শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলা বর্ণমালা ও বানান সংস্কার প্রসংগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বক্তব্য | দৈনিক পাকিস্তান | ১৩ আগষ্ট, ১৯৬৮ |
বাংলা বর্ণমালা ও বানান সংস্কার প্রসঙ্গ–
বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্যঃ
বাংলা বর্ণমালা সংস্কার সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যাল্যের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয় যে, বাংলা বানানের ক্ষেত্রে যে ক্রমবর্ধমান বিশৃংখলা দেখা দিচ্ছে তার অবসান এবং উচ্চশিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের ব্যাখ্যা হিসেবে বাংলার উন্নয়নকে সুগম করার জন্যে এই সংস্কার অনুমোদন করা হয়েছে। বানান-বিশৃংখলা অব্যাহতভাবে এগিয়ে গেলে তা ভাষাকেও দুর্বল করে ফেলবে। বাংলা ভাষার উন্নয়নকে ব্যাহত করা এই সংস্কারের উদ্দেশ্য বলে কোন ইঙ্গিত প্রদান করা হলে একাডেমিক কাউন্সিলের মহৎ উদ্দেশ্য ভুল করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ নিজেই এই কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। অসুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কমিটির সব বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির রিপোর্টে যেসব সুপারিশ স্থান লাভ করেছে সেসব সুপারিশ গ্রহণের ব্যাপারে কমিটির বৈঠক সমূহে তিনি জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার দরুন রিপোর্টে ডঃ শহীদুল্লাহ স্বাক্ষর দিতে পারেন নি, এই সত্যকে বিকৃত করা চলে না। কর্তৃপক্ষ জানান যে, অনুমোদিত সংস্কারের বিস্তারিত প্রয়োগের ব্যাপারটি ঠিক করার উদ্দেশ্যে নয় সদস্যবিশিষ্ট আর একটি কমিটি গঠনের ব্যাপারেও একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের উক্ত বৈঠকে ৫০ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র দুজন অনুমোদনের বিরোধিতা করেন। কমিটির তিনজন সদস্যের বিরোধিতামূলক বক্তব্যসহ রিপোর্টটি একডেমিক কাউন্সিলের ৩রা আগষ্টের বৈঠকের আগেই সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল-এর গত বৈঠক ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির রিপোর্ট রদবদলের রায় গ্রহন করেন। বাংলা ভাষায় বানান, ব্যাকরণ ও বর্ণমালা সংস্কারও সহজকরনের উদ্দেশ্যে ১৯৬৭ সালের ২৮শে মার্চ এই কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য ছিলো শিক্ষার সর্বস্তরে যতশীঘ্র সম্ভব বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহন, অফিস আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার এবং শিক্ষা বিস্তারে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের জন্য প্রস্তুতির গতিকে দ্রুততর করা। কমিটি গঠনের ব্যাপারে ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ নিজেই প্রস্তাব দেন এবং একাডেমিক কাউন্সিল কমিটির চেয়ারম্যান ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ ছাড়া আরও ১০ জন সদস্য নিয়ে কমিটি গঠন করেন।
কমিটির এই সদস্যরা হলেন, (১) বাংলা একাডেমীর ডিরেক্টর ডঃ কাজী দীন মোহাম্মদ, (২) প্রাদেশিক জনশিক্ষা বিভাগের পরিচালক জনাব ফিরদৌস খান, (৩) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ জনাব আবদুল হাই, (৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যক্ষ জনাব সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, (৫) ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ মোহাম্মদ ওসমান গনি, (৬) বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ জনাব আবুল কাশেম, (৭) অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খাঁ, (৮) ডঃ এনামূল হক, (৯) জনাব মুনীর চৌধুরী (১০) চৌমুহনী কলেজের অধ্যক্ষ জনাব টি. হোসেন।
