You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.02.10 | বাংলার বাণী সম্পাদকীয় | সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগ জাতি ভুলবে না | শেখ মণি - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার বাণী
ঢাকা: শনিবার ২৭শে মাঘ, ১৩৭৯ ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩

সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগ জাতি ভুলবে না

গত বৃহস্পতিবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেনাবাহিনী সদর দফতর পরিদর্শন করেছেন। সমবেত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জোয়ানদেরকে তিনি ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন-জাতি কোনদিন সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগ ভুলতে পারবে না। সেনাবাহিনীর গৌরবের সঙ্গে সমগ্র জাতির গৌরব জড়িত। বিগত স্বাধীনতাযুদ্ধে সেনাবাহিনীর চেয়ে ঐতিহাসিক দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল জাতি তা চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্রের আসামি হিসেবে ক্যান্টনমেন্টের যে সেলটিতে থাকতেন তাও পরিদর্শন করেন। সে সময় তাকে হত্যা করার যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল এবং সে ষড়যন্ত্রে গোপন সংবাদ যে সামরিক অফিসার ফাঁস করে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষা করেছিলেন সে সকল ঘটনার কথা ও বঙ্গবন্ধু সামরিক অফিসারদের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে বলেছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময়ের নানা স্মৃতি রোমনন্থন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বেশ খানিকটা ভাববিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর একটি গৌরবজ্জ্বল অতীত ইতিহাস রয়েছে। পাকিস্তানী সামরিক জান্তারা যে সত্যি কলোনি হিসেবে বিবেচনা করত তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে বাঙালি সৈন্যরা সর্বপ্রথম। আর সেই পুঞ্জিভূত অভিমান থেকেই একদিন তারা সামরিক নিয়মের নাগপাশ থেকে বেরিয়ে এসে এ দেশের বৃহত্তর স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিল। নৈতিক দিক দিয়ে হলেও এরা অতীতে বাংলাদেশের সকল গণ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জুগিয়েছে। সে কথা আর কেউ না জানলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর যে জানতেন তা আজ সুস্পষ্ট। স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য বঙ্গবন্ধু যেদিন জাতিকে সর্বাত্মকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন সেদিন দেশের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে বাঙালি সৈন্যরাও এগিয়ে এসেছিল। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে তারা সংগ্রাম করেছে-প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে সেনাবাহিনীর অবদান যেমন অসীম তেমনি এদেশে পুনর্গঠনে জন্য তাদের সীমাহীন দায়িত্ব রয়েছে। বিপ্লবোত্তর প্রতিটি দেশের পূনর্গঠনের জন্য সে দেশের সেনাবাহিনী সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। আমরা মনে করি বাংলাদেশের পুনঃগঠনের কাজে সেনাবাহিনী দায়িত্ব আজও শেষ হয়নি। সেনাবাহিনী পারে একমাত্র এদেশের সুখ-সমৃদ্ধিশালী দেশ গঠনের জন্য সর্বাত্মক কাজ করে যেতে। এ ব্যাপারে আমাদের সেনাবাহিনী আন্তরিকতার অপ্রতুলতা নেই বলেই আমরা মনে করি। পাকিস্তানের জন্মের পর থেকে প্রকাস্তরে সেনাবাহিনী এদেশের ক্ষমতাকে কবজা করে রেখেছিল। জনগণের দ্বারা দেশ শাসনের গণতান্ত্রিক নিয়ম এদেশে প্রবর্তিত হয়নি। ক্ষণিকের জন্য প্রবর্তন হলেও তা আবার সামরিক শক্তির করায়ত্ত হয়ে গেছে। তাই এ দেশের সেনাবাহিনীর দেশকে করার চাইতে শাসনের কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। এবং অত্যন্ত নগ্নভাবে এদেশের মানুষের উপর প্রয়োগ করে সেনাবাহিনী তাদের মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছ। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর নতুন আদর্শ ও মর্যাদা সম্পন্ন করে গড়ে তোলার হো সকতা আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারকে নতুন আদর্শের প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে গঠন করতে হবে। সেনাবাহিনী হবে দেশের মর্যাদাসম্পন্ন বাহিনী। এরা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ব্যবহৃত হবে, জনগণের প্রভূত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করবে।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন