার: পূর্ব পাকিস্তান সরকার
প্রতি,
……
উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সরকার এটাকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের সরকারি বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের এটা অবগত করা উচিত যে তাদের প্রতিষ্ঠানে যদি ভবিষৎ এ কোনো বোমা বিস্ফোরন হয় তাহলে তার জন্য তারা নিজেরা দায়ী থাকবে।
এসডি/ জয়নুল আবেদিন
সেকশন অফিসার (জি)
.
.
শিরোনামঃ ২১১। ময়মনসিংহে জেনারেল নিয়াজী
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
.
ময়মনসিংহে জেনারেল নিয়াজী
রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত দেশ ধ্বংস
হতে পারে না
.
গতকাল শুক্রবার ভারতীয় হামলার নিন্দা জ্ঞাপন এবং যে কোন মুল্যে সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতায় আবাসভূমি রক্ষার জন্য সংকল্প প্রকাশের উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এপিপির খবরে প্রকাশ, ময়মনসিংহ শান্তি কমিটি আয়োজিত এই সভায় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কমান্ডার ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেঃ এ, এ, কে নিয়াজী প্রাদেশিক অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল কাশেম এবং পূর্ব বিজলী ও সেচ মন্ত্রী জনাব এ, কে, মোশাররফ হোসেন ভাষণ দেন।
সভায় ভাষণ দান প্রসঙ্গে লেঃ জেঃ এ, এ, কে, নিয়াজী জনসাধারণের তেজস্বীয়তা ও উদ্দীপনার প্রসংশা করে বলেন যে সর্বত্রই জনগণ অনুরূপ মনোভাব ব্যক্ত করছে এবং যে কোন মূল্যে তাদের আজাদী রক্ষার জন্য পুরোপুরি সংকল্পবদ্ধ।
তিনি বলেন, রক্ত দিয়ে যে দেশের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠিত তা ধ্বংস হতে পারে না। তিনি জনসাধারণকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ইনশাআল্লাহ জয় আমাদেরই হবে। কেননা আমরা বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছি।
তিনি জনসাধারণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে ভারত তার অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ এবং সম্প্রসারণবাদী লিপ্সা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে দেশের এই অংশকে গ্রাস করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে।
সভাশেষে জেঃ নিয়াজী জামালপুর এলাকা পরিদর্শনে যান। সেখানে সৈনিক ও রাজাকারদের এক সমাবেশে বক্তৃতাকালে তিনি তাদের বীরত্বপূর্ণ কাজের প্রসংশা করেন এবং তাদের আশ্বাস দেন যে গোটা জাতি তাদের পেছনে রয়েছে।
শিরোনামঃ ২১২। যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১
.
যশোর, আখাউড়া ও লাকসাম
পাকিস্তানের দৃঢ় নিয়ন্ত্রনে রয়েছে
সাপ্লাই লাইন যাতে নির্বিঘ্নে থাকে
সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছেঃ জেনারেল ফরমান আলী
.
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী গতকাল সোমবার ঢাকায় বলেন, বেশ দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের আক্রমণের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী আত্ম্ররক্ষামূলক যুদ্ধ চালাতে সম্পূর্ণ সক্ষম।
এপিপির সময়বার্তা পরিবেশক ইকবাল আলী খান এ খবর প্রদান করেন। সাংবাদিকদের সাথে এক ঘরোয়া বৈঠকে জেনারেল ফরমান আলী বলেনঃ আক্রমণকারীকে পরাজিত করার জন্যই আমরা এখানে আছি।আমাদের লাইন যাতে বিঘ্নিত থাকে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানকে করতলগত রাখতে পারবে কি না এ সম্পর্কে এক বিদেশী সংবাদদাতা তাকে জিজ্ঞেস করলে জেঃ তার জবাবে বলেন, কেন পারবে না? এ সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ আস্থাবান। আর সে কারণেই আপনারা আমার মুখে হাসি দেখছেন। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বলেন, সাধারণ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীকে আত্ম্ররক্ষামূলক যুদ্ধ চালাতে হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অগ্রবর্তী অবস্থানের পতন ঘটলে পরবর্তী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা খুবই মুশকিল হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন যে, শত্রুর অগ্রাভিযান যাতে চরমভাবে স্তব্ধ করে দেখা যায় তার জন্য আমাদের নিজেদের পছন্দমত জায়গায় শত্রুদের বাধা দান করাই হলো পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধরত পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীর লক্ষ্য। তিনি বলেন যে, পাকিস্তানী এলাকা দখলে ভারতীয় দাবী তাৎপর্যহীন। কারণ আমাদের যুদ্ধ কৌশলেরই একটা অংশ।
তিনি যশোর, লাকসাম ও আখাউড়া পাকিস্তানী সেনাদলের দৃঢ় নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যশোর কোনদিনই শত্রু কবলিত হয়নি। ‘যশোর যদি শ্ত্রু কবলিত হয়ই তবে তা প্রচন্ড যুদ্ধের পরই মাত্র হবে।
দু’দেশেরই বিশ্ব সমরের ন্যায়
যুদ্ধ চালানোর সামর্থ্য নেই
পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে তিনি বলেন যে, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ন্যায় একটা যুদ্ধ চালানোর সামর্থ্য ভারত ও পাকিস্তানের দুদেশেরই নেই।
তিনি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় হামলা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের মাতৃভূমির আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষা ছাড়া আর কিছু চিন্তা করে না।
হিলির যুদ্ধ
তিনি বলেন যে, হিলিতে রেল লাইনের এ পার্শ্বে ভারতীয়দের কোন এখতিয়ার নেই। হিলিতে গত ১৪ দিন ধরে যুদ্ধ চলছে। রেলওয়ে লাইন হল ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত রেখা।
ভারতীয় নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম পৌছার চেষ্টা
জেনারেল বলেন যে, রোববার ভারতীয় নৌবাহিনী চট্টগ্রাম পৌছার চেষ্টা চালায়। আমাদের নৌযান তাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। একজন প্রশ্নকারীর জবাবে তিনি বলেন যে, কুমিল্লা পাকিস্তানীর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে জেনারেল বলেন, ফেনীতেও পাকিস্তান সেনাদল যুদ্ধ চালাচ্ছে।
চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়
তিনি জানান যে ভারতীয়রা চট্টগ্রামের সাথে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চায়। কিন্তু সেখানে সেনারা বীরত্বপূর্ণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
মেজর জেনারেল একজন বিদেশী সাংবাদিককে জানান যে বর্তমানে ঢাকায় বিপন্ন জাতিসংঘ কর্মচারীদের অপসারণের জন্যই ৬ই ডিসেম্বর তারিখ ঢাকায় সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখার ব্যাপারে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জাতিসংঘের অনুরোধে সম্মত হয়। কিন্তু ভারতীয় জঙ্গী বিমান ঢাকা বিমানবন্দরে আক্রমণ চালিয়ে তাদের ঢাকা ত্যাগের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি স্মিতহাস্যে বলেন, ঠিক জানিনা কেন ভারতীয়রা এমন কাজ করলো। জাতিসংঘ কর্মচারীর ঢাকা ত্যাগ করুক তারা হয়তো তা চায় না।
রানওয়েতে একটা গর্ত সৃষ্টি হয়েছে
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে আজ ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়েতে একটা গর্ত সৃষ্টি করা ছাড়া হাম্লাকারী ভারতীয় বিমানসমূহ বিশেষ কোন সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এতক্ষণে রানওয়ে হয়তো মেরামতও করা হয়ে গেছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন যে ১৯৬৭ সালে জুন যুদ্ধে ইসরাইল যেমনটি করেছিল তেমনভাবে ভূমিতে রাখা পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বিমানসমূহ ধ্বংস করাই ভারতীয় বিমান বাহিনীর বার বার ঢাকা বিমানবন্দেরের ওপর আঘাত হানার প্রধান লক্ষ্য।
জাতিসংঘের দুটো এবং অপর একটা টুইন বিমান ছাড়া ভারতীয়রা ভূমিতে রাখা পাকিস্তান বিমান বাহিনীর আর একটা বিমানের ওপরও আঘাত হানতে পারেনি। বিমান বিধ্বংসী কামানসমূহ চমৎকার কাজ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বলেন যে ৪ঠা ডিসেম্বর তারিখে ঢাকায় হামলাকারী ভারতীয় জঙ্গী বিমানসমূহের যে দুর্গতি হয়েছে তাতে অবশ্যই আক্রমণকারীর একটা উপযুক্ত শিক্ষা হয়েছে। তিনি বলেন যে গতকাল (সোমবার) বিকাল নাগাদ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬টি ভারতীয় ভারতীয় বিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি হাল্কা বিমান বিধ্বংসী কামান দিয়ে গুলি করে ভূপাতিত করা হয় ও অপর ১০ টি পি, এ, এফ বিমান ভূপাতিতি করে। ক্ষতিগ্রস্ত অপর ৫টি ভারতীয় বিমান অবশ্য ভারতে পাড়ি জমাতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ২টি বিমান চট্টগ্রাম এলাকায় পাকিস্তান নৌবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত করে।
পাকিস্তান জেনারেল রাও ফরমান আলী বলেন যে ভারত কর্তৃক তিনটি মুখ্য সাফল্যকে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার বড় ধরনের হামলায় বিরাট সাফল্য বলে প্রচার করছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় সকল পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে তিনি জানান।
উত্তর ময়মনসিংহ
উত্তর ময়মনসিংহ এলাকায় কৌশলগত যুদ্ধ চলছে বলে মেজর জেনারেল জানান। তিনি বলেন যে কামালপুর ছেড়ে যাওয়ার পূর্বে পাকিস্তান সেনাদল ভারতীয় পক্ষের ৬ থেকে ৭ গুণ অধিক লোককে হতাহত করে ঠাকুরগাঁ এলাকায় বরাবরই ভারতীয়দের মূল অভিযান চলছে বলে তিনি জানান।
.
ভারতীয় সেনা অতি সহজেই ঢাকায় ঢুকতে পারবে কিনা, এ মর্মে একজন বিদেশী সাংবাদিক প্রশ্ন করলে মেজর জেনারেল বলেন, ফাজিলকা অতিক্রম করে দিল্লীর দিকে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে শতদ্রু যেমন আমাদের জন্য বাধাস্বরূপ, তেমনি ব্রহ্মপুত্রও একটা চমৎকার বাধা।
সিলেট এলাকা
ভারতীয়রা এ এলাকায় যে সাফল্য লাভ করেছে তা পুনর্দখল করার জন্য সিলেটে যুদ্ধ চলছে বলে তিনি জানান। এ এলাকায় ভারত তিন ডিভিশন সৈন্য মোতায়ন করেছে। তিনি আরো জানান যে আখাউড়া ও কুমিল্লার দক্ষিণবর্তী লাকসামের বিপরীত দিকে অবস্থিত চৌদ্দগ্রাম নামক এলাকায় ভারতীয় সৈন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
দুষ্কৃতকারীদের তৎপরতা বন্ধ হয়ে গেছে
জেনারেল ফরমান আলী বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বাত্নক যুদ্ধের পর রাষ্ট্রবিরোধী ও দুষ্কৃতকারীদের তৎপরতা বর্তমানে প্রকৃতপক্ষে স্তব্ধ হয়ে গেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাফল্য, বিশেষ করে ঢাকার আকাশে পাকিস্তানী বৈমানিকদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধে জনসাধারণ মোটামুটি উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে।
ঢাকায় ছত্রী সৈন্য প্রেরণ সহজ নয়
পূর্ব অংশের প্রধান নগরী ঢাকা দখলের পথ সুগম করার ব্যাপারে ঢাকার ভারতীয়দের ছত্রী সৈন্য অবতরণের সম্ভাবনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জেনারেল ফরমান আলী বলেন যে, এটা খুব সহজ নয়। তিনি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন যে, জার্মান ছত্রী সৈন্য অবতরণ করানো হলে বৃটেনকেও এমন হুমকির সম্মুখীন হতে হয়ছিল। কিন্তু বৃটেন আজো টিকে আছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, স্থায়ী হবে বলেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তান বিরোধিরা মনে করেছিল যে, পাকিস্তান ৬ মাসের বেশি টিকবে না।
কিন্তু পাকিস্তা ২৫ বৎসর টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
.
.
শিরোনামঃ ২১৩। শিক্ষানীতি সম্পর্কিত মন্ত্রী পরিষদের একটি সিদ্ধান্ত
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক
তারিখঃ ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১
কতিপয় পাঠ্যপুস্তক ঢালিয়া সাজাইবার ব্যবস্থা
পূর্ব পাকিস্তান সরকারের গণসংযোগ বিভাগের হ্যান্ড আউটে বলা হয়ঃ বর্তমানে চালু ১ম শ্রেণী হইতে ১২শ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পর্যালোচনার জন্য কিছু দিন পূর্বে পূর্ব পাকিস্তান সরকার জনাব এ, এফ এম আব্দুল হকের নেতৃত্বে ২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করিয়াছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগে কমিটি উহার রিপোর্ট পেশ করে এবং গত ৮ই নভেম্বর মন্ত্রী পরিষদের এক সভায় রিপোর্ট বিবেচনা করা হয়। কিছু পরিবর্তনের পর রিপোর্ট অনুমোদিত হয়।
এই রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী আগামী শিক্ষাবর্ষ হইতে কিছু সংখ্যক পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করা হইবে এবং
বাদ বাকী বইগুলি ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি এবং পাকিস্তানের আদর্শগত ভিত্তি তুলিয়া ধরার জন্য ঢালিয়া সাজানো হইবে।
মন্ত্রী পরিষদের সভায় এই মর্মেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ভবিষ্যতে সকল পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন শ্রেণীতে পাঠ্য করার পূর্বে সকল পাঠ্যপুস্তক ন্যাশনাল একাডেমী অব পাকিস্তান এফেয়ার্স কর্তক অনুমোদিত হইতে হইবে। আরও গৃহীত হয় যে, পূর্ব পাকিস্তান স্কুল টেক্সট বুক বোর্ডের কার্যক্রমের উন্নয়নের জন্য উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
.
.
শিরোনামঃ ২১৪। বিদেশী সাংবাদিকদের সাথে জেনারেল নিয়াজী
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক
তারিখঃ ১১ ডিসেম্বর, ১৯৭১
.
বিদেশী সাংবাদিকদের সাথে নিয়াজী
.
গতকাল শুক্রবার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক লেঃ জেনারেল এ, এ, কে নিয়াজী আকস্মিকভাবে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে গিয়ে উপস্থিত হন এবং জিজ্ঞেস করেন বিদেশী সাংবাদিকরা বিশেষ করে বিবিসি’র প্রতিনিধি কোথায় আছেন?
তিনি বলেন তাদের সকলকে আমি জানিয়ে দিতে চাই যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহর অনুগ্রহে আমি এখনও পূর্ব পাকিস্তানে থেকে আমার সেনাবাহিনীকে পরিচালনা করছি। আমি কখনও আমার সেনাবাহিনীকে ছেড়ে যাব না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পূর্ব পাকিস্তান থেকে তাঁর পলায়ন সম্পর্কিত ভারতীয় বেতারের দুরভিসন্ধিমূলক রিপোর্ট বিবিসি থেকে প্রচারিত হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে জেনারেল হোটেল ত্যাগ করেন। ভারতীয় বেতারে জেনারেল নিয়াজী পূর্ব পাকিস্তান থেকে চলে গেছেন বলে যে নির্লজ্জ মিথ্যা সংবাদ প্রচারিত হয়েছে তাতে বিদেশী সাংবাদিকদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল পরিদর্শন করায় সকল গুজবের অবসান হয়েছে। এপিপির জনৈক বিশেষ প্রতিনিধি এই সংবাদ পরিবেশন করেছেন।
.
.
শিরোনামঃ ২১৫। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছে গভর্ণর এ, এম, মালিক ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগ পত্র
সূত্রঃ এডভোকেট আমিনুল হক
তারিখঃ ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
.
টু দ্যা প্রেসিডেন্ট অফ পাকিস্তান
দেশে আর যাতে রক্তপাত না হয় সে কামনায় আমরা নিম্নলিখিত ব্যাক্তিবর্গ সরকারী সকল কার্যালয় এবং সরকারের মন্ত্রিসভার সকল কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি। এর পর থেকে সরকারের সাথে আমাদের কোন ধরণের সংশ্লিষ্টতা থাকবেনা।
স্বাঃ / =
এ.এম. মালেক
১৪-১২-৭১
আবুল কাশেম
১৪-১২-৭১
এ.এস.এম সুলাইমান
১৪-১২-৭১
নওয়াজেশ আহমেদ
১৪-১২-৭১
এ আহমেদ
১৪-১২-৭১
এম.ইউসুফ
১৪-১২-৭১
মো. ইসহাক
১৪-১২-৭১
মুজিবুর রহমান
১৪-১২-৭১
জসিমউদ্দীন আহমেদ
১৪-১২-৭১
মো. ওবায়দুল্লাহ মজুমদার
১৪-১২-৭১
এ.কে. মোশাররফ হুসাইন
১৪-১২-৭১
আব্বাস আলী খান
১৪-১২-৭১
.
.
শিরোনামঃ ২১৬। গভর্নর মালিক ও পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক অধিনায়কের কাছে প্রেরিত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার তার বার্তাঃ যুদ্ধ বিরতির ক্ষমতা প্রদান
সূত্রঃ এডভোকেট আমিনুল হক
তারিখঃ ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
.
অগ্রগণ্য ব্যবস্থা গ্রহণ পাক আর্মি প্রত্যাহার জরুরী তারিখ সময়
১৪ ১৩৩২
গ্রুপ
নিরাপত্তা শ্রেনীবিভাগ
প্রেরণকারীর নম্বর
৬০০ ১৩
হইতেঃ গভর্নর পূর্ব পাকিস্তান।
প্রতিঃ কমান্ডার পূর্ব পাকিস্তান কমান্ড।
তথ্যঃ রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে গভর্নর ও জেনারেল নিয়াজীর জন্য আত্মসমর্পণ করার জন্য ফ্ল্যাশ বার্তা। আপনারা অপ্রতিরোধ্য শত্রুর বিরুদ্ধে একটি বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ লড়েছেন। জাতি এবং বিশ্বের কাছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। একজন মানুষের পক্ষে সমস্যার গ্রহণযোগ্য একটা সমাধান যেভাবে সম্ভব সেভাবে করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।
আপনারা এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছেন যেখানে আর জোরজবরদস্তি করা মানবিক দিক থেকে সম্ভব নয় এবং তা তাতে আমাদের কোনো উদ্দেশ্যও সাধন হবে না। পরবর্তিতে আমাদের আরোও ধ্বংস অনিবার্য এবং প্রাণহানি হবে। আপনাকে এখন অতিসত্তর যুদ্ধ বন্ধ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সৈনিকদের জীবন বাচানোর জন্য এবং সম্পত্তির রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইতোমধ্যে আমি জাতিসংঘ কে অনুরোধ করেছি যাতে আমাদের পশ্চিম পাকিস্তানের সকল সৈন্য বাহিনীর এবং সম্ভাব্য হামলার শিকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ভারতকে চাপ দেওয়া হয়।
.
.
শিরোনামঃ ২১৭। আত্মসমর্পণের আগে দখলদার বাহিনীর বেসামরিক সরকারের পদত্যাগ ও সে সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক কর্মকর্তা জন কেলীর একটি প্রতিবেদন।
সূত্রঃ এডভোকেট আমিনুল হক
তারিখঃ ৮ মার্চ, ১৯৭২
.
১৯৭১সালের ঢাকায় তিনদিন
জন আর কেলি
.
এটি ১৪,১৫,১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ ঢাকায় ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার ব্যক্তিগত হিসাব। এটি সহজভাবে লেখা বাংলাদেশ জন্মের পার্শ্ববর্তী কিছু ঘটনার নিজস্ব চিন্তন এবং এর সাথে আমি যে সংগঠনের সদস্য তা কোনোভাবেই জড়িত নয়। আমি এই ঘটনার তখন সম্পৃক্ত হই আগষ্টে যখন আমি জাতিসংঘের মহাসচিব এর দ্বারা শরনার্থীদের জন্য বরাদ্ধ হই, শরনার্থীদের যেকোনো সমস্যা মোকাবিলার জন্য এখানে বরাদ্ধ হয় প্রিন্স সাদরুদ্দিন আগা খান। যেহেতু এটি কঠোরভাবে একটি অরাজনৈতিক, মানবিক কাজ এবং এটি একটি অ-হিসাব, আমি এই দৃষ্টিভঙ্গির উপর কোনো মন্তব্য আরোপ করিনি এবং বলবোও না। তবুও আমি একজন আইরিশ এবং আমি বাঙালিদের জন্য অনেক সহানুভূতি অনুভব করেছি, আমি তাদের শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ভবিষ্যত কামনা করেছি।
ডিসেম্বরের শুরুর দিকে যুদ্ধ যখন তুঙ্গে বোঝা যাচ্ছিল যে শরণার্থী সমস্যার একটা সমাধান হবার পথে । পাওলো তখন ইউএন এর রিলিফ ফান্ডের সেক্রেটারী জেনারেল ছিলেন । তিনি এই যুদ্ধের শুরুর দিকে একটা সংক্ষিপ্ত সফরে এসে ঢাকা আটকা পড়েন । এই ফ্রেনচ মানুষটা আমাদের অনুপ্রেরণ হয়ে থাকবেন । যাহোক স্বভাবতই তিনি পুরো ইউএন দলের তত্বাবধায়ক রূপেই আবির্ভূত হন এবং আমাকে বিভিন্ন সামরিক ও সরকারী লিঁয়াজো করতে বলেন । আমি জোর দিয়েই বলব এগুলো সবই জনকল্যানমূলক ছিল । যাহোক এই ল্যাখাটি মুক্তিযুদ্ধের শেষ তিন দিনের কথা ।
মঙ্গলবার,১৪ ডিসেম্বর
১৪ ডিসেম্বর সকালে পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর ডা. এ. এম. মালেক হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে আমাকে ফোন করেছিলেন, সেখানে আমি ছিলাম এবং জাতিসংঘের মি. পিটার উইলার কে বাইরে যাবার জন্য বলছিলাম এবং গর্ভনর হাউসে তার অবস্থা দেখার জন্য। ডা. মালেকের সাথে আমার অনেকবার দেখা হয়েছে, ঢাকাতে ইউএনএইচসিয়ার এর প্রতিনিধি হিসাবে এবং যুদ্ধকালিন সময়ে যখন আমি সামরিক ও সরকারি যোগাযোগ করছিলাম।
এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধ অবশ্যই সুস্পষ্ট ছিল। সামনে ক্ষয় ছিলো এবং ঢাকাকে ১৯৪৫ সালের সামনের দিকের বার্লিনের মত লাগছিলো। যখন আমি এবং মিঃ পিটার হুইলার ডা. মালেকের সাথে গভর্ণর হাউজে দেখা করতে গেলাম তখন তিনি মন্ত্রীসভার বৈঠকে ছিলেন তবু তিনি বেরিয়ে আসেন এবং তার নেতৃত্বে আমাদের তার এডিসি’র অফিসে নিয়ে যান সে তার নিজের অবস্থার জন্য আমাদের নিজস্ব পরামর্শ জানতে চান।
আমি তাকে বলেছিলাম ‘আমি মনে করছি সে এবং তার মন্ত্রীসভা আসন্ন বিপদে মারা পড়তেন এবং যদি না সে ওই রাতে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে নিরপেক্ষ আশ্রয় না নিতো তবে সেই রাতে সে বাঁচতে পারে না। যাইহোক নিরপেক্ষ জোনে আশ্রয় নিতে হলে তাদেরকে তাদের অফিসের সমস্ত কার্যক্রম থেকে অবসর নিতে হতো। সে বলেন তার মন্ত্রীসভা যখন এটা বিবেচনা করার সময়ে ছিলো অথবা পদত্যাগ না করতে কিন্তু তারা এটা করতে অনিচ্ছুক ছিল।সে নিজে অনুভব করছিলো তার পদত্যাগ করা উচিত নয়, তার ওই সময় পদত্যাগ ইতিহাসের চোখে ছলনার ন্যায় দেখাবে। এরপর সে বললো যদি সে তার স্ত্রী-সন্তানদের নিরপেক্ষ জোনে পাঠাতে পারতো। আমি তখন উত্তর দিয়েছিলাম, যদিও সে নিরপেক্ষ জোন হোটেল কন্টিনেন্টালে তা স্ত্রী ও সন্তানদের ভর্তি করতে পারবে তাতে তার উদ্দেশ্য অর্জন হবে না। হোটেলটি পুরোপুরি সাংবাদিকে পরিপূর্ণ এবং তারা বলবে ডা. মালেক তার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে তাই তার পরিবারকে নিরাপদ অঞ্চলে পাঠিয়ে দিয়েছে এবং তারা প্রশ্ন করবে সে নিজে কখন এখানে আসবে ।
ঠিক সেই সময় গভর্মেন্ট হাউস বিভিন্ন ভারী বিস্ফোরনে কেঁপে উঠলো। এটা স্পষ্ট ছিলো ভবনটি সরাসরি ভারতীয় বিমান বাহিনীর আক্রমনের অধীনে চলে এসেছিলো এবং পিটার হুইলার এবং আমি রেলিং এর উপর দিয়ে দ্রুতভাবে চলে এসেছিলাম এবং আমি ৫ গজ দূরে একটি জীপে আশ্রয় নিয়ে ছিলাম। সেখানে ৬ টি ভারতীয় প্লেন ছিলো যা ভবন দুটিতে যা পরপর রকেট ও কামানের আঘাত হানছিলো।আক্রমণের প্রথম সময় মোজাফফর হোসেন তারপর মুখ্য সচিবকে খুব ফ্যাঁকাশে দেখাচ্ছিল এবং আমরা অভিবাদন বিনিময় করছিলাম। গভর্ণর হাউসে যেমন আক্রমন চলছিলো, তখন আমি ২০ গজ দূরে একটি পরিখায় দৌড়ে গেলাম যা আগে থেকেই সৈন্যে পরিপূর্ণ ছিলো এবং তাদের উপর ঢাকা দিলাম। এইসব সময়ের মধ্যে আমি জাতিসংঘের পল মার্ক হেনরির সাথে আমার হাত রেডিও ( ওয়াকি টকি) উপর ধারাভাষ্য চালু রেখেছিলাম। জেনারেল ফরমান আলি আগেই আশ্রয়ের জন্য আগেই চলে গিয়েছেন, এবং আমাকে বললেন তিনি পরোলোকগমন করেছেন। “কেন ভারতীয়রা আমাদের সাথে এমন করছে”? এমতাবস্থায় ভারতীয় বিমান ২০ গজ দূরে সেই ভবনে রকেট ও কামানের আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিলো। আক্রমনের শব্দ কানে তুলা লাগাচ্ছিলো কিন্তু এক পর্্যায়ে তা থামলো এবং আমি গাড়িতে গেলাম , পিটার হুইলারকে তুলে নিলাম। এবং জাতিসংঘ এর কার্যালয়ে ফিরে গেলাম।
জাতিসংঘের কার্যালয়ে পৌছে আমি পল মার্ক হেনরিকে সব বললাম এবং সেখানে “অবজার্ভার এর জনাম গেভিং ইয়ং এর সাথে দেখা করলাম। জনাব গেভিং ইয়ং আস্থার সাথে আমাকে একটা কথা বলেছিলেন, যে এটা এক ঘন্টা হবে এরপ ভারতীয় বিমানকে ফিরে যেতে হবে জ্বালানি ভরে নেয়া এবং পুনরায় লোড করার জন্য, যা পরবর্তীতে ভুল পরিণিত হয়েছিলো। সে আমাদের পরামর্শ করেছিলো গভর্ণর হাউসে ফিরে গিয়ে দেখতে সেখানে কি হয়েছিলো। আমি গেভিন ইয়ং এর সাথে এক মত হয়ে তাকে আমার গাড়িতে নিয়ে পুনরায় গভর্নর হাউসে গেলাম এবং সেখানে আমরা রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের সাক্ষাৎ পেলাম এবং তিনি আমাদের জানালেন যে ডাঃ মালেক এবং তার মন্ত্রীসভা গভর্নর হাউসের বাম দিকে রাখা একটি বাংকারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি আমাদের সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এবং আমরা ডাঃ মালেক এবং তার মন্ত্রীসভাকে খুব বিস্ফোরিত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো কিন্তু তখনো তারা দ্বিধান্বিত ছিলেন তারা পদত্যাগ করবে কি না ।
আমি তাকে বললাম, আমি ভেবেছিলাম তারা শুধু অনিয়মিতদের দ্বারা খুন এর বিপদের মধ্যে ছিলো না, কিন্তু ভারতীয় বিমান বাহিনী তাদের সরাসরি আক্রমন করছিলো।
সেই সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী গভর্ণর হাউসের উপর দ্বিতীয়বার বিধ্বংসী হামলা চালালো। গ্যাভিন ইয়াং তাদের ফিরে আসার সময়ের অনুমানের ব্যাপারে দূর্ভাগ্যজনকভাবে ভুল ছিল। বাংকারটি খুব নিরাপদ বাংকার ছিলো না এবং এটি মাটির উপরে ছিলো এবং আমরা জানিনা ভারতীয় বিমান বাহিনী এটি সম্পর্কে জানে কি জানে না। অবশ্যই একটি সরাসরি আঘাত অপনেদিত যেতো। বিমানটি বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখলো। এটি মন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার কাছে পদত্যাগ পত্র লেখালো যা ডাঃ মালেক এবং উপস্থিত সকল মন্ত্রীদের সাক্ষর করা ছিল।
ডাঃ মালেক তারপর বাংকারে চলে গেলেন যেখানে তার স্ত্রী ও কণ্যারা অপেক্ষা করছিলো, তিনি নিজেকে পরিষ্কার করে নিলেন এবং নতজানু হয়ে নিজের প্রার্থনা করেছিলেন। সাবেক গভর্ণর ও সাবেক মন্ত্রীরা তার কিছুটা পরে নিরাপদ জোন হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে সরে গিয়েছিলেন।
বুধবার, ১৫ই ডিসেম্বর
১৫ ডিসেম্বর বুধবার সকালে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে ডাঃ মালেক আমার কাছে আসলেন এটা বলতে যে, গভর্ণর হিসাবে তার পদত্যাগের সময় এবং ১৪ই ডিসেম্বর গভর্ণর হাউস থেকে তার প্রস্থানের সময় সে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে একটি টেলিগ্রাম পেয়েছিলেন। যতদূর আমি জানি, এটিই প্রথম রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া অনুমোদিত একটি যুদ্ধবিরতি।
ডাঃ মালেক বলেছিলেন সে জেনারেল নিয়াজির সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার দেয়া নির্দেশনা “ আপনার এখন যুদ্ধবন্ধের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিতে হবে” এর বিষয়ে এবং তিনি আমার কাছে সহায়তা চাইলেন। জীব এর আরো ক্ষয় এর বাঁচানোর জন্য এবং ব্যক্তিগত ক্ষমতার জন্য আমি রাজি হলাম। আমি তারপর নিরাপদ জোনের কর্ণেল গাফফার, পাকিস্তান সেনা লিয়াজোঁ অফিসার (বেসামরিক পোষাকের) এর সাথে যোগাযোগ করলাম, এবং তারপর আমরা তিনজন আমার রুমে গিয়েছিলাম যেখান থেকে আমরা জেনারেল নিঁয়াজিকে টেলিফোন করেছিলাম।
ডাঃ মালেক জেনারেল নিঁয়াজিকে প্রশ্ন করেছিলেন রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অউসারে তিনি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং জেনারেল নিঁয়াজি উত্তর করেছিলেন তিনি এটি ডাঃ মালেক এর সাথে আলোচনা করতে চান এনং তাকে হোটেল ছেড়ে ক্যান্টমেন্টে যেতে আমন্ত্রণ জানালেন এই বিষয়টি আলোচনা করতে।
আমি ডাঃ মালেককে পরামর্শ করলাম যদি সে নিরাপদ জোন ত্যাগ করে তবে বেশিক্ষণ তার সুরক্ষা থাকবে না এবং আগেরদিন তার পদত্যাগের সময় যা হয়েছিলো এরকম পরিস্থিতি হতে পারে, এবং তা করলে তার জন্য বিপদজনক। আমি তাকে পরামর্শ দিলাম তিনি নিজে না গিয়ে জেনারেল নিয়াজিকে হোটেলে আমন্ত্রন জানাতে।কিন্তু তিনি বললেন তিনি জেনারেল ফারমানকে পাঠাবেন এই মিটিং এ তার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য।
জেনারেল ফারমান যথাযত হোটেলের কাছাকাছি এসেছিলেন। একজন বিদেশী এবং আমি একান্ত ভাবে কাজ করছিলাম, এবং কোনোভাবেই মধ্যস্ততায় থাকা যাচ্ছিলো না, আমি তাদের আভ্যন্তরীন প্রকৃতির আলোচনা থেকে উঠে এলাম এবং ডাঃ মালেক, কর্ণেল গাফফার এবং জেনারেল ফারমান একসাথে রইলেন। পরবর্তীকালে তারা আমাকে আবার ডাকলো এবং তাদের বানানো নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো দেখালো যা জেনারেল ফারমান অনুমোদনের জন্য জেনারেল নিঁয়াজির কাছে নিয়ে যাবে এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার নিকট প্রেরণ করবে।
“আরও অধিক মানুষের জীবন হারানো এবং ধ্বংসের সমাপ্তি আনার জন্য আমরা সম্মানজনক শর্তে ইচ্ছুক”
a.অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্হানে সব ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করা।
b.জাতি সংঘের আয়োজনে শান্তিপূর্ণভাবে পূর্ব পাকিস্হানের প্রশাসন ব্যবস্হা হস্তান্তর।
c.জাতিসংঘের নিশ্চিত করা উচিত:
১)পশ্চিম পাকিস্হান প্রত্যাগমনে অপেক্ষমান সামরিক এবং আধাসামরিক উভয় পাকিস্হানি বাহিনীর নিরাপত্তা।
২) পশ্চিম পাকিস্হান প্রত্যাগমনে অপেক্ষমান সকল বেসামরিক লোক,কর্মচারী এবং আমলাদের নিরাপত্তা।
৩)১৯৪৭ পূর্ববর্তী স্হায়ীভাবে বসবাসরত সকল বহিরাগত/ অস্হানীয়দের নিরাপত।
৪) মার্চ ১৯৭১ হতে যারা পাকিস্হানের জন্য সরকারকে সাহায্য এবং নিবেদিত হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রতিশোধ না নেওয়ার নিশ্চয়তা।
পরে সেদিন জেনারেল ফরমান নিরাপদ অঞ্চলে যান এবং আমাদের তাদের প্রস্তাবে জেনারেল নিয়াজি এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতিক্রিয়া জানান।জেনারেল ফরমান রাত ৯ টার দিকে ফিরে এসেছিলেন এবং আমাদের জানান যে, যদিও জেনারেল নিয়াজি সেই প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করেছিনেন কিন্ত ইসলামাবাদ আইটেম (b) এর পুর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এভাবেই যুদ্ধ থামাবার আরেকটি চেষ্টার সমাপ্তি ঘটেছিলো।
বৃহস্পতিবার, ১৬ই ডিসেম্বর
১৬ই ডিসেম্বর ভোরে আমরা চরমপত্র সম্পর্কে জেনেছিলাম কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্হানী সেনাবাহিনীকে পূর্ব পাকিস্হানে ঐদিন ঢাকার সময় ০৯.৩০ এর আত্নসমর্পন করার সময় বেঁধে দেয়।কর্ণেল গাফ্ফার, ডাঃ মালেক,রেড ক্রস সোসাইটি সংঘের মিঃ সেভেন লামপেল এবং আমি হোটেল থেকে মরিয়া হয়ে টেলিফোনে পাকিস্তান আর্মি হেডকোর্য়ারটারে যোগাযোগের চেষ্টা করি কিন্তু আমরা যোগাযোগে অসমর্থ হয়েছিলাম।২য় বিশ্বযুদ্ধে উত্তর আফ্রিকা এবং ইউরোপে ব্রিটিশ আর্মির একজন ইনফেনট্রি অফিসার হিসেবে অংশগ্রহনের সুবাদে আমিই শুধুমাত্র সচেতন ছিলাম প্রান হারানো এবং ধ্বংসের, যেটা ঢাকার উপর একটা সর্বাত্নক আক্রমনের ফলস্বরুপ হতে পারে।কর্ণেল গাফ্ফার আমাদের বলেন যে তিনি জানতেন পাকিস্হান আর্মির যোগাযোগ কেন্দ্রস্হল আগের দিন ভারতীয় বিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছে,এবং প্রথমত তিনি নিশ্চিত ছিলেন না জেনারেল নিয়াজী আলটিমেটাম গ্রহন /স্বীকার করেছেন কিনা এবং দ্বিতীয়ত পাকিস্হান আর্মি বেঁধে দেয়া সময় গ্রহন করেছে বা করেনি সেটা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অবহিত করতে সক্ষম হয়েছে কিনা।
ইতিমধ্যে ঢাকার ওপর ভারতীয় বাহিনী চক্কর দিয়ে যাচ্ছিলো, সম্ভবত আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এবং আমরা জানতাম ভারতীয় সেনাবাহিনী শফরতলিতে শক্তি জমায়েত করছিলো , সম্ভবত আরো অপ্রতিরোধ্য পদাতিক কামান হামলা আরম্ভ করতে চেয়েছিল। আমার অবশ্যই যোগ করা উচিত যে পরবর্তীকালে ভারতীয় অফিসারেরা বলেছিলো যে যখন তারা ঢাকায় প্রবেশ করেছিল তখন তারা ব্যবসা বুঝিয়েছিল, যদি চরমপত্র স্বীকার করা না হয় তবে তারা অবশ্যই ঢাকা প্রধ্বংসী হামলা চালাত। এটি নিদারুনভাবে জরুরি ছিল এই শহরকে বাঁচানো এবং সকাল ৮ টা ৩০ এর সময় আমি, কর্ণেল গাফফার আর জনাব লেমপেল নিরাপদ অঞ্চল ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেই এবং ক্যান্টনমেন্টের দিকে গাড়ি চালাই জেনারেল নিয়াজির থেকে এটা জানার জন্য যে কি হচ্ছিলো এবং তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন কিনা।
ক্যানটনমেন্ট যাওয়ার সময় আমি জাতিসংঘ কার্যালয়ে জনাব পল মার্ক হেনরিকে অবগত করেছিলাম যে আমরা কি করতে যাচ্ছি।
কিছু বিলম্বের পর আমরা কমান্ড বাংকারের সামনে গিয়েছিলাম কিন্তু জেনারেল নিয়াজিকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। যাই হোক আমরা বাংকারে জেনারেল ফারমানকে খুঁজে পেয়েছিলাম মূল উদ্দেশ্য নিয়ে কালো মুখ করা এবং পুরোপুরি হতাশাগ্রস্থ। দেখা হওয়ার পর তিনি সব কিছু শেষ হওয়ার ইপপ্রেশন দিয়েছিলেন।সে আমাকে জানালেন তিনি সম্পূর্ণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে কথা বলার জন্য অনুমোদিত হয়েছে এবং তারা চরমপত্র গ্রহণ করতে রাজি হয়েছেন।সে আমাকে আরো নিশ্চিত করলো যে তাদের কমিউনিকেশন সেন্টার ধ্বংস হওয়ার ফলে চরমপত্র গ্রহণ করার ব্যাপারে তারা ভারতীয় আর্মিকে জানাতে পারছিলেন না। আমি একটি বিশুদ্ধ যোগাযোগের চ্যানেল কিনা জেনারেল ফারমানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে আমাকে দিয়ে জাতিসংঘের রেডিও নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভারতীয় আর্মির চরমপত্র গ্রহন বহন করাতে পারেন। সে হ্যাঁবোধক ভাবে জবাব দিলেন, তাই আমি তাকে বাংকারের বাইরে নিয়ে আসলাম আমার ওয়াকিটকিটি চালু করতে এবং জাতিসংঘের কার্যালয়ে জনাব পল মার্ক হেনরির সাথে যোগাযোগ করতে। এরপর আমি জেনারেল ফাওমানের উপস্থিতিতে জনাব পল মার্ক হেনরিকে ম্যাসেজ দিলাম এবং জেনারেল ফরমান আরও দুটি দফা/পয়েন্টস যোগ করেন: প্রথম,পাকিস্হান আর্মির যোগাযোগ ব্যবস্হা ভেঙ্গে পড়ার কারণে সাময়িক যুদ্ধবিরতি আরও ৬ ঘন্টা বৃদ্ধি করার জন্য ইন্ডিয়ান আর্মিকে অনুরোধ করা,দ্বিতীয়, ইন্ডিয়ান আর্মিকে আমন্ত্রন জানানো যদি সম্ভব হয় হেলিকপ্টারে ঢাকা বিমান বন্দরে একদল স্টাফ অফিসার পাঠাতে যেখানে তারা নিরাপদ সেনাপতিত্ব এবং যথাযথ সৌজন্যতায় যাতে অধিকতর প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে পারে। আমি যথাযথভাবে সম্পূর্ন বার্তাটি আমার রেডিও দ্বারা পল মার্ক হেনরিকে পাঠাই যিনি পালাক্রমে তাৎক্ষনিক সেটি নিউ দিল্লীতে উপরের মহলে প্রেরন করেন।সময়টা ছিল সকাল ০৯:২০ ।
কর্ণেল গাফফার, জনাব লেমপেল এবং আমি এরপর বাংকার অঞ্চল ত্যাগ করলাম, তখনো ভারতীয় বিমান বাহিনী মাথার উপর চক্কর দিচ্ছিলো। যাইহোক, বার্তাটি ভারতীয় কমান্ডো সময়মত পৌঁছেছিল, এবং ঢাকার উপর আক্রমণের হুমকি প্রতিফলিত হয় নি।
ঢাকা: ৮ মার্চ ১৯৭২.
.
.
দ্বিতীয় অধ্যায়
বেসরকারী দলিলপত্র
এক
রাজনৈতিক বিবৃতি
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২১৮। বাংলাদেশ স্বাধীনতা-আন্দোলনের প্রশ্নে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা বিবৃতি | সংবাদপত্র | মার্চ, ডিসেম্বর ১৯৭১ |
পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছে
জুলফিকার আলী ভুট্টো
.