১৯৬৭ সালের ২৮শে মার্চ অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের এই বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে কমিটিকে বলা হয় যে, কমিটি তাদের মত প্রণয়নের সময় বাংলা একাডেমী ও অনুরূপ সংস্থাসমূহ এক্ষেত্রে যে কাজ করেছেন তাকে বিবেচনা করার জন্য বলা হয়। গত ডিসেম্বরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ কমিটির বৈঠকসমুহে সভাপতিত্ব করেন।
এ বছরের ২২শে মার্চ রেজিস্টার তিনজন সদস্যের বিরোধী মন্তব্যসহ কমিটির রিপোর্টটি পান।
বিরোধী সদস্যত্রয় হলেন, জনাম এম, আবদুল হাই, জনাব মুনীর চৌধুরী, ডঃ এনামুল হক। ৪ঠা মে রিপোর্টটি একাডেমিক কাউন্সিলে পেশ করা হয়। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে রিপোর্ট এবং বিরোধী বক্তব্যের কপি সব সদস্যকে সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অতঃপর ৩রা আগষ্ট একাডেমিক কাউন্সিল কিছু সংশোধন ও রদবদলের পর নীতিগতভাবে রিপোর্টটি গ্রহন করেন। এর বিস্তারিত প্রয়োগের ব্যাপারটি ঠিক করার জন্য অপর একটি কমিটি নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ফ্যাকাল্টি অব আর্টস এবং ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের ডীন পূর্ব পাকিস্তানের ডি,পি,আই, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ জনাব ওসমান গনি, অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খা, জনাব নুরুল মোমেন এবং ডঃ কাজী দীন মোহাম্মদ এই কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন।
কাউন্সিল কমিটির রিপোর্টটি যেভাবে গ্রহন করেছেন তাতে বাংলা ভাষার উপর আক্রমনের কোন প্রশ্নই ওঠে না।
বানানের সুবিধার জন্য শুধু কয়েকটি অক্ষর বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অক্ষরগুলো হলো ঙ, ণ, ৎ, ষ, ঈ, ঐ, ঔ। এগুলো বাদ দিলে কোমলমতি বালক-বালিকাদের পাঠ গ্রহনে যে বিরাট সুবিধা লাভ করবে সেটাই কাউন্সিলের সামনে ছিল। বর্ণমালার ঐ সব বাড়তি অক্ষর শিক্ষার প্রসারে বাধা সৃষ্টি করেছে।
কাউন্সিল একটি বহুল প্রচলিত প্রয়োগ বাংলা একাডেমী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ডঃ শহীদুল্লাহ, অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খা এবং অন্যান্যদের সুপারিশ ও প্রস্তাবকে আইনসিদ্ধ করতে চেয়েছেন।
পরিতাপের বিষয়, দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি সহজ সরল উদ্যমের ভুল ব্যাখ্যা দান করা হয়েছে। অসুখের জন্য ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ এতে স্বাক্ষর দিতে পারেন নি। অথচ এক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ নাকি এরূপ সংস্কারের বিরোধী।