করাচী, ২৬ শে মার্চ (পাকিস্তান টাইমস) পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকা থেকে প্রত্যাবর্তন করে করাচী বিমানবন্দরে এক হর্ষোৎফুল্ল জনতার উদ্দেশ্যে বলেন যে, পরম করুণাময় আল্লাহর ইচ্ছায় পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছে।
তিনি জনতাকে আরও বলেন যে, তিনি এ মুহূর্তে কোন মন্তব্য করবেন না। তবে তিনি ২৯শে মার্চ দলের কেন্দ্রীয় দফতরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা করবেন করবেন বলে জানান।
জনাব ভুট্টো বলেন যে, এখন তিনি যা বলতে পারেন তা হলো আল্লাহর ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে।
জনাব ভুট্টোর সাথে ছিলেন জনাব আবদুল হাফিজ পীরজাদা, জনাব গোলাম মুস্তাফা খান মির্জ্জা রফি রাজা , জনাব আলী খান তালপুর এবং মিয়া মাহমুদ আলী কাসুরী।
করাচী বিমানবন্দরে এক বিরাট সংখ্যক লোক জনাব ভুট্টোকে সম্বর্ধনা জানান। তিনি বিমান থেকে বেরিয়ে আসলে সমবেত জনতা “শের-ই পাকিস্তান জিন্দাবাদ”, “ফখরে পাকিস্তান-জিন্দাবাদ”, “এক রহেগা পাকিস্তান-জিন্দাবাদ” শ্লোগান দিতে থাকে।
মুজিব দেশ ভাগ করতে চেয়েছে
-ভুট্টো
ডনের (করাচী) এক খবরে প্রকাশ, জনাব ভুট্টো বলেছেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানে একটি স্বাধীন ফ্যাসিস্ট ও সাম্প্রদায়িক সরকার গঠন করতে চেয়েছিলেন।
জনাব ভুট্টো সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্টের কাছে যে খসড়া ফরমুলা পেশ করেন তাতে বলা হয়েছে যে, জাতীয় পরিষদের কোন অধিবেশন বসবে না, জাতীয় পরিষদ দুইটি কমিটিতে ভাগ করা হবে। একটি পশ্চিম পাকিস্তান কমিটি এবং অন্যটি পূর্ব পাকিস্তান কমিটি, অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য প্রাদেশিক পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে, দুই কমিটি যথাক্রমে পশ্চিম পাকিস্তান কমিটি ইসলামাবাদে ও পূর্ব পাকিস্তান কমিটি ঢাকা পৃথকভাবে বৈঠকে মিলিত হবে। এছাড়া অন্তবর্তীকালীন সময়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্র মোতাবেক হলেও সমস্ত ক্ষমতা পূর্ব পাকিস্তানে ৬ দফার ভিত্তিতে হস্তান্তর করা হবে।
জনাব ভুট্টো আরও বলেন যে, ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্র প্রদেশকে কোনো স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেনি। এতে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের প্রস্তাব রয়েছে।
তিনি আরও বলেন যে, পিপলস পার্টি এ অবস্থায় এই মনে করে যে, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে, সেখানে স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার নির্বাচন করা হবে, অতঃপর কেন্দ্রীয় বিষয়াদির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ শেষে প্রয়োজন হলে দুইটি পৃথক কমিটি গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, জাতীয় পরিষদের সুপারিশের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করুন তিনি এটাই দাবী করেছিলেন। তিনি বলেন যে, একবার যদি প্রদেশগুলোকে ক্ষমতা দেয়া হয় তাহলে পাঁচটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবে।
জনাব ভুট্টো বলেন যে, মার্চ মাসের ২৩ ও ২৪ তারিখ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁর উপদেষ্টাদের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় তাতে তারা একটি নতুন ফরমুলা পেশ করেন। এতে তাঁরা তাঁদের পূর্বতন দাবী থেকে সরে গিয়ে বলেন যে, দুটি শাসনতান্ত্রিক কনভেনশন গঠন করতে হবে এবং জাতীয় পরিষদে শাসনতান্ত্রিক প্রস্তাব পেশ অনুমোদন নেবার প্রয়োজন হবে না।
এই দুটি শাসনতান্ত্রিক কনভেনশন দুটি পৃথক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবে এবং পরে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে মিলিত হয়ে ফেডারেশন নয়, কনফেডারেশনের জন্য শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবে। আওয়ামী লীগের এই ডিগবাজীতে আমরা বিস্মিত হইনি। আমরা জানতাম মুজিবুর রহমান কী চান। আমরা জানতাম তাঁর আসল উদ্দেশ্য কী? তাঁর উত্থাপিত প্রস্তাব চালাকি ছাড়া আর কিছু নয়।
জনাব ভুট্টো বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে শেখ মুজিবের নিয়ন্ত্রনাধীন ছিল। তিনি জনসাধারণকে ভুল পথে চালিত করছিলেন এবং প্রকৃতই তিনি পাকিস্তানের সংহতিতে বিশ্বাস করেন না। ২৩শে মার্চ চূড়ান্ত খেলা দেখানো হয়। বাংলাদেশের নতুন পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলা হয়। তাছাড়া জাতির পিতার প্রতিকৃতি পদদলিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানকে দেশের পশ্চিমাঞ্চল থেকে পৃথক করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। জনাব ভুট্টো বলেন, বার কোটি লোকের দেশকে বক্তৃতা, শ্লোগান এবং অন্যভাবে উৎসাহিত করে বিভক্ত ও ধ্বংস করা যাবে না। তিনি বলেন, যেখানে নাইজেরিয়ার মত দেশ একটি অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন হতে দিল না সেখানে পাকিস্তানও দেশকে খণ্ডবিখণ্ড হতে দিতে পারে না।
তিনি জানান, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা পাকিস্তানের নিজস্ব ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
‘ভারত বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করতে পারে’ এ প্রশ্নের জবাবে ভুট্টো বলেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানোর কোনই অধিকার ভারতের নেই। এরূপ কোন অনুরোধ জাতিসংঘ রক্ষা করতে গেলে তা উস্কানীর কাজ হবে বলে ভুট্টো হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
দৈনিক পূর্বদেশ, ৩০ মার্চ, ১৯৭১
.
সশস্ত্র বাহিনী দেশপ্রেমিকদের সার্বিক সহযোগিতার দাবী রাখে
-মাহমুদ আলী
.
পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব মাহমুদ আলী গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক বিবৃতিতে বলেন, প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে পরামর্শ না করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী তাড়াহুড়া করে অতি উৎসাহ বলে পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাশ করায় ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আপত্তি জানিয়েছেন এবং তার আপত্তি খুবই সঠিক। বাস্তবিকই সংশ্লিষ্ট বিষয়টির গুরুত্বকে কোনক্রমেই খাটো করে দেখা যায় না। ভারতীয় লোকসভা প্রস্তাবটি গ্রহণ করে প্রকৃতপক্ষে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার সর্বজনস্বীকৃত আন্তর্জাতিক নীতিকে পদদলিত করেছে। মিঃ করুণানিধির কণ্ঠে তাই, ক্ষুদ্র জাতিসমূহের স্বাধীনতা গ্রাস করার বৃহৎ জাতিগুলোর ফ্যাসিবাদী মতলবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ভারত যা করেছে তাতে অন্যান্য এশীয় দেশে ব্রাহ্মণ্যবাদী অভিসন্ধি প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
ভারতীয় পার্লামেন্টের সর্বসম্মত প্রস্তাবের পরপর পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র ভারতীয় লোকদের অনুপ্রবেশ আমাদের দেশের পূর্ব অঞ্চলের লোকদের জন্য অবর্ণনীয় দুর্দশা ডেকে এনেছে। পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হয়েছে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, মানুষের জানমাল বিপন্ন হয়েছে এবং অন্যান্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অন্যথায় তাদের উপর এ বিপদ আসতো না।
এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক বিকাশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
সশস্ত্র তৎপরতাকে উৎসাহ দান এবং সাহায্য করা ছাড়াও ভারত তার রেডিওসহ সমস্ত প্রচার-মাধ্যমকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিষোদগারের এবং পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্লজ্জ মিথ্যা বানোয়াট বিদ্বেষমূলক প্রচারণার কাজে নিয়োজিত করেছে।
সশস্ত্র ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের এবং তাদের সহযোগীদের প্রতিরোধ করা এবং তাদের একটি চরম শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী মাঠে নেমেছে। আমাদের প্রতিরক্ষাবাহিনী সকল দেশপ্রেমিক মানুষের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার দাবী রাখে। এই সমর্থন যত বেশী হবে, তত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে, দেশের এই অংশে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক তৎপরতা শুরু সহজ হবে।
আমি আশা করি ও বিশ্বাস করি যে আমাদের জনসাধারণ পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করবেন এবং জাতির আহ্বানে সাড়া দেবেন। যেমনটি তারা ১৯৬৫ সালে ভারত ও তার সহযোগীদের সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন।
দৈনিক পাকিস্তান, ৭ এপ্রিল, ১৯৭১
.
বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য ভারত ভিত্তিহীন প্রচারণা চালাচ্ছে
-হামিদুল হক চৌধুরী
.
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও বিশিষ্ট এডভোকেট জনাব হামিদুল হক চৌধুরী নিম্নলিখিত বিবৃতি দিয়েছেনঃ
পূর্ব পাকিস্তানীরা যাই চেয়ে থাক না কেন, তারা নিশ্চয়ই দেশের ঐক্য বানচালের পরিকল্পনা করেনি বা করে না।
পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন এবং সম্প্রসারণবাদী সুবিধার জন্য পাকিস্তানকে ধ্বংস করাই ভারতের প্রচারণার একমাত্র উদ্দেশ্য বলে মনে হচ্ছে। এই উদ্দেশ্য পূরণ এবং বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য সকল তথ্য মাধ্যমে বোমা বর্ষণ করে শহরসমূহকে ধ্বংস ও হাজার হাজার লোককে হত্যার মিথ্যা অভিযোগ বিশ্বের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে।
বস্তুতপক্ষে খবর ও অভিমতের ব্যাপারে ভারতীয় বেতার-সময়ের অর্ধেকটাই এই লক্ষ্য অর্জনে ব্যয় করা হচ্ছে। কতদিন এই ধরণের মিথ্যা টিকে থাকতে পারে।
পূর্ব পাকিস্তানীরা কী চায় তা মাত্র ১২০ দিন আগে ঘোষিত হয়েছে– যখন সমগ্র প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা একটি মাত্র জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোট দেন।
জনগণ সমগ্র দেশকে (পূর্ব ও পশ্চিম) একটি ইউনিট হিসেবে গণ্য করে একটি মাত্র জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে বসার জন্য তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছে একটি একক দেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানসহ পাঁচটি স্বায়ত্তশাসিত ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত সেই দেশের সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে।
ভারতীয় প্রচারণাকারীরা কী করে দাবি করেন যে পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় এবং সেই অর্থহীন তত্ত্বের ভিত্তিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন দিতে শুরু করেছে।
প্রকৃতপক্ষে এই ধরণের ব্যক্তিদের পাকিস্তান অপেক্ষা ভারতে বেশি পাওয়া যাবে। প্রাণহানি হয়েছে, কারণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হতে বাধ্য, যখন আইন ও শৃঙ্খলা এমন এক পর্যায়ে ভেংগে পড়েছিল যা আমরা ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে দেখেছি। এটা খুবই দুঃখজনক এবং এটা এড়ানো প্রত্যেকেরই কাম্য। আমি আশা করি গোটা অঞ্চলের শান্তি এবং উভয়ের দেশের জনগণের কল্যাণের খাতিরে ভারত এই শত্রুতামূলক পথ থেকে বিরত হবে। প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে ভারতের কোনো সন্দেহ থাকলে এখানে তাদের কূটনীতিকদের কাছ থেকে তারা সহজেই তা জানতে পারেন। এই কূটনীতিকরা আবাসিক এলাকায় নিরাপদে বাস করছেন যে আবাসিক এলাকা ভারতের উর্বর বেতার ও প্রচারণাকারীদের মতে ভূমিসাৎ করা হয়েছে।
এখন সকল শ্রেণীর জনগণের কর্তব্য হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে দ্বিগুণ নিষ্ঠার সঙ্গে আত্মনিয়োগ করা। মার্চ মাসে তিন সপ্তাহ যাবৎ হরতালের ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।
প্রত্যেক নাগরিকের প্রত্যেক সরকারের কাছে এই আশা করার অধিকার আছে যে তাদের জীবন, স্বাধীনতা এবং পেশা রক্ষিত হবে। যত শীঘ্র সম্ভব বেসামরিক জনপ্রিয় সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এই প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিবৃতি অভিনন্দনযোগ্য।
দৈনিক পাকিস্তান, ৭ এপ্রিল, ১৯৭১
.
ভারতের প্রতি ভুট্টোর সতর্কবাণী
.
মুলতান, ৫ই এপ্রিল।- পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো আজ ভারতের প্রতি সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ভারতকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে।
দৈনিক জং-এর এক খবরে বলা হয়, জনাব ভুট্টো বলেন, পাকিস্তানের জনগণ ঐক্যবদ্ধ এবং ভারতের প্রতিটি আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের দাঁত ভাংগা জওয়াব দেয়ার জন্য তারা প্রস্তুত।
জনাব ভুট্টো তার ১৯৬৪ সালের জুলাই মাসের এক বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আমাদের মহান প্রতিবেশী চীন এ অঞ্চলে ভারতকে তার সম্প্রসারণমূলক যুদ্ধ শুরু করতে দেবে না। একথার প্রমাণ ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পাওয়া গেছে। এশিয়ার এই বিরাট শক্তি ১৯৬৫ সালে ভারতকে যে চরমপত্র দিয়েছিলো ভারতের তা বিস্মৃত হওয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, এশিয়ার মহান শক্তি চীনের জনগণ নিজের উক্তিতে অনড়। খাঁটি বন্ধু ও স্বাধীনতা প্রিয় এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি চীনাদের সমর্থন রয়েছে।
জনাব ভুট্টো আজ মুলতানে পিপিপির কর্মীদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান প্রসংগে বলেন, জাতি এখন মারাত্মক সংকটের সম্মুখীন। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের শত্রুরা দেশের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। একা সরকারের পক্ষে এ সংকট আয়ত্তে আনা সম্ভব নয়। প্রতিটি নাগরিকদের এ নাজুক মুহূর্তে নিজের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, পাকিস্তান পিপলস পার্টি দেশের নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব ও সংহতির জন্য সচেষ্ট। তিনি বলেন, তার পার্টি এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না যাতে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে পড়বে। আমাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে দেশের নিরাপত্তা ও সংহতি সংরক্ষণ করা। এ জন্য আমরা যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
বর্তমান সংকটের উল্লেখ করে জনাব ভুট্টো বলেন, অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের ছ-দফা কর্মসূচী ছিল মূলতঃ দেশকে দু-অংশে বিভক্ত করার ফর্মুলা। শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমে তাড়াতাড়ি জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের পক্ষপাতী ছিলেন। কারণ তাতে পরিষদে অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর ৬ দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নে সক্ষম হবে। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকজন প্রত্যাখ্যাত বিনাশর্তে শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট আত্মসমর্পন করেন। কেননা তাঁদের আশা ছিল তারা মন্ত্রীত্ব পাবেন।
জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, পিপিপি জানত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে পূর্বে প্রস্তুতকৃত আইন অনুমোদন ছাড়া আর কিছুই করা হবে না। অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ ৬-দফা ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রূপ দিয়েছিল। অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ স্পষ্ট ঘোষণা করেছিল, সে ৬-দফা কর্মসূচীতে এতটুকু পরিবর্তন করবে না। এ জন্য পরিষদে কোন প্রকার অর্থপূর্ণ আলোচনাও সম্ভব ছিল না। আর এ জন্যই পিপলস পার্টি পীড়াপীড়ি করেছিল যে পরিষদের অধিবেশনের আগেই শাসনতন্ত্রের মৌলিক বিষয়ে উভয় সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্টির ঐক্যমত হওয়া প্রয়োজন।
জনাব ভুট্টো বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান জানুয়ারী মাসে পরিষদের অধিবেশন ডাকতে চাইতেন কিন্তু মার্চে তিনি পরিষদের বাইরে সমঝোতা স্থাপনে সম্মত হন। একথা স্পষ্ট যে, পিপলস পার্টি আইনগত ভাবে দেশকে টুকরো করার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিল।
জনাব ভুট্টো বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের কোন কোন নেতা অভিযোগ করেছিলেন যে, তিনি করাচীর এক জনসভায় দেশকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা পেশ করেন। অথচ তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলোর হাতে হস্তান্তর করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের সংহতি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্যই পিপলস পার্টি অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের সাথে ক্ষমতায় অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিল। এ ছাড়া এপিপির ক্ষমতার এতটুকু খায়েশ ছিল না। তিনি বলেন, এটা ছিল দুঃখজনক যে, সেসব রাজনৈতিক নেতাই এমন একজন লোকের নিকট তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী করছিলেন যিনি দেশকে টুকরো করতে চেয়েছিলেন।
জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, এটা ছিল মূলতঃ লন্ডন পরিকল্পনার একটা অংশ। ১৯৬৯ সালের অক্টোবর মাসে পশ্চিম পাকিস্তানের পরাজিত নেতারা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে যোগসাজশ করে উক্ত পরিকল্পনাটি তৈরী করেন।
তিনি বলেন, মূলতঃ এসব রাজনৈতিক নেতা নিজের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের অস্তিত্ব, স্থায়িত্ব ও আদর্শকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, পিপলস পার্টি যে দেশকে টুকরো টুকরো করা থেকে রক্ষা করেছে ইতিহাস তা প্রমাণ করবে।
তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আসল সমস্যা হল বর্তমান অর্থনীতির … শোষণ থেকে মুক্তি লাভ করা। অনুরূপ পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণেরও এই একই সমস্যা। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ এই বিশ্বাসে ৬-দফার পক্ষে ভোট দিয়েছে যে, এর মাধ্যমে বর্তমান অর্থনৈতিক শোষণের অবসান ঘটবে। কিন্তু বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য তারা ৬ দফার পক্ষে ভোট দেয়নি।
পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের যে কোন প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রেসিডেন্ট এক পাকিস্তানের নিশ্চয়তা দিবেন এবং দেশের উভয় অংশ থেকে বর্তমান অর্থনৈতিক শোষণের অবসান ঘটাবেন পিপলস পার্টি তার সাথে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
দৈনিক পাকিস্তান, ৮ এপ্রিল, ১৯৭১
.
ভারতীয় হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী
পীর মোহসিন উদ্দিনের বিবৃতি
.
পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রেসিডেন্ট পীর মোহসিন উদ্দিন আহমদের বিবৃতির পূর্ণ বিবরণঃ
গত কয়েকদিন ধরে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলী সম্পর্কে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম কল্পিত ও নির্লজ্জভাবে মিথ্যা খবর পরিবেশন করে আসছে। এ ধরনের জঘন্য ও মিথ্যা প্রচারণায় তারা এতটুকু ইতস্ততঃ বোধ করছে না।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলীর উপর ভারতীয় পার্লামেন্টেও একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত বরাবরও ভারতীয় সৈন্য সমাবেশ, সাদা পোশাকে ভারতীয় সৈন্যদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ এবং গভীর সাগরে পাকিস্তানী বাণিজ্য জাহাজ হয়রানীর খবর পাওয়া গেছে।
এসব কার্য্যকলাপের মাধ্যমে ভারত তার আজাদী পূর্বকালের মানসিকতারই পরিচয় দিচ্ছে। ভারতের এসব কার্য্যকলাপ আমাদেরকে আজাদী পূর্ব দিনগুলোতে মুসলমানদের উপর হিন্দুদের নির্যাতনের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়, যেসময় ব্রিটিশ রাজ্যের ছত্রছায়ায় ভারতীয় হিন্দুরা প্রতারণা করে মুসলমানদের সমস্ত অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে এবং ধর্মীয় কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ ও মুসলিম ছাত্রদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সীমিত ও অর্থনৈতিক দুরবস্থা সৃষ্টি করে মুসলমানদের মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করেছে। সুতরাং তৎকালীন ভারতের মুসলমানগণ তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক অগ্রগতির নিশ্চয়তা বিধান ও ধর্মীয় ও জাতীয় স্বাধীনতা পুঃনপ্রতিষ্ঠার জন্য ভারত বিভাগ করে একটি সম্মানজনক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করেন।
কিন্তু ভারত আজও তার পুরানো নীতি ভুলতে পারেনি। দেশ বিভাগের পর সীমানা চিহ্নিতকরণ ও পাকিস্তানের পাওনা প্রদানে অস্বীকৃতি, পূর্ব পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধের চেষ্টা, পাকিস্তানের আজাদী হরণ করার প্রচেষ্টা প্রভৃতি ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।
এবারও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার সম্পর্কে একই উদ্দেশ্য নিয়ে ভারত সক্রিয় হয়েছে। ভারত এ যাবত যা করেছে, তা শুধু জঘন্য ও নিন্দনীয়ই নয়, এটা আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতিরও সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সুতরাং আমি ভারতীয় কার্যাবলীর তীব্র নিন্দা করে ভারত সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ কখনই এই ভারতীয় চক্রান্তের স্বীকার হবে না, বরং ভারতীয় চক্রান্ত নস্যাৎ করার জন্যে তাদের জানমাল কোরবান করতে তারা এতটুকু দ্বিধা করবে না। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের আজাদী রক্ষার জন্য এক কাতারে দাঁড়াবে।
আমি সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী ভাইদের প্রতি ভারতীয় অনুপ্রবেশের সব রকম প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার আবেদন জানাচ্ছি। এই মুহূর্তে সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীণ আইন ও শৃঙ্খলা বজায়, শান্তি প্রিয় জনসাধারণের জান, মাল ও ইজ্জত রক্ষার কাজে নিয়োজিত ও দেশের সীমান্ত রক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী দুষ্কৃতকারী ও বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালাচ্ছে। দেশে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যে জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা দরকার। সুতরাং আমি এ কাজে সকলের প্রতি সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
দৈনিক পাকিস্তান, ৮ এপ্রিল, ১৯৭১।
.
ভারত পূর্ব পাকিস্তানীদের দাসে পরিণত করতে চায়
মওলানা মফিজুল হক
.
পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলেমার সাধারণ সম্পাদক মওলানা মিয়া মফিজুল হক বলেন, ভারত পূর্ব পাকিস্তানের ৭ কোটি মানুষকে চিরদিনের জন্যে দাসে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত রয়েছে।
এপিপির খবরে প্রকাশ, গত মঙ্গলবার ঢাকায় প্রদত্ত এক বিবৃতিতে মওলানা মফিজুল হক বলেন, ভারত তাদের বেতার প্রচারণা ও সশস্ত্র লোক অনুপ্রবেশের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে বিপথে পরিচালিত করেছে এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় দিক দিয়ে এই প্রদেশটিকে ধ্বংস করে দিতে চায়। তিনি বলেন, ভারতীয়রা বন্ধুর ছদ্মাবরণে দরদী সেজে আমাদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড পঙ্গু করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারতের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী হয়ে ভারতীয়দের সাহায্যের আশায় আছেন তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। অতীতে প্রাকবিভক্ত কালীন দিনে ভারতীয় ব্রাহ্মণ্য সাম্রাজ্যবাদ মুসলমানদের সাথে কি ধরণের ব্যবহার করেছিল, তা থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। এমন কি এখনও তারা ভারতীয় মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মওলানা মফিজুল হক বলেন, আমরা নির্বাচনের বহু পূর্বেই (অধুনা বে আইনী ঘোষিত) রাজনৈতিক দলকে জাতিকে এক অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে না দেয়ার জন্য হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের হুঁশিয়ারীর প্রতি কর্ণপাত করেননি। তিনি আরও বলেন, ভারতের ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের কথা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না। ভারতের যে কোন রকমের হুমকি মোকাবিলায় প্রতিটি পূর্ব পাকিস্তানী এক কাতারে ঐক্যবদ্ধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মওলানা হক শত্রুদের প্রতিহত এবং দেশে আইন শৃংখলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সামরিক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
পূর্ব পাকিস্তান আঞ্জুমানে মোহাজেরীন এর সভাপতি দেওয়ান ওয়ারাসাত হোসেন খান পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও সংহতি রক্ষার নিশ্চয়তা বিধানের উদ্দেশ্যে লাখ লাখ মোহাজের যে কোন রকমের ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাহায্যার্থে পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র ভারতীয়দের প্রেরণের দ্বারা ভারত আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থী ভারত কর্তৃক এই ধরনের আক্রমণাত্মক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য বিশ্বজনমতের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
দৈনিক পাকিস্তান, ৮ এপ্রিল, ১৯৭১।
.
পাকিস্তানকে ধ্বংস করার আরেকটি পদক্ষেপ
ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ
.
পাকিস্তান কাউন্সিল লীগের এগারো জন নেতা গত সোমবার সংবাদপত্রে নিম্নলিখিত বিবৃতি দিয়েছেনঃ
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ভারত পাকিস্তানের প্রতি বৈরী মনোভাব পোষণ করে আসছে। এর বিশেষ কারণ এই যে ভারতের অঞ্চল হতে দুটো অঞ্চলকে আলাদা করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকে ভারত মানসিক দিক থেকে কখনোই মেনে নিতে পারেনি।
একথা সকলেরই জানা আছে যে ভারত বিভাগ বাতিল করার জন্য ভারত প্রতিটি সুযোগেরই সদ্ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। এমনকি ভারত ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের উপর সশস্ত্র হামলাও করেছিল। কিন্তু বীর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও জনসাধারণ এই জঘন্য প্রয়াসকে পুরোপুরি ব্যর্থ করে দিয়েছে। আমাদের জনসাধারণ কখনোই ভুলবে না যে, লক্ষ লক্ষ মুসলমানের জীবন ও সম্পদের বিনিময়ে ভারতীয় মুসলমানদের এই বাসভূমি অর্জিত হয়েছে। কোন গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ঐ আত্মত্যাগ করা হয়নি- হয়েছিল ইসলামিক সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তিতে আদর্শভিত্তিক জীবনযাত্রা বাস্তবায়নের জন্য। সমস্যা পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তা জনসাধারণকে দেশের সংহতি ও আদর্শ রক্ষা থেকে কখনোই বিরত করবে না।
পাকিস্তান এখন বিভক্ত বলে ভারতীয় নেতারা যে অভিমত পোষণ করছেন তা পুরোপুরি ভুল। সমগ্র জনসাধারণ দেশের সংহতি রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাকিস্তানের বর্তমান শাসনতান্ত্রিক পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তা জনসাধারণকে দেশের সংহতি ও আদর্শ রক্ষা থেকে কখনোই বিরত করবে না।
ভারতীয় পার্লামেন্টে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে তা পাকিস্তানকে ধ্বংস করার আর একটি পদক্ষেপ ছাড়া কিছুই নয়। ভারত তাই তার বেতার মারফত মিথ্যা ও অন্যায় প্রচারণা দ্বারা বিশ্বের জনমতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আমরা নিশ্চিত যে, আমাদের জনসাধারণ এই ভিত্তিহীন প্রচারণায় কান দেবেন না।
ভারত আমাদের এই প্রিয় দেশ দখল করার জন্য পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে সশস্ত্র সৈন্য পাঠাচ্ছে।
আমরা দৃঢ় কণ্ঠে ভারতের এই দূরভিসন্ধিমূলক কার্যক্রমের নিন্দা করছি। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য শত্রুর সকল চেষ্টা ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হবার আবেদন জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন (১) পাকিস্তান মুসলিম লীগের সহ সভাপতি এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, (২) পাকিস্তান মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব আবুল কাসেম (৩) পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি সৈয়দ খাজা খয়ের উদ্দিন (৪) পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব আতাউল হক খান (এডভোকেট), (৫) পাকিস্তান প্রাদেশিক মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আতাউল হক (এডভোকেট), (৬) পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হক মজুমদার (এডভোকেট), (৭) ঢাকা শহর মুসলিম লীগের সভাপতি মোহাম্মদ সেরাজুদ্দিন, (৮) পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম মুজিবুল হক, (৯) ঢাকা জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি কে এম সেরাজুল হক, (১০) ঢাকা জেলা মুসলিম লীগের সম্পাদক নেজামুদ্দিন, (১১) ঢাকা শহর মুসলিম লীগের সম্পাদক এ মতিন এডভোকেট।
দৈনিক পাকিস্তান, ৮ এপ্রিল, ১৯৭১।
.
প্রেসিডেন্টের ব্যবস্থা সমর্থনের আহ্বান
পিন্ডি বারের ৮০ জন সদস্যের বিবৃতি
.
রাওয়ালপিন্ডি, ৭ ই এপ্রিল (এপিপি)। পাকিস্তানের শত্রুদের উস্কানির দরুণ পূর্ব পাকিস্তানের সৃষ্ট সঙ্কটের মোকাবিলার উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তার প্রতি পূর্ণ ও অকুন্ঠ সমর্থন জ্ঞাপনের জন্য রাওয়ালপিন্ডি বার সমিতির ৮০ জন সদস্য দেশের সকল দেশপ্রেমিক লোকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল এক বিবৃতিতে আইনজীবীরা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কর্তৃক সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিঃ এন পদগর্নির লিপির জবাবে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। যথোপযুক্তভাবে পত্রের জবাবে পাকিস্তানের জনগণের মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাধারণভাবে সমগ্র বিশ্বের নিকট এবং বিশেষ করে ভারত সরকারকে এটা পরিষ্কার করে আমরা জানিয়ে দিতে চাই যে, পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার জন্য দেশের সমস্ত মানুষ পাকিস্তানের শত্রুদের দুরভিসন্ধি নস্যাৎ করে দিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পেছনে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, পাকিস্তানের শুরু থেকেই আইনজীবী সম্প্রদায় পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও সংহতি রক্ষার সংগ্রামের প্রথম সারিতে রয়েছে।
আইনজীবিরা পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার জন্য প্রসিডেন্টের নেতৃত্বে যে কোন পদক্ষেপের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রসিডেন্টকে দিয়েছেন।
দৈনিক পাকিস্তান, ১ এপ্রিল, ১৯৭১
আওয়ামী লীগ ভারতের পক্ষেই কাজ করছিল
কাজী কাদের
.
করাচী ৮ ই এপ্রিল, (এপিপি)। পাকিস্তান মুসলীম লীগের (কাইয়ুম গ্রুপ) প্রধান সংগঠক জনাব কাজী আবদুল কাদের আজ এখানে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী, সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের সময়োচিত পদক্ষেপ এবং একই সাথে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপ ইত্যাদি ব্যাপারে একটি কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তা হলো আওয়ামী লীগ নেতারা পাকিস্তানের পরম শত্রু ভারতের পক্ষেই কাজ করছিলেন।
তিনি এখানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী জনাব কাদের শেখ মুজিবর রহমানের এবং বে-আইনী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন সমস্ত অরাজকতার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানই দায়ী।
তিনি বলেন, নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমান গোটা পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে পরিচালিত না করার দরুণই পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসসহ আরো কতিপয় ঘটনাকে শেখ মুজিবুর রহমান মূলধন করেছিলেন। তার গোটা রাজনীতি মাত্র একটি বস্তু অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তান এবং তার অধিবাসীদের ঘৃণার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।
.
কাজী কাদের বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান গোটা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ভারতের সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ জন্যেই তিনি তাঁর রাজনীতি পূর্ব পাকিস্তানে সীমিত রেখেছিলন।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হয়েছে এটা সত্য। কিন্তু তারা শোষণের বিরুদ্ধে চটকদার শ্লোগান দিয়ে এবং পশ্চিম পাকিস্তানী ভাইদের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানীদের মন বিষিয়ে তুলেই বিজয়ী হয়েছে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি ভারতের সাথে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের যোগসাজশের আসল মতলবটা যদি জনসাধারণ জানতো, তাহলে তারা নিষিদ্ধ দলটিকে কোন মতেই ভোট দিত না।
জনাব কাদের বলেন যে, বিগত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্র বিরোধী চক্র কুখ্যাত হিন্দু গুন্ডা এবং দুর্বৃত্ত দুষ্কৃতকারী দলের আশীর্বাদ পেয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারকালে আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের উদ্দেশ্য অর্থাৎ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার এবং আমাদের প্রিয় দেশকে খন্ড-বিখন্ড করার কথা প্রকাশ করেছিল।
পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী জনাব কাদের বলেন যে, আওয়ামী লীগের অসহযোগ আন্দোলনে যা যা ঘটেছে তার সব কিছুর জন্য শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর দলই পুরোপুরি দায়ী।
তিনি বলেন যে, শেখ মুজিব ও তাঁর দলের লোকেরা কুখ্যাত বাইশ পরিবারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পয়সা নিয়েছে।
তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানেকে ভারতের কাছে তুলে দেয়া বা মার্তৃভূমির বাকী অংশ থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যে জনসাধারণ নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি।
রাষ্ট্র বিরোধীদের বিরুদ্ধে সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে কাজী কাদের তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের পূর্ব পাকিস্তানকে ভারতের কাছে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র অংকুরেই বিনাশ করে প্রেসিডেন্ট তার রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্বই পালন করেছেন।
কাজী কাদের পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ এবং ভারতীয় পত্রপত্রিকা ও বেতারের জঘন্য প্রোপাগান্ডা এবং নাক গলানোর জন্যে ভারতকে উৎসাহদানকারী এবং পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির বিকৃত খবর পরিবেশনরত পাশ্চাত্যের এক শ্রেণীর পত্র পত্রিকার তীব্র নিন্দা করেন।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে চীন যে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে, তিনি তাকে স্বাগত জানান।
কাজী কাদের বলেন যে, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ প্রবর্তিত ফ্যাসিবাদী নীতিতেই গত নির্বাচন সম্পাদিত হয়েছিল।তিনি বলেন যে, পাকিস্তান মুসলিম লীগ সব সময় পাকিস্তানের সংহতি ও আঞ্চলিক অখন্ডতা অক্ষুণ্ন নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে। যখনই মুসলীম লীগের পূর্ব পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দ নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ৬ দফা কর্মসূচীর বিরুদ্ধে কথা বলেছে তখনই তাদের পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের তাবেদার বলে অভিহিত করা হয়েছে।
পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীই প্রমাণ করেছে যে, পাকিস্তান মুসলীম লীগ যে কথা বলেছিল তা সম্পূর্ণ সত্য।
দৈনিক পাকিস্তান, ১০ এপ্রিল, ১৯৭১।
.
পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে সোভিয়েত মনোভাবের প্রতিবাদ
সাংবাদিক সম্মেলনে ভুট্টো
.
করাচী, ১৪ ই এপ্রিল (এপিপি)।পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের জনগণের পক্ষে আজ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে সোভিয়েত ইউনিয়নের মনোভাবের জোর প্রতিবাদ করেছেন। তিনি তার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগর্ণির বাণীকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ‘নগ্ন হস্তক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে গণচীনের ভূমিকাকে সঠিক এবং সময়ানুগ বলে অভিহিত করে বলেন, সোভিয়েতের মনোভাব লেনিনবাদ ও মার্কসবাদের শিক্ষার পরিপন্থী।
পদগর্ণির বাণীর জবাবে জাতিসংঘ সনদ ও বান্দুং নীতিতে বর্ণিত সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতি সোভিয়েত ইউনিয়নকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ায় তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন জাতিসংঘ সনদ এবং বান্দুং নীতি ভুলে গিয়েছে কিনা জানি না। তবে তারা লেনিনের সমাজতন্ত্রের আদর্শ ভুলে গিয়ে থাকলে সেটাই হবে বিস্ময়কর।
ভুট্টো বলেন, এটা সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থপতি ও নির্মাতা ভি আই লেনিনের বৈদেশিক হস্তক্ষেপের প্রশ্নে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সম্পর্ক সংক্রান্ত বিখ্যাত নীতির বরখেলাপ। অথচ উক্ত নীতি হল সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান নীতি।
ভুট্টো বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি বৃহৎ শক্তিশালী প্রতিবেশী ও পাকিস্তানের এক ভাল বন্ধু।পাকিস্তান তার সাথে ভাল সম্পর্ক চায় এবং এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য পাকিস্তান সোভিয়েতের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি মন্ত্রী থাকাকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে তার ব্যক্তিগত গভীর আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেওয়া নেওয়ার উপাদানটি খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগর্নি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকট সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে চিঠি লিখেছেন, যে বিষয়টি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ এখতিয়ারে ছিল এবং থাকবে।
যে সংকট দেখা দিয়েছে, স্বভাবতই তার রাজনৈতিক সমাধানই পাকিস্তানের কাম্য হবে।
আমরা রাজনৈতিক সমাধানের সব রকম চেষ্টা করেছি। যখনই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসবে, আমি নিশ্চিত যে, আলোচনার সূত্র বের করা হবে এবং রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর নতুন প্রয়াস শুরু হবে।কেননা রাজনৈতিক নিষ্পত্তিই হলো আসল নিষ্পত্তি।
তিনি অবশ্য বলেন, পাকিস্তান কোন রাজনৈতিক মীমাংসা অথবা অন্য কোন সমাধান পেল কিনা সেটা সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের জনগণের নিজস্ব ব্যাপার। নিষ্পত্তির ধরণ কি হবে সেটা তারাই ঠিক করবেন। আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান কিভাবে করবো সে ব্যাপারে অন্য কারো উপদেশ আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা অন্য কোনো দেশের কলোনী নই অথবা কারো প্রভাবাধীন নই যে আমাদের এ ধরনের উপদেশ মানতে হবে।
যাই হোক ভুট্টো বলেন যে, পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সময় অন্যান্য কতিপয় দেশের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করতে চান না।
আমি এটা বলছি কারণ এ পর্যন্ত তাদের মনোভাব অস্পষ্ট এবং তাদের হস্তক্ষেপের কোন প্রমাণ নেই। আর প্রমাণ এখনো এমন সিদ্ধান্তমূলক নয় যে, এর প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।যাই হোক আমরা পরিস্থিতি লক্ষ্য করছি এবং হস্তক্ষেপের মাত্রা বাড়লে এবং আমরা হস্তক্ষেপ সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হলে অবশ্যই আমাদের জনগণকে আস্থায় আনব এবং পরিস্থিতি আয়ত্বে আনার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বৈদিশিক হস্তক্ষেপ সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হওয়ার পরই শুধুমাত্র চীন পাকিস্তানকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। চীন প্রধান এশীয় শক্তি এবং পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত কর্তৃক আন্তর্জাতিক রীতি নীতি ও জাতিসংঘ সনদ নগ্নভাবে লঙ্ঘনের প্রতিবাদ করেছে।
ভারতীয় হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের এই ন্যায্য সংগ্রামের চীনা সমর্থনের জন্য পাকিস্তানী জনগণ চীনের কাছে কৃতজ্ঞ।
আমাদের অভ্যন্তরীণ অসুবিধা সমূহ দূর করার কাজ বিদেশী রাষ্ট্রগুলো আমাদের হাতে ছেড়ে দিলে ভাল হয়।
আমরা গুরুতর সমস্যায় নিপতিত এবং আমরা এর প্রতি অবিভক্ত ও পূর্ণ দৃষ্টি দিতে চাই।
জনাব ভুট্টো বর্তমান সংকটের মোকাবিলায় জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের দাবী জানান।
তিনি বলেন, বৈদিশিক হস্তক্ষেপ রোধের একটি নিশ্চিত পন্থা হলো তার মোকাবিলায় ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণ।
তিনি বলেন যে, গঠনমূলক রাজনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে ফলপ্রসূভাবে বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়। তিনি জানান যে, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা কাহিনী ও গুজব ছড়িয়ে এই পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করা হচ্ছে। জনাব ভুট্টো বলেন যে, জনসাধারণ বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ দলরূপে পিপলস পার্টিকে নির্বাচিত করেছে। তাই জনগণের প্রতি পিপলস পার্টির সরাসরি ও বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। বর্তমান সংকট অবসানের জন্য তাদের গঠনমূলক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
তিনি বলেন যে, এ ব্যাপারে গত ১লা ও ২রা এপ্রিল রাওয়ালপিন্ডিতে তিনি প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা বর্তমান সংকট সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন। জনাব ভুট্টো বলেন, দেশের বর্তমান সংকটজনক পরিস্থিতি অবসানের জন্য জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণ যে প্রয়োজন সেকথা আমি প্রেসিডেন্টকে বলেছি। জনাব ভুট্টোর ধারণা, প্রেসিডেন্ট সমস্যাটি সমাধানের উদ্দেশ্যে যাতে যুক্ত প্রচেষ্টা চালাতে পারেন সেজন্য তিনি (প্রেসিডেন্ট) ক্রমান্বয়ে ব্যাপকভাবে জনসাধারণ ও তাদের প্রতিনিধিদের সংযুক্ত করতে ইচ্ছুক হচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস, এ ধরনের জাতীয় সমস্যা একমাত্র জনগণই সমাধান করতে পারে। অবশ্য আমরা যদি আমাদের ব্যাপারে ঠিকঠাক করার, স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার, অতীত অবস্থা বর্জন ও নতুন করে জীবন শুরুর জন্যে সংকল্পবদ্ধ হই।
পাকিস্তানকে খন্ডিত করার চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গেছে
ফরিদ আহমেদের বিবৃতি
.
এপিপি পরিবেশিত এক খবরে প্রকাশ, মৌলবী ফরিদ আহমেদ গতকাল বলেছেন, পাকিস্তানকে খন্ডিত করা এবং মুসলমানদের হিন্দু ব্রাহ্মণ্য ফ্যাসীবাদের ক্রীতদাসে পরিণত করার ভারতীয় চক্রান্ত বর্তমানে নিরপেক্ষ বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশদ্রোহী ও পাকিস্তানীদের মধ্যে থেকে হিন্দু-ভারতের সংগৃহীত ক্রীড়ণকদের রক্ষা করার জন্য হিন্দুস্থান পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক অত্যাচারের মনগড়া ও ভিত্তিহীন কাহিনী ব্যাপকভাবে প্রচার করছে। হিন্দু-ভারতের সঙ্গে যে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের এজেন্টরা ষড়যন্ত্র করছে, তারাই আগ্রহভরে এই মিথ্যা সংবাদ গোপনসূত্র থেকে প্রাপ্ত বলে প্রচার করছে।
তিনি বলেন, এই সব সংবাদদাতা সক্রিয়ভাবে এই কুকর্মে লিপ্ত রয়েছে। ঢাকা শহর ধ্বংস করা হয়েছে, ট্যাঙ্ক যুদ্ধ, ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও, জেনারেল টিক্কা খানের হত্যা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, চট্টগ্রাম বন্দর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত , শেখ মুজিব ও তাঁর অনুগামীগণ কর্তৃক স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির বিভিন্ন অংশের রণাঙ্গণে বিরাট বিজয়ের মিথ্যা সংবাদ বর্তমানে সম্পূর্ণরুপে ফাঁস হয়ে পড়েছে।
মৌলবী ফরিদ আহমেদ বলেন, যাঁরা এই মিথ্যাচার পরীক্ষা করছেন, তাঁদের সীমান্ত পারের এই অসত্য প্রচারণা ঘৃণা সৃষ্টি করেছে।
মৌলবী ফরিদ আহমেদ বলেন, আমরা দুবার চট্টগ্রাম সফর এবং বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের সাথে আলাপ-আলোচনার সুযোগ হয়েছে। ১লা মার্চ থেকে ২৯শে মার্চ পর্যন্ত সময়ে সব শ্রেণীর মানুষের কাছ থেকে জোর করে অর্থ আদায় করা হয়। রিপোর্ট ও আনুমানিক হিসেবে প্রায় এক কোটি টাকা বেআইনী আওয়ামী লীগ গণবাহিনীর সদস্যরা বন্দুকের মুখে আদায় করেছে। এই কাজে চট্টগ্রামের সুপরিচিত হিন্দু যুবকেরা সক্রিয়ভাবে তাদের সাহায্য করেছে। আমরা বর্বরতার এমন এক অধ্যায় প্রত্যক্ষ করেছি যা এক শ্রেণীর পশু তাদের স্বগোত্রীয় পশুদের ওপরেও প্রয়োগ করে না।
কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে মৌলবী ফরিদ আহমেদ বলেন, ২৬শে মার্চ রাত্রে পাথরঘাটার কার্যরত প্রহরীদের হত্যা করা হয়। তাদের অপরাধ, তারা এমন এক শ্রণীর মুসলমান যাকে হিন্দু ও তাদের সহযোগীরা পছন্দ করে না। এই প্রহরীদের মধ্যে একজন কোন মতে রক্ষা পায় এবং সে শপথ নিয়ে আমাকে বলেছে কিভাবে ২৬শে মার্চ তাদের ওপর হত্যাকান্ড সাধিত হয়েছে। একইভাবে কর্ণফুলীর কাগজকলের কর্মচারীগণ তিনটি ট্রাকযোগে আশ্রয়লাভের জন্য যখন চট্টগ্রাম আসছিল তখন কালুরঘাটের পুলের কাছে তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়। শেরশাহ কোলনীতে আরো ৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন অংশ থেকে একই ধরনের খবরাখবর পাওয়া গেছে।
সমস্ত ওয়ালেস কলোনী অগ্নিদগ্ধ করা হয়েছে। কাউকে রেহাই দেয়া হয়নি।
আমাদের মাতৃভূমিতে ভারতীয় এজেন্টদের হাতে আমাদের কি এই মূল্য দিতে হবে? ইসলামের নামে যে দেশের জন্ম, সেই দেশে আশ্রয় লাভের জন্য যারা হিন্দুস্তানে তাদের সব কিছু ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছেন, তারা কি এমন ব্যবহার পাবেন যেমন ব্যবহার পশুরাও মানুষের কাছে আশা করে না?