আগেই বলা হয়েছে ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহর কথা অনুযায়ী এই কমিটি নিয়োগ করা হয়। তিনি কমিটির বিভিন্ন সভায় রিপোর্টে উল্লিখিত মর্মে ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ সুপারিশ গ্রহণের জন্য জোর সংগ্রাম চালান। একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যগন দায়িত্বশীল শিক্ষাবিদ। তাঁরা বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন কলেজের প্রতিনিধিত্ব করছেন। শিক্ষার সাথে যুক্ত এবং আগ্রহী বিশিষ্ট ব্যক্তিগণই কাউন্সিলের সদস্য। একাডেমিক কাউন্সিলের যে সভায় রিপোর্টটি গৃহীত হয় তাতে উপস্থিত ৫০ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ২ জন সদস্য অধ্যাপক আবদুল হাই এবং আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ এ,কে,এম কবির বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে এই যুক্তিতে রিপোর্টের বিরোধিতা করেন।
গোটা একাডেমিক কাউন্সিল বাংলা ভাষার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে, এ অভিযোগ দ্বারা সদস্যদের দেশপ্রেম ও উদ্দেশ্যো সত্যতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে।
অতীতে প্রশ্ন একটাই ছিল কোন পদ্ধতিতে এই সংস্কার করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তরফ থেকে কোন সুনির্দিষ্ট অভিমতের অভাবে বাংলা বানান ক্রমেই জটিল হয়ে পড়েছিল।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই বাংলা বানানের সংস্কার সাধনের দাবীর কথা সবার জানা আছে।
এই জনদাবী পূরণের জন্য ১৯৩০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কতিপয় সংস্কার সাধন করেন, যা প্রায় সবাই গ্রহন করেছেন। এসব সংস্কার ছিল অসম্পুর্ণ ও আংশিক।
একই ধ্বনির একাধিক অক্ষরের (স শ ষ অথবা জ য) উচ্চারণের দরুণ সমস্যা তার সমাধান হয়নি। অপ্রয়োজনীয় বাড়তি ও কদাচিৎ ব্যবহৃত প্রতীক অথবা বিশেষ চিহ্নবাহীযুক্ত স্বরধ্বনি (অউ এর স্থলে ৌ, কই এর স্থলে কৈ) সমস্যার সমাধান হয়নি।
আজও আগামীতে বাংলা ভাষা যে প্রদেশের প্রধান ভাষা সেই প্রদেশে উচ্চতর শিক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে সমাসীন একটি সংস্থা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বাস, বানান সংস্কারের পথ নির্দেশদানে তার ব্যর্থতা দায়িত্ব এড়ানোর শামিল হবে। বাংলা বানানের জটিলতা অব্যাহত রাখার অর্থ হবে বাংলা ভাষাকে দুর্বল রাখারই নামান্তর।
প্রস্তাবিত সংস্কারের পিছনে বাংলা ভাষার বিকাশ ব্যাহত করার মতলব আছে এরূপ ইঙ্গিত হবে মারাত্মক। এভাবে দেখলে কাউন্সিলের সামগ্রিক উদ্দেশ্যই ভুল বোঝা হবে।
<2.67.377>
বাংলা ভাষার বর্ণ বর্জনের প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্র জামায়েত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতির সংসদের প্রচারপত্র
২ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলে সম্প্রতি সংখ্যাগরিষ্ট ভোটে বাংলা বর্ণমালা সংস্কারের ধুয়া তুলে মূলতঃ বহুল ব্যবহৃত ঙ, ণ, ঞ, ঈ, উ, ঐ, ঔ, ষ, ৎ প্রভৃতি হরফ বর্জনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। উপরন্ত বিশিষ্ট ভাষাতত্ত্ববিদদের বিরোধীতা সত্তেও বাংলা ভাষা প্রচলিত যুক্তক্ষর যথা ঙ্ক, ক্ত, এবং সমুদয় ফলা যথা দ্ম, য্য, স্ম, প্রভৃতি বর্জন, ‘” ও‘” কার বর্জন প্রভৃতির সিদ্ধান্ত উক্ত কাউন্সিলে গৃহিত হয় ।
এই বর্ণমালা বর্জনের দ্বারা ভাষা সহজ হবে এবং তা শিক্ষা কিস্তারে সহায়ক হবে, এই যুক্তি দেখিয়ে একাডেমিক কাউন্সিল বর্ণ বর্জনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মূলতঃ তা বাংলা ভাষা শিক্ষা এবং বাংলা ভাষার শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি করবে।