মৌলবী ফরিদ বলেন, সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা হচ্ছে, গত ২৭শে অথবা ২৮শে মার্চ সকালে ধর্মপ্রাণ ব্যবসায়ী চার ভাই যখন পবিত্র কোরআন পাঠরত ছিলেন, তখন বেআইনী আওয়ামী লীগ সদস্যদের সাহায্যে ভারতীয় এজেন্টরা তাদের আক্রমণ করে। তিনজনের কাছ থেকে তিনটি কোরআন তারা ছিনিয়ে নেয়। চতুর্থ ব্যক্তি জনাব আব্দুল মজিদ তার কোরআন দিতে অস্বীকার করেন। তখন অন্যান্য তিনজনসহ তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, একমাত্র ইসলামের নামেই এই দেশের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস ভারতীয় এজেন্টরা তথাকথিত সাংস্কৃতিক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের নামে এমন জঘন্য কাজ সম্পাদনে সক্ষম হয়েছে, যা করতে হিটলারের ঘাতকদের বর্বরতাও লজ্জা পাবে।
তিনি বলেন, এই ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতেই সেনাবাহিনী এই সমস্ত লোকদের উচ্ছেদ করে পরিস্থিতি আয়ত্বে এনেছে। এদেরই হিন্দুস্তানী গুন্ডারা বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী বলে উল্লেখ করছে। এ সব কারণেই চট্টগ্রামবাসীরা সেনাবাহিনীকে তাদের ত্রাণকর্তারূপে দুই হাতে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। অনেকে প্রকৃত ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমে সেনাবাহিনীর এই মহান কার্যকলাপে চট্টগ্রামের শাহী জামে মসজিদে অশ্রুসিক্ত নয়নে মোনাজাত করেছেন। ভারতের সাহায্যপুষ্ট গুন্ডাদের ষড়যন্ত্র বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচনের জন্য আমি কর্তৃপক্ষকে ঘরে ঘরে তদন্ত চালিয়ে সব রকমের প্রমাণ সংগ্রহের জন্য অনুরোধ জানাই।
দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ এপ্রিল, ১৯৭১
ইয়াহিয়া ভুট্টোর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে
-সলিমী
.
লারকানা, ১৩ ই এপ্রিল (এপিপি)। বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনাব বি এ সলিমী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিচ্ছিন্নতাবাদীর সাথে তার সম্পূর্ণ সম্পর্কহীনতা এবং অননুমোদন ঘোষণা করছেন।
গত রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের দেশ-প্রেমিক এবং দলের গোপন বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনার সম্পর্কে অজ্ঞ সদস্যদের প্রতি বর্তমান সংকট উত্তরণ এবং জাতীয় সংহতি ও অখন্ডতা অক্ষুণ্ন রাখার ব্যাপারে প্রসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও পিপলস পার্টি প্রধান জনাব ভুট্টোর সাথে সহযোগিতারও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, প্রসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও পিপলস পার্টি প্রধান জনাব ভুট্টো সাম্প্রতিক সংকটে যে বীরত্বপূর্ণ ও গৌরবজনক ভূমিকা পালন করেছেন সেজন্য জাতি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ এবং তাদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
তিনি পাকিস্তানের প্রতি ভারতের শত্রুতামূলক আচরণেরও নিন্দা করেন। সেনাবাহিনীর দক্ষতায় আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের দুশমনদের সব অশুভ চক্রান্ত নস্যাৎ করে বর্তমান সংকট পাড়ি দেবে তাতে আমরা নিশ্চিত।
জনাব সলিমী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের দ্বৈত ভূমিকারও কঠোর নিন্দা করেন
দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ এপ্রিল, ১৯৭১
ভুট্টোর নির্দেশঃ প্রেসিডেন্টের হস্ত শক্তিশালী করুন।
চিস্তিয়ান, ১৯ শে এপ্রিল, পিপিআই। পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জনাব জেড, এ ভুট্টো যারা পাকিস্তনের অখণ্ডতা আর সংহতির বিরুদ্ধে কাজ করছে তাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং তাদের সম্পর্ক সরকারের কাছে রিপোর্ট করার জন্য দলীয় সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। এখানকার পিপিপি প্রসিডেন্ট সৈয়দ ইমদাদ হোসেন শাহের কাছে লিখিত একটি চিঠিতে জনাব ভুট্টো এই আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তাঁর দলীয় সদস্যদের প্রতি বর্তমান সংকট নিরসনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের হস্তকে শক্তিশালী করার কাজে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান।
পূর্বদেশ, ২০ এপ্রিল, ১৯৭১।
রাজনৈতিক শুন্যতা পূরণের জন্য শাসনতন্ত্র
জারির সুপারিশ
করাচী প্রেস ক্লাবে খান আবদুল কাইয়ুম খান
.
করাচী, ২রা মে (পিপিআই)। কাইয়ুমপন্থী পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট খান আবদুল কাইয়ুম খান আজ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের জন্য একটি শাসনতন্ত্র জারি করার সুপারিশ করেন।
করাচী প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, শাসনতন্ত্রের অভাবে দেশ বেশী দিন চলতে পারে না। তিনি যে শাসনতন্ত্রের উল্লেখ করেন তাতে মৌল অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে এবং দেশের ঐক্য ও সংহতি এমনভাবে বিধিবদ্ধ করতে হবে যাতে ভিতরের ও বাহিরের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়। মুসলিম লীগ প্রধান শক্তিশালী কেন্দ্রের সুপারিশ করেন এবং বলেন যে, পূর্বের চেয়ে এখন এর প্রয়োজন আরো বেশী। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বেআইনী ঘোষণা করার দাবী জানান।
বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ধ্বংস করতে হবে।
এপিপি পরিবেশিত এক খবরে বলা হয় যে , কাইয়ুমপন্থী পাকিস্তান মুসলীম লীগের প্রেসিডন্ট খান আবদুল কাইয়ুম খান গতকাল বলেন যে, দেশের যে কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শক্তির মাধ্যমে ধ্বংস করতে হবে।
সিন্ধু প্রাদেশিক মুসলীম লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব এ, এম, কোরেশী আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় বক্তৃতাকালে খান কাইয়ুম বলেন যে, বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের বীজ পশ্চিম পাকিস্তানের কোন কোন রাজনৈতিক ব্যক্তির মধ্যেও রয়েছে। তিনি বলেন যে সমস্ত রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় যেতে সহায়তা করেছিলো এবং নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে অতি সত্বর ক্ষমতা দানের দাবী করেছিলো তাদেরকেও প্রকাশ্যে তুলে ধরতে হবে এবং এই সমস্ত দল গুলোকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত।
সম্প্রতি পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটেছে অনুরূপ ধ্বংসাত্মক কাজ পশ্চিম পাকিস্তানে ঘটবার জন্যও কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক ব্যক্তি চেষ্টা করছে বলে কাইয়ুম খান বর্তমান সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ভারত যাতে চীনের বিরুদ্ধে লড়তে পারে সেজন্য তারা ভারতের হাত শক্তিশালী করতে চেষ্টা করছেন। ইতিপূর্বে তিনি বলেছেন, ভারত চীনের
বিরুদ্ধে লড়বার মতো অবস্থায় নেই। সে যে সামরিক সাহায্য পাচ্ছে তা পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হবে। সম্প্রতি পূর্ব পাকিস্তানে যে বিপুল পরিমাণে ভারতীয় অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ আটক করা হয়েছে তা এরই প্রমাণ।
খান আবদুল কাইয়ুম খান বলেন পাকিস্তান দুই জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে একটি আদর্শ রাষ্ট্র যেখানে হিন্দু ও মুসলিম দু’টি আলাদা জাতি।
তিনি বলেন জাতির পিতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দেশের জন্য যে নীতি নির্ধারণ করে গেছেন তার বাস্তবায়ন ছাড়া পাকিস্তান টিকে থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, মুসলীম লীগ নেতৃত্বের মধ্যে ব্যক্তিত্বের সংঘাত, ব্যক্তি ঘৃণা এবং খারাপ ইচ্ছার জন্য তিন মুসলীম লীগ এক হতে পারেনি।
কাইয়ুম খান বলেন যে কেবলমাত্র তার দলই শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর ছয় দফার খোলাখুলি বিরোধিতা করেছে এবং ছয় দফা সম্পর্কে দেশকে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছে। আজ এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, ছয় দফা আসলে পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার কর্মসূচী এবং শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের এজেন্ট।
তিনি বলেন, পাকিস্তান কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেনি এবং বিদেশী রাষ্ট্র তা ছোট হোক বা বড় হোক তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাক তা পাকিস্তান চায় না। আমরা কোন বিদেশী রাষ্ট্রকেই বিশ্বের পুলিশী ভূমিকায় স্বীকার করবো না।
এর পূর্বে এ, এম, কোরেশী তাঁর বক্তৃতায় বলেন যে, কেবল জনাব কাইয়ুম খানই প্রকাশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ও ছয় দফার বিরোধিতা করেছেন। ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কে কাইয়ুম খান বলেন যে পাকিস্তানের উভয় অংশে একই সময় ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তিনি বলেন যে প্রথম বিষয় হলো এই ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিক জীবন ও স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন যে পশ্চিম পাকিস্তানে জনপ্রতিনিধিদের হাতে খন্ডভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে তাদের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করার অভি্যোগ আসবে।
পশ্চিম পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নবাদী কারা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে কাইয়ুম খান ওয়ালীপন্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন খান আব্দুল গাফফার খান কাবুলে থেকে এই দল পরিচালনা করছেন। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যে, এমন কোন কথা নেই যে দেশের নেতৃত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ থেকে আসতে হবে। নেতৃত্বের প্রশ্ন নির্ভর করে নেতার গুণপনার উপর।
পূর্বদেশ, ৩ মে, ১৯৭১।
নয়া সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত নস্যাৎ করার জন্য
শাহ আজিজের আহ্বান
.
ঢাকা ৪ঠা মে এপিপি। জাতীয় পরিষদের সাবেক বিরোধী দলের সহকারী নেতা শাহ আজিজুর রহমান গত সোমবার এক বিবৃতে ভারতের নয়া সাম্রাজ্যবাদী দুরভিসন্ধিকে নস্যাৎ করার পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে সার্বিকভাবে
সহযোগিতা দান করার জন্য জনগণের প্রতি আবেদন জানান। শাহ আজিজের বিবৃতির অংশ বিশেষ নিম্নে দেওয়া হলঃ
আমার দেশবাসী পাকিস্তান সৃষ্টি ও তার অস্তিত্ব সংরক্ষণের সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন রয়েছে। বিশ্ব পার্লামেন্টারী ফোরামে আমি ভারতের দুরভিসদন্ধি ও কাশ্মীর সম্পর্কে, ন্যায়সঙ্গত দাবি সম্পর্কে আমাদের জাতীয় অভিমত পেশ করেছিলাম। পাকিস্তান সরকার এ ধরনের কয়েকটি বক্তৃতা প্রকাশ ও প্রচারও করেছিলেন।
রাজনৈতিক দলগুলোকে সর্বাধিক সুযোগ সুবিধাদানের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃবর্তনের জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সচেষ্ট ছিলেন। আওয়ামী লীগ নামে পূর্ব পাকিস্তান প্রধান রাজনৈতিক দলটি সাম্প্রতিক নির্বাচনে পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করেও গণতন্ত্র পুনঃবর্তনের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। আওয়ামী লীগের তথাকথিত সন্ত্রাসবাদীদের শ্লোগানে এখানে ত্রাসের সৃষ্টি হয়েছিল। সর্বত্র ভীতি ও বিরাজ করছিল। গত নির্বাচনের সময় আমাকে ও আমার কর্মীদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে নানা রকম অভি্যোগ উত্থাপন করেও কোন রকম সাড়া পাওয়া যায়নি।মানুষের দেশপ্রেমের নিশ্চয়তা পরিমাপের কোন যন্ত্র নেই বলে তিনি জানান।
দেশের সংহতি বিনষ্ট করার জন্য ২৫ শে মার্চের আগে যারা প্রচেষ্টা চালিয়েছিলো দেশ প্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী তাদের সে প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে। ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যে জঘন্য হস্তক্ষেপ করছে তিনি তার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ভারত আন্তর্জাতিক সমস্ত বিধি নিষেধ লঙ্ঘন করেছে। ভারতের বন্ধুত্বের মুখোশ বিশ্বের কাছে ধরা পড়ে গেছে। ভারত যাতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে সে জন্য তিনি হুঁশিয়ার বাণী উচ্চারণ করেন। নয়া সাম্রাজ্যবাদ ভারতকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে দেশ প্রেমিকদের সব রকম সাহায্য ও সহযোগিতাদানের জন্য শাহ্ আজিজুর রহমান জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।
ক্ষমতা হস্তান্তরের অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে
-হাজারভী
.
পেশোয়ার, ১৩ ই মে (এপিপি)। পশ্চিম পাকিস্তান জমিয়ত উল-উলামা-ই ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মওলানা গোলাম গাউস হাজারভী বিশেষ করে প্রাদেশিক পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।কারণ তার মতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রদেশগুলোতে অবস্থা কিছুটা অনুকূল হয়েছে।
গত মঙ্গলবার এখানে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে সব গণপ্রতিনিধি দেশপ্রেমিক বলে পরিচিত যদি তাদেরকে প্রদেশের শৃংখলা বজায় রাখার দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব দেওয়া হয় তাহলে ভারতীয় অনুপ্রবেশের বাকী সব কিছু নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার কাজে তারা সেনাবাহিনীকে বিরাটভাবে সাহায্য করতে পারবেন। মওলানা হাজারভী বলেন যে, এই সরকারের কর্ম হবে অস্থায়ী। তবে বিশ্বজনমতকে পাকিস্তানের পক্ষে আনায় তা অনেক দূর সাহায্য করবে।
পূর্বদেশ, ১৪ মে, ১৯৭১।
মুফতি মাহমুদ বলেন-ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী হাস্যকর
লায়লপুর, ২০ মে (এপিপি)। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মওলানা মুফতি মাহমুদ আজ যে কোন প্রকারে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীকে হাস্যকর আখ্যায়িত করেন। কেননা এখন জাতি তার অস্তিত্বের এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে।
এখানে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে জমিয়ত নেতা বলেন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি যতক্ষণ পর্যন্ত আস্থা পোষণ করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নটি আলোচিত হতে পারে না। এই প্রদেশে পূর্ণ অর্থনৈতিক পুনর্বাসন হলেই এই আস্থা ফিরে আসা সম্ভব হতে পারে। সরকারের সামনে এখন প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে যত শীঘ্র সম্ভব অর্থনৈতিক জীবন পুনঃবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং ইহা সম্ভব সমগ্র জাতি, সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ ও দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জানালে।
তিনি বলেন যে দেশের এক অংশে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে তা আরো জটিলতার সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে একটি আইনগত অসুবিধাও রয়েছে। আইনগত কাঠামো নির্দেশের সংশোধন না করা হলে এই পরিবর্তন সম্ভব নয়। কেননা এতে প্রদেশে কাছে ক্ষমতা হস্তান্তের কোনো বিধান নাই।
যে কোন প্রকারেই হোক না কেন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হলে তার পূর্বে জাতীয় পরিষদকে একটি শাসনতন্ত্র রচনা করতে হবে যা এখনো হয়ে ওঠেনি।
সংকট নিরসনের জন্য প্রসিডেন্টের একটি শাসনতন্ত্র দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, তার বিশ্বাস হলো জনপ্রতিনিধিদেরই শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা উচিত। অবশ্য তিনি এও বলেন যে প্রেসিডেন্ট যে আইনগত কাঠামো নির্দেশ জারি করেছিলেন তাই তিনি অন্তর্বর্তীকালীন শাসনতন্ত্র হিসেবে অনুমোদন করতে পারেন।
পূর্বদেশ, ২১ মে, ১৯৭১।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রশ্নে আলোচনা করেছি
সাংবাদিক সম্মেলনে ভুট্টো
করাচী, ২১ শে মে (এপিপি)। পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো গতকাল এখানে বলেন যে, প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তার আলোচনা অনুযায়ী চলতি সালের শেষের মধ্যে কিছুটা ফল পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করেন।
পিপলস পার্টি প্রধান জনাব ভুট্টো এখানে ক্লিফটনে তার বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা করেছিলেন। গতকাল সকালে তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। জনাব ভুট্টো বলেন যে, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিনি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনা করেছেন এবং এ সকল প্রশ্নে তার দলের মতামত প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন।
পূর্ব পাকিস্তানে যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক নয় তখন জনগণের পক্ষে কিভাবে সরকারী কাঠামোয় অংশগ্রহণ ও তার গণতন্ত্রীকরণ সম্ভব বলে তিনি মনে করেন প্রশ্ন করা হলে ভুট্টো বলেন, এই সমস্যাগুলো কার্যকরভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
তিনি বলেন, তিনি এখন বিস্তারিত বিবরণ দিবেন না। কারণ, অন্যান্য কারণের মধ্যে খোদ পাকিস্তানই দেখিয়েছে যে কথার বন্দী হওয়া কিরূপ বিপজ্জনক।
এক জন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন যে খন্ড খন্ডভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে পূর্ব পাকিস্তানী জনগণের মধ্যে ঔপনিবশিক আচরণের মনোভাব সৃষ্টি হবে বলে কতিপয় নেতা যে মত প্রকাশ করছেন তা কার্যত জোরদার হবে কিনা। জনাব ভুট্টো বলেন, তিনি এই মতের সঙ্গে একমত নন।
জনাব ভুট্টো দেশের বর্তমান সমস্যাবলী সমাধানের ব্যাপারে জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের আহ্বান জানান।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের কতিপয় নির্বাচনী এলাকায় উপনির্বাচন হবে বলে তিনি মনে করেন। পূর্ব পাকিস্তানের নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্যদের যতখানি সম্ভব ক্ষমা করা উচিত।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্যদের রাজনৈতিক সামঞ্জস্য বিধানের জন্য রাজনৈতিক দল আইনের কড়াকড়ি শিথিলে তার কোন আপত্তি নেই।
তিনি বলেন, তার দলের সদস্যদের আনুগত্য সম্পর্কে তার কোন সন্দেহ নাই এবং অন্যান্য দলের এম এন এ রা তার দলে যোগ দিতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তবে পিপলস পার্টি তাদের খোশ আমদেদ জানাবে কিনা সেটা ভিন্ন প্রশ্ন।
যাই হোক অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি দল পরিবর্তনের ব্যাপারে কিছুটা শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষপাতী।
ভুট্টো বলেন যে, প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনাকালে তিনি সংবাদপত্রের উপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক তৎপরতা পুনরুজ্জীবনের জন্য তার দলের দাবী পুনরুল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, সংবাদপত্র এমনিতেই সামরিক আইন বিধি অনুযায়ী পরিচালিত এবং সেন্সরশীপ কড়াকড়ি নিষ্প্রয়োজন বলে তার দল মনে করে।
দৈনিক পাকিস্তান, ২২ মে, ১৯৭১।
রহমতে এলাহী বলেন-নতুন করে নির্বাচন চাই
করাচী, ২৩ শে মে (পি পি আই)। জামাতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল চৌধুরী রহমতে এলাহী আজ নয়া আদমশুমারীর ভিত্তিতে দেশে নতুন করে নির্বাচনের দাবী করেন। আজ বিকালে স্থানীয় এক হোটেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় আমাদের ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক জীবন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
জামাত নেতা পূর্ব পাকিস্তান সফর করে এখানে ফিরেছেন। তিনি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে মোটামুটি অবস্থা স্বাভাবিক এবং সেখানে মিল কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে চৌধুরী রহমতে এলাহী বলেন যে, এ সময় ক্ষমতা হস্তান্তর করা ঠিক হবে না।
তিনি ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী ও দেশ বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে সংকট থেকে জাতিকে বাঁচানোর জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করেন। তিনি ভারতকে পাকিস্তান বিরোধী ষড়যন্ত্র করার জন্য অভিযুক্ত করেন। সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য তিনি পূর্ব পাকিস্তানীদেরও প্রশংসা করেন। সমগ্র পূর্বাঞ্চল সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পূর্বদেশ, ২৪ মে, ১৯৭১।
জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবার সময় এসেছে
নওয়াবশাহে ভুট্টো
নওয়াবশাহ, ৩১ শে মে (এপিপি)। পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জনাব জেড, এ ভুট্টো আজ আবার বলেন যে, জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দ্বারাই শুধু বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান সম্ভব।
তিনি বলেন যে যার রাজনীতির সাথে জড়িত ও দেশের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকেবহাল তাদের ছাড়া
কারো পক্ষে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দলীয় কর্মী ও ছাত্রদের এক সভায় জনাব
ভুট্টো বলেন যে, যারা জনসাধারণের বিশ্বাসভাজন তাদের হাতে এখন ক্ষমতাতা তুলে দেবার সময় এসেছে। এর ফলে জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে পারবে। তিনি বলেন, জনগণই এই রায় দিয়েছে এবং তা যত শীঘ্র সম্ভব বাস্তবায়ন করা উচিত। জনাব ভুট্টো বলেন, আমরা জনসাধারণের সঙ্গে রয়েছি এবং দরকার হলে নিজেদের জীবনের বিনিময়েও নির্বাচনের সময় দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা
হবে। তিনি বলেন যে পাকিস্তান পাঁচটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত। এর পাঁচটি প্রদেশই শক্তিশালী না হলে দেশ শক্তিশালী হতে পারে না। তিনি বলেন, শেখ মুজিব যে ভুল করেছিলেন তিনি
তা করবেন না এবং শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের তরুণদের জন্য যে বিপর্যয় ডেকে এনেছেন
সিন্ধুর তরুণদের তেমনি ধ্বংস হতে তিনি দেবেন না। তিনি বলেন, আমি সিন্ধুর যুবকদের ভুল পথে নয়, সঠিক পথে পরিচালিত করব। পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বলেন যে, জাতীয়
পরিষদ প্রতিষ্ঠা ও ১২০ দিনের মধ্যে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের পর কেন্দ্রে ও প্রদেশগুলোতে
জনসাধারণের সরকার গঠিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির জন্য তা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন যে, যারা নির্বাচনে হেরেছে তাদের পূর্ব পাকিস্তানের সংকটের সুযোগ নেয়া উচিত নয়। তাদের জনসাধারণের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হওয়া
উচিত নয়। -দৈনিক পাকিস্তান, ২ জুন, ১৯৭১
.
পাকিস্তানের নিরাপত্তা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান আতহার আলীর বিবৃতি
সাবেক এম এন এ ও পাকিস্তান মরকাজী জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলামের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট মোঃ আতহার আলী পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংহতি ও সমৃদ্ধির জন্য আরো উদ্যমের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য মুসলমানদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার এপিপি পরিবেশিত এক বিবৃতিতে তিনি জনগণকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, মুসলমানের শত্রুদেশগুলো লাখো লাখো মুসলমানের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পাকিস্তানের ক্ষতি
সাধনের জন্য বিরামহীন চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন পাকিস্তান রক্ষা পেলেও শত্রুর চক্রান্তের
অবসান ঘটেনি। এই পবিত্র দেশকে দারুণ আঘাত হানার জন্য শত্রু চেষ্টার ত্রুটি করবে না। পাকিস্তান, ইসলাম ও মুসলমানের প্রতি বিদ্বেষ বশতঃ তারা যা ইচ্ছে তাই
করতে পারে।
-দৈনিক পাকিস্তান, ৮ জুলাই, ১৯৭১
.
পূর্ব পাকিস্তানে বাঙ্গালীদের জীবনের নিরাপত্তা নেই-একথা ভিত্তিহীন
-ডঃ সাজ্জাদ হোসেন
লন্ডন, ৮ই জুলাই (রয়টার)-
পূর্ব পাকিস্তানের শহর ও গ্রামে বাঙ্গালীদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই বলে যে কথা হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের দুইজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক গতকাল তা অস্বীকার
করেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যানসেলর ডঃ এস সাজ্জাদ হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের রিডার ডঃ এম মোহর আলী টাইম পত্রিকায় লিখিত এক দীর্ঘ চিঠিতে তাঁদের এই অস্বীকৃতির কথা জানান। বিদেশে প্রচারিত নৃশংসতার কাহিনী উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এতে বিস্মিত হবার কিছু নেই যে এ ধরনের কাহিনী প্রচার অব্যাহত থাকার ফলেই এ
রকম সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে যে, পূর্ব পাকিস্তানে শহরে ও গ্রামে বাঙ্গালীদের
বিশেষ করে শিক্ষিত বাঙ্গালীদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই।
বুদ্ধজীবীদের পাইকারী হত্যা করা হয়েছে বলে যে কাহিনী প্রচারিত হয়েছে, অধ্যাপকদ্বয়
তাও অস্বীকার করেছেন। চিঠিতে বলা হয় যে, মার্চের ২৫শে-২৬শে তারিখে
জগন্নাথ ও ইকবাল হলের আশেপাশের এলাকায় যুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষক প্রাণ
হারিয়েছেন বলে জানা যায়। চিঠিতে বলা হয় যে, আমাদের ৩ জন সহযোগী
প্রাণ হারাতেন না যদি না তারা যে ভবনগুলোতে বাস করতেন সে গুলোকে আওয়ামী লীগ
স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের তৎপরতার ঘাঁটি
হিসেবে ব্যবহার করতো।
দৈনিক পাকিস্তান, ৯ জুলাই, ১৯৭১ .
.
প্রেসিডেন্টের পূর্ব পাকিস্তান সফরের উপর গুরুত্ব আরোপ
আসগর খানের প্রদেশ সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা লাহোর, ১৬ই জুলাই (এপিপি)- তাহারিকে ইন্তেকলাল পার্টি প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খান
গতকাল এখানে বলেন যে রাজনৈতিক প্রশ্ন সমাধান পূর্ব পাকিস্তানীদের সকলের সমর্থন পেতে
হলে একটি নতুন উদ্যোগ ও জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নয়দিন ব্যাপী পূর্ব পাকিস্তান সফর শেষে প্রত্যাবর্তনের পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে এয়ার
মার্শাল বলেন যে, এটা করা না হলে খুব কম সংখ্যক বাঙ্গালী আগামী উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। কারণ তাঁর মতে এখন বাঙ্গালীদের উপ-নির্বাচনের
ব্যাপারে খুব উৎসাহী মনে হয়না। ইন্তেকলাল নেতা আরো বলেন যে তার
উল্লেখিত ব্যবস্থার মধ্যে প্রেস সেনসরশীপ তুলে নেয়া, রাজনৈতিক কার্যকলাপের উপর
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং অপরাধী আইন পরিষদ তালিকা প্রকাশও রয়েছে।
তিনি আরো বলে যে, শীঘ্রই প্রেসিডেন্টের পূর্ব পাকিস্তান সফর সমস্যা সমাধানের পথে অনেক
খানি সহায়ক হবে। কারণ পূর্ব পাকিস্তানে এখন অনেকেই প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি কামনা
করছে। এক প্রশ্নের উত্তরে ইন্তেকলাল নেতা বলেন যে, তার মনে কোন সংশয় নেই যে, এরূপ
ব্যবস্থা গৃহীত হলে পূর্ব পাকিস্তান উপ-নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হবে কিন্তু এ
উদ্যোগ গ্রহণে বিলম্ব হলে দেশের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক হবে যা ইতিপূর্বে আর
কোনদিন হয়নি।
.
বেয়াইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগ সদস্যরা সমস্যা সমাধানের জন্য কত দূর সাহায্য করতে পারে
জানতে চাওয়া হলে তাহরিক নেতা বলেন যে সকল সদস্যই সমাজ বিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন না। সরকারের সঙ্গে একটা গ্রহণসোগ্য সমাধানে পৌঁছার জন্য বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যদের সমর্থন পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন। পূর্ব পাকিস্তানে আগামী উপ-নির্বাচনে তার দল অংশ গ্রহণ করবে কিনা এরুপ এক প্রশ্নের উত্তরে তাহরিক নেতা জানান যে আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ দেশের আইন ও শৃংখলা পরিস্থিতি, শাসনতন্ত্র সংশোধনীর পদ্ধতিসমূহ এবং আইন পরিষদগুলো চালু হবার পর কি ধরনের সামরিক ছত্রছায়ায় থাকতে হবে তখন তা আরো ভালভাবে জানতে পারা যাবে। ইতিমধ্যে ঘটনাসমূহও একটা পরিষ্কার রুপ নেবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তাহরিক নেতা বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সব কিছুই এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে। তবে প্রদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অতিশয় হতাশাগ্রস্ত।
-দৈনিক পাকিস্তান, ১৭ জুলাই, ১৯৭১
ফজলুল কাদের চৌধুরীঃ জাতীয় সম্মেলনের
প্রস্তাব
লাহোর ১৬ জুলাই (এপিপি)-
.
দেশ যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, তা আলোচনার জন্য কনভেনশন মুসলিমলীগের প্রেসিডেন্ট জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরী গতকাল সকালে রাজনৈতিক দলের নেতাদের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেছেন। স্থানীয় একটি হোটেলে এক সাংবাদিক
সম্মেলনে ভাষণদানকালে তিনি বলেন যে জাতি আজ তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের সবচেয়ে ‘মারাত্মক
সংকটের’ মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে এবং এই সংকট নিরসন ও গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যাগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান প্রধান নেতাদের নিয়ে একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠান হচ্ছে এই মুহূর্তের সবচেয়ে
জরুরী কাজ। জনাব চৌধুরী বলেন যে, এই জাতীয় সম্মেলনে অবশ্যই পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের আশা আকাংখার মধ্যে সমন্বয় সাধনের ফর্মুলা উদ্ভব করতে হবে। তিনি বলেন যে, এখানে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলোচনাকালে তার এই প্রস্তাবটি অভিনন্দিত
হয়েছে। জনাব চৌধুরী বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ট দল নিজের ভুলের জন্য তার অস্তিত্ব
হারিয়ে ফেলেছে এবং এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের প্রশ্নটি নতুন করে বিবেচনা করা উচিৎ। সম্মেলনে যোগদানকারীরা ইচ্ছা করলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
জনাব চৌধুরী বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হচ্ছে। তবে সেখানকার
সমস্যাগুলোর ব্যাপারে প্রজ্ঞা, বিবেচনা ও সতর্কতার সাথে কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিৎ।
তিনি বলেন যে ভারতীয় এজেন্টদের উৎখাতের সাথে সাথে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে শুভেচ্ছা ও
আস্থা তৈরীর কাজ করে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন যে পূর্ব পাকিস্তানে শতকরা ৯৬ জন
লোক পাকিস্তানের জন্য ভোট দিয়েছিল। কিন্তু গত ২৩ বছর ধরে তরুণদের অপরিপক্ক মনে যে
কারণেই হোক বঞ্চনার ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে এবং এই বঞ্চনা ও অবহেলা মোকাবেলার জন্য
সংগ্রামের মাত্রা তাদের জানা ছিল না। তিনি বলেন যে পূর্ব পাকিস্তানে সত্যিকারের পাকিস্তানীর অভাব নেই।
.
তিনি বলেন যে ভারতীয় এজেন্টদের দ্বারা পরিচালিত তথাকথিত বাংলাদেশ বেতার থেকে দিন রাত তাঁর ও অন্যান্য মুসলিম লীগ নেতার মৃত্যুদন্ডের কথা তারস্বরে ঘোষণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, তিনি পাকিস্তানের জন্যে সংগ্রাম করে যাবেন। কারণ যদি পাকিস্তানই না থাকে, তাহলে অধিকারের জন্যে সংগ্রামের অবকাশ কোথায়।
-দৈনিক পাকিস্তান, ১৮ জুলাই, ১৯৭১
জাতীয় পরিষদ সদস্যদের সম্পর্কে নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ
লাহোর, ২১শে জুলাই (এপিপি)-
পশ্চিম পাকিস্তান পিডিপির প্রেসিডেন্ট নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান গতকাল বিকেলে এখানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভাষণদানকালে বলেছেন যে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শাসনতন্ত্র প্রণয়ন এবং এখন তা প্রেসিডেন্টের নিজের হাতে গ্রহণ করায়
জাতীয় পরিষদ সদস্যদের আর কোন অস্তিত্ব থাকছে না। নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ বলেন যে, শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে চিরদিনের জন্য তার সমাধান হওয়া উচিত। ক্ষমতা হস্তান্তরের মত অন্যান্য প্রশ্ন পরে আসতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ বলেন যে, তার দল সবসময়েই এই মত পোষণ করেছে যে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতীয় পরিষদের অধিকাংশ সদস্যকে পাওয়া না যাওয়ায় ও তারা আত্মগোপন করায় বর্তমান জাতীয় পরিষদ তার প্রয়োজনীয়তা ও ইপ্সিত ফলদানের
ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন যে, একটি জাতীয় পরিষদের পরিবর্তে এটি এখন একটি
আঞ্চলিক পরিষদে পরিণত হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগারদের সাথে রাজনৈতিক
সমঝোতা করার কথা বলার জন্য পিপিপি প্রধান জনাব ভুট্টোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন যে, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা ভুল
হবে। কারণ তাহলে সমস্ত দলকে নিষিদ্ধ করা হত না। তিনি আইন ও শৃংখলা পরিস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালানোর জন্য সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ভুট্টোর সমালোচনা করেন।
-দৈনিক পাকিস্তান, ২১ জুলাই, ১৯৭১
ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রেসিডেন্টের ফর্মুলা বর্তমান সংকটের একমাত্র সমাধান- তোফায়েল মোহাম্মদ
লাহোর, ২৩ জুলাই এপিপি
জামাতে ইসলামীর অস্থায়ী আমীর মিয়া তোফায়েল মোহাম্মদ আজ এখানে বলেন যে, ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রেসিডেন্ট যে ফর্মুলা পেশ করেছেন, দেশের বর্তমান রজনৈতিক সংকট সমাধানের এটাই হচ্ছে একমাত্র সম্ভাব্য পন্থা। তবে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের বিগত বেতার
ভাষণে উল্লিখিত ৪ মাস সময়ের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না। কারণ
এই সময়ে নগণ্য সংখ্যক ভোটার ভোট দান করতে আসতে পারেন। মিয়া তোফায়েল মোহাম্মদ লাহোর বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের সাথে তার পূর্ব পাকিস্তান সফরের
অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন। মিয়া তোফায়েল মোহাম্মদ শূন্য আসনে গত সাধারণ
নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর পরই যাদের স্থান তাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করার দাবীর কথা পুনরায়
উল্লেখ করেন। তিনি শেখ মুজিবর রহমানের বিচার শুরু করার জন্য
সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মানসিক স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সেখানে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা একান্ত
দরকার।
-দৈনিক পাকিস্তান, ২৪ জুলাই, ১৯৭১
.
আলেমদের প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সহযোগিতার আহবান
এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয় যে, নেজামে ইসলাম পার্টির পার্লামেন্টারী বোর্ডের সম্পাদক
সৈয়দ মনজুরুল আহসান ও যুগ্ম সম্পাদক মওলানা আবদুল মতিন আলেম সম্প্রদায়কে সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা প্রদান এবং জনগণের নিকট দেশের মৌলিক আদর্শ ব্যাখ্যা করার আহবান জানিয়েছেন। এক যুক্ত বিবৃতিতে তাঁরা পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার
ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করার জন্য পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীরসময়োচিত পদক্ষেপকে অভিনন্দিত করেন এবং রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তিদের নির্মুল করার ব্যাপারেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, শুধুমাত্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেই আমাদের সমস্যার সমাধান হবে না।
এই মুহূর্তে সর্বাধিক প্রয়োজন হচ্ছে জাতীয় পূনর্গঠনমূলক কাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিতকরণের
জন্য প্রশাসন কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের পূর্ণভাবে সহযোগিতা করা। বিবৃতিতে তারা
রাজাকারদের দায়িত্ববোধের প্রশংসা করেন। পূর্ব পাকিস্তানে আলেম, মসজিদের ইমামদের
দেশের মৌলিক আদর্শ জনগণের নিকট ব্যাখ্যা করার বিষয়টি তাদের কর্মসূচীর অন্তর্গত করার জন্য তারা আহবান জানান।
-দৈনিক পাকিস্তান, ২৬ জুলাই, ১৯৭১
.
সরকার পূর্ব পাকিস্তান সমস্যা যথাযথভাবে মোকাবিলা করছে
করাচী বিমান বন্দরে খান সবুর করাচী, ২৯শে জুলাই, (এপিপি)- পাকিস্তান মুসলিম
লীগের (কাইয়ূম গ্রুপ) সেক্রেটারী জেনারেল খান আবদুস সবুর গতকাল এখানে
বলেছেন যে প্রদেশ যে বিপুল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তান সরকার তা
যথার্থভাবে মোকাবিলা করছে। গতকাল ঢাকা থেকে করাচী পৌঁছানোর পর বিমান বন্দরে তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করছিলেন। তিনি বলেন যে পূর্ব পাকিস্তান
কর্তৃপক্ষ তাদের সীমিত সুযোগ নিয়ে সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করছেন। পূর্ব পাকিস্তানে উপ-নির্বাচনে তাঁর দলের সাফল্যের সম্ভাবনা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে পি-এম- এল এর উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। খান সবুর বলেন যে পিপলস পার্টি ও নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের সদস্যদের মধ্যে কোন জোট হওয়া বা না হওয়া তাদেরই ব্যাপার তবে তা পূর্ব পাকিস্তানে তেমন কোন সুবিধা করতে পারবে
বলে মনে হয়না।
-দৈনিক পাকিস্তান, ৩০ জুলাই, ১৯৭১
.
বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবী
করাচীতে গোলাম আজম
.
করাচী, ১লা সেপ্টেম্বর (এপিপি)।– গতকাল পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীরে আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম অবিলম্বে জাতীয় পরিষদ বাতিল এবং যখনই সময় অনুকূল হবে তার সাথে সমগ্র দেশে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়াছেন। গতকাল এখানে জামাত অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভাষণ দান কালে তিনি বলেন যে, পরবর্তী আদমশুমারী সমাপ্ত হওয়ার পরই দেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়া উচিৎ।
তিনি অবিলম্বে পরবর্তী আদমশুমারী অনুষ্ঠানের দাবী জানান। কারণ পরবর্তী আদমশুমারী অনুষ্ঠানের সময় বেশ আগেই হয়েছে। তিনি সকল বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং তাঁদের নেতৃবৃন্দের শাস্তিদানের আহ্বান জানান। এই প্রসঙ্গে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী গ্রুপ), জনাব আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে পরিচালিত লীগ ও ন্যাপের (ওয়ালী গ্রুপ) পূর্ব পাকিস্তানের শাখার নাম উল্লেখ করেন।
তাঁর মতে এসব দলের সদস্যরা এখনো পূর্ব পাকিস্তানে গোপন তৎপরতা চালাচ্ছে এবং জনগণের মধ্যে হতাশার ভাব সৃষ্টি করছে। পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য তিনি ৫ দফা পরিকল্পনার কথা সুপারিশ করেছেন। অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন, ঢাকায় সদর দফতরসহ “পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনর্বাসনের জন্য অর্থনৈতিক কমিটি” নামে একটা বিশেষ সংস্থা নিয়োগ করা উচিৎ। এই সংস্থার কাজ হবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরীক্ষা করে দেখা এবং সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপায় উদ্ভাবন ও সুপারিশ পেশ।
দ্বিতীয়ত যত শীঘ্র সম্ভব বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তবে আন্তর্জাতিক সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। পরিকল্পনার তৃতীয় দফা হচ্ছে পৃথক উত্তরবঙ্গ প্রদেশ স্থাপন এবং এজন্য নয়া শাসনতন্ত্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঢাকা থেকে সরাসরি উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম তদারক করা খুব অসুবিধাজনক। কারণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্রহ্মপুত্র নদ এক বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। তিনি বলেন, চতুর্থ দফা হচ্ছে ফসল হানির দরুন পূর্ব পাকিস্তানে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। শেশ দফায় পূর্ব পাকিস্তানের বেকার সমাধানের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং বলা হয় যারা কাজ করতে চান, তাদেরকে কাজ দিতে হবে। অধ্যাপক আজম পাকিস্তানের রক্ষা ও মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, কোন ভাল মুসলমানই তথাকথিত ‘বাংলাদেশ আন্দোলনের’ সমর্থক হতে পারে না। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী নির্মূল করার জন্য একমন ও দেশ প্রেমিক লোকেরা একত্রে কাজ করে যাচ্ছেন। রাজাকাররা খুবই ভাল কাজ করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শহীদ রশীদ মিনহাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, এই আত্মত্যাগের নিদর্শন থেকে তরুণরা উপকৃত হতে পারে।
-দৈনিক পাকিস্তান, ২সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
শাসনতন্ত্র প্রশ্নে প্রেসিডেন্টের ভাষণ
নেতৃবৃন্দের অভিমত
নূরুল আমীন
করাচী, ১৮ই সেপ্টেম্বর (এপিপি)।- পাকিস্তানের ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রধান জনাব নূরুল আমীন আজ শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের ভাষণকে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে একটা বাস্তব পদক্ষেপ বলে অবহিত করেন। তিনি বলেন যে, শাসনতন্ত্রে সংশোধনে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিকার, প্রেসিডেন্ট যা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন, তা স্বীকৃত হয়েছে ও উপরোক্ত ধরনের সংশোধণী পদ্ধতিও সহজতর করা হয়েছে।
এতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রেসিডেন্ট জনসাধারণের অভিপ্রায় গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছেন। যদিও আমি খসড়া শাসনতন্ত্র দেখিনি, তবু আমি আশা করি, পিডিপি ম্যানিফেষ্টোতে উল্লেখিত প্রদেশ ও কেন্দ্রের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ব্যাপারে আমি যে সমস্ত দাবী পেশ করেছি, সে সব যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আন্তঃ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের জন্যও নয়া শাসনতন্ত্রের যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।
মওলানা মওদুদী
লাহোর, ১৮ই সেপ্টেম্বর (এপিপি)।– জামায়াতে ইসলামীর আমীর মওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী আজ এখানে বলেন যে, শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট যে নয়া পদ্ধতি ঘোষণা করেছেন তা যুক্তিসংগত বলেই মনে হয়। প্রেসিডেন্টের ভাষণ সম্পর্কে মন্তব্য প্রসঙ্গ মওলানা মওদুদী বলেন যে, তিনি (মওদুদী)সর্বদাই এমত ব্যক্ত করে এসেছেন যে জাতীয় পরিষদকে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে বলার পরিবর্তে প্রেসিডেন্টের উচিত খসড়া প্রণয়ন করে তা জাতীয় পরিষদে পেশ করা।
বর্তমানে প্রায় সেই একই ধরনের পদ্ধতি অনুসৃত হচ্ছে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
জেড এ ভুট্টো
করাচী, ১৮ই সেপ্টেম্বর, (এপিপি)।– শাসনতন্ত্র সংশোধন প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট আজ যে ফরমুলা ঘোষণা করেন পিপিপি প্রধান ভুট্টো তৎসম্পর্কে কোন মন্তব্য প্রকাশে অস্বীকার করেন। সাংবাদিকরা এ সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য প্রকাশে অসম্মতি জানিয়ে বলেন যে, এ ব্যাপারে তিনি প্রথমে পিপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে আলাপ আলোচনা করবেন।
ফরিদ আহমদ
পিপিআই’র খবর বলা পাকিস্তান শান্তি ও কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মৌলভী ফরিদ আহমদ গতকাল শনিবার রাতে শাসনতন্ত্রিক বিষয়ে প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণ সম্পর্কে মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন যে, জনসাধারণের ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটাতে না পারলে এদেশে কোন শাসনতন্ত্রেরই সাফল্য লাভের কোন সম্ভাবনা নেই।
মওলানা ফরিদ আহমদ সন্তোষজনক শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে দুটো বিষয় সুপারিশ করে বলেন যে, প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্র উক্ত বিষ দুটি সংক্রান্ত ভুল বুঝাবুঝির নিরসন এবং কতিপয় সুবিধাভোগী কর্তৃক লক্ষ লক্ষ লোকের শোষণ মুক্তির নিশ্চয়তা বিধান করে অনুন্নত এলাকার বিশেষ প্রয়োজন পূরণ করতে না পারলে এর সাফল্যের সম্ভাবনা কম।
-দৈনিক পাকিস্তান, ১৯ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার পূর্বশর্ত
লাহোরে নূরুল আমীন
লাহোর, ২১শে সেপ্টেম্বর (এপিপি)।– আজ স্থানীয় হোটেলে লাহোর আইনজীবীদের দ্বারা তাঁর সম্মানে আয়োজিত এক সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে পিডিপি প্রধান জনাব নূরুলআমীন আলাদা আলাদাভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর পরিকল্পনার বিরোধিতা করেন। জনাব নূরুল আমীন বলেন, পুরোপুরিভাবে গঠিত জাতীয় পরিষদের কাছে সম্পূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। দেশের পূর্বাঞ্চলে এক বিশেষ অবস্থা বিদ্যমান থাকায় ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এখনো হয়নি বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
কারণস্বরূপ তিনি বলেন, এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে সেখানে পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা সৃষ্টি সম্ভব নয়। পিডিপি নেতা বলেন, একনায়কত্ববাদ কিংবা সেনাবাহিনীই এখন দেশের উত্তর অংশকে একত্রে রাখতে পারে বলে যারা বলাবলি করেছেন তাঁদের সাথে তিনি একমত নন। এই ধরনের মনোভাব যত তাড়াতাড়ি অবসান ঘটবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গল বলে তিনি উল্লেখ করেন। জনাব নূরুল আমীন আবার ঘোষণা করেন যে, একমাত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই পাকিস্তানের উভয় অংশকে অটুট ও ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে।
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভৌগলিক দূরত্বের পরিপ্রেক্ষিতে আজ দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে যোগসূত্র আবার প্রতিষ্ঠিত করবে। ১৯৫৮ সালে এই যোগসূত্র ছিন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, এই যোগসূত্রের অভাবেই দেশের উভয় অংশের জনগণের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।
জনাব নূরুল আমীন দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, বিপদের সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেছে এবং ২৫শে মার্চের পর তা কাটিয়ে উঠা হয়েছে। আওয়ামী লীগ তখন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টির প্রয়াস পায়।
পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আজ বুঝতে পেরেছেন যে তারা ৬ দফার অন্তরালে প্রচ্ছন্ন এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি আয়ত্বে আনার ব্যাপারে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দৈনিক পাকিস্তান, ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
জামাত বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ মেনে নিতে রাজী নয়,
মন্ত্রী সম্বর্ধনায় গোলাম আজম
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
পূর্ব পাকিস্তান জামাত ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম বলেছেন, জামাত ইসলামীর কর্মীরা মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে মেনে নিতে রাজি নয়। তিনি বলেন, জামাতের কর্মীরা শাহাদাৎ বরণ করে পাকিস্তানের দুশমনদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে তারা মরতে রাজী তবুও পাকিস্তানকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করতে রাজী নয়। গতকাল শনিবার স্থানীয় হোটেল এম্পায়ারে ঢাকা শহর জামাত কর্তৃক প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী জনাব আব্বাস আলী খান ও রাজস্বমন্ত্রী মওলানা একেএম ইউসুফেওকে প্রদত্ত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক গলাম আজম ভাষণ দিচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, সারা প্রদেশ সামরিক বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পরও যে কয়েক হাজার লোক শহীদ হয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই জামাতের কর্মী। আইন সভার মাধমে যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়নি সেই মন্ত্রিসভায় জামাতের যোগদান সম্পর্কে তিনি দলের নীতি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, বর্তমান প্রদেশের জনসংখ্যার শতকরা যে ২০ ভাগ সক্রিয় রয়েছে তারা দুভাগে বিভক্ত। একদল পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চায় আর একদল পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত। জামাতে ইসলামী শেষোক্ত দলভুক্ত। তিনি বলেন, জামাতের যে দুজন সদস্য মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছেন তাদেরকে দলের পক্ষ থেকে এই দায়িত্ব গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছে। অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে জামাত রাজাকার বাহিনীতে লোক, শান্তি কমিটিতে লোক যোগ দিয়েছে সেই উদ্দেশ্যেই মন্ত্রিসভায় লোক পাঠিয়েছে। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা যে কাজ করেছি সেই কাজে সাহায্য করার জন্যই দুজনকে মন্ত্রিসভায় প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই মন্ত্রী পদ ভোগের বা সম্মানের বস্তু নয়। আমরা তাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছি।………………..
পাকিস্তান জামাতে ইসমালীর ডেপুটি আমীর মওলানা আব্দুর রহিম বিশ্বের মুসলমান, পাকিস্তানের জনগণ, বিশেষ করে জামায়াতের জন্য দোয়া করে মোনাজাত করেন।
-দৈনিক পাকিস্তান, ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন সাধারণভাবেই প্রয়োগ করে উচিত
-আসগর খান
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
তাহরিক-ই-ইশতেকলাল পার্টি প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের সকল এম,এন,এ ও এম,পি,এদের ক্ষেত্রে কার্যকরী করার আহ্বান জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে জনাব আসগর খান তাঁর দলের পক্ষ থেকে উক্ত সুপারিশের কথা ঘোষণা করা করেন, সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন সাধারণভাবেই প্রয়োগ করা উচিত এবং পদমর্যাদা ও অবস্থান নির্বিশেষে আওয়ামী লীগের সকল এম,পি,এ ও এম,এন,এ-দের এই ক্ষমায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
তিনি বলেন, এই সুপারিশ যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে এই প্রদেশে যে সকল সদস্যের মৃত্যুতে পরিষদের আসন খালি হয়েছে যে সকল আসন ব্যতীত আর কোন আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হবে না। তাহরিকের এই সুপারিশ সরকার যদি গ্রহণ না করেন তখন উপ-নির্বাচনে অংশ গ্রহণ সম্পর্কে তাঁর দল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে জনাব আসগর খান জানান।
সেপ্টেম্বর মাসে প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার উল্লেখ করে জনাব আসগর খান বলেন, এটা দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটা নয়া দিগন্তের সূচনা করেছে।…………..
তাহরিক প্রধান এখানে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও শান্তি কমিটির সদস্যগণ কর্তৃক পল্লী এলাকার জনগণকে হয়রানি করা সম্পর্কে অভিযোগ করে বলেন, আমি এখানে অবস্থানকালে এ সম্পর্কে যে রিপোর্ট পেয়েছি তা সত্য।
পল্লী এলাকায় জনগণকে ব্যাক্তিগত শত্রুতা ও তাঁদের রাজনৈতিক মতামতের জন্য হয়রানি করা হচ্ছে। তাঁদের উপর নিপীড়ন চালান হচ্ছে। তাঁদের যেন আর হয়রানি না করা হয় সে সম্পর্কে তিনি সরকারের নিকট আহ্বান জানান।
মন্ত্রীদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের অনুমতি দান সম্পর্কিত আদেশ সম্পর্কে জনাব আসগর খান বলেন, এতে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিলে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না।
পূর্ব পাকিস্তানে মন্ত্রিসভা গঠন সম্পর্কে তাহরিক প্রধান বলেন, আমরা দেশে গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে আসছি। গণতন্ত্রের সাধারণ বিধান হচ্ছে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া। পূর্ব পাকিস্তানের যথেষ্ঠ পরিমাণে নির্বাচিত সদস্য রয়েছে। কিন্তু তাঁদের পরিবর্তে পরাজিত ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এতে গণতন্ত্রকে অস্বীকার করা হচ্ছে। যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরই হচ্ছে ন্যায়সংগত বিধান; যারা পরাজিত হয়েছেন তাঁদের হাতে নয়। পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচিত সদস্যের অভাব নেই। এরূপ বহু সদস্য আছেন যাদের আসন বহাল রাখা হয়েছে এবং যারা পাকিস্তানে বিশ্বাসী। শাসনতন্ত্র প্রণয়ন সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পরিষদেরই শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা উচিত।
ভারতীয় হামলার আশংকা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তাহরিক প্রধান বলেন, আমি সবসময়ই এই মনোভাব পোষণ করে আসছি যে আমরা উভয়ই প্রতিবেশী। আমাদের পাশাপাশি বাস করতে হবে। পাকিস্তানকে শান্তিতে বাস করতে হবে এবং ভারত একটি বৃহৎ দেশ। তাকেও প্রতিবেশীর সাথে শান্তিতে বসবাস করতে হবে। যুদ্ধ কোন সমাধান দেবে না। উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে। যে সকল পাকিস্তানী ভারত গমন করেছে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠান উচিত। পাকিস্তান এ ব্যাপারে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক নিয়োগে সম্মত হয়েছে কিন্তু ভারত রাজী হয়নি। তিনি বলেন, এটা দুর্ভাগ্যের বিষয় যে পাকিস্তানের ভাগ্য তাঁর সীমান্তের বাইরে নির্ধারিত হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তান হতে কত লোক ভারত গমন করেছে সে সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন জন বিভিন্ন সংখ্যার উল্লেখ করেছেন। কাজেই কোনটা সত্য কোনটা সত্য নয়, তা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ভারত কি প্রচার করছে তা আমি জানিনা। তবে এদের নিজ নিজ বাড়ীঘরে ফিরে আসতে দেয়া উচিত। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানেও জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে পরিস্থিতি শান্ত বলে সেখানে সরকার গঠনের কোন প্রয়োজন নেই বলে অনেকে যুক্তি দেখান। এর অর্থ কি এই দাঁড়ায় না যে যেখানে শান্তি আছে সেখানে গণতন্ত্রের দরকার নেই।
দেশে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যকলাপ শুরু এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্যও তিনি আহ্বান জানান।
-দৈনিক পাকিস্তান, ১ অক্টোবর, ১৯৭১
শাসনতন্ত্রে এল এফ ওর মৌলিক নীতি অনুসরণের সুপারিশ
জামাতের মজলিশে সুরা
পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর মজলিশ-ই-সুরা আশা প্রকাশ করেছে যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পরিচালনাধীনে যে শাসনতন্ত্র প্রণীত হচ্ছে তাতে আইন কাঠামোর মৌলিক নীতিগুলি বিশ্বস্ততার সাথে অনুসৃত হবে।
এপিপির খবর প্রকাশ, গতকাল রোববার মজলিশের প্রথম অধিবেশনে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়, এটা মজলিশের বিবেচিত অভিমত যে শাসনতন্ত্রে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলো অন্তুর্ভূক্ত নাইলে এতে জাতির আশা আকাংখা প্রতিফলিত হবে না।
(১) কোরান ও সুন্নাহ শাসনতন্ত্রের প্রধান উৎস।
(২) ফেডারেল ও পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র।
(৩) পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী।
(৪) পি, ডি, এম-এর ৮দফা কর্মসূচী অনুযায়ী পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন।
(৫) পাকিস্তান সরকারের শাসনতান্ত্রিক দায়িত্ব হবে নির্ধারিত সময়ে দেশের দু অংশের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা।
(৬) নির্ধারিত সময়ে সশস্ত্র সার্ভিস সহ কেন্দ্রীয় সরকারের সব বিভাগ থেকে বৈষম্য দূর করা এবং
(৭) মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা।
-দৈনিক পাকিস্তান, ৪ অক্টোবর,১৯৭১
প্রদেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভুট্টোর বাণী
পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উদ্দেশ্যে প্রেরিত এক বাণীতে দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর দলের ওয়াদার কথা পুনরায় ঘোষণা করেন। গতকাল রোববার ঢাকা থেকে এপিপি এই বাণী পরিবেশন করেছে। গতকাল রোববার পূর্ব পাকিস্তানে শুভেচ্ছা ও রাজনৈতিক সফরে আগত পাকিস্তান পিপলস পার্টির দশ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল চেয়ারম্যান ভুট্টোর সেই বাণী নিয়ে আসেন।
তাঁর বাণীতে জনাব ভুট্টো বলেন যে জাতির জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে হবে। পাকিস্তানীদের দ্বারা পাকিস্তানীদের হত্যা বন্ধ করতে হবে এবং সকলের প্রতি শুভেচ্ছা ও সহানুভূতিরমনোভাব নিয়ে পরস্পর ভাই হিসেবে শান্তিতে বসবাস করতে হবে।
তাঁদের বক্তব্যকে সহানুভূতি নিয়ে বিবেচনা করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েপিপলস পার্টির প্রধান বলেন যে আমরা সকল প্রকার শোষণের অবসান ঘটাবো এবং জনগণের অধিকার সমুন্নত রাখবো।
গণ অধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সব সময়ই চেষ্টা করে আসছি এবং এই বিরাট কষ্টসাধ্য কাজে আমরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের হাতে হাত মিলিয়ে কাজের পক্ষপাতী।
সংগ্রামের এই কালরাত্রির অবসান অবশ্যই ঘটাতে হবে এবং নতুন দিনের আবির্ভাব নিশ্চয়ই ঘটবে। তিনি বলেন গত ৮ মাস ধরে আমার দল গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সাথে পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ্য করে আসছে। অনেক রক্তপাত হয়েছে। পাকিস্তানীরাপাকিস্তানীদের হত্যা করার মহাবিয়োগান্তক ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। ফলে জাতি আজ এক ক্রান্তিলগ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
১৯৬৭ সালে আমি এই সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছিলাম যে জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে আমাদের সত্যিকারের মুক্তির একমাত্র পথ। এই পথ ছাড়া অন্য কোন পথ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সঙ্কটের আবর্তে নিয়ে যাবে। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত আমাদের দেশ অতি দরিদ্রও। আমরা দুর্ভিক্ষের অভিশাপে অভিশপ্ত এবং নির্মম সামাজিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণী শোষণে পর্যদুস্ত।
এই চির দারিদ্রের অবসান ঘটিয়ে জাতিকে সম্মুখপানে এগিয়ে নেবার একমাত্র পথ হচ্ছে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সর্ব প্রথম আমরাই বলেছিলাম যে পুরব পাকিস্তানের জনগণ অপেক্ষাকৃত গরীব অথচ সেখানে শোষণের মাত্রা অধিকতর। আমরাই সকলের আগে বলেছিলাম যে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাধিক্য জনগণের কথার যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। জাতীয় সমঝোতা ও শাসনতন্ত্র প্রণয়নে জনগণের অংশ গ্রহণের দাবী সর্ব প্রথমে আমরাই উত্থাপন করেছি।
আজকে আবার মারা জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের ওয়াদার পুনরুল্লেখ করছি। তাঁর বাণীতে ভুট্টো বলেন, জাতির জীবনে অবশ্যই নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে হবে। আমাদের পার্টি সম্পর্কে শত্রুরা, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণকারীপ্রতিক্রিয়াশীলরা ভুল বোঝাবুঝির চেষ্টা করছে।
আমাদের বক্তব্য সঠিকভাবে শোনার জন্য আপনাদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ। আমরা সকল প্রকার শোষণের অবসান ঘটাবো। আল্লাহর দৃষ্টিতে যেমন সকল মানুষ সমান তেমনি আইনের দৃষ্টিতে সকল পাকিস্তানীদের সমান বলে বিবেচনা করতে হবে।
দৈনিক পাকিস্তান, ১১ অক্টোবর, ১৯৭১
জাতীয় সরকার গঠন করা উচিত
– শফিকুল ইসলাম
রাওয়ালপিন্ডি, ১০ই অক্টোবর (পিপিআই)- কাউন্সিল মুসলিম লীগেরভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব শফিকুল ইসলাম বলেছেন যে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে অবিলম্বে কেন্দ্রে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা উচিত। পূর্ব পাকিস্তানের তিন জন প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত দলের সদস্য হিসেবে বিশ্ব সফরে রওয়ানা হবার পূর্বে এক সাক্ষাৎকারে জনাব শফিকুল ইসলাম বলেন যে তাঁদের এই বেসরকারী সফরের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অব্যাহত ভারতীয় প্রচারণার ফলে সৃষ্টি ভুল বোঝাবুঝি দূর করা।
জনাব ইসলামের লন্ডনের পথে করাচী রওয়ানা হওয়ার পূর্বে এই সাক্ষাৎকার গৃহীত হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজ সহজতর করার জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা ও জনপ্রিয় শাসনতন্ত্র জারী না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে একটি জাতীয় সরকার থাকা উচিত।
তিনি বলেন যে এতে সকল স্তরের জনগণের মধ্যে আস্থার ভাব সৃষ্টি হবে। জনাব ইসলাম বলেন যে দেশের আদর্শ ও অখণ্ডতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
– দৈনিক পাকিস্তান, ১২ অক্টোবর, ১৯৭১
ভারতীয় প্রচারণাচ্যালেঞ্জেরসম্মুখীন হয়েছে
শাহ আজিজ
নিউইয়র্ক, ২৪শে অক্টোবর (এপিপি)।– পূর্ব পাকিস্তানের একজন বিশিষ্ট নেতা শাহ আজিজুর রহমান গতকাল এখানে বলেন যে, বাংলাদেশ ধাপ্পার সরূপ এখন বহুলাংশে উদ্ঘাতিত হয়ে গেছে। জাতিসংঘে পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলে অন্যতম সদস্য জনাব রহমান স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে গতকাল এপিপির বিশেষ সংবাদদাতার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এখানে এক মাসেরও অধিক সময় অবস্থানকালে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তারা সবাই পাকিস্তানের বক্তব্য বেশ আগ্রহ সহকারে শ্রবণ করেছেন।
তিনি বলেন, এটা এখন আর এক তরফা ব্যাপার নয় এবং ভারতীয় প্রচারণার বিশ্বাসযোগ্যতা এখন চ্যালেঞ্জেরসম্মুখীন হচ্ছে। জনাব রহমান বলেন, জাতিসংঘ প্রতিনিধিরা পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ থেকে ভারত বিরত থাকলে পাকিস্তান ভারতীয় সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের যে আশ্বাস দিয়েছে, ে জন্য বিশেষভাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন।
ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তের উভয় পার্শ্বে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব গ্রহণের জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রশংসা করা হয়। শাহ সাহেব বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ব্যাপক সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শনের কথা ঘোষণার ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পূর্বেই সৃষ্ট ভুল ধারণা অবসানে বেশ সহায়ক হয়েছে। সেনাবাহিনীর কথিত নির্যাতন সম্পর্কে ভারতের উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন বিদেশে বসবাসকারী বহুসংখ্যক বাঙ্গালী যারা ভারতীয় প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁরা এখন পাকিস্তান সরকারের গৃহীত ব্যবস্থার যৌক্তিকতা অনুধাবন করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সর্বাধিক প্রয়োজন হচ্ছে ভারতীয় মিথ্যা প্রচারণাকে প্রকৃত ঘটনার আলোকে অত্যন্ত নিপুণভাবে খণ্ডনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে সুদক্ষ পাকিস্তানীদের প্রেরণ করা। শাহ সাহেব বলেন, আমরা যাদের সাথেই দেখা করেছি ও কথা বলেছি, তাঁরা একথা বুঝতে পেরেছেন যে উথান্টের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ভারত উদ্বাস্তুদের দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে সহযোগিতা করতে চাচ্ছে না।
– দৈনিক পাকিস্তান, ২৫ অক্টোবর, ১৯৭১
রাজাকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও তাঁদের আরো অস্ত্র দেয়ার সুপারিশ।
প্রেসিডেন্ট সকাশে নূরুল আমীন
লাহোর, ১৬ই নভেম্বর (এপিপি)।– পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট জনাব নূরুল আমীন আজ এখানে গভর্নর ভবনে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে নব্বই মিনিট ব্যাপী এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকের পর জনাব নূরুল আমীন সাংবাদিকদের বলেন যে, তিনি প্রধানতঃ পূর্ব পাকিস্তানের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সেখানকার আসন্ন উপ-নির্বাচন সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে উপ-নির্বাচনের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত পূর্ব পাকিস্তানে তাঁর ধ্বংসাত্মকতৎপরতাবাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি জানান যে প্রেসিডেন্টের কাছে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে রাজাকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার ও তাঁদের আরো অস্ত্র দেয়ার সুপারিশ করেছেন। তিনি বলেন যে, সেখানে রাজাকাররা খুব ভাল কাজ করছে কিন্তু বর্তমানে তাঁদের সকলের নিকট অস্ত্র নেই।
রাজাকাররা তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকদের হত্যা করছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে জনাব নূরুল আমীন তার সত্যতা অস্বীকার করেন। জনাব নূরুল আমীন বলেন যে, তিনি ২০শে ডিসেম্বরের পূর্বেই খসড়া শাসনতন্ত্রটি প্রকাশের জন্য প্রেসিডেন্টের নিকট প্রস্তাব করেছেন।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০শে ডিসেম্বর শাসনতন্ত্র জারির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। পিডিপি প্রধান বলেন যে ২০শে ডিসেম্বরের পূর্বেই খসড়া শাসনতন্ত্রটি প্রকাশ করা হলে ২৭শে ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার পূর্বেই রাজনৈতিক দলগুলো খসড়া শাসনতন্ত্রটি বিবেচনা করার জন্য আরো সময় পাবে। এক প্রশ্নের উত্তরে জনাব আমীন বলেন যে প্রেসিডেন্ট তাঁর ক্ষমতা হস্তান্তরের কর্মসূচীতে অটল থাকবেন। তিনি বলেন যে, সেনাবাহিনীর হাতে যত বেশি দিন ক্ষমতা থাকবে, দেশের জন্য ততই খারাপ হবে।
পিপিআই পরিবেশিত খবরে প্রকাশ, জনাব নূরুল আমীন জানান যে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি বলেন যে ভবিষ্যতে শাসনতন্ত্র সম্পর্কে আলোচনার সময় তিনি শাসনতন্ত্রে পূর্ব পাকিস্তানকে কি পরিমাণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দেয়া হচ্ছে তা জানতে চান। প্রেসিডেন্ট তাঁকে আশ্বাস দেন যে পূর্ব পাকিস্তানকে সর্বাধিক স্বায়ত্তশাসন দেয়া হবে। ‘সর্বাধিক স্বায়ত্তশাসনের’ কোন সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে কিনা এই মর্মে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে চারটি বিষয় যথা প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র বিষয়, মুদ্রা ও বৈদেশিক বাণিজ্য কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার আলোচনা করে এ সাহায্য ও ঋণ সংগ্রহ করবে এবং বিভিন্ন প্রদেশের জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রদেশগুলোতে তা ব্যয় করা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে শেখ মুজিবের মুক্তি প্রশ্ন নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শীঘ্রই পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কথা বিবেচনা করছেন।
তিনি জানান যে, প্রেসিডেন্ট পূর্ব পাকিস্তানে রাজাকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার ও তাঁদের আরো অস্ত্রশস্ত্র দিতে সম্মত হয়েছেন। পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের ধ্বংসাত্মকতৎপরতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন কেবল যে একটি যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে তাই নয়, প্রকৃতপক্ষে উক্ত এলাকায় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এপিপির খবরের আরো বলা হয়, অপর এক প্রশ্নের জবাবে জনাব নূরুল আমীন বলেন যে, বেআইনী ঘোষিত আওয়ামীলীগের টিকিটে নির্বাচিত ও বহাল জাতীয় পরিষদের সদস্যদের মধ্যে সকলে হয়ত এখন দেশে উপস্থিত নেই, তবে ২৭শে ডিসেম্বর সকালের মধ্যে তাঁরা হয়ত পরিষদের অধিবেশনে বসার জন্য ফিরে আসতে পারেন।
তিনি বলেন যে বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের অন্য কোন দলে যোগদানের ব্যাপারে রাজনৈতিক দল আইন কোন বাধা নয়। তবে তিনি রাজনৈতিক দল আইনটিকে অবাধ গণতন্ত্রের পথে বাধাস্বরূপ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে তিনি জাতীয় পরিষদের ছ’জনপিপিপিপ্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রহস্য সম্পর্কে প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট বিষয়টি সম্পর্কে অনুসন্ধান করবেন বলে তাঁকে জানিয়েছেন।
জনাব নূরুল আমীন বলেন যে, জাতীয় পরিষদেও ছ’দলীয় মৈত্রী জোট অব্যাহত থাকবে। পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (পিডিএম) মত এই জোট যাতে একজনেরনেতৃত্বাধীনে থাকে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
– দৈনিক পাকিস্তান, ৭ নভেম্বর, ১৯৭১
চীন সফর সম্পূর্ণ সফল হয়েছে
ভুট্টো
করাচী, ১২ই নভেম্বর, (এপিপি)।– পাক-ভারত উপ-মহাদেশের ভাগ্য ভিয়েনা, রোম বা প্যারিসে নির্ধারিত হবে না, এই উপ-মহাদেশের মাটিতেই নির্ধারিত হবে। পিপলস পার্টি প্রধান জনাব ভুট্টো ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি উপরোক্ত সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেন। তিনি আব্দুল্লাহ হারুন রোডে এক বিশালজনসমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন। তিনি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অব্যাহত হস্তক্ষেপ এবং আক্রমণাত্মক তৎপরতার বিরুদ্ধে ভারত সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ভারত পাকিস্তানের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে সেই যুদ্ধ শুধু ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তেই সীমিত থাকবে না। তিনি বলেন, ভারত যেন তার পিকিং সফরের ফলাফলকে তার স্বপক্ষে মনে করে ভুল না বোঝে। কেননা চীন পুনরায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের নগ্ন হামলার মুখে পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে। তাঁর পিকিং সফর কতটা সফল হয়েছে সময় আসলেই তা বোঝা যাবে।
তিনি পুনরায় বলেন, আমার চীন সফর সফল হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি তাঁর বিদায় সম্বর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই, অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীপেংফেই-য়ের বিবৃতির উল্লেখ করেন।
তারা বলেছেন, পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের মিশন সফল হয়েছে। আমার কর্তব্য সমাধান করে সন্তুষ্ট হয়ে আমি ফির এসেছি। তিনি ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীজগজীবন রামের সাম্প্রতিক বিবৃতির নিন্দা করেন। এই বিবৃতিতে জগজীবন রাম বলেছেন, ভারত পাকিস্তানের বড় বড় শহরগুলো দখল করার পর ছেড়ে দেবে না। ভুট্টো বলেন, যুদ্ধ শুরু হলে শুধু পাকিস্তান সেনাবাহিনীই যুদ্ধ করবে না পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিক যুদ্ধ করবে। প্রতিটি গ্রাম, শহর ও সড়কে যুদ্ধ শুরু হবে। তিনি বলেন, তবে হোক দমাদম মস্তকালান্দার। ভুট্টো বলেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর হস্তক্ষেপ সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সোভিয়েটের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ভারতকে বহু খেসারত দিতে হবে। কেননা পাকিস্তানও এ ধরনের চুক্তি করেছিল। কিন্তু পরে তা নিরর্থক প্রমাণিত হয়েছে। আমি ভারতকে নোটিশ দিচ্ছি, অস্ত্র ত্যাগ কর। পাকিস্তানকে হুমকি দেয়া বন্ধ কর।
আমাদের উপর যুদ্ধ যদি চাপিয়ে দাও তাহলে তা হবে চূড়ান্ত যুদ্ধ, সর্বাত্মক যুদ্ধ। তিনি দক্ষিণপন্থী ছয় দলের মৈত্রীর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, পিডিপি প্রধান নূরুল আমীন নিজে ছয় দলের আমীর না হয়ে মওলানা মওদুদীকে তার আমীর করিয়েছেন। তিনি বলেন, পিপলস পার্টি শ্রমিক কৃষক, ছাত্র বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের সাথে মৈত্রী করবে।
– দৈনিক পাকিস্তান, ১৩ নভেম্বর, ১৯৭১
প্রধানমন্ত্রীর পদ পূর্ব পাকিস্তানীকে দিতে হবে
গোলাম আজমের দাবী
(স্টাফ রিপোর্টার)
গতকাল সোমবার পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ এক জন পূর্ব পাকিস্তানীকে প্রদানের দাবী জানিয়েছেন। ছয় দলের নির্বাচনী জোটের নেতা জনাব নূরুল আমীনের ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কিত লাহোরে প্রদত্ত বক্তৃতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন যে, এই দেশের এই অংশের জনগণের মন থেকে অতীতে বঞ্চনারমনোভাবক্রমশঃ দূর করতে হলে প্রধান রাজনৈতিক পদটি অবশ্যই একজন পূর্ব পাকিস্তানীকে দিতে হবে।
ন্যায় বিচার এটাই দাবী করে। তিনি বলেন আমাদের পশ্চিম পাকিস্তানী ভাইয়েরা একথা ভালোভাবেই জানেন যে পূর্ব পাকিস্তানীদেরকে তাঁদের ন্যায়সঙ্গত রাজনৈতিক অধিকার থেকে বিশেষ করে আইয়ুব খানের দীর্ঘ দশ বছরের একনায়কত্বশাসনামলে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর ফলেই জাতি বর্তমানের গুরুতর সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে।
দুটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ভুয়া থিওরি
জনাব ভুট্টোর সমালোচনা করে জামাতের নেতা বলেন এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে ক্ষমতার জন্য জনাব ভুট্টোকে এক অদ্ভুত ধরনের পাগলামী পেয়ে বসেছে।
এই পাগলামীর জন্যই তিনি একই রাষ্ট্রে দুটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের থিওরি সৃষ্টি করেছিলেন। ক্ষমতার লোভে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা এমনভাবে বেসামাল হয়ে পড়েছেন যে তাঁরা অন্যান্য দলের নেতাদের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক ভাষায় কথাবার্তা বলেছেন। গত ক’মাস থেকে জনাব ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবার খায়েশ মনে মনে পোষণ করে আসছেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ‘ছ’ দলের মৈত্রী এবং পাকিস্তান ভিত্তিতে বামপন্থী নয় এমন দলগুলোর ঐক্যের সম্ভাবনা তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশাকে মনে হয় ভেঙ্গেচুরমার করে দিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণের ধারণা হচ্ছে যে শেখ মুজিবর রহমানের সাথে জনাব ভুট্টো ক্ষমতার অংশীদারিত্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে ভীত ছিলেন। এই হতাশার মনোভাবই জনাব ভুট্টোকে তাঁর পথ থেকে শেখ মুজিবর রহমানের অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে পরিচালিত করেছিল।
প্রাদেশিক জামাতের আমীর বলেন, আমার মনে হয় জনাব ভুট্টো নিজেও নিজেকে অপরাধী বলে মনে করেন। এ কারণেই গত সাত মাস ধরে এখানকার জনগণ যে মহাসঙ্কটের মোকাবিলা করছেন সে সময় জনাব ভুট্টো পূর্ব পাকিস্তান সফরের আসতে পারেননি। আমি বুঝতে পারি না এই মনোভাব নিয়ে তিনি কি করে জাতীয় নেতা হওয়ার দুঃসাহস করেন। তবে অদূর ভবিষ্যতে তিনি জাতীয় নেতা হওয়ার গুণাবলী অর্জন করুন আমি বরং এই মোনাজাতই করি। দেশের সংহতির স্বার্থে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মনোভাবকে উপেক্ষা না করার জন্য বিবৃতিতে তিনি প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান।
– দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ নভেম্বর, ১৯৭১
দক্ষিনপন্থী সাত দলের মৈত্রী জোট
লাহোর, ১৫ই নভেম্বর (পিপি আই)।- সাতটি দক্ষিন পন্থী রাজনৈতিক দল আজ পিডিপি প্রধান জনাব নূরুল আমীনের নেতৃত্বে সংযুক্ত কোয়ালিশন পার্টি গঠনে সম্মত হয়েছে। আজ সকালে এখানে উক্ত দলগুলোর প্রধান নেতৃবৃন্দের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরে নবগঠিত দলের প্রধান জনাব নূরুল আমীন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে, ” বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য সাধনে যে প্রধান বিষয়টি কাজ করেছে তাহলো জাতীয় আদর্শ বজায় ও রক্ষার জন্য তাদের দৃঢ় সংকল্প। তিনি বলেন যে এই ঐক্যজোটে অংশগ্রহণকারীরা পাকিস্তানে একটি পূর্ণাংগ ইসলামী ব্যবস্থা কায়েমের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালাবেন।
প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর প্রকাশিত যুক্ত ঘোষণায় বলা হয়, “আমরা অর্থাৎ সাত দলের অনুমোদিত প্রতিনিধিরা এখানে ঘোষনা করছি যে আমরা এক নেতা জনাব নূরুল আমীন সাহেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে একটি সংযুক্ত কোয়ালিশন পার্টি হিসেবে কাজ করবো।”
প্রকৃতপক্ষে এই মৈত্রী জোটের কোন নাম দেয়া হয়নি। একজন সাংবাদিক যখন জানতে চাইলেন যে মৈত্রীজোটের ব্যাপারে পিডিপি প্রধানের নেতৃত্বকে তারা কিভাবে আখ্যায়িত করবেন, তখনই কেবল জনাব নূরুল আমীন ত্বরিত এটার “সংযুক্ত কোয়ালিশন পার্টি” নামকরণ করেন। উপস্থিত নেতৃবৃন্দ এই নামকরণে সম্মত বলে মনে হয়। ঘোষণাটিতে আরো বলা হয় যে, আমাদের জনগণের জন্য এক নিরাপদ ও ন্যায়সঙ্গত ইসলামী ভবিষ্যত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি সুসঙ্গত, সুস্পষ্ট ও কার্যকরী নেতৃত্ব দেয়ার জন্য একমনা দলগুলোর মধ্যে অবিলম্বে সর্বোচ্চ পরিমাণ ঐক্য সাধনের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দলগুলো একমত।
নবগঠিত সংযুক্ত কোয়ালিশন পার্টি অঙ্গ দলগুলোর সাধারন লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য কাজ করে যাবে। এই পার্লামেন্টারী মৈত্রী জোটের নেতা হিসেবে জনাব নূরুল আমীনের নির্বাচন হয় সর্বসম্মত। ঘোষণায় যারা স্বাক্ষর করেন তাঁরা হলেন, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির জনাব নূরুল আমীন, পাকিস্তান মুসলিম লীগের (কাইয়ুম গ্রুপ) প্রেসিডেন্ট খান আবদুল কাইয়ুম খান, কাউন্সিল মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা, পাকিস্তান কনভেনশন মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারী মালিক মোহাম্মদ কাসিম, জামাতে ইসলামীর অস্থায়ী আমীর মিয়া তোফায়েল মোহাম্মদ, জমিয়তুল ওলামায়ে পাকিস্তানের ———- এবং মারকাজী জমিয়াতুল ওলামায়ে পাকিস্তানের এডভোকেট জনাব ইকবাল আহমদ। শেষোক্ত দল পূর্ব পাকিস্তানে নেজামে ইসলাম দল হিসেবে কাজ করছে। জনাব নূরুল আমীন বলেন যে মৈত্রীজোটের অঙ্গ দলগুলোর নেতৃবৃন্দ জনগণের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে দেশের উভয় অংশে শীঘ্রই সফরে যাবেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে জনাব নূরুল আমীন ছাড়াও ইতিপুর্বে ঘোষণায় স্বাক্ষরদানকারী বিভিন্ন দলের কতিপয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। সংযুক্ত পার্টিতে নয়া সদস্য গ্রহণের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে কি পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে সে সম্মর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে জনাব নূরুল আমীন বলেন যে বিভিন্ন অঙ্গ দলের নেতৃবৃন্দ বৈঠকে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
তবে তিনি বলেন যে নয়া দলকে এই মৈত্রীজোটে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত অবশ্যই সর্বসম্মত হতে হবে। কেন্দ্রে তিনি কোন জাতীয় সরকার গঠনের পক্ষপাতী হবেন কিনা এই মর্মে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এক পাল্টা প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন,” নয়া কোন দল সরকার গঠন করলে তিনি সেটাকে আর কি নামে আখ্যায়িত করবেন।”
জনাব নূরুল আমীন বলেন, তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে সরকার গঠনের আহবাণ জানাবেন।
জাতীয় পরিষদে সংযুক্তি পার্টির সম্ভাব্য শক্তি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে এই পর্যায়ে এ ব্যাপারে কিছু বলার সময় আসেনি। তিনি বলেন, ”উপনির্বাচন শেষ হতে দিন, তারপর দলীয় শক্তি সকলেরই জানা হয়ে যাবে।”
-দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ নভেম্বর, ১৯৭১
বিপ্লব অনিবার্য
জুলফিকার আলী ভুট্টো
করাচী, ১৭ই নভেম্বর (এপিপি)।- পাকিস্তানের জনসাধারণ কোন অবস্থাতেই ‘পুতুল সরকার’ গ্রহণ করবে না। পিপলস পার্টি প্রধান জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো আজ এ কথা বলেছেন। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দফতরে দলীয় কর্মী সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। ভুট্টো বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের মত প্রতিফলনে সক্ষম সরকার গঠনে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে বিপ্লব অনিবার্য।
ভুট্টো তার ২৯শে সেপ্টেম্বরের চার দফা ফর্মুলার পুনরুল্লেখ করে বলেন তাঁর দল এই ফর্মুলায় অবিচল রয়েছে। তিনি উক্ত ফর্মুলা যাচাই ও পরীক্ষা করে দেখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এছাড়া দেশ সম্মুখপানে এগিয়ে যেতে পারে না। ২৯ শে সেপ্টেম্বর ভূট্টো চার দফা সুপারিশ পেশ করেছিলেন, যা তার মতে প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনাকে আরো সুস্পষ্ট ও অর্থবহ করবে।
ভূট্টোর এই চার দফা হলোঃ-
(ক) ১৮ই সেপ্টেম্বরের ঘোষনা তাতে সন্নিবেশ করার জন্য আইন কাঠামো আদেশ সংশোধন করতে হবে এবং প্রেসিডেন্টের বিবৃতির কতিপয় বক্তব্য আরো স্পষ্ট ব্যাখ্যা করা দরকার।
(খ) খসড়া শাসনতন্ত্রের বিধি বিধানসমূহ সংস্কার কর্মসূচীর পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।
(গ) শাসনতন্ত্র বিবেচনার জন্য জাতীয় পরিষদের বৈঠক আহবানের সাথে সাথেই কেন্দ্রে ও প্রদেশগুলোতে নিয়মতান্ত্রিক সরকার গঠন করতে হবে।
(ঘ) পিপলস পার্টিকে পাকিস্তানের উপ- নির্বাচনে ভালোভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।