বর্ণমালা বর্জন বা বানান পরিবর্তনের ফলে শব্দ তার মূলগত অর্থ এবং ব্যবহারগত অনুষঙ্গ বিচ্যুত হবে । ভাষার যে সচল প্রবাহ রয়েছে এই সংস্কার দ্বারা তা ব্যাহত হবে। আমারা জানি সরকার শিক্ষা সঙ্কোচন নীতির ধারক। সেক্ষেত্রে এই বর্ণমালা-সংস্কারের দ্বারা ভবিষ্যতে শিক্ষা বিস্তারের ধুয়া তুলে মূলতঃ জনণনের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমান ব্যুৎপত্তিকেও নাকচ করতে চাইছে, এটা উপলব্ধি করা কষ্টকর নয়।
গভীরভাবে বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে মূলতঃ বাঙ্গালী স্বতন্ত্রবোধ তথা বাঙ্গালী সংস্কৃতির যে জাগরণ আজ সর্বত্র দেখা দিয়েছে সেই জাগরণকে স্তিমিত করার জন্যই প্রচেষ্টা গৃহিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই ‘পাকিস্তানী তমদ্দুন’ এই দোহাই দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানী সংস্কুতির উপর আঘাত এসেছে। আজকের এই হীন প্রচেষ্টা এ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়।
আরও লক্ষ্য করার বিষয় বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করার যে প্রবল জনমত গড়ে উঠেছে তার বিরোধিতা করার ক্ষমতা সরকারের আর নেই। আজ তাই পরোক্ষে বাংলা বর্ণমালা বর্জন করে নতুন ‘লেখ্যরীতির’ সূচনা দ্বার এই প্রচেষ্টা মূলে আঘাত হানা হচ্ছে। নতুন লেখ্যরীতিতে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাঙলাকে প্রয়োগ করার প্রচেষ্টা আরও পশ্চাৎপদী হবে ।
এ সকল বিষয় বিশ্লেষণ করেই দেখা যাবে বাংলা বর্ণমালা সংস্কারের পশ্চাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কার্যকরী। বাংলা ভাষার উপর এই আঘাতকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের আজ প্রবল কন্ঠে প্রতিবাদ জানাতে হবে ।
-সংস্কৃতি সংসদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
<2.68.378-379>
বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্বাবিদ্যলয়ের একাডেমিক কাউন্সিল সমীপে হাসান হাফিজুর রহমানের খোলা চিঠি
দৈনিক পাকিস্তান
১১ অক্টোবর, ১৯৬৮
ঢাকা বিশ্বাবিদ্যলয়ের একাডেমিক কাউন্সিল সমীপে একটি খোলা চিঠি
হাসান হাফিজুর রহমান
বাংলা বর্ণমালা এবং বানান সংস্কার বিষয়ক প্রস্তাব পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন উৎসাহে এবং কর্মতৎপরতার দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছেন, যা তাঁদের সক্রিয়তার অভিনব বলে অনায়াসেই অখ্যায়িত হতে পারে। অবশ্য কি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে তার স্বক্ষরিক বিররণ জনসাধারণের সন্মূখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ পর্যন্ত পেশ করার প্রয়োজনবোধ করেননি। তবে নানা সূত্রে থেকে যতটুকু জানা যায় তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উদ্যমের পেছনে যে অন্ততঃ বাংলা ভাষার বর্তমান লিখিত রুপের খোল-নলচে পাল্টাবার আয়োজন রয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। এতে কি সুবিধা-অসুবিধা হবে প্রশ্ন বাস্তবায়ন একা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম নয় এবং একে স্বার্থক করে তুলতে বহুজনের হাত লাগলেও কয়েক বছরের গন্ডিতে তা সম্পন্ন হবে কিনা এবং তারপরেও নানা বিভ্রান্তি ও জটিলতার জড় এড়িয়ে উক্ত ফরমুলার নির্দেশিত মান এককভাবে এদেশের ভাষার লিখনরীতিতে প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা সে ব্যাপারেও সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়।