জনাব ভূট্টো বলেন, তিনি নয়া শাসনতন্ত্র এবং ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কিত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ১৮ই সেপ্টেম্বরের পরিকল্পনা বিনা শর্তে গ্রহণ করেননি।
“আমরা সেটাকে সামনের দিকে একটি সঠিক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছিলাম। ভূট্টো বলেন, দেশের অস্তিত্বের সংকটজনক মুহুর্তে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ সরকার, যে সরকার কার্যকরভাবে বৈদেশিক আক্রমণের মোকাবেলা করতে পারবে এবং জনগণের আশা আকাংখা মোতাবেক অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধানে সক্ষম হবে”।
তার দলের পূর্ব পাকিস্তানে উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ভূল হয়েছে বলে ভূট্টো স্বীকার করেছেন। ‘কিন্তু প্রশ্নটা ছিল দেশকে রক্ষার প্রশ্নে। শে কথা চিন্তা করেই আমরা উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি’। ভূট্টো বলেন, দেশে তাঁর অনুপস্থিতিকালে তার দলের নেতারা পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের উপ-নির্বাচনেও অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। তার অনুপস্থিতিতে এটা করা ঠিক হয়নি।
নূরুল আমীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের দাবী করায় ভূট্টো তার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ” পূর্ব পাকিস্তানের উপ-নির্বাচনে যেভাবে তারা আসন লাভ করেছেন। সে জন্যে তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত। আর এখন তারা তাদের শক্তির বড়াই করে কথা বলছেন।” আমাদের দলের কর্মী ও নেতারা গত সাধারন নির্বাচনের পর বহু স্থানে সরকারের হাতে কষ্ট পেয়েছেন, জেল খেটেছেন। আমাদের রেকর্ড একেবারে পরিষ্কার।
ক্ষমতা লাভের জন্য আমরা কোন কর্তৃপক্ষের সাথে ষড়যন্ত্র করছি, কেঊ সেই দোষ আমাদের দিতে পারে না। ভূট্টো বলেন, তাঁর দল ক্ষমতার জন্য লালায়িত নয়। দেশের ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্য তারা যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যদি প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রেসিডেন্ট পদ চান আমরা তা মেনে নেব। এমন কি জনগণ যদি চান, আমরা জেলে যেতেও প্রস্তুত।
অবশ্য তিনি বলেন, আমরা কখনোই পুতুল সরকার মেনে নেবো না। যদি গোটা দেশের জনগনের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করা সম্ভব না হয় তাহলে দেশের অর্ধেক অংশের প্রকৃত প্রতিনিধিরা চলতি সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসুন। ভূট্টো বলেন, তার দল সংখ্যাগরিষ্ট দল এবং তারাই জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি বলে তার বিশ্বাস। ‘ক্ষমতায় যাওয়ার পর আমি পূর্ব পাকিস্তানে যেতে পারি।’ সেখানকার জনসাধারণের সাথে দেখা করতে পারি এবং এক পাকিস্তানের ভিত্তিতে তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে আলোচনা করতে পারি। তিনি বলেন, আইনগত ও রাজনৈতিক কারনে তার দল উপ-নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
(ক)- পাকিস্তানকে রক্ষা করা। (খ) একটি গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন এবং (গ) একটি বেসামরিক সরকার গঠন করার জন্যই তাঁর দল উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে দুঃখের সঙ্গে এবং চোখ বন্ধ রেখে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পিপলস পার্টি জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
আমরা গণতন্ত্রায়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে চেয়েছি। রাজনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে আলোতে আসুন- সামরিক কার্যক্রম পিছনে পড়ে থাক আমরা তাই চেয়েছি। কারণ সামরিক পদক্ষেপ কোন সমস্যার সমাধান করে না। ঊল্টো তা জনসাধারণের মধ্যে বিদ্বেষ বাড়িয়ে তোলে। ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না কিংবা প্রেসিডেন্ট হতে চাই না। আমি যদি লারাকানা পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে জনগণের সেবা করতে পারি তাতেই আমি খুশী থাকব।’
তিনি বলেন, গরীবের সমস্যা তা পূর্ব বা পশ্চিম পাকিস্তান যেখানকারই হোক এক। তারা সবাই শোষিত। সাত দলীয় জোট গরীবদের ক্ষমতারোহণে বাধা দিচ্ছে। তবে গরীবের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলবে। আমরা বৃটিশ, রাজপুত, হিন্দু, শিখ এমন কি জেনারেলদের যুগ দেখেছি। এবার আসবে গরীবের যুগ এবং কেউই তা রোধ করতে পারবে না।
– দৈনিক পাকিস্তান, ১৯ নভেম্বর ১৯৭১
‘আক্রমণ করাই দেশ রক্ষার বড় কৌশল’
দলাদলি ভূলে ঐক্যবদ্ধ হোনঃ গোলাম আজম
লাহোর, ২৩শে নভেম্বর, (এপিপি)।- পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামী আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম জনসাধারণের প্রতি রাজনৈতিক দলাদলি ভূলে গিয়ে কার্যকরভাবে ভারতীয় হামলা মোকাবিলার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে এখানে পৌঁছে তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করছিলেন। তার সাথে পূর্ব পাকিস্তানের রাজস্ব মন্ত্রী মওলানা এ,কে,এম ইউসুফ এবং জামাতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুর রহিমও ছিলেন।
পূর্ব পাকিস্তানে সর্বশেষ ভারতীয় আক্রমণ প্রশ্নে গোলাম আজম বলেন, এটা কোন নতুন ঘটনা নয়। তফাৎ হলো এই যে, এবারের আক্রমণটা আরো বড় আকারের। তিনি বলেন, দেশকে রক্ষার সবচেয়ে বড় কৌশল হলো আক্রমণ করা। তিনি এ কথা বহুবার বলেছেন এবং এখন এটা আরো বেশী সত্য।
তিনি বলেন, আত্মরক্ষার কৌশল শত্রুকে আরো বেশী উৎসাহ ও শক্তিশালী করে তোলে। ভূট্টোর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে ইচ্ছুক মাত্র একজন লোক দলীয় রাজনীতি করেছেন।
ভারতীয় হামলার এই হুমকির মুখে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দেশে জাতীয় সরকার গঠনের পক্ষপাতী। তার এই সুপারিশ তিনি তার দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পেশ করবেন বলে জানান। গোলাম আজম বলেন, গত ৮ মাস ধরে সীমান্তের ঘটনাবলীর দরুন পূর্ব পাকিস্তানের লোক খুব উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, দুষ্কৃতিকারীরা খুবই সক্রিয়, ভারত প্রকাশ্যে তাদের সাহায্য করেছে এবং অস্ত্র সরবরাহ করেছে।
সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা চলছে এবং প্রকৃত ভোট গ্রহণ করার অসুবিধা রয়েছে। নয়া অর্ডিন্যান্সের ফলে আরো বহু প্রার্থী নাম প্রত্যাহার করবেন বলে আশা করা যায়। বিমানবন্দরে ভূট্টোকে সম্বর্ধনা জানানোর উদ্দেশ্যে আগত বিপুলসংখ্যক পিপলস পার্টি কর্মী জামাতে ইসলামী ও অধ্যাপক গোলাম আজমের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। সমবেত জামাত কর্মীরাও পাল্টা শ্লোগান দেয়।
– দৈনিক পাকিস্তান, ২৪ নভেম্বর, ১৯৭১
তাঁবেদার সরকারের শরীক হবো না
– ভূট্টো
লাহোর, ২৫ শে নভেম্বর (এপিপি)।- পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জনাব জুলফিকার আলী ভূট্টো আজ বলেন, পাকিস্তানের ‘নতজানু’ হয়ে উপ মহাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বৃহৎ শক্তিবর্গের হস্তক্ষেপ কামনা করা উচিত নয়, বরং দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা উচিত।
রাওয়ালপিন্ডি যাত্রার প্রাক্কালে বিমান বন্দরে এক সাক্ষাৎকারে জনাব ভূট্টো বলেন যে, ‘অপর কোথায়ও না গিয়ে’ একটা আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে উপমহাদেশের বর্তমান সংকটের সমাধান আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।
তাড়াহুড়া করে পাকিস্তানের জাতিসংঘে যাওয়াও উচিত হবে না বলে জনাব ভূট্টো আবার দাবী করেন। বিশ্ব সংস্থার কোন বিষয় উত্থাপন করা হতে কোন রাষ্ট্রকে বিরত করতে অবশ্য জাতিসংঘ সনদে কোন বাধা নেই, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের উদ্যোগে ভেটো প্রদত্ত হওয়ার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে। কোন তাঁবেদার সরকারের সাথে তিনি যুক্ত হতে চাননা বলে আজ এখানে পুনরায় উল্লেখ করেন।
দু’এক দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় কোয়ালিশন সরকার গঠিত হচ্ছে বলে আজ সকালে এক শ্রেণীর সংবাদপত্রে যে জোরালো খবর ছাপা হয়, তার প্রতি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাওয়ালপিন্ডি থেকে অপর এক খবরে বলা হয়ঃ জনাব ভূট্টো আজ এখানে বলেন যে জাতীয় সংকট নিরসনে জনগণের প্রতিনিধিদের নিকট জাতির ভাগ্য ন্যস্ত করতে হবে। আজ বিকেলে লাহোর থেকে এখানে আগমন করে ইসলামাবাদ বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে জনাব ভূট্টো বলেন যে, ‘তাঁবেদার সরকার চাপিয়ে দিয়ে’ সংকট সমাধান সম্ভব নয়। আগামী কাল প্রেসিডেন্টের সাথে তাঁর বৈঠকের কথা আছে।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন যে, ‘আরো খারাপ’ হয়েছে। পরিস্থিতি বহুদিন যাবত মন্দ ছিল, তাই তার পার্টি ক্রমাগতভাবেই বলে আসছিল যে রাজনৈতিক সমস্যা জনগণের মনোনীত প্রতিনিধিদের রাজনৈতিকভাবেই সমাধা করা উচিত।
জনাব ভূট্টো বলেন, সময় দ্রুত হাতছাড়া হচ্ছে। তিনি এ অভিমত প্রকাশ করেন যে, ‘চলতি বছরের শেষ নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরেও চলে যেতে পারে’।
– দৈনিক পাকিস্তান। ২৬ নভেম্বর, ১৯৭১
আগে ক্ষমতা হস্তান্তর, পরে জাতীয় সরকার
নুরুল আমীন
লাহোর, ২৬শে নভেম্বর (পিপি আই)।- সংযুক্ত কোয়ালিশন দলের প্রধান জনাব নূরুল আমীন ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে জাতীয় সরকার গঠনের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে তা গণতান্ত্রিক উপায়েই করা উচিত। সংযুক্ত কোয়ালিশন দলের জরুরী বৈঠকের পর আজ সন্ধ্যায় এখানে তাঁর হোটেল কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ইউসিপির সাথে সব দল জড়িত হতে পারে এবং এটাকে একটা জাতীয় সরকার বলা যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, তিনি সব সময়ই জাতীয় পরিষদের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে। এভাবেই যতো বেশী সংখ্যক সম্ভব রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে একটি সরকার গঠন করে বর্তমান সঙ্কট কাটানো সম্ভব। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সংযুক্ত কোয়ালিশনের জন্য ২৭শে ডিসেম্বর একটি পবিত্র দিন নয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে তাঁর আপত্তি নেই। তিনি বলেন অবশ্য এটা সম্পূর্নভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপর নির্ভর করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জরুরী অবস্থা ঘোষনার পর আলোচনা ও তাদের আস্থাশীল করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের উচিত ছিলো সকল রাজনৈতিক দলের একটি বৈঠক আহ্বান করা।
ভারতের এই যুদ্ধ শুরুর জন্য তিনি সামরিক সরকারকে দায়ী মনে করেন কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি সুষ্পষ্টভাবে বলেন, ‘না’। গণতান্ত্রিক সরকার অধিষ্ঠত থাকাকালেও যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জাতীয় সরকার বর্তমান সঙ্কট মোকাবেলা করতে পারবে কিনা তিনি এ প্রশ্নের হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। পশ্চিম পাকিস্তান পিডিপির নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান অবিলম্বে জাতীয় সরকার গঠন করা উচিত বলে গতকাল যে বিবৃতি দিয়েছেন তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বলেন, নবাবজাদা তার সাথে আলোচনা করেননি।
নবাবজাদা যা বলেছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত মত।
– দৈনিক পাকিস্তান। ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১
সত্যিকার অর্থেই ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান
গোলাম আজম
রাওয়ালপিন্ডি, ১লা ডিসেম্বর (এপিপি)।- পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে সত্যিকার অর্থে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য গতকাল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে অনুরোধ জানাইয়াছেন এবং প্রেসিডেন্টকে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য পররাষ্ট্র ও অর্থ দফতরের দায়িত্ব পূর্ব পাকিস্তানীদের হাতে দিতে হইবে।
প্রেসিডেন্টের সহিত ৭০ মিনিট কাল স্থায়ী এক বৈঠকের পর আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে অধ্যাপক গোলাম আজম বলেনঃ প্রেসিডেন্টের সহিত বৈঠকের সময় তিনি প্রেসিডেন্টকে এই মর্মে পরামর্শ দিয়াছেন যে অতীতে যে সমস্ত অবিচার করা হইয়াছে সেগুলি দূরীভূত করা এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আস্থা অর্জনই হইবে বর্তমানের প্রধান কর্তব্য। ইহাতে প্রেসিডেন্টের সাড়া প্রদান উৎসাহব্যঞ্জক বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন, প্রেসিডেন্ট তাহাকে এই মর্মে আশ্বাস প্রদান করিয়াছেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আস্থা অর্জনের ব্যাপারে তিনি আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালাইবেন। তিনি বলেন জনগণের বর্তমানে প্রধান কাজ হইতেছে দেশের প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় একত্রিত হওয়া। জনাব গোলাম আজম এই মর্মে আশা প্রকাশ করেন যে বর্তমান সংকট মোকাবিলা করার জন্য জনগণ সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করিবেন। তথাকথিত মুক্তিবাহিনীকে শত্রুবাহিনী রূপে আখ্যায়িত করিয়া তিনি বলেন যে তাহাদিগকে মোকাবিলা করার জন্য রাজাকাররাই যথেষ্ট। এ প্রসঙ্গে রাজাকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য তিনি আহবান জানান।
জনাব ভুট্টো সম্পর্কে গোলাম আজম বলেন যে, প্রবীণ রাজনীতিবিদ জনাব নূরুল আমীনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা সম্পর্কে ভুট্টো যে সকল মন্ত্যব্য করিয়াছেন যে ব্যাপারে তিনি প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছেন।
দৈনিক ইত্তেফাক, ২ ডিসেম্বর, ১৯৭১
জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শীঘ্রই অনুষ্ঠানের দাবী
পিণ্ডিতে সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে খান কাইয়ুম
রাওয়ালপিন্ডি, ১লা ডিসেম্বর (এপিপি)। কাইয়ুম পন্থী মুসলিম লীগ প্রধান খান আবদুর কাইয়ুম খান শীঘ্রই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠানের জন্য আহ্বান জ্ঞাপন করেন।
গতকাল করাচী হইতে পিণ্ডি আগমনের পর সাংবাদিকদের নিকট খান কাইয়ুম বলেন যে, আগামী মাসের ২৭ তারিখের মধ্যে তিনি পবিত্রতা দেখিতে পাননা। কাজেই সুবিধামত যত শীঘ্র সম্ভব পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করা উচিত। জনাব কাইয়ুম খান বলেন, জাতীয় পরিষদের যাহাতে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে না পারে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর যাহাতে সম্ভব না হয়, তজ্জন্য ভারত ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করিতেছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার চিরাচরিত ভারতীয় নীতি অনুসরণে এক্ষণে তাহারা পুরামাত্রায় যুদ্ধে লিপ্ত হইয়াছে তিনি বলেনঃ জনসাধারণ অ সরকারকে এক যোগে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করিতে হইবে।
এক প্রশ্নের জবাবে খান কাইয়ুম বলেন যে, ন্যাপের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তিনি সমর্থন করেন এবং মন্তব্য করেন যে অনেক আগেই ন্যাপকে বে-আইনী ঘোষণা করা উচিত ছিল। যাই হোক, দেশের প্রতি যে তাহাদের আনুগত্য নাই, তাহা এক্ষণে উপলব্ধি করা হইয়াছে।
তিনি বলেন যে, এই ধরনের দলকে শাসনতন্ত্র রচনায় অংশগ্রহণ করিতে দেওয়া যায় না।
সমর পরিষদ গঠনের সম্ভবনা সম্পর্কে মুসলিম লীগ প্রধান বলেন যে, প্রেসিডেন্ট এই প্রশ্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী।
দৈনিক ইত্তেফাক, ২ ডিসেম্বর, ১৯৭১
যথার্থ গণ প্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরই দেশের অখণ্ডতা রক্ষার একমাত্র উপায়
পি,পি,পি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাব।
পেশোয়ার, ২রা ডিসেম্বর (এপিপি)।– গতকাল এখানে জনাব জেড এ, ভূট্টোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পি,পি,পির কেন্দ্রীয় কমিটির এক বৈঠকে জনসাধারণের সত্যিকার প্রতিনিধিদের নিকট অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী জানানো হয়।
কেন্দ্রীয় কমিটির ছয় ঘণ্টাব্যাপী দুইটি অধিবেশনে সামগ্রিক জাতীয় সমস্যা আলোচনা করা হয়। উক্ত আলোচনাকালে এই মর্মে গুরুত্ব আরোপ করা হয় যে, সত্যিকারভাবে ক্ষমতা যাহাদের, তাহাদের নিকট উহা হস্তান্তরের মাধ্যমে পাকিস্তানের অখণ্ডতা বজায় রাখা সম্ভব।
ভারতীয় আক্রমণের ফলে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উক্ত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়। প্রস্তাবে পরাজিত জনগণ বিরোধী ও পাকিস্তান বিরোধী ব্যক্তিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করিয়া বলা হয় যে, সেই রূপ কার্য ভারতের নিকট আত্মসমর্পণের শামিল হইবে এবং উহার দ্বারা দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত তাসখন্দ চুক্তির পথ সুগম করা হইবে। জাতীয় লক্ষ্যকে যথাযথ হস্তে অর্পণ ব্যতীত পুনর্মিলন ও পুনর্গঠনের দ্বৈতকার্য সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করা যাইবে না বলিয়া উহাতে মন্তব্য করা হয়।
প্রস্তাবে আরো বলা হয় যে, আমরা যাহারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি তাহারা অভ্যন্তরীণ ও বাহিরের এই গুরুতর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
প্রস্তাবে অতঃপর বলা হয় যে, ভারতীয় আক্রমণকারীরা পূর্ব পাকিস্তানে অগ্রসর হইতেছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের উপর যুদ্ধের মেঘ জমিয়ে উঠিতেছে। সমগ্র জাতি এক সংকটজনক পরীক্ষার সম্মুখীন হইয়াছে। জাতির ভবিষ্যৎ এক চরম সংকটের সম্মুখীন হইয়াছে। এই সর্বৈব ও গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ইতিহাস জনগণের দুর্জয় নেতৃত্বের প্রতি তাগিদ দিতেছে বলিয়া উক্ত প্রস্তাবে বলা হয়।
দৈনিক ইত্তেফাক, ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১
.
.
(দুই)
বেসামরিক সহযোগিতা
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২১৯। জেনারেল টিক্কা খান সকাশেনেতৃবর্গঃ সহযোগিতার আশ্বাস | সংবাদপত্র | ১৯৭১ |
জেনারেল টিক্কা খান সকাশে নূরুল আমীনসহ ১২ জন নেতা
পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতার আশ্বাস
গতকাল রবিবার অপরাহ্নে জনাব নূরুল আমীনের নেতৃত্বে ১২ জন বিশিষ্ট নেতার সমন্বয় গঠিত একটি প্রতিনিধি দল ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের এক প্রেস রিলিজে এ কথা জানানো হয়েছে। মৌলভী ফরিদ আহমদ, অধ্যাপক গোলাম আজম, খাজা খয়েরউদ্দীন, জনাব শফিকুল ইসলাম, মওলানা নুরুজ্জামান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এ প্রতিনিধিদলে ছিলেন।
অবিলম্বে সমগ্র প্রদেশে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রতিনিধিদল সামরিক আন প্রশাসককে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস এবং জনগণের মন থেকে ভিত্তিহীন ভয় দূর করার উদ্দেশ্যে তারা ঢাকায় নাগরিক কমিটি গঠন করারও প্রস্তাব দেন।
পূর্ব পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও ভারতের বিদ্বেষপূর্ণপ্রচারণার প্রতিবাদ করেন।
প্রতিনিধি দলের সহযোগিতার আশ্বাসকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামরিক আইন প্রশাসক পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক জীবনের পুনর্গঠন সম্পর্কে প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাদি সম্পর্কে অবহিত করেন।
সামরিক আইন প্রশাসক বলেন যে, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অচলাবস্থার ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের উদ্দেশ্যে প্রত্যেককেইকঠোরভাবে কাজ করতে হবে। সাম্প্রতিক অসহযোগ আন্দোলনে বেসামরিক কর্মচারীদের যোগদানের কথা উল্লেখ করে সামরিক আইন প্রশাসক বলেন যে, তারা চাপে পড়েই একাজ করেছেন এটা তিনি বুঝেছেন। এখনো যারা কাজে যোগদান করতে পারেননি তিনি অবিলম্বে তাদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন যে, এমন কি এসব কর্মচারীদের ধর্মঘটের সময়েরও বেতনদানের জন্য তিনি ইতিপূর্বে নির্দেশ দিয়েছেন।
সামরিক আইন প্রশাসক রাষ্ট্রদ্রোহী এবং সমাজ বিরোধীদের কার্যকলাপের ফলে যারা স্থানচ্যুত হয়েছেন তাদের পুনর্বাসন ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনের উপরেও গুরুত্ব আরোপ করেন। জেনারেল টিক্কা খান বলেন যে, প্রদেশে কোন খাদ্য ঘাটতি নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যে, যদি দুষ্কৃতিকারীরা* খাদ্য শস্য প্রেরণে বাধা দেয় তাহলে কোন কোন এলাকা অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে।
তিনি পুনরায় এ ধরনের দুষ্কৃতিকারী, রাষ্ট্রদ্রোহী ও সমাজ বিরোধীদের আশ্রয় না দেয়ার এবং এদের সম্পর্কে সংবাদ পৌঁছে দেয়ার জন্য জনগণকে উপদেশ দেন। এই প্রসঙ্গে তিনি সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শান্তিপ্রিয় জনগণের জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তাবিধানের কথা পুনরুল্লেখ করেন।
– পূর্বদেশ, ৫ এপ্রিল, ১৯৭১
……………………………………………………
*জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিতের পর জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক কার্যক্রমে বাধাদানকারী এবং পরবর্তী সময়ে গেরিলা ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাঙ্গালীদেরকে দখলদার বাহিনী ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ সমাজবিরোধী ও ‘দুষ্কৃতিকারী’ বলে অভিহিত করতো।
আরো কয়েকজন নেতা
সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের এক হ্যান্ডআউটে প্রকাশ, পূর্ব পাকিস্তানের আরো কতিপয় রাজনৈতিক নেতা গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন শাসনকর্তার সঙ্গে দেখা করেন এবং প্রদেশের সর্বত্র দ্রুত পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
জেনারেলটিক্কা খানের সঙ্গে যারাপৃথকভাবে দেখা করেন তারা হচ্ছেনসাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব হামিদুল হক চৌধুরী, পূর্ব পাকিস্তানের জামাতে ইসলামীর সভাপতি অধ্যাপক গোলাম আজম, জমিয়তেওলামায়ে ইসলামের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতি পীর মোহসেন উদ্দিন ও স্থানীয় বিশিষ্ট এডভোকেট এ.কে, সাদী।
নেতৃবর্গ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের অনাহুত হস্তক্ষেপ ও পাকিস্তানে তার সশস্ত্র অনুপ্রবেশের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন যে ভারতীয় অভিসন্ধি নস্যাৎ করার জন্য প্রদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করবে।
সামরিক আইন শাসনকর্তা রাজনৈতিক নেতাদের আশ্বাস দেন যে শাসন কর্তৃপক্ষ সকল শান্তিকামী নাগরিকের জান মাল পুরোপুরিভাবে রক্ষার কাজ অব্যাহত রাখবে। তিনি পুনরায় গত মাসের নিষ্ক্রিয়তার ফলে ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য প্রদেশের অর্থনীতি পূর্ণোদ্যমে চালু করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
– দৈনিক পাকিস্তান, ৭ এপ্রিল, ১৯৭১
আব্দুস সবুর খান
সাবেক জাতীয় পরিষদের নেতা জনাব আব্দুস সবুর খান গতকাল বুধবার ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেনারেল টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। জনাব সবুরের সাথে তাঁর কয়েকজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক সহযোগীও ছিলেন।
– দৈনিক পাকিস্তান, ৮ এপ্রিল, ১৯৭১
নূরুল আমীনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল
গতকাল শুক্রবার ঢাকা এপিপি পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়েছে যে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জনাব নূরুল আমীনের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যনির্বাহক কমিটির একটি প্রতিনিধিদল গভর্নর ভবনে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরলেঃ জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
শান্তি কমিটির সদস্যগণ নাগরিকদের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ও আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছেতৎসম্পর্কেগভর্নরকে অবহিত করেন। তাঁরা জনসাধারণ যে কতিপয় অসুবিধা ভোগ করছে তৎপ্রতিওগভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আলোচনাকালে কমিটির সদস্যরা গভর্নরকে জানান যে, জনসাধারণ ভারতের কুমতলব পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং পাকিস্তানের সংহতি ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য তাঁরা সম্পূর্ণভাবে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে রয়েছে।
গভর্নর শান্তি কমিটির সদস্যদের আশ্বাস দেন যে, জনগণের প্রকৃত সমস্যার উপর লক্ষ্য রাখা হবে এবং অনতিবিলম্বে প্রতিবিধানমূলকব্যবস্থাদি গ্রহণ করা হবে।
গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারীদের মধ্যে ছিলেন জনাব এস কে খয়ের উদ্দীন, আহবায়ক জনাব এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম আজম, জনাব মাহম্মুদ আলী, জনাব আব্দুল জব্বার খদ্দর, জনাব মোহন মিয়া, মওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মাসুম, জনাব আবদুল মতিন, অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, এ এস এম সোলায়মান, এ কে রফিকুল হোসেন, জনাব নুরুজ্জামান, জনাব আতাউল হক খান, তোয়াহা বিন হাবিব, মেজর আফসারুদ্দিন, হেকিমইরতেয়াজুর রহমান খান আখুনজাদা।
– দৈনিক পাকিস্তান, ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১
জমিয়োতেওলামা ও নেজামে ইসলামের প্রতিনিধিবৃন্দ
গতকাল রোববারজমিয়তেউলামায়ে ইসলাম ও পূর্ব পাকিস্তান নেজামে ইসলামের একটি প্রতিনিধিদল পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও খ অঞ্চলের সামরিক শাসক জেনারেল টিক্কা খানের সাথে গভর্নর হাউসে সাক্ষাৎ করেন। দলের সহ সভাপতি সাঈদ মাহমুদ আল মুস্তাফা আল মাদানী নেতৃত্ব করেন।
দলের সদস্যগণ সাড়া প্রদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারী প্রচেষ্টার সাথে তাদের পূর্ণ সহযোগিতা দানের আশ্বাস দেন।
– দৈনিক পাকিস্তান, ১৯ এপ্রিল, ১৯৭১
কনভেনশন লীগ নেতৃবৃন্দ
এপিপির খবরে প্রকাশ, পাকিস্তান মুসলিম লীগের (কনভেনশন) সভাপতি জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরী ও জেনারেল সেক্রেটারী মালিক মোহম্মদ কাশিম গতকাল সোমবার অপরাহ্নে প্রাদেশিক গভর্নরলেঃজেঃটিক্কা খানের সঙ্গে গভর্নর ভবনে এক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন।
প্রদেশে পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নেতৃদ্বয় তাদের দলের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
দেশ ও জনগণের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ বিশেষ করে বেআইনী ঘোষিত আওয়ামীলীগেরনেতৃবৃন্দের প্রতি গভর্নর তাঁর বেতার ভাষণে যে প্রস্তাব দিয়েছেন তাতে মুসলিম লীগ নেতৃদ্বয় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
– দৈনিক পাকিস্তান, ২০ এপ্রিল, ১৯৭১
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২২০। শান্তি কমিটি গঠন ও তৎপরতা | সংবাদপত্র | ১৯৭১ |
স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনার জন্য শহরে শান্তি কমিটি গঠন
ঢাকা, ১০ই এপ্রিল (এপিপি)। শহরের জনগনের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পরিবেশ সৃষ্টির জন্য গতকাল জনাব খাজা খয়েরউদ্দিনকে আহবায়ক মনোনীত করে। এ কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে শহরের সব শান্তি কমিটিগুলো কাজ করবে।
ঢাকার প্রতিনিধিস্থানীয় নাগরিকদের এক সভায় গতকাল “শান্তি কমিটি” গঠন করা হয়। কমিটি জনাব খাজা খয়েরউদ্দীনকে কমিটির আহবায়ক নির্বাচন করেন । বর্তমানে ১০৪ জন সদস্য নিয়ে এ শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আরো সদস্য কো অপ্ট করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় ইউনিয়ন এবং মহল্লা পর্যায়েও শান্তি কমিটি গঠন করা হবে এবং তারা কেন্দীয় কমিটির নির্দেশে কাজ করবেন । কমিটি শহরের দৈনন্দিন জীবনে যত শীঘ্র সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করবেন।
কমিটি প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে আগামী মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করবেন এবং চক মসজিদ যেয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হবে।
কমিটিতে সদস্যদের মধো রয়েছেন জনাব এ,কিউ,এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম আজম, মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মাসুম, জনাব আব্দুল জববার খদ্দর , জনাব মাহমুদ আলী, জনাব এ,কে,রফিকুল হোসেন , জনাব ইউসুফ আলী চৌধুরি, জনাব আবুল কাসেম ,জনাব ফরিদ আহমদ, অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, জনাব আজিজুল হক, জনাব এস,এম,সোলায়মান,পীর মোহসীন উদ্দিন,এডভোকেট শফিকুর রহমান, মেজর আফসার উদ্দিন,সৈয়দ মহসেন আলী, এডভোকেট ফজলুল হক চৌধুরি,আলহাজ সিরাজউদ্দিন,এডভোকেট আতাউল হক খান,এডভোকেট এ,টি,সাদী, জনাব মকবুলুর রহমান , আলহাজ্ব মোহাম্মদ আকিল,অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস, জনাব নূরুর রহমান,সম্পাদক ইয়ংগ পাকিস্তান মওলানা মফিজুল হক,এডভোকেট আবু সালেহ এডভোকেট আব্দুন নাইম প্রমুখ।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের হীন প্রচারনার তীব্র নিন্দা করে সভায় নিন্মলিখিত প্রস্তাব গৃহিত হয়ঃ
ঢাকা শহর শান্তি কমিটির এ সভা পাকিস্তানের অভ্যন্তরিণ ব্যাপারে হিন্দুস্তানের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা করছে।
এ সভা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ভারতকে এ ধরনের বিপজ্জনক খেলায় মেতে আর একটি মহাযুদ্ধকে না আনার বিরুদ্ধে হুসিয়ারী উচ্চারন করছে।
এ সভা মনে করে যে, হিন্দুস্থান পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী পাঠিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের দেশ প্রেমিকতার প্রতি চ্যালেঞ্জ করেছে।
এ সভা আমাদের প্রিয় দেশের সন্মান ও ঐক্য বজায় রাখার জন্য দেশ প্রেমিক জনগণকে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উদ্দেশ্যে আকুল আহবান জানাচ্ছে।
-দৈনিক পূর্বদেশ, ১১ এপ্রিল,১৯৭১
শান্তি ও জনকল্যান কমিটির বৈঠক
গত বুধবার পূর্ব পাকিস্তান শান্তি ও জন কল্যান ষ্টিয়ারিং কমিটির প্রথম বৈঠকে ভারতীয় ও অন্যান্য ইসলাম বিরোধীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সময়োচিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ায় গভীর সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।
এপিপির খবরে বলা হয় যে, বৈঠকে পাকিস্তানবাদ ও পাকিস্তানের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে হিন্দু ভারতের দীর্ঘ দিনের পুরানো ব্রাক্ষণ্য শত্রুতার পুনরাবৃত্তির কঠোর নিন্দা করা হয়। বৈঠক পাকিস্তানকে ভেংগে দেয়ার সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের এলাকায় ভারতীয় অনুপ্রবেশেরও তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।
বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ষ্টিয়ারিং কমিটি সারা পূর্ব পাকিস্তানে কাজ করবে এবং জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত সকল পর্যায়ে শান্তি ও জন কল্যান ইউনিট গড়ে তুলবে।
শান্তি ও জনকল্যান ইউনিটগুলো নির্ধারিত দায়িত্ব অনুযায়ী জীবনের সর্বক্ষেত্রে আস্থা, শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নিতি ও সমৃদ্ধি ত্বরান্নিত করতে সাহায্য করবে।
বৈঠকে গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে যেসব সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার কর্মচারীরা এখনো কাজে ফিরে আসেননি, তাদের প্রতি জনস্বার্থের খাতিরে অবিলম্বে নিজ নিজ কাজে ফিরে আসার আহবান জানানো হয়।
অপর এক প্রস্তাবে বলা হয় যে, প্রাদেশিক ষ্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা সংস্থার সাংগঠনিক কর্মসূচী বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে বিভিন্ন জেলায় চলে যাবেন।
এক প্রস্তাবে দেশপ্রেমিক নাগরিক, আইনজীবী, মসজিদের ঈমাম ও মাদ্রসার মোদাররেসদের প্রতি জনসাধারনকে কোরান ও সুন্নাহর আদর্শে অণুপ্রানিত করে তোলার আহবান জানানো হয়, যাতে জনসাধারন ইসলাম ও পাকিস্তানের দুষমনদের মোকাবিলা করতে পারেন এবং প্রয়োজন হলে জেহাদ যোগ দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন।
কমিটি দেশপ্রেমিকদের প্রতি সকল জেলা শহর ও ইউনিয়নে পনের দিনের মাঝে সর্ব শ্রেণীর জনসাধারন ও পূর্ব পাকিস্তান শান্তি ও জনকল্যান কাউন্সিলের সাধারন সম্পাদকের ধানমন্ডি পাঁচ নম্বর রোড , ১২ নম্বর বাড়ী, ঢাকা,-সাথে যোগাযোগ করে শান্তি ও জনকল্যান কমিটি গঠন করার আহবান জানান।
অন্য এক প্রস্তাবে শান্তি ও জনকল্যান কাউন্সিলের সকল ইউনিটের প্রতি জুম্মায় বৃহওর জামাতে সংগঠন এবং ইসলাম ও ইসলামের আবাসভ’মির প্রতিরক্ষা সম্পর্কে জনসাধারনকে শিক্ষিত করে তোলার আহবান জানানো হয়েছে।
বৈঠকে সভাপতির ভাষনে মৌলবী ফরিদ আহমদ সংস্থার নীতি ও আদর্শ তুলে ধরেন। তিনি বর্তমান মুহুতে ভ্রাতৃসূলভ মনোভাব প্রদর্শনের জন্য চীনের প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
সংস্থার সাধারন সম্পাদক মাওলানা নুরুজ্জামান ও সংস্থার লক্ষ্য ব্যাখ্যা করেন। বৈঠকে মৌলবী ফরিদ আহমেদের নেতৃত্বে বিশেষ মোনাজাত এবং পাকিস্তান ও ইসলামের খেদমতে আতœনিবেদনের উদ্দেশ্যে শপথ গ্রহন করা হয়। সদস্যরা দেশের সংহতি ও অখন্ডতা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ নেন।
জনাব ওয়াজউল্লাহ খান ,মোহাম্মদ আলী সরকার , মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা নুরুজ্জামান ও আজিজুর রহমান খান এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
জনাব আবুল ফয়েজ বোখারী, আব্দুর রশীদ ও ডক্টর আব্দুর রফিককে সদস্য কোঅপট করা হয়।
-দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ এপ্রিল, ১৯৭১
শান্তি কমিটির নতুন নামকরন
গত বুধবার শান্তি কমিটি নামে পরিচিত নাগরিক শান্তি কমিটির এক সভায় সংস্থার নতুন নামকরণ করা হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি এবং সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানকে এই কমিটির কাজের আওতায় আনা হয়েছে।
এপিপি পরিবেশিত এই খবরে বলা হয় যে, কমিটি প্রয়োজন মতো আরো সদস্য কো-অপট করতে পারবেন। জনসাধারণ যাতে দ্রুত প্রদেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য তাদের কাজ শুরু করতে পারেন তার জন্য কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি প্রদেশে সত্ব ও স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সকল পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
কমিটি তাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য জেলা ও মহকুমা পর্যায়ে ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি তাদের কাজ দ্রুত ও যথোপযুক্তভাবে চালিয়ে যাওয়ার ও তাদের নীতি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে কার্যকরী করার জন্য নিন্মলিখিত ২১ জন সিদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেঃ ১।আহবায়ক সৈয়দ খাজা খয়েরউদ্দিন ২।জনাব এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম ৩।অধ্যাপক গোলাম আজম ৪। জনাব মাহমুদ আলী ৫।জনাব আব্দুল জব্বার খদ্দর ৬।মাওলানা সিদ্দিক আহমদ ৭।জনাব আবুল কাসেম ৮।জনাব মোহন মিয়া ৯।মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মাসুম ১০।জনাব আবদুল মতিন ১১।অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার ১২। ব্যারিষ্টার আখতার উদ্দিন ১৩।পীর মহসীন উদ্দিন ১৪।জনাব এ এস এম সোলায়মান ১৫।জনাব এ কে রফিকুল হোসেন ১৬।জনাব নুরুজ্জামান ১৭।জনাব আতাউল হক খান ১৮।জনাব তোয়াহা বিন হাব্বি ১৯।মেজর আফছারউদ্দিন ২০।দেওয়ান ওয়ারাসাত আলী ২১।হাকিম ইরতেয়াজুর রহমান ।
-দৈনিক পাকিস্তান ১৬ এপ্রিল, ১৯৭১
শান্তি কমিটির সংযোগ রক্ষাকারী নিয়োগ
এপিপির খবরে প্রকাশ, কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি ঢাকা নগরীর ইউনিয়ন ও মহল্লাগুলোতে শান্তি কমিটি সংগঠনের জন্য আহবায়ক মনোনীত করেছে।অনেক স্থানে এর মধ্যেই ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ইউনিট কমিটিগুলোর কার্যত্রুম সম্পকে সকল রকমের তথ্য ঢাকায় মগবাজারস্থ ৫ নম্বও এলিফ্যান্ট লেনে অবস্থিত কেন্দীয় শান্তি কমিটির অফিসে অবশ্যই পোঁছাতে হবে। জনগনের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির অফিস ২৪ ঘন্টার জন্যই খোলা থাকবে এবং জনগনের সুবিধা অসুবিধা দেখার জন্য কমিটির দফতর সম্পাদক জনাব নূরুল হক মজুমদার এডভোকেটকে অফিসে পাওয়া যাবে।
প্রদেশের সর্বত্র শান্তি কমিটি সংগঠনের পরিকল্পনা ও কর্মসূচী প্রনয়েনের জন্য কেন্দ্রী শান্তি কমিটি রোজই বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। কমিটি স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে যাওয়া এবং সব স্থানে ইউনিট শান্তি কমিটি গঠনে জনগনকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্য জেলা ও মহকুমা পযায়ে নেতা ও কমী প্রেরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কমিটি জনগনের নিকট থেকে সমস্যা ও অসুবিধা সম্পর্কে তথ্য গ্রহন ও তা লাগবের জন্য সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সামরিক সেক্টরের সাহায্য লাভের ব্যবস্থার উদ্দেশ্য কমিটি সদস্যদে মধ্য থেকে সংযোগ রক্ষাকারী অফিসার নিয়োগ করেছে।তারা ইতিমধ্যে তাদেও দায়িত্ব গ্রহন করেছেন। যোগাযোগ রক্ষাকারী অফিসারদিগকে প্রতিদিন কেন্দ্রীয় মান্তি কমিটি অফিসে তাদের রিপোট পেশ করতে নির্দেশ দেয় হয়েছে।
-দৈনিক পাকিস্তান, ২০ এপ্রিল ১৯৭১
সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করার আহবান
শান্তি কমিটির আহবায়কের বিবৃতি
পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি সকল দেশপ্রেমিক পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি রাষ্ট্র বিরোধী লোকদের হিংসাতœক এবং নাশকতামূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধের এবং উৎসাহের সাথে সবরকম ভাবে সশস্ত্রবাহিনীকে সাহায্য করার আহবান জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার কমিটির আহবায়ক এস কে খয়ের উদ্দীন প্রচারিত প্রেস রিলিজে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তিরা সারা প্রদেশে সম্পূর্ন বিপর্যস্ত হওয়ায় এখন পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করেছে,শান্তি প্রিয় নাগরিকদের হয়রান করেছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিচ্ছে।
সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জনগনের এবং আমাদের জানমাল রক্ষার জন্যই এসেছে।
সশস্ত্র বাহিনী যেখানেই যাবে সেখানে জাতীয় পতাক হাতে নিয়ে এগিয়ে আসার এবং রাষ্ট্র বিরোধী ব্যক্তি ও দুস্কৃতিকারীদের নির্মৃল করার অভিযানে সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোরজন্য শান্তি কমিটি দেশপ্রেমিক জনসাধারনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। কমিটি বলেছেন , দেশে সেনাবাহিনীকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
শান্তিপ্রিয় ও দেশপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক পূর্ব পাকিস্তানী জনগন ভারতীয় বেতারের বিদ্বেষ প্রচারনার এবং রাষ্ট্রবিরোধী লোকদের গুজব ছড়ানোর প্রকৃত উদ্দেশ্য বুজতে পারবেন বলে কমিটি আশা প্রকাশ করেছেন।
খন্ডিত হওয়ার হাত থেকে দেশকে রক্ষার মহান কাজে সেনাবাহিনীর সাফল্যের জন্য কমিটি আল্লাহর কাছে গবীর কৃতঞ্জতা প্রকাশ করেছেন।
-দৈনিক পাকিস্তান,২৩ এপ্রিল ১৯৭১
শান্তি কমিটি প্রতিনিধিদের জেলা ও মহকুমায় পাঠানো হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির মিশন পূরনের জন্য জেলা ও মহকুমা সদর দফতরের কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি প্রতিনিধিদের পাঠানো হচ্ছে।
স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দ্রুত পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রাস্ট্রবিরোধী ও সমাজ বিরোধী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জনগনকে সজাগ রাখা ও গুজব রটনাকারীদের দুরভিসন্ধি প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে এই কমিটি গঠিত হয়েছে।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল রোববার এপিপি জানিয়েছেন যে, ইতিমধ্যেই যদি এ ধরনের কোন কমিটি গঠত হয়ে থাকে তাহলে এসব কমিটিকে স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রীয় অফিসে তাদের নাম পাঠাতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি সংশিষ্ট প্রশাসনিক কতৃপক্ষের কাছে স্বীকৃত শান্তি কমিটির রিপোর্ট দেবে।
তাছাড়া ঢাকা শহরে পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন এলাকায় শান্তি স্কোয়াড বের করা হচ্ছে। শহর ও শহরের আশেপাশে আরও ১৬টি শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে।…………
-দৈনিক পাকিস্তান, ২৬ এপ্রিল ১৯৭১
শান্তি কমিটির কর্মতৎপরতা শুরু
মুন্সীগঞ্জে পাক সেনাদের বিপুল অভ্যর্থনা জ্ঞাপন
মুন্সীগঞ্জ, ১১ই মে (পিপিআই)। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জোয়ানরা গত ৯ই মে মুন্সীগঞ্জে উপনিত হলে মুন্সীগঞ্জ মহকুমার জনসাধারন ও সরকারী করর্মচারীরা তাদের আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান। পিপিআই বার্তা সংস্থার বিশেষ সংবাদাতা এ কথা লিখেছেন।
মেজর জাবেদের নেতৃত্বে পাকিস্তানী সেনাদও মুন্সীগঞ্জে সেনাদল উপনিত হলে সেখানকার বিভিন্ন শ্রেনীর লোক এই সেনাদলকে বিপুল অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন।এর আগে জনসাধারন সকল দালান কোটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাজার সমূহে পাকিস্তানের পতাকা উওোলন করেন।
পাকিস্তানি সেনা দল টাউনে উপনীত হলে সেখানে একটা আনন্দমূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এরপর সেনাবাহিনীর অফিসাররা জাতীয় পরিষদেও সাবেক সদস্য এবং মুন্সীগঞ্জ টাউন কমটির চেয়ারম্যান জনাব আবদুল হাকিম বিক্রমপুরীসহ স্থানীয় সরকারী কর্মচারী ও নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে জনাব বিক্রমপুরী সামরিক অফিসারদের মুন্সীগঞ্জ মহকুমার জনসাধারনের আন্তরিক ও পূর্ন সহয়োগিতার আশ্বাস দেন।
জনাব বিক্রমপুরী আরও বলেন ,লৌহজং,টঙ্গীবাড়ী, গজারিয়া, শ্রীনগর এবং সিরাজদিখান নিয়ে গঠিত এই মহকুমার জনসাধারন সব সময়ই আইনানুগ, শান্তিপ্রিয় এবং দেশপ্রেমিক।
সকর দোকান পাট, সরকারী ও বেসরকারী অফিসগুলো তাদের স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখে।কোন ব্যক্তিই ভয় ও আতংকে টাউন ছেড়ে যায়নি।
সমরিক অফিসাররা বাজার পরিদর্শন করেন এবং দেখতে পান যে, নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য দ্রব্যাদির মূল্যও স্বাভাবিক ও যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে রয়েছে। পন্য দ্রব্যের সরবরাহও সন্তোসজনক রয়েছে। মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা আউস ফসল কাটছেন। কৃষকরা আবার অন্যান্য ধরনের ধানও রোপন করেছেন।
সেনাবহিনীর দলটি মুন্সীগঞ্জের অভ্যন্তরে টঙ্গীবাড়ী,সিরাজদি খান, রামপাল(ঐতিহাসিক স্থান) এবং অন্যান্য গুরুত্বপূন অংশ সফর করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, সেনাবাহিনী পদ্মা নদী দিয়ে মাওয়া, ভাগ্যকুল এবং কুমারভোগ অতিক্রম করাকালে লৌহজঙ্গে জনসাধারন তাদের আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান।
ইতিমধ্যে মুন্সীগঞ্জ কুমার ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য এবং শান্তিপূর্ন জনসাধারনদের তাদের নিজ নিজ এলাকায় শান্তি কমিটির সভা অনুষ্ঠান ব্য¯ত থাকতে দেখা গিয়েছে।তারা ভারতীয় দালালদের হাত থেকে তাদের নিজেদের ভ’মি রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।
এদিকে শান্তি কমিটির নেতা জনাব আবদুল হাকিম বিক্রমপুরী ইতিমধ্যেই ৬৮টি ইউনিয়ন কাউনিাসলের নেতৃস্থানীয় জনসাধারনকে সেনাবাহিনীর দল তাদের স্থানে উপনীত হলে সেনাবাহিনীকে তাদের সহযোগিতা দানের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেকটি এলাকার জনসাধারনই স্থানীয় জনসাধারনের প্রতি সেনাদলের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছেন। জনসাধারন ও সেনাদল সন্তষ্টির সাথে তাদের মত বিনিময় করেন।
-পূর্বদেশ, ১২ মে, ১৯৭১
.