অন্যদিকে জানা গেছে, কোন প্রকার সংস্কার ছাড়াই উর্দুকে পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সর্বস্তরে পুরোপরি চালু করার বাঞ্চিত সিদ্ধান্তটি ইতিমধ্যেই গৃহিত হয়েছে এবং অচিরেই তা চালু হবে, যদিও উর্দু বর্ণমালায় তথাকথিত জটিলতা বাংলার কোন অংশেই কম নয়। তাদের এই প্রশংসনীয় ও দৃষ্টান্ত মূলক উদ্যেগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের একটি মাত্র জিজ্ঞাসা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাকে শিক্ষার সর্বস্তরে চালু করার ব্যাপারে কতদূর অগ্রসর হয়েছেন? বাংলা ভাষার বর্ণমালা এবং বানান সংস্কারের বেলায় যে উৎসাহ ও কর্মতৎপরতা তারা দেখাচ্ছেন, বাংলাকে শিক্ষার সার্বিক মাধ্যম করার ক্ষেত্রে তা আদৌ স্পষ্ট নয়। তবে কি এই ভাবতে হবে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বেই বাংলা ভাষার বর্তমান রূপকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে একেবারেই উপযুক্ত মনে করতে পোরছেন না এবং সেই সংস্কারের সাহায্যে একে যোগ্য করতে তুলতে ব্যাস্ত হয়ে উঠেছেন ? এবং সে কারনেই কি শিক্ষার মাধ্যমে বাংলা চালু করার আশু কর্তব্য পালনের পরিবর্তে বাংলা ভাষার সংস্কার তাদের কাছে অধিকতর প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দিয়েছে? তাই যদি হয়, এ সংস্কারের মহান দায়িত্ব তারা সম্পন্ন তারা কিভাবে করবেন, এতে কত সময়ই বা তারা নেবেন এবং অতঃপর কবে নাগাত বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সর্বস্তরে চালু করতে সক্ষম হবেন কিংবা পরিণামে আদৌ তার পওয়োজন হবে কিনা-এসব বিষয়ে অবশ্যই তাঁদের দেশবাসীকে সঠিক ও সৎভাবে জানানো উচিত। পক্ষান্তরে বাংলাকে অনিশ্চয়তা সংক্রান্ত আমাদের এই সন্দেহ যদি অমূলক হয়, তাহলে বাংলা বর্ণমালা ও বানান সংস্কার এবং বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যমরুপে সর্বস্তরে পুরোপরি চালু করার মতো দুটি আপাতবিরোধী দুরুহ ও জটিল দায়িত্ব একই সংঙ্গে বাস্তবায়ন অনুকূল কি অলৌকিক মন্ত্রসিদ্ধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের লাভ করে বসে আছেন, সে বিষয়েও দেশবাসীকে জানানো তাঁদের অবশ্যই কর্তব্য।
বিশেষতঃ বাংলা ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে বাংলা প্রচলনের ভবিষ্যত শঙ্কাকুল এবং উদ্বেগজনক করে তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মুখে তালা এঁটে চুপ করে থাকার কোন অধিকার নেই। সর্বসাধারণের ঘনিষ্ট ও অপরিহার্য স্বার্থের সাথে জড়িত এমন একটি বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই এককভাবে সারা দেশব্যাপী এক অসময়োচিত বিভ্রান্তি, বির্তক, ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ ও অনিশ্চতাজনিত তোলপাড়ের সূত্রপাত করেছেন।……….. স্বাভাবিকভাবেই তার নির্মূল তথ্যের ভিক্তিতে জনসাধারণের পরিস্কারভাবে জানার অধিকার রয়েছে । ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয় বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যমে সর্বস্তরে চালু করার ক্ষেত্রে কি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং কবে তা বাস্তবায়িত হবে এবং তাদের গৃহীত বাংলা বর্ণমালা ও বানান সংস্কারের তৎপরতা দেশ ও জাতির জন্য অপরিহারর্র্য প্রয়োজনীয় উক্ত কর্তব্য পালনে অদৌ কোন অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে কিনা ?