.
২২১। শান্তি কমিটির গঠন ও তৎপরতা সম্পর্কিত আরও কয়েকটি দলিল | বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র | ১৯৭১ |
জিলা ”এগ্রিকালচার পীস সাব–কমিটি” গঠনের নির্দেশ।
চট্টগ্রাম জেলা শান্তি কমিটি
কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি, ঢাকা অধিভুক্ত
অফিসঃ
পাকিস্তানী কাউন্সিল
( মুসলিম ইন্সটিটিউট হল)
কে সি দে রোড, চট্টগ্রাম
আহবায়কঃ আলহাজ মাহমুদুন নবী চৌধুরী
সূত্র নং – ২৬/সি ভি পি সি / ৭১
তারিখ- ১৫/৬/১৯৭১,
১। জনাব আহমেদুর রহমান চৌধুরী, সচিব, হাটহাজারী থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি , এবং
২। ডাঃ এম , এজহার মিয়া, সচিব, বোয়ালখালী কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি মিলনায়তন, চট্টগ্রাম ।
যেহেতু সমাজবিরোধী উপাদান যোগাযোগ বিচ্ছিন্নকরণের মাধ্যমে স্বাভাবিক নাগরিক ও অর্থনৈতিক জীবনে ভাঙ্গনের সৃষ্টি করেছে এবং জনগণের বিশ্বাসও নড়ে যাচ্ছে, কৃষি খাতও এর ব্যতিক্রম নয়, অতএব অর্থনীতির প্রধানতম খাত হিসেবে কৃষিখাত সচল করার জন্য একটি উপ-কমিটি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করা হচ্ছে ।
১। এই উপকমিটি জেলা পর্যায়ে কৃষি শান্তি উপ কমিটি নামে এবং অন্যান্য পর্যায়ে কৃষি শান্তি উপ কমিটির পূর্বে নিজ নিজ এলাকার নামানুসারে পরিচিত হবে ।
২। আপনারা উভয়ে জনাব আহমেদুর রহমান চৌধুরী এবং ডঃ এজহার মিয়া আপনারা উভয়ে কৃষি শান্তি উপ –কমিটির আহবায়ক হিসাবে মনোনীত। আপনারা চট্টগ্রাম জেলার নিম্নলিখিত দায়িত্ব জরুরিভাবে গ্রহন করেছেন ।
১। আপনারা উভয়ই যৌথ ভাবে,
ক। ২৫ জন সদস্য নিয়ে কৃষি শান্তি কমিটি উপ- কমিটি গঠন করুন যারা প্রত্যেকে প্রতি জেলার একটি থানাকে প্রতিনিধিত্ব করবে। এক- তৃতীয়াংশ শক্তি নিয়ে উপ-কমিটি কাজ আরম্ভ করতে পারবে।
খ। থানা, ইউনিয়ন বা সম্প্রদায় পর্যায়ে আহবায়কের মনোনয়ন করবেন। এসব পর্যায়ে উপ- কমিটির শক্তি ১৫ জনের বেশি অতিক্রম করা উচিত না এবং মোট শক্তির এক – তৃতীয়াংশ শক্তি কার্যক্রম শুরু করতে সক্ষম হবে ।
গ। আহবায়ক অথবা সদস্যদের সততা এবং চরিত্রের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে আপনারা কৃষি শান্তি উপ –কমিটির জন্য ব্যক্তি মনোনয়ন করবেন। এবং
ঘ। কৃষিখাতে শান্তি উপকমিটির কোনো সদস্য বা আহবায়কের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পূর্বে চট্টগ্রাম জেলার শান্তি কমিটির আহবায়কের অনুমোদনের গ্রহণ করবেন।
১১। আপনারা দুইজন যৌথ ভাবে দায়িত্বগ্রহণ বা সহায়তা বা নিম্নলিখিত কৃষিখাতের কার্যক্রম সরাসরি অথবা উপ- কমিটির দ্বারা সংগঠিত করবেন ।
ক। গ্রাম অঞ্চলের কৃষক পর্যায়ে শান্তি সুনিশ্চিত করতে হবে এবং কৃষকদের তাদের স্বাভাবিক কৃষি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে ।
খ। কৃষকদের প্রয়োজনীয় যোগান যেমন বীচ, সার , কীটনাশক , পাম্প, তেল জ্বালানী, ঋণ ইত্যাদি তারা সাধারনত যেসব উৎসের মাধ্যমে জোগাড় করত সেই বিষয়ে সাহায্য করতে হবে ।
গ। কৃষকদের মাঝে যারা সরকারী সমবায় সমিতির সাহায্যে সাধারণ প্রশিক্ষন নিচ্ছিল তাদের কার্যকম অবিরত রাখার জন্য সাহায্য করবে ।
ঘ। কৃষি সমবায় – সমিতি সংঘ এবং কৃষিঋণ সংগঠন যেমন সমবায়- সমিতি ব্যাংক, বহুমুখী সংঘ এবং প্রাথমিক সংঘ পূর্ব পাকিস্তান সরকারের নিবন্ধিত সমবায় সমিতির মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবে । এবং তাদের কৃষি কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় বৈঠক করার জন্য সাহায্য প্রদান করা হবে ।
ঙ। আরও বেশি খাদ্য উৎপাদনের জন্য সরকারী সমবায় সমিতির মাধ্যমে পুনরায় লোন পরিশোধের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে। এবং তাদের আত্মবিশ্বাস পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য পূর্বে সাধারনত তারা যে সব উৎস থেকে ঋণ পেত তার ব্যবস্থা করতে হবে।
চ। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের যে সব কর্মকর্তাগণ কৃষি কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত ছিল তাদের সহায়তা করতে হবে এবং যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষি কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিল পুনরায় শান্তি পুনস্থাপন এবং সবকিছু স্বাভাবিক করার মাধ্যমে সেগুলো সচল করতে হবে।
ছ। কৃষি ক্রিয়াকলাপে অথবা সরকারী অনুমোদিত কৃষি সংস্থা সমূহের কার্যকলাপে কেউ যদি বাঁধা সৃষ্টি করে সরকারী কতৃপক্ষকে কর্মকান্ডের বিবরণ দিয়ে নোটিশের এর মাধ্যমে অবহিত করবে।
কৃষি খাতের উপ- কমিটির সকল সিদ্ধান্ত আপনাদের যৌথ অনুমোদনের মাধ্যমে গৃহীত হবে। এবং যৌথভাবে বা আলাদাভাবে আপনাদের দ্বারা গৃহীত মনোনয়ন অথবা সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম জেলা শান্তি কমিটির আহবায়ক দ্বারা তা সংস্কার করবে ।
এস। ডি/ মাহমুদুন নবী চৌধুরী
আহবায়ক
চট্টগ্রাম জেলা শান্তি কমিটি
অনুলিপিঃ
১। সহকারী উপ-প্রশাসক, মার্শাল-ল কতৃপক্ষ , চট্টগ্রাম ।
২। সহকারী কমিশনার, চট্টগ্রাম ।
৩। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক( সাধারণ ) চট্টগ্রাম।
৪। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( উন্নয়ন )
৫। উপ- বিভাগীয় কর্মকর্তা সদর ( দক্ষিন )
৬। উপ- বিভাগীয় কর্মকর্তা সদর (উত্তর )
৭। উপ- বিভাগীয় কর্মকর্তা সদর ( কক্সবাজার )
৮। পুলিশ সুপার চট্টগ্রাম
৯। বিভাগীয় অফিসার উন্নয়ন ( সকল থানা )
১০।আঞ্ছলিক- ডেপুটি রেজিস্টার , কো- অপ , সোসাইটিজ, চট্টগ্রাম।
১১। সহকারী রেজিস্টার, কো- অপ , সোসাইটিজ, চট্টগ্রাম।
১২। জেলা পরিচালক । ই পি এ ডি সি , চট্টগ্রাম ।
১৩। সহকারী প্রকৌশলী । ই পি এ ডি সি , চট্টগ্রাম ।
১৪। জেলা কৃষি, অফিসার , চট্টগ্রাম ।
১৫। সচিব, টি সি সি এ লিমিটেড চট্টগ্রাম ।
১৬। অফিসার ইন চার্জ ( সকল থানা )
অবগতির জন্য ,
সাবঃ মাহমুদুন নবী চৌধুরী
আহবায়ক
চট্টগ্রাম জেলা শান্তি কমিটি ।
থানা “এগ্রিকালচার পীস সাব –কমিটি”র আহবায়কদের নিয়োগপত্রও তাদের দায়িত্ব
জেলা কৃষি শান্তি উপ- কমিটি ।
প্রযত্নেঃ পাকিস্তান কাউন্সিল
মুসলিম ইন্সটিটিউট হল
কে সি দে রোড, চট্টগ্রাম
প্রতি …………………………………………………………………………………………………।।
কৃষি শান্তি উপ কমিটির যুগ্ম আহবায়ক হিসাবে আমরা চট্টগ্রাম জেলা শান্তি কমিটির অনুমোদন এবং সম্মতিপূর্বক আপনাকে মনোনীত করছি।
জনাব………………………………………………………………………………………………………………………………………, আহবায়ক,
… … … … … … … থানা কৃষি শান্তি উপ- কমিটি নিম্নলিখিত কার্যকমগুলো অবশ্যই সম্পন্ন করবে ।
১। সাংগঠনিক দায়িত্ব।
২। ক্রিয়ামূলক দায়িত্ব ।
…………………………………………………………………
অনুমোদনক্রমে
স্বাক্ষরিত- মাহমুদুন নবী চৌধুরী
৩/৭/৭১,
আহবায়ক ,
চট্টগ্রাম জেলা শান্তি কমিটি
১। ……………
আহমেদুর রহমান চৌধুরী
২। ………………………
(ডঃ মোঃ এজহার মিয়া)
যুগ্ম আহবায়ক
জেলা কৃষি শান্তি উপ-কমিটি , চট্টগ্রাম।
ইউনিয়ন কৃষিশান্তি কমিটির আহবায়কদের নিয়োগপত্র ও তাদের দায়িত্ব
থানা কৃষিশিক্ষা কমিটি, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম
মেমো নং……. তাংঃ ১৭/০৭/১৯৭১
আমি ওয়াকিল আহম্মদ তালুকদার চট্টগ্রাম গেলা কৃষিশান্তি কমিটির যুগ্ম আহবায়কদ্বয়ের অনুমোদন ও মনোনয়ন প্রাপ্ত হইয়া রাংগুনিয়া থানা কৃষিশান্তি কমিটির আহবায়ক হিশেবে আপনি মিঃ…………………. কে ইউনিয়ন কৃষিশান্তি কমিটির আহবায়ক নিযুক্ত করতঃ নিম্নলিখিত দায়িত্ব পালনসমূহের জন্যে অনুরোধ করিতেছিঃ
০১) সাংগঠনিক দায়িত্বসমূহ
(ক) যাহারাপূর্ব হইতে কৃষি কাজের সহিত জড়িত আছেন এবং রাষ্টিীয় সংহতি নিঃসন্দেহ এ রূপ ১৫ জন সদস্য সহযোগি তা আপনার ইউনিয়ন কৃষিশান্তি কমিটি গঠন করিতে হইবে।
(খ) নিন্মস্বাক্ষারকারী ও জেলা আহবায়ক অনুমোদন সাপেক্ষে আপনি কমিটিগঠন করার সাথে সাথে অন্ততঃপক্ষে ০৫জন সদস্য লইয়া কাজ আরম্ভ করিতে পারেন। কিন্তু প্রথমে আপনার ইউনিয়ন কৃষিশান্তি কমিটির সকল সদস্যের নাম ঘোষনা করিতে হইবে। ক্রমে অবশিষ্টসদস্যদের নাম অনুমোদনের জন্য পাঠানো যাইতে পারে , যদি এক সাথে ১৫টি নাম পওয়া না যায়।
(গ) প্রত্যেক বিষয়ে সুবিচার করিতে হইবে এবং রাষ্ট্র বিরোধি কার্যকলাপ সরাসরি ও সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত না হইলে কোন নির্দোষ ব্যক্তিকে হয়রানী করা যাইবেনা। সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি যে কোন রাজনৈতিক দলভুক্ত হউক না কেন।
(ঘ) কৃষি বিষয়ক সরকারী সংস্থা এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বা স্বার্থের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা।
(ঙ) প্রয়োজনবোধে আঞ্চলিক কৃষিশান্তি কমিটি গঠন করা যাইতে পারে। এরূপ কমিটিতে ০৫ জন সদস্য এবং একজন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করিবেন, কৃষি কাজ করেনা এমন কোন ব্যক্তি ইহার সদস্য হইতে পারবেনা।
(চ) কেবল প্রয়োজন বোধে, প্রাথমিক সমবায় সমিতি উপর ভিত্তি করিয়া প্রাথমিক কৃষিশান্তি কমিটি গঠন করা যাইতে পারে। এরূপ কমিটি কেবলমাত্র সেখানে করা যাইবে যেখানে সমবায় ঋণআদায় ও ঋণ গ্রহীতা সদস্য উৎপাদিত ফসল ও সম্পতি রক্ষণাবেক্ষন সমস্যার উদ্ভত নয়।
(ছ) বিগত গোলযোগে রসময় যে সকল বেসরকারী কৃষি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পদ শূণ্য হয়েছে তদস্থানে নতুন কর্মকর্তা নাম প্রস্তাব করা যাহাতে ঐ সকল প্রতিষ্ঠান অধিকখাদ্য উৎপাদনের উদ্দেশ্য কাজ করিয়া যাইতে পারে।
(জ) আপনার শান্তিকমিটির সভা সপ্তাহে একবার অনুষ্ঠিত করা ও থানা কৃষি শান্তি কমিটির পাক্ষিক সভায় যোগদান করা যাইতে পারে।
২। কার্য নির্বাহি দায়িত্ব সমূহ
(ক) পাকিস্তানের বিশেষ পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সহ চাষী সাধারণের নিরাপত্তা সম্পর্কে তাদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করা।
(খ) আত্মগোপন সমাজবিরোধী ব্যাক্তিদের সম্পর্কে চাষীদিগকে সতর্ক করিয়া দেওয়া যাহাতে ঐ সকল ব্যাক্তি দ্বারা কোন দুস্কর সাধিত হইতে না পারে।
(গ) চাষীদিগের মধ্যে বিশ্বাস আহরন করা যে তাহাদের উৎপাদিত ফসলাদি ন্যায্য মূল্য পাইবে এবং স্বাভাবিক পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত ভাবে তাহাদের প্রয়োজন মিটানোর হইবে।
(ঘ) সকল কৃষি সমবায় সমিতির ও অন্যান্য কৃষি সংক্রান্ত বিষয়সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা এবং তাদের প্রয়োজন মিটানর কাজে সহায়তা প্রদান করা।
(ঙ) সরকারী কর্মচারীসহ যে কোন মহল হইতে কোন প্রকার অন্যায় হুমকি বা ক্ষতিকর প্রতিষ্ঠনের বিরুদ্ধে কৃষিপ্রতিষ্ঠান এবংচাষীদের সাহায্য করা।
(চ) সমবায় সমিতির মাধ্যমে প্রদত সরকারী ঋণ আদায়ের ব্যপারে সমবায় সমিতির সাহায্য করা।
(ছ) কর্জ ও খাজানা ইত্যাদি আদায়কারী সংস্থাকে বিগত গোলযোগের সময় নিরুদ্দেশ ব্যাক্তিদের সমবায় সমিতিতে দেয় টাকা আদায়ের ব্যাপারে অবহিত করা।
(জ) এলাকায় পরিত্যক্ত জমিজমা ও অন্যান্য সম্পত্তির তত্ত¦বধায়ক রূপে কাজ করার জন্য বর্তমান প্রাথমিক সমিতির সমূহকে সংগঠন করা এবং প্রয়োজনবোধে নতুন কৃষি সমাবয় সমিতির সাহায্য গ্রহন করা।
(ঝ) সমবায়সমিতি কর্তৃক দায়িত্ব গ্রহনকার পর্যন্ত সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে পরিত্যক্ত ভূসম্পত্তি তত্তাবধায়রূপে কাজ করা।
(ঞ) কেবলমাত্র পূর্ব মালিক অথবা চাষীদের অনুপস্থিতির দরুর কোন জমি পতিত না রাখা।
(ট) ভূমি সংক্রান্ত আইন অনুসারে প্রত্যাবর্তনকারী কৃষক অথবা জমির মালিকে তাহার দখল ও স্বার্থ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সহায়তা করা।
(ঠ) কোন জমি অথবা অন্য প্রকারসম্পত্তি জোরপূর্বক অথবা বেঅঅইনীভাবে আত্মসাৎ না করা হয় এবং তদ্বারা কোনপ্রকার গোলযোগ সৃষ্টি হইতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা।
(ড) উৎপাদিত ফসল ন্যায্য মূল্যে বিক্রয়ের ব্যপারে চাষীদের সাহায্য করা এবং উহার ন্যায্য মূল্য পাইতে সহায়তা করা।
(ঢ) কোন প্রকার অবিচার করা হইলে উহাজিলা কৃষিশান্তিকমিটি, স্থানীয় আহবায়ক এবং সরকারী কতৃপক্ষকে জানাইতে হইবে। সত্বর সাড়া না পাইলে তৎক্ষণাৎ ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের গোচরীভুত করা।
(ন) আপনার এলাকাস্থ শান্তিকমিটির সকল স্তরের সহিত ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা রক্ষা করা।
স্বাক্ষর-
(ওয়াকিলআহম্মদ তালুকদার)
আহবায়ক,
রাঙ্গুনীয়া থানা কৃষিশান্তিকমিটি, চট্রগ্রাম।
দুস্কৃতকারীদের তৎপরতা রোধের জন্য সামরিক কতৃপক্ষের
কাছে জিলা শান্তি কমিটির পরামর্শ।
প্রতি,
উপ- প্রশাসক,
মার্শাল- ল,
চট্টগ্রাম।
স্যার,
দুর্বৃত্তকারীদের রাষ্ট্র বিরোধী কার্যক্রম দিনে দিনে বৃদ্ধি পাওয়া এবং রাষ্ট্রদ্রোহীরা বহু সংখ্যক দেশ প্রেমিকদের হত্যা করার কারনে আমরা দুর্বৃত্তকারীদের নির্মূলে এবং শহরে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য নিম্নলিখিতপদ্ধতি সমূহ সুপারিশ করছিঃ
১। ক। নিন্মোল্লিখিত দেশপ্রেমিক বাহিনীগুলোকে সংঘটিত করে পুরো শহরের সন্দেহজনক বাড়ি এবং ভবনগুলো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘেরাও করা উচিত যার নেতৃত্বে থাকবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা ইউনিয়নের নিচের কমিটিসমূহের অধীনে থাকবে।
১। স্থানীয় রাজাকার যারা প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ( সংগঠিত অথবা অসংগঠিত )
২। আল বদর বাহিনীর সদস্যরা ।
৩। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা ।
৪। ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সদস্যরা।
৫।পুলিশ।
৬। বেসামরিক প্রতিরক্ষার সদস্যরা।
৭। এবং দেশ প্রেমিক স্থানীয় ছাত্ররা এবং অন্যান্য তরুন নাগরিকগণ। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে গ্রাম থেকে আরও রাজাকার আনতে হবে।
খ। একই ভাবে প্রত্যেক ইউনিয়নে স্থানীয় গ্রাম প্রতিরক্ষা দল গঠন করা যেতে পারে যাদের মাধ্যমে সমগ্র এলাকা সুরক্ষিত করা হবে এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান অথবা বি ডি সদস্যদের নিয়ে সন্দেহজনক সকল বাড়ি এবং ভবনগুলো সময়ে সময়ে অনুসন্ধান করতে হবে।
গ। নিজ এলাকার যেকোনো দুর্ঘটনার জন্য চেয়ারম্যান অথবা বি ডি সমূহ দায়ী হবে।
২। ক। দুর্বৃত্তদের সরকারী অফিস অথবা বেসরকারি অফিসে বোমাবাজি বন্ধ করার জন্য নিম্ন লিখিত পদ্ধতি গ্রহন করা উচিতঃ
ক। ডি সি অফিস থেকে একটি আদেশ নামা প্রতিরক্ষা কমিটির সকল চীফ অফিসের কো – অপারেশন নিজ নিজ অধস্তন কর্মচারীদের নিকট পাঠাতে হবে যাদের মাঝে চৌকিদার এবং পিয়নও অন্তর্ভুক্ত।
খ। একইভাবে অফিস বা সংস্থার আঙ্গিনায় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার জন্য চীফরা দায়ী থাকবে।
গ। তারপর একইভাবে অফিসে কর্মরত দুর্বৃত্তকারীদের চীফের তত্ত্বাবধানে সহকর্মীদের দ্বারা অফিসে পাহারা দিয়ে রাখা হবে।
৩। উপরে বর্নিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং অগ্রগতি পর্যালোচনাসহ সমন্বয় করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে যেখানে ডি সি এবং এস পি ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে । এবং রাজনৈতিক দলগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিতভাবে সপ্তাহিক মিটিং অনুষ্ঠিত হবে।
আপনার বিশ্বস্ত
স্বাক্ষরিত
(বদিয়ুল আলম )
সচিব
জেলা শান্তি কমিটি
চট্টগ্রাম
জ্ঞাতার্থে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনণের জন্যঃ
১। ডি সি, চট্টগ্রাম
২। এস পি, চট্টগ্রাম
৩। গভর্নর, পূর্ব পাকিস্তান
৪। অধ্যাপক শামসুল হক, মিনিস্টার –ইন- চার্জ , ত্রাণ ও পুনর্বাসনের সঙ্গে উপরের স্বাক্ষরকারীর টেলিফোনে কথোপকথন এর রেফারেন্স ।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২২২। রাজাকার, মুজাহিদ, আল বদর ও আল শামস বাহিনীঃ গঠন ও তৎপরতা | সংবাদপত্র | ১৯৭১ |
ফুলপুরে রাজাকারদের ট্রেনিং সমাপ্ত
ঢাকা, ৯ই জুলাই (এপিপি)।– ফুলপুর থানা ট্রেনিং ও উন্নয়ন কেন্দ্রের মাঠে ১৬৯০ জন রাজাকার-এর এক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এরা সকলেই সাত দিনের ট্রেনিং শেষ করেছেন। এই অনুষ্ঠানে ট্রেনিং প্রাপ্ত ব্যাক্তিরা ছাড়াও শান্তি কমিটির সদস্য, ইউনিয়ন কাউন্সিলরসমূহের চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ এবং বিপুল সংখ্যক জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ১৬০ জন রাজাকারকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এছাড়া দু’জন রাজাকারকে তাঁদের কৃতিত্ব ও কর্তব্য নিষ্ঠার জন্য নগদ টাকা পুরষ্কার দেয়া হয়।
ফুলপুর থানা থেকে মোট সাড়ে ছ’শ রাজাকার মনোনীত করা হয় এবং এদের সকলকেই ট্রেনিং দেয়া হবে।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানটি “পাকিস্তান জিন্দাবাদ”, “কায়েদে আযম জিন্দাবাদ” ও “পাকিস্তানের সংহতি জিন্দাবাদ” শ্লোগানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
- দৈনিক পাকিস্তান, ১০ জুলাই, ১৯৭১
কুষ্টিয়ার মুজাহিদ ও রাজাকারদের কুচকাওয়াজ-
কুষ্টিয়া, ১৫ই জুলাই, (এপিপি)।– গতকাল সকালে স্থানীয় ইউনাইটেড স্কুল ময়দানে মুজাহিদ ও রাজাকারদের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে পদস্থ সরকারী অফিসার ও গণ্য মান্য বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গসহ বহু সংখ্যক লোক উপস্থিত ছিলেন। জেলা কমিটির চেয়ারম্যান জনাব সাদ আহমদ দুই হাজার রাজাকারের অভিবাদন গ্রহণ করেন।
রাজাকারদের উদ্দেশ্য প্রদত্ত ভাষণে জনাব সাদ আহমদ ভারতীয় অনুপ্রবেশ-কারীদের বিরুদ্ধে মাতৃভূমি রক্ষার কাজে রাজাকাররা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসায় তিনি তাদেরকে অভিনন্দন জানান।
তিনি তাঁদের প্রতি সূদৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং শত্রুদের ধ্বংস করার কাজে সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য আহবান জানান।
উৎসাহী রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং সমাবেশে যোগদানকারী জনতার একটা অংশ বিভিন্ন শ্লোগান সহকারে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। তারা “ পাকিস্তান জিন্দাবাদ” প্রভৃতি শ্লোগান দেয়। ……
- দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ ই জুলাই, ১৯৭১
ইসলামপুর শান্তি কমিটির সভায় রাজাকার বাহিনী গঠিত
গত রোববার ইসলামপুর ইউনিয়ন শান্তি কমিটির অফিসে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইসলামপুর ইউনিয়ন শান্তি কমিটির আহবায়ক জনাব মোবারক হোসেন সভাপতিত্ব করেন।
ইসলামপুর ইউনিয়ন শান্তি কমিটির এক প্রেস রিলিজে বলা হয় যে, সভায় প্রত্যেকটি ইউনিটের ২৫ জন করে লোক নিয়ে একটি রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। সভায় মহল্লার শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সভায় পাকিস্তানের সংহতি ও ঐক্যের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পাকিস্তান বাহিনীর সময় মত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সভায় পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করা হয়।
- দৈনিক পাকিস্তান, ২৭ জুলাই, ১৯৭১
রাজাকাররা, ৭০ জন দুষ্কৃতীকারীকে হত্যা করেছে
রাজাকাররা ময়মনসিংহ জেলায় গত মাসে ৭০ জন রাষ্ট্র বিরোধী লোককে নিহত এবং বহুজনকে আহত করেছে। এছাড়া তারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করেছে। গতকাল সোমবার ঢাকায় এপিপি এ খবর পরিবেশন করেছে।
এখানে প্রাপ্ত বিস্তারিত খবরে প্রকাশ দুষ্কৃতকারীরা গত ৪ঠা জুলাই শেরপুরের কাছে একটি গ্রামের সেতু ধ্বংস করার চেষ্টা করে। রাজকাররা তাঁদের বহুজনকে হতাহত করে সেতু ধ্বংস করার চেষ্টা ব্যার্থ করে দেয়।
“দুষ্কৃতকারীরা” ১৯টি লাশ ১৩ খন্ড টিএনটি, কয়েকটি হাতবোমা, ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন এবং ভারতে তৈরী ১৯টি বিস্ফোরক টিউব ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
শেরপুর থেকে ২০ মাইল দূরবর্তী একটি গ্রামে “দুষ্কৃতকারীদের” অবস্থানের খবর পেয়ে পরদিন রাজাকাররা উক্ত গ্রামে গিয়ে ২০ জুন দুষ্কৃতকারীকে হত্যা করেছে এবং কিছু রাইফেল, হাতবোমা এবং ৩০০ মন চাউল উদ্ধার করেছে।
১৩ ও ১৪ ই জুলাইয়ের রাতে রাজাকাররা যখন নিয়মিত টহলদারিতে নিয়োজিত সেই সময় নকলা এলাকায় “দুষ্কৃতকারীদের” সাথে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে রাজাকাররা ৪জন দুষ্কৃতকারীকে হত্যা করে। তারা দু’টো স্টেনগান, ৬ টি হাতবোমা, ৬০ রাঊন্ড ৩০৩ রাইফেল এর গুলি উদ্ধার করে।
- দৈনিক পাকিস্তান, ১০ আগস্ট, ১৯৭১
রাজশাহীতে রাজাকারদের কুচকাওয়াজ
রাজশাহী, ১৫ই আগশ্ত,(ইউপিআই)। ট্রেনিং সমাপ্তি শেষে রাজাকারদের দ্বিতীয় দলটি গত বৃহস্পতিবার এখানে তাদের কুচকাওয়াজে পাকিস্তান ও ইসলামের স্বার্থে তাদের জীবন উতসর্গ করার শপথ গ্রহণ করে। সাহেব বাজার জামে মসজিদের ইমাম তাদের অভিবাদন গ্রহণ করেন। রাজাকারদের তাদের পবিত্র দায়েতাব সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। শান্তি কমিটির সদস্যবৃন্দ সহ অপরাপর নেতৃবৃন্দও উক্ত অনুষ্ঠানে ভাষণ দান করেন।
- দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ ই আগস্ট ১৯৭১
গফরগাঁয়ে আল-বদর বাহিনী গঠিত
(নিজস্ব সংবাদদাতা, প্রেরিত)
গফরগাঁও, ২রা সেপ্টেম্বর, গতকাল বিপুল উতসাহ-উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে গফরগাঁয়ে আল- বদর বাহিনী গঠিত হয়েছে। এতদুপলক্ষে এখানে এক সভার আয়োজন করা হয়, এবং তাতে স্থানীয় শিক্ষক, ছাত্র, যুবক, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যবর্গসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোক যোগদান করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি মাওলানা আনিসুর রহমান মুর্শিদাবাদী বক্তৃতায় আল-বদর বাহিনীর আদর্শ ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন এবং আল-বদর বাহিনীর দেশ প্রেমিক যুবকদের দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে আত্মনিয়োগ করতে বলেন।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিষ্টিটিউটের ছাত্র সংঘের নেতা জনাব মহিউদ্দিন ও ময়মনসিংহ জেলার ইসলামী ছাত্র সংঘের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জনাব মুজিবুর রহমান।
- দৈনিক পাকিস্তান, ৬ ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
আল-শামস বাহিনীর তৎপরতা
গতকাল মঙ্গলবার রাজাকার সংস্থার স্বেচ্ছাবাহিনী “ আল-শামস” ময়মনসিংহ, যশোর ও চট্রগ্রামে সাফল্যের সঙ্গে তিনটি অভিযান চালায়। আল-শামস রাজাকার সংস্থার একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী। এরা সেনাবাহিনীর তদারকিতে ট্রেনিং গ্রহণ ও কাজ করেছে। ময়মনসিংহে তারা কিশোরগঞ্জের দক্ষিণ- পূর্বে ভারতীয় চরদের একটি গোপন আড্ডায় আক্রমণ চালিয়ে স্টেনগান, ৯ টি রাইফেল এবং ৫ টি হাত বোমা উদ্ধার করে।
এসব অস্ত্র উদ্ধার করার সময় তারা একদল ভারতীয় চরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং তাদের ৩ জনকে হত্যা করে। অন্যান্যরা পালিয়ে যায়। চট্রগ্রাম থেকে এপিপির খবরে বলা হয়, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের মাধ্যমে সন্ধান পেয়ে আল-শামস চট্রগ্রামের উত্তরে হাট হাজারীতে একটি বেসরকারি বাড়িতে হানা দিয়ে নাশকতা মূলক প্রচুর বই পুস্তক উদ্ধার করেন।
তারা বাড়ীর মালিককে ও গ্রেফতার করে। যশোর আল-শামস ঝিনাইদহের দক্ষিণ পূর্বে আরেকটি পাড়ায় ভারতীয় চরদের সঙ্গে এক সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং তাদের ৪ জনকে হত্যা করে। এতে আল-শামস এর একজন সদস্যও আহত হয়। ভারতীয় চরদের আঘাত হানার পর আল-শামস ভারতীয় অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের একটি ডিপোর সন্ধান লাভ করে। সেখান থেকে ১৩ টি রাইফেল, ২৪ টি সর্ট মাইন এবং ৬০ পাউন্ড বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে।
- দৈনিক পাকিস্তান, ৩ নভেম্বর, ১৯৭১
রাজাকারদের সাফল্যজনক অভিযান
পিরোজপুর, ৪ঠা নভেম্বর। মহকুমার নাজিরপুর থানার রাজাকাররা থানার পুলিশের সাহায্যে সাতকানিয়ায় একদল ভারতীয় চরের সঙ্গে সাহসিকতার সাথে লড়াই করে। সংঘর্ষে ৪ জন ভারতীয় চর নিহত হয়েছে এবং একজন ভারতে তৈরী একটি স্টেনগান, একটি রাইফেল ও দু’টো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সহ ধরা পরেছে বলে এক সরকারী হ্যান্ড আউটে প্রকাশ। ভারতীয় চর লুতফর রহমান জানায় যে তাদের ভারতে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে এবং ভারতীয় সেনা বাহিনী তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে।
এপিপি পরিবেশিত খবরে প্রকাশ, রাজাকাররা দ্রুত অভিযান চালিয়ে বান্দরবন এলাকা থেকে ভারতীয় চরদের নির্মুল করেছে। তারা দুজন ভারতীয় চরকে হত্যা ও দুজনকে বন্দী করেছে, এছাড়া তারা ভারতে তৈরী বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে। এই সব ভারতীয় চর স্থানীয় লোকদের হয়রানী করছিল, তাদের বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছিল ও সম্পত্তি লুট করছিল।
সিলেট থেকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, রাজাকারদের আল-শামস বাহিনী সুনামগঞ্জের উত্তর পশ্চিম এলাকায় টহল দেয়ার সময় দু’টো সন্দেহ জনক নৌকাকে চ্যালেঞ্জ করলে আরোহীরা তাদের প্রতি গুলি ছুড়তে শুরু করে। ফলে একজন রাজাকার আহত হয়। রাজাকাররা সাথে সাথে পাল্টা গুলি চালালে নৌকার আরোহীরা পানিতে লাফিয়ে পড়ে পালাবার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের ৪ জন নিহত হয়। রাজাকাররা নৌকা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে। ভৈরব বাজার থেকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ আল- বদর বাহিনী ভৈরব বাজার থেকে ৩ মাইল উত্তর পূর্বে শিমুল কান্দিতে ভারতীয় চরদের গোপন আড্ডায় হানা দিয়ে ৬ টি রাইফেল, ৪ টি স্টেনগান, ৮ টি বেয়নেট ও গোলা বারুদ উদ্ধার করে।
ভারতীয় চররা রাজাকারদের দেখা মাত্র আড্ডা ছেড়ে পালিয়ে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রাপ্ত অপর এক খবরে বলা হয়েছে যে, রাজাকাররা বিদ্যাকোটের কাছে ভারতীয় চরদের সাথে এক সংঘর্ষে ৩ জন কে হত্যা করেছে অপর ৫ জন অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করেছে।
- দৈনিক পাকিস্তান, ৫ নভেম্বর, ১৯৭১
আল- শামস ও আল- বদর বাহিনীর সাফল্যজনক অভিযান
রাজাকারদের আল-শামস ও আল –বদর বাহিনী গতকাল শনিবার কুমিল্লা ও রাজশাহী জেলায় দুটো সাফল্যজনক অভিযান পরিচালনা করে বলে এপিপির খবরে প্রকাশ।তারা ১হাজার ৮শ ৫০পাউন্ড গুলিসহ ১০টি রাইফেল ,১১টি ম্যাগজিনসহ ২টি স্টেনগান,৯৫টি হাতবোমা ও ১৩০ পাউন্ড বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে।
কুমিল্লা থেকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, আল- শামস ও রাজাকাররা জানতে পারে যে একদল ভারতীয় চর শান্তি প্রিয় গ্রামবাসীদের হয়রানি করার জন্য কুমিল্লা জেলার চাঁদপুরের দক্ষিণে অবস্থিত গুলসিয়া গ্রামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ।ভারতীয় চররা গ্রামটিতে পৌঁছা মাত্র রজাকাররা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ৫জনকে হত্যা করে। অন্যান্যরা ৩শ ৭৫ রাউন্ড গুলিসহ ৩টি রাইফেল,১১টি ম্যাগাজিন সহ ২টি স্টেনগান ও ৬০টি হাতবোমা ফেলে পালিয়ে যায়।
রাজশাহী থেকে প্রাপ্ত অপর এক খবরে বলা হয় যে আল বদর- রাজাকাররা গতকাল নওগাঁর ১০ মাইল দক্ষিণে চৌধুরী ভবানীপুরের কাছে ভারতীয় চরদের একটি গোপন আড্ডায় হানা দেয় । তদের আগমনের খবর পেয়ে ভারতীয় চররা ১ হাজার ৪শ রাউন্ড গুলি সহ ৭টি রাইফেল, ৩৫টি হাতবোমা ও ১৩০ পাউন্ড বিস্ফোরক দ্রব্য ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ।
-দৈনিক পাকিস্তান, ৭ নভেম্বর, ১৯৭১
বদর দিবস পালিত
পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষার দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা
গতকাল রোববার বদর দিবস পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল বিকেলে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে ঢাকা শহর ইসলামী ছাত্র সংঘের উদ্যেগে এক গনজামায়েত অনিষ্ঠত হয়। এরপর এক মিছিল বেরোয়। গনজামায়েতে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদ এই বদর দিবস উপলক্ষে সংঘের পক্ষ থেকে একটি ৪দফা ঘোষণা করেন।তিনি ঘোষণা করেন যে-
(১) “দুনিয়ার বুকে হিন্দুস্তানের কোন মানচিত্রে আমরা বিশ্বাস করি না যতদিন পর্যন্ত দুনিয়ার বুক থেকে হিন্দুস্তানের নাম মুছে না দেয়া যাবে ততদিন পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেব না”। লাইব্রেরীসমূহের প্রতি লক্ষ্য করে তিনি তার দ্বিতীয় দফা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন-
(২) “আগামী কাল থেকে হিন্দু লেখকদের কোন বই অথবা হিন্দুদের দালালী করে লেখা পুস্তকাদি লাইব্রেরীতে স্থান দিতে পারবেন না বা বিক্রি বা প্রচার করতে পারবেন না। যদি কেউ করেন তবে পাকিস্তানের অস্তিত্বে বিশ্বাসী স্বেচ্ছাসেবকরা জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেবে”। জনাব মুজাহিদের বাকি দুটো ঘোষণা হলোঃ
(৩)পাকিস্তানের অস্তিত্বে বিশ্বাসী স্বেচ্ছাসেবকদের সম্পর্কে বিরূপ প্রচার করা হচ্ছে । যারা এই অপপ্রচার করছে তাদের সম্পর্কে হুশিয়ার থাকুন এবং
(৪) বায়তুল মোকাদ্দাসকে উদ্বারের সংগ্রাম চলবে ।জনাব মুজাহিদ এই ঘোষণাকে বাস্তবায়িত করার জন্য ছাত্র, কৃষক ,শ্রমিক,জনতার প্রতি আহবান জানান,তিনি বলেন,- “এই ঘোষণা বাস্তবায়িত করার জন্য শির উঁচু করে,বুকে কোরান নিয়ে মর্দে মুজাহিদের মতো এগিয়ে চলুন । প্রোয়জন হলে নয়াদিল্লী পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে আমরা বৃহত্তর পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করবো”।
জামায়েত ঢাকা শহর ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব শামসুল হক শভাপতিত্ব করেন। বক্তৃতা দেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক জনাব মীর কাশেম আলী । তিনি বলেন যে ,- আজকে বদর দিবসের শপথ হলোঃ
(ক) ভারতের আক্রমণ রুখে দাঁড়াবো। (খ) দুষ্কৃতিকারীদের খতম করবো। (গ)ইসলামী সমাজ কায়েম করবো। জনাব মোহাম্মদ শামসুল হক বলেন জে,আজকের এই ১৭ই রমজানের পবিত্র দিনে বদরের বীরত্বপূর্ণ ঘটনার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা বাতিল শক্তিকে নির্মূল করার শপথ নতুন করে নিচ্ছি। গনজামায়েতর প্রত্যেক বক্তা পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষার জন্যে দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা ঘোষণা করেন।
পাকিস্তানের সীমান্তে ভারতীয় হামলা চলছে বলে উল্লেখ করে জনগণকে এর বিরুদ্ধে একাত্ম হয়ে সংগ্রাম করার জন্যে তারা আহবান জানান। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ থেকে প্রেরণা ও শিক্ষা লাভের জন্যও তারা আহবান জানান । সভার পর এক মিছিল বেরোয়। নওয়াবপুর রোড হয়ে বাহাদুরশাহ পার্কে গিয়ে তা শেষ হয়। মিছিলের কয়েকটি শ্লোগান ছিল :১/ আমাদের রক্তে পাকিস্তান টিকবে । ২/ বীর মুজাহিদ অস্ত্র ধর, ভারতকে খতম কর। ৩/ মুজাহিদ এগিয়ে চল,কলিকাতা দখল কর। ৪/বদর দিবস সফল হোক। ৫/ভারতের চরদের খতম কর ইত্যাদি।
-দৈনিক পাকিস্তান, ৮ নভেম্বর, ১৯৭১
সিলেট ও পাবনায় রাজাকার তৎপরতা
গতকাল সোমবার রাজাকাররা সিলেট ও পাবনায় ভারতীয় চর বহনকারী ৯টি নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছে।ঢাকায় প্রাপ্ত এপিপিপরিবেশিত খবরে জানা গেছে, নৌকা যোগে প্রায় দুই শত ভারতীয় চর সিলেটের জাকিগঞ্জের নিকট পাকিস্তানী এলাকায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে এই খবর জানতে পেরে ৫০ জন রাজাকার উক্ত এলাকায় গমন করে এবং শত্রুর অপেক্ষায় ওৎ পেতে থাকে।
নৌকাগুলো সীমান্তের এপাশে আসার সাথে সাথে রাজাকাররা তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে। ভারতীয় চররা পাল্টা গুলি ছোড়ে এবং রাজাকারদের মারধর করার উদ্দেশে নৌকা থেকে নামানোর চেষ্টা করে । কিন্তু তাদেরকে একাজ করার সুযোগ দেয়া হয়নি।তাদের অধিকাংশ নৌকাতেই আঘাত পায় এবং অন্যান্যরা নৌকা সমেত পানিতে ডুবে যায়। ৩টা নৌকা ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য নৌকা ভারতীয় এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
রাজাকারদের গুলিতে পাবনা জেলার টিকোরির নিকট ভারতীয় চরবাহী আরও ৬টি নৌকা উল্টে পানিতে ডুবে গেছে । অপর এক খবরে জানা যায় যে গতকাল সোমবার রাজাকাররা রংপুর ও কুমিল্লা জেলায় একটি রেল সেতু ও একটি সড়কসেতু রক্ষা করেছে। রেল সেতুটি রংপুর জেলার গাইবান্ধার ২ মাইল দক্ষিণ ত্রিমোহনিতে অবস্থিত। আর সড়ক সেতুটি কুমিল্লা জেলার লাকসামের৮ মাইল পশ্চিমে মুর্গাপুরের নিকট অবস্থিত।
-দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ নভেম্বর, ১৯৭১
.
.
শিরোনামঃ ২২৩। রজাকারদের সম্পর্কিত আরও কয়েকটি দলিল
সূত্রঃ সংবাদপত্র
তারিখঃ ১৯৭১
রাজাকারদের বেতন
.
এইচকিউ (হেড কোয়ার্টার) এএসএমএলএ যশোর
প্রযত্নে , পাক এবিপিও
টেলে : মিল – ৯৪
এম১ ১৭/এ
৩০ আগস্ট ৭১
বরাবর : ডেপুটি কমিশনার
যশোর
জেলা সভাপতি , শান্তি কমিটি
যশোর ।
বিষয় : রাজাকারদের বেতন
অনুগ্রহ করে এটা নিশ্চিত করুন যে রাজাকারদের বেতন নিয়মিতভাবে দেওয়া হচ্ছে ।
এসডি/- মোহাম্মদ আমিন
মেজর , এএসএমএলএ
তারিখ: ৭/৯/৭১
মেমো নং – ২২৪ (৮)
তথ্য এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কপিটি প্রেরণ করুন :
চেয়ারম্যান
নগর শান্তি কমিটি
যশোর ।
এসডি/-
বরাবর- সভাপতি
জেলা শান্তি কমিটি , যশোর ।
জিলা রাজাকার প্রধানের নির্দেশ
গতিবিধি আদেশ
এমভিআই মোঃ সেরাজুল ইসলামকে এতোদ্বারা জানানো হইতেছে যে তিনি যেন যথাশিঘ্রই তালতলা ক্যাম্পে রিপোর্ট করেন যেখানে তাকে ক্যাম্পের সংঘটিত রাজাকারদের অনুপ্রেরণাদায়ক প্রশিক্ষণ
প্রদান করিতে হইবে ।
এই বিষয়টি টাঙ্গাইলের এ.এস.এম.এল.এ রাজ মোঃ হাবিবুল্লাহ বাহার এর অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং এস/ও সেরাজুল ইসলামের নির্দেশিত ।
.
.
রাজাকার সংগঠন , তাদের প্রশিক্ষণ ও সিলেবাস সম্পর্কে নবম ডিভিশন পুর্বাঞ্চলী কেন্দ্রীয় কম্যান্ডের কয়েকটি দলিল
গোপনীয়
এইচকিউ (হেডকোয়ার্টার) এএসএমএলএ চুয়াডাঙ্গা
টেল : ১৮৬
২৮ অক্টোবর , ৭১
বরাবর : এইচকিউ (হেডকোয়ার্টার) ১৮ পাঞ্জাব
ওসি ‘ বি ‘ কয়
বিষয় : সদ্যনিয়োগপ্রাপ্ত রাজাকারগণ
হেডকোয়ার্টার ৯ ডিভিশন আইটিআর নং – জি/১৫২৪২/টিআরজি (ট্রেইনিং) ২৩ অক্টোবর ‘৭১ এর কপি এবং ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টার এর আইটিআর নং ৪১৮/৪৮/জিএস (টি) অক্টোবর ৭১ এর কপি , এর সাথে
সাধারণ নির্দেশনাবলি ,সংক্ষিপ্ত পাঠপরিকল্পনা , বিস্তারিত পাঠপরিকল্পনা এবং ট্রেইনিং প্রোগ্রাম (Anx ‘এ’ ‘বি’ ‘সি’ ) রাজাকার ক্যাডারদের নির্দেশনার খাতিরে , এবং আপনার জ্ঞাতসারে প্রেরণ করা হলো এবং
যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল ।
এসডি/- মেজর
এএসএমএলএ
জয়েন-উল -মালুক
গোপনীয়
হেডকোয়ার্টার ৯ ডিভিশন আইটিআর নং – জি/১৫২৪২/টিআরজি (ট্রেইনিং) ২৩ অক্টোবর ‘৭১ এর কপি
বিষয় : আমাদের জি/১৫২৪২ টিআরজি (ট্রেইনিং) ৬ অক্টোবর ‘৭১ তারিখের সম্পর্কে
প্রশিক্ষনার্থি রাজাকার কমান্ড নিম্নোক্তভাবে সংঘটিত হবে ঃ-
এ. সেকশন কমান্ড প্রশিক্ষণ
(১) রাজাকার সম্বলিত প্রত্যেক ইউনিট তার এলাকায় সেকশন কমান্ডের চলাকালীন সময়ে ১০ দিনের জন্য ক্যাডারদের সংগঠিত করবে ।
(২) সম্পূর্ণ সেকশন কমান্ডের জনবলের এক তৃতীয়াংশ একটি করে ক্যাডারের আওতায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হবে এমনভাবে যেন প্রত্যেক প্লাটুনের জন্য একজন সেকশন কমান্ড থাকে ।
(৩) প্রথম সেকশন কমান্ড ক্যাডার যথাসম্ভব ২৫ অক্টোবর ১৯৭১ থেকে শুরু হবে।
(৪) সেকশন কমান্ড প্রশিক্ষণ এর পাঠপরিকল্পনা সংযুক্ত করে দেওয়া হলো ।
ঢাকাস্থ ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টার এর আইটিআর নং ৪১৮/৪৮/জিএস (টি) অক্টোবর ৭১ এর কপি
বিষয় ঃ সেকশন কমান্ড ক্যাডার – রাজাকারগণ ।
আমাদের ১৯ অক্টোবর ৭১ তারিখস্থ সিগ জি – ৩৫১৩ এর ৩য় প্যারা সম্পর্কে ।
১. উপরোক্ত ক্যাডারদের জন্য সাধারণ নির্দেশনা , সংক্ষিপ্ত পাঠপরিকল্পনা , বিস্তারিত পাঠপরিকল্পনা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচী এখানে পাঠানো হলো ।
২. প্রশিক্ষণ সংগঠিত হবে ইউনিট / এএসএমএলএ পর্যায়ে । এফেমেন (???) কমান্ডদের অনুরোধ করা যাচ্ছে প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর যথাযথ ব্যবহারের জন্য ।
.
.
anx থেকে কপি করো ‘এ’ দপ্তরে পূর্ব Comd আইটিআর নং 418/48 / জিএস 19 (টি) অক্টোবর 71.
দপ্তরে ইস্টার্ন COMD রাজাকার এসইসি COMDS ক্যাডার বল্ক পাঠ্যক্রম
এস / কোন. Subj সময়কাল নির্ধারিত বক্তৃতা / ডেমো. Prectical / প্রাক্তন. মোট 1. ড্রি – 6 6 2. WPN Trg 1 14 15 3. FD প্রকৌশল 3 3 6 4. FD ক্র্যাফট 6 13 19 5 Tacs 20 20 40 6. Ldrship 1 – 1 7. অ্যাডমিরাল 4 – 4 8. মিক্স 1 – –
মোট 100
RESTD দপ্তরে ইস্টার্ন COMD এসইসি COMDS ক্যাডার রাজাকার | GEN INSTRS.
- এইম. রাজাকারদের বায় দক্ষতা উন্নত করার জন্য সেকেন্ড comds যেমন রাজাকার নির্বাচিত ট্রেন থেকে.
- স্ট্যান্ডার্ড অর্জন করা. একটি. , অনুপ্রাণিত প্রশিক্ষণ, এবং তার সেকেন্ড দক্ষতার নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে. খ. মৌলিক মিল জ্ঞান অর্থাত ড্রিল, INF পিএল wpns, FD নৈপুণ্য, আপনি, ক্যাম এবং ঢাকন, অস্র এবং হ্যান্ডলিং ক্রিয়াবিশেষণ হ্যান্ডলিং / খনি ও শরীর ফাঁদ নিরস্ত্র ব্যবহার অর্জন.
গ. একটি এলওসি ঘন্টা বা ইনস্টলেশন Def জন্য তার সেকেন্ড স্থাপন করতে সক্ষম হবে. ঘ. Const / estb anb maint একটি য় ব্লক. ই. একটি আচরণ পরিকল্পনা অভিযান এবং ওৎ পাতা. চ. Ni এ কাজ করতে সক্ষম হবে. ছ. দেবের উদ্যোগে তার সেকেন্ড প্রদত্ত অন্য কোন এমএসএন চালায়. জ. স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন এবং প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরন
- প্রশিক্ষণের সময় সীমা
একটি. 10 কার্যদিবসের মোট এই ক্যাডারের জন্য ব্যয় করা হবে.
খ. দৈনিক সময়সীমার 45 মিনিট মূল্য- বিকালে 4 সময়সীমার 10 সময়সীমার / Ni.
- ব্লক পাঠ্যক্রম, বিস্তারিত পাঠ্যক্রম এবং প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান. Anx যেমন ATT. A ও B এবং যথাক্রমে.
- সুত্র প্রকাশনা
একটি. যুদ্ধ-1969 সালে INF Trg ভোল চতুর্থ-INF Pl নগরী
খ. এন অপস-1968 জন্য INF Trg ভোল চতুর্থ.
গ. ড্রিলস এবং অনুষ্ঠান 1970 জন্য comd এর শব্দ.
ঘ. SAS, খনি ও boody যাত্রীর সঙ্গের নিজলটবহর উপর প্রাসঙ্গিক প্রচারপত্র.
ই. গেরিলা এবং শিল্পী Pwar ভাড়া অধ্যায় 2- 1961.
চ. ফার্স্ট এইড এর উপকরণ
প্রেরকঃ
কমান্ডার কর্নেল জেনারেল ঢাকা ক্যন্টনমেন্ট (মিয়া হাফিজ আহমেদ)
এইচ কিউ প্ররব কমান্ডার
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
টেলীফণঃ২১২
১৯ অক্টোবর,’৭১
Distr : List ‘B’ ser 1-g & 7
MLa Zone ‘B’ DG Razakars.
এএনএস ‘বি’ দপ্তরে পূর্ব Comn আইটিআর থেকে ৪১৮/৪৮/ জিএস ১৯ (টি) অক্টোবর ৭১.
.
.
হেড কোয়ার্টার ইস্টার্ন কমান্ড
সেক্টর কমান্ড ক্যাডার- রাজাকারস
ডিটেইল্ড সিলেবাস
সিরিয়াল নং | বিষয় | পিরিয়ড/লেকচার/ডেমো | মোট প্রাক্টিক্যাল/পরীক্ষা |
১. একটি ড্রিল.
ক অস্ত্র দিয়ে ড্রিল _ ২ ২
খ হাত দিয়ে অস্ত্র পরিচালনা – ২ ২
গ স্কোয়াড নেয়া _ ২ ২
২. অস্ত্র টার্গেট প্রশিক্ষণ
ক হোল্ডিং, আইমিং এন্ড ফাইয়ারিং অফ রিফেল – ২ ২
খ হেন্ডেলিং অফ স্টেন এন্ড এল এম জি – ২ ২
গ স্ট্রিপিং এন্ড এসেম্বলিং অফ রাইফেল স্টেন এন্ড
এল এম জি – ২ ২
ঘ প্রিপ এন্ড রেঞ্জ ইয়ার্ড ১ – ১
ঙ ফায়ারিং ডে – ৪ ৪
চ ফায়ারিং নি – ৪ ৪
৩. এফডি ইঞ্জিনিয়ারিং
ক ট্রেঞ্চেস এন্ড ডাব্লিউপিএম পিটস, সিটিং
এন্ড ডাইমেনশন্স ১ ১ ২
খ মাইন টাইপস, লেইং, ডিসার্মিং
এন্ড লিফটিং ১ ১ ২
গ বডি ট্রাপ্স টাইপ, লেইং, এন্ড
ডিসার্মিং ১ ১ ২
৪. এফ ডি ক্রাফট
ক ক্যাম এন্ড কন্সেল্মেন্ট ১ ২ ২
খ ইউজ অফ গ্রাউন্ড এন্ড কাভার ১ ১ ২
গ এফ ডি সিগস ১ ১ ২
ঘ সেক এফেমেনেস ১ ২ ৩
ঙ ইন্ডিভিজুয়াল স্টক বাই ডে এন্ড নীল ১ ৩ ৪
চ সিলেকশন অফ লাইন অফ এডভান্স এন্ড
মুভ বাই ডে ১ ৩ ৪
৫. ট্যাক
ক ইস্যু অফ ভিওস ১ ১ ২
খ পিট এলেস
১. টাইপ্স অফ প্টিএল ১ – ১
২. পিটিএল এইডিয়ারস অর্ডার ১ ১ ২
৩. প্লানিং রিহার্সেল এন্ড কন্ডাক্ট অফ
ক. রেসি পিটিএল ২ – ২
খ. ফাইটিং পিটিএল ২ – ২
গ. এক্স ইন প্যাট্রলিং – ৪ ৪
গ. অ্যামবুশ
১. সিলেকশন অফ সাইট ২ – ২
২. পার্টিস এন্ড দেয়ার টাস্ক ২ – ২
৩. প্লানিং এন্ড অর্ডারস ২ – ২
৪. এফডি এক্স রেইড – ৪ ৪
ঘ. রেইড
১. পার্টিস এন্ড দেয়ার তাস্কস ২ – ২
(2) Planning and orders 2 – 2
(3) Fd ex raid – 4 4
- Rd Blocks
(1) Characteristics 1 – 1
(2) Covering -/def of rd block 1 – 1
(3) Fd ex- constr/ manning a rd – 2 2
block
- GW Introduction to GW and anti 1 – 1
guerilla ops
- Def
(1) Use of ground and F of Fs 2 – 2
(2) All round def, listening posts 2 – 2
And alarm system
(3) Def of a small br of instl 2 – 2
(4) Sentry duties 2 – 2
(5) Fd ex – def – 4 4
- Ldrship 1 – 1
- Adm 2 – 2
- Care of arms, ammo and eqpt
- Hygiene, sanitation, first aid and 2 – 2
disposal of cas
- Misc. Org of rifle pl 1 – 1
Directed to accompany him.
Sd/Illegible
District Adjutant of Razakars
Tangail.
Memo No. 512 – (2)- Raz, dated 2.10.71
Copy forwarded to :- …..
.
.
জনৈক রাজাকারের স্বাক্ষরিত শপথ
.
‘এ’
প্রতি এইচ কিউ এমএলএ জোন বি
আইটিআর নং ১২০০/৩ এমএল
অফ ০২ অক্টো’ ৭১
.
তফসিল খ
শপথনামা
(রুল ১৬)
আমি আবুল কাশিম ______ পিতা _____ হাসান আলি মোল্লাহ ঠিকানা ____ গ্রামঃ মধুপুর, পোষ্ট অফিসঃ বেঘটিয়া, জেলাঃ যশোর শপথ করছি যে এই মূহুর্ত থেকে আমি আমার ধর্মীয় রীতিনীতির অনুসরণ করব এবং দেশ ও সমাজের সেবায় আমার জীবন উৎসর্গ করব। আমার অগ্রজদের দেয়া সব আইনসম্মত আদেশ পালন করব এবং সেসব বাস্তবায়ন করব। আমি আইন দ্বারা প্রণীত পাকিস্তানের সংবিধানের প্রতি অনুগত থাকব এবং প্রয়োজনবোধে নিজের জীবন দিয়ে পাকিস্তানকে রক্ষা করব।
স্বাক্ষর/-
আবুল কাসিম
৩১ অক্টোবর, ১৯৭১; আমার উপস্থিতিতে এই শপথ নেয়া হয়েছে।
স্বাক্ষর- অস্পষ্ট
সহকারী কমান্ড্যান্ট
নড়াইল সাব- ডিভিশন
যশোর জেলা।
.
জনৈক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রাজাকারের সনদপত্র
.
পূর্বাঞ্চল/ ইস্টার্ন কমান্ড
রাজাকারদের যুদ্ধ প্রশিক্ষণ স্কুল
দক্ষতা সনদপত্র
এতদ্বারা প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, রাজাকার নং ____ নামঃ রকিব উদ্দিন ___ পিতাঃ মৃত হাজী তুফাজ উদ্দিন মল্লাহ পোষ্ট অফিসঃ দৌলতপুর সাব ডিভিশনঃ খুলনা সদর জেলাঃ খুলনা ০৩ নভেম্বর’৭১ থেকে ১৭ নভেম্বর ’৭১ পর্যন্ত সেনাবাহিনী যুদ্ধ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত রাজাকার প্লাটুন কমান্ডার কোর্স- এ অংশ নিয়েছেন।
১. সাধারণ মন্তব্যঃ
– অত্যন্ত উদ্দীপ্ত, পরিশ্রমী এবং ধার্মীক।
– ফেজ ওয়ান কমান্ডার হবার যোগ্য।
২. লক্ষ্য অর্জনঃ
– রাজাকার ফেজ ওয়ান কমান্ডার হবার যোগ্য।
৩. গার্ডিংঃ
– মাঝামাঝি ধরণের
ছাত্রের স্বাক্ষর/-
রকিব উদ্দিন
স্বক্ষরিত
(নজর হুসাইন)
মেজর
আর্মি ব্যাটেল স্কুল
.
একজন রাজাকারের পরিচয়
ইহা এই মর্মে প্রদান করা হলো যে, জনাব হারুন-উর-রশিদ খান এস/ও আব্দুল আজিম খান.৩৬, পুরান পল্টন লেন, ঢাকা-২ আমাদের একজন সক্রিয় কর্মী। সে একজন খাঁটি পাকিস্তানী এবং নির্ভরশীল। সে একজন প্রশিক্ষিত রাজাকার। তার নামে ইস্যুকৃত রাইফেল নাম্বার ৭৭৬…অ্যামুনিশনের সহিত আত্মরক্ষার জন্য।
এস/ডি দায়িত্তে
ইনচার্জ
রাজাকার এবং মুজাহিদ
জামাত-ই-ইসলামি
৯১/৯২,সিদ্দিকবাজার,ঢাকা।
.
.
.
পরিষিষ্ট
পাক দখলদার আমলে অবাঙালীদের ভূমিকা ও মনোভাব সম্পর্কিত কয়েকটি দলিল
১
পার্বতিপুর টাউন কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রশাসক কামারুজ্জামানের
রোজনামচা
২৬ মার্চ – ১৭ মে
.
২৬.৩.৭১
শাফায়েতের সাথে দেখা হলো। পার্বতীপুরের বর্তমান অবস্থা যে ভাবে সে সামলেছে, তার জন্য প্রশংসা করলাম। সাথেসাথে তার অধিনস্থ লোকদের বিষয়েও তাকে সতর্ক করে দিয়ে বললাম এদের বেশি বিশ্বাস না করতে কারণ শত হলেও এর বাঙ্গালী। বলা যায় না সুযোগ পেলে এরা তার জীবনের জণ্য হুমকি হতে পারে। শাফায়েত আমার কথায় হেসে ফেললো। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমাদের অস্ত্র জমা দেবো না, কারণ বাঙ্গালীরাও তাদের অস্ত্র জমা দেয়নি, যদিও আইনত ব্যাপারটা ঠিক নয়।
শহেরর পূর্বদিকে নিকটবর্তী গ্রাম গুলোতে প্রচুর বাঙ্গালীদের সমাগম দেখা যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে এবং চারিদিকে সর্তক প্রহারা জারি আছে।
২৭.৩.৭১
সকাল এগারোটা থেকে শুরু করে প্রায় ১৫ ঘন্টা আমেরিকান ক্যাম্প, উত্তর কর্মাঙ্গন (শহরের উত্তর দিক) এবং চৌকি কর্মাঙ্গনের (শহরের দক্ষিন দিক)দিকে প্রচুর বাঙ্গালীদের সমাগম হয়েছে।বাঙ্গালীরা উত্তর কর্মাঙ্গনে আক্রমন করেছিল। সম্পূর্ন উত্তর কর্মাঙ্গনে আগুন দেয়া হয়েছে এবং যা কিছু ছিল সব লুটপাট করা হয়েছে। সন্ধার দিকে বাঙ্গালীরা একজন ইমাম সহ চারজন লোককে হত্যা করেছে, এরা সব মসজিদে আত্মগোপন করেছিল। আগামীকাল সকাল পর্যন্ত শহরে কার্ফু জারি করা হয়েছে।
২৮.৩.৭১
সকাল প্রায় আটটার দিকে বাঙ্গালীরা চৌকি কর্মাঙ্গন আক্রমন করেছিল, আমাদের একজন লোক মারা গেছেন। দুপুর প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে লাখ খানেকেও বেশি বাঙ্গালীরা চারিদিক থেকে শহরে আক্রমন চালিয়েছে। শহরের মধ্যে অবস্থানরত বাঙ্গালী পুলিশ এবং ই আর পি সদস্যরা এদের সহযোগীতা করেছে। আমরা যখন আমাদের এলাকা থেকে বাঙ্গালীদের সাথে যুদ্ধ করছি, তখন এরা পেছন থেকে আমাদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। আমাদের লোকজন যখন শহর থেকে বাঙ্গালীদের হটিয়ে দিয়ে ব্যারাকে ফিরছিল তখন এদের রাইফেলের গুলিতে দুজন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হন।
.
পিছু ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়ার পর তাদের গ্রাম গুলো আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রায় ৩০ লোক শহরের বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্রে আহতে হয়েছিল। আহতদের সবাইকে পার্বতীপুরের রেলওয়ের ডক্টর খুরশিদ বানু তার স্বামী এবং ছেলের সহযোগীতায় নিজের বাসায় একাই চিকিৎসা করেছেন। তার নৈতিকতা বোধ অত্যন্ত উঁচু পর্যায়ের। আমাদের প্রতিটি আহত লোকদের তিনি খুব দ্রুততা, ধৈর্য্য এবং দক্ষতার সাথে চিকিৎসা করেছেন। আমাদের সাহসী আহত জাওয়ানদের জন্য সেই একমাত্র চিকিৎসক ছিলেন।
২৯.৩.৭১
কর্ণেল তারিক রাসুল দিনাজপুর থেকে তার পরিবার সহ এসে পৌছলেন। তিনি আজ খুব সকালে এসেছেন এবং এর মধ্যে ঘটে যাওয়া দিনাজপুরের ঘটনা প্রবাহ ও বর্তমান টানটান উত্তেজনার কথা আমাদের কাছে বর্ণনা করলেন।
৩০.৩.৭১
কর্ণেল টি রাসুল ও তার পরিবার এবং পার্বতীপুরে কর্মরত অবাঙ্গালী ই আর পি সদস্যগণ সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। যাবার সময়ে কর্ণেল রাসুল আমাদের কিছু অস্ত্র এবং গোলাবারুদ দিয়ে গেছেন। কিছু শুভানুধ্যায়ীগন আমার স্ত্রী এবং সন্তানদের কর্ণেল রাসুলের সাথে সৈয়দপুর পাঠিয়ে দেবার কথা বললেন। কিন্তু আমি এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি কারণ এতে শহরের জনগনের মনোবল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
শহরের জনগনের নৈতিক মনোবল চাঙ্গা করতে সচেষ্ট হলাম আমি কারণ অবাঙ্গালী ই আর পি সদস্যদের শহর ছেড়ে সৈয়দপুর চলে যেতে দেখে তারা মুষড়ে পরেছিল। শহরের চারিদিকে শক্তিশালী ফাড়ি স্থাপন করা হয়েছে। এম/এস বাচ্চা খান ও মতিউর রহমানেকে সঙ্গে নিয়ে সারারাত ধরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করা হলো।
২৯.৩.৭১
কর্নেল তারেক রাসুল দিনাজপুর থেকে স্পরিবারে এসেছিলেন।তিনি খুব সকালে এসে দিনাজপুরের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তুলে ধরে ছিলেন।
৩০.৭.৭১
কর্নেল তারেক রাসুল তার পরিবার এবং পারবতি পুরে দায়িত্বরত অবাঙ্গালি ই পি আর কর্মকর্তাগণ সৈয়দপুরের দিকে রওনা দিয়েছিল।তিনি যাওয়ার সময় কিছু অস্ত্র ও গলাবারুদ আমাদের দিয়ে গিয়েছিলেন।আমার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী কর্নেল টি রাসুলের সঙ্গে আমার ও আমার বাচ্চাদের সায়িদপুরে পাঠাতে বলেছিল।আমি সেই কথা অমান্য করলাম যেহেতু এটা শহরের মানুষের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতো।তখন মানুষ আতঙ্কিত ও আশাহত ছিল অবাঙ্গালি ই পি আর দের সৈয়দপুর প্রস্থানে।মিসেস বাচাখান এবং মতিউর রহমান সারা রাত পুরো শহরের শক্ত প্রতিরোধের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
১.৪.৭১
দুপুর প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে মেজর শাফায়েত আমার বাসভবনে এসে দেখা করে বললেন তিনি ১৫.৩০ ঘন্টা ব্যাপী কার্ফ্যু জারী করতে যাচ্ছেন। তিনি বললেন, এই সময়ে তার অধিনস্থ বাঙ্গালী সেনাদের তিনজন করে দলে ভাগে করে চৌকি দিতে পাঠাবেন যাতে করে তখন আমারা এদের হত্যা করতে পারি।
আমি বললাম, এই কর্মসূচী এখনই শুরু করা উচিত, নইলে যদি বেশি দেরী হয়ে যায় আল্লাহ না করুন এরা আমাদেরকেই হত্যা করতে পারে। কিন্তু তিনি রাজি হলেন না।
এরপর নয়টার দিকে সে যখন তার ক্যাম্পে ফেরার পরে তার লোকেরা তাকে হত্যা করে। এই ঘটনার পরে মেজরের বাহিনীর লোকেরা পালিয়ে যায়।
১.৪.৭১
মেজর সাফায়েত আমার বাসায় ভোর ৩.৩০ এ দেখা করে জানান যে তিনি ১৫.৩০ থেকে কারফিউ জারি করবেন এবং ব্যাচ সহ তার বাঙ্গালি সৈন্যদের পাঠাবেন এবং আমাদের তাদের হত্যা করতে হবে।
আমি তাকে উপদেশ দিলাম যে এই অভিযান এখনি শুরু করতে আল্লাহ নাকরুক না হলে অন্যরা তাকে হত্যা করবে।কিন্তু তিনি রাজি হলেন না।যখন তিনি সকাল ৯ টায় তার ক্যাম্পে ফিরেছিলেন তার লোকেরা তাকে হত্যা করে।এর পর তার রেজিমেন্ট পালিয়ে যায়। পাবতিপুরের ও/সি ও ৯ জন কন্সটেবল রাইফেল সহ ১১ টায় পালিয়ে যায়।বিকেল ৪ টায় আমি ও জনাব মতিউর রহমান জি আর পি আস/পারবতিপুর আক্রান্ত হই। থানার বাঙ্গালি ফোস অল্প কিছু প্রতিরোধের পর আত্মসমর্পণ করে। তাদের কাছ থেকে ভাল অবস্তায় ৯ টি রাইফেল,২৮ টি বোল্ট ছাড়া রাইফেল আনং ২০০ টি ৩০৩ রাইফেলের গুলি উদ্ধার করা হয়।এটি সৈয়দপুরে কর্নেল সাফায়েতকে ফোনে জানানো হয়।সে বাঙ্গালি থানাকেও আটকের নির্দেশ দেন।
২.৪.৭১
বাঙ্গালি ই অই আর গণকে তাদের পারবতিপুরের হলদিবাড়ি কলনির সহকর্মীদের সাথে যোগ দিতে বলা হয়।পারবতিপুরের বাঙ্গালি পুলিশদের কেও ই বি আর দের সাথে যোগদিতে বলা হয়। এইভাবে আপেক্ষিক রুপে হলদিবাড়ি হয়ে উঠলো বাংলাদেশি ফোস একটি শক্ত ঘাটি এবং আমাদের ক্ষতির একটি বড় উৎস যেহেতু হলদিবাড়ি অংশে আমাদের সাথে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ হত।
৩.৪.৭১ থেকে ৬.৪.৭১
টানটান পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।বারবার গোলাগুলি চলত। আমরা আমাদের শহর রক্ষাথে ব্যাস্ত ছিলাম ।আমাদের থানা গত রাতে ঘেরাও হয়েছিল কিন্তু ওরা সফল হয়নি।
.
.
দুপুর ১২ টায় আমি, মিস বাচা খান, মতিউর রাহমান আরো ৮ জন মুজাহিদ সহ থানা ঘেরাও করি। আমি মতিউর রহমান কে নিয়ে থানায় প্রবেশ করে ও সি কে বলি আমরা আপনার থানা ঘেরাও করে ফেলেছি, আপনি এখুনি সারেন্ডার করুন নাহলে আমরা আপনাকে ও আপনার লোকদের মেরে ফেলব. ও সি সারেন্ডার করল। আমরা ভাল মানের ৪০ টি রাইফেল ও থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ৫০০ টি গুলি কব্জা করে নিলাম । থানার কাছেই আমি আমার লোক দের পাঠালাম যারা ২ জন বাঙ্গালীকে হত্যা ও ২৫ টি গ্রাম জালিয়েফেরত আসল। এরপর সেই এলাকা কড়া পাহারায় রেখে আমরা ফেরত আসলাম ।
৭.৪.২০১৭
এটি আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল। ভোর ৫.৪০ এ শহরকে পূর্ব দিক থেকে আক্রমন করা হল। ২টি বোম্ব শেলের ভয়াবহ আওয়াজে আমার বাড়ি কেপে উঠল যদিও তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি । ভোর ৬টা থেকে বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ শুরু হল। E.B.R. E.P.R ও পুলিশ বাহিনীর সহযোগীতায় এক লাখ বাঙ্গালী শহর টিতে আক্রমন করে। পূর্ব দিক থেকে আক্রমন অনেক ভয়াবহ ছিল। তারা রকেট, ২’,৩’ মর্টার , LMG, চাইনীজ অস্ত্র ও থ্রি নট থ্রি রাইফেল ব্যাবহার করছিল।আমি সারা শহরের এক মোরচা থেকে অন্য মোরচায় যেতে লাগলাম আর যেখানে যেখানে জনবল বা অস্ত্র শস্ত্র দরকার তা সরবরাহ করলাম।পূর্ব দিকের আক্রমন জোরদার হতে থাকল ও এক এর পর এক রকেট শেল নিক্ষেপ করা হতে লাগল। যদিও আমরা আমাদের অস্ত্র শস্ত্র খুব সাবধানে ব্যাবহার করছিলাম, কিন্তু ১২টার পর থেকে অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকল ও শত্রুপক্ষ ভারি রকেট ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করতে লাগল।
আমরা আস্তে আস্তে পিছু হটতে লাগলাম, আমরা বৃদ্ধ , মহিলা ও শিশুদের পূর্ব দিক থেকে সরাতে লাগলাম। আমরা আর্মি দেরকে সহযোগীতার জন্য ডাকলাম যেহেতু তারা আসছিলনা আর আমাদের অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। আমাদের অস্ত্রের মজুদ শেষ পর্যায়ে চলে গেছিল। বাচা খান ও তার সাথের লোকেরা তখন ও লড়াই চালানোর চেষ্টা করছিল এবং খুব সাবধানে পিছু হটছিল।কিন্তু শত্রুপক্ষ আমাদের কে কাবু করে পূর্ব দিকের মার্কেট এ ঢুকে যেতে সক্ষম হয়। তারা সব দোকান লুট করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। দুপুর দুইটায় তারা আমাদের কিছু রেল স্টেশনে ঢুকে পরে। কিন্তু আমরা আমাদের প্রান পন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলাম যাতে তারা শহরের আর কোনো অংশে আক্রমন না চালাতে পারে।আমাদের লোকের লাঠি দিয়ে মার্কেট দখল কারীদের সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। দুপুর ২.৩০ মিনিটে প্রথম দফা আর্মি রা এলো আমাদের সাহায্য করতে। এরমধ্যাই আমাদের ১০ জন লোক মারা গিয়েছিল ও ১০০ জন বোমা বিস্ফোরনে আহত হয়েছিল। তারা সবাই চিকিৎসার জন্য ডা। খুরশিদ বানুর বাসায় যাচ্ছিল, কারন একমত্র তিনিই ছিলেন যিনি আহতদের স্বেচ্ছায় সাহায্য করছিলেন আর পূর্ব দিকের বেশিরভাগ বাড়ি ই খালি করে দেয়া হচ্ছিল। আর্মি রা পূর্ব দিক থেকে সব শ্ত্রুদের সরিয়ে দিয়েছিল।কিছুক্ষনের মধ্যেই ২য় দফা আর্মি এসে পরে। আর্মি দের শহরের চারিদিকে পাহারায় বসানো হয়। দুই ঘন্টার মাঝেই তারা পুড়ো শহরকে শ্ত্রুমুক্ত করে তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। এই অপারেশান এ তিনজন আর্মি মারাত্মক ভাবে আহত হয়। তারা সবাই ডাক্তার বানুর কাছে ছুটে যায়। অপারেশান এর পর আমি, মেজর দুররানী, ক্যাপ্টেন চিমা ও ক্যাপ্টেন শারাফাত ডাক্তার বানুর বাসায় যায়। তাঁর বাঙ্গলোতে একশ এর ও বেশি আহত মানুষ ছিল। দুইজন আর্মি কে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল এবং তিনি এখন তৃতীয় জন কে নিয়ে ব্যাস্ত ছিলেন। তিনি তাকে বাঁচানোর আপ্রান চেষ্টা করার পরেও সেই আর্মি অফিসার মারা যায়। কর্নেল শফি এসেও উনার চিকিৎসা সেবার অনেক প্রশংশা করেন। সেই অফিসারেরা এক রাতের জন্য ডাক্তার বানুর বাড়িতে থাকেন ও বাকি সৈন্য রা তার বাড়ির পাশের জিন্নাহ ময়দানে থাকেন। আমি সবার জন্য খাবার এর ব্যাবস্থা করছিলাম ওশহরের মানুষ কি দুর্ভোগ এ আছে তা বর্ণনা করছিলাম। হলদিবাড়িতে অপারেশান চলাকালে আর্মিরা কিছু গ্রাম জালিয়ে দেয় । ই পি আর ও পুলিশ ফোরস ২ টি চাইনীজ রাইফেল জব্দ করে যার মধ্যে একটি মেজর দূররানী নিয়ে যায় ও আরেকটি আমাদের সাথে থাকে। হলদি বাড়িতে যেসব আর্মি ছিল তারা তারা তাদের দলের জন্য খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা কে আবার খতিয়ে দেখে তার পুনর্বিন্যাস করে।
বিত্তিপাড়া ও বাসুপাড়ায় অপারেশান এর জন্য আর্মিদের পাশাপাশি ১০ জন মুজাহিদ কেও পাঠানো হয়।
শত্রুরা কিছুক্ষনের মধ্যেই পালিয়ে যায় । এবং সেই এলাকায় আর্মিদের থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়।
রাতে হুগলীপাড়ায় একটি অপারেশান টিম কে পাঠান হলেও সেখানে কোনো শত্রুর সন্ধান পাওয়া যায়নি
মেজর কুমার ও আমার নির্দেশে ১৫ জন এর একটি দল কে নিয়ে কল্কা বাড়িতে অপারেশান চালানো হয়। কিছু শত্রু কে হত্যা করা হয় ও কিছু রাইফেল জব্দ করা হয় যা পরে আমি আর্মি দের কে দিয়ে দেই ।
বাচা খান ও মেজর কুমারের নির্দেশে লোকজনকে ফুলবাড়ি ১ এর রেল লাইন ও টেলিফোন লাইন ঠিক করতে পাঠানো হয়। আমি আমার লোক জনদের কে নিয়ে পূর্ব দিকের কিছু গ্রামে অপারেশান চালাই।
রাব্বানী নামের আমার এক লোক কে আমি মেজর কুমারের সাথে বেলেচান্দি গ্রামে অপারেশান এ পাঠাই। আর আমি বাচা খান কে সাথে নিয়ে মেজর কুমারের অনুমতি নিয়ে হুগলি পাড়া অপারেশান এ যাই।
আঞ্চলিক নানা রকম সমস্যার কারনে, আমি পার্বতীপুর এর এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে নিযুক্ত হই। শহরের নিরাপত্তার দেখাশুনার জন্য মেজর কুমার ই আমাকে এই পদে নিযুক্ত করেন। আমি অতি দ্রুত একটি মিটিং ডাকি এবং সরকারী ও আঞ্চলিক প্রধান দের প্রশাসনের সব নিয়ম কানুন মেনে চলতে বলি ও কঠোর পরিশরম করতে বলি। লোকাল থানা, বাজার, দোকান পাট, রেল স্টেশান, রেফুজ্যি ক্যাম্প যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেগুলো আবার পুনর্বিন্যাস করা হয়।
স্টেশান মাস্টার মি মল্লিক, জনাব মুস্তফা (DME/PXC) ও সিগনাল ইন্সপেক্টর মি ষেলটন এর সহায়তায় রেল লাইন স্থাপনার কাজ শুরু করা হয়। সবাই এখানে কঠোর পরিশ্রম করছিল, এখানে বিদ্যুৎ এর ব্যাবস্থা করা হল, যা এত দিন বন্ধ ছিল। ডাক্তার বানু কে চিকিৎসার দায়িত্ব দেয়া হল, সকল আহত আরমি, মুজাহিদ, পাঠান , রেফুজি এমনকি যারা পার্বতীপুর থেকে এখানে আহত হয়ে এসেছিল সবার স্বাস্থ্য সেবার দায়িত্ব ডাক্তার বানু কে দেয়া হল।
মেজর যাওয়াদ, বাচা খান ও রাব্বানীর নেত্রিত্তে বদরগঞ্জে অপারেশান চালিয়ে ৫০০ ব্যাক্তি কে গ্রেফতার করা হয় । অনেক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। দুটি স্টেঙ্গান জব্দ করে আর্মি দের হাতে তুলে দেয়া হয়। ৮২ জন হিন্দু বন্দি কে পার্বতীপুর নিয়ে আসা হয়।
পরের দিন একই ভাবে ভবানীপুর ও খোলাহাটির ২৩ টি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয় । কিছু ছাত্র ও নিরাপত্তা রক্ষি কে হত্যা করা হয়, একটি শটগান জব্দ করে আর্মি দের হাতে তুলে দেয়া হয়।
২৩ তারিখ বাচা খান, রাব্বানী ও মেজর জাওয়াদ কে Kawgaon পাঠানো হয়। আমি লে. শহীদ এর সাথে ফুলবাড়ি যাই। ফুলবাড়ি থেকে আমরা দুই ওয়াগন অস্ত্র নিয়ে আসি। আমার একজন লোক লে আকবার এর হাতে নিহত হয়। সৈয়দ পুর আর্মি হেড কোয়ার্টার এর আদেশে বাচা খান ১৫ জন মুজাহিদ কে রাত ১০ টায় সেখানে পাঠান। তাদের কে পাঠানো হয়েছিল আরমি দের সাহায্য করার জন্য যারা রংপুর থেকে পার্বতীপুর যাওয়া রিলিফ ট্রিন গুলোকে পাহাড়া দিচ্ছিল এবং কিছু সংখ্যক ছিল খোলাহাটিতে যেখানে রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়েছিল ও শত্রুরা আক্রমন করছিল। শত্রুরা কিছুক্ষনের মধ্যেই পালিয়ে যায় ও সে রাতেই ব্রীজ ও রেল লাইন মেরামত করা হয়। মিলিটারি দের খাবার সরবরাহ করা হয় ও খোলাহাটি থেকে ট্রন এ করে তাদের পার্বতীপুর ফেরত পাঠানো হয়। ২৪ এপ্রিল খবর পাওয়া গেল মন্মথপুর রাইস মিল থেকে বাঙ্গালী রা চাল চুরি করছে। সৈয়দপুর থেকে আদেশ পেয়ে সেখানে লোক পাঠিএ সব বাঙালি দের তারীয়ে দেয়া হয় এবং ৩০০ মন চাল পার্বতীপুর নিয়ে আসা হয়। কর্নেল শাফি পার্বতীপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এতে তিনি ৫০০ লোক কে নিয়োগ দেন। আর্মিদের নির্দেশে চিড়িড় বন্দর থেকে ৬৭৫ মন চাল আনা হয় । সিভিল ফোরস কেও আর্মিদের অপারেশানে সাহায্য করার জন্য নিযুকত করা হয়। রাস্তাঘট ও রেল লাইনের উন্নয়ন , পার্বতীপুর সৈয়দ পুর রাস্তা নির্মাণ , চিড়িড় বন্দর থেকে ৩৫০ মন চাল, মম্নথপুর থেকে ২০০ টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে আসা হয়। আর দুইটী রাইফেল আর্মিদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
১ তারিখ সকাল বেলা আমরা পার্বতীপুর সৈয়দ পুর রাস্তার সংস্কার কাজে যাই এবং সারাদিন সেখানে থেকে কাজের অগ্রগতি দেখি।
মেজর যাওয়াদ এর নেত্রিত্তে আমি , আমার কিছু লোক ও বাচা খান কে নিয়ে চকোরি যাই চাল ও গম আনতে , কারন সেখানে শত্রুরা জিনিসপত্র লুট করছিল। আমরা গুদাম থেকে ৯৯৪ বস্তা চাল ও গম নিয়ে পার্বতীপুর ফেরত আসি।
পরের দুই দিন আমরা পার্বতীপুর – সৈয়দপুর রাস্তা সংস্কার এর কাজ দেখা ও রেফুজি দের দেখা শুনা করার কাজে ব্যাস্ত ছিলাম
৫.৫.৭১
আমি বাচা খান কে আমার কিছু লোক সহ চাওকাই পাঠাই, সেখানে গয়ে তারা শ্ত্রদের ধাওয়া করে ও ৩৬০ বস্তা গম ও ৪৮০ বস্তা চাল নিয়ে আসে। আমি আবার ও রাস্তা সংস্কার দেখার কাজে ব্যাস্ত হয়ে যাই।
৬.৫.৭১ এবং ৭.৫.৭১
আমি বাচা খান কে আমার কিছু লোক সহ চাওকাই পাঠাই, সেখানে থেকে তারা ৩৬০ বস্তা চাল ও ৭২০ বস্তা গম নিয়ে আসে।রাত ১১ টার দিকে শহরের পশ্চিম দিকে টর্চ লাইট হাতে কিছু লোক কে ঘুরাঘুরি করতে দেখা যায়। রুশেদ নামের আমাদের এক জন নিরাপত্তা কর্মী রাইফেল নিয়ে সেসব শত্রুদের ধাওয়া করে ও নিরাপত্তা আরো জোরদার করে।
৮.৫.৭১
পার্বতীপুর – সৈয়দপুর রাস্তা সংস্কার এর কাজে শহর থেকে আরো শ্রমিক এনে লোকবল বাড়ানো হয়। এখানে আরো ১০০ জন লোক নিয়োগ পায় যার ফলে কাজের দ্রুত অগ্রগতি হয়। বাচা খান কে আবারো কিছু লোক সহ চরকাই পাঠানো হয় , সন্ধ্যা বেলায় তারা ৭০০ বস্তা গম নিয়ে ফেরত আসে।
৯.৫.১৯৭১
পরদিন বাজার পরিদর্শনে যাই, যেসব দোকান পাট খুলে দেয়া হয়েছে সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য ঠিক আছে কিনা, শহরের আইন কানুন ব্যাবস্থা ও যেসব মুজাহির রা বাইরে থেকে এসেছে তাদের পুনর্বাসন ব্যবস্থাঠিক ঠাক হয়েছে কিনা সব দেখে আসি।
১১.৫.১৯৭১
আমার লোক দের বাচা খান সহ চরকাই খাদ্য গুদামে পাঠাই তারা সেখান থেকে ৮৪০ বস্তা গম নিয়ে ফেরত আসে।
.
.
পার্বতীপুরের হাবীব ব্যাংক এবং ইউনাইটেড ব্যাংকের ব্যালেন্স ঠিকঠাক ছিলো। পার্বতীপুরের ন্যাশনাল ব্যাংক ছিলো বন্ধ। ম্যানেজার এবং ক্যাশিয়ার ছিলো বাঙ্গালি এবং তারা পালিয়ে গিয়েছিলো।তাই এই ব্যাংকের ব্যালেন্স চেক করা সম্ভব হয়নি।
১৪টি রাইফেল এবং ৭০০ রাউন্ড গুলি দিয়ে চিরির বন্দর পুলিশ স্টেশন খুলতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।ইপি আরসিটি কোচ সার্ভিস এবং পিআই সার্ভিস কার্যক্রম শুরু হয়েছে।এছাড়া বিভিন্ন ট্রেন সার্ভিস ও চলাচলের ঘোষণা দিয়েছে।মেজন জেনারেল জাওয়াদের নির্দেশে সাইদপুর এয়ারপোর্টের জন্য ১৫জন রাজমিস্ত্রী যোগাড় করা হয়েছে। বাচ্চার সাথে চরকাইয়ে আমার লোক পাঠানো হয়েছে যারা ৮৪০ ব্যাগ গম নিয়ে আসেছে।রাস্তা তৈরির কাজ তত্ত্বাবধান করতে ও গিয়েছিলাম।
১৩.০৫.১৯৭১
পিবিটি- এসডিপি রাস্তা পরিদর্শন করতে গিয়ে সাইদপুরের কর্নের শফি এবং বিগ্রেডিয়ার এর সাথে দেখা হলো । রাস্তাগুলোকে ঠিকঠাক করার ব্যাপারে আলোচনা হলো।কর্নেল শফি রাস্তা পরিদর্শন করে কাজের প্রশংসা করলেন।আমাকে কাজের গতি দ্বিগুণ করতে বললেন যাতে আসছে বর্ষা মৌসুমের আগেই কাজ শেষ করা যায় । পার্বতীপুরে হেঁটে ফিরে এলাম।
১৪.০৫.১৯৭১
১০দিন আগে ২জন বিহারী ,একজন খাদ্য পরিদর্শক এবং অন্য একজন ব্যবসায়ীকে বাঙ্গালিরা খুন করেছে,যশোইহাটে আই খবর পেলাম।মেজর জাওয়াদের কাছে যশোইহাটে অপারেশনের নির্দেশ পেয়েছি। ১২.৪৫ এর দিকে বাচ্চা খান,মতিউর রহমান এবং আমার লোকজনসহ যশোইহাটের দিকে হেঁটে রওনা হয়েছি।প্রায় তিনটার দিকে মন্মুথপুরে দুইজন হিন্দুকে একটি গরুর গাড়ি পুর্ন করে চাল এবং ধান ভারতের দিকে নিয়ে যাওয়া অবস্থায় আটক করলাম।হিন্দু দুইজনকে হত্যা করে পাশেই একটা মুসলিম এলাকায় সেই ধান ও চাল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।বিকেল ৪.৪৫ এ নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে জায়গাটিকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললাম ।প্রায় ২৫০ বাঙ্গালিকে গ্রেপ্তার করা হয়,তাদের মধ্যে ৯জনকে রেখে বাকিদের সতর্ক করে ছেড়ে দিই। ২বোর শটগান ,একটি পাঁচ টাকার ভারতীয় নোট জব্দ করা হয়।পার্বতীপুরের মৌলাদের কাছে বন্দুক দুটি হস্তান্তর করা হয়েছে।এছাড়া এক বাঙ্গালির বাড়ি থেকে এক বিধবা বিহারীকে উদ্ধার করেছি। এই বাঙ্গালি সম্প্রতি তার স্বামীকে খুন করে ।আর ও একটি বাড়ি থেকে এক এতিম বিহারি মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।বিধবাটিকে শরনার্থী শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এতিম মেয়েটিকে আমার বাড়িতে রেখে দিয়েছি।মেজর জাওয়াদের কাছে অপারেশন থেকে ফিরে সকল খুঁটিনাটি বিষয় ফোনে জানিয়েছি।
১৫.০৫.১৯৭১
পিবিটি- এসডিপি রাস্তা পরিদর্শন করতে গিয়ে ৩টার সময় তথ্য পেলাম খোলাইহাটিতে রেললাইন ভাড়া এবং রেলের সম্পত্তি বিনষ্ট কারীদের ধরতে যাওয়া বাচ্চাখানকে শত্রুরা ঘিরে ফেলেছে। দ্রুত পার্বতীপুর ফ্রে সাইদপুরের আর্মি হেটকোয়ার্টারে যোগাযোগ করে তাজা গুলের নেতৃত্বে আমার ২৫জন জোয়ান এবং আর্মিসহ খোলাহাটির উদ্দেশ্যে রওনা দিই।প্রায় ৪টায় ওখানে পৌছায়।ততক্ষনে শত্রুরা দৌড়ানো শুরু করেছে।আমরা তাদের ঘিরে ফেলে অন্তত ২৫জনকে হত্যা করেছি। একটি ১২ বর শটগান এবং দুজন ইউনিফর্ম পরা শত্রুকে আটক করা হয়। রাত প্রায় ১০টায় আমরা পার্বতীপুরে ফিরে আসি।সাইদপুরে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।কর্নেল শফি বাচ্চাখানের উপরে রেগে আছেন অনুমতি ছাড়া খোলাইহাটি যাওয়ার জন্য।খোলাইহাটি থেকে আটক করা ২৭জন বন্দীর ভিতর ৩জনকে আঁটকে রেখে বাকিদের যথেষ্ট শাস্তি দিয়ে মেজর জাওয়াদের নির্দেশে ছেড়ে দেওয়া হয়।
১৬.০৫.১৯৭১
পিবিটি- এসডিপি রাস্তা পরিদর্শন শেষে মেজর জাওয়াদ পার্বতীপুর আসেন। তিনি গতকালকের খোলাইহাটির ঘটনা ,স্থানীয় প্রশাসন এবং পার্বতীপুরের অন্যান্য দুশ্চিন্তার বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন এবং আমাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। তিনি খোলাইহাটিতে অস্ত্রধারী শত্রুদের উপস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় আছেন ।তিনি চিরির বন্দর পুলিশ স্টেশনের ওসিকে দিনাজপুরে বদলির জন্য আমাকে নির্দেশনা দেন। খোলাইহাটির কয়েদিদের তার সাথে সাইদপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রেললাইন দিয়ে পার্বতীপুর দুইদিকে ভাগ করা ।গত ১৫ বছর একটা লেভেল ক্রসিংয়ের কাজ অগাহ্য হয়ে আসছে অন্যদের আপত্তিতে।আজকে আমাদের নিজস্ব চেষ্টায় এবং মিস্টার শেলটন ( সিগন্যাল ইনস্পেক্টর পি ই রেলওয়ে) এর ব্যক্তিগত চেষ্টায় দু সপ্তাহের ভিতরেই লেভেল ক্রসিংয়ের কাজ সম্পুর্ন হয়েছে।সন্ধ্যায় আমরা আলহাজ্ব মোহাম্মদকে দিয়ে এটি উদ্বোধন করাই । এবং শহরের লোকজনের তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে ডঃ বানো লেভেল ক্রসিং দিয়ে প্রথম যান চালিয়েছেন।
১৭.০৫.১৯৭১
পিবিটি- এসডিপি রাস্তা পরিদর্শন করতে গিয়ে পার্বতীপুরে নতুন জয়েন করা ইপিসিএফ এর নেয়ামতুল্লাহর সাথে সাক্ষাত হয় । দিনাজপুর ,সান্তাহার এবং এরকম অনেক জায়গা থেকে স্রোতের মতো আসা শরনার্থীদের ত্রান বিতরন এবং পুনর্বাসনের কাজ দেখছিলাম।তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ই ছিলো বিধবা এবং এতিম । শরনার্থীদের সংখ্যা ইতিমধ্যেই আশংকাজনক। ২০০০ এর মতো চলে আসছে এবং সৃষ্টিকর্তা জানেন আরো কতো আসতেছে। তাদের বেশিরভাগই একসাথে সবকিছু হারিয়ে খবই করুণ অবস্থায় আছে।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি আমাকে যেন সাহস এবং শক্তি দেন যাতে এই সমস্ত লোকের জন্য মানুষের পক্ষে সম্ভব ,এমন সবকিছু করতে পারি ।তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং পার্বতীপুরের অন্য সকল বড়ো সমস্যাগুলো যেন আমার নেতৃত্বে সমাধান করতে পারি।আমি আমাদের সেনাবাহিনীর সার্বিক সাফল্যের জন্যেও প্রার্থনা করি যাতে তারা জাতীয় বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের জন্য উদাহরণ হতে পারে ।
প্রতি,
তারিখ
বিষয়ঃ- মিঃ কামরুজ্জামানের প্রতিদিনের দিনলিপি কামরুজ্জামান- সাবেক এমপিএ ,চেয়ারম্যান,শহর কমিটি এবং প্রশাশন ,পার্বতীপুর।
১৭.০৫.১৯৭১
আল্লাহ্ এই শহর এবং নাগরিকদের রক্ষা করেছেন।খোদা না করুক এই শহর যদি শত্রুরা দখল করে নিত ,তাহলে শুধু ৫০ হাজার মোহাজির গনহত্যার শিকার হতো তাই নয়,সমগ্র উত্তর বঙ্গ নিয়ন্ত্রন করতে আমাদের আর্মি ভয়ঙ্কর অসুবিধায় পড়তো। আল্লাহ্কে ধন্যবাদ জানাই। শহরের সাহসী লোকজনকে ধন্যবাদ জানাই এবং আমাদের আর্মিকে,যাদের চেষ্টায় শত্রুরা পরাজিত হয়েছে।
.
.
শত্রুর হাত থেকে শহরকে বাঁচাতে জনাব বাচা খান,আলহাজ মোহাম্ম্দ, শোয়েব মোহাম্মদ, মতিয়ুর রহমান এবং মিস্টার ও মিসেস খুরশেদ বানু যে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন্,তার প্রশংসা করার উপযুক্ত ভাষা আমার জানা নাই।এই মানুষেরা তাদের নিজেদের শহর বাঁচাতে অসাধ্য সাধন করেছে। একজন নারী হয়েও ডাক্তার বানু যা করেছেন,তা একজন পুরুষ মানুষ ঐ অবস্থায় করতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তিনি যে সাহসিকতার সাথে টাউনটি রক্ষা করেছেন,,তার জন্য আমার পক্ষ থেকে এবং সমগ্র টাউনবাসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই কৃতজ্ঞতা প্রাকাশ করা হয়েছে।
আমি সর্বোসম্মততভাবে এই চার ব্যাক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদকের জন্য সুপারিশ করছি।
এস ডি/কামরুজ্জামান
টাউন প্রশাসক
পার্বতিপুর
(২)
পুর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে বিভাগের অবাঙ্গালী কর্মকর্তাদের দুটি চিঠি
হতেঃ আরশাডঃ মাহমুদ
কর্মকর্তা, স্পেশাল ডিউরি,
চট্টগ্রাম
সুপ্রিয়…….. তারিখঃ২৯।০৪।১৯৭১
গতকাল্কের আপনার সাহায্যের জন্য আমি আপনার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।আমি আশা করছি যে,এন্টি করাপশন ডিপার্টমেণ্ট থেকে কাগজপত্র পাওয়ামাত্রই আমি পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে রেওনা দিতে পারব।
আমাদের কথোপকথনে প্রায়শই স্টেটবিরোধী কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন মানুষের কথা উঠে এসেছে। গোপন বিষয় হলো,রেলও্য়ে বোর্ডের অনেকেই এমনকি আমি ও সিনিয়র অফিসাররেরাও জানে যে,ইঞ্জিনিয়ারিং রেলওয়ে বোর্ডের সদস্য জনাব আশফাক ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ইয়াসিনের হত্যার প্রতিবাদের সময় জনাব শফি,প্রধান পরিকল্পন অফিসার;নাসিরুদ্দিন আহমেদ,প্রধান কর্মি অফিসার;মাকবুল আহমেদ,বিভাগিয় সুপারিটেন্ডেন্ট;তাহুর খান,সিভিল ডিফেন্স অফিসার;সিরাজ হক, রেলওয়ে বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি;কাফিল আহমেদ,বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং আতাউর রহমান স্পষ্টভাবে অগ্নিস্নগযোগের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।এই কর্মকর্তারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আওমালীগকে আর্থিক সহায়তা সহ আওয়ামীলীগকে আরো শক্তিশালী করতে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছে।এর মধ্যে টেলিফোনসংযগ বিচ্ছিন্ন করা,বাঙ্গালি সেনাদের আগাম পাসপোর্টের ব্যাবস্থা করা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
সেনারা ইতোমধ্যে মিস্টার এবং মিসেস শাফি,প্রধান পরিকল্পনাকারী এবং আতাউর রহমানকে জাহাজে করে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এটা নিশচয়ই তাদের অন্যান্য একশনের মতই প্রাক পরিকল্পনা।যাইহোক, এখন এইসব অফিসারদের অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য পরযাপ্ত সময় নেয়া দরকার। স্টেশনের অন্যান্য কর্মকর্তারা অবশ্যই এই জঘন্য ঘটনার সাথে যুক্ত আছে।শুধু তাই নয়,তারা এখনো বিভিন্ন তথ্য,আলামত নষ্ট করায় ব্যাতিব্যাস্ত।কাজেই আমার মনে হয়েছে,বিষয়টি আপনাকে জানানো দরকার।মনে হচ্ছে,বাংলাদেশের মানুষের এই আন্দলনকে ত্বরান্বিত করতে গেলে নষ্ট করে ফেলা আলামত গুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা উচিত।এতে আন্দোলন আর বেগবান হবে।
যাবার আগে বলে যাই,আপনার তালিকায় দুজন অতি গুরুত্তপুর্ন ব্যাক্তির নাম না থাকায় অবাক হয়েছি।তারা হলেন,রেলওয়ে বিভাগের স্পেশাল ডিউটী অফিসার জনাব, এম এ করিম,যার প্রতি আমার পিয়নের বোনকে ওপেন ফায়ার করে মেরে ফেলার অভিযোগ রয়েছে,এবং আরেকজন জনাব আর এন বাগচি ;সিনিয়র কর্মি অফিসার যার বিরুদ্ধে অফিসারেরাই পার্টীশানের সময় ভারতপন্থি কর্মকান্ডের শাঠে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনে।
যেহেতু আমি একজন পাঞ্জাবী এং আমার চাকরিখানা বদলির,সুতরাং এইসব ঘটনা আমাকে উৎপীড়িত করেনা।।
শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত দুশ্চিন্তা থেকে এবং কোনো ঘটনা ঘটার আগেই,আপনি যেন সবকিছু ওয়াকিবহাল থাকেন এইজন্য এইসব তথ্য জানানো আমার কর্তব্য বলে মনে হয়েছে।
শ্রদ্ধাসমেত,
আপনার অনুগত
এস ডি
আরশাদ মাহমুদ
তারিখঃ ২৯ মে,১৯৭১
বরাবর,
মাননীয় রাষ্ট্রপতি, পাকিস্তান
ইসলামাবাদ
মাননীয় গভর্নর, পুর্ব পাকিস্তান
ডেক্কা
বিষয়ঃ আওয়ামিলীগ এবং কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের অবৈধ কার্যকলাপ প্রসঙ্গে
জনাব,
যথাবিহিত স্মমানপুর্বক নিবেদন এই যে,নিম্নক্ত বিষয়ে আপনার সদয় দৃষ্টি প্রার্থনা করছি।
’৭১ সালের তেসরা মার্চ চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগ কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলোন চলা কালে রেলওয়ের অবাঙ্গলী কর্মি ও স্থানীয় পুলিশের সাথে আওয়ামিলীগের নেতাকর্মি,ই আর পি, এবং বাঙ্গালি কর্মকর্তদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয় ঘটনাক্রমে,সেওসব অবাঙ্গালী ও পাকিস্তান কতৃক নির্বাচিত ব্যাক্তিদের অনেকেই নিহত হন।কেউ কেউ আহত হন ও তাদের বাড়ীঘর জালিয়ে দেয়া হয়।এর দরুন নন রেলওয়ে কলোনি মুজাহির কলোনিও আক্রান্ত হয়।অবশেষে পাঞ্জাব রেজিমেন্টদের গুলি চালানো ছাড়া আর উপায় ছিলোনা।তখন পুলিশ এবং ই পি আর দের তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করারা ছিলনা।আহত কয়েকজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরন করেন।এদের মধ্যে কাউকে বিষ প্রয়োগেও হত্যা করা হয়েছে।আসলে ৩/৩/’৭১ থেকেই এইসব ষড়যন্ত্রের সুত্রপাত,যেদিন ভারতীয় আর্মিদের যোগসাজশে এবং পাঞ্জাবি-মুহাজিরি-বিহারিবিরোধিদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে, বাঙ্গালি সরকার,ই আর পি,ই বি আর,পুলিশ,রেলওয়ে এক সাথে আতাত করে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ করার পরিকল্পনায় পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে লাল দীঘি ময়দানে ট্রেনিং নেয়া শুরু করে। এমনকি সেদিনের এই ঘটনায় মাওলানা ভাসানীও মানসিক আঘাত পান এবং তৎক্ষণাৎ চট্টগ্রামের পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন।সাথে সাথেই তিনি শেখ মুজিবকে জরুরি টেলিগ্রাম করেন এবং তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।আপনার সেনা পাঠাতে বড় দেরি হয়ে যায়,ততক্ষনে বহু মুহাজিরি,পাঞ্জাবি,পাঠানসহ বহু নীরিহ নারি,পুরুশ,শিশুদের বলির পাঠার মত হত্যা করা হয়,গুলি চালানো হয় এবং লুটপাটও চালানো হয়।এদের মধ্যে কাউকে কাউকে ধরে নিয়ে যায় তারা।একি মাসের ২৬ তারিখ জুমার নামাজের সময় চট্টগ্রামের বিবিরহাট মসজিদ ও ওয়ালিখান মসজিদেও হামলা চালানো হয়।এতে বেশ কয়জন অবাঙ্গালী মারা যান।এই সব ই সম্ভব হয়েছে আপনার অকঠোর অবস্থানের কারনে এবং আওয়ামিলীগেরা এই দুর্বলতার সুযোগ নিতে ভোলেনি।আপনি অবশ্যই আপনার এহেন দায়িত্তজ্ঞানহীন কর্মকান্ডের জন্য ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহি থাকবেন।কয়েকলক্ষ মানুষ তাদের একমাত্র উপার্জনকারিকে হারিয়ে শোকের মাতম করছে এবং ঈশ্বর কখনও আপণাকে ক্ষমা করবেনা।
এইবারে কেন স্বাধীনতাকামী আওয়ামীলীগেরা এই ধধংস লীলা চালালো,যার বলি হলো নীরিহ কিছু মানুষ সে বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।,প্রকৃতপক্ষে সেইসব অবাঙ্গালিরা আও্য়ামিলীগের এই অসহযোগ ও আইন বহির্ভুত সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি।আও্যামিলীগেরা চায় যে, ৩/৩/’৭১ হতে ২৫/৩/’৭১ পর্যন্ত যেখানে যেখানে তাদের কর্মি,ইপিয়ার,ইবিয়ার বাহীনিরা আটক আছে,প্রত্যেককে যেন মুক্তিপ্রদান করা হয়। এবং কিছু ননবেঙ্গলি অফিসার মরহুম আশফাক,(প্রাধান ইঞ্জিনিয়ার) এবং জনাব ইয়াসিন(প্রাধান ইঞ্জিনিয়ার) তাদের এই বক্তব্যে সাড়া দেয়নি।শুধু তাই নয়,চট্টগ্রাম,পাহারতলি,আখাঊড়া জাংশাণ,ভৈরব বাজার জাংশান,সান্তাহার জাংশান,ময়মনসিংহ,বোনাপারা,পাকশি,লাকশাম, এবং আরো অনেক রেলওয়ে স্টেশন তাদের দখলে চলে গেছে।নিগৃহিতদের পুত্র,কন্যাদের ও রেহাই দেয়া হয়নি। বিভিন্ন শহরে,হাসপাতালে অবাংগালিদের ধরে ধরে আনা হয়েছে আহত মুক্তিবাহিনিদের রক্ত প্রদান করার জন্য।এমনকি, ইপিআরের অবাঙ্গালী অফিসারেরা,এবং পুলিশ অফিসারেরা নিজ নিজ সহকর্মি কর্তক হৃত হয়। মিল এরিয়াতেও অবাঙ্গালীরা এই ভাবে মারা যাচ্ছে,সম্পত্তি লুট হচ্ছে।
.
.
১।হিন্দুদের বিদ্বেষ ও ভারতীয় দের অপপ্রচার থেকে তৈরি হওয়া ঘৃণা স্বাধীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষাকে আরো বেশি জাগিয়ে তুলেছিল। বাংলা ভাষা এক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে ।
২. অ-বাঙ্গালীরা পূর্ব পাকিস্তানে প্রো-পাকিস্তানী হিসেবে বিবেচিত হত এবং তাদের কে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বাধা মনে করা হত। মৌলভি দের দ্বারা তাদের উপর ‘ফতোয়া’ জারি করা হল যাতে তাদের মেরে ফেলা হয় কারন তারা দেশের শত্রু।
৩। অ-বাঙ্গালীরা বাঙ্গালীদের কাছে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে বিবেচিত হত।
৪. আওয়ামীলীগ ধারনা করে যে এই অপারেশান এ অবাঙ্গালীরা পাকিস্তানী মিলিটারি দের সাহায্য করবে, সুতরাং এরদের বিনাশের মাধ্যমেই মিলিটারিদের দুর্বল করে ফেলা সম্ভব।
- ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের খারাপ পরিস্থিতির সম্মুক্ষিন না হতে হয় এই কারনে নিম্নোক্ত ব্যাবস্থা সমূহ গ্রহন করা হয়-
১. পাকিস্তানের শুধুমাত্র একটি রাষ্ট্র ভাষা থাকবে, যেমন- উর্দু । ভারতে যেমন অনেক কথা বলা ও লেখার সময় অনেক ভাষা ব্যাবহার করা হলেও তাদের রাষ্ট্র ভাষা হিন্দি। অন্যান্য ভাষা যেমন বাংলা সিন্ধি পশতু এগুলো সব আঞ্চলিক ভাষা। এটি কায়েদে আজম এর ও সিদ্ধান্ত ছিল কারন একটি ভাষা একটি একটি জাতির পরিচয় বহন করে।
২. সকল সরকারী কর্মচারী , রেইলোয়ে পুলিশ, ই পি আর, ই বি আর, রেডিও যারা যারা আওয়ামীলীগের পক্ষে ছিল তাদের শাস্তি পেতে হবে।
৩ সকল রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা ই পি আর ও ইবি আর দের জন্য স্পেশাল ট্রেইন চালাচ্ছিল এবং সেচ্ছাসেবী ও ইন্ডিয়ান আর্মি এদের শাস্তি আরো বেশি হবে। এসব স্পেশাল ট্ট্রেন পাকিস্তানী মিলিটারি দের অপারেশান এর সময় ও বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়। এটি খুব আশ্চর্যের ব্যাপার যে রেলওয়ে সড়কপথ ও জপথের এসব দোষী সচিব ও অফিসারেরা ২১ জুলাই ১৯৭১ এর পরেও তাদের দায়িত্তে বহাল ছিল। এসব অপরাধী দের ধরার জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত ছিল এবং সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী দের সাক্ষ্য রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া উচিত ছিল। অপরাধী রেলওয়ে অফিসারেরা তখন ও কর্মরত ছিল এবং তারা তাদের দায়িত্ব পালন না করে বরং নানা রকম বাঁধার সৃষ্টি করছিল । R.W এবং R.T এর সচিব , চেয়ারম্যান ও রেল ওয়ে বোর্ড ও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নিচ্ছিলনা।
৪ একইভাবে EPR, EBR ও পুলিশ কর্মচারীরা যারা সাধারন মানুষকে হত্যা করেছিল , আর্মি দের উপর গুলি চালিয়েছিল ,লুটপাট করেছিল ও মিলিটারি অপারেশান এর সময় তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছিল তাদের ও শাস্তি হওয়া উচিত। একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা উচিত ছিল। এটি ভয়াবহ যে অপরধী পুলিশ রা তখন ও তাদের পদে বহাল ছিল।
৫ জেলা শহরের সরবচ্চ পদে বহাল কর্মকর্তারা , যারা আওয়ামীলীগের পক্ষে ছিল, তাদের ও শাস্তি হতে হবে। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে।
৬- শেখ মুজিব সহ আওয়ামীলীগ এর অন্যান্য কর্মী যারা ইন্ডিয়ার সাথে ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল তাদের ও কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। তারা বিশ্বাসঘাতক এবং অনেক নিরীহ সাধারন বাঙ্গালীকে হত্যা করেছিল।
৭। সকল ছাত্র নেতা যারা এই অপরধের সাথে জড়িত ছিল, সাধারন মানুষ দের মেরেছিল, জাতীয় পতাকা ও কায়েদে আজমের ছবি পুড়িয়েছিল তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হতে হবে।
৮ রেডিও পাকিস্তান , ঢাকা ও চিটাগং এর সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা জয় বাংলা গানটি গেয়েছিল তাদের শাস্তি হতে হবে অথবা চাকরীচ্যুত হতে হবে
- মিলিটারী, আর্মড পুলিশ ও রেইল ওয়ে পুলিশ পদে কোনো বাঙ্গালী কে নিযুক্ত করা যাবে না, তা না হলে ভবিষ্যতে আবার ষড়যন্ত্র দানা বেঁধে উঠবে।
১০ সব ক্লাস ওয়ান অফিসার ও ডি সি র্যাঙ্ক থেকে শুরু করে তার ঊরধের সব পুলিশ অফিসার কে পশ্চিম পাকিস্তান বদলী করতে হবে।
১১. প্রধান সেক্রেটারী ও সেক্রেটারী রা যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল তাদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে অনতিবিলম্বে পশ্চিম পাকিস্তানে বদলী করতে হবে।
১২- ইন্টেলিজ্যান্স ব্রাঞ্চের যেসব অফিসার এই ষড়যন্ত্রের কথা গোপন করে আওয়ামীলীগ কে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছিল , ইন্ডিয়ান অস্ত্র ও মিলিটারীদের কথা গোপন রেখেছিল তাদের ও উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।
- যেসব আওয়ামীলীগ সদস্য কসাই এর মত নির্বিচারে নিরপরাধ মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশু দের হত্যা করে তাদের শাস্তি পেতে হবে। তারা অনেক নারি কে বন্দি করে রেখেছে ও ধর্ষণ করেছে। তারা অনেক টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার ও লুট পাট করে।
১৪ শহর ও গ্রামের প্রতিটি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে দেখতে হবে কোনো অবৈধ অস্ত্র, বন্দী নারী ,লুটের মাল বা কোন অপরাধী লুকিয়ে আছে কিনা। দেশ প্রেমিক নাগরিক দের সহায়তায় ই এই তল্লাশি চালানো সম্ভব।
- কয়েকশ কোটি পাকিস্তানী মুদ্রা বর্ডার দিয়ে পাচার হয়ে যায় এবং বিলুপ্ত প্রায় আওয়ামীলীগ এর অনেক আন্দোলন পরিচালনায় এই অর্থ ব্যাবহার করা হয়।যেসব মুদ্রা পাচার হয়েছিল তা মারওয়ারিদের সহযোগীতায় ইন্ডিয়ান মুদ্রায় রূপান্তর করে নেয়া হয় (১০০পাকিস্তানী মুদ্রার জন্য ৫০ ইন্ডিয়ান মুদ্রা)। এসব এর সহযোগীতায় তারা পাট পাচার করতে চাচ্ছিল যার ফলে পাকিস্তান বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হত। তাদের এই ষড়যন্ত্র বানচাল করার মোক্ষম উপায় ছিল এইসব পুরান নোট বাতিল করে দিয়ে নতুন ডিজাইনের নতুন নোট ছাপানো। যার ফলে পুরানো নোট গুলোর আর কোনো উপযোগীতা থাকবেনা। কেননা আওয়ামীলীগ এর কর্মী দের এই নোট স্টেট ব্যাঙ্কে গিয়ে বিনিময় করার মত সাহস থাকবেনা। তিন মাসের মধ্যেই তা বাস্তাবায়ন করতে হবে তা না হলে পাকিস্তান পাট রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন থেকে বঞ্চিত হবে।
১৬ স্কুল কলেজ গুলোতে যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে এবং পাকিস্তানের ভাবাদর্শ যথাযথ ভাবে তুলে ধরতে হবে। যেকোনো রকমের ষড়যন্তের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে- পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান দুই জায়গাতেই। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান এর জন্য একটি সাধারন ভাষা থাকতে হবে।
১৭. রেলপথ, সড়কপথ ও পানি পথ সব রকম যোগাযোগ মাদ্ধম কেই সরাসরি প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে যুক্ত করতে হবে।
১৮ মুহাজির ও পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যাবসায়ি দের অস্ত্রের জন্য বিনামূল্যে লাইসেন্স দিতে হবে নাহলে তারা পশ্চিম পাকিস্তান ত্যাগ করবে যার ফলে এখানের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড হ্রাস পাবে।
১৯। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বাণিজ্যিক সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী গঠন করতে হবে। যার দায়িত্ব হবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের রক্ষনাবেক্ষন করা । তবে শুধু মাত্র অ-বাঙ্গালী ও পশ্চিম পাকিস্তানী দের কেই এক্ষেত্রে নিয়োগ দেয়া হবে। এর খরচ শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোকেই বহন করতে হবে। এটি প্রয়োগ করা না হলে মুহাজির ও প্সহচিম পাকিস্তানীদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা ই থাকবেনা।(চট্টগ্রাম, চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি জেলার হাউজিং সোসাইটি, কুমিরা,কালুরঘাট মিল এলাকা ও বায়েজিদ বোস্তামি, বিবিরহাট এলায় বিপুল সংখ্যক মুহাজির, পাঞ্জাবি, পাঠান ,মেমম ও আগাখানি দের হত্যার ঘটনার ভিত্তিতে). এই খরচ বহন করতে পূর্ব পাকিস্তানীদের বেতন থেকেও একটি নির্দিষ্ট অংশ কেটে নিতে হবে।তা না হলে বন্ধ ইন্ডাস্ট্রি গুলো খোলা হবেনা যার ফলে, পাকিস্তান রপ্তানী বাণিজ্যে তার বাজার হারাবে এবং ইন্ডিয়া ক্রমশ তা দখল করে নিবে ও নিজেদের স্থায়ি আসন গেড়ে নিবে।
২০- EPWAPDA ও WASAর কর্মী রাও এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল। ২৬ তারিখ পর্যন্ত চট্টগ্রামে পানি ও বিদ্যুৎ এর সরবরাহ ছিল। পাকিস্তানী মিলিটারি দের অপারেশান শুরু হবার ঠিক আগে আগে সব বন্ধ হয়ে যায়। এসব ডিপার্টমেন্ট কেন্দ্রিয় সরকারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পানির অভাবে ক্যান্টরমেনটে পাকিস্তানী মিলিটারি দের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে ৩/৪ দিন ধরে। পরে চট্টগ্রাম এর মুহাজির কলোনিতে তারা পানি খাবার এবং অপারেশান পরিচালনা করার মত সব পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পায়। মিহাজির দের এসব অবদানের কথা অস্বীকার করোনা তাহলে আল্লাহ ও তোমাদের ক্ষমা করবেন না।
মুসলীম লীগ ও পি ডি পী নেতারা কেন এই সময় নিষ্ক্রিয় ছিল? কেন তাদের নিজের দেশের পতাকা উত্তোলন করার মত সাহস ছিলনা যেখানে মুজাহির রা মিরপুর কলোনিতে পাকিস্তানী পতাকা উত্তোলন করেছিল। নুরূল আমীন কেন কনফারেন্সে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানালেন ।
২১ টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই সময় জঘন্য ভূমিকা রেখেছিল। তারা আওয়ামীলীগ সদস্যদের যোগাযোগ ব্যাবস্থা চালু রেখেছিল যেখানে মুজাহির কলোনী ও সাধারন শান্তিপ্রিয় নাগরিক দের যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন ছিল। আওয়ামীলীগ নেতা দের এভাবে সাহায্য করার কারনে তাদের শাস্তি পেতে হবে।
২২- বিপুল সংখ্যক আওয়ামীলীগ ও হিন্দু নেতারা ইন্ডিয়া পাড়ি জমান ।তেমনি ভাবে অনেক মুহাজির পরিবার ও সম্পূরন রূপে ঊধাও হয়ে যান। তাদের অনেক স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি স্থানীয় মানুষ দখল করে নেয় । অনেক স্থানীয় ও ধূর্ত মুসলীম নেতারা ভুয়া বিক্রয় দলিল তৈরি করে সব দখল করে নেয়। এসব সম্পত্তির জরিপ, পরিচালনা , ভূয়া দখল দারিত্ত থেকে এসব রক্ষা করা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গূলোর পুনর্বাসন ব্যাবস্থা করা খুব দরকার ছিল। এসব সম্পত্তি নিলামে তুলে তা থেকে প্রাপ্ত অর্থের সাহায্যে গরীব অসহ্যা এতিম ও বিধবা বা খতিগ্রস্থ পরিবার গূলোর দেখা শুনার ব্যাবস্থা করা খুব জরূরী ছিল।
২৩- বিভিন্ন বিদেশি এজেন্ট, সি আই এ ও সন্দেহজনক লোকজন ও তাদের কাজকর্ম কে কঠোর নজরদারী তে রাখার জন্য সরকার বা রাষ্ট্রপতির অধীনে ইন্টেলিজ্যান্স ব্রাঞ্চ গঠন করতে হবে। যাতে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের শত্রু দের যেকোনো রকম ষড়যন্তের যথাযথ প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। এসব সমস্যার বীজ কে অঙ্কুরেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে যাতে তা আগের বারের মত প্রকট আকার ধারন করতে না পারে ও জানমালের ক্ষতি সাধন করতে না পারে । আমাদের স্বাধীনতা কে আমরা কোনো ভাবেই ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না।
২৪- ছাত্র দের কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়া নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের কাজকর্ম শুধু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সব রাজনৈতিক কার্যকলাপ কে কঠোর নজরদারী তে রাখতে হবে।
আল্লাহ আপনাকে পাকিস্তানের সব আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক শত্রুদের মোকাবেলা করার মত শক্তি দিক। ভুল রাজনৈতিক নীতি ও দেরিতে পদক্ষেপ গ্রহন করার কারনে যেসব পাকিস্তানীদের জীবন দিতে হয়েছে – তাদের জন্য আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিক। আমি পাকিস্তানের একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে আমার মতামত দিলাম। আমি পাকিস্তানের স্বাধীনতা পূরব বর্তি বিভিন্ন আন্ডলন এর সাথে জড়িত ছিলাম। আপনি যদি এসব পরামর্শ গ্রহন করেন তবে আল্লাহ আপনাকে সাহায্য ও পাকিস্তানের সৎ নাগরীকেরা আপনাকে সাহায্য করবে। কিন্তু আপনি যদি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন না করেন তবে মনে রাখবেন ভবিষ্যতেও আপনি পশ্চিম পাকিস্তানে এসব সমস্যার মুখোমুখি হবেন, শুধু পশ্চিম নয় পূর্ব পাকিস্তানেও এরূপ সমস্যা দেখা দিবে। মনে রাখবেন পাকিস্তানের শত্রুরা অনেক ধূর্ত ও সংবদ্ধ। আওয়ামীলীগ এর নেতারা সহজ সরল এসব পাকিস্তানী জনগন কে তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে উলটাপালটা বুঝাচ্ছে ও তাদের মনে বিদ্বেষ সৃষ্টি করছে। এসব শ্ত্রুরা, ভারত, আমেরিকা ও ইংল্যান্ড এর থেকে সাহায্য পাচ্ছে যাতে তারা পাকিস্তান কে ধ্বংস করে দিতে পারে।
.
.
আমি তাই আপনাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি সাধারন জনগণের পরামর্শ বিবেচনা করুন অ সেই মোতাবেক কাজ করুন, নচেৎ পাকিস্তান, ইসলামের স্তম্ভ ও নিরপরাধ মুসলিমদের জীবন না বাঁচানোর দায়ে আপনি আল্লাহর কাছে অভিযুক্ত হবেন।
শত্রুদের দুর্বল মনে করবেন না। তারা আবার মাথা চাঁড়া দিতে পারে। সকল ফ্রন্টে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের শত্রুরা সম্পূর্ণরূপে পরাজিত ও ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্রের কথা বলবেন না। ভুট্টো সাহেবের সাম্প্রতিক সময়ে বলা খমতা হস্তান্তরের কথা বিশ্বাসঘাতক আওয়ামী লীগকে উস্কে দিয়েছে এবং তারা এখন যারা মিলিটারিদের সহযোগিতা করছে তাদের শাস্তির ভয় দেখাচ্ছে, কেননা তারা নাকি যে কোনও উপায়ে ক্ষমতায় আসবেই। এটাই তাদের রক্ষা করেছে, আর এখন তারা “মেষশাবকের ছদ্মবেশে নেকড়ে” কৌশল অবলম্বন করছে।ক্ষমতা হস্তান্তরের আলোচনা শুরুর আগে ভুট্টো সাহেব অন্তত সাত দিন পূর্ব পাকিস্তানের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে সপরিবারে বাস করে আসুক, পুলিশ বা মিলিটারি পাহারা ছাড়াই, তারপর ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলুক। বাইরের চাইতে আভ্যন্তরীণ শত্রুরাই বেশি বিপজ্জনক, আর তাদেরকে ধ্বংস করাই বেশি কঠিন।
ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার সাফল্য কামনা করি।
আপনার বাধ্যগত
স্বাঃ / বাইরের অবাঙালি অফিসার ও
P.E. স্টাফ রেলওয়ে , চট্টগ্রাম।
মেজর এম আফজাল খান সাকিব টেলিফোন ৮৩৬৪৪
বাংলো ১৪৩-ই
ইউনিট-৬, লতিফাবাদ
হাইদ্রাবাদ
তারিখ ২১ অগাস্ট ৭১
প্রিয় ইকরাম,
.
.
আপনি তার সাথে কথা বলতে পারেন যখন ই তার সাথে আপনার দেখা হবে। তিনি একজন ভাল সহকর্মী এবং নিশ্চয় তিনি আপনার ভ্রমনে সহায়তা করবে।
আজকাল আমি গভীরভাবে জমির উপর মনোযোগ করছি যেন অন্য কেউ যেন আব্দুল্লাহকে সন্মর করতে না হয়। এটা আগষ্টের শেষ এবং আবার বেত ফসল এখনও দাঁড়িয়ে আছে। কী ভাগ্য! আমি চিনি তৈরীর মেশিন এবং পেষনকারী যন্ত্র ধার করেছি এবং বর্তমানে ধানি চিনি তৈরি করছি । বাংলার বাঘিনীদের রশিদের নিয়ন্ত্রনে আনার খবরে আমি বিস্মিত ছিলাম না। এটি অবশ্যই তাদের পরবর্তী প্রজন্মের পরিবর্তন ঘটাবে। আমার করাচির দুশ্চরিত্রা দেখার সুযোগ হয় নি এবং আমি এটা আশাও করি না। ছোটজন ডাঃ খালিদের সাথে আবারও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তিনি তার ভাইয়ের লাহোর যাওয়ার অপেক্ষা করছে। আমার এবং খালেদের মাঝে বন্ধুত্ব হয়েছে। তিনি এখানে এসেছিলেন ক্ষমা চাইতে। তিনি বলেছিলেন সেদিন তিনি অসুস্থ ছিলেন। ওয়ালি রাওয়ালকোটে স্থানান্তরিত হয়েছে। কি সুন্দর জায়গা!
ফজল একটি কার্গো জাহাজ ক্রয় করেছে যা চট্টগ্রাম রয়েছে এবং তিনি এটি চট্টগ্রাম ত্যাগ করার আশা করছেন যদি না এটি প্রস্ফুটিত হয়।তার সিনেমা প্রজেক্ট এখন সঠিক রাস্তায় যাচ্ছে। গত রাতে তিনি আমার সাথে ছিলেন এবং আপনার কথা মনে করছিলেন।তিনি একজন দারুন মানুষ।
দয়া করে মর্মাহত হবেন না। স্রষ্টা অবশ্যই ভাল প্ররিস্থিতি সৃষ্টি করবেন। আমি E.P ভ্রমন করার পরিকল্পনা ছেড়ে দেই নি। এটি শুধুমাত্র আমার ব্যাস্ততার কারনে। আপনি হয়তো আমাকে এবং ফজল কে যেকোন সেখানে পাবেন। আপনি সেখানে কিছু বন্য কুকুর পালন করতে পারেন। আপনি কি প্রতিদিন আপনার চেয়ার, টেবিল, ড্রয়ার পরিদর্শন করেন? আপনি আপনার চাকরদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত । তারা যেকোন সময় সেখানে থাকতে পারে। আপনি অবশ্যই হোটেলে খাওয়ার পূর্বে আপনার খাবার বিড়াল দিয়ে নিরুদ্ধ করাবেন । আপনার অবশ্যই সন্দেহজনক হওয়া উচিত । আমি আপনাকে বিরত করছি না । এটি একটি অনুস্মারক মাত্র।
ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা চাচীর জন্য । চান্দ এবং অন্যান্যদের পক্ষ থেকে সালাম । রাশিদ কে আমার কাছে লিখতে বলবেন।
আপনার আদরের
মেজর মোহাম্মদ আকরাম খা সাকিব
O.C.200 SURVEY SEE,JESSORE(East Pak)
(4)
( লাহোরে অধ্যায়ন্রত জনৈক বাঙ্গালী ছাত্রের প্রাননাশের হুমকিসহ একটি চিঠি )
Nwe Hostel
Goverment College
Lahore
তারিখঃ-১৩/১১/৭১
প্রিয় আওয়াল,
পত্রটি আপনাকে একটি ধাক্কা দিবে। আপনার পুত্র ইফতেখারুল আওয়াল আমাদের সাথে ৩বছর ধরে পড়ালেখা করছে। এখানে থাকার সময় সর্বত্র তার অদ্ভুতস্বভাব এবং কুড়কুড় শব্দ করতে দেখেছি।
.
.
যখন সে পড়ালেখা করছিল তখন সে আমাদের সাথে বেশি কথা বলত , যা কোন মানুষ সহ্য করবে না। সে জাতির পিতাকে অসন্মান করতেও দ্বিধা করতো না। সে মাঝে মাঝে মুজিব কে তার পিতা বলতো । আমরা জানি না তার কয়তি পিতা। সে ছিল পাকিস্তান বিরোধী, মুজিব এবং আওয়ামিলীগের ৬দফা নিয়ে গল্প করতো। আমরা শুরু থেকেই এগুলো শুনতাম। যখন মুজিব আওটক হয় এবং আওয়ামিলীগ কে ব্যান করা হয় । তিনি এবং সেই সাথে ডা ওয়াস্তি মনে করতেন -জিসি লাহোরের ইতিহাস বিভাগের প্রধান । প্রাক্তন জুরি মেম্বারদের অপহরন করা হয়েছিল।
আমরা বুঝতে পারছি ,আপনি আপনার সন্তানকে পাঠাচ্ছেন । সতর্ক থাকবেন , এওতি আপনার সন্তাঙ্কে শেষ দেখা। সে আমাদের দৃষ্টি থেকে বাহিরে যাবে না। আপনি এবং আপনার পরিবার ভারতীয় । সতর্ক থাকবেন নতুবা বিস্মিত হবেন।
আপনাদের পাকিস্তানি
আসফাক আলি খান
ইউসুফ আহমেদ
শাহিদ রাফি
________
জনাব এ কে এম আওয়াল
১৯ সিদ্দিক বাজার
পূর্ব পাকিস্তান
